প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ ( ৬ নং )


প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ

[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার রাব্বুল আলামীন উনার এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহমতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামাজ ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরয নামাজের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইনজেকশন নেওয়া রোজা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-এর নামাজে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্ নামাজ বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া এবং দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়  সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করার পর চতুর্দশ (১৪তম) ফতওয়া হিসেবে (৩৫তম সংখ্যা থেকে) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ  করে আসতে পারায় মহান মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।]
[বিঃদ্রঃ পাঠকগণের সুবিধার্থে ফতওয়ার ভুমিকার কিছু অংশ পুণরায় প্রকাশ করা হলো ]

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
كنتم خير امة اخرجت اللناس تأمرون بالمعروف وتنهون عن المنكر وتؤمنون بالله.
অর্থ : তোমরা (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হওয়ার কারণে) শ্রেষ্ঠ উম্মত, তোমাদেরকে মানুষের মধ্য হতে বের করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনবে।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১১০)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তাবলীগ তথা সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের সাথে সাথে আরো একটি শর্ত যুক্ত করে দিয়েছেন। সেটা হলো- تؤمنون অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং দ্বীন সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সঠিক ও পরিশুদ্ধ ঈমান আনা। অর্থাৎ তৎসম্পর্কে বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করা। তবেই সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের মাধ্যমে পরিপূর্ণ ফায়দা বা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব হবে।
স্মরণযোগ্য যে, বর্তমান প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকদের বেশকিছু লেখনী, বক্তব্য, বিবৃতি, আমল ও আক্বীদা ইত্যাদি সম্পর্কে সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের মনে নানাবিধ সংশয় ও প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকারপাঠক, গ্রাহক, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীদের পক্ষ হতে মাসিক আল বাইয়্যিনাতেরআকর্ষণীয় ও নির্ভরযোগ্য বিভাগ সুওয়াল-জাওয়াববিভাগে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লেখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচারিত বেশকিছু আপত্তিজনক আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ উল্লেখ করে অসংখ্য চিঠি আসে। কারণ মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থ : যদি তোমরা না জান, তবে আহলে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (পবিত্র সূরা নহল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩ ও পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
      অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যাঁরা জানেন, উনাদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।
অতএব, যাঁরা জানেন, তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন,
من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থ : যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়,  জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুনের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযা, হম শরীফ, মিশকাত শরীফ, বযলুল মাজহুদ, উরফুশশাজী, তোহফাতুল আহওয়াজী, মায়ারেফুস সুনান, মেরকাত, শরহুত ত্বীবী, তালীক, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ ইত্যাদি)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ্বা আগুনের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।
কাজেই উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে, যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকারঅগণিত পাঠক, গ্রাহক ও সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের প্রেরিত সুওয়ালসমূহে উল্লেখকৃত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহের শরীয়তসম্মত তথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, জমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে জাওয়াব বা ফতওয়া দেয়া হলো।

প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়

এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, মূলতঃ আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খেলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থ : যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মুহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী, বজলুল মাজহুদ, উরফুশশাজী, তোহফাতুল আহওয়াজী, মায়ারেফুস সুনান, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, শরহুত ত্বীবী, তালীক, মোজাহেরে হক্ব, লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ ইত্যাদি)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতসম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো- প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কেউল্লেখকৃত আক্বীদাসমূহের সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান এবং প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের দাওয়াতের কাজে যারা মশগুল রয়েছে, তাদের মধ্যে যারা উক্ত আক্বীদাসমূহ জেনে হোক বা না জেনেই হোক বিশ্বাস করে এবং তা জনসাধারণের নিকট প্রচার করে, নিজেদের ও জনসাধারণের ঈমান ও আমলের বিরাট ক্ষতি করছে, তাদের সে ঈমান ও আমলের হিফাযত করা ও সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই তাদের ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলত মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মুমিন অপর মুমিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ পবত্রি হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,      
المؤمن مرأة المؤمن.
অর্থ : এক মুমিন অপর মুমিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত আনছার এবং মুহাজির হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহকামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইবনে সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন, তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়।এ কথা শুনে হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম বললেন, “তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মাআরেফ)
সুতরাং উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে অসংখ্য, অগণিত পাঠকগণের পূণঃ পূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের আক্বীদা ও আমল হিফাযতের লক্ষে বর্তমানে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহের শরয়ী ফায়সালা প্রদান করা হলো। যাতে করে সত্যান্বেষী, সমঝদার মুসলমান ও প্রচলিত তাবলীগকারীগণ সে আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের সঠিক শরয়ী ফায়সালা অবগত হন, যার ফলশ্রুতিতে সকলেই উক্ত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলের হিফাযত করে সঠিকভাবে দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও খেদমত করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, দ্বীনের তাবলীগ যা খাছ ও আম তা শত-সহস্র লোক করবে এবং অবশ্যই করতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত সম্মতভাবে করতে হবে। কারণ আক্বীদা শুদ্ধ না হলে দ্বীনী কোন খিদমতই মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে কবুলযোগ্য নয়। উপরন্ত কুফরী আক্বীদা থাকার কারণে তাকে হতে হবে চির জাহান্নামী।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে বিশুদ্ধ আক্বীদার সাথে দ্বীনী তাবলীগ (যা আম ও খাছ) করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)

সুওয়াল : আমরা শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে সঠিক তত্ত্ব জানতে আগ্রহী। কারণ আমরা অনেকদিন যাবত তাবলীগ জামায়াতের সাথে জড়িত ছিলাম এবং এখনো তাবলীগ জামায়াতের অনেক লোকের সাথে আমাদের মেলামেশা আছে। তাতে তাদের বেশ কিছু বক্তব্য বা আক্বীদা, যা আমরা অতীতেও জেনেছি এবং এখনো তা অবহিত হচ্ছি। তার মধ্যে অনেকগুলো তাদের লেখা কিতাবেও উল্লেখ আছে। সে সমস্ত আক্বীদাসমূহ আমাদের মনে হয় ইসলামের দৃষ্টিতে আপত্তিকর। সেগুলো আমরা নিম্নে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করলাম –
(৫৪) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অনেকেই ধারণা করে থাকে যে, দ্বীন ইসলামের বাইরেও বিধর্মীদের মাঝে, এমন অনেক শিক্ষণীয়, নছীহতপূর্ণ ও অনুসরণীয় বিষয় রয়েছে, যদ্বারা ইছলাহ্ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা যায়।। এ কথার প্রমাণ তাদের লেখা কিতাবেও রয়েছে। যেমন- তাবলীগ-ই-উত্তম জিহাদনামক কিতাবের ৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “হিন্দু যোগীরা ইবাদতে আলস্য দূর করার জন্যে সারা রাত একই অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে, এসব দৃষ্টান্ত থেকে অন্তরের চিকিৎসার পদ্ধতি জানা জায়।অর্থাৎ হিন্দু যোগীদের মধ্যেও শিক্ষণীয় ও অনুসরণীয় অনেক কিছু রয়েছে। আর মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের মলফুযাতের৯৫ পৃষ্ঠায় ১৩৬নং মলফূযে একথা লেখা আছে যে, আমাদের এই কাজ (প্রচলিত তাবলীগ) এক প্রকার যাদুমন্ত্রের মত।
(৫৫) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বেশ কিছু মুরুব্বী ও আমীর এবং তাদের অনুসারীরা মনে করে থাকে যে, তাদের প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য বা তাবলীগ জামায়াতের প্রতি উৎসাহিত করার জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র হাদীছ শরীফ বহির্ভূত বিষয়ে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত পরিমাণের বাইরে বহু বহু ফযীলতের বর্ণনা করা জায়েয।
(৫৬) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, “মসজিদে নববী ছাড়া বিশ্বের যে তিনটি দেশে, তিনটি মসজিদে প্রচলিত তাবলীগের বিশেষ মারকায, সেখানেই চব্বিশ ঘন্টা আমল জারী থাকে। যেমন- প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা লিখিত এক মুবাল্লিগের পয়লা নোট বইনামক কিতাবের (সংকলক- এঞ্জিনীয়ার মু.জু.আ. মজুমদার) ৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “সারা বিশ্বে মাত্র ৪টি মসজিদে ২৪ঘন্টা আমল চালু থাকে। যথা- (১) কাকরাইল, ঢাকা (২) নিজামুদ্দীন বস্তী, দিল্লী (৩) রায়বন্ড, লাহোর। (৪) মসজিদে নববী, মদীনা শরীফ।
(৫৭) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত-এর লোকেরা বলে থাকে যে, তারা পবিত্র কুরআন শরীফ উনাপবিত্র সূরা ইমরান শরীফ উনার  ১০৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ
ولتكن منكم امة يدعون الى الخير- يامرون بالمعروف وينهون عن المنكر واولتك هم المفلحون.
অর্থ : তোমাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় হওয়া জরুরী, যারা (মানুষকে) কল্যাণের দিকে ডাকবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে ও বদ্ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই মূলতঃ কামিয়াব।এর আমল করে থাকে যা তাদের ৬ উছুল ভিত্তিক কাজের দ্বারাই সাধিত হয়।
(৫৮) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অনেকেই মনে করে থাকে যে, তাদের ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগের দাওয়াত মোতাবেক যাদের জীবন পরিবর্তিত হবে, শুধুমাত্র তাদের দ্বারাই আল্লাহ পাক হিদায়েত বা দ্বীনের কাজ নিবেন। যেমন- হযরতজীর কয়েকটি স্বরণীয় বয়াননামক কিতাবের (সংকলক- মাওলানা নোমান আহ্মদ) ২য় খন্ড ২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, যাদের জীবন দাওয়াত মোতাবেক পরিবর্তন অর্জিত হবে, তাদের দ্বারা আল্লাহ পাক হিদায়েত ছড়াবেন, .....। যাদের জীবনে দাওয়াত মোতাবেক পরিবর্তন আসবেনা, তাদের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা দ্বীনের প্রকৃত কাজ নিবেন না।
(৫৯) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা প্রচার করে থাকে যে, তাদের ৬ উছুল ভিত্তিক দোয়া ও তাসবীহ পড়াই সুন্নত। যা করলেই যিকির-এর হক্ব আদায় হয়ে যায়। এবং তার দ্বারাই অনেক অনেক ফযীলত, রহমত ও বরকত পাওয়া যায়। আর এর দ্বারাই দিল ইসলাহ্ হয়। অর্থাৎ তাসাউফ ভিত্তিক ক্বলবী যিকিরের আর দরকার হয়না। অপরদিকে তাদের কথানুযায়ী তাসাউফী বা ক্বলবী যিকির হল নফল এবং যার ফযীলত নগণ্য। আর এসব কথা নাকি তাদের হযরতজীর মলফুজাতএবং মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দীর তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্বনামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।
(৬০) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা প্রচার করে থাকে যে, মুর্শিদদের দ্বারা দ্বীনের ব্যাপক খেদমত কখনোই সম্ভব নয়। তাই তারা পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া বা ইলমে তাছাউফ চর্চা করাকে মোটেও গুরুত্ব দেয় না। একথার সত্যতা তাদেরই লোক দ্বারা লিখিত আয়নায়ে তাবলীগনামক কিতাবের (লেখক- মুহম্মদ দাউদ আলী) ৮৮ পৃষ্ঠায় নিম্নোক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হয়। ইক্ত কিতাবে লিখা হয়েছে- তাবলীগের মধ্যে পীর-মুরীদীর প্রচলন সম্ভব নহে, কেননা পীরী-মুরীদীর দ্বারা সাধারণতঃ গন্ডিবদ্ধ একটা দলের সৃষ্টি হইয়া থাকে। ..... এইরূপ একটা দলের দ্বারা ব্যাপক কোন কাজ করা সম্ভব নহে। .... তাই বাধ্য হইয়া তাবলীগ এই পথ এড়াইয়া চলিয়া থাকে।
উপরোক্ত সুওয়ালসমূহের আলোকে এখন আমরা জানতে চাই, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য বা আক্বীদাসমূহ শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু ঠিক? এবং তা শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু প্রয়োজনীয় ও কোন স্তরের আমলের অন্তর্ভূক্ত? পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, জমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে জাওয়াব দিয়ে ঈমান ও আমল হিফাযত করণে সাহায্য করবেন।
জাওয়াব : (আপনাদের তরফ থেকে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগে প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে বিভিন্ন সুওয়ালসহ প্রায় শতাধিক (শত শত) চিঠি এসে পৌঁছেছে। তার মধ্যে যেসব সুওয়ালগুলি মানুষের ঈমান ও আমলের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত এবং যেগুলির জবাব না দিলেই নয়, সেরূপ অর্ধ শতাধিক সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হয়েছে এবং এরূপ প্রয়োজনীয় প্রায় সকল সুওয়ালেরই জাওয়াব দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। তার মধ্যে গত (৩৫, ৩৬, ৩৭ ও ৩৮তম) সংখ্যা চারটিতে যথাক্রমে (৭+৩২+৬+৮) মোট = ৫৩টি সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হয়েছে। বর্তমান (৩৯তম) সংখ্যায় ৭টি সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হলো। বাকীগুলোর জাওয়াব পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।)
আপনাদের বর্ণিত সুওয়াল মোতাবেক যদি প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের আক্বীদা হয়ে থাকে, তাহলে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে অবশ্যই আপত্তিজনক, যা গোমরাহীমূলক, বিভ্রান্তিকর ও জেহালতপূর্ণ এবং তারমধ্যে কোন কোনটিতে কুফরীমূলক বক্তব্যও রয়েছে।
তবে আপনারা যেহেতু দলীল ভিত্তিক জাওয়াব চেয়েছেন, তাই আমরা উপরোক্ত প্রত্যেকটি প্রশ্নেরই শরীয়তসম্মত তথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, জমা ও ক্বিয়াস উনাদের ভিত্তিতে জাওয়াব দিব। (ইনশাআল্লাহ)
কারণ মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে বলেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থ : তোমরা যারা জাননা, যারা জানেন, তাদের কাছ থেকে জেনে নাও।” (পবিত্র সূরা নহল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)
আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থ : যাকে ইলমের বিষয় সর্ম্পকে কোন প্রশ্ন করা হয়, আর সে জানা থাকা সত্ত্বেও তা চুপিয়ে রাখে, তাহলে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুনের বেড়ী পড়িয়ে দেয়া হবে।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ, আহমদ, মিশকাত, বজলুল মাজহুদ, তোহফাতুল আহওয়াযী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেরকাত, উরফুশশাজী, তালীক, শরহুত ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ, লুময়াত)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, “তার জিব কেটে দেয়া  হবে ইত্যাদি।
তাই নিম্নে পর্যায়ক্রমে আপনাদের প্রেরিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর বক্তব্য বা আক্বীদাসমূহের পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, জমা ও ক্বিয়াস উনাদের অকাট্য দলীলসমূহের ভিত্তিতে শরয়ী ফায়সালা প্রদান করা হলো-

তাবলীগের অর্থ ও প্রকারভেদ
[সুওয়াল সমূহের জাওয়াব দেয়ার পূর্বে প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়ে আলোচনা করা অতি জরুরী। কারণ তাবলীগ সম্পর্কে বুঝতে হলে প্রথমে তা কত প্রকার ও কি কি এবং তার অর্থ কি, তা জানতে হবে।
তাবলীগত্ম (تبليغ) অর্থ হলো- প্রচার করা। তাবলীগ দুপ্রকার অর্থাৎ সাধারণতঃ ইসলাম দুভাবে প্রচার করা হয়ে থাকে- (১) তাবলীগে আম (عام) বা  সাধারণভাবে,  (২) তাবলীগে খাছ (خاص) বা বিশেষভাবে। আবার দ্বীন প্রচারকারী (মুবাল্লিগ) ও দুপ্রকার- (১) মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন প্রচারক) ও (২) মুবাল্লিাগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক)।

মুবাল্লিগে আম ও তার
হিদায়েতের ক্ষেত্র

মুবাল্লিগে আম অর্থাৎ সাধারণ মুবাল্লিগ (দ্বীন প্রচারক)- তার বিশেষ কোন যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। শুধু দ্বীনী সমঝ বা বুঝ থাকলেই চলবে। সে খাছ বা বিশেষভাবে যেমন ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, ভাই-বোন, ভাতিজা-ভাতিজী ও কর্মচারী তথা তার অধীনস্থ সকলকে দ্বীনী আমলের জন্য তথা দ্বীনদারী হাছিলের জন্য তাকীদ বা উৎসাহিত করবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবত্রি কুরআন শরীফ উনা মধ্যে সূরা তাহরীমের ৬নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেন,
يا ايها الذين امنوا قوا انفسكم واهليكم نارا.
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে আগুন (জাহান্নাম) থেকে বাঁচাও।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الا كلكم راع وكلكم مسؤل عن رعيته.
অর্থ : সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই (নিজের অধীনস্থদের ব্যাপারে) রক্ষক এবং প্রত্যেকেই তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ফতহুল বারী , ওমদাতুল ক্বারী, তাইসীরুল ক্বারী, ইরশাদুস সারী, শরহে নববী, মিরকাত, লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ, মিরআতুল মানাজীহ ইত্যাদি)
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
بلغوا عنى ولو اية.
অর্থ : তোমরা আমার থেকে একটি পবিত্র আয়াত (পবিত্র হাদীছ শরীফ) শরীফ হলেও তা (মানুষের নিকট) পৌঁছে দাও।” (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, তাইসীরুল ক্বারী, রশাদুস সারী)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে- তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে আমল করবো, ততক্ষণ পর্যন্ত কি আমরা সৎ কাজের আদেশ দিব না? অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সমস্ত খারাবী হতে ক্ষান্ত হবো, ততক্ষণ পর্যন্ত কি অসৎ কাজে নিষেধ করবো না? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- না, বরং তোমরা সৎকাজের আদেশ দান করবে, যদিও তোমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে আমল করতে না পার। তদ্রুপ মন্দ কাজে নিষেধ করবে, যদিও তোমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে তা থেকে বেঁচে থাকতে না পার। (তিবরানী শরীফ)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
الدين نصيحة.
অর্থ : দ্বীন হচ্ছে নছীহত স্বরূপ।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ জিজ্ঞাসা করলেন, কাদের জন্য? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য এবং মুসলমানের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের জন্য এবং সাধারণ মুসলমানদের জন্য।” (মুসলিম শরীফ, শরহে নববী, ফতহুল মুলহিম)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ মুবাল্লিগে আম ও মুবাল্লিগে খাছ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। অর্থাৎ এর হুকুম কারো জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি।
কাজেই যারা মুবাল্লিগে আম, তারা তাদের দায়িত্ব ও ক্ষেত্র অনুযায়ী উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আমল করবেন। আর যারা মুবাল্লিগে খাছ, তারাও তাদের দায়িত্ব ও যোগ্যতা এবং ক্ষেত্র অনুযায়ী উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপর আমল করবেন।
অতএব প্রত্যেক মুবাল্লিগে আম-এর জন্য তার ক্ষেত্র হচ্ছে- তার অধীনস্থগণ। যাদেরকে তার তরফ থেকে দ্বীনের জন্য তালীম দেয়া ও তাকীদ করা দায়িত্ব ও কর্তব্য। অর্থাৎ এটা হচ্ছে তাবলীগে খাছ যা করা- মুবাল্লিগে আম-এর জন্য ফরজে আইনের অন্তর্ভূক্ত। (তাফসীরে মাযহারী, রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী, ফতহুল ক্বাদীর, খাযেন, বাগবী, কুরতুবী, ইবনে কাছীর, কবীর)

মুবাল্লিগে খাছ ও তার হিদায়েতের ক্ষেত্র
           
মুবাল্লিগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক), মুবাল্লিগে আম-এর মত নয়। অর্থাৎ তিনি কেবল তার অধীনস্থদেরই নয় বরং তিনি আমভাবে সকল উম্মতকেই হিদায়েত করার উপযুক্ত। পক্ষান্তরে মুবাল্লিগে আম কেবল তার অধীনস্থদেরই বলার যোগ্যতা রাখেন।
আর যাঁরা খাছ মুবাল্লিগ অর্থাৎ বিশিষ্ট দ্বীন প্রচারক, তাঁদের প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
ولتكن منكم امة يدعون الى الخير ويأمرون بالمعروف وينهون ن المنكر وارلئك هم المفلحون.
অর্থ : তোমাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় হওয়া জরুরী, যারা (মানুষকে) কল্যাণের (পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ তথা দ্বীন ইসলাম উনার) দিকে ডাকবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে এবং বদ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই মূলত কামিয়াব।” (পবিত্র সূরা ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৪)
 অর্থাৎ তাঁকে অবশ্যই দ্বীনী বিষয়ে বিশেষ যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে এবং ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাসাউফে বিশেষ দক্ষতা তথা ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নত পরিমাণ ইলম, আমল এবং ইখলাছ হাছিল করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন 
فلولا نفر من كل فرقة منهم طائفة ليتفقهوا فى الدين ولينذروا قومهم اذا رجعوا اليهم لعلهم يحذرون.
অর্থ : কেন তাদের প্রত্যেক ক্বওম বা ফেরক্বা থেকে একটি দল বের হয়না এজন্য যে, তারা দ্বীনী ইলমে দক্ষতা অর্জন করবে এবং তাদের ক্বওমকে ভয় প্রদর্শন করবে, যখন তারা তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে। আশা করা যায়, তারা বাঁচতে পারবে।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১২২)
(তাফসীরে মাজহারী, রুহুল মায়ানী, রুহুল বয়ান, ফাতহুল ক্বাদীর, কাশশাফ, হাশিয়ায়ে সাবী, যাদুল মাসীর, খাজেন, বাগবী, কুরতুবী, কবীর, ইবনে কাছীর ইত্যাদি)
আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
تعلموا العلم وعلموه الناس.
অর্থ : তোমরা দ্বীনী ইলম শিক্ষা কর এবং  মানুষকে তা শিক্ষা দাও।” (দারেমী, দারে কুত্নী, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ, লুময়াত ইত্যাদি)
মূলতঃ যাঁরা মুবাল্লিগে খাছ, তাঁদেরকে অবশ্যই ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানী হতে হবে। আর হক্কানী, রব্বানী আলেমগণের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
انما يخشى الله من عباده العلماء.
অর্থ : নিশ্চয়ই বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন।” (পবিত্র সূরা ফাতির শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “যার মধ্যে যতবেশী আল্লাহ ভীতি রয়েছে, তিনি তত বড় আলেম।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ  উনার মধ্যে রয়েছে,
من ارباب العلم؟ قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء؟ قال الظمع.
অর্থ : “(জিজ্ঞাসা করা হলো) আলেম কে? উত্তরে বললেন, যাঁরা ইলম অনুযায়ী আমল করেন। পুণরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন জিনিস আলেমের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয়? তিনি বললেন, লোভ (দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা)।  (দারেমী, মিশকাত, মিরকাত, মোযাহেরে হক্ব, শরহুত ত্বীবী, তালীক, আশয়াতুল লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ, লুময়াত ইত্যাদি)
অর্থাৎ যিনি ইলম অনুযায়ী আমল করেন, তিনিই হক্কানী-রব্বানী আলেম।
কাজেই যিনি ইলম, আমল ও ইখলাছ হাছিল করেছেন, তিনিই হক্কানী আলেম, আর তিনিই নবী আলাইহিস সালামগণের ওয়ারিছ। যাঁদের শানে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
العلماء ورثة الانبياء.
অর্থ : আলেমগণ হলেন- নবীগণের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী।” (হম, তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, বজলুল মাজহুদ, তোহ্ফাতুল আহওয়াযী, মায়ারেফুস সুনান, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ, উরফুশশাজী, তালীক)
অর্থাৎ হযরত নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের দাওয়াত ও তাবলীগ, তালীম ও তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র যেমন আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি প্রযোজ্য, তদ্রুপ যাঁরা মুবাল্লিগে খাছ, উনারা হযরত নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের ওয়ারিছ হওয়ার কারণে উনদেরও দাওয়াত ও তাবলীগ, তালীম ও তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি প্রযোজ্য। আর এ আম তালীম বা তাবলীগ ফরজে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত। যা অতীতে ও বর্তমানে ওলামায়ে হক্কানী- রব্বানীগণ তাসাউফ শিক্ষা দিয়ে, মাদ্রাসায় পড়িয়ে, মসজিদে ইমামতি করে, কিতাবাদি লিখে, ওয়াজ-নছীহত করে ইত্যাদি নানানভাবে দাওয়াত ও তালীম-তালক্বীন দিয়ে হিদায়েতের কাজ করে মুবাল্লিগে খাছ-এর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে, তাবলীগে আম-এর (ফরজে কেফায়ার) ও তাবলীগে খাছ-এর (ফরজে আইনের) খেদমতের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।

মুবাল্লিগে আম-এর জন্য তাবলীগে আম করার হুকুম এবং মুবাল্লিগে খাছ-এর যোগ্যতা ও তাবলীগে আম-এর শর্ত

স্মরণীয় যে, যারা মুবাল্লিগে আম এবং যাদের জন্য শুধু তাবলীগে খাছ করা ফরজে আইন, তাদের জন্য কোন ক্রমেই এবং কষ্মিনকালেও তাবলীগে আম বা ব্যাপকভাবে দ্বীন প্রচার করা (যা মুবাল্লিগে খাছ তথা লামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণের জন্য নির্দিষ্ট তা) জায়েয নেই।
এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে যে, একদিন এক লোক উনার সাক্ষাতে আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি কর?” সে জাওয়াব দিল, দ্বীন প্রচার করি। তখন তিনি তাকে বললেন, “তুমি কি ঐ সকল পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের আমল করেছ?” যা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে-
(১) পবিত্র সূরা সফ শরীফ উনার ২নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক বলেন,
يا ايها الذين امنوا لم تقولون مالا تفعلون.
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা করনা, তা কেন বল?”
তুমি কি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আমল করেছ?” সে জাওয়াব দিল, না।
(২) তিনি আবার বললেন যে, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ৪৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেছেন,
اتأمرون الناس بالبر وتنسون انفسكم وانتم تنلون الكتاب.
অর্থ : তোমরা কি মানুষকে সৎ কাজের আদেশ কর, আর নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও? অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াত করে থাক।
তুমি কি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আমল করেছ?” সে জাওয়াব দিল, না।
(৩) পুণরায় তিনি বললেন, “তুমি কি ঐ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আমল করেছ? যা হযরত শোয়াইব আলাইহিস সালাম উনার ক্বওমকে বলেছিলেন,
وما اريد ان اخالفكم الى ما انهاكم عنه.
অর্থ : আমি এটা চাইনা যে, তোমাদেরকে যে কাজ থেকে নিষেধ করি, আমি তার খেলাফ করি। অর্থাৎ আমি যা বলি, তা করি আর যা বলিনা, তা করিনা।” (পবিত্র সূরা হুদ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৮)
তুমি কি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আমল করেছ? সে জাওয়াব দিল, না।
তখন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে বললেন, “তুমি প্রথমে এ পবিত্র আয়াত শরীফসমূহের আমল কর, অতঃপর তুমি দ্বীন প্রচারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত কর।অর্থাৎ উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের আমল ব্যতিরেকে তাবলীগে আম করা জায়েয নেই।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, তাবলীগে খাছ মুবাল্লিগে আম ও খাছ উভয়ের জন্যেই ফরজে আইন। আর তাবলীগে আম শুধুমাত্র মুবাল্লিগে খাছ তথা হক্কানী আলেমগণের জন্যেই প্রযোজ্য, যা উনাদের জন্যে ফরজে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত। অতএব, মুবাল্লিগে আম বা সাধারণ লোকদের জন্যে তাবলীগে আম করা কখনো শুদ্ধ হবেনা বরং তাদের জন্যে তা করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম হবে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, “বর্তমানে প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগযাকে তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাবলীগে আম বলে থাকে, (যা আমাদের নিকট মক্তবী শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত যদি আক্বীদা শুদ্ধ হয়ে থাকে) যদি তাদের কথা মোতাবেক তাকে তাবলীগে আম ধরা হয়, তাহলে তো অবশ্যই তা মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য করা উচিৎ ছিল। অথচ তা এমন সব লোকেরা করে থাকে যারা মুবাল্লিগে খাছ তো নয়ই, বরং তাদের মধ্যে অনেকেই মুবাল্লিগে আম-এরও উপযুক্ত নয়। যদিও কিছু সংখ্যক মুবাল্লিগে আম রয়েছে।
অতএব তাবলীগে আম মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্যই করা ফরজে কেফায়া। যা মুবাল্লিগে আম-এর জন্য করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। আর সাধারণ লোকেরতো প্রশ্নই উঠেনা।
এখন হয়তো কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, অনেক সময় দেখা যায় এমন কতক লোক, যারা মুবাল্লিগে খাছ ও আম কোনটাই নয়, তারা অনেকেই নামাজের জামায়াতে যাওয়ার সময় বা নামায পড়ার সময় অন্যকে নামাজে ডেকে নিয়ে যায়, রোজার মাসে রোজা রাখার কথা বলে, ইত্যাদি অনেক নেক কাজের কথাই বলে থাকে, যা তাদের দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত ছিলনা তবে তার ফায়সালা কি? এটাও কি নাজায়েয ও হারাম?
এর ফায়সালা হলো, ঐ সকল লোক মুসলিম শরীফ উনা মধ্যে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ- 
الدين نصيحة.
অর্থাৎ দ্বীন হচ্ছে অপরের ভাল কামনা করা।এর মেছদাক বা নমুনা। অর্থাৎ এদেরকে কেউ হিদায়েতের দায়িত্ব দেয়নি বা এরা হিদায়েতের ব্যাপারে কোন দায়িত্ব গ্রহণ করেনি। এরা হচ্ছে মানুষের খয়েরখাঁ বা হিতাকাঙ্খী।
এখানে আরো উল্লেখ্য যে, তিবরানী শরীফের উপরোক্ত হাদীসে দেখা যাচ্ছে যে, সৎকাজ না করলেও অপরকে সৎ কাজ করতে বলা হয়েছে। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক বলেন, “তোমরা ঐ কথা বল কেন, যা তোমরা নিজেরা করোনা।
তাহলে এই পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বক্তব্যের মধ্যে ফায়সালা কি?
মূলত এর ফায়সালা ওলামায়ে মুহাক্কিক, মুদাক্কিকগণ দিয়েছেন। উনাদের মতে তিবরানী শরীফ উনার হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সৎ কাজ না করলেও সৎ কাজের দাওয়াত দেয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন প্রচারক)-এর জন্য। যেমন কোন বাবা নিজে নামায বা অন্যান্য নেক কাজ না করা সত্বেও তার সন্তান ও অধীনস্থদের নামায বা অন্যান্য নেক কাজের জন্য বলতে পারেন।
আর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নিজে সৎ কাজ না করে অপরকে তা বলার জন্য যে নিষেধবাণী করা হয়েছে, তা হলো- মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য। অর্থাৎ মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য নিজে সৎ কাজ না করে অপরকে তা করতে বলা জায়েয নেই।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে,
عن انس قال- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مررت ليلة اسرى بى بقوم تقرض شفاههم بمقاريض من النار- فقلت يا جبريل من هؤلاء- قال هؤلاء خظباء امتك الذين يقولون مالا يفعلون.
অর্থ : হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মিরাজ শরীফ উনার রাত্রে এমন একটি ক্বওমের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, যাদের ঠোঁটগুলো আগুনের কেঁচি দ্বারা কাটা হচ্ছিল। আমি হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? জবাবে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম বলেন, এরা আপনার উম্মতদের মধ্যে ঐ সকল ওয়ায়েজ বা বক্তা, যারা এমন কথা বলতো, যেটা তারা নিজেরা আমল করতোনা।” (তিরমিযী, মিশকাত, তোহফাতুল আহওয়াজী, উরফুশ শাজী, মায়ারেফুস সুনান, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, যারা মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন প্রচারক), তারা তিবরানী শরীফের বর্ণনা মোতাবেক সৎকাজ না করেও অপরকে সৎকাজ করার কথা বলতে পারবেন। আর যারা মুবাল্লিগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক), তারা কুরআন শরীফের উক্ত আয়াত শরীফ মোতাবেক নিজে সৎকাজ না করে অপরকে সৎকাজ করার কথা বলতে পারবেন না। কারণ যদি সকলের জন্যে আমভাবে একথা বলা হয় যে, সৎকাজ না করেও অপরকে সৎকাজের কথা বলা জায়েয, তবে মিরাজ শরীফ উনাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত লোকদের জিহ্বা কাটা হলো কেন? এতে বুঝা গেল যে, তিবরানী শরীফ উনার উক্ত হুকুম সকলের জন্যে প্রযোজ্য নয়। বরং যারা মুবাল্লিগে আম, তাদের জন্যেই প্রযোজ্য। আর কুরআন শরীফের উক্ত আয়াত শরীফ ও মিরাজ শরীফ সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা যারা মুবাল্লিগে খাছ, তাদের জন্যে প্রযোজ্য।
সুতরাং হাক্বীক্বতে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে কোনই দ্বন্দ্ব নেই। অনেকে এর সঠিক ব্যাখ্যা না জানার ও না বুঝার কারণে এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলে থাকে। মূলত উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ যার যার ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রযোজ্য ও অনুসরণীয়।]
সুওয়ালে উল্লেখকৃত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর বক্তব্য সমূহের জাওয়াব -

৬১নং সুওয়াল ও তার জাওয়াব

সুওয়াল : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মাওলানা আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী লিখিত- তাবলীগে ইসলাম বা দ্বীনের দাওয়াত নামক কিতাবের ৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,  থানবী সাহেব তরীকায়ে মীলাদ কিতাবে উল্লেখ করেছেন, মীলাদ অনুষ্ঠান শরীয়তে একবারেই নাজায়েয ও পাপের কাজ।আবার তাদের মধ্যে কারো কারো আক্বীদা হলো এই যে, “মহান আল্লাহ পাক শেরেকের গুণাহ মাফ করবেন কিন্তু মীলাদ-ক্বিয়াম করার গুণাহ্ কখনো মাফ করবেন না।তাই দেখা যায়, তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মীলাদ শরীফ পাঠ করেনা বা মীলাদ মজলিসে বসেনা।
উল্লিখিত কিতাবের উপরোক্ত বক্তব্য ও মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উক্ত আক্বীদা সম্পর্কে শরীয়তের ফায়সালা কি? নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াব : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের মীলাদ শরীফ সম্পর্কিত উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ জেহালতপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর ও কল্পনাপ্রসুত। আর জায়েযকে নাজায়েয ও নেক কাজকে পাপের কাজ বলার কারণে সুস্পষ্ট কুফরী। কারণ সহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো- মীলাদ-ক্বিয়াম বা মীলাদ অনুষ্ঠান সুন্নতে উম্মত, মুস্তাহ্সান। অশেষ ফযীলত ও বরকত লাভের মাধ্যম। নিম্নে মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
মীলাদ-ক্বিয়াম এর অনুষ্ঠান করা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ জায়েয ও সুন্নতে উম্মত বা মুস্তাহ্সান। নাজায়েয বা বিদয়াত   মোটেও নয়।  কিছু লোক
قلت فهم - قلت علم
অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, মীলাদ-ক্বিয়াম করা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বা নাজায়েয। এ ব্যাপারে মীলাদ-ক্বিয়াম বিরোধীদের খোরা ও অবাস্তব যুক্তি হলো- মীলাদ-ক্বিয়ামের এরূপ পদ্ধতি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা এবং খাইরুল কুরুনের অর্থাৎ তিন যুগের কেউ বর্তমান পদ্ধতিতে মীলাদ-ক্বিয়াম করেননি, তাই এটা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ বা নাজায়েয।
মূলত যদি তাই হয়ে থাকে, তবে বর্তমানে ক্বওমী বা খারেজী মাদ্রাসাগুলোতে যে পদ্ধতিতে শিক্ষা দেয়া হয়, তাও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ বা নাজায়েয। কারণ খাইরুল কুরুনের কেউ এরূপ পদ্ধতিতে ইলম অর্জন করেননি এবং বর্তমানে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের যে তর্জ-তরীক্বা বা নিয়ম-পদ্ধতি রয়েছে, সেগুলোও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্। কারণ খাইরুল কুরুনে দ্বীন প্রচারের এরূপ পদ্ধতি ছিলনা। অনুরূপ মাদ্রাসায় পড়িয়ে বেতন নেয়া, মাদ্রাসার জন্যে চাঁদা আদায় করা, খতমে বোখারীর মাহ্ফিল করা, ওয়াজ মাহফিলের জন্যে স্টেজ  ও প্যান্ডেল তৈরী করা ইত্যাদি আরো অনেক কাজই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ বা নাজায়েয হবে। কেননা উক্ত কাজগুলোও তো খাইরুল কুরুনের সময় ছিলনা বা তাঁরা কেউ করেননি। মীলাদ-ক্বিয়াম বিরোধীরা এগুলোকে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ বা নাজায়েয অর্থাৎ পাপের কাজ বলে ফতওয়া দিবেন কি?
মূলকথা হলো- পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, জমা ও ক্বিয়াস সম্মত কোন বিষয়, যদিও তা খাইরুল কুরুনের পর উদ্ভাবিত হোক না কেন, তা অবশ্যই শরীয়তে গ্রহণযোগ্য ও জায়েয। আর কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস বিরোধী কোন বিষয়, যদিও তা খাইরুল কুরুনেই উৎপত্তি লাভ করুক না কেন, সেটি শরীয়তে সম্পূর্ণই পরিত্যাজ্য ও নাজায়েয।
উল্লেখ্য, খাইরুল কুরুনেই ৭২টি বাতিল ফেরকা (যেমন- খারেজী, রাফেজী, শিয়া, মুতাজিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া ইত্যাদি) উৎপত্তি লাভ করেছে, তাহলে কি উক্ত বাতিল ফেরকাসমূহ অনুসরণীয় হবে? কখনই নয় বরং খাইরুল কুরুনে উৎপত্তি লাভ করা সত্ত্বেও তারা বাতিল ও গোমরাহ। কারণ, তাদের আক্বীদা ও আমল পবিত্র ‍কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের সম্পূর্ণ বিপরীত।
সুতরাং কোন বিষয় শরীয়তে জায়েয বা নাজায়েয হওয়ার জন্য খাইরুল কুরুনে হওয়া বা না হওয়া শর্ত নয়, বরং তা জায়েয বা নাজায়েয প্রমাণ করার মাপকাঠি হলো- পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস।
তাছাড়া বিদয়াত বা নতুন উদ্ভাবিত বিষয় বলতেই শরীয়তে পরিত্যাজ্য নয়। বরং অধিকাংশ ওলামা, ফুদালা, মুহাদ্দিস, মুফাস্সির, মুহাক্কিক ও মুদাক্কিকগণের মতে বিদয়াত প্রধানতঃ দুপ্রকার-(১) বিদয়াতে হাসানাহ্ (২) বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্, যা পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن جرير- قال ....... قال النبى صلى الله عليه وسلم- من سن فى الاسلام سنة حسنة- فله اجرها واجر من عمل بها من بعده ........ ومن سن فى الاسلام سنة سيئة كان عليها وزرها ووزر من عمل بها من بعده.
অর্থ : হযরত জরীর বিন আব্দুল্লাহ্ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে কেউ দ্বীন ইসলামে উত্তম কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়ত সম্মত), তার জন্য সে সওয়াব পাবে এবং তার পরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে তার সওয়াবও সে পাবে। আবার যে কেউ দ্বীন ইসলামে কোন শরীয়ত বিরোধী পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে, তার গুণাহে সেও গুণাহ্গার হবে এবং তার পরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে, তাদের গুণাহ্ও তার আমলনামায় যোগ হবে।” (মুসলিম, মেশকাত, শরহে নববী, মেরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মিরআতুল মানাজীহ)
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিস, ইমামুল মুহাদ্দিসীন, হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত শরাহ মেরকাত শরীফেউল্লেখ করেন যে,
قال الشافعى رحمه الله تعالى مااحدث مما يخالف الكتاب او السنة اوالاثر او الاجماع فهو ضلالة. ومااحدث مما لا يخالف شيأممالا يخالف شيأ مما ذكر فليس ميذموم.
অর্থ : ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে নতুন উদ্ভাবিত কাজ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, আছার (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের আমল বা ক্বওল) অথবা ইজমার বিরুদ্ধ বলে প্রমাণিত, তাই গোমরাহী ও নিকৃষ্ট। আর যে নতুন উদ্ভাবিত কাজ উল্লিখিত কোনটির বিপরীত বা বিরুদ্ধ নয়, তা মন্দ বা নাজায়েয নয়।
বিদয়াতের অনুরূপ সংজ্ঞা বা বক্তব্য ওমদাতুল ক্বারী শরহ্ বোখারী, জাওয়াহিরুল বিহার, শরহুল মুসলিম, জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ইরশাদুল উনূদ, তাহ্যীবুল আসমা ওয়াল লোগাত, ফতহুল মুলহিম, ইহ্ইয়াউ উলুমিদ্বীন, মোযাহেরে হক্ব, ফাতহুল মুবীন শরহে বোখারী, আশয়্যাতুল লুময়াত, শামী, ইশবাউল কালাম, হুসনুল মাকাছেদ ইত্যাদি আরো অনেক কিতাব সমূহে রয়েছে।
কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় এখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো। বিদয়াত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১৫তম ও ৩৬তম সংখ্যা পাঠ করুন।
সুতরাং বিদয়াতের উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যে সকল নতুন বিষয়সমূহ উৎপত্তি লাভ করবে, উহা যদি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের বিপরীত বা বিরুদ্ধ না হয়, তবে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণীয়। আর যারা এরূপ নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবেন, তারা অশেষ সওয়াবের অধিকারী হবেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি লাভে সামর্থ হবেন।
মূলত পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর ও ফিক্বাহের অসংখ্য কিতাবের দলীল-প্রমাণ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, মীলাদ শরীফ পাঠ করা সুন্নাতুল্লাহ, সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুন্নতে সাহাবা ও সুন্নতে উম্মত তথা মুস্তাহ্সান।
কারণ, মীলাদ (ميلاد), মাওলিদ (مولد), ও মওলূদ (مولود) এ তিনটি শব্দের সমষ্টি হচ্ছে মীলাদ শরীফ, যার অর্থ দাড়ায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রাহ্মাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সানা-ছিফত করা ও উনার প্রতি ছালাত-সালাম পাঠ করা। যা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশের অন্তর্ভূক্ত।
অতএব মীলাদ শব্দের অর্থ যদি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সানা-ছিফত করা ও উনার প্রতি ছালাত-সালাম পাঠ করা হয়ে থাকে, তবে তো তা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রাসূলসহ সকলেরই সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত।
কেননা মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন, স্বয়ং পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার প্রায় সর্বত্র সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সানা-ছিফত করেছেন এবং মহান আল্লাহ পাক ও উনার ফেরেশতাগণ সকলেই সর্বদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছালাত-সালাম পাঠ করেন এবং আমাদেরকেও পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
যেমন, পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন,
ان الله وملئكته يصلون على النبى يا ايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.
অর্থ : নিশ্চয় মহান আল্লাহ পাক ও উনার ফেরেশতাগণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছালাত-সালাম পাঠ করেন। হে ঈমানদারগণ, তোমরাও তাঁর প্রতি ছালাত-সালাম পাঠ কর।” (পবিত্র সূরা আহযা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
আর তাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ছালাত-সালাম পাঠ করার গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনা করেছেন। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن ابن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اولى الناس بى يوم القيامة اكشر هم على صلوات.
অর্থ : হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, “ঐ ব্যক্তিই ক্বিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটে থাকবে, যে ব্যক্তি আমার প্রতি অধিক মাত্রায় ছালাত পাঠ করবে।” (তিরমিযী, মেশকাত, মায়ারেফুস সুনান, উরফুশ শাযী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, মেরকাত, লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব)
আর অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن ابن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم. ان لله ملئكة سيا حين فى الارض يبلغونى من امتى السلام.
অর্থ : হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মহান মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের কিছু সংখ্যক ফেরেশতা রয়েছেন, যারা পৃথিবীতে ভ্রমণ করে বেড়ান এবং আমার উম্মতের পাঠকৃত সালাম আমার নিকট পৌঁছিয়ে দেন। (নাসাঈ, দারেমী, মেশকাত, মেরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ, মোযাহেরে হক্ব)
অতএব, সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মীলাদ শরীফ পাঠ করা অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সানা-ছিফত করা ও উনার প্রতি ছালাত ও সালাম পাঠ করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরই নির্দেশ বা আমল।
তবে প্রশ্ন উঠতে পারে, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয়, তার প্রমাণ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে রয়েছে কি? হ্যাঁ বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয়, তা অবশ্যই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফসম্মত। কারণ মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,     
ومن يشاقق الرسول من بعد ما تبين له الهدى واتبع غير سبيل المؤمنين نوله ماترلى.
অর্থ : হিদায়েত প্রকাশিত হওয়ার পর যারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করবে এবং মুমিনদের পথ রেখে ভিন্ন পথের অনুসরণ করবে, আমি তাদের সেদিকেই ফিরাবো যেদিকে তারা ফিরেছে।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৫)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মুমিনদের পথ বা পদ্ধতি অবশ্যই শরীয়তে গ্রহণযোগ্য (যদি তা শরীয়সম্মত হয়), যার কারণে মুমিনদের পথকে অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
عن جرير قال- قال النبى صلى لله عليه وسلم. من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واحرمن عمل بها من بعده ...... ومن سن فى الاسلام سنة سيئة كان عليها وزرها ووزر من عمل بها من بعده.
অর্থ : হযরত জরীর বিন আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে কেউ ইসলামে কোন উত্তম পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়তসম্মত), তার জন্যে সে সাওয়াব পাবে এবং তারপর যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে, তার সওয়াবও সে পাবে। ....... আবার যে কেউ দ্বীন ইসলামে কোন শরীয়ত বিরোধী পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে, তার গুণাহ সে পাবে এবং তার পরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে, তাদের গুণাহও তার আমলনামায় দেয়া হবে।” (মুসলিম, শরহে নববী, মেশকাত, মেরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ, মোযাহেরে হক্ব)
মূলকথা হলো, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয়, তা মুমিনদের প্রবর্তিত উত্তম পদ্ধতি, যার বিরোধীতা করতে কুরআন শরীফে নিষেধ করা হয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, মীলাদ শরীফের এরূপ পদ্ধতি নির্ধারণ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যাতে করে মানুষ অল্প সময়ে নিয়মতান্ত্রিক বা শরীয়ত সম্মতভাবে সাইয়্যিদুল মুসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সানা-ছিফত, জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করতে পারে এবং তার প্রতি ছালাত-সালাম পাঠ করতে পারে। যেমন বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মাদ্রাসায় ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়া হয়, তা খাইরুল কুরুনেরঅনেক পরে উদ্ভাবন করা হয়েছে, এ জন্য যে, যাতে করে অল্প সময়ে সহজভাবে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করার যোগ্যতা হাছিল করতে পারে, তা যদি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফসম্মত বা জায়েয হতে পারে, তবে যার সানা-ছিফত করা ও যার প্রতি ছালাত-সালাম পাঠ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ ও উনার সন্তুষ্টি পাওয়ার কারণ। উনার সানা-ছিফত করার ও উনার প্রতি ছালাত-সালাম পাঠ করার মীলাদ শরীফের উক্ত পদ্ধতি কেন পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফসম্মত বা জায়েয হবেনা? অবশ্যই এটা পিবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ শরীফসম্মত ও জায়েয। কারণ কারো পক্ষেই প্রমাণ করা সম্ভব হবেনা যে, মীলাদ শরীফে যে সকল আমল রয়েছে, তার একটিও শরীয়ত বিরোধী। বরং তার প্রত্যকটাই শরীয়ত তথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত।
যেমন- মীলাদ শরীফের প্রথমেই পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। কারণ কোন নেক কাজ কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা রহমত, বরকত তথা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের কারণ।
অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ছালাত পাঠ করা হয়। কারণ ছালাত পাঠ করা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই নির্দেশ। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, মীলাদ শরীফে যেরূপ সম্মিলিতভাবে ছালাত পাঠ করা হয়, তার প্রমাণ পবিত্র কুরআন শরীফ অথবা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে কি? অবশ্যই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে তার প্রমাণ রয়েছে। যেমন- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قال النبى صلى الله عليه وسلم- اذا جلس قوم يصلون على حفت بهم الملئكة من لدن اقدامهم الى عنان السماء با يديهم قراطيس الفضة واقلام الذهب يكتبون الصلات على النبى صلى الله عليه وسلم وبيقولون زيدوا زاد كم الله.
অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যখন কোন সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে বসে এবং সম্মিলিতভাবে আমার প্রতি ছালাত পাঠ করে, তখন ফেরেশতাগণ উনাদের পা থেকে আকাশ পর্যন্ত বেষ্টন করে নেন। উনাদের হাতে থাকে রূপার কাগজ ও সোনার কলম। যার দ্বারা তারা ছালাতের সাওয়াব লিখতে থাকেন এবং বলেন, তোমরা আরো অধিক মাত্রায় ছালাত পাঠ কর, মহান আল্লাহ পাক তোমাদের উন্নত করবেন।” (দুররুল মুনাজ্জাম, কাশফুল গুম্মাহ)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن ابن عمر رضى الله عنهما. قال النبى صلى الله عليه وسلم زينوا مجا لسكم بالصلوة على فان صلاتكم على نورلكم يوم القيامة. (ديلمى مسند الفردوس(
অর্থ : হযরত ইবনে মর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমাদের মজলিসকে আমার প্রতি ছালাত পাঠের দ্বারা সুসজ্জিত কর। কারণ তোমাদের ছালাত পাঠ ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের জন্যে নূরে পরিণত হবে।” (দায়লমী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সম্মিলিতভাবে মজলিসে ছালাত পাঠ করা অত্যন্ত ফযীলতের কাজ। শরীয়ত সম্মত তো অবশ্যই। তাই মীলাদ শরীফের মধ্যে সম্মিলিতভাবে ছালাত পাঠ করা হয়।
সাথে সাথে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে শরীয়তসম্মত সুন্দর সুন্দর কাছীদা পাঠ করা হয়। কারণ স্বয়ং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে কাছীদা পাঠ করতেন। যেমন বিশিষ্ট ছাহাবী বিখ্যাত কবি, হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রচিত কাছীদা পাঠ করে শুনানোর জন্য স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ মিম্বর মুবারক উনার পাশে উনার জন্যে আরেকটি মিম্বর স্থাপন করে দিয়েছিলেন, যার উপর দাঁড়িয়ে হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কাছীদাসমূহ পাঠ করতেন।
কাজেই মীলাদ শরীফে যে কাছীদা পাঠ করা হয়, তা সুন্নতে ছাহাবা। শরীয়তসম্মত তো বটেই। অতঃপর তাওয়াল্লুদ শরীফপাঠ করা হয়। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাওয়াল্লুদ বা জন্ম বৃত্তান্ত ও জীবনী আলোচনা করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরই নির্দেশ, যেমন- পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اذكروا نعمة الله عليكم.
অর্থ : তোমাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তার আলোচনা কর। অর্থাৎ  সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই হচ্ছেন সে উল্লিখিত নিয়ামত। তোমরা উনার আলোচনা কর।  (পবিত্র সূরা ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)
মূলত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাওয়াল্লুদ শরীফ বা জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করা শরীয়ত সম্মত তো অবশ্যই, সাথে সাথে অফুরন্ত রহমত, বরকত ও সন্তুষ্টি লাভের কারণ। তাই মীলাদ শরীফে তাওয়াল্লুদ শরীফপাঠ করা হয়।     
অতঃপর ক্বিয়াম বা দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করা হয়। কারণ অনুসরণীয় সকল ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক, মুদাক্কিক ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ উনাদের সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করা আদবের অন্তর্ভূক্ত। তাই সোনার মদীনায় রওজা শরীফ যিয়ারতের সময় দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করতে হয়।
এ প্রসঙ্গে এ দেশেরই প্রখ্যাত আলেম, মুজাহিদে আযম, হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরীদপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রসিদ্ধ কিতাব তাসাউফ তত্বেলিখেছেন, “মদীনা শরীফে যেহেতু দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করতে হয়, সেহেতু মীলাদ শরীফের মধ্যেও দাঁড়িয়ে সালাম দেয়া আদব, শরাফত বা ভদ্রতা।
তাছাড়া শরীয়তের কোথাও দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করতে নিষেধ করা হয়েছে, এরূপ একটি প্রমাণও কেউ পেশ করতে পারবেনা। তাই মীলাদ শরীফে ক্বিয়াম করা হয় অর্থাৎ দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করা হয়।
অতঃপর সব শেষে মুনাজাত করা হয়। কারণ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে,
الدعاء مخ العبادة.
অর্থাৎ দোয়া বা মুনাজাত হচ্ছে, ইবাদতের মুল বা মগজ।তাই মীলাদ শরীফ শেষে মুনাজাত করা হয়।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মীলাদ শরীফ, মীলাদ শরীফের পদ্ধতি এবং মীলাদ শরীফে যা যা করা হয়, সবই কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফসম্মত।
মূলত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এরূপ সানা-ছীফত করা পবিত্র বিলাদতের আলোচনা করা, মহান আল্লাহ পাক, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযতর আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি সকলেরই সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। কারণ মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সকল স্থানেই উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সানা-ছীফত করেছেন এবং মহান আল্লাহ পাক ও উনাহযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ সর্বদা উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সালাত-সালাম পাঠ করছেন। অনুরূপ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ সীমাহীনভাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সানা-ছীফত করেছেন ও সর্বদাই নার প্রতি ছালাত এবং সালাম পাঠ করতেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে- হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে, হযরত আবু আমের আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঘরে গেলেন। তিনি সেখানে দেখতে পেলেন যে, হযরত আবু আমের আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিজ সন্তানাদি ও আত্মীয়-স্বজনদের একত্রিত করে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত (জন্ম বৃত্তান্ত) উনার আলোচনা করছেন। এটা দেখে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত খুশি হলেন এবং বললেন, হে আমের! নিশ্চয় মহান আল্লাহ পাক তোমার জন্য উনার রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করেছেন এবং সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ আপনাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। আর যারা আপনার ন্যায় এরূপ আমল করবে, তারাও তোমার ন্যায় নাযাত পাবে।” (কিতাবুত-তানবীর ফী মাওলুদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলুদিল মোস্তফা)।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে যে, একদিন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সেখানকার সকল লোকদেরকে উনার নিজ ঘরে একত্রিত করে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র (বিলাদত) জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করেন, যা শুনে উপস্থিত সকলেই আনন্দচিত্তে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ছালাত ও সালাম পাঠ করেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হলেন এবং উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
خلت لكم شفا عتى.
অর্থাৎ তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল। (মাওলুদুল কাবীর, দুররুল মুনাজ্জাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলুদিল মোস্তফা)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, সকলে একত্রিত হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতের আলোচনা করা, ওনার প্রতি ছালাত ও সালাম পাঠ করা সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين.
অর্থ : তোমাদের জন্য আমার সুন্নত ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীন তথা হিদায়েত প্রাপ্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের সুন্নত অবশ্য পালনীয়।” (মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ, মোযাহেরে হক্ব)
আর তাই দেখা যায়, পূর্ববর্তী অনেক ইমাম-মুজতাহিদগণ মীলাদ-ক্বিয়ামকে জায়েয বলেছেন ও সুন্নাত আদায় করার লক্ষ্যে নিজে মীলাদ-ক্বিয়ামের মজলিস করতেন। যেমন- বিশিষ্ট মুজতাহিদ, ইমাম তকীউদ্দীন সাবকী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজে মীলাদ-ক্বিয়াম করতেন এবং এটা জায়েয বলেন। শায়খ আবুল খাত্তাব মর ইবনে ক্বালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল মুহাদ্দিসীন, হাফেজ ইবনে হাজর মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল মুফাস্সিরীন হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনারা প্রত্যেকেই উনাদের স্ব-স্ব কিতাবে মীলাদ-ক্বিয়াম জায়েয হওয়া সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা করেন।
তাছাড়া যিনি সর্ব প্রথম পাক-ভারত উপমহাদেশে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার প্রচার-প্রসার করেন অর্থাৎ বিখ্যাত মুহাদ্দিস, হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আশ্রাফ আলী থানবী সাহেবের পীর, শায়খুল আরব ওয়াল আযম, হযরত হাজী মদাদুল্লাহ মুহাজিরেক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বাংলার মুলুকে  প্রায় ৫৫ বৎসর হিদায়েতের কাজ করনেওয়ালা, হযরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুজাদ্দিদে যামান, হযরত আবু বক্বর ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হাফেজে পবিত্র হাদীছ শরীফ, আল্লামা রুহুল আমীন বশীরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ন্যায় সর্বজন স্বীকৃত, অনুসরণীয় আলেম ও বুযূর্গগণের প্রত্যেকেই মীলাদ-ক্বিয়াম করতেন ও তাঁদের স্ব-স্ব কিতাবে লিখেছেন যে, মীলাদ-ক্বিয়াম সুন্নতে উম্মত ও মুস্তাহসা, জায়েয তো বটেই।
উল্লেখিত বিশ্ববিখ্যাত, সর্বজন স্বীকৃত ও অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ উনাদের কিতাবসমূহ হতে নিম্নে মীলাদ-ক্বিয়াম জায়েয হওয়ার কতিপয় দলীল পেশ করা হলো-
বিখ্যাত মুহাদ্দিস, শায়খ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনা
كرامات عزيزيه.
(কারামাতে আযীযিয়াহ) নামক কিতাবে উল্লেখ করেন,
در تمام سال دو مجلس درخانہ منعقد شوند- اول کہ مردم روز عاشورہ یا دویک روز پین ازیس قریب چھا رصد کس یا پنج صدکس بلکہ ھزار فراھم می أبندہ و ذکر فضائل حسنین کہ درحدیث و ارد شدہ در بیان می آید ....
باقی ماتند مجلس مولود شریف پس حالش اینسب کہ بتاریخ دواز دھم شھر ربیح الول مین ھمین کہ مردم مو افق معمول سابق فراھم شدند و در خواندان درود شریف مشغول  گشتند و فقیر می آید.....
অর্থ : সারা বৎসরে এই ফকীরের ঘরে দুই বার মাহ্ফিল হয়ে থাকে। প্রথমটি আশুরা অথবা তার ২/১ দিন পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মাহফিলে ৪০০/৫০০ কখনো হাজার লোকও সমবেত হয়ে থাকে। উক্ত মাহফিলে ইমাম হাসান, হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জীবনী পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে আলোচনা করা হতো। ....
দ্বিতীয় মাহ্ফিলটি হতো মীলাদ শরীফের মাহ্ফিল। এতে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে পূর্ব নিয়ম অনুযায়ী (হাজার) লোক উপস্থিত হতো এবং দরূদ শরীফ পাঠে মশগুল হতো। অতঃপর আমি নিজেই সেখানে উপস্থিত হতাম।
মাওলানা আশ্রাফ আলী থানবী সাহেবসহ সকল ওলামায়ে দেওবন্দের পীর ও মুর্শিদ, শায়খে আরব ওয়াল আযম, আল্লামা হাজী এমদাদুল্লাহ্ মুহাজেরে মক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার শ্চল্পƒণ্ড হৃঃব্জুƒ (হাফতে মাসায়েল) কিতাবে উল্লেখ করেন যে,
مولود شریف کو ذریریعہء برکات سمجھ کرھر سال منعقد کرتا ھون اور قیام کے وقت بے  حد لطف و لذت پاتاھون-
অর্থ : মীলাদ শরীফের মাহফিলকে বরকত লাভের উসীলা মনে করে আমি প্রতি বৎসর মীলাদ শরীফের মজলিস করি এবং মীলাদ মাহফিলে ক্বিয়াম করার সময় আমি অশেষ আনন্দ ও স্বাধ উপভোগ করি।
বাংলার মুলুকে প্রায় ৫৫ বৎসর দ্বীন প্রচারকারী আল্লামা কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনা
رسالة الفيصله.
 (রিসালাতুল ফায়সালা) নামক কিতাবে উল্লেখ করেন যে,
ھمنے رسالہ ملخص مین مولود شریف کو پچیس عالمون اور امامون کے قول و فعل سے اور  اپنے طریقے کے پیشواوون کے قول سے اور توارث سے ثابت کیا ھے اور مولدکا منع کرنیوالا فقط شخص فاکھانی مالکی ھے سو جماعت کی مقابلہ  مین انکے دھکے کا کیا اعتبار ھے-
اور قیام کو ایک مجتھد اور مکہ معظمہ کے دومعتمد اور نامی عالم قد یم کے فتاوی سے اور بری بری معتبر کتابون سے اور توارثسے ثابت کیا ھے- اور یہ قیام چونکہ قیام تعظمی ھے اسواسطے اسکی اصل حضرت عئشہ علیہا السلام کی حدیث سے ثابت کیا ھے-
অর্থ : আমি মুলাখ্যাছকিতাবে ২৫ জন আলেম ও ইমামের ত্মল্ফèত্রৈ বাণী ও ত্মল্পম্লত্রৈ কর্ম দ্বারা এবং নিজ তরীক্বার বুযুর্গদের বাণী ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দলীলের ভিত্তিতে মীলাদ শরীফকে যথার্থভাবেই (জায়েয) সাব্যস্ত করেছি। মীলাদ নিষেধকারী ব্যক্তি হলেন, মাত্র ফাকেহানী মালেকী। সুতরাং (মীলাদ জায়েয বলে ফতওয়া দানকারী) বৃহৎ জামায়াতের মতের বিরুদ্ধে তার এ ধোকাবাজী মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। আর একজন মুজ্তাহিদ ও মক্কা শরীফের দুজন বিশ্বস্ত ও প্রসিদ্ধ প্রাচীন আলেমের ফতওয়া ও বিখ্যাত কিতাবসমূহ এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দলীলের ভিত্তিতে মীলাদ শরীফে ক্বিয়ামকরা জায়েয প্রমাণ করেছি। আর উক্ত ক্বিয়াম, ক্বিয়ামে তাযীমী বিধায় উহাকে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা (জায়েয) প্রমাণ করেছি।

ক্বিয়াম শরীফ উনার অকাট্য দলীল
ক্বিয়ামের লোগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলো- দন্ডায়মান হওয়া। আর পারিভাষিক বা প্রচলিত অর্থে ক্বিয়াম শব্দের অর্থ হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় বেলাদত শরীফ বা জন্ম বৃত্তান্ত শ্রবণ করতঃ দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করা।
মূলত ক্বিয়াম করা হয়, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি তাযীম প্রদর্শনার্থে ও আদব রক্ষার্থে। কারণ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অসংখ্য জায়গায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তাযীম-তাক্রীম করার ও উনার প্রতি আদব রক্ষা করার কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وتعزروه وتوقروه.
অর্থ : তোমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাহায্য ও তাযীম কর।  (পবিত্র সূরা ফাতাহ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাযীম করা সম্পর্কে আল্লামা কাজী আয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকিতাবুশ শেফায়উল্লেখ করেন,
اعلم ان حرمة النبى صلى الله عليه وسلم بعد موته وتوقيره ونعظيمه لازم كما كان حال حياته وذالك عند ذكره صلى الله وذكر حديشه وسنته وسعاع انمه وسيرته.
অর্থ : জেনে রাখ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওফাতের পর উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা বা তাযীম-তাকরীম করা ঐরূপই ওয়াজিব, যেরূপ হায়াত মুবারকে ওয়াজিব ছিল। কাজেই উনার বরকতময় জীবনী শ্রবণকালে, পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকালে, নাম মুবারক উচ্চারণকালে ও উনার বরকতময় ও উৎকৃষ্টতম আখলাকের কথা শ্রবণকালে, উনার প্রতি তাযীম-তাক্রীম বা সম্মান প্রদর্শন করা ওয়াজিব।
আর এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে যে ক্বিয়াম করা হয়, তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন বা তাযীম-তাকরীম করার জন্যেই করা হয়।
যেমন এ প্রসঙ্গে আশিক্বে রসূল, হযরতুল আল্লামা শাহ আব্দুল হক লাহাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তদীয় দুররুল মুনাজ্জামকিতাবে লিখেন,
ان القيام عند وضعه صلى الله عليه وسلم لتعظيم النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনার সময় উনার সম্মানার্থে বা তাযীম-তাকরীমের জন্যেই ক্বিয়াম করা হয়।” (আল উসীলাহ পৃঃ৫৮)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, প্রকৃতপক্ষে ক্বিয়াম করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরই নির্দেশ, কারণ ক্বিয়াম হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সন্মান প্রদর্শন করার বা তাযীম-তাক্রীম করার একটি বিশেষ মাধ্যম।
এখানে উল্লেখ্য যে, মীলাদ শরীফের ক্বিয়ামকে বিদয়াত প্রমাণ করতে গিয়ে কেউ কেউ বলে থাকে যে- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন কালে দাঁড়াতেন না, কারণ দাঁড়ালে তিনি অসন্তুষ্ট হতেন। তাদের এ বক্তব্যের জাওয়াব হলো- হ্যাঁ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনকালে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দাঁড়ালে, দাঁড়াতে নিষেধ করতেন।
তবে অবশ্যই উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ব্যাখ্যা স্বাপেক্ষ। উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ খানার সঠিক ব্যাখ্যা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন, হমাতুল্লিল আলামীন।উনি সবসময়ই চাইতেন যেন উম্মতের কোন কষ্ট না হয়। তাই বার বার দাঁড়ানোকে তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের জন্যে কষ্টকর মনে করে দাঁড়াতে নিষেধ করতেন। শরীয়তের খেলাফ মনে করে নিষেধ করতেন না অথবা নিজের বিণয় প্রকাশ করার লক্ষ্যে  বা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদেরকে বিণয় শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়াতে নিষেধ করতেন।
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় থানবী সাহেবের ইমদাদুল ফতওয়ায় মিরকাত শরীফ উনার বরাত দিয়ে লেখা হয়েছে যে,
حضور صلی اللہ علیہ وسلم نے اپنے لئے (اس قیام) کو کیون نھین پسند فرما یا اسکی وجہ تواضع اور سادھی بے تکلفی تھی- چنا نچہ مرقاۃ مین مصرح ھے-
অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় বিণয, সরলতা ও ভদ্রতা প্রকাশে দাঁড়ানো পছন্দ করতেন না বা নিষেধ করতেন। যেমন মেরকাত শরীফে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে।
এ প্রকার বিণয় বা শিষ্টতা ইত্যাদির উদাহরণস্বরুপ বলা যেতে পারে যে, আমাদের ঘরে কোন মেহমান আসলে তাঁকে মেহমানদারী করাতে গিয়ে যখন কোন খাদ্যদ্রব্য তাঁর দিকে বাড়িয়ে দেয়া হয়, তখন ঐ মেহমান যেমন সৌজন্য ও ভদ্রতাসূচক থাক, থাকবা না না, আর দরকার নেইইত্যাদি বলে থাকেন। যার প্রকৃত অর্থ এই নয় যে, তাঁর খাওয়া শেষ হয়েছে, বরং তা শিষ্টাচার বা ভদ্রতাজনিত অনিচ্ছা মাত্র। এমতাবস্থায় আমরা কেউই তাঁর অনিচ্ছার প্রতি গুরুত্ব প্রদর্শন করিনা, বরং অধিক আগ্রহ সহকারে তাঁর খাওয়ার প্রতি যত্নবান হই। কেননা, মেহমানের সৌজন্য তাঁরই তরফ হতে এবং মেজবানের ভদ্রতা ও কর্তব্য তার তরফ হতে।
এখানে উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যেসকল আদেশ বা নিষেধ এরূপ সৌজন্য এবং ভদ্রতা প্রকাশক ছিল। বিশিষ্ট ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ অনেক ক্ষেত্রে সেসকল আদেশ ও নিষেধের শব্দগত অর্থের পরিবর্তে ভাবার্থ গ্রহণ করেছেন। তেমন আমলের ক্ষেত্রেও শব্দগত অর্থের আমলের পরিবর্তে তার গুঢ় বা ভাবার্থবোধক আমল করাই মুস্তাহাব মনে করেছেন। যেমন- পবিত্র বুখারী শরীফ উনার ১ম খন্ডে ৯৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বণী ওমর ইবনে আওফের কোন (বিবাদে) মীমাংসা করতে যাওয়ায়, নামাজের জন্য মসজিদে উপস্থিত হতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল। সেহেতু হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম ইমাম হয়ে নামা পড়াতে আরম্ভ করলেন। ইতিমধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় এসে পৌঁছলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমণ অনুভব করে, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম পেছনে আসতে চাইলে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইশারা করে উনাকে স্বস্থানে থাকার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু তা সত্বেও তিনি পেছনে সরে আসলেন। সেজন্য নামাজান্তে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন,
يا ايابكر ما منعك ان تثبت اذ امرتك.
অর্থ : হে আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম! আমি নির্দেশ দেয়া সত্বেও আপনি স্বস্থানে থাকলেন না কেন?”
উত্তরে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম বললেন,
ماكن لابن ابى قحافه ان يصلى بين يدى رسول الله صلى الله عليه وسلم.
অর্থ : আবূ কোহাফার পুত্রের জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে দাঁড়িয়ে নামা পড়া আদৌ শোভনীয় নয়।” (আবু কোহাফা উনার পিতার নাম, সেজন্য তিনি নিজেকে আবু কোহাফার পুত্র বলে উল্লেখ করেছেন)
লক্ষণীয় যে, এখানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ সত্বেও হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনার মত মহা মর্যাদাবান ও সর্বশ্রেষ্ঠ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তা পালন করেননি। কারণ তিনি জানতেন যে, এটা সৌজন্যসূচক নির্দেশ মাত্র, প্রকৃত আদেশ নয়। সেক্ষেত্রে ইমাম হওয়ার চেয়ে মুক্তাদী হওয়াটাই শিষ্টতা বা ভদ্রতার পরিচায়ক। নতুবা, প্রকৃত আদেশসূচক কোন নির্দেশ পালনার্থে তিনি নিজের জীবন, ধন, মান ইত্যাদি সমস্তই নিতান্ত তুচ্ছ জ্ঞান করতেন। সেজন্য উনার উত্তর শুনে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিরূপ হননি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উক্ত আদেশে শব্দগত আমলের থেকে উনার ভাবার্থ মূলক আমলকে প্রাধান্য দিয়েছেন। বরং উনার এরূপ শিষ্টাচারপূর্ণ ব্যবহার ও জবাবে তিনি সন্তুষ্টই হয়েছিলেন।
ইবনে হাজার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তদীয় (আদ্দুররুল মানদুদ) الدرالمنضود কিতাবে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের ব্যাখ্যায় বলেছেন,
فيه دليل اى دليل على ان سلوك الادب اولى من امتثال الامر الذى علم عدم الجزم بقضيته.
অর্থ : যে আদেশ বাধ্যকর নয়, তা পালন করা অপেক্ষা আদব রক্ষা করাই যে উত্তম, এই হাদীসেই তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
অতএব, যে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার স্বকীয় সৌজন্য, নম্রতা ও শিষ্টতা বশতঃ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য ক্বিয়াম করা নিষেধ করেছিলেন, তা পালন করা অপেক্ষা আদব রক্ষা করা এবং বিনীত হওয়াই অধিক উত্তম।
এজন্যই ফিক্বাহের কিতাবসমূহে ক্বিয়ামে তাযীমীকে এক বাক্যে মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করা হয়েছে।” (রদ্দুল মোহতার ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা-২৪৫)
মাওলানা রশীদ আহমদ গাংগুহী তদীয় ফতওয়ায়ে রশীদিয়া কিতাবের ৪৫৯ পৃষ্ঠায় বলেছেন,
تعظیم دیندار کو کھرا ھونا درست ھے اور پاؤن چومنا ایسے ھی شخص کا بھی درست ھے- حدیث سے  ثابت ھے-
অর্থ : দ্বীনদার লোকের তাযীমের জন্য দন্ডায়মান হওয়া জায়েয, এরূপ লোকের পদ চুম্বন করাও জায়েয। এ কথা পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে সাব্যস্ত।
লক্ষণীয় যে, তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ হতেই তাযীমী ক্বিয়াম জায়েয বলে উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু পরিতাপ ও আশ্চর্য্যরে বিষয় এই যে, ক্বিয়াম বিরোধীরা ফিক্বাহের কিতাবসমূহে তাদের স্বার্থ সিদ্ধ কোন অনুকুল বিধান না পেয়ে সরাসরি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার হাওলা দিয়ে বলে, “পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্বিয়াম করা সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন এবং এটা অপছন্দ করেছেন।
অথচ তারাই আবার নিজেদের সুবিধামত অন্য সময় বলে থাকে যে, “শুধু পবিত্র হাদীছ শরীফ শুনে তার উপর আমল করা চলেনা, বরং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে ফিক্বাহের কিতাবসমূহে প্রদত্ত বিধানানুযায়ী আমাদের আমল করতে হবে। কেননা ফক্বীহ্গণ যেরূপ সঠিকভাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মর্ম বুঝতে সক্ষম, তদ্রুপভাবে আমরা বুঝতে পারিনা। সেজন্য ফিক্বাহের মাধ্যমে আমাদেরকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বুঝতে হবে।
মূলত এরূপ দ্বিবিধ অভিমত পোষণকারীরা প্রকৃতপক্ষে না পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঠিক অনুসারী, না ফিক্বাহের নির্দেশাদি পালনকারী। বরং বলা যেতে পারে যে, আসলে এ দুয়ের আবরণে তারা নফসানিয়াতের খাঁটি অনুসরণকারী। তা না হলে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সাথে সাথে ফিক্বাহের কিতাবসমূহের প্রদত্ত বিধানও তারা অতি আগ্রহের সাথে পালন করতো।
উপরোক্ত আলোচনা ও ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদেরকে শুধুমাত্র নিজের বিণয়, ভদ্রতা ও শিষ্টতা প্রকাশেই ক্বিয়াম করতে নিষেধ করতেন। শরীয়ত বিরোধী, নাজায়েয বা বিদয়াত হওয়ার কারণে নয়।
কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ন্যায় ইজমা ও ক্বিয়াসও শরীয়তের দলীল। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া হলো- ইজমা-ক্বিয়াস অস্বীকারকারীরা বিদয়াতী ও গোমরাহ।
মূলত ক্বিয়ামের পক্ষেও অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يجلس معنا فى المسجد يحد ثنا فاذا قام قمتا قياما حتى نرائه قد دخل بعض بيوت ازواجه.
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে বসে আমাদেরকে নসীহত করছিলেন। যখন তিনি উঠলেন বা দাঁড়ালেন, আমরাও সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম, ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ আমরা উনাকে দেখতে পাচ্ছিলাম। এমনকি উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের কারো ঘরে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম। (বায়হাক্বী ফী শোবিল ঈমান, মিশকাত মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, তালীকুছ ছবীহ)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
عن عائشة رضى الله عنها. كانت اذا دخلت عليه قام اليها فاخذيدهافقبلها واجلسها فى مجلسه وكان اذا دخل عليها قامت له فاخذت بيده فقبلته واجلسته فى مجلسها.
অর্থ : হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যেতেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং হাতে বুছা দিয়ে নিজের স্থানে বসাতেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট যেতেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক বুছা দিয়ে নিজের স্থানে বসাতেন। (আবু দাউদ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, বজলুল মাজহুদ, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, তালীকুছ ছবীহ, শরহুত ত্বীবী)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত মুহম্মদ বিন হিলাল স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ঘর হতে বের হতেন, তখন আমরা দাঁড়িয়ে যেতাম এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি স্বীয় ঘরে প্রবেশ না করতেন (আমরা দাঁড়িয়ে থাকতাম)। এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বাযযার বর্ণনা করেছেন, যার রাবী অত্যন্ত শক্তিশালী। (ফিক্বহুস সুনানে ওয়াল আছার)
বোখারী শরীফের টীকা (হাশিয়া) কুসতালানী-এর ৯ম খন্ড, ১২৫ পৃষ্ঠায়সহীহ্ সনদে হযরত উলামা ইবনে শারীক হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন- আমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাযীম-এর জন্যে দাঁড়িয়ে উনার হস্ত মুবারকদ্বয় চুম্বন দিলাম।
রদ্দুল মুহতার ও হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ্নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, ক্বিয়াম তিন প্রকার- (১) ক্বিয়ামে তাকাব্বুরী যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
لا تقوم كما يقوم الاعاجم
অর্থাৎ তোমরা আজমীদের মত (মাথা নীচু করে নমস্কারের ছূরতে) দাঁড়াইওনা।এরূপ ক্বিয়াম শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয।
(২) ক্বিয়ামে হুব্বী, যেমন- হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘরে আসলে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মুহব্বতে) দাঁড়িয়ে যেতেন, একে ক্বিয়ামে হুব্বী বলে।
(৩) ক্বিয়ামে তাযীমী, যেমন- হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাযীমের জন্যে দাঁড়াতেন, যা উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
মূলকথা হলো- ক্বিয়ামে তাকাব্বুরী শরীয়তে হারাম, নাজায়েয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। আর ক্বিয়ামে হুব্বী ও তাযীমী শরীয়তে জায়েয ও সুন্নত।
অতএব, সুস্পষ্ট ভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ক্বিয়াম বিরোধীদের বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা ক্বিয়াম কখনোই বিদয়াত বা নাজায়েয প্রমাণিত হয়না বরং উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে, কতটুকু বিনয়ী ছিলেন এবং উম্মতের প্রতি কতটুকু দয়ালু ছিলেন সেটাই প্রমাণিত হয়। কাজেই উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে ক্বিয়ামের বিপক্ষে পেশ করা জেহালত বৈ কিছুই নয়।
আবার তাদের কারো কারো বক্তব্য হলো, উলামায়ে কিরামগণ ক্বিয়ামকে বিদয়াত বলেছেন অর্থাৎ ক্বিয়াম বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।
মূলত তাদের উপরোক্ত বক্তব্য উলামায়ে কিরামগণ উনাদের প্রতি মিথ্যারোপ করার শামিল। কারণ সকল উলামায়ে কিরামগণ ক্বিয়ামকে বিদয়াত বলেননি, বরং কিছু সংখ্যক বাতিলের পদলেহী, বিদেশী প্রভূদের সেবাদাস ও উচ্ছিষ্টভূগী নামধারী আলেম ক্বিয়ামকে বিদয়াত বলেছে এবং বলছে। তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই পরিত্যাজ্য ও বাতিল। কারণ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ তাযীমার্থে ক্বিয়াম করতেন বলে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে। কাজেই যেখানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের আমল দ্বারা ক্বিয়াম সুন্নত প্রমাণিত, সে ক্বিয়ামকে বিদয়াত বলা, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের প্রতি বিদয়াতের তোহমত দেয়ার নামান্তর, যা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। অনুরূপ জগৎখ্যাত অনুসরণীয় অসংখ্য ইমাম-মুজতাহিদগণের প্রতি মিথ্যারোপ করার ও বিদয়াতের তোহমত দেয়ার শামিল। কারণ পৃথিবীর অসংখ্য অগণিত অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম তথা হক্কানী আলেমগণ ক্বিয়াম করেছেন ও ক্বিয়ামকে জায়েয বলেছেন। যেমন- বিশিষ্ট মুজতাহিদ ইমাম তক্বীউদ্দীন সাবকী রহমতুল্লাহি আলাইহি, শায়খ আবুল খাত্তাব ওমর ইবনে ক্বালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল মুহাদ্দেসীন, হাফেজ ইবনে হাজর মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল মুফাস্সেরীন, হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, পাক ভারত উপমহাদেশে প্রথম পবিত্র হাদীছ শরীফ শরীফের প্রচার-প্রসারকারী, বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আশরাফ আলী থানবী সাহেব-এর পীর, শায়খুল আরব ওয়াল আজম হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বাংলার মূলকে প্রায় ৫৫ বৎসর হিদায়েতের কাজ করনেওয়ালা, হযরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুজাদ্দিদে যামান, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হাফিযে পবিত্র হাদীছ শরীফ, বিশিষ্ট মুবাহিছ, আল্লামা রুহুল আমীন বশীরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুজাহিদে আযম, হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরীদপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, খতীবে আযম মুফতী আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মাওলানা জাফর আহমদ ওসমানী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অসংখ্য সর্বজন স্বীকৃত অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ, আলেম ও বুযুর্গগণের প্রত্যেকেই মীলাদ-ক্বিয়াম করতেন এবং উনারা মীলাদ-ক্বিয়ামকে জায়েয বলেছেন।
মূলত ক্বিয়াম সম্পর্কে তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পর্ণ মনগড়া, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর এবং আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণকে বিদয়াতী বলার কারণে কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।
মূলকথা হলো- মীলাদ শরীফে যে ক্বিয়াম করা হয়, তা যেরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত তদ্রুপ অসংখ্য ইমাম, মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ উনাদের আমল ও ক্বওল দ্বারা প্রমাণিত। নিম্নে তার কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো-
আল উসীলানামক কিতাবের ৬৯নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
فى الدر المنظم- المختار عندى فى وجه القيام عند ذكر وضعه صلى الله عليه وسلم- اذاء شكرالحق بظهور رحمة للعالمين.
অর্থ : দুররুল মুনাজ্জামকিতাবে হযরত শাহ আব্দুল হক মুহাজেরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেন, আমার নিকট সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার বর্ণনার সময় ক্বিয়াম করা জায়েয হওয়াই গ্রহণযোগ্য মত। কেননা এর দ্বারা রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিকাশ হওয়ায় মহান আল্লাহ পাক উনার তায়ালার শোকর আদায় করা হয়।
ইক্বদুল জাওয়াহিরনামক কিতাবের ২৯নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
قد استحسن القيام عند ذكر ولا دته الشريفة صلى الله عليه وسلم ائمة ذو رواية ودراية.
অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনাকালে ক্বিয়াম করাকে বিচক্ষণ ইমামগণ মুস্তাহসন বা মুস্তাহাব বলেছেন।
বাংলার মুলুকে প্রায় ৫৫ বৎসর দ্বীনের তথা ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাসাউফের প্রচার-প্রসারকারী, হযরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তদ্বীয় মুলাখখাকিতাবে উল্লেখ করেন,
قال علامة السيو طى واى نفع احسن من عمل المولد والقيام وانهم يهيجان محبة النبى صلى الله عظمته وجلالته فى قلب فا عله.
অর্থ : আল্লামা ইমাম সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মীলাদ ও ক্বিয়াম অপেক্ষা অধিকতর উত্তম বা ফলদায়ক আমল আর কি হতে পারে? কারণ এর দ্বারা মীলাদ-ক্বিয়ামকারীর হৃদয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত, মর্যাদা ও মহিমার উদ্দীপনা জেগে উঠে।
ইশবাউল কালামনামক কিতাবের ৫৪নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
قد اجمعت الامة المحمدية من الاهل السنة والجماعة على استحسان القيام المذكور وقال عليه السلام لا تجتمع امتى على الضلالة.
অর্থ : উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকল আলেমগণ মীলাদ শরীফের ক্বিয়াম মুস্তাহসান হওয়ার ব্যাপারে ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার উম্মত (আলেমগণ) কখনোই গোমরাহীর উপর একমত হবেনা।
আর তাই মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনাদের মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
ومن يشاقق الرسول من بعد ماتبين له الهدى ويتبع غير سبيل المؤمنين نوله ما تولى. الخ
অর্থ : যদি কারো নিকট হিদায়েত প্রকাশ হবার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধাচরণ করে, আর মুমিনদের পথ রেখে ভিন্ন পথের অনুসরণ করে, তবে আমি তাকে সেদিকেই ফিরাবো যেদিকে সে ফিরেছে।
শায়খ আহমদ ইবনে আবু সাঈদ মোল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার     তাফসীরে উল্লেখ করেন,
فغجعلت مخالقة
المؤمنين مثل مخالفة الرسول فيكون اجماعهم كخبرالرسلو حجة قطعية. (نورالانوار(
অর্থ : পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মুমিনদের বিরোধিতাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা হিসাবে আখ্যায়ীত করা হয়েছে। অতএব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মতো তাদের ইজমাও অকাট্য ও প্র্রামান্য দলীল বলে পরিগণিত হবে।” (নুরুল আনোয়ার)
সুতরাং মুমিনদের প্রচলিত পথের বিরোধিতা করে মীলাদ শরীফের ক্বিয়ামকে বিদয়াত বলা, মহান আল্লাহ পাক ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই বিরোধিতা করার নামান্তর। যার থেকে বেঁচে থাকা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব।
সীরাতে হালবীয়া (سيرة حلقبيه) কিতাবের ১ম খন্ড ৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
جرت عادة كثيرة من المحبين اذا سمعوا بذكر رضعه صلى الله عليه وسلم ان يقاموا لتعظيمالنبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অধিকাংশ মুহব্বতকারীগণের স্বভাব এটাই ছিল যে, উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার বিবরণ শুনে সাথে সাথেই ক্বিয়াম করেন।
বড় কাটারা ও লালবাগ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, মুজাহিদে আযম, খাদেমুল ইসলাম, হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ক্বিয়াম সম্পর্কে উনাতাসাউফ তত্ত্বকিতাবে লিখেন যে, মীলাদ শরীফের মধ্যে ক্বিয়াম করা আদব, শরাফত বা ভদ্রতা।
মাওলানা আশ্রাফ আলী থানবী সাহেবসহ সকল ওলামায়ে দেওবন্দের পীর ও মুর্শিদ, শায়খে আরব ওয়াল আযম, আল্লামা হাজী মদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনা هفت مسائل (হাফতে মাসায়েল) কিতাবে উল্লেখ করেন যে,
مولود شریف کو ذریعہء برکات سجھ کرھر سال منعقد کرتا ھون اور قیام کے وقت بے حد لطف و لذت پاتاھون-
অর্থ : মীলাদ শরীফের মাহফিলকে বরকত লাভের উসীলা মনে করে আমি প্রতি বৎসর মীলাদ শরীফের মজলিস করি এবং মীলাদ মাহফিলে ক্বিয়াম করার সময় আমি অশেষ আনন্দ ও স্বাধ উপভোগ করি।
উপরোক্ত অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের বর্ণনা দ্বারা এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, মীলাদ-ক্বিয়াম করা জায়েয, সুন্নতে উম্মত মুস্তাহ্সান।  বিদয়াত বা নাজায়েয মোটেও নয়। আরো প্রমাণিত হলো যে, পূর্ববর্তী বহু অনুসরণীয় ও সর্বজন মান্য ও স্বীকৃত ইমাম, মুজতাহিদ আলেম, ফাযেল, মুফতী, মুহাদ্দিস সর্বপোরী অসংখ্য ওলী আল্লাহ্গণ নিজেরা মীলাদ-ক্বিয়াম করেছেন এবং উহা জায়েয বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন যে
ومن يشاقق الرسول من بعد ما تبين له الهدى ويتبع غير سبيل المؤمنين نوله ماتولى.
অর্থ : যে কারো নিকট হিদায়েত বিকশিত হওয়ার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধাচরণ করবে, আর মুমিনগণের পথ রেখে ভিন্ন পথের অনুসরণ করবে, আমি তাকে সেদিকেই ফিরাবো, যে দিকে সে ফিরেছে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
ما راه المسلمون حسنى فهو عند الله حسن. لا تجتمع امتى على الضالة.
অর্থ : মুসলমানগণ (দ্বীনদার পরহেজগার আলেমগণ) যেটাকে ভাল মনে করেন, মহান আল্লাহ পাক ও সেটাকে ভাল মনে করেন। আর আমার উম্মতগণ কখনো গোমরাহীর উপর একমত হবে না।” (মিশকাত শরীফ)
সুতরাং মীলাদ-ক্বিয়াম যেহেতু অসংখ্য আলেম, ফাযেল, মুহাদ্দিস, মুফাস্সির, ফক্বীহ, বুজুর্গ, ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের আমল দ্বারা প্রমাণিত ও পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ মুসলমান মীলাদ-ক্বিয়াম করেন ও তাকে উত্তম মনে করেন। সেহেতু মীলাদ-ক্বিয়াম করা শরীয়তে সম্পূর্ণ জায়েয বরং সুন্নতে উম্মত মুস্তাহ্সান। আর মীলাদ-ক্বিয়ামকে বিদয়াত ও নাজায়েয বলা গোমরাহী ও অজ্ঞতার নামান্তর।
শুধু তাই নয়, মীলাদ-ক্বিয়ামের অনুষ্ঠান করা অশেষ সাওয়াব লাভ ও মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভেরও কারণ। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে,
انما الا عمال بالنيات
অর্থাৎ আমলের সওয়াব বা ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।” (বোখারী শরীফ)
অতএব, কেউ যদি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাযীমার্থে বা আদব রক্ষার নিয়তে ক্বিয়াম করে, তবে সে সওয়াব তো অবশ্যই পাবে, সাথে সাথে এটা তার জন্যে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের কারণ হবে।
যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়- বণী ইস্রাঈলের এক ব্যক্তি, যে দুশত বৎসর হায়াত পেয়েছিল। সে যখন তাওরাত কিতাব পাঠ করতো, তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক দেখলে উক্ত নাম মুবারকে চুম্বন করতো এবং চোখে, মুখে লাগাত একমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে বা মুহব্বতে। এ আমলের উসীলায় মহান আল্লাহ পাক তার দুশত বৎসরের গুণাহখাতা মাফ করে দেন। (হিলইয়াতুল আউলিয়া)
এখন প্রশ্ন হলো, মহান আল্লাহ পাক কি তাওরাত কিতাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক চুম্বন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বা নাম মুবারক চুম্বন করলে সওয়াব পাওয়া যাবে, একথা বলেছিলেন?
মূলত কোনটাই বলা হয়নি, তথাপিও বিশুদ্ধ নিয়ত ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি তাযীম-তাক্রীম বা সন্মান প্রদর্শন করার কারণে বণী ইস্রাঈলের উক্ত ব্যক্তি অশেষ ফযীলত হাছিল করেন।           
অতএব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন উম্মত যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানার্থে বা আদব রক্ষার্থে ক্বিয়াম করে, তবে সে তার চেয়েও বেশী ফযীলত লাভ করতে পারে। কাজেই মীলাদ শরীফের অনুষ্ঠান করা পাপের কাজ, একথা বলা সম্পূর্ণ নাজায়েয, হারাম ও কুফরী।
এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, যারা বলে থাকে- মাওলানা আশ্রাফ আলী থানবী ও রশীদ আহ্মদ গাঙ্গুহী সাহেব মীলাদ-ক্বিয়াম করা বিদয়াত এবং পাপের কাজ বলেছে, অথচ তাদের মুর্শিদ, যিনি শায়খুল আরব ওয়াল আযম হযরতুল আল্লামা হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি নিজে মীলাদ-ক্বিয়াম করেছেন এবং মীলাদ-ক্বিয়ামকে সাবিত করার জন্য তার পক্ষে কিতাবও লিখেছেন।
সুতরাং মীলাদ-ক্বিয়াম করা যদি বিদয়াতই হয়, তবে তাদের (মীলাদ-ক্বিয়াম বিরোধীদের) ফতওয়া মোতাবেক হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিদয়াতী ও পাপী, আর বিদয়াতীরা গোমরাহ।  যেহেতু উনি বিদয়াতী ও গোমরাহ্, সেহেতু ওনার মুরীদ- মুতাক্বেদ যারা, তারাও বিদয়াতী, পাপী ও গোমরাহ্। তার মধ্যে অন্যতম বিদয়াতী, পাপী ও গোমরাহ্ হলো আশ্রাফ আলী থানবী সাহেব ও রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব। কেননা তারা উনার বিশিষ্ট মুরীদের অন্তর্ভূক্ত। এক কথায় ওলামায়ে দেওবন্দ ও তাদের অনুসারী সকলেই বিদয়াতী ও গোমরাহ-এর অন্তর্ভূক্ত। অথচ মীলাদ-ক্বিয়াম অবশ্যই জায়েয বরং সুন্নতে উম্মত মুস্তাহসা, আর হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি সর্বজনমান্য ও অনুসরণীয় বুজুর্গ, হক্বানী আলেম, ওলী মহান আল্লাহ পাক উনার অন্তর্ভূক্ত।
উপরোক্ত দলীল ছাড়াও নিম্নোক্ত কিতাব সমূহে মীলাদ-ক্বিয়ামকে জায়েয বা সুন্নতে উম্মত মুস্তাহ্সান বলা হয়েছে-
(১) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (২) মেশকাত শরীফ, (৩) মিছবাহুয্ যুজাজাহ্ আলা সুনানে ইবনে মাজাহ্, (৪) মেরকাত শরীফ, (৫) লোময়াত্, (৬) আশয়্যাতুল লোম্য়াত, (৭) ফাতহুল মুবীন শরহে আরবাঈন লি ইমাম নববী, (৮) জামিউল ফত্ওয়া, (৯) মজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আযীযিয়াহ্, (১০) ফতওয়ায়ে বরকতীয়া,  (১১) রদ্দুল মোহ্তার, (১২) হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ্ (১৩) আহ্কামে শরীয়ত, (১৪) সুন্নী বেহেশ্তী জিওর, (১৫) জায়াল হক্ব, (১৬) কিতাবুত্ তান্বীর ফী মাওলুদিল বাশীর ওয়ান্নাযীর, ১৭) সুবুলুল হুদা ফী মাওলুদিল মোস্তফা।, (১৮) হুসনুল মাকাছেদ, (১৯) সীরতে শামী, (২০) সীরতে নববী, (২১) যুরক্বানী, (২২) ইমদাদুল মোশতাক্ব, (২৩) মাছাবাতা বিস্সুন্নাহ্, (২৪) আদ্দুররুল মুনাজ্জাম ফী বায়ানে হুকমু মাওলুদিন নবীয়্যিল আযম, (২৫) সাবীলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফী সীরাতে খাইরিল ইবাদ, (২৬) আল ইন্তিবাহ্ ফী সালাসিলে আওলিয়াইল্লাহ্, (২৭) মিয়াতে মাসায়িল, (২৮) মিরআতুয্ যামান, (২৯) নিমাতুল ক্বোবরা, (৩০) আল মাওলূদুল কাবীর, (৩১) ইশবাউল কালাম, ফী ইছবাতিল মাওলুদে ওয়াল ক্বিয়াম, (৩২) আশ্ শিফা লি ক্বাজী আয়াজ, (৩৩) আল মুলাখ্যাছ, (৩৪) কিতাবুস্ সীরাতিল মুহম্মদিয়াহ্ ওয়াত্ তরীক্বাতিল আহ্মদিয়া, (৩৫) আল জাওহারুল মুনাজ্জাম, (৩৬) আল ইনসানুল উয়ুন, (৩৭) ইক্বদুল জাওহার, (৩৮) আস্সুলুকুল মুয়াজ্জাম, (৩৯) ক্বিয়ামুল মিল্লাহ্, (৪০) নুয্হাতুল মাজালিস,(৪১) মাওয়ায়েজে আশ্রাফিয়া, (৪২) আশ্রাফুল জাওয়াব, (৪৩) মাক্তুবাতে মাদানী, (৪৪) হাশিয়ায়ে হায়দারী, (৪৫) মরকূমাতে ইমদাদিয়াহ্ ইত্যাদি কিতাব ছাড়াও আরো বহু তাফসীর, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ আছে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মীলাদ শরীফ সম্পর্কে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, দলীল বিহীন ও কুফরীমূলক।
এখানে আরো উল্লেখ্য যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যদি সাধারণভাবে মীলাদ শরীফ পাঠ না করে বা মীলাদ মজলিসে না বসে, তবে সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু যদি মীলাদ শরীফকে বিদয়াত বা নাজায়েয অর্থাৎ পাপের কাজ মনে করে, মীলাদ মজলিসে না বসে, তবে অবশ্যই নাজায়েয ও গুণাহ কারণ।
তাছাড়া প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যে বলে থাকে, “মহান আল্লাহ পাক শেরেকের গুণাহ মাফ করবেন, কিন্তু মীলাদ-ক্বিয়াম করার গুণাহ মহান আল্লাহ পাক মাফ করবেন না।
তাদের এ বক্তব্যটিও অত্যান্ত আপত্তিকর ও কুফরীমূলক। এ ধরণের আক্বীদা যারা পোষণ করে, তারা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের দৃষ্টিতে মুসলমান থাকতে পারেনা। কাজেই এরূপ বক্তব্য প্রদান ও আক্বীদা পোষণ করা থেকে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যেই ফরয-ওয়াজিব।

[বিঃ দ্রঃ- আমরা অতিশীঘ্রই অসংখ্য দলীলের মাধ্যমে মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া প্রকাশ করবো ইনশাআল্লাহ]
 (অসমাপ্ত)

0 Comments: