(পূর্ব
প্রকাশিতের পর)
গবেষণা
কেন্দ্র মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ
[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ
রাব্বুল আ’লামীন উনার এবং
অসংখ্য দরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ
পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহমতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের
আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত
ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র “মাসিক আল
বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী
চুম্বনের বিধান,
নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও
তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামাজ ফরজে আইন ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে
নামায পড়া মাকরূহ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ
নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদয়াত সাইয়্যিয়াহ এবং তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরয নামাজের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইনজেকশন নেওয়া রোজা ভঙ্গের কারণ ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-এর নামাজে বা অন্যান্য
সময় কোরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া,
তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া এবং দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করার পর চতুর্দশ (১৪তম)
ফতওয়া হিসেবে (৩৫তম সংখ্যা থেকে) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করে আসতে পারায়
মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।]
[বিঃদ্রঃ
পাঠকগণের সুবিধার্থে ফতওয়ার ভুমিকার কিছু অংশ পুণরায় প্রকাশ করা হলো]
“প্রচলিত
তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ”
মহান আল্লাহ
পাক রাব্বুল আ’লামীন পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
كنتم
خير امة اخرجت اللناس تأمرون بالمعروف وتنهون عن المنكر وتؤمنون بالله.
অর্থ : “তোমরা (নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হওয়ার
কারণে) শ্রেষ্ঠ উম্মত, তোমাদেরকে মানুষের মধ্য হতে বের করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের
আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনবে।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১১০)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান
আল্লাহ পাক তাবলীগ তথা সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের
সাথে সাথে আরো একটি শর্ত যুক্ত করে দিয়েছেন। সেটা হলো- تؤمنون অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং দ্বীন সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সঠিক ও পরিশুদ্ধ ঈমান আনা।
অর্থাৎ তৎসম্পর্কে বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করা। তবেই সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে
নিষেধের মাধ্যমে পরিপূর্ণ ফায়দা বা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ
সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব হবে।
স্মরণযোগ্য
যে, বর্তমান প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকদের বেশকিছু লেখনী, বক্তব্য,
বিবৃতি, আমল ও আক্বীদা ইত্যাদি সম্পর্কে
সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের মনে নানাবিধ সংশয় ও প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। যার
ফলশ্রুতিতে “মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার” পাঠক, গ্রাহক, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীদের পক্ষ হতে “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতের”
আকর্ষণীয় ও নির্ভরযোগ্য বিভাগ “সুওয়াল-জাওয়াব” বিভাগে,
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লেখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে
প্রচারিত বেশকিছু আপত্তিজনক আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ উল্লেখ করে অসংখ্য চিঠি আসে।
কারণ মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক করেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থ : “যদি
তোমরা না জান,
তবে আহলে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (পবিত্র সূরা নহল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩ ও পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা
বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যাঁরা জানেন, উনাদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।
অতএব, যাঁরা জানেন, তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত
জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব
প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে। যেমন সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন,
من
سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থ : “যাকে
দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়, জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুনের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ,
তিরমিযী, ইবনে মাযা, আহমদ
শরীফ,
মিশকাত শরীফ, বযলুল মাজহুদ, উরফুশশাজী,
তোহফাতুল আহওয়াজী, মায়ারেফুস সুনান, মেরকাত, শরহুত ত্বীবী, তালীক,
আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ ইত্যাদি)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ্বা আগুনের
কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।”
কাজেই
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে, যে ভয়াবহ
শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার
লক্ষ্যে “মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার” অগণিত পাঠক, গ্রাহক ও সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের প্রেরিত সুওয়ালসমূহে উল্লেখকৃত
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহের শরীয়তসম্মত তথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ,
ইজমা ও
ক্বিয়াস উনাদের
দৃষ্টিতে জাওয়াব বা ফতওয়া দেয়া হলো।
প্রকৃত
বন্ধুর পরিচয়
এখানে
বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, মূলতঃ আমাদের সাথে কারো যেরূপ
বন্ধুত্ব নেই,
তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের
খেলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব
বা বিদ্বেষ একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই হতে হবে।
এ
প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
من
احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থ : “যে
ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মুহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী, বজলুল
মাজহুদ,
উরফুশশাজী,
তোহফাতুল আহওয়াজী, মায়ারেফুস সুনান, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, শরহুত
ত্বীবী,
তালীক, মোজাহেরে হক্ব, লুময়াত,
মিরআতুল মানাজীহ ইত্যাদি)
বস্তুতঃ
মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে
থাকে।
কাজেই “মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক ‘তাবলীগ জামায়াত’ সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো- “প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে” উল্লেখকৃত
আক্বীদাসমূহের সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান এবং প্রচলিত ৬ (ছয়)
উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের দাওয়াতের কাজে যারা মশগুল রয়েছে, তাদের মধ্যে যারা উক্ত আক্বীদাসমূহ জেনে হোক বা না জেনেই হোক বিশ্বাস করে এবং
তা জনসাধারণের নিকট প্রচার করে, নিজেদের ও জনসাধারণের ঈমান ও
আমলের বিরাট ক্ষতি করছে, তাদের সে ঈমান ও আমলের হিফাযত করা
ও সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে
তোলা। যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই তাদের ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ
করতে পারে।
মূলত
মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ পবত্রি হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক হয়েছে যে,
المؤمن مرأة المؤمن.
অর্থ : “এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)
এ
প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মু’মিনীন,
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত আনছার এবং মুহাজির হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহকামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ
দান করি,
তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত
লোকেরা নীরব রইল। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই কথার
পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইবনে সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “যদি আপনি
এরূপ করেন,
তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ
তীরকে সোজা করা হয়।” এ কথা শুনে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম বললেন,
“তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের
কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মা’আরেফ)
সুতরাং
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার আলোকে অসংখ্য, অগণিত পাঠকগণের পূণঃ পূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের আক্বীদা ও আমল
হিফাযতের লক্ষে বর্তমানে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর আক্বীদা ও
বক্তব্যসমূহের শরয়ী ফায়সালা প্রদান করা হলো। যাতে করে সত্যান্বেষী, সমঝদার মুসলমান ও প্রচলিত তাবলীগকারীগণ সে আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের সঠিক শরয়ী
ফায়সালা অবগত হন, যার ফলশ্রুতিতে সকলেই উক্ত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ
থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলের হিফাযত করে সঠিকভাবে দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও খেদমত করে
মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেন।
এখানে
উল্লেখ্য যে,
দ্বীনের তাবলীগ যা খাছ ও আম তা শত-সহস্র লোক করবে এবং
অবশ্যই করতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত সম্মতভাবে করতে হবে।
কারণ আক্বীদা শুদ্ধ না হলে দ্বীনী কোন খিদমতই মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে
কবুলযোগ্য নয়। উপরন্ত কুফরী আক্বীদা থাকার কারণে তাকে হতে হবে চির জাহান্নামী।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে বিশুদ্ধ আক্বীদার সাথে দ্বীনী
তাবলীগ (যা আম ও খাছ) করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
সুওয়াল : আমরা শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল
ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে সঠিক তত্ত্ব জানতে আগ্রহী। কারণ আমরা অনেকদিন
যাবত তাবলীগ জামায়াতের সাথে জড়িত ছিলাম এবং এখনো তাবলীগ জামায়াতের অনেক লোকের সাথে
আমাদের মেলামেশা আছে। তাতে তাদের বেশ কিছু বক্তব্য বা আক্বীদা, যা আমরা অতীতেও জেনেছি এবং এখনো তা অবহিত হচ্ছি। তার মধ্যে অনেকগুলো তাদের
লেখা কিতাবেও উল্লেখ আছে। সে সমস্ত আক্বীদাসমূহ আমাদের মনে হয় ইসলামের দৃষ্টিতে
আপত্তিকর। সেগুলো আমরা নিম্নে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করলাম –
(৫৪) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অনেকেই ধারণা করে থাকে যে, দ্বীন ইসলামের বাইরেও বিধর্মীদের মাঝে, এমন অনেক
শিক্ষণীয়,
নছীহতপূর্ণ ও অনুসরণীয় বিষয় রয়েছে, যদ্বারা
ইছলাহ্ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা যায়।। এ কথার প্রমাণ তাদের লেখা কিতাবেও রয়েছে।
যেমন- “তাবলীগ-ই-উত্তম জিহাদ” নামক কিতাবের ৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ
আছে যে,
“হিন্দু যোগীরা ইবাদতে আলস্য দূর করার জন্যে সারা রাত একই
অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে, এসব দৃষ্টান্ত থেকে অন্তরের চিকিৎসার পদ্ধতি জানা জায়।” অর্থাৎ হিন্দু যোগীদের মধ্যেও শিক্ষণীয় ও অনুসরণীয় অনেক কিছু রয়েছে। আর
মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের “মলফুযাতের” ৯৫ পৃষ্ঠায় ১৩৬নং মলফূযে একথা লেখা আছে যে, আমাদের
এই কাজ (প্রচলিত তাবলীগ) এক প্রকার যাদুমন্ত্রের মত।
(৫৫) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বেশ কিছু মুরুব্বী ও আমীর এবং তাদের অনুসারীরা
মনে করে থাকে যে, তাদের প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য বা
তাবলীগ জামায়াতের প্রতি উৎসাহিত করার জন্য পবিত্র
কুরআন শরীফ-পবিত্র হাদীছ শরীফ বহির্ভূত বিষয়ে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত পরিমাণের বাইরে বহু বহু ফযীলতের বর্ণনা করা জায়েয।
(৫৬) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, “মসজিদে
নববী ছাড়া বিশ্বের যে তিনটি দেশে, তিনটি মসজিদে প্রচলিত তাবলীগের বিশেষ
মারকায,
সেখানেই চব্বিশ ঘন্টা আমল জারী থাকে। যেমন- প্রচলিত তাবলীগ
জামায়াতের লোক দ্বারা লিখিত “এক মুবাল্লিগের পয়লা নোট বই” নামক কিতাবের (সংকলক- এঞ্জিনীয়ার মু.জু.আ. মজুমদার) ৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “সারা বিশ্বে মাত্র ৪টি মসজিদে ২৪ঘন্টা আমল চালু থাকে। যথা- (১) কাকরাইল, ঢাকা (২) নিজামুদ্দীন বস্তী, দিল্লী (৩) রায়বন্ড, লাহোর। (৪) মসজিদে নববী, মদীনা শরীফ।”
(৫৭) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত-এর লোকেরা বলে থাকে যে, তারা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র
সূরা ইমরান শরীফ
উনার ১০৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ
ولتكن
منكم امة يدعون الى الخير- يامرون بالمعروف وينهون عن المنكر واولتك هم المفلحون.
অর্থ : “তোমাদের
মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় হওয়া জরুরী, যারা (মানুষকে) কল্যাণের দিকে
ডাকবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে ও বদ্ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই মূলতঃ কামিয়াব।” এর আমল করে থাকে যা তাদের ৬ উছুল ভিত্তিক কাজের দ্বারাই সাধিত হয়।
(৫৮) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অনেকেই মনে করে থাকে যে, তাদের ৬
(ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগের দাওয়াত মোতাবেক যাদের জীবন পরিবর্তিত হবে, শুধুমাত্র তাদের দ্বারাই আল্লাহ পাক হিদায়েত বা দ্বীনের কাজ নিবেন। যেমন- “হযরতজীর কয়েকটি স্বরণীয় বয়ান” নামক কিতাবের (সংকলক- মাওলানা
নোমান আহ্মদ) ২য় খন্ড ২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, যাদের
জীবন দাওয়াত মোতাবেক পরিবর্তন অর্জিত হবে, তাদের
দ্বারা আল্লাহ পাক হিদায়েত ছড়াবেন, .....। যাদের জীবনে দাওয়াত মোতাবেক
পরিবর্তন আসবেনা, তাদের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা দ্বীনের প্রকৃত কাজ নিবেন না।”
(৫৯) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা প্রচার করে থাকে যে, তাদের ৬ উছুল ভিত্তিক দোয়া ও তাসবীহ পড়াই সুন্নত। যা করলেই যিকির-এর হক্ব আদায়
হয়ে যায়। এবং তার দ্বারাই অনেক অনেক ফযীলত, রহমত ও
বরকত পাওয়া যায়। আর এর দ্বারাই দিল ইসলাহ্ হয়। অর্থাৎ তাসাউফ ভিত্তিক ক্বলবী
যিকিরের আর দরকার হয়না। অপরদিকে তাদের কথানুযায়ী তাসাউফী বা ক্বলবী যিকির হল নফল
এবং যার ফযীলত নগণ্য। আর এসব কথা নাকি তাদের ‘হযরতজীর
মলফুজাত’
এবং মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দীর “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।
(৬০) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা প্রচার করে থাকে যে, মুর্শিদদের দ্বারা দ্বীনের ব্যাপক খেদমত কখনোই সম্ভব নয়। তাই তারা পীর সাহেবের
নিকট বাইয়াত হওয়া বা ইলমে তাছাউফ চর্চা করাকে মোটেও গুরুত্ব দেয় না। একথার সত্যতা
তাদেরই লোক দ্বারা লিখিত “আয়নায়ে তাবলীগ” নামক কিতাবের (লেখক- মুহম্মদ দাউদ আলী) ৮৮ পৃষ্ঠায় নিম্নোক্ত বক্তব্য দ্বারা
প্রমাণিত হয়। ইক্ত কিতাবে লিখা হয়েছে- “তাবলীগের মধ্যে পীর-মুরীদীর
প্রচলন সম্ভব নহে, কেননা পীরী-মুরীদীর দ্বারা সাধারণতঃ গন্ডিবদ্ধ একটা দলের
সৃষ্টি হইয়া থাকে। ..... এইরূপ একটা দলের দ্বারা ব্যাপক কোন কাজ করা সম্ভব নহে।
.... তাই বাধ্য হইয়া তাবলীগ এই পথ এড়াইয়া চলিয়া থাকে।”
উপরোক্ত
সুওয়ালসমূহের আলোকে এখন আমরা জানতে চাই, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত
বক্তব্য বা আক্বীদাসমূহ শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু ঠিক? এবং তা
শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু প্রয়োজনীয় ও কোন স্তরের আমলের অন্তর্ভূক্ত? পবিত্র কুরআন শরীফ,
পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের
দৃষ্টিতে জাওয়াব দিয়ে ঈমান ও আমল হিফাযত করণে সাহায্য করবেন।
জাওয়াব : (আপনাদের তরফ থেকে মাসিক আল বাইয়্যিনাত
পত্রিকার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগে প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত
প্রসঙ্গে বিভিন্ন সুওয়ালসহ প্রায় শতাধিক (শত শত) চিঠি এসে পৌঁছেছে। তার মধ্যে
যেসব সুওয়ালগুলি মানুষের ঈমান ও আমলের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত এবং যেগুলির জবাব
না দিলেই নয়,
সেরূপ অর্ধ শতাধিক সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হয়েছে এবং এরূপ
প্রয়োজনীয় প্রায় সকল সুওয়ালেরই জাওয়াব দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। তার মধ্যে গত (৩৫, ৩৬, ৩৭ ও
৩৮তম) সংখ্যা চারটিতে যথাক্রমে (৭+৩২+৬+৮) মোট = ৫৩টি সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হয়েছে।
বর্তমান (৩৯তম) সংখ্যায় ৭টি সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হলো। বাকীগুলোর জাওয়াব
পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।)
আপনাদের
বর্ণিত সুওয়াল মোতাবেক যদি প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের আক্বীদা হয়ে থাকে, তাহলে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে অবশ্যই আপত্তিজনক, যা
গোমরাহীমূলক,
বিভ্রান্তিকর ও জেহালতপূর্ণ এবং তারমধ্যে কোন কোনটিতে
কুফরীমূলক বক্তব্যও রয়েছে।
তবে
আপনারা যেহেতু দলীল ভিত্তিক জাওয়াব চেয়েছেন, তাই আমরা
উপরোক্ত প্রত্যেকটি প্রশ্নেরই শরীয়তসম্মত তথা পবিত্র
কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের ভিত্তিতে জাওয়াব দিব। (ইনশাআল্লাহ)
কারণ মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে বলেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থ : “তোমরা
যারা জাননা,
যারা জানেন, তাদের কাছ থেকে জেনে নাও।” (পবিত্র সূরা নহল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)
আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من
سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থ : “যাকে ইলমের
বিষয় সর্ম্পকে কোন প্রশ্ন করা হয়, আর সে জানা থাকা সত্ত্বেও তা
চুপিয়ে রাখে,
তাহলে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুনের বেড়ী পড়িয়ে দেয়া হবে।” (আবূ দাউদ,
তিরমিযী, ইবনে মাযাহ, আহমদ,
মিশকাত, বজলুল
মাজহুদ,
তোহফাতুল আহওয়াযী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেরকাত, উরফুশশাজী, তালীক, শরহুত ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ, লুময়াত)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, “তার জিব কেটে দেয়া হবে ইত্যাদি।”
তাই
নিম্নে পর্যায়ক্রমে আপনাদের প্রেরিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর বক্তব্য বা
আক্বীদাসমূহের পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ,
ইজমা ও
ক্বিয়াস উনাদের অকাট্য
দলীলসমূহের ভিত্তিতে শরয়ী ফায়সালা প্রদান করা হলো-
তাবলীগের
অর্থ ও প্রকারভেদ
[সুওয়াল সমূহের জাওয়াব দেয়ার পূর্বে প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়ে আলোচনা করা অতি
জরুরী। কারণ তাবলীগ সম্পর্কে বুঝতে হলে প্রথমে তা কত প্রকার ও কি কি এবং তার অর্থ
কি, তা জানতে হবে।
তাবলীগত্ম
(تبليغ) অর্থ হলো- প্রচার করা। তাবলীগ দু’প্রকার
অর্থাৎ সাধারণতঃ ইসলাম দু’ভাবে প্রচার করা হয়ে থাকে- (১)
তাবলীগে আম (عام) বা সাধারণভাবে, (২) তাবলীগে খাছ (خاص) বা বিশেষভাবে। আবার দ্বীন প্রচারকারী (মুবাল্লিগ) ও দু’প্রকার- (১) মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন প্রচারক) ও (২) মুবাল্লিাগে খাছ
(বিশেষ দ্বীন প্রচারক)।
মুবাল্লিগে
আম ও তার
হিদায়েতের
ক্ষেত্র
মুবাল্লিগে
আম অর্থাৎ সাধারণ মুবাল্লিগ (দ্বীন প্রচারক)- তার বিশেষ কোন যোগ্যতার প্রয়োজন নেই।
শুধু দ্বীনী সমঝ বা বুঝ থাকলেই চলবে। সে খাছ বা বিশেষভাবে যেমন ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী,
ভাই-বোন, ভাতিজা-ভাতিজী ও কর্মচারী তথা তার
অধীনস্থ সকলকে দ্বীনী আমলের জন্য তথা দ্বীনদারী হাছিলের জন্য তাকীদ বা উৎসাহিত
করবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ
পাক পবত্রি কুরআন শরীফ উনার
মধ্যে সূরা তাহরীমের ৬নং পবিত্র আয়াত
শরীফ উনার মধ্যে বলেন,
يا ايها الذين امنوا قوا انفسكم واهليكم نارا.
অর্থ : “হে
ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে আগুন (জাহান্নাম) থেকে
বাঁচাও।”
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الا كلكم راع وكلكم مسؤل عن رعيته.
অর্থ : “সাবধান!
তোমরা প্রত্যেকেই (নিজের অধীনস্থদের ব্যাপারে) রক্ষক এবং প্রত্যেকেই তার রক্ষিত
বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ফতহুল
বারী ,
ওমদাতুল ক্বারী, তাইসীরুল ক্বারী, ইরশাদুস সারী, শরহে নববী, মিরকাত,
লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মিরআতুল মানাজীহ ইত্যাদি)
মহান
আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
بلغوا عنى ولو اية.
অর্থ : “তোমরা
আমার থেকে একটি পবিত্র আয়াত (পবিত্র হাদীছ শরীফ)
শরীফ হলেও তা (মানুষের নিকট) পৌঁছে দাও।” (বুখারী শরীফ,
ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, তাইসীরুল ক্বারী, ইরশাদুস
সারী)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে- তখন হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে আমল
করবো,
ততক্ষণ পর্যন্ত কি আমরা সৎ কাজের আদেশ দিব না? অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সমস্ত খারাবী হতে ক্ষান্ত হবো, ততক্ষণ পর্যন্ত কি অসৎ কাজে নিষেধ করবো না? সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- “না, বরং তোমরা সৎকাজের আদেশ দান করবে, যদিও তোমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে
আমল করতে না পার। তদ্রুপ মন্দ কাজে নিষেধ করবে, যদিও
তোমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে তা থেকে বেঁচে থাকতে না পার। (তিবরানী শরীফ)
সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
الدين نصيحة.
অর্থ : “দ্বীন
হচ্ছে নছীহত স্বরূপ।”
হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ জিজ্ঞাসা করলেন, কাদের
জন্য?
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
“মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়
রসূল,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার জন্য এবং মুসলমানের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের জন্য এবং সাধারণ
মুসলমানদের জন্য।” (মুসলিম শরীফ, শরহে নববী, ফতহুল মুলহিম)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ মুবাল্লিগে আম ও
মুবাল্লিগে খাছ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। অর্থাৎ এর হুকুম কারো জন্য নির্দিষ্ট করে
দেয়া হয়নি।
কাজেই
যারা মুবাল্লিগে আম, তারা তাদের দায়িত্ব ও ক্ষেত্র অনুযায়ী উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আমল করবেন। আর যারা মুবাল্লিগে
খাছ, তারাও তাদের দায়িত্ব ও যোগ্যতা এবং ক্ষেত্র অনুযায়ী উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপর আমল করবেন।
অতএব
প্রত্যেক মুবাল্লিগে আম-এর জন্য তার ক্ষেত্র হচ্ছে- তার অধীনস্থগণ। যাদেরকে তার
তরফ থেকে দ্বীনের জন্য তা’লীম দেয়া ও তাকীদ করা দায়িত্ব ও
কর্তব্য। অর্থাৎ এটা হচ্ছে তাবলীগে খাছ যা করা- মুবাল্লিগে আম-এর জন্য ফরজে আইনের
অন্তর্ভূক্ত। (তাফসীরে মাযহারী, রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী, ফতহুল ক্বাদীর, খাযেন, বাগবী, কুরতুবী,
ইবনে কাছীর, কবীর)
মুবাল্লিগে খাছ ও তার হিদায়েতের ক্ষেত্র
মুবাল্লিগে
খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক), মুবাল্লিগে আম-এর মত নয়। অর্থাৎ
তিনি কেবল তার অধীনস্থদেরই নয় বরং তিনি আমভাবে সকল উম্মতকেই হিদায়েত করার উপযুক্ত। পক্ষান্তরে মুবাল্লিগে আম কেবল
তার অধীনস্থদেরই বলার যোগ্যতা রাখেন।
আর যাঁরা
খাছ মুবাল্লিগ অর্থাৎ বিশিষ্ট দ্বীন প্রচারক, তাঁদের
প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
ولتكن
منكم امة يدعون الى الخير ويأمرون بالمعروف وينهون ن المنكر وارلئك هم المفلحون.
অর্থ : “তোমাদের
মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় হওয়া জরুরী, যারা (মানুষকে) কল্যাণের (পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র
সুন্নাহ শরীফ তথা দ্বীন ইসলাম উনার) দিকে ডাকবে এবং সৎ কাজের আদেশ
করবে এবং বদ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই মূলত কামিয়াব।” (পবিত্র সূরা ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৪)
অর্থাৎ তাঁকে অবশ্যই দ্বীনী বিষয়ে বিশেষ
যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে এবং ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাসাউফে বিশেষ দক্ষতা তথা ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নত পরিমাণ ইলম, আমল এবং ইখলাছ হাছিল করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন
فلولا
نفر من كل فرقة منهم طائفة ليتفقهوا فى الدين ولينذروا قومهم اذا رجعوا اليهم
لعلهم يحذرون.
অর্থ : “কেন
তাদের প্রত্যেক ক্বওম বা ফেরক্বা থেকে একটি দল বের হয়না এজন্য যে, তারা দ্বীনী ইলমে দক্ষতা অর্জন করবে এবং তাদের ক্বওমকে ভয় প্রদর্শন করবে, যখন তারা তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে। আশা করা যায়, তারা
বাঁচতে পারবে।”
(পবিত্র সূরা তওবা শরীফ, পবিত্র আয়াত
শরীফ ১২২)
(তাফসীরে মাজহারী, রুহুল মা’য়ানী, রুহুল
বয়ান,
ফাতহুল ক্বাদীর, কাশশাফ, হাশিয়ায়ে
সাবী,
যাদুল মাসীর, খাজেন, বাগবী, কুরতুবী,
কবীর, ইবনে কাছীর ইত্যাদি)
আর মহান
আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন,
تعلموا العلم وعلموه الناس.
অর্থ : “তোমরা
দ্বীনী ইলম শিক্ষা কর এবং মানুষকে তা
শিক্ষা দাও।”
(দারেমী, দারে কুত্নী, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত
ত্বীবী,
তালীকুছ ছবীহ, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ, লুময়াত ইত্যাদি)
মূলতঃ
যাঁরা মুবাল্লিগে খাছ, তাঁদেরকে অবশ্যই ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানী হতে হবে। আর
হক্কানী,
রব্বানী আলেমগণের প্রসঙ্গে মহান
আল্লাহ পাক পবিত্র
কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
انما يخشى الله من عباده العلماء.
অর্থ : “নিশ্চয়ই
বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই মহান আল্লাহ
পাক উনাকে ভয় করেন।” (পবিত্র সূরা ফাতির শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “যার মধ্যে যতবেশী আল্লাহ ভীতি রয়েছে, তিনি তত বড় আলেম।”
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে,
من
ارباب العلم؟ قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء؟
قال الظمع.
অর্থ : “(জিজ্ঞাসা
করা হলো) আলেম কে? উত্তরে বললেন, যাঁরা ইলম অনুযায়ী আমল করেন।
পুণরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন জিনিস আলেমের অন্তর থেকে ইলমকে
বের করে দেয়?
তিনি বললেন, লোভ (দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা)।” (দারেমী,
মিশকাত, মিরকাত, মোযাহেরে
হক্ব,
শরহুত ত্বীবী, তালীক, আশয়াতুল
লুময়াত,
মিরআতুল মানাজীহ, লুময়াত ইত্যাদি)
অর্থাৎ
যিনি ইলম অনুযায়ী আমল করেন, তিনিই হক্কানী-রব্বানী আলেম।
কাজেই
যিনি ইলম,
আমল ও ইখলাছ হাছিল করেছেন, তিনিই হক্কানী আলেম, আর তিনিই
নবী আলাইহিস সালামগণের ওয়ারিছ। যাঁদের শানে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
العلماء ورثة الانبياء.
অর্থ : “আলেমগণ
হলেন- নবীগণের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী।” (আহমদ,
তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে
মাযাহ,
মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্
ত্বীবী,
বজলুল মাজহুদ, তোহ্ফাতুল আহওয়াযী, মায়ারেফুস সুনান, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ, উরফুশশাজী, তা’লীক)
অর্থাৎ হযরত নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের দাওয়াত ও তাবলীগ, তা’লীম ও তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র যেমন আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি
প্রযোজ্য,
তদ্রুপ যাঁরা মুবাল্লিগে খাছ, উনারা হযরত নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের ওয়ারিছ হওয়ার কারণে উনদেরও দাওয়াত ও তাবলীগ, তা’লীম ও তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি
প্রযোজ্য। আর এ আম তা’লীম বা তাবলীগ ফরজে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত। যা অতীতে ও
বর্তমানে ওলামায়ে হক্কানী- রব্বানীগণ তাসাউফ শিক্ষা দিয়ে, মাদ্রাসায়
পড়িয়ে,
মসজিদে ইমামতি করে, কিতাবাদি
লিখে,
ওয়াজ-নছীহত করে ইত্যাদি নানানভাবে দাওয়াত ও তা’লীম-তালক্বীন দিয়ে হিদায়েতের কাজ করে মুবাল্লিগে খাছ-এর দায়িত্ব পালনের
মাধ্যমে,
তাবলীগে আম-এর (ফরজে কেফায়ার) ও তাবলীগে খাছ-এর (ফরজে
আইনের) খেদমতের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
মুবাল্লিগে আম-এর জন্য তাবলীগে আম করার হুকুম
এবং মুবাল্লিগে খাছ-এর যোগ্যতা ও তাবলীগে আম-এর শর্ত
স্মরণীয়
যে, যারা মুবাল্লিগে আম এবং যাদের জন্য শুধু তাবলীগে খাছ করা ফরজে আইন, তাদের জন্য কোন ক্রমেই এবং কষ্মিনকালেও তাবলীগে আম বা ব্যাপকভাবে দ্বীন প্রচার
করা (যা মুবাল্লিগে খাছ তথা উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণের জন্য নির্দিষ্ট তা) জায়েয নেই।
এ
প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে যে, একদিন এক লোক উনার সাক্ষাতে আসলে তিনি তাকে
জিজ্ঞাসা করলেন,
“তুমি কি কর?” সে জাওয়াব দিল, দ্বীন প্রচার করি। তখন তিনি তাকে বললেন, “তুমি কি
ঐ সকল পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের আমল করেছ?” যা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে-
(১) পবিত্র সূরা সফ শরীফ উনার ২নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান
আল্লাহ পাক বলেন,
يا ايها الذين امنوا لم تقولون مالا تفعلون.
অর্থ : “হে
ঈমানদারগণ! তোমরা যা করনা, তা কেন বল?”
“তুমি কি এ পবিত্র আয়াত
শরীফ উনার আমল করেছ?” সে জাওয়াব দিল, না।
(২) তিনি আবার বললেন যে, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ৪৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেছেন,
اتأمرون
الناس بالبر وتنسون انفسكم وانتم تنلون الكتاب.
অর্থ : “তোমরা কি
মানুষকে সৎ কাজের আদেশ কর, আর নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও? অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াত করে থাক।”
“তুমি কি এ পবিত্র আয়াত
শরীফ উনার আমল করেছ?” সে জাওয়াব দিল, না।
(৩) পুণরায় তিনি বললেন, “তুমি কি ঐ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আমল করেছ? যা হযরত শোয়াইব আলাইহিস সালাম উনার ক্বওমকে বলেছিলেন,
وما اريد ان اخالفكم الى ما انهاكم عنه.
অর্থ : “আমি এটা
চাইনা যে,
তোমাদেরকে যে কাজ থেকে নিষেধ করি, আমি তার
খেলাফ করি। অর্থাৎ আমি যা বলি, তা করি আর যা বলিনা, তা করিনা।”
(পবিত্র সূরা হুদ শরীফ, পবিত্র আয়াত
শরীফ ৮৮)
তুমি কি
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আমল করেছ? সে জাওয়াব দিল, না।
তখন হযরত
ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু তাকে বললেন, “তুমি প্রথমে এ পবিত্র আয়াত শরীফসমূহের আমল কর, অতঃপর তুমি দ্বীন প্রচারের কাজে
নিজেকে নিয়োজিত কর।” অর্থাৎ উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের আমল
ব্যতিরেকে তাবলীগে আম করা জায়েয নেই।
উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, তাবলীগে খাছ মুবাল্লিগে আম ও খাছ
উভয়ের জন্যেই ফরজে আইন। আর তাবলীগে আম শুধুমাত্র মুবাল্লিগে খাছ তথা হক্কানী
আলেমগণের জন্যেই প্রযোজ্য, যা উনাদের জন্যে ফরজে কেফায়ার
অন্তর্ভূক্ত। অতএব, মুবাল্লিগে আম বা সাধারণ লোকদের জন্যে তাবলীগে আম করা কখনো
শুদ্ধ হবেনা বরং তাদের জন্যে তা করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম হবে।
বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য যে,
“বর্তমানে প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ” যাকে তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাবলীগে আম বলে থাকে, (যা
আমাদের নিকট মক্তবী শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত যদি আক্বীদা শুদ্ধ হয়ে থাকে) যদি তাদের
কথা মোতাবেক তাকে তাবলীগে আম ধরা হয়, তাহলে তো অবশ্যই তা মুবাল্লিগে
খাছ-এর জন্য করা উচিৎ ছিল। অথচ তা এমন সব লোকেরা করে থাকে যারা মুবাল্লিগে খাছ তো
নয়ই, বরং তাদের মধ্যে অনেকেই মুবাল্লিগে আম-এরও উপযুক্ত নয়। যদিও কিছু সংখ্যক
মুবাল্লিগে আম রয়েছে।
অতএব
তাবলীগে আম মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্যই করা ফরজে কেফায়া। যা মুবাল্লিগে আম-এর জন্য
করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। আর সাধারণ লোকেরতো প্রশ্নই উঠেনা।
এখন হয়তো
কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, অনেক সময় দেখা যায় এমন কতক লোক, যারা মুবাল্লিগে খাছ ও আম কোনটাই নয়, তারা অনেকেই নামাজের জামায়াতে
যাওয়ার সময় বা নামায পড়ার সময় অন্যকে নামাজে ডেকে নিয়ে যায়, রোজার মাসে রোজা রাখার কথা বলে, ইত্যাদি অনেক নেক কাজের কথাই বলে
থাকে,
যা তাদের দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত ছিলনা তবে তার ফায়সালা কি? এটাও কি নাজায়েয ও হারাম?
এর
ফায়সালা হলো,
ঐ সকল লোক মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ-
الدين نصيحة.
অর্থাৎ “দ্বীন হচ্ছে অপরের ভাল কামনা করা।” এর মেছদাক বা নমুনা। অর্থাৎ
এদেরকে কেউ হিদায়েতের দায়িত্ব দেয়নি বা এরা হিদায়েতের ব্যাপারে কোন দায়িত্ব গ্রহণ
করেনি। এরা হচ্ছে মানুষের খয়েরখাঁ বা হিতাকাঙ্খী।
এখানে
আরো উল্লেখ্য যে, তিবরানী শরীফের উপরোক্ত হাদীসে দেখা যাচ্ছে যে, সৎকাজ না করলেও অপরকে সৎ কাজ করতে বলা হয়েছে। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান
আল্লাহ পাক বলেন, “তোমরা ঐ কথা বল কেন, যা তোমরা নিজেরা করোনা।”
তাহলে এই
পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বক্তব্যের মধ্যে ফায়সালা কি?
মূলত এর
ফায়সালা ওলামায়ে মুহাক্কিক, মুদাক্কিকগণ দিয়েছেন। উনাদের মতে তিবরানী শরীফ উনার হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সৎ কাজ না করলেও সৎ কাজের দাওয়াত
দেয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন
প্রচারক)-এর জন্য। যেমন কোন বাবা নিজে নামায বা অন্যান্য নেক কাজ না করা সত্বেও
তার সন্তান ও অধীনস্থদের নামায বা অন্যান্য নেক কাজের জন্য বলতে পারেন।
আর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নিজে সৎ কাজ না করে অপরকে তা
বলার জন্য যে নিষেধবাণী করা হয়েছে, তা হলো- মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য।
অর্থাৎ মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য নিজে সৎ কাজ না করে অপরকে তা করতে বলা জায়েয নেই।
এ
প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে,
عن
انس قال- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مررت ليلة اسرى بى بقوم تقرض شفاههم
بمقاريض من النار- فقلت يا جبريل من هؤلاء- قال هؤلاء خظباء امتك الذين يقولون
مالا يفعلون.
অর্থ : হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন,
“মি’রাজ শরীফ উনার রাত্রে এমন একটি ক্বওমের নিকট
দিয়ে যাচ্ছিলাম,
যাদের ঠোঁটগুলো আগুনের কেঁচি দ্বারা কাটা হচ্ছিল। আমি হযরত
জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? জবাবে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম বলেন, এরা আপনার উম্মতদের মধ্যে ঐ সকল ওয়ায়েজ বা বক্তা, যারা এমন
কথা বলতো,
যেটা তারা নিজেরা আমল করতোনা।” (তিরমিযী, মিশকাত, তোহফাতুল আহওয়াজী, উরফুশ শাজী,
মায়ারেফুস সুনান, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, যারা মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন প্রচারক), তারা তিবরানী শরীফের বর্ণনা মোতাবেক সৎকাজ না করেও অপরকে সৎকাজ করার কথা বলতে
পারবেন। আর যারা মুবাল্লিগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক), তারা কুরআন
শরীফের উক্ত আয়াত শরীফ মোতাবেক নিজে সৎকাজ না করে অপরকে সৎকাজ করার কথা বলতে
পারবেন না। কারণ যদি সকলের জন্যে আমভাবে একথা বলা হয় যে, সৎকাজ না
করেও অপরকে সৎকাজের কথা বলা জায়েয, তবে মি’রাজ শরীফ উনার পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত লোকদের জিহ্বা কাটা
হলো কেন?
এতে বুঝা গেল যে, তিবরানী শরীফ উনার উক্ত হুকুম সকলের জন্যে
প্রযোজ্য নয়। বরং যারা মুবাল্লিগে আম, তাদের জন্যেই প্রযোজ্য। আর কুরআন
শরীফের উক্ত আয়াত শরীফ ও মি’রাজ শরীফ সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা যারা মুবাল্লিগে
খাছ, তাদের জন্যে প্রযোজ্য।
সুতরাং
হাক্বীক্বতে উক্ত পবিত্র হাদীছ
শরীফ ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে কোনই দ্বন্দ্ব নেই। অনেকে
এর সঠিক ব্যাখ্যা না জানার ও না বুঝার কারণে এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা
বলে থাকে। মূলত উক্ত পবিত্র আয়াত
শরীফ ও পবিত্র হাদীছ
শরীফ যার যার ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রযোজ্য ও অনুসরণীয়।]
সুওয়ালে
উল্লেখকৃত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর বক্তব্যের জাওয়াব –
৬২নং সুওয়াল ও তার জাওয়াব
সুওয়াল : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে বা
প্রচার করে থাকে যে, মাওলানা ইলিয়াস সাহেব প্রবর্তিত “তাবলীগ
জামায়াতই আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ।” যে প্রসঙ্গে মাওলানা ইলিয়াস সাহেব ও তার “মলফুয়াতের” ২৪নং মলফুযে বলেছেন, “আসল কাজের তরীক্বা তাবলীগ হতে
শিখতে হবে।”
তাই তারা সাধারণ লোকদেরকে তাবলীগ জামায়াতের প্রতি
আকৃষ্টকরার জন্য আরো বলে থাকে যে, “প্রচলিত তাবলীগের কাজ হযরত নূহ
আলাইহিস সালাম উনার কিশতীর ন্যায়, তাতে যারা আরোহন করলো, তারাই নাযাত পেলো।” এ কথার প্রমাণ তাবলীগ কা মুকামী কাম
পৃষ্ঠা-৩৯ ও ভ্রান্তির বেড়াজা বর্তমান তাবলীগ জামায়াত পৃষ্ঠা-১২ কিতাবদ্বয়ে উল্লেখ
আছে।
আবার
তারা একথাও প্রচার করে থাকে যে, হাদীছ শরীফে ৭৩টি দলের মধ্যে যে
দলটিকে নাযী বা নাযাত প্রাপ্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রচলিত
তাবলীগ জামায়াতই উক্ত নাযাত প্রাপ্ত দল।”
এখন
আমাদের জানার ও বুঝার বিষয় হলো, তাদের উক্ত বক্তব্য এবং দাবী
কতটুকু সঠিক?
আর সত্যিই কি তাবলীগ ‘জামায়াত
একমাত্র আসল ও নাযাতের পথ? পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ,
ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের
উপরোক্ত বক্তব্য, প্রচারণা ও দাবী সম্পূর্ণই অমূলক, অসত্য, জেহালতপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর।
প্রথমত : বলতে হয় যে, তারা যে বলেছে, “প্রচলিত তাবলীগের কাজ হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতীর
ন্যায় ...........।”
তাদের এ
বক্তব্য ও প্রচারণা সম্পূর্ণই মনগড়া, কল্পনা প্রসূত ও কুরআন শরীফ-
সুন্নাহ শরীফের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যহীন। কারণ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা
কস্মিন কালেও প্রমাণ করতে সক্ষম হবে না যে, পবিত্র কুরআন শরীফ,
পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের কোথাও তাদের প্রবর্তিত তাবলীগের
কাজকে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতীর ন্যায় বলা হয়েছে। বরং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
ان اولادى كسفينة النوح فمن دخلها فقدنجا.
অর্থ : “নিশ্চয়ই
আমার আওলাদ ও আহলে বাইতগণ, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার
কিশতীর ন্যায়,
(উনাদেরকে মুহব্বত, তা’যীম-তাকরীম
করার মাধ্যমে) যারা তাতে প্রবেশ করবে, তারা নাযাত পাবে।” (সিররুশ শাহদাতাইন)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن
ابى ذرقال ......... سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول الا ان مثل اهل بيتى فبكم
مثل سفينة ئوح من ركبها نجا ومن تخلف عنها هلك.
অর্থ : হযরত আবূযর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি শুনেছি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “সাবধান!
নিশ্চয় তোমাদের সাথে আমার আহলে বাইত উনাদের মেছাল হলো- হযরত নূহ আলাইহিস সালাম
কিশতীর ন্যায়। তাতে যারা আরোহণ করবে, অর্থাৎ আমার আহলে বাইতকে মুহব্বত ও অনুসরণ-অনুকরণ
করবে,
তারা নাযাত পাবে। আর যারা তাতে আরোহণ করবে না অর্থাৎ
তাদেরকে মুহব্বত ও অনুসরণ-অনুকরণ করবে না, তারা
হালাক হয়ে যাবে।
(আহমদ,
সিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল
লুময়াত,
লুময়াত, তা’লীকুছ
ছবীহ,
শরহুত ত্বীবী, মুযাহেবে হক্ব)
এখানে
বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, উক্ত হাদীছ শরীফসমূহে আওলাদে রসূল
ও আহলে বাইতগণকেই হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতীর ন্যায় বলা হয়েছে। অথচ
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাদের প্রবর্তিত কাজকে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম
উনার কিশতীর ন্যায় বলে প্রচার করে থাকে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বহির্ভুত বক্তব্য।
আর এ
ধরণের লোকদের প্রসঙ্গেই পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
يكون
فى اخرالزمان دجالون الكذابون ياتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا ابائكم
فا يا كم واياهم لا يضلونكم ولا يفتنو نكم.
অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আখিরী
যামানায় (মানুষের মধ্য হতে) একদল মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদেরকে এমনসব (উদ্ভট ও আজগুরী) কথা বলবে, যা তোমরা
এমনকি তোমাদের বাপ-দাদারাও কখনো শুনেনি। তোমরা তাদের নিকট থেকে দূরে থাক এবং
তাদেরকেও বিভ্রান্ত করতে ও ফিৎনায় ফেলতে পারবে না।” (মুসলিম, মিশকাত,
শরহুন নববী, মিরকাত, আশয়াতুর
লুময়াত,
লুময়াত, শরহুত ত্বাবী, তা’লীকুছ ছবীহ,
মুযাহেরে হক্ব)
অতএব, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত
তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যদি হক্ব মত ও হক্ব পথে ক্বায়িম থাকতে চায়, তবে তাদের জন্য এ ধরণের আপত্তিকর ও কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর বিরোধী
বক্তব্য- “প্রচলিত তাবলীগের কাজ নূহ আলাইহিস সাল্লাম উনার কিশতীর ন্যায় “যা সম্পূর্ণই মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর
ও কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ বিরোধী, তা প্রদান করতে বিবত থাকা ফরয-ওয়াজিব।
দ্বিতীয়ত : বলতে হয় যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যে বলে থাকে, “পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত
৭৩ দলের মধ্যে যে দলটি নাযাত প্রাপ্ত, তারাই সে দল।”
তাদের এ
বক্তব্য,
প্রচারণা ও দাবী নিহায়েতই অজ্ঞতামূলক, মনগড়া ও চরম আপত্তিকর। কারণ তাদের এ বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বাইরে যার রয়েছে, তারা
৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরকার অন্তর্ভুক্ত। অথচ বিগত ৭১ বছর যাবত প্রচলিত তাবলীগ
জামায়াতের উৎপত্তি লাভের পূর্বে সুসংবাদ প্রাপ্ত অনেক ইমাম, মুজতাহিদ,
ফক্বীহ, ওলীআল্লাহ, বুযুর্গানে দ্বীন অতীত হয়েছেন। যাদের অনেকের মর্যাদা সম্পর্কে হাদীছ শরীফও ইরশাদ মুবারক হয়েছে। এছাড়া অনেক নেককার
মুসলমানও ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের
কথানুযায়ী প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তারা নাযাত প্রাপ্ত নয়।
মূলত এ কথা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য ফিকির করলে তাদের একথা সকল আম্বিয়া
আলাইহিস সালাম,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের প্রতিও আরোপিত হয়, যা জঘণ্য কুফরী। (নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক)
মূলত
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা হাদীছ শরীফ উনাদের সঠিক ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েই এ ধরণের বক্তব্য পেশ করেছে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন,
ستفترق
امتى على ثلاث وسبعين ملة كلهم فى النار الا ملة واحدة- قالوا من هى يا رسول الله؟
قال ما انا عليه واحابى. رواه الترمذى وفى رواية احمد وابى داودعن معاوية قال-
ثنتان وسبعون فى النار وواحدة فى الجنة وهى الجماعة.
অর্থ : “অতি
শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত বাহাত্তরটি দলই
জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! নাযাত প্রাপ্ত দল কোনটি? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এবং
আমার ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মত ও পথের উপর যারা ক্বায়িম থাকবে (তারাই নাযাত প্রাপ্ত দল)।”
ইমাম
তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন। আর মসনদে আহমদ ও আবূ দাউদ শরীফে হযরত মুয়াবিয়া
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে যে, বাহাত্তরটি
দল জাহান্নামে যাবে, আর একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে। মূলত সে দলটি হচ্ছে- আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত।”
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুহাদ্দিস, রঈসুল মুহাদ্দেসীন, ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব মিশকাত শরীফের শরাহ “মিরকাতুল মাফাতীহ”-এর ১ম জি: ২৪৮নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন যে,
قالوا
من هى ....... اى تلك الملة اى اهلها الناجية ......... (قال ما انا عليه واصحابى)
........ فكذا هنا المراد هم المهتدون المتمسكون بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين من
بعدى فالا شك ولا ريب انهم هم اهل السنة والجماعة- وقيل التقدير اهلها من كان على
ما انا عليه واصحابى من الا عتقاد والقول والقول والفعل فان ذالك يعرف باالاجماع.
অর্থ : “......... হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ জিজ্ঞাসাকরলেন, সে দল কোনটি অর্থাৎ নাযাত প্রাপ্ত দল কোনটি? ........... নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যারা আমি ও আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের মত পথে ক্বায়িম থাকবে
(তারাই নাযাত প্রাপ্ত দল)। ......... মূলত এ কথার দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, (যারা নাযাত প্রাপ্ত দল) তারা হিদায়েত প্রাপ্ত, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার খুলাফায়ে রাশেদীনগণের
সুন্নত সমূহকে মজবুতভাবে ধারণকারী। আর এতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই যে, তারাই মূলত: আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত।
আরো
বুঝানো হয়েছে যে, (যারা নাযাত প্রাপ্ত দল), তারা
আক্বীদা,
ক্বওল ও ফেলের দিক থেকে আমি ও ছাহাবায়ে ক্বিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুসারী হবে, আর এটা
মূলত ইজমা দ্বারা প্রমাণিত।”
সুতরাং
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমণিত হলো যে, হাদীছ শরীফে বর্ণিত নাযাত প্রাপ্ত
দল তারাই,
যারা আক্বীদা ও আমলের দিক থেকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণের পূর্ণ অনুসারী বা ইসলামের হুকুম-আহকাম পরিপূর্ণভাবে পালনকারী। যে
প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন, তোমরা পরিপূর্ণভাবে পালনকারী। যে
প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ
পাক বলেন,
তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং জেনেশুনে শয়তানের
পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। উল্লেখ্য ইসলামে পরিপূর্ণ প্রবেশ কেব আমল দ্বারাই আদায় হয়
না তার সাথে যাদের আক্বীদা পবিত্র কুরআন শরীফ,
পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত তারাই
ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসারী।
অথচ
প্রচলিত তাবলীগ জামাতের শিকর দ্বারা আদৌ মহান মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ
পরিপূর্ণভাবে পালন ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ণ অনুসরণ সম্ভব নয়। উপরন্ত তাদের অনেকেরই
আক্বীদার ভিতরে বিশেষ গলতি রয়েছে। যা ইতিমধ্যে প্রদত্ত ফতওয়ায় বিস্তারিত আলোচনা
হয়েছে।
অথচ
আক্বীদা শুদ্ধ না হলে আমলের কোন মূল্যই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট নেই। তাই মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অসংখ্য স্থানে আমলের পূর্বে
ঈমানের কথা বলেছেন। সূরা আছরের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ মুবারক করেন,
والعصر-
ان الانسان لفى خسر- الاالذين امنوا وعملوا الصالحات.
অর্থ : “আছরের
সময়ের কছম! সকল মানুষ ধ্বংসের মধ্যে, একমাত্র তারা ব্যতীত, যাঁরা ঈমান এনেছে (আক্বীদ শুদ্ধ করেছে) এবং নেক আমল করেছে।”
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
تركت
فيكم امرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله وسنتى.
অর্থ : “তোমাদের
নিকট আমি দু’টি জিনিস রেখে গেলাম, যতদিন তোমরা এ দু’টোকে আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে, অর্থাৎ অসুরসরণ-অনুকরণ করবে, ততদিন তোমরা গুমরাহ বা পথ ভ্রষ্ট হবে না। সে দু’টি হলো-
১। কুরআন শরীফ,
২। আমার সুন্নত (হাদীছ শরীফ)
বর্ণিত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, যাতের আক্বীদা ও আমল পবিত্র কুরআন
শরীফ ও পবিত্র হাদীছ
শরীফসম্মত,
একমাত্র তারাই নাযাত প্রাপ্ত ও ধ্বংস হতে মুক্ত। আর যাদের
আক্বীদা ও আমল পবিত্র কুরআন
শরীফ ও পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার বিপরীত, তারা
নাযাত প্রাপ্ত দল তো নয়ই বরং তারা চরম গুমরাহ ও বিভ্রান্ত। যেমন বিভ্রান্ত হয়েছে-
শিয়া বা রাফেজী,
মু’তাযিলা, ক্বদরিয়া, জাবারিয়া,
খারেজী, মরজিয়া ফিরকাসহ ৭২টি বাতিল ফিরকা।
যদিও তারা নিজেদেরকে মুসলমান ও নাযাত প্রাপ্ত দল বলে দাবী করে থাকে। কিন্তু আহলে
সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মুতাবেক তারা মুসলমান ও নায়াত প্রাত্ত দলের
অন্তর্ভুক্ত নয়।
মূলত
কারো আক্বীদার মধ্যে যদি বিন্দুমাত্রও কুফরী থাকে, আর সে
যদি পাহাড়সম আমলও করে, তবুও তার পক্ষে নায়াত পাওয়া সম্ভব নয়। যেমন- কোন ব্যক্তি
প্রাণীর ছবি তোলাকে জায়িয বা হালাল মনে করে, অথচ সে
অনেক নেক আমলও করে, তার পক্ষে কস্মিন কালেও নাযাত পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ অসংখ্য
ছহীহ হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহ-ফতওয়ার কিতাবেরনির্ভরযোগ্য বর্ণনা দ্বারা অকাট্যভাবে
প্রমাণিত যে,
প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা (হাতের মাধ্যমে হোক অথবা
ক্যামেরার দ্বারা হোক) হারাম। আর আক্বাইদের কিতাবে লেখা আছে , হারামকে হালাল জানা বা হালালকে হারাম জানা উভয়টাই কুফরী।
এক্ষেত্রে
বিশেষ উদাহরণ হলো- কাদিয়ানী সম্প্রদায়, যারা প্রায় ইসলামের সকল
বিধি-বিধানই স্বীকার করে, কিন্তু শুধুমাত্র “খতমে নুবুওওয়াত” অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শেষ নবী
স্বীকার না করার কারণে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মুতাবেক তারা
(কাদিয়ানীরা) কাফির।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, নাযাত প্রাপ্ত দল তারাই, যারা
পরিণূর্ণভাবে ইসলাম পালন করে এবং যাদের আক্বীদা ও আমল সম্পূর্ণই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত। কাজেই যে যত কিছুই দাবী করুক না কনে, তার দাবী ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য নয়, যতক্ষণ
পর্যন্ত তার আক্বীদা ও আমল পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ
শরীফ সম্মত না হবে।
তৃতীয়ত : বলতে হয় যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যে বলে থাকে, “প্রচলিত
তাবলীগ জামায়াতই আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ।”
তাদের এ
বক্তব্য ও প্রচারণা, ধারণা বা দাবীটিও সম্পূর্ণ অমূলক, অসত্য, বিভ্রান্তিকর এবং জিহালতপূর্ণ। কারণ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত কখনোই আসল ও
একমাত্র নাযাতের পথ হতে পারে না। কেননা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত হচ্ছে- একটিমক্তবের
ন্যায়। অর্থাৎ তারা লোকদের যে তালীম বা শিক্ষা দেয়, তা
মক্তবী শিক্ষা বা প্রাথমিক শিক্ষার চেয়ে মোটেও বেশি নয়। যার সত্যতা স্বীকার করেছে
তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস সাহেব স্বয়ং তার “মলফুযাতে।”
কাজেই
মক্তবী শিক্ষাকে আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ বলে দাবী করা আহমকী ও জিহালত বৈ কিছুই
নয়। কারণ মক্তবী বা প্রাথমিক শিক্ষার দ্বারা পূর্ণতা হাছিল করা বা মু’মিনে কামিল হওয়া আদৌ সম্ভব নয়। বরং মু’মিনে
কামিল হওয়ার জন্য ইসলামের পূর্ণ শিক্ষা লাভ করাই বাঞ্ছনীয়। যা প্রচলিত তাবলীগ
জামায়াতের মাধ্যমে কখনোই লাভ করা সম্ভব নয়। যেহেতু প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের
শিক্ষাইসলামী শিক্ষার তুলনায় নিতান্তই নগণ্য।
মূলত
ইসলামী শিক্ষা সম্পর্কে সঠিক ইলম না থাকার কারণেই প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা
তাদের প্রবর্তিত তাবলীগ জামায়াতকে আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ বলে দাবী করে থাকে।
এজন্য নি¤েœ ইসলামী শিক্ষা ও তাবলীগ জামায়াতের
শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
পূর্ণ
ইসলামী শিক্ষা:
মহান
আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
طلب العلم فريضة على كل مسلم.
অর্থ : “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য
(ইসলাম সম্পর্কিত ফরয পরিমাণ) ইলম অর্জন করা পরয।” (বায়হাক্বী, মিশকাত,
মিরকাত, আশয়াতুল লূময়াত, লুময়াত,
মুযাতেরে হক্ব, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ,
মিরআতুল মানাজীহ)
আর উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
العلم
علمان علم فى القلب فذاك علم النافع علم على للسان فذالك حدة الله عزوجل على ابن
ادم.
অর্থ : “(যে ইলম
অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয) সে ইলম দু’প্রকার-১।
ক্বালবী ইলম যা উপকারী ইলম অর্থাৎ ইলমে তাছাউফ। ২। জবানী ইলম, যা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য দলীল। অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ।
উল্লেখিত
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপর ভিত্তি করে ইমাম, মুজতাহিদ,
আওলিয়ায়ে কিরামগণ ইসলামী শিক্ষাকে প্রথমত: দু’ভাগে ভাগ করেছেন- (১) ইলমে ফিক্বাহ (২) ইলমে তাছাউফ।
ইলমে
ফিক্বাহ
ইলমে ফিক্বাহকে
আবার চারভাগে ভাগ করা হয়েছে। (১) আক্বাইদ, (২) ইবাদত, (৩) মুয়ামেলাত, (৪) মুয়াশেরাত।
আক্বাইদের বর্ণনা:
আক্বাইদ
(عقائد) আক্বীদাতুন-এক (عقيدة) বহু বচন। যার অর্থ হচ্ছে- দৃঢ় ও বিশুদ্ধ বিশ্বাস।
মূলত
আক্বাইদের অনেক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ইসলামের
প্রতিটি বিষয়ে বিশেষ করে মৌলিক বিষয়সমূহ পবিত্র কুরআন শরীফ,
হাদীছ শরীফ ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করা, তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা ফরয।
কারণ
আক্বীদা বা ঈমান হচ্ছে- সমস্ত কিছুর মূল। যার আক্বীদায় বিন্দুমাত্রও ত্রুটি বা ভুল
থাকবে অর্থাৎ কুফরী থাকবে, তার কোন আমলই মহান আল্লাহ পাক
উনার দরবারে কবুল হবে না। তাই মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার
মধ্যে অসংখ্য স্থানে আমলের পূর্বে ঈমানের কথা বলেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক বলেন,
ان
الذين امنوا وعملوا الصا لحات كانت لهم جنت الفردوس نزلا.
অর্থ : “নিশ্চয়
যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদের জান্নাতে মেহমানদারী করা
হবে।”
অতএব, প্রমণিত হলো যে, জান্নাত লাভ করতে হলে বা মহান আল্লাহ পাক উনার রেজামন্দি
হাছিল করতে হলে সর্ব প্রথম ঈমান বা আক্বীদাকে বিশুদ্ধ করতে হবে। অত:পর নেক আমল
করতে হবে। যার আক্বীদা বিশুদ্ধ নয় বরং কিছুমাত্রও কুফরী রয়েছে, তার নেক আমরে কোন মূল্যই নেই। উপরন্ত কুফরী আক্বীদা থাকার কারণে সে চির
জাহান্নামী হবে। আর যার আক্বীদা বিশুদ্ধ রয়েছে, সে যদি
নেক আমল নাও করে থাকে, সে চির জাহান্নামী হবে না। বরং পাপের শাস্তি ভোগ করে অবশ্যই
একদিন সে জান্নাতে যাবে।
তাই
আক্বাইদ সংক্রান্ত ফরয পরিমাণ ইলম অর্জন করাও প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরযে
আইন। যা ইলমে ফিক্বাহর চারভাগের একভাগ।
কাজেই
আক্বাইদ সংক্রান্ত বিষয়ে যেমন- তাওহীদ, রেসালত, নবী-রসূল
আলাইহিস সালাম,
আসমানী কিতাবসমূহ, ফেরেশতা, কবর, হাশর,
মীযান, পুলসিরাত, পরকালে, জান্নাত,
জাহান্নাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, নবী
আলাইহিমুস সালামগণের মো’যেযা, ওলী
আল্লাহগণের কারামত ইত্যাদিসহ ইসলামের সকল বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ,
ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের
আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে হবে।
অথচ
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে আক্বাইদ সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য তেমন কোন শিক্ষাই দেয়া হয়
না। বরং ভালরূপে ফিকির করলে দেখা যাবে যে, আক্বাইদ
সংক্রান্ত পূর্ণ শিক্ষার প্রায় সম্পূর্ণটাই তাদের মধ্যে অনুপস্থিত।
ইবাদতের
বর্ণনা:
ইলমে
ফিক্বাহের দ্বিতীয়ভাগ হচ্ছে-“ইবাদত”।
বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করার পর বান্দার দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- ইবাদত তথা নেক আমল
করার এবং তদ্বসংক্রান্ত ইলম বা শিক্ষা লাভ করা। ইমাম মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরামগণ
ইবাদতকে পাঁচ ভাগে বিভক্ত করেছেন- (১) কলেমা, (২) নামায, (৩) রোযা,
(৪) হজ্জ (৫) যাকাত।
আর
এগুলোই মূলত: ইসলামের মূল ভিত্তি বা বুনিয়াদ। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
بنى
اللسلام على خمس- شهادة ان لا اله الا الله وان محمدا عبده ورسوله اقام الصلوة
وايتا والزكوة والج والصوم رمضان.
অর্থ : “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি- (১)
সাক্ষি দেয়া যে, মহান আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ
নেই এবং হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা ও রসূল। (২)
নামায আদায় করা,
(৩) মালের যাকাত দেয়া, (৪) হজ্জ
পালন করা,
(৫) রমযান মাসের রোযা রাখা।”
কলেমার
দু’টি অংশ রয়েছে। প্রথমত : তাওহীদ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার একত্ববাদ। দ্বিতীয়ত : রেসালত অর্থাৎ সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল অর্থাৎ শেষ নবী বা রসূল হিসেবে বিশ্বাস করা।
মূলত কলেমা বা ঈমানের তিনটি শাখা
রয়েছে- (১) তাকবার বিল লিসান, (২) তাছদীক্ব বিল জিনান, (৩) আমল বিল আরকান। অর্থাৎ প্রথমত: কলেমা শরীফ মুখে উচ্চারণ করা, দ্বিতীয়ত: অন্তরে বিশ্বাস করা, তৃতীয়ত: আমলে পরিণত করা তথা
আল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুকুম আহকাম মেনে চলা।
সুতরাং
কোন ব্যক্তিকে ঈমানদার হতে হলে কলেমা শরীফ অর্থাৎ তাওহীদ ও রেসালতের প্রতি পূর্ণ
বিশ্বাস তো রাখতেই হবে, সাথে সাথে ইসলামের কতগুলো মৌলিক
বিষয়ের প্রতিও তাকে ঈমান আনতে হবে বা বিশ্সাস স্থাপন করতে হবে। যে প্রসঙ্গে
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম
জিজ্ঞাসা করেছিলেন-
فاخبرنى
عن الايمان قال ان تؤمن با لله وملائكته ورسله واليوم الاخر وتؤمن بالقدر خيره
وشره.
অর্থ : “ঈমান
সম্পর্কে আমাকে বলুন (ঈমান কাকে বলে?) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মহান
আল্লাহ পাক,
উনার ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ, রসূল আলাইহিস সালামগণ, পরকালের প্রতি এবং তক্বদীরের
ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্সাস স্থাপন করার নামই হচ্ছে ঈমান।” (বুখারী, মুসলিম,
মেশকাত, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস সারী, শরহে নববী, মেরকাত,
আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত
ত্বীবী,
মোযাহেরে হক্ব।)
এখানে
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবেক
ঈমানদার বা মু’মিন হতে হলে উপরোল্লিখিত বিষয়সমূহকে প্রথমত: اقرار باللسان (ইক্বররবিল লিসান) মুখে স্বীকার করতে হবে। দ্বিতীয়ত: تصديق
با لجنان (তাছদীক্ব বিল জিনান) এবং
অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। অর্থাৎ মুখে স্বীকার করার সাথে সাথে অন্তরে
বিশ্বাস না করলে সে মু’মিন বা মুসলমান বলে গণ্য হবে না।
অতএব, কলেমার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে- ঈমান বা আক্বীদা, যা
নুবুওওয়াত ও রেসালত সংশ্লিষ্ট। সুতরাং ঈমান বা আক্বীদা সংক্রান্ত ফরয পরিমাণ ইলম
অর্জন বা শিক্ষা লাভ করা প্রত্যেকের জন্যই ফরয। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের
কলেমা বা ঈমান,
যা নবুওওয়াত ও রেসালত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্পর্কে তেমন
কিছুই শিক্ষা দেয়া হয় না। শুধুমাত্র শুদ্ধ
করে কলেমা শরীফ মুখস্ত করানো হয়, যা আক্বাইদ সংক্রান্ত শিক্ষার
তুলনায় একশত ভাগের একভাগও নয়।
নামাযের
বিবরণ
কলেমার
পর ইবাদতের একটি অংশ হচ্ছে- নামায। নামায ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে একটি অন্যতম
স্তম্ভ।
এ
প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
الصلوة
عمادالدين من اقامها فقد اقام الدين ومن تر كها فقد هدم الدين.
অর্থ : “নামায
দ্বীনের স্তম্ভ বা খুঁটি। যে ব্যক্তি নামায আদায় করলো, সে দ্বীন
কায়িম রাখলো। আর যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, সে দ্বীন
ধ্বংস করলো।”
মূলত নামায সংক্রান্ত শিক্ষা অত্যান্ত
ব্যাপক। কারণ নামাযের মধ্যে রয়েছে অনেক হুকুম-আহকাম ও মাসায়ালা-মাসায়েল। যেমন-
নামায পড়তে গেলে প্রথমেই তাহারাত বা পূর্ণ পবিত্রতা হাছিল করা শর্ত। তাহারাত
ব্যতীত নামায শুদ্ধ হয় না। আর এ তাহারাতের অন্তর্ভুক্ত হলো- উযু ও গোসল। সুতরাং
তাহারাত সম্পর্কিত ফরয পরিমাণ ইলম বা শিক্ষা অর্জন করাও সকল মুসলমান নর-নারীর জন্য
ফরযে আইন। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের ৬ (ছয়) উছূলে তাহারাতের উল্লেখ নেই।
অত:পর
নামাযে তিলঅওয়াত করার জন্য প্রয়োজনীয় সূরা-ক্বিরআত শুদ্ধভাবে পাঠ করতে শিক্ষাও
ফরয। আর শুদ্ধ করে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে হলে ফরয পরিমাণ তাজবীদের ইলম বা
শিক্ষা গগ্রহণ করতে হবে। তাজবীদের ইলম বা শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তাজবীদ শিক্ষা
করা ব্যতীত কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে পাঠ করা দুরূদ ব্যাপার। অথচ নামাযের মধ্যে বিশেষ
করে মাখরাজ যদি সঠিকভাবে আদায় না হয়, তবে নামায বাতিল হয়ে যাওয়ার
সম্ভাবনাই অধিক। কিন্তু তাজবীদের ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাও প্রচলিত তাবলীগের ৬ (ছয়)
উছূলে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তারপর রয়েছে- নামাযের আরকান-আহকাম, মাসয়ালা-মাসায়েল। প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে উল্লেখিত মাসয়ালা বা বিষয়সমূহের
যৎযামান্য শিক্ষাই দিয়ে থাকে।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের নামায সম্পর্কিত পূর্ণ শিক্ষা
দেয়াতো দূরের কথা, ফরয পরিমাণ শিক্ষাও দেয়া হয় না।
রোযার
বিবরণ
পবিত্র
রমাদ্বান মাসের ২৯ অথবা ৩০ দিন রোযা রাখা ফরয। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন-
كتب
عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون.
অর্থ : “তোমাদের
উপর (রমাদ্বানের) রোযা ফরয করা হলো, যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর
ফরয করা হয়েছিল। যেন তোমরা মুত্তাক্বী হতে পার।”
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
ان
الله تبارك تعالى فرض صيام رمضان عليكم وسننت لكم قبامه.
অর্থ : “নিশ্চয় মহান আল্লাহ পাক তাবারুকু তা’য়ালা তোমাদের উপর রমাদ্বানে রোযাকে ফরয করেছেন। আর আমি তোমাদের উপর তারাবীহ
নামাযকে সুন্নত করেছি।” (নাসাঈ শরীফ)
অতএব, রোযা রাখা যেহেতু ফরয, সেহেতু রোযা সম্পর্কিত ফরয পরিমাণ
ইলম অর্জন করাও ফরয। অর্থাৎ রোযার প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল যেমন- চাঁদ দেখা, রোযার ফরয-ওয়াজিব-সুন্নত সম্পর্কে জানা, রোযা
ভঙ্গ হওয়ার কারণ এবং রোযার ক্বাযা ও কাফফারা ইত্যাদি সকল বিষয়ে ইলম বা শিক্ষা লাভ
করা সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিব। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে ইসলামের একটি অন্যতম
ভিত্তি রোযা সম্পর্কিত ইলম বা শিক্ষা সম্পূর্ণই অনুপস্থিত।
হজ্জের
বিবরণ
হজ্জ
ইসলামের বুনিয়াদী একটি ইবাদত। এই হজ্জ শুধুমাত্র সম্পদশালী ও সামর্থবানদের উপরই
জীবনে একবার আদায় করা ফরয। অর্থাৎ শাওওয়াল মাস
থেকে জিলহজ্জ মাসের দশ তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যার নিকট মক্কা শরীফে
যাতায়াতের এবং পরিবারের ভরণ-পোষণের পাথের থাকবে, তার উপর
হজ্জ করা ফরয। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ
পাক কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক ফরমান,
ولله على الناس حج الببت من استطاع اليه سبيلا.
অর্থ : মহান আল্লাহ পাক উনার (সন্তুষ্টি লাভের)
উদ্দেশ্যে ক্বাবা শরীফ গমনে সামর্থবান ব্যক্তিদের উপর হজ্জ করা অবশ্য কর্তব্য।”
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
يا ايها الناس قد فرض عليكم الحج فحجوا.
অর্থ : “হে
মানুষেরা,
তোমাদের উপর হজ্জকে ফরয করা হয়েছে, সুতরাং
তোমরা হজ্জ আদায় কর।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ,
শরহে নববী, মিরকাত শরীফ, আশয়াতুল
লোময়াত,
লোমায়াত, মোযাহেরে হক্ব, শরহুত ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ, মিরআতুল মানাজীহ)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হজ্জ একটি বুনিয়াদী ফরয ইবাদত। তাই যারা হজ্জ আদায় করার সামর্থ রাখে, তাদেরকে
হজ্জের প্রয়োজনীয় শিক্ষা লাভ করতে হবে। মূলত: হজ্জে৭র শিক্ষা অনেক ব্যাপক। যেমন-
হজ্জের প্রকারভেদ, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, ইহরাম,
ইহরাম ভঙ্গ হওয়ার কারণ ইত্যাদি সকল বিষয়ের প্রয়োজনীয় শিক্ষা
গ্রহণ করা হজ্জ পালনকারী সকলের জন্যই ফরয। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত প্রবর্তীত ৬
(ছয়) উছূলী শিক্ষায় হজ্জের কোন চিহ্ন নেই। অর্থাৎ হজ্জ সম্পর্কিত শিক্ষার
সম্পূর্ণটাই তাদের মধ্যে অনুপস্থিত।
যাকাতেরর
বিবরণ
যাকাত
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি বিশেস স্তম্ভ। যাকাত আদায় করা মহান আল্লাহ পাক
উনার নির্দেশ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ
পাক তিনি বলেন,
اقيموا الصلوة واتوا الزكاة.
অর্থ : “তোমরা
নামায ও যাকাত আদায় কর।”
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে যাকাত আদায় না করার কারণে কঠিন ও
শক্ত আযাবের কথা উল্লেখ রয়েছে।
এ
প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم- من اتاه الله مالا فلم يؤد زكواته مثل له ماله يوم
القيامة شجاعا اقرع له زبيبتان يطوقه يوم القيامة ثم ياخذ بلهز متيه ثم يقول انا
مالك وكنزك.
অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যাকে
সম্পদ দেয়া হয়েছে, অথচ সে ব্যক্তি সম্পদের যাকাত আদায় করলো না। তার সে সম্পদ
ক্বিয়ামতের দিন শিং বিশিষ্ট সর্পে পরিণত হবে। সে সাপ তাকে ক্বিয়ামতের দিন শাস্তি
দিবে এবং বলবে- আমি তোমার সেই সঞ্চিত সম্পদ।” (বুখারী
শরীফ,
ফতহুল বারী, ওমদাতুল কারী, এরসাদুস সারী, তাইসীরুল ক্বারী)
অতএব, যে ব্যক্তির বছরে আবশ্যিক ব্যয় বাদ দিয়ে তার নিকট ৭.৫০ (সাড়ে সাত) তোলা স্বর্ণ
অথবা ৫২.৫০ (সাড়ে বায়ান্ন) তোলা রূপা বা সেইপরিমাণ টাকা এক বছর জমা থাকবে, তার উপর ৪০ ভাগের একভাগ যাকাত হিসাবে দান করা ফরয।
সুতরাং
যাকাত সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ইলম বা শিক্ষা যেমন-যাকাতের হার, কি কি জিনিসের যাকাত দিতে হয়, কাকে কাকে যাকাত দিতে হয় এবং কখন
যাকাত ফরয হয় ইত্যাদি সম্পর্কে ফরয পরিমাণ ইলম অর্জন করা ফরযে আইন।
অথচ
প্রচলিত তাবলীগ জাময়াতে যাকাত সম্পর্কিত মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দেয়ার কোন উছূল
নেই। অর্থাৎ ইসলামের একটি বুনিয়াদী ফরয, যাকাত সম্পর্কিত শিক্ষার
সম্পূর্ণটাই তাদের ৬ (ছয়) উছূলী শিক্ষার মধ্যে অনুপস্থিত।
মুয়ামেলাতের
বর্ণনা
ইলমে
ফিক্বাহকে যে চার ভাগ করা হয়েছে, তার তৃতীয় ভাহ হচ্ছে- “মুয়ামেলাত।”
যার অর্থ হচ্ছে- লেনদেন বা আদান-প্রদান। মুয়ামেলাতের অনেক
শাখা-প্রশাখা বা বিষয় রয়েছে। যেমন- ব্যবসা-বাণিজ্য, বেচা-কেনা
ইত্যাদি।
মুয়ামেলাতের
একটি বিশেষ বিষয় হলো- হালাল কামাই করা। এ প্রসঙ্গে মহান
আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
ياايها الناس كلوا مما فى الارض حلالا طيبا.
অর্থ : “হে
মানুষেরা যমীনে যা হালাল খাদ্য রয়েছে, তা তক্ষন কর।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৮)
আর এ
প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن عبد الله قال قال رسول الله طلب كسب
الحلال فريضة بعض الفر يضة.
অর্থ : “(পুরুষের
জন্য) অন্যান্য ফরযের পর হালাল কামাই করাও একটি ফরয।” (বায়হাকী)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن
جابر قال قال رسول الله لا يدخل الجنة لحم فبث من السحت كل لحم نبتمن السحت كانت
النار اولى به.
অর্থ : “প্রত্যেক
ঐ গোশতের টুকরা,
যা হারাম রিযিক দ্বারা তৈরী হয়েছে, তার জন্য
জাহান্নামই উপযুক্ত।” (আহমদ, বায়হাকী)
সুতরাং
হালাল কামাই করতে হলে তালাল-হারাম সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ইলম বা শিক্ষা লাভ করাও
ফরয। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের মুয়ামেলাত সম্পর্কিত কোন শিক্ষাই দেয়া হয় না।
মুয়াশেরাতের
বর্ণনা
মুয়াশেরাত
শব্দের অর্থ : জীবন-যাপন বা আদব-কায়দা।
মুয়াশেরাতের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে- বিবাহ-শাদী, পিতা-মাতার
প্রতি সৎ ব্যবহার, প্রতিবেশীর হক্ব আদায় করা, স্বামী
স্ত্রীর হক্ব্ আদায় করা, বড়দেরকে শ্রদ্ধা করা, ছোটদেরকে স্নেহ করা
ইত্যাদি।
কাজেই
উল্লেখিত বিষয়সমূহের ফরয পরিমাণ বা প্রয়োজনীয় ইলম বা শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ
করে পিতা-মাতার হক্ব সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রত্যেকের জন্যই অবশ্য কর্তব্য।
পিতা-মাতার
হক্ব
এ
প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ
পাক কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক করেন,
وقضى ربك ان لا تعبد الا اياه ويالو الدين احسانا.
অর্থ : “তোমাদের
রব, তোমাদেরকে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করার নির্দেশ দিচ্ছেন এবং
পিতা-মাতার সহিত সৎ ব্যবহার করার নির্দেশ দিচ্ছেন।”
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
رضى
الرب فى رضى الوالد وسخط الرب فى سخط الوالدين.
অর্থ : “পিতা-মাতার
সন্তুষ্টির উপর মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি। আর পিতা-মাতার অসুন্তুষ্টির উপর মহান
আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি।” (তিরমীযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অতএব, পিতা-মাতার হক্ব সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ইলম বা শিক্ষা লাভ করা ফরয।
স্বামী-স্ত্রীর
হক্ব
স্বামীর
প্রতি স্ত্রীর হক্ব সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক হয়েছে,
ولهن مثل الذى عليهن بالمعروف.
অর্থ : “নারীদের
তেমনি ন্যায় সঙ্গত অধিকার আছে, যেমনি আছে তাদের উপর পুরুষদের।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২২৮)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
والرجل راع على اهل بيته وهو مسئول عن رعيته.
অর্থ : “প্রত্যেক
পুরুষ তার আহলে বাইত (স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি) বা পরিবারের রক্ষক
এবং তিনি তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞসিত হবেন।” (বুখারী
শরীফ)
অনুরূপ
স্ত্রী প্রতিও স্বামীর হক্ব রয়েছে যে প্রসঙ্গে মহান
আল্লাহ পাক বলেন,
الرجال قوامون على النساء.
অর্থ : “পুরুষেরা নারীদের উপর কতৃত্বকারী।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে,
لوكنت
امر احدا ان يسجد لا حد لا مرت المرأة ان تسجد لزوجها.
অর্থ : “আমি যদি
কোন মানুষ কোন মানুষকে সেজদা করার নির্দেশ দিতাম, তবে
স্ত্রীদেরকে নির্দেশ দিতাম তাদের স্বামীদের সেজদা করার মূলত স্বামীর সন্তুষ্টির
উপরই স্ত্রীর জান্নাত।”
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, স্বামী-স্ত্রীর হক্ব সম্পর্কিত ফরয পরিমাণ ইলম বা শিক্ষা
লাভ করাও অবশ্য কর্তব্য।
প্রতিবেশীর
হক্ব
প্রতিবেশীর
হক্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ
পাক কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক করেন,
واعبد
والله ولا تشر كوابه شيئا وبالوالذين احسانا ويذى القربى واليتمى والمسا كين
والحاوذى القربى والجاوالجنب.
অর্থ : “ইবদত কর মহান আল্লাহ উনার; উনাকে অপর কাউকে শরীক করো না। পিতা-মাতা এবং
নিকট আত্মীয়,
ইয়াতীম, মিসকীন ও প্রতিবেশীর সাথে সৎ
ব্যবহার কর বা তাদের হক্ব আদায় কর।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
احسن مجاورة من جاورك تكن مسلما.
অর্থ : “তুমি
প্রতিবেশীর সহিত সৎ ব্যবহার কর, তবেই তুমি মুসলমান হতে পারবে।” (ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لايؤمن عبد حتى يؤمن جاره برائقه.
অর্থ : “যে
ব্যক্তির উৎপীড়ন হতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়, সে মু’মিন নয়।”
(ইহইউ উলুমিদ্দীন)
অতএব, প্রতিবেশীর হক্ব সম্পর্কিয় ইলম অর্জন করাও ফরয।
আদব ও
সম্মান
আদব বা
সম্মান প্রদর্শন সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
من
لم ير حم صغيرنا ولم يو قر كبيرنا ولم يجبل عالمنا فليس منا.
অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে
ব্যক্তি আমার ছোটদেরকে দয়া করে না, বড়দেরকে সম্মান করে না এবং আমার
আলেদেরকে তা’যীম করে না,
সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।”
মূলকথা
হলো- “মুয়াশেরাত”
সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় শিক্ষাগ্রহণ করাও সকলের জন্য অবশ্য
কর্তব্য বা ফরয। কিন্তু প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে মুয়াশেরাতের একটি অংশ ইকরামুল
মুসলিমীন সম্পর্কে যৎসামান্য কিছু শিক্ষা দেয়া হয়, তাছাড়া
বাকী সবই তাদের শিক্ষার মধ্যে অনুপস্থিত।
উপরোক্ত
বিস্তারিত ও দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত
তাবলীগ জামায়াত ইসলামী পূর্ণ শিক্ষার দু’ভাগের একভাগ বা ইলমে ফিক্বাহর
যৎসামান্যই শিক্ষা দিয়ে থাকে। যা দিয়ে ইলমে শরীয়তের তেমন কিছুই জানা যায় না বা আমল
করা যায় না।
ইলমে
তাছাউফ
ইসলামী
পূর্ণ শিক্ষার অর্ধেক হচ্ছে- ইলমে তাছাউফ। আর এটাই মূলত মূল শিক্ষা। কারণ ইলমে
তাছাউফ ব্যতীত অন্তর পরিশুদ্ধ করা বা ইখলাছ হাছিল করা সম্ভব নয়। অথচ ইখলাছ ব্যতীত
কোন আমলই মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে কবুল হবে না।
তাই মহান
আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইখলাছের সহিত আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
وما امروا الا يعبدوا الله مخلصين ان الدين.
অর্থ : “তোমাদেরকে
ইখলাছের সহিত মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করার নির্দেশ দেয়া
হয়েছে।”
আর মহান
আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম,
হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে
ইয়েমেনের গভর্ণর করে পাঠানোর প্রক্কালে বলেছেন,
يا معاذ اخلص دينك يكفيك العمل القليل.
অর্থ : “হে
মুয়াজ! তুমি আমলের মধ্যে ইখলাছ পয়দা কর, অর্থাৎ ইখলাছের সহিত আমল কর, অল্প আমলই তোমার জন্য যথেষ্ট।”
আর
শুধুমাত্র ইলমে তাছাউফ হাছিল করার মাধ্যমে ইলেম হাছিল করা সম্ভব। তাই সকলেই ইলমে
তাছাউফ অর্জন করা ফরয বলেছেন।
ইলাম-মুজতাহিদ
ও আওলিয়ায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা ইলমে তাছাউফকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন- (১) মুহলিকাত মুনজিয়াত।
মুহলিকাতের
বর্ণনা
মুহলিকাত
ঐ সকল বদ খাছলত বা কুস্বভাবকে বলে, যে সকল বদ খাছলতসমূহ মানুষকে
ধ্বংস বা হালাক করে দেয়। ঐ সকল বদ খাছলতসমূহ হলো- (১) কিবর (অহংকার) (২) হাসাদ
(হিংসা) (৩) বোগয (শত্রুতা), (৪) গযব (রাগ), (৫) গীবত (পরনিন্দা), (৬) হেরছ লোভ), (৭) কিযব (মিথ্যা) (৮) বোখল
(কৃপনতা),
(৯) রিয়া লোক
দেখানো) (১০) গুরুর (ধোকাবাজী)।
মুনজিয়াতের
বর্ণনা
মুনজিয়াত
হলো ঐ সকল নেক খাছলত বা সৎ স্বভাবসমূহ, যে সকল নেক খাছলত বা সৎ
স্বভাবসমূহ মানুষকে নাযাত বা মুক্তি দেয়। অর্থাৎ ‘তায়াল্লুক
মায়াল্লাহ”
মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে দেয়। ঐ সকল
নেক খাছলত বা সৎ স্বভাবসমূহ নিম্নরূপ-
(১) তওবা (গুণাহ থেকে প্রত্যাবর্তন), (২) ছবর (ধৈর্য্য), (৩) শোরক (কৃতজ্ঞতা), (৪) তায়াক্কুল (ভরসা), (৫) ইখলাছ (একনিষ্ঠতা), (৬) খওফ (ভয়), (৭) রেজা (সন্তুষ্টি), (৮) মুহব্বত (ভালবাসা) (৯)
মুরাক্বাবা (ধ্যান) ও (১০) মুহাসাবা (আমলের হিসাব)
সুতরাং
অন্তর থেকে বদ খাছলতসমূহ দূর করে নেক খাছলতসমূহ পয়দা করতে হলে অবশ্যই ফরয পরিমাণ
ইলমে তাছাউফ বা তাছাউফের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আর ইলমে তাছাউফ শিক্ষা দিয়ে থাকেন
পীরানে তরীক্বত,
আউলিয়ায়ে কিরাম বা কামিল মুর্শিদগণ। প্রচলিত তাবলীগ
জামায়াতে ইলমে তাছাউফের শিক্ষা সম্পূর্ণই অনুপস্থিত।
এতে
প্রমাণিত হলো যে, এ ক্ষেত্রে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে ইসলামী পূর্ণ শিক্ষার
অর্ধেকই অনুপস্থিত। বাকী অর্ধেকেরও যৎসামান্য মাত্র শিক্ষা দেয়া হয়।
এখন যদি
আমরা ইসলামী পূর্ণ শ্ক্ষিাকে মান হিসেবে হিসাব করি, তবে আরো
সুস্পষ্টভাবেই বুঝতে পারবো যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের শিক্ষা
পূর্ণ ইসলামী শিক্ষার তুলনায় একেবারেই নগণ্য বা যৎসামান্য।
প্রথমে
আমরা পূর্ণ ইসলামী শিক্ষাকে ১০০ মান হিসাবে ধরি। আর এই পূর্ণ ইসলামী শিক্ষাকে
ইমাম-মুজতাহিদ,
আউলিয়ায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ প্রথমত: দু’ভাগে ভাগ করেছেন- ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ। তবে মানহিসেবে ইলমে ফিক্বাহের
ক্ষেত্রে ৫০,
আর ইলমে তাছাউফের ক্ষেত্রে হবে ৫০। অত:পর ইলমে ফিক্বাহ, যা মান হিসেবে ৫০, তাকেও আবার চার ভাগ করা হয়েছে- আক্বাইদ, ইবাদত,
মুয়ামেলাত ও মুয়াশেরাত।
সুতরাং
ইলমে ফিক্বাহের মান ৫০ হিসেবে উপরোক্ত প্রত্যেক ভাগেই পড়ে সাড়ে বার (১২.৫০) করে।
ইমাম-মুজতাহিদ
ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উপরোক্ত চার ভাগের দ্বিতীয় ভাগ ইবাদতকে
আবার চার ভাগে ভাগ করেছেন- কলেমা, নামায, রোযা, হজ্জ,
যাকাত। তবে ইবাদতের
মান সাড়ে বার হিসেবে উপরোক্ত প্রত্যেক ভাগেই আড়াই (২.৫০) করে পড়ে।
আর
পূর্বেই প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে ইবাদতের
ক্ষেত্রে কলেমা ও নামায সম্পর্কে যৎসামান্য শিক্ষা দিয়ে থাকে রোযা, হজ্জ,
যাকাত-এর শিখ্ষা সম্পূর্ণই অনুপস্থিত। যা মান হিসাবে ইসলামী
শিক্ষার তুলনায় ২%-এর বেশি হবে না। আর মুয়াশেরাতের ক্ষেত্রে ইকরামুল মুসলিমীন
সম্পর্কে যে শিক্ষা দেয়া হয়, তাও মান হিসেবে ১%-এর বেশি নয়।
অতএব, স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ইসলামী
পূর্ণ শিক্ষার তুলনায় ৫% শিক্ষাও দেয় না। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে কি করে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ হতে পারে?
তাবলীগ
জামায়াতের শিক্ষা
মূলত
বর্তমানে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে যা শিক্ষা দেয়া হয় তার মূল হচ্ছে- ছয়টি বিষয়।
যেমন- (১) কলেমা, (২) নামায, (৩) ইলম ও যিকির, (৪) ইকরামুল মুসলিমীন, (৫) তাছহীতে নিয়ত, (৬) তাবলীগ বা নফরুন ফী সাবীলিল্লাহ। কলেমা শরীফ বলতে- শুধু মৌখিকভাবে শুদ্ধ
করে কলেমা শরীফ শিক্ষা দেয়া হয়।
নামায
বলতে- নামাযের নিয়ম-কানুন ও তার আনুসাঙ্গিক নেহায়েত জরুরী সূরা-ক্বিরাত এবং
মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দেয়া হয়।
ইলম
বলতে- শুধু তাবলীগে নেসাবের কিতাব পড়ে শুনা ও শুনানো, যার
মধ্যে রয়েছে কিছু ফযীলত সম্পর্কীয় বর্ণনা। আর যিকির বলতে বুঝায়-সকাল সন্ধায় তিন
তাছবীহ পাঠ করা। তিনি তাছবীহ হচ্ছে- একশতবার ইস্তেগফার, একশতবার
দরূদ শরীফ ও একশতবার সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু
ওয়াল্লাহু আকবার পাঠ করা।
ইকরামুল
মুসলিমীন বলতে- মুসলমানদেরকে ইকরাম (সম্মান) করা সম্পর্কে জরুরী কিছু নিয়ম শিক্ষা
দেয়া হয়।
তাছহীহে
নিয়ত বলতে- মৌখিকভাবে নিয়ত শুদ্ধ করার জন্য তাকীদ দেয়া হয়।
তাবলীগ
বলতে- যে যা জানে, তা অপরের নিকট প্রচার করার জন্য বলা হয়।
অথচ
উপরোক্ত বিষয়সমুহের শিক্ষা আরো অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত, যা
ইতিপূর্বের সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
মূতল
উপরোক্ত শিক্ষাসমূহ অর্থাৎ মক্তবের ওস্তাদ বা শিক্ষকগণই তাদের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে
মক্তবে বিশুদ্ধ নিয়তে কলেমা, নামায, সূরা-ক্বিরাত
ও তার আনুসাঙ্গিক মাসয়ালা-মাসায়েল, আদব-কায়দা, দোয়া-দরূদ,
তাছবীহ-তাহলীল ইত্যাদি শিক্ষা দিয়ে থাকে।
প্রচলিত
তাবলীগ জামায়াত যে শিক্ষা দিচ্ছে, তা হচ্ছে- মক্তবী বা প্রাথমিক
শিক্ষা। মূলত: প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে ইসলামের যে পাঁচটি বুনিয়াদ (ভিত্তি) রয়েছে, তার সব কয়টাও শিক্ষা দেয়া হয় না। শুধু মৌখিকভাবে কলেমা শরীফ শিক্ষা দেয়া হয়।
আর নামায সম্পর্কে তার জরুরী কিছু নিয়ম-কানুন, সূরা-ক্বিরাত
ও মাসয়ালা-মাসয়েল শিক্ষা দেয়া হয়।
আর নামায
সম্পর্কে তার জরুরী কিছু নিয়ম-কানুন, সূরা-ক্বিরাত ও মাসয়ালা-মাসায়েল
শিক্ষা দেয়া হয়্। রোযা, হজ্জ ও যাকাত সম্পর্কে কিছুই
শিক্ষা দেয়া হয় না। অথচ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
بنى
الاسلام على خمس شهادة ان لا اله الا الله وان محمدا عبده ورسوله اقام الصلاة
ايتاء الزكوة والحج والصوم رمضان.
অর্থ : “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি- (১) এ
সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ বা মা’বুদ নেই
এবং নিশ্চয়ই হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বান্দা ও রসূল, (২) নামায ক্বায়িম করা, (৩) যাকাত দেয়া, (৪) হজ্জ পালন করা, (৫) রমাদ্বান শরীফের রোযা রাখা।” (বুখারী, মুসলিম,
মেশকাত, ওমদাতুল ক্বারী, ফতহুল বারী,
ইরশাদুস সারী, শরহে নববী, মেরকাত,
আশয়াতুল লুময়াত, লুমযাত, শরহুত
ত্বীবী,
মোযাহেরে হক্ব, তা’লীকুছ
ছবীহ)
যেখানে
ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে তিনটি (রোযা, হজ্জ ও
যাকাত) সম্পর্কে কিছুই শিক্ষা দেয়া হয় না, আর বাকী
দু’টি সম্পর্কেও নেহায়েত মক্তবী বা প্রাথমিক শিক্ষা ব্যতীত কিছুই শিক্ষা দেয়া হয়
না, আর বাকী দু’টি সম্পর্কেও নেহায়েত মক্তবী বা প্রাথমিক শিক্ষা ব্যতীত কিছুই শিক্ষা দেয়া হয়
না, সেখানে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত কিভাবে (হক্ব) আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ হতে
পারে?
এখন ইসলামী শিক্ষা ও
প্রচলিত তাবলীগ জামাতের শিক্ষার পরিমাণ অপর পৃষ্ঠায় পেশকৃত একটি ছকের মাধ্যমে তুলে
ধরা হলো-
ইসলামী শিক্ষার মান-১০০
ইলমে ফিক্বাহ = মান ৫০
ইলমে তাছাউফ = মান ৫০
যা প্রচলিত তাবলীগ
জামায়াতে অনুপস্থিত
আক্বাইদ = মান ১২.৫০
যার, প্রায় সম্পূর্ণটাই তাদের মধ্যে অনুপস্থিত।
ইবাদত = মান ১২.৫০
মুয়ামেলাত = মান ১২.৫০
এ সম্পর্কিত কোন শিক্ষাই
দেয়া হয় না।
মুয়াশেরাত = মান ১২.৫০
কালেমা = মান ২.৫০
নামায = মান ২.৫০
রোযা = মান ২.৫০
রোযা সম্পর্কিত শিক্ষা
সম্পূর্ণই অনুপস্থিত।
হজ্জ = মান ২.৫০
হজ্জ সম্পর্কিত শিক্ষা
সম্পূর্ণই অনুপস্থিত।
যাকাত = মান ২.৫০
যাকাত সম্পর্কিত শিক্ষা
সম্পূর্ণই অনুপস্থিত।
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের
শিক্ষার মান
কালেমা = মান ২.৫০
কলেমা সম্পর্কে তেমন কিছুই
শিক্ষা দেয়া হয় না। শুধুমাত্র শুদ্ধ করে মৌখিকভাবে শিক্ষা দেয়া হয়। আক্বীদা
সম্পর্কে কিছুই শিক্ষা দেয়া হয় না। যা মান হিসাবে ১% ও নয়।
নামায = মান ২.৫০
নামায সম্পর্কে বলতে গেলে
তেমন কিছুই শিক্ষা দেয়া হয় না। শুধুমাত্র জরুরী কয়েকটি সূরা-ক্বিরাআত মুখস্ত করানো
ও কিছু মাসায়েল শিক্ষা দেয়া হয়। এও মান হিসাবে ১% থেকে বেশি হবে না।
ইকরামুল
মুসলিমীন
মুয়াশেরাত হিসাবে ইকরামুল
মুসলিমীন,
এরও তেমন কিছু শিক্ষা দেয়া হয় না। শুধুমাত্র মক্তবী
আদব-কায়দা মৌখিকভাবে শিক্ষা দেয়া হয়।
যা মান হিসাবে ১%ও নয়।
তাছহীহে
নিয়ত
শুধু মৌখিকভাবে নিয়ত শুদ্ধ
করার কথা বলা হয়, যা ইলমে তাছাউফ ব্যতীত সম্পূর্ণই অসম্ভব। আর ইলমে তাছাউফের
কোন অস্তিত্বই তাবলীগ জামায়াতে নেই।
ইলম ও
যিকির
শুধু ৬ উছূল সম্পর্কিত
যৎসামান্য ইলম শিক্ষা দেয়া হয়। আর যিকির বলতে- লেসানী কিছু যিকির বা তাছবীহ-তাহলীল
শিক্ষা দেয়া হয়। যা মূল বা আসল যিকির নয়। আসল যিকির হলো- ক্বালবী যিকির, যা তাদের উছূলের অন্তর্ভুক্ত নয়। কাজেই এ ক্ষেত্রে মান সম্পূর্ণ শুণ্য।
তাবলীগ
আর তাবলীগ হচ্ছে- ৬ উছূল
সম্পর্কিত যে যৎসামান্য ইলম শিক্ষা দেয়া হয়েছে, তা
মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়া। এ ক্ষেত্রেও কোন মান গ্রহণযোগ্য নয়।
উপরোক্ত
আলোচনা ছকের মাধ্যমে এ কথাই স্পষ্ট হয়ে উঠলো যে, সম্পূর্ণ
ইসলামী শিক্ষাকে ১০০% মান হিসেবে ধরে নিলে তার মধ্যে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত মোট
৫% মানের ইসলামী শিক্ষাও দেয়না।
অতএব, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে যেখানে ইসলামী শিক্ষার একশত ভাগের পাঁচ ভাগও শিক্ষা
দেয়া হয়না,
সেখানে তাতে কি করে হক্ব, আসল ও
একমাত্র নাযাতের পথ বলা যেতে পারে? মূলত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত
সর্ম্পকিত উপরোক্ত বক্তব্যসমূহ সম্পুর্ণই জেহালতপুর্ণ বিভ্রান্তিমূলক।
মূলত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত একটি মক্তবের
ন্যায় এবং সেখানে যা শিক্ষা দেয়া হয় তা মক্তবী শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত (যদি আকীদা
পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ হয়)। আর শুধুমাত্র মক্তবে পড়ে বা মক্তবী শিক্ষার মাধ্যমে পূর্ণতা
হাছিল করা যে সম্ভব নয়, তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
তাই
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উচিৎ যে, প্রচলিত
তাবলীগ জামায়াতই একমাত্র আসল ও নাযাতের পথ, এটি হযরত
নূহ আলাইহিস সালাম উনার
কিশ্তীর ন্যায়,
৭৩টি দলের মধ্যে এটিই নাযাত প্রাপ্ত দল, এসব ধারণা রাখা বা আক্বীদা পোষন থেকে তওবা করা।
তাদের
উচিৎ ইল্মে ফিক্বাহ্র মাত্র ৫% শিক্ষা অর্জনেই এবং তা তাদের উচিৎ আক্বাইদ, ইবাদত,
মুয়ামেলাত, মুয়াশেরাত সংশ্লিষ্ট ইলম জরুরত
আন্দাজ পরিপূর্ণ শিক্ষা লাভ করা এবং সেজন্য উপযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা
ওস্তাদের সাহচর্য লাভ করা।
অপরদিকে
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের শিক্ষা যেহেতু সম্পূর্ণরূপেই ইল্মে তাসাউফ শূন্য, আর ইল্মে তাসাউফ এমন এক ইলম, যার অভাবে ইল্মে ফিক্বাহ্
পরিপূর্ণ শিক্ষা করলেও কোন ফায়দা হাছিল করা যায়না তাই তাদের উচিৎ, জরুরত আন্দাজ ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষার পর ইল্মে তাসাউফও শিক্ষা লাভ করা। মূলতঃ
ইসলাম পরিপূর্ণ ধর্ম। ইসলামের অংশবিশেষ পালনের মাঝেই মুসলমানের কর্তব্য শেষ হয়না।
পরিপূর্ণ ইসলাম পালন করতে হলে দরকার পরিপূর্ণ ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাসাউফ
শিক্ষা করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। তা পালন থেকে গাফেল ব্যক্তি নিজেরাও যেমন দায়ী
হবে, তেমনি তাদের এ অপূর্ণ শিক্ষায় যারা কায়েম থাকবে, তারাও
দায়ী হবে।
কাজেই
নাযাত পেতে হলে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের শিক্ষার বাইরে পরিপূর্ণ শিক্ষা ও আমল করা
সকলের জন্য ফরয-ওয়াজিব।
৬৩নং সুওয়াল ও তার জাওয়াব
সুওয়াল : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাদের
প্রবর্তিত গাশ্তের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলে থাকে যে, “কিছু সময়
গাশ্তে বের হওয়া শবে বরাত ও শবে ক্বদরের রাত্রে হাজরে আসওয়াদকে সামনে নিয়ে দাড়িয়ে
থাকার চেয়েও বেশী ফযীলত।”
এখন আমার
সূওয়াল হলো- প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত বক্তব্য ও প্রচারণা কতটুকু
সঠিক ও পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্মত? নির্ভরযোগ্য
দলীলের ভিত্তিতে ফায়সালা দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াব : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত
বক্তব্য নেহায়েতই অজ্ঞতামূলক, বিভ্রান্তিকর ও অবান্তর। এ ধরণের
বক্তব্যের কোন অস্তিত্ব পবিত্র কুরআন শরীফ
ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের
মধ্যে নেই।
মূলত
শরীয়ত যে বিষয়ে কোন প্রকার ফযীলত বর্ণনা করেনি, সে বিষয়ে
ফযীলত বর্ণনা করা কোরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে তথা শরীয়তের মধ্যে افراط-
تفريط অর্থাৎ কমানো বাড়ানোর অন্তর্ভূক্ত, যা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী।
তাছাড়া
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য শবে বরাত, শবে
ক্বদর ও হাজরে আস্ওয়াদ-এর প্রতি এহানত বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার অন্তর্ভূক্ত। কেননা
শবে বরাত,
শবে ক্বদর ও হাজরে আস্ওয়াদের ফযীলত পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত, কিন্তু গাশ্ত তদ্রুপ নয় বরং তা মাওলানা ইলিয়াস সাহেব প্রবর্তিত একটি নতুন
পদ্ধতি।।
শবে বরাতের ফযীলত
মহান
আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে সুরা দুখানে বলেন,
حم
والقران الحكيم انا انزلناه فى ليلة مبار كة انا كنا منزلين فيها بفرق كل امر حكيم
امرا من عندنا انا كنا مر سلين.
অর্থ : “বিজ্ঞানময়
কোরআন শরীফের কসম! নিশ্চই আমি বরকতময় রজনীতে কোরআন শরীফ অবতীর্ণ করেছি, আর আমিই মূলত নাযিলকারী। এই বরকতময় রজনীতেই
আমার নিকট হতে প্রত্যেক হেকমতপূর্ণ কাজের ফায়সালা করা হয়, আর আমিই
মূলতঃ প্রেরণকারী।”
মুফাস্সিরীনয়ে কিরাম বলেন, উক্ত পবিত্র আয়াত
শরীফ উনার মধ্যে “লাইলাতুল
বরাত’’
বা শবে বরাতের কথা বলা হয়েছে। মুফাস্সিরীন-ই-কিরামগণ বলেন, মূলত লাইলাতুল বরাত হলো- লাইলাতুত্ তাজবীয (ليلةالتجويز) অর্থাৎ সব বিষয় ফয়সালা করার রাত্র।
আর লাইলাতুল
ক্বদর হচ্ছে- লাইলাতুত তান্ফীয (ليلة
التنفيذ) অর্থাৎ হুকুম জারী করার রাত্র, অর্থাৎ শবে বরাতে ফায়সালা করা হয় এবং শবে ক্বদর থেকে সেটা জারী করা হয়।
অতএব
সূরা দুখানের উক্ত পবিত্র আয়াত
শরীফ খানা শবে বরাতের জন্যই প্রযোজ্য। যেহেতু উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে যে, “এ রাত্রেই সব কিছুর ফায়সালা করা হয়।” (তাফসীরে দুররে মানছুর, মাযহারী,
কুরতুবী ইত্যাদি।)
কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, শবে বরাতের রাত্রেই বান্দার সব বিষয়ের ফায়সালা করা হয়। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قا
النبى صلى الله عليه وسلم هل تدرين مافى هذه الليلة قلت ما فيها يا رسول الله؟ قال
فيها ان يكتب كل مولود من بنى ادم فى هذه ا لسنة-
وفيها ان يكتب كل هالك من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ترفع اعمالهم وفيها
تنزل ارزاقهم.
অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে আয়শা! তুমি জান কি? এ পনের তারিখ রাত্রে অর্থাৎ
বরাতের রাত্রে কি হয়?” হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “কি হয় ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম?” নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “এ বরাতের রাত্রে এক বৎসর কতজন সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে, তা
লিপিবদ্ধ করা হয় এবং এক বৎসর কতজন লোক মৃত্যূবরণ করবে, তা
লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাত্রেই বান্দার আমলসমুহ উপরে উঠানো হয় এবং এ রাত্রেই
বান্দার রিযিকের ফায়সালা করা হয়।
লাইলাতুল
বরাত বা শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
ان
الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر
المبار كة وليلة العيدين.
অর্থ : “নিশ্চয়ই
পাঁচ রাত্রে দোয়া কবুল হয়- (১) রজব মাসের পহেলা রাত্র, (২) শবে
বরাতের রাত্র,
(৩) শবে ক্বদরের রাত্র, (৪-৫) দু’ঈদের দু’রাত্র।
অতএব
প্রমাণিত হলো যে, শবে বরাতের ফাযায়েল-ফযীলত কোরআন শরীফ হাদীছ শরীফ দ্বারা
অকাট্যভাবে প্রমাণিত।
শবে
ক্বদরের ফযীলত
মহান
আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা
ক্বদর শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক করেন,
انا
انزلناه فى ليلة القدر وما ادرك ماليلة القدر ليلة القدر خير من الف شهر.
অর্থ : “নিশ্চয়ই
আমি ক্বদরের রাত্রে পবিত্র কুরআন শরীফ
অবতীর্ণ করেছি। আপনি জানেন কি- ক্বদরের রাত্র কি? ক্বদরের
রাত্র হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।”
লাইলাতুল
ক্বদরের ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن
ابى هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صام رمضان ايمانا واحتسابا
غفرله ما تقدم من ومن قام رمضان ايمانا واحتسابا غفرله ما تقدم من ذئبه ومن قام
ليلة القدر ايمانا احتسابا غفرله ما تقدم من ذنبه.
অর্থ : হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন,
“যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে রমজানের রোযা রাখবে
এবং রমজান মাসে তারাবীহর নামায আদায় করবে এবং লাইলাতুল ক্বদরে দাঁড়িয়ে ইবাদত
করবে,
মহান আল্লাহ পাক তার পূর্ববর্তী সকল গুণাহ ক্ষমা করে দিবেন।
(বোখারী,
মুসলিম, মিশকাত,
ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী, মেরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত,
শরহুত ত্বীবী, তা’লীকছু
ছবীহ,
মোযাহেরে হক্ব)
আর
পূর্বে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, ‘শবে বরাতের ন্যায় শবে ক্বদরে দোয়া কবুল হয়।’
হাজরে আসওয়াদ”
মূলত
হাজরে আসওয়াদ হলো- একজন হযরত ফেরেস্তা আলাইহিস সালাম, হযরত আদম আলাইহিস সালাম যখন বেহেশতে ছিলেন, তখন উনাকে বেহেশতের পাহারাদার হিসেবে নিযুক্ত করা
হয়েছিল। হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার গন্দম খাওয়ার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর মহান আল্লাহ পাক উনাকে কা’বা শরীফে পাথররূপে স্থাপন করে দেন।
স্মরণযোগ্য
যে, পাথরটি প্রথমে সাদা ছিল। মানুষ যখন উক্ত পাথরকে চুম্বন দেয়, তখন পাথর তার গুণাহলো চুষে নেয়। বান্দার গুণাহ্ চুস্তে
চুস্তে সাদা পাথরটি কালো রঙে পরিণত হয়ে যায়। যার কারণে তাকে হাজরে আস্ওয়াদ বলা হয়।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
عن
ابن عباس رضى الله تعالى قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم نزل الحجر الاسود
من الجنة وهو اشد بياضا من الين فسودته خطايا بنى ادم.
অর্থ : হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
“হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে নাযিল হয়েছে। তা (সর্ব প্রথম)
দুধের চেয়েও অধিক সাদা ছিল। আদম সন্তানের গুণাহ্সমুহ তাকে কালো করে দিয়েছে।” (আহমদ,
তিরমিযী, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মোযাহেরে হক্ব)
হাজ্রে
আসওয়াদের ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে আরো উল্লেখ আছে,
عن
ابن عباس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الحجر والله يبعشنه الله يوم
القيامة له عينان يبصربهما ولسان ينطق به يشهدعلى من استلمه بحق.
অর্থ : হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম হাজ্রে আসওয়াদ সম্পর্কে বলেন, “মহান আল্লাহ
পাক উনার কছম! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক ক্বিয়ামতের দিন হাজ্রে
আস্ওয়াদকে এমতাবস্থায় উঠাবেন যে, তার দু’টো চক্ষু
থাকবে,
যদ্বারা সে দেখতে পাবে এবং যবান থাকবে, যদ্বারা সে কথা বলবে। যে ব্যক্তি খালেছ নিয়তে তাকে চুম্বন করবে, তার জন্য সে সাক্ষী হবে।” (তিরমিযী, ইবনে
মাযাহ্,
দারেমী, মেশকাত, মেরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ
ছবীহ,
মোযাহেরে হক।)
উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, শবে বরাত, শবে ক্বদর ও হাজরে আস্ওয়াদের ফাযায়েল-ফযীলত কোরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ,
ইজ্মা ও ক্বিয়াস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
এ
প্রেক্ষিতে তাই প্রশ্ন উঠে যে, হাজ্রে আসওয়াদের এত ফযীলতের পর, মাওলানা ইলিয়াস সাহেব প্রবর্তিত তাবলীগ জামায়াতের গাশ্তকে কিরূপে তার চেয়েও
বেশী ফযীলত পূর্ণ বলা যেতে পারে? এরূপ বক্তব্য বা মন্তব্য পেশ করা
শবে বরাত,
শবে ক্বদর ও হাজরে আসওয়াদের প্রতি এহানত বা অবমাননা নয় কি?
উল্লেখ্য, আক্বাইদের কিতাবে লেখা হয়েছে- “শরীয়তের কোন বিষয়কে এহানত করা
কুফরী।”
কাজেই
কোন আমলকে বিনা দলীলে পবিত্র কুরআন শরীফ
ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত আমলের ফযীলতের চেয়ে
বেশী ফযীলতপূর্ণ বলা যাবেনা।
তবে
হ্যাঁ,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার সাথে
সম্পৃক্ত বা সম্পর্কযুক্ত কোন বিষয়কে স্থান বিশেষে অন্য আমলের উপর ফযীলত দেয়া যেতে
পারে। যেমন দিয়েছেন- হাম্বলী মাযহাবের ইমাম,
আহমদ বিন
হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি।
তিনি
বলেন- “লাইলাতুর রাগাইব” অর্থাৎ রজব মাসের পহেলা জুমুয়ার রাত্র। যে রাত্রে
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম,
তাঁর আব্বার পিঠ মোবারক থেকে আম্মার রেহেম মোবারকে তাশ্রীফ
এনেছেন। সে রাত্রের মর্যাদা ও ফযীলত শবে বরাত ও শবে ক্বদরের চেয়েও বেশী।” (সুবহানাল্লাহ্)।
কারণ
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার উছীলাতেই শবে বরাত ও শবে ক্বদরের সৃষ্টি।
মূলকথা হলো- “গাশতে বের হওয়া শবে বরাত ও শবে ক্বদরের
রাত্রে হাজরে আস্ওয়াদ সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে বেশী ফযীলত” প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের এ বক্তব্য খুবই আপত্তিকর, বিভ্রান্তি মূলক, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের সাথে সামঞ্জস্যহীন এবং শরীয়তের
বিষয়কে কমানো-বাড়ানোর শামিল হওয়ার কারণে কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। যা সুস্পষ্ট
মিথ্যাচারিতার শামিল। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ
ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মিথ্যা বলার ভয়াবহ পরিণাম বর্ণনা
করে মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকার কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে,
انما الكذب لكل الذنوب لم.
অর্থ : “নিশ্চয়ই
মিথ্যা সমস্ত গুণাহর মূল।”
মিথ্যাবাদীর
মিথ্যার কারণে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও
পর্যন্ত দূরে সরে যান। যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
اذا
كذب العبد تباعد عنه الملك مبلا من نتن ما جاء به.
অর্থ : “যখন
বান্দা মিথ্যা বলে, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উক্ত মিথ্যা কথার দুর্গন্ধের জন্য তার নিকট হতে এক মাইল দূরে সরে যান।” (তিরমিযী শরীফ, মায়ারেফুস সুনান, তোহফাতুল আহওয়াযী, উরফুশ শাজী)
মিথ্যা
বলা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ
পাক পবিত্র সূরা নহল শরীফ উনার ১০৫নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
انما يفترى الكذب الذين لا يؤمنون.
অর্থ : “নিশ্চয়ই
যাদের ঈমান নেই,
কেবল তারাই মিথ্যা কথা বলে।”
আর এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে,
قيل
لرسول الله صلى الله عليه وسلم ايكون المؤمن جبانا قال نعم- فقيل له ايكون المؤمن
بخيلا قال نعم فقيل له ايكون المؤمن كذابا قال لا.
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস
করা হয়েছিল যে,
ঈমানদার ব্যক্তি কি ভীরু হয়। তিনি বললেন, হ্যাঁ হতে পারে। অতঃপর জিজ্ঞেস করা হলো যে, ঈমানদার
ব্যক্তি কি বখীল বা কৃপণ হতে পারে? তিনি বললেন হ্যাঁ হতে পারে।
পুণরায় নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ঈমানদার ব্যক্তি কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? তিনি
বললেন,
না।” (মুওয়াত্তায়ে মালেক, বায়হাক্বী,
আওযাযুল মাসালিক)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা এ কথাই বুঝানো
হয়েছে যে,
মু’মিন ব্যক্তি কখনো মিথ্যা বলতে
পারেনা অর্থাৎ যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে, তার পক্ষে মু’মিন থাকা সম্ভব নয়।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মু’মিন ব্যক্তির মধ্যে অন্য সকল দোষই অল্প বিস্তর থাকা সম্ভবপর, কিন্তু গচ্ছিত সম্পদ আত্মসাত করা এবং মিথ্যা কথা বলার দোষ কিছুতেই থাকতে পারে
না।”
(আহমদ, বায়হাক্বী)
মিথ্যা
কথা বলা শুধু কবীরা গুণাহ্ই নয় বরং কঠিন শাস্তির কারণ। যেমন মহান আল্লাহ পাক পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ১০নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেন,
ولهم عذاب اليهم بما كانوا يكذبون.
অর্থ : “তাদের মিথ্যারোপের
কারণে তাদের জন্য কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।”
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে,
اما
الرجل الذى رايته يشق شدته فكذاب يحدث با لكلبة فتحمل عنه حتى تبلغ الا فاق فيصنع
به ما ترى الى يوم القيمة.
অর্থ : “হযরত
জীব্রাঈল আলাইহিস সালাম বলেন, আপনি যে ব্যক্তিকে দেখছেন যে, তার গাল কর্তন করা হচ্ছে সে একজন মিথ্যাবাদী। সে অমূলক ও মিথ্যা কথা প্রচার
করতো। যা প্রচারিত হয়ে (দুনিয়ার) সমস্ত প্রান্তে পৌঁছতো। আপনি যে শাস্তি দেখছেন, ক্বিয়ামত অবধি তার প্রতি তা অব্যাহত থাকবে।” (সহীহ
বোখারী,
ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস সারী, তাইসীরুল ক্বারী)
তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মিথ্যার বুরায়ী সম্পর্কে বিশেষ সতর্ক বাণী উল্লেখ করা হয়েছে,
عليكم
بالصدق يهدى الى البر وان البر يهدى الى الجنة وما يزال الرجل يصدق ويتحرى الصدق
حتى يكتب عند الله صديقا واياكم والكذب فان الكذب يهدى الى الفجور وان الفجور يهدى
الى النار وما يزال الرجل يكذب ويتحرى الكذب حتى يكتب عندا الله كذابا.
অর্থ : “তোমরা
সত্য বলাকে ওয়াজিব করে নিও। নিশ্চয়ই সত্যবাদিতা সৎকাজের পথ প্রদর্শন করে এবং
নিশ্চয়ই সৎকাজ বেহেশতের পথ প্রদর্শন
করে। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বলে এবং সত্য বলার চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত সে
ব্যক্তি মহান আল্লাহ
পাক উনার নিকট ছিদ্দীক (মহা সত্যবাদী) বলে লিখিত
হয়। তোমরা মিথ্যা থেকে সতর্ক থাক এবং মিথ্যা থেকে বাঁচ। নিশ্চয়ই মিথ্যা কথা গুণাহর দিকে ধাবিত করে। গুণাহ জাহান্নামের দিকে পথ
প্রদর্শন করে। যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যা বলার চেষ্টা করে, শেষ পর্যন্ত সে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট
কাজ্জাব বা মিথ্যাবাদী বলে লিখিত হয়।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস সারী, তাইসীরুল ক্বারী, শরহে নববী)
আর
মিথ্যাবাদীরা সর্বদাই মহান আল্লাহ
পাক উনার রহমত থেকে বঞ্চিত। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
لعنة الله على الكاذبين.
অর্থ : “মিথ্যাবাদীদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।”
সুতরাং
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকসহ সকলের জন্যই উচিত, এ ধরণের
অমূলক,
বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকা।
(অসমাপ্ত)
0 Comments:
Post a Comment