৬৩৮ নং- সুওয়াল : তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াছ ছাহেবের মালফূযাতের ৫৩নং পৃষ্ঠার ৮০নং মলফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, প্রচলিত তাবলীগের বা অতরীক্বত পন্থীদের, তাসাউফের বা সূফীদের বই পড়া উচিৎ নয়। উল্লেখিত কিতাবের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য? কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তার সমাধান কামনা করি।


সুওয়াল : তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াছ ছাহেবের মালফূযাতের ৫৩নং পৃষ্ঠার ৮০নং মলফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, প্রচলিত তাবলীগের বা অতরীক্বত পন্থীদের, তাসাউফের বা সূফীদের বই পড়া উচিৎ নয়।
উল্লেখিত কিতাবের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য? কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তার সমাধান কামনা করি।

জাওয়াব : উপরোক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, তাসাউফের বা ছুফীদের কিতাবে তাসাউফ সম্পর্কে যে সুক্ষ্ম বর্ণনা রয়েছে, তা প্রচলিত তাবলীগওয়ালা বা অতরীক্বত পন্থীদের পক্ষে বোঝা সত্যিই খুব দুরূহ ব্যাপার। সেজন্য তাদেরকে ইলমে তাসাউফ থেকে ফিরিয়ে রাখা কখনই জায়েয হবেনা। কারণ প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জরুরত আন্দাজ ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করা ফরয।
কাজেই অতরীক্বত পন্থীদের তাসাউফ বা সূফীদের বই পড়া উচিৎ নয়একথা বলার অর্থ হলো- পূর্ণ ইসলামী শিক্ষা থেকে মাহরুম করা ও অন্তর পরিশুদ্ধ করে ইখলাছ অর্জনে বাধা সৃষ্টি করা, যা সম্পূর্ণই শরীয়ত বিরোধী কাজ। কারণ কোন লোক যখন ইলমে তাসাউফ অর্জন বা ক্বালবী যিকির থেকে বিরত থাকে, তখন শয়তান তার সঙ্গী হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
ومن يعش عن ذكر الوحمن نقيض له شيطانا فهوله قرين.
অর্থ : যে ব্যক্তি আমার যিকির থেকে বিরত থাকে, তার জন্যে একটি শয়তান নির্দিষ্ট হয়ে যায়, সে তাকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে গোউনারাহ করে দেয়।” (পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ, ৩৬)
(তাফসীরে জালালাইন, আবি সউদ, মাদারেক, রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী, মাযহারী )
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,
الشيطان جائم على قلب بنى ادم فاذا ذكر الله خنش واذا غغل وسوس.
অর্থ : শয়তান মানুষের অন্তরে বসে, যখন সে যিকির করে, তখন পালিয়ে যায়। আর যখন যিকির থেকে গাফেল থাকে, তখন ওয়াসওয়াসা দেয়।” (বোখারী)
কাজেই প্রমাণিত হলো যে, ইলমে তাসউফ চর্চা থেকে বিরত রাখার অর্থ হলো- লোকদেরকে শয়তানের সঙ্গী করে দেয়া বা গুমরাহীতে নিপতিত করা।
আরো উল্লেখ্য যে, সূফীদের বই পড়া বা ইলমে তাসাউফ থেকে বিরত রাখার মানে হচ্ছে, দ্বীন ইসলামের অর্ধ শিক্ষা ও অর্ধ আমল থেকে বিরত রাখা। অথচ মহান আল্লাহ পাক পরিপূর্ণভাবে দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে দাখিল হতে বলেছেন। ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
يا ايها الذين امنوا ادخلوا فى السلم كافة.
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণরূপে দ্বীন ইসলামে দাখিল হও।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ, ২০৮)
অন্যত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন
اليوم الكملت لكم دينكم.
অর্থ : আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ, ৩)
তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য মহান আল্লাহ পাক উনার বিধানের বিপরীত, যা দ্বীনের মধ্যে তাহরীফের শামিল ও কুফুরীর অন্তর্ভূক্ত।
মূলতঃ তারা চায়, একথা বলে ইলমে তাসাউফকে নিশ্চিহ্ন করতে বা ইলমে তাসাউফের শিক্ষা থেকে সাধারণ লোকদেরকে দূরে রেখে নিজেদের দল ভারী করতে। মূলতঃ এটা কস্মিন কালেও সম্ভব নয। কারণ মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
يريدون ليطفؤا نورالله يافوائهم والله متم نووه ولو كره الكافرون.
অর্থ : তারা চায়, মহান আল্লাহ পাক উনার নূরকে ফূ দিয়ে নিভিয়ে দিতে। মহান আল্লাহ পাক উনার নূরকে পরিপূর্ণ করবেন, যদিও কাফিররা তা পছন্দ করেনা।” (পবিত্র সূরা ছফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ, ৮)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নূরের ব্যাখ্যায় মুহাক্কিক, মুদাক্কিক ও অনুসরণীয় মুফাসসিরীন-ই-কিরামগণ বলেন, “নূর হচ্ছে- দ্বীন ইসলাম। আর ইসলাম হচ্ছে- ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাসাউফের সমন্বয়। (তাফসীরে মাযহারী, ইবণে কাছীর, রুহুল মায়ানী, রুহুল বয়ান, কবীর, ফতহুল ক্বাদীর, তাবারী, আবী সউদ ইত্যাদি)
অতএব, ইলমে তাসাউফ থেকে ফিরিয়ে রাখা অর্ধ দ্বীন থেকে ফিরিয়ে রাখার নামান্তর, যা কুফরীর শামিল।
সুতরাং ইলমে তাসাউফ, যা দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করার মূল ও একমাত্র মাধ্যম, তা কারো পক্ষেই নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয় বরং তা ক্বিয়ামত পর্যন্তই বহাল থাকবে।
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই শরীয়ত বিরোধী। কাজেই একথা বলা তাদের উচিৎ হয়নি। বরং তাদের উচিৎ হবে একথা বলা যে, যারা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক বা অতরীক্বতপন্থী, তারা যেন কোন হক্কানী পীরানে তরীক্বত, আওলিয়া-ই-কিরাউেনার কাছে বাইয়াত হয়ে তাসাউফ শিক্ষা ও কিতাবাদি পাঠের মাধ্যমে ফরজ পরিমাণ ইলম অর্জন করে। (দুররুল মুখতার, শামী, তাফসীরে মাজহারী, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, মকতুবাত শরীফ, এহইয়াউলুমুদ্দীন, কিমিয়ায়ে সায়াদাত, ফতহুর রব্বানী, আল বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ ইত্যাদি) (অসমাপ্ত)
(পরবর্তী সংখ্যার জন্য অপেক্ষায় থাকুন)


আবা-৩৫

0 Comments: