কবর খনন করার মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব-১
কবর খনন করার মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব-১Published from Blogger Prime Android App

আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পদ্ধতিতে কবর খননের প্রচলন রয়েছে। কিন্তু অনেকেরই কবর খননের সঠিক ও মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব সম্পর্কে জানা নেই। কিভাবে এবং কতুটুকু কবর খনন করতে হয় তা আমরা অনেকেই জানি না। তাই নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে কবর খনন করার পদ্ধতি আলোচনা করা হলো। 

সাধারণত কবর দুই প্রকার।
 ১. ‘লাহাদ’ বা বগলী কবর।
 ২. ‘শাক্ব’ বা সিন্দুকী কবর।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানাতেও উক্ত দুই প্রকার কবরেই দাফন করা হতো। একজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন যিনি বগলী কবর খননে পারদর্শী ছিলেন। এবং অপর একজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন ; যিনি সিন্দুকী কবর খননে অভ্যস্ত ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর উনার পবিত্র রওযা শরীফ নির্মাণ কাজের জন্য উক্ত দুইজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদেরকে সংবাদ দেয়া হয়। উনাদের মধ্যে যিনি বগলী কবর খনন করতেন তিনি আগে আসেন। ফলে উনার দ্বারা বগলী কবর তথা পবিত্র রওযা শরীফ প্রস্তুত করা হয়। সুবহানাল্লাহ!

যেমন এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت ابن عباس رضي الله تعالى عنه قال لما أرادوا أن يحفروا لرسول الله صلى الله عليه وسلم  بعثوا إلى أبي عبيدة بن الجراح رضى الله تعالى عنه وكان يضرح كضريح أهل مكة وبعثوا إلى أبي طلحة رضی الله تعالى عنه وكان هو الذي يحفر لأهل  المدينة وكان يلحد فبعثوا إليهما رسولين فقالوا اللهم خر لرسولك صلى الله عليه وسلم فوجدوا أبا طاحةرضى الله تعالى عنه فجيء به ولم يوجد أبو عبيدة رضي الله تعالى عنه فلحد لرسول الله صلى الله عليه وسلم.‎
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র রওযা শরীফ প্রস্তুত করার ইচ্ছা মুবারক প্রকাশ করলেন। তখন উনারা হযরত আবূ উবাইদা ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে লোক পাঠালেন। তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসীগণের কবর খননের ন্যায় (সিন্দুকী) কবর খনন করতেন। আর উনারা হযরত আবূ ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছেও লোক পাঠালেন। তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসীগণের কবর খননের ন্যায় লাহাদ বা বগলী কবর খনন করতেন। অতঃপর উনারা উক্ত দুজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের কাছে দুজনকে পাঠিয়ে বললেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার মহাসম্মানিত হাবীব,নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য আপনি যা পছন্দ করেন, তাই করুন। উনারা হযরত আবূ ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পেয়ে নিয়ে আসলেন। কিন্তু হযরত আবূ উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পাওয়া গেল না। ফলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য লাহাদ বা বগলী তারতীবে মহাসম্মানিত রওজা শরীফ প্রস্তুত করা হয়। (ইবনে মাজাহ শরীফ) 
উল্লেখ্য, যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য লাহাদ বা বগলী তারতীবে মহাসম্মানিত রওজা শরীফ প্রস্তুত করা হয়, যার কারণে বগলী কবর সিন্দুক কবর অপেক্ষা উত্তম। কিন্তু যেসব স্থানের মাটি নরম, সেখানে বগলী কবর শীঘ্রই ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা থাকে, যার কারণে সেসব স্থানে সিন্দুকী কবর করাই উচিত। (মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৬৫ তম সংখ্যা,পৃষ্ঠা নং: ৬১-৬৩, ফতওয়ায়ে শামী, বাহরুর রায়িক, দুররুল মুখতার, ইনায়া ইত্যাদি) (পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন)
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ২০ রাকাত তারাবীহর নামায প্রমাণিত


হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ২০ রাকাত

 তারাবীহর নামায প্রমাণিত


স্বয়ং আখেরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ২০ রাকাত তারাবীর নামায পড়েছেন। এ বিষয়ে সহীহ সনদে হাদীছ শরীফ আছে। ইতিপূর্বে আপনারা দেখেছেন মুছান্নাফে আবী শায়বা কিতাবে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদীছ শরীফে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ২০ রাকাত তারাবীর নামাযের বর্ণনা রয়েছে। বাতিল ফির্কা লা’মাযহাবীরা সে হাদীছকে জাল বলে। যদিও পৃথিবীর কোন মুহাদ্দিছ তা জাল বলেননি। 
আজকে আরেকটি হাদীছ শরীফ পেশ করাবো যার মাধ্যমে দেখতে পারবেন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ২০ রাকাত তারাবী পড়েছেন। সনদ সহকারে হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করা হলো,



ثنا أبو الحسن علي بن محمد بن أحمد القصري الشيخ الصالح حدثنا عبد الرحمن بن عبد المؤمن العبد الصالح ني محمد بن حميد الرازي حدثنا عمر بن هارون حدثنا إبراهيم بن الحناز عن عبد الرحمن عن عبد الملك بن عتيك عن جابر بن عبد الله قال: خرج النبي صلى الله عليه وسلم ذات ليلة في رمضان فصلى بالناس أربعة وعشرين ركعة وأوتر بثلاثة

অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতহুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে এক রাতে বের হলেন এবং সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাদের নিয়ে ২৪ রাকাত নামায ও ৩ রাকাত বিতির নামায পড়লেন। (তারীখে জুরজান ৩১৭ পৃষ্ঠা: হাদীছ নম্বর ৫৫৬)
এ হাদীছ থেকে যা বোঝা গেলোরমাদ্বান শরীফ মাসের রাতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪ রাকাত ঈশার নামায এরপর ২০ রাকাত তারাবীর নামায পড়েছেন। অর্থাৎ (+২০) = ২৪।
সূতরাং হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ২০ রাকাত তারাবীহর নামায প্রমাণিত।


উক্ত হাদীছ শরীফই ভিন্ন একটি সনদে আবার পেশ করছি। যা মাকতাবায়ে শামেলা অনলাইন ভার্সনে রয়েছে। এই হাদীছের সকল রাবী নির্ভরযোগ্য। 

حدثنا أبو الفضل عبيد الله بن عبد الرحمن الزهري , نا محمد بن هارون بن حميد الرازي , نا إبراهيم بن المختار , عن عبد الرحمن بن عطاء , عن ابن عتيك , عن جابر , أن النبي صلى الله عليه وسلم «خرج ليلة في رمضان فصلى بالناس أربعة وعشرين ركعة» .
وحدثنا ابن حيويه , عن ابن المجلد , وزاد: وأوتر بثلاث
অর্থ: হযরত আবুল ফদ্বল আবদিল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান যুহরীমুহম্মদ ইবনে হারুন ইবনে হুমাইদ রাজীইবরাহীম ইবনে মুখতারআব্দুর রহমান ইননে আতাইবনে আতিক রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেনহুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে এক রাতে বের হলেন এবং সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাদের নিয়ে ২৪ রাকাত নামায ও ৩ রাকাত বিতির নামায পড়লেন।”
(দলীল: তাসি মিনাল মিসিখাতুল বাগদাদীয়া ১/২২৯ : হাদীছ নং ২২৩
লেখক: হযরত ইবনে তহির সালফী রহমতুল্লাহি আলাইহি
শামেলা অনলাইন ভার্সন লিংক
 http://shamela.ws/browse.php/book-30082/page-29)


এই কিতাবের পান্ডুলিপীটাও হাতে এসে পৌঁছেছে। সেখান থেকেও রেফারেন্স দিবো ইনশা আল্লাহ।
মহিলাদের চুল রাখার সুন্নতী তরতীব
মহিলাদের চুল রাখার সুন্নতী পদ্ধতি-

Published from Blogger Prime Android App
 ৭ মাহে শাবান শরীফ, ১৪৪৩

মেয়েদের চুল মুন্ডন করা বা কেটে ছেলেদের মতো করে ফেলা নিষেধ। আবার এতো বড় রাখা উচিত নয় যে, গোছলের সময় পানি পৌঁছানো কষ্টকর হয়। বরং পিঠ বা কোমর পর্যন্ত রাখা ভালো। সেমতে কোমরের নিচের অংশ কেটে ফেলা জায়েয হবে। অবশ্য না কাটলেও কোনো সমস্যা নেই। (তিরমিজি শরিফ ১/১৮২, মুসলিম শরিফ ১/১৪৮) 

নারীর মাথার চুল কাটার বিধান-

যদি এমন স্টাইলে চুল কাটা হয় যা অবিকল পুরুষদের মত বুঝা যায়। যদি কাফির-ফাসিক নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা উদ্দেশ্য হয়। যদি পর পুরুষের মাধ্যমে চুল কাটা হয় (যেমনটি বর্তমান যুগে কিছু কিছু সেলুনে ঘটে থাকে।) যদি স্বামীর অনুমতি ছাড়া তাহলে তা হারাম। হারাম হওয়ার কারণও স্পষ্ট।
কিন্তু যদি কোন স্ত্রী তার স্বামীকে খুশি করার জন্য তার চুল কাটে এবং এতে তার স্বামী তাকে আরও বেশি ভালবাসে তাহলে তার জন্য চুল কাটা জায়েয হবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা এমনভাবে উনাদের মাথার চুল কাটতেন যে, তা কাঁধ থেকে একটু নিচে যেত বা কান বরাবর হত।” (মুসলিম শরীফ)
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়- “এতে প্রমাণিত হয় যে, নারীদের চুল কেটে হালকা করা জায়েয।” (শরহে মুসলিম)

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা একথা সুস্পষ্ট যে, চুল রাখার মধ্যেও সম্মানিত সুন্নতী তর্জ তরীক্বা রয়েছে। আর এজন্য সকলেই যেন সম্মানিত সুন্নত মুবারক অনুযায়ী চুল রাখতে পারেন এবং কাটতে পারেন সেই লক্ষেই এই রেছালা পাঠ করে সেই মুতাবিক আমল করে হাক্বীক্বী আল্লাহওয়ালা হওয়ার জন্য কোশেষ করতে হবে।

খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আহলে বাইতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার সাথে সাথে সমস্ত মহিলাকূলকে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত যাওজাতুল মুকাররমাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার থেকে তা’লীম নিয়ে ও মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করে সমস্ত পুরুষ মহিলা জিন ইনসানকে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে যিকির ফিকির করে অন্তর ইছলাহ করে ফায়িজ তাওয়াজ্জুহ হাছিল করে হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করার খাছ তাওয়ীক্ব নছীব করুন। আমীন!