মহামারি ও আযাব-গযব বলতে কি বুঝায়? এদের মধ্যে পার্থক্য কী?

* মহামারি ও আযাব-গযব বলতে কি বুঝায়? এদের মধ্যে পার্থক্য কী?
জাওয়াব: আযাব-গযব একটা আলাদা বিষয় আর মহামারি একটা আলাদা বিষয়। আযাব-গযব শুধু কাফির-মুশরিক ও মুনাফিকদের প্রতি নাযিল। যেমন- হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার ক্বওমের ৭২-৮২জন ঈমানদার ব্যতীত বাকি সবাই আযাবে-গযবে পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। অনুরূপভাবে আদ জাতি, ছামূদ জাতি, নমরূদ ও তার দলবল, শাদ্দাদ ও তার দলবল, ফেরাউন ও তার দলবল, হামান, কারূন, আবরাহা ও তার দলদল আযাব-গযবে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ!
আর মহামারি ঈমান
দেরও হতে পারে। এটা হচ্ছে আলাদা একটা বিষয়। কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি। যেটাকে তাঊন বলা হয়। কোন ঈমানদার যদি মহামারিতে ইন্তেকাল করেন, তাহলে তিনি শহীদী দরজা লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ! এ সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
وعن أنس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الطاعون شهادة لكل مسلم
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহামারী প্রত্যেক মুসলমানের জন্য শাহাদাতস্বরূপ।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
মহামারি এটা ঈমানদারদেরও হতে পারে। যেমন- আমওয়াসের মহামারী। এটা ১৮ হিজরী শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহি সালাম উনার যামানায় মিশর ইরাক্বের মাঝামাঝি স্থানে হয়েছিলো। অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা এই মহামারিতে শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেছিলেন। এটা হচ্ছে মহামারী।
অনুরূপভাবে মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যামানায় মহামারী দেখা দিয়েছিলো। অনেক লোক শহীদ হচ্ছিলেন। মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একজন আওলাদ ছিলেন। উনি বললেন- বারে এলাহী! ঠিক আছে মহামারী যখন আসছে, অনেক লোক শহীদ হচ্ছে। এতো লোক শহীদ না হয়ে, সেটা আমাকে দিয়ে দেয়া হোক। তিনি সেটা গ্রহণ করলেন। কিছু দিন পর তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। মহামারী বন্ধ হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! এটা হচ্ছে মহামারি।
কাজেই মহামারি ঈমানদেরও হতে পারে। এটা হচ্ছে আলাদা একটা বিষয়। কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি। যেটাকে তাঊন বলা হয়। কোন ঈমানদার যদি মহামারিতে ইন্তেকাল করেন, তাহলে তিনি শহীদী দরজা লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ! আর কাফেরদের জন্য এটা লানত। না‘ঊযুবিল্লাহ! আর আযাব-গযব হচ্ছে আলাদা একটা বিষয়। আযাব-গযব শুধু কাফির-মুশরিক ও মুনাফিকদের হবে। ঈমানদারদের উপর কখনও আযাব-গযব হবে না।
আর করোনা ভাইরাস হচ্ছে কাট্টা গযব। কাফেররা কুফরী করার কারণে এই গযব নাযিল হয়েছে তাদের দেশে। মুসলমানদের দেশে আসতে পারে না। যদি আসে ঐ কাফেরের গোলাম যারা আছে, এদেরকে পাকড়াও করবে। না‘ঊযুবিল্লাহ! কোনো মুসলমানকে কিন্তু পাকড়াও করবে না।
জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি এগুলো হওয়া কি সুন্নত?

* সুওয়াল: জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি এগুলো হওয়া কি সুন্নত? এগুলোকে খারাপ বলা কতটুকু শরীয়ত সম্মত?
জওয়াব: হ্যাঁ, জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি ও কাশি হওয়া খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, “একদিন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যিনি খালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে আপনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ দুইটি বিষয় দিয়ে পাঠিয়েছেন, একটি দয়া করে আপনাকে গ্রহণ করতে হবে। ১. মহামারী। যেমন- কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি। ২. সর্দি, জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি ইত্যাদি। (সর্দি, জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, হালকা মাথা ব্যাথা ইত্যাদি।) এই দুইটির মধ্যে একটি আপনি দয়া করে গ্রহণ করুন। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাহলে আমি জ্বর, সর্দি, কাশি, ঠাণ্ডাকে গ্রহণ করলাম।” সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক রয়েছে,
عن عبد الله بن مسعود قال دخلت على النبي صلى الله عليه وسلم وهو يوعك فمسسته بيدي فقلت يا رسول الله إنك لتوعك وعكا شديدا فقال النبي صلى الله عليه وسلم أجل إني أوعك كما يوعك رجلان منكم قال فقلت ذلك لأن لك أجرين فقال أجل ثم قال ما من مسلم يصيبه أذى من مرض فما سواه إلا حط الله تعالى به سيئاته كما تحط الشجرة ورقها
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গেলাম, তখন তিনি (মহাসম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক) জ্বর গ্রহণ করেছিলেন। আমি আমার হাত দ্বারা উনাকে স্পর্শ করলাম এবং বললাম- ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তো প্রবল (মহাসম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক) জ্বর মুবারক গ্রহণ করেছেন! তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হ্যাঁ, আপনাদের দুজনে যা ভোগ করেন, আমি তা গ্রহণ করেছি। হযরত ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি বললাম- এটা এই কারণে যে, আপনার জন্য দুই গুণ পুরুস্কার রয়েছে। (অর্থাৎ কোনো ব্যাক্তি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যদি খেয়াল করেন যে, এটা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক, তাহলে তিনি দুই গুণ ফযীলত লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হ্যাঁ। তারপর তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোনো মুসলমানের প্রতি যেকোনো কষ্ট পৌঁছুক না কেনো, হোক সেটা রোগ-বালা বা অন্য কোনো কিছু, মহান আল্লাহ পাক তিনি তা দ্বারা ঐ ব্যক্তি উনার গুনাহ্সমূহ এমনভাবে ঝেড়ে দেন, যেভাবে গাছ তার পাতা ঝাড়ে।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক রয়েছে,
وعن جابر قال دخل رسول الله صلى الله عليه وسلم على أم السائب فقال مالك تزفزفين قالت الحمى لا بارك الله فيها فقال لا تسبي الحمى فإنها تذهب خطايا بني آدم كما يذهب الكير خبث الحديد
অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মুস সায়িব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার নিকট সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নিয়ে ইরশাদ মুবারক করেন, আপনার কি হয়েছে? কান্না করছেন কেনো? তিনি জবাব দিলেন, জ্বর। মহান আল্লাহ পাক তিনি জ্বরের ভালো না করুন! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনি জ্বরকে গালি দিবেন না। কেননা, এটা মানুষের গুনাহ্সমূহকে এমনভাবে দূর করে, যেভাবে হাপর লোহার মরিচা দূর করে।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আরো ইরশাদ মুবারক রয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْعُطَاسَ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হাঁচি পছন্দ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আরো ইরশাদ মুবারক রয়েছে,
عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُشَمَّتُ الْعَاطِسُ ثَلَاثًا فَمَا زَادَ فَهُوَ مَزْكُومٌ
অর্থ: “হযরত সালামাহ ইবনে আকওয়া’ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হাঁচি দাতা ৩ বার হাঁচি দিবে। কেউ যদি এর বেশি হাঁচি দেয়, তাহলে সে সর্দিগ্রস্ত।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ্ শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৩৭১৪)
কাজেই জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি হওয়া এটা একটা খাছ সুন্নাত উনার অন্তর্ভূক্ত। এটাকে খারাপ বলা কাট্টা কুফরী। কেননা আকাইদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
اِهَانَةُ السُّنَّةِ كُفْرٌঅর্থ: “সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইহানত করা কুফরী।”
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি হওয়া এটা একটা খাছ সুন্নাত উনার অন্তর্ভূক্ত। এখন এর মধ্যে এরা করোনা ভাইরাসকে প্রবেশ করায়ে বলতেছে, এটা করোনা ভাইরাসের রোগীদের হয়ে থাকে। না‘ঊযুবিল্লাহ! এটাতো আলাদা একটা জিবানু। যেটা হাদীছ শরীফে রয়েছে, প্রত্যেকটা রোগের একটা আকৃতি রয়েছে। রোগগুলো তো এভাবে আসে না। আসমান থেকে নাযিল হয়। নাযিল হয়ে রোগ যখন চলাচল শুরু করে, যেই যেই এলাকা দিয়ে যায়, যাকে সে স্পর্শ করে, তারই এই রোগ হবে। আর যাকে স্পর্শ করবে না, তার মধ্যে রোগ হবে না। আর সে তো সবাইকে স্পর্শ করবে না। যিনি খালিক্ব যিনি মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যাদের জন্য পাঠিয়েছেন, তাদেরকেই স্পর্শ করবে, তাদেরই এই রোগ হবে। অন্য কারো হবে না। আর এই করোনা ভাইরাস যেটা, এটা কাট্টা একটা গযব। এটা মহামারী না। এটা কাফেরদের প্রতি কঠিন একটা গযব। আর ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশির নাম দিয়ে তারা করোনা ভাইরাসের কথা বলে থাকে। এটা আরেকটা কুফরী। এরা বাল্যবিবাহ নিয়ে যেমন কুফরী করে থাকে, ঠিক একইভাবে ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি নিয়েও কুফরী করে যাচ্ছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! আমাদের দেশে মুসলমানদের সারা বছরই ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি হয়ে থাকে। সে জন্য তার তো সেই অসুখ হয়নি। এটা আলাদা একটা জিবানু। এটা গযব। সেই গযবটা যার ভিতর প্রবেশ করবে, সে অবশ্যই মারা যাবে।” না‘ঊযুবিল্লাহ!