একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-২৪

 


আমাদের সম্মানিত দাদা হুজুর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম -উনার স্মরণে-

 খিলাফত মুবারক লাভ-

নিয়ামতের নির্যাস ধারণ ও বহণের পরিপূর্ণ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমুল্লাহি আলাইহি-উনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। মূলতঃ প্রধান খলীফা মনোনীত হবার বিষয়টি উনার অজ্ঞাত ছিল। এই পরম নিয়ামতে অভিষিক্ত হওয়া সম্পর্কে মুরীদ অনবহিত থাকারই কথা এবং এটাই নিয়ম। মুরীদের পক্ষেতো বটেই, এমনকি নিয়ামত সোপর্দকারী মুর্শিদেরও জানা থাকে না, কাকে নিয়ামত দান করতে হবে। এ নিগূঢ় বিষয়টি একান্তভাবে আল্লাহ্ পাক-উনার এখতিয়ারে। আরিফগণের পৃথক পৃথক জীবন সাধনা, কৃচ্ছতা, অনুসন্ধান, অনুভব ও  অনুশীলনের বিচিত্র প্রেক্ষিত রচিত হয় উনাদের আপন আপন অবস্থানে। অবশ্য উনাদের মহিমাময় কামালত ও পরিপূর্ণতা লাভ ঘটে মহামিলনের একই মন্জিলে, যদিও গন্তব্যস্থল এক হওয়া সত্ত্বেও সকলের মন্জিলের সোপান এক নয়। কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুসরণে আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টি অর্জনই একজন মুমীনের অভিষ্ট লক্ষ্য। এ লক্ষ্য হাছিলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পথ পরিক্রমার স্তর অতিক্রমণে ওলী আল্লাহ্গণের অনুসৃত রীতি ও নীতি ত্বরীকতঅভিধায় অভিহিত। মুহব্বত ও মারিফাত চর্চায় মানুষকে দীক্ষিত ও অভ্যস্ত করে তোলার জন্য আল্লাহ্ পাক উনার মনোনীত ওলী আল্লাহ্গণকে প্রদত্ত নিয়ামত, উনাদের মাধ্যমে অন্যজনে হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় দুনিয়ায় ত্বরীকত তথা ইসলাম ধর্মের আবাদ করেন। ওলী আল্লাহ্গণকে নিয়ামত সম্ভারে পরিপূর্ণতা দান এবং সমৃদ্ধ করে তোলা যেমন মহান আল্লাহ্ পাক-উনার সদয় মর্জি, ঠিক তেমনি প্রদত্ত নিয়ামত হস্তান্তর করণে ব্যক্তি নির্বাচন ও মনোনয়ন দানও আল্লাহ্ পাক-উনারই সদয় এখতিয়ার। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মুর্শিদের ভূমিকা এক্ষেত্রে প্রাধান্যে এলেও আল্লাহ্ পাক-উনার ইচ্ছাই চূড়ান্ত। আল্লাহ্ পাক অনুগ্রহ করে না জানালে মুর্শিদের জানাই থাকে না, নিয়ামত ধারণ ও বহণে উনার কোন মুরীদ যোগ্যতম। খিলাফত কোন পরিত্যক্ত সম্পত্তি নয়। উনার জন্য যোগ্যতা প্রয়োজন। তবে যোগ্যতা ও নিয়ামত যুগপৎ আল্লাহ্ পাক-উনারই মহান দান। মুরীদের যোগ্যতার পরিধি এবং নিয়ামতের ব্যাপ্তি ও গভীরতা সম্পর্কে মুর্শিদের অবহিতি থাকলেও উনার গূঢ় রহস্য ও পরিণত স্তর অজ্ঞাত থাকায় তিনি আল্লাহ্ পাক-উনার আদেশের অপেক্ষায় থাকেন। অবশেষে আল্লাহ্ পাক-উনার তরফ থেকে সময়োচিত আদেশ প্রাপ্তিতে তিনি উনার জীবনের সঞ্চিত মহামূল্যবান নিয়ামত দান করার লক্ষ্যে তৎপর হয়ে উঠেন। আল্লাহ্ পাক-উনার মহান ওলী হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ্ পাক-উনার এমন আদেশ পেয়ে উনার লব্ধ নিয়ামত সোপর্দ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন।

 নিয়ামত সোর্পদ করার দিন আজ সমাগত। হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি  রহমতুল্লাহি আলাইহি অনেক মুরীদ ও খলীফা পরিবেষ্টিত হয়ে খানকা শরীফে বসে আছেন। আজকের এই বরকতময় মাহ্ফিলের বিশেষ মেহমান আল্লাহ্ পাক-উনার লক্ষ্যস্থল, মাদারজাদ ওলী, কুতুবুজ্জামান, আরিফবিল্লাহ্, আওলাদে রাসূল, হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি উনার প্রাণের আঁকা মুর্শিদের দিকে মুতাওয়াজ্জেহ হয়ে আপন মনে বসে রয়েছেন। সকলেই নিশ্চুপ, নির্বাক। মুর্শিদ উনাকে কাছে ডাকলেন। মুর্শিদ ক্বিবলার মমতামাখা আহবানে তিনি সাড়া দিলেন। একান্ত নিকটবর্তী হয়ে তিনি মুর্শিদের কদম মোবারকে নিজেকে নিবেদন করলেন। এখন আর বাধা-বিপত্তির কোন পর্দা নেই। শুধুই দুজনে দুজনার। পর্দার নিরাবরণে মুর্শিদ সন্নিধানে মুরীদ আজ ধন্য। নিয়ামত ধারণ ও বহণের যোগ্য মুরীদ পেয়ে মুর্শিদও এত্মিনান। সকলের অলক্ষ্যে জীবনের অর্জিত নিয়ামতের পরম নির্যাস আল্লাহ্ পাক-উনার আদেশে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহিকে সোপর্দ করে হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি  রহমতুল্লাহি আলাইহি আজ নির্ভার হলেন এবং উনাকে প্রধান খলীফা মনোনীত করলেন।

 শায়েখ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বিছাল শরীফ লাভ -

হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমতুল্লাহি আলাইহি জীবনব্যাপী নিজেকে ইসলাম ধর্মের খিদমতে নিয়োজিত রেখেছেন। উনার প্রতিষ্ঠিত মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তবসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরাসরি উনার সক্রিয় ব্যবস্থাধীনে পরিচালিত হয়েছে। এসবের পাশাপাশি তিনি একান্ত অরাজনৈতিক জনসেবামূলক একটি সংস্থা নেদায়ে ইসলামগঠন করেন। উনার জীবাদ্দশাতেই এই সংস্থাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং জনহিতকর কাজে অত্যুজ্জ্বল ভূমিকা রাখে। মুরীদের দেখাশুনা, প্রতিষ্ঠিত সকল প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধান এবং অপরিমেয় আধ্যাত্মিক শ্রমের ফলে উনার স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতি ঘটতে থাকে। এমন অবস্থায় ১৯৬৪ সালের ৯ মে তিনি মহান আল্লাহ্ পাক-উনার দিদারে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। উনার সহধর্মিণী হযরত আহমদ জামিলা খাতুন মুদ্দাজিল্লুহাল আলিয়া ৭৭ বছর বয়স মুবারকে ৮জুন/২০০০ সালে ইন্তিকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) (অসমাপ্ত)

আবা-৮৩

 

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-২৩

 


আমাদের সম্মানিত দাদা হুজুর ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 বাইয়াত মুবারক গ্রহণ করার পর আত্মমগ্নতা-

বাইয়াতের পর হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত-মারিফাতে বিভোর। নবলব্ধ নিয়ামত সম্ভারে তিনি পরিপূর্ণ। নবযাত্রাপথের অর্জন ও বিভিন্ন মাকামের অভিজ্ঞতা উনাকে উদ্বেলিত করে। এসব নিগূঢ় নিয়ামতরাজির বিষয় তিনি প্রাণের আকাঁ মুর্শিদকে অবহিত করেন। মুর্শিদ সন্নিধানে উনার মোবারক সময় কাটে তাৎপর্যপূর্ণ ফিকিরের গভীরতায়। প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা ও নিয়ামত সম্পর্কে মুর্শিদের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় তাপিত প্রাণ শীতল হয়। আল্লাহ্ পাক-উনার অথৈ প্রেম সাগরে আরো গভীর করে ডুবে যেতে ইচ্ছে করে। মুহব্বত-মারিফাতের তুলনায় জীবনের অন্য সব অর্জন তুচ্ছ মনে হয়। মুর্শিদের সোহ্বতে উনার জীবন ধন্য। হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ্ পাক-উনার নৈকট্যপ্রাপ্ত এক মহান ওলী। তিনি মাদ্রাসা-মক্তবে লেখা পড়া করেননি। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেও যে এতোবড় বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ওলী আল্লাহ্ হওয়া যায়, তিনি তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। অনেকেই বলেন এবং বিশ্বাস করেন, মাদ্রাসা-মক্তবে অধ্যয়ন না করে ওলী আল্লাহ্ হওয়া যায়না। এ ধারণা নিতান্তই ভুল। মূলতঃ আল্লাহ্ পাক উনার দিকে যাকে আকৃষ্ট করেন, সকলের অলক্ষ্যে অপরিমেয় যোগ্যতাদানে তিনি উনাকে নৈকট্য দান করে থাকেন। বান্দার যোগ্যতা অর্জনের প্রশ্ন এখানে অবান্তর। যোগ্যতা কখনো অর্জনের বিষয় নয়, আল্লাহ্ পাক কর্তৃক আপন সন্তুষ্টিতে বান্দাকে দান করার বিষয়। আল্লাহ্ পাক কাকে মুহব্বত করলেন এবং কে উনার প্রতি আকর্ষিত হলো, তাই মূখ্য বিষয়। এ মর্মে কালামুল্লাহ্ শরীফে উনারশাদ হয়েছে,

الله يجتبى اليه من يشاء ويهدى اليه من ينيب.

অর্থঃ- আল্লাহ্ পাক যাকে ইচ্ছে মনোনীত করেন এবং যে উনার অভিমূখী হয়, তাকে হিদায়েত দান করেন। (সূরা শুরা/১৩)

        হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার বুযুর্গ পিতার নাম হযরত আলহাজ্ব মাওলানা মুহম্মদ আফাজুদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি। মাতার নাম হযরত মোসাম্মত উলফাতুন্নেসা রহমাতুল্লাহি আলাইহি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বি এ পাশ করেন। মানুষের  প্রতি ছিল উনার গভীর মমতা, অগাধ ভালবাসা ও অকৃত্রিম সহানুভূতি। এমন একজন ওলীআল্লাহ্-উনার নিবিড় সোহ্বতে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি আত্মমগ্ন। যাঁর মোবারক সংস্পর্শে হৃদয়ের লালিত স্বপ্ন গুলো অনবরত পল্লবিত হচ্ছে, যাঁর সান্নিধ্যে কাঙ্খিত দূরের মনজিল একান্ত নাগালে এসেছে, আত্মনিবেদিতভাবে সে মুর্শিদের কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া ছাড়া গত্যন্তর কোথায়? বিরহ-বিচ্ছেদে ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ের যাতনা মুর্শিদ সন্নিধানে নিবৃত্ত হয়েছে। কিন্তু নবতর তীক্ষ্ম অনুভব, উদ্বেগ ও উদ্বেলতায় হৃদয়ের সুপ্ত ব্যথাভার আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাই এখন ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনার এক নতুন ভুবনে বিচরণ। নিয়মতো এটাই যে, যেখানে প্রাপ্তি, সেখানেই বেদনা। আল্লাহ্ প্রেমের অমোঘ বিধানে প্রাপ্ত নিয়ামত ও অন্তরের দহন অনুক্ষণ সমান্তরাল থাকে। এ দহন উপশম হবার নয়। উপশম কাম্যও নয়। কারণ মন ও মননের নির্মম যাতনাভরা আগ্রহ ও আকুতিই নিরন্তর আল্লাহ্ পাক-উনার নিকটবর্তী করে দেয়। প্রাণের আঁকা মুর্শিদ নৈকট্যে আত্মনিমগ্ন হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি এখন সে নিদারুন ব্যথাভারেই আক্রান্ত।

খিলাফত লাভ-

        বাইয়াত হবার পর ইতোমধ্যে অনেকদিন অতিক্রান্ত হয়েছে। সুখে-দুঃখে জীবনের অনেক পথ পাড়ি দিয়ে প্রাণের আঁকা মুর্শিদ হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহিও এখন বয়ঃবৃদ্ধ। জীবনব্যাপী সাধনায় সকল মুরীদকে তিনি দ্বীনের পথে দায়েম ও কায়েম করেছেন। এসব দেখে ও ভেবে অন্তরে নেমে আসে এক অনাবিল প্রশান্তি। তবু প্রত্যাশিত কতো কাজ বাকী রয়ে গেল! আসলে সীমিত জীবনেতো উদ্দিষ্ট সকল কাজ শেষ করা যায়না। আল্লাহ্ পাক-উনার নির্ধারিত দায়িত্বপালন শেষে জীবনের সকল আয়োজন ও প্রয়োজনের পরিসমাপ্তি ঘটে। মুরীদগণের অনেককে তিনি খিলাফত দান করেছেন। কাঙ্খিত অনেক কাজই তিনি সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু একটি মূল বিষয় এখনো বাকি রয়ে গেছে। তাহলো সারা জীবনের আয়াসসাধ্য প্রয়াসে লব্ধ নিয়ামতের নির্যাস কারো কাছে সোপর্দ করা। আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য, অকৃত্রিম নিবেদন ও অপরিমেয় ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে তিল তিল করে অর্জিত জীবনের সঞ্চিত অমূল্য এ ধ্যন ধারণ ও বহনের জন্য একজন যোগ্য পাত্র দরকার। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কষ্টি পাথরে যাচাই-বাছাই করে এই নিয়ামতের নির্যাস অকুক্তভাবে দান করার জন্য মনে মনে তিনি একজনকে নির্ধারিত করেছেন। তিনি হলেন উনার প্রিয়তম মুরীদ হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেসুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি। আল্লাহ্ পাক-উনার সদয় ইচ্ছায় এখন শুধু আনুষ্ঠানিক খিলাফত দানের মাধ্যমে সোপর্দিত নিয়ামতের নির্যাসে উনাকে ভরপুর করে তোলার অপেক্ষা। (অসমাপ্ত)

আবা-৮২

 

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-২২

 


আমাদের সম্মানিত দাদা হুজুর ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 অবশেষে বাইয়াত মুবারক হবার শুভক্ষণ-

 হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তীক্ষ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছেন উনার সামনে বসা হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে। সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায় জীবনের অনেক পথ পাড়ি দিয়ে বার্ধক্যে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এখন জীবন সায়াহ্ন। পরপারের ডাক এলেই হাজিরা দেবার পালা। লব্ধ নিয়ামত সোপর্দ করার জন্য যোগ্য পাত্র দরকার। হৃদয়ের গভীর মমতামাখা দীর্ঘ অপেক্ষায় তিনি আবিষ্কার করেছেন একজন যোগ্যপাত্রকে। কিছুদিনের যাতায়াত এবং আন্তরিক আলাপচারিতায় আগে থেকেই চেনা মানুষ তিনি। তবু বাইয়াতের পূর্ব মূহুর্তে আবারো উনাকে নতুন করে চিনে নেয়া। সোপর্দিত নিয়ামত ধারণ ও বহন করার যোগ্যতা আছে কিনা, তাই পরখ করে দেখা। সাধারন নিয়মে বাইয়াত করে মানুষকে দ্বীনের সহীহ্ পথে পরিচালনা করাই একজন শায়খের মুল কাজ। এ ক্ষেত্রেও তাই হবার কথা। কিন্তু হলো না। তাএজন্য যে, জীবনব্যাপী তিনি এমন একজনকে খুঁজে ফিরছিলেন, যাঁকে সঞ্চিত সবটুকু নিয়ামতের নির্যাস বিনা দ্বিধায় দান করা যায়। একান্ত নাগালে পাওয়া সেই কাঙ্খিত মানুষটিকে তিনি উনার জীবনের লালিত স্বপে¦র সঙ্গে আগ্রহভরে মিলিয়ে দেখছেন। আর সে কঠিন পরীক্ষার সামনে বসে আছেন হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি। এখন উনার কোন ভাবনা নেই। কোন উদ্বেগও নেই। প্রত্যাশা পূরণের পরম ক্ষণে অবস্থা এরূপই হয়ে থাকে। কেবল অনিমেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছেন প্রাণের আঁকা মুর্শিদের চেহারা মোবারকের দিকে। মুর্শিদ ক্বিবলার মোবারক চোখের তারায় নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন তিনি। বাকরুদ্ধ অনুভবে মুর্শিদ ও মুরীদের ভাষাহীন ভাব বিনিময়ের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য দরবার শরীফে উপস্থিত কারো উপলব্ধিতে নেই। প্রত্যক মানুষই নিজ নিজ  অবস্থানে তার মন ও মননের ব্যাপ্তি ও গভীরতা দিয়ে মুহব্বত- মারিফাত বুঝে থাকে। অন্তরে লালিত বিরহ যাতনা নিবৃত্তির লক্ষ্যে মানব জীবনে অনিবার্য ভাব ও ভালবাসার সংজ্ঞা কাউকে শিখানো গেলেও তার প্রকৃতি, পরিধি ও পরিণাম শিখানো যায় না। কারণ মুহব্বত-মারিফাতের সান্ত¡না ও যাতনা সামষ্টিক নয়, একান্তই ব্যক্তিক।

        অবশেষে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি আনুষ্ঠানিক বাইয়াত হবার জন্য সবিনয় নিবেদন পেশ করা মাত্রই হযরত শেখ ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি হাত মোবারক প্রসারিত করে দিলেন। এক নিমিষেই শায়খ উনার মুরীদকে আল্লাহ্ পাক-উনার কাছে সোপর্দ করে দিলেন। উপস্থিত সবার অলক্ষ্যে তিনি আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত-মারিফাতের অথৈ সাগরে অবগাহন করে উঠলেন। এমন অব্যক্ত অনুভূতি ও অনুপম অর্জন উনার অচেনা নয়। অভ্যস্ত অনুভব ও প্রাপ্তির এরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি বিগত দিনেও অনেকবার হয়েছেন তিনি। কিন্তু আজকের অর্জন অনন্য। উনার স্বাদ অতুলনীয়।

 আল্লাহ্ পাক-উনার নিগূঢ় নৈকট্য হাছিলে মুরীদের জন্য মুর্শিদ এক অনিবার্য মাধ্যম। মুর্শিদ সন্নিধানে আত্ম-উপলব্ধির উন্মেষে মুহব্বত-মারিফাতের রুদ্ধ দরজা নিরন্তর অবারিত হতে থাকে। অবধারিত সত্য যে, একমাত্র মুর্শিদের মোবারক সোহ্বতের পরশেই কামিয়াবীর পর্যায়ক্রমিক সোপানগুলো অতিক্রমণে উন্মুখ অন্তরের আকুতি নিবৃত্ত হয়। উপলব্ধি যতো গভীর হয় এবং নিয়ামত যতো বৃদ্ধি পায়, ততোই হৃদয়ের সান্ত¡না ও যাতনার যুগপৎ পরিবৃদ্ধি ঘটে। এমন মধুর আনন্দ-বেদনায় সালিকের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত হয়।  সমঝদার মুরীদের সঙ্গে ভাব বিনিময় ও আলাপচারিতায় প্রাপ্তিযোগের নিরিখে অনাবিল স্বস্তিতে নিত্যদিন মুর্শিদও নিজেকে আবিষ্কার করতে থাকেন উত্তরণের নবতর মাত্রায়। কারণ পীর-মুর্শিদ উভয়েরই লক্ষ্য আল্লাহ্ পাক। তবে তাঁদের মাত্রাগত বৈষম্যের পারস্পরিক অগ্রযাত্রায় মুরীদের প্রাপ্তিযোগই মূখ্য এবং মুর্শিদ অনুক্ষণ অগ্রগামী। সংগত কারণেই হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার সান্ত¡না ও স্বস্তি অপার। অপরদিকে অনুভূতির তীব্রতায় এবং নিয়ামতের ক্রমবর্ধনে উনার অন্তরের ব্যাথাও প্রগাঢ়। যাঁর প্রাপ্তি বেশী, উনার বেদনাভারও অপার।

 আনুষ্ঠানিক বাইয়াত হবার পর হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার অশান্ত মনের এক অভাবনীয় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। একজন যোগ্য মুর্শিদের সোহ্বত লাভের দীর্ঘ অভিপ্রায় পূরণ হয়েছে। প্রাণের আকাঁ মুর্শিদ হযরত শেখ বোরহানুদ্দীন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে কেন্দ্র করেই সময়গুলো কেটে যায়। অবিরাম যিকির-ফিকির এবং ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকেন তিনি। কিন্তু আশৈশব মনের গভীরে ঠাঁই পাওয়া বিচ্ছেদ যাতনায় কাতর এবং আল্লাহ্ পাক-উনার প্রেমানলে দগ্ধ এই মাদারজাত ওলীর শান্তি ও স্বস্তি কোথায়? হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার নিকট পূর্বেও তিনি বাইয়াত হয়েছিলেন। সকল নিয়ম-পদ্ধতি উনার আগে থেকেই জানা। পরওয়ারদিগার-উনার আরো অধিক নৈকট্য হাছিলের জন্য অন্তরের আকর্ষণ কতো তীব্র! কোন বাধাই আর উনার অভিযাত্রাকে এখন ব্যাহত করতে পারে না। কামিয়াবীর অভীষ্ট লক্ষ্যে এখন শুধুই সামনে এগিয়ে চলা। (অসমাপ্ত)

আবা-৮১

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-২১

 


আমাদের সম্মানিত দাদা হুজুর ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

 বাইয়াতের পূর্বে মুর্শিদ সন্নিধানে অনুপম মুহুর্ত-

 ওলী আল্লাহ্গণের মনোবেদনা জাগতিক কোন ঘটনাপ্রসূত নয়। উনাদের প্রত্যয় ও দৃঢ়তা এবং দুনিয়ার প্রতি নিস্পৃহতা সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক বলেছেন,

 ألا إن أولياء الله لا خوف عليهم ولا هم يحزنون

অর্থঃ- সতর্ক থেকো, নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্ পাক-উনার বন্ধু তাদের কোন আশংকা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।

        জন্মলগ্ন থেকেই ওলী আল্লাহ্গণ বেপরোয়া। যন্ত্রণা কাতরতা উনাদের সঙ্গী। আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত-মারিফাতের তুলনায় অনিশ্চিত জীবনের পরিসর একান্তই নগণ্য। বিবাগী মনের আর্তি কতটুকু কবুল হচ্ছে, সে এক ভাবনা। মৃত্যুর ওপারে দীদার নসীব হবার বিষয় জীবদ্দশায় না জানার বিড়ম্বনা। দুনিয়ায় বসবাস এবং সেখানের অধিবাসীদের সাথে সমন্বয়ের প্রাণান্তকর প্রয়াসের ধকল। সব মিলিয়ে অনুভূতির গভীরে মিশে থাকা অব্যক্ত বিচ্ছেদ যাতনা আল্লাহ্ প্রেমিকগণকে আমৃত্যু অস্থির  করে ছাড়ে। জনকোলাহলে সবার অলক্ষ্যে উনাদের দিন কাটে একাকীত্বের বন্দীদশায় এবং আপন ঘরেও পরবাসে। নিয়মের বিদ্যমানতায় জীবন-যাপনের পরিবৃত্তে নিঠুর দহনে ক্লীষ্ট থেকেও মধুর মুহব্বত আস্বাদনে উনার প্রশান্ত। দুঃখের অথৈ পারাবারে অবগাহন করেও উনার আনন্দিত। নিত্যদিন নিরানন্দ থেকেও পরওয়ারদিগার-উনার আকর্ষণে বেদনামধূর মানসিকতায় উনার থাকেন এতমিনান। বিচ্ছেদ যাতনায় অনুক্ষণ জর্জরিত থাকা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সুন্নত।  যে ওলী আল্লাহ্ এ যাতনা বহনে বেশী অভ্যস্ত, তিনি ততো বড়। আল্লাহ্ পাক-উনার জাতছিফতউপলব্ধির সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম মাকামে নিরন্তর অধিষ্ঠিত থেকে এবং পরমতম দীদারলাভ করেও হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বিরহ বেদনায় দগ্ধ হয়েছেন আজীবন। স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আনন্দ-বেদনা, মিলন-বিরহ, আগ্রহ-আকুতির নিদারুণ নিষ্পেষনে তিনি আক্রান্ত থেকেছেন। চিন্তা ও বিষন্নতাই ছিলো উনার মুবারক জীবনের চির সঙ্গী। এটি এমন এক অনির্বচনীয় অবস্থা, যেখানে পেলে আরো না পাবার দুঃখ, না পেলে আবারো পাবার প্রত্যাশার স্বস্তি এবং নিগূঢ় নৈকট্য ও মিলন-বিরহের দুঃসহ সংকটে উদ্বেলিত মনন।

        ওলী আল্লাহ্গণও ওয়ারিশসূত্রে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সুন্নত অনুসরণে জীবন যাপনের বাহ্যিক আচরণে সন্তুষ্ট থেকেও অন্তর্গতভাবে চিন্তাযুক্ত ও নিরানন্দ থাকেন। নিয়ম তো এটাই যে, যিনি যত বেশী নিষ্পাপ উনার আল্লাহ্ ভীতি, চিন্তা, মনোবেদনা ও যন্ত্রণাকাতরতা ততো ব্যাপক। বদনসীব আনন্দ মূখরিত থাকে, কখনই নিরানন্দ হবার অবকাশ পায় না। তাদের জীবন আচ্ছন্ন থাকে দূর্গতির অমানিশায়। আল্লাহ্ পাক-উনার একি সদয় মর্জি! প্রিয়জনদের কলিজা তিনি ইশ্কের আগুনে কাবাব বানিয়ে ছাড়েন। একই কারণে মাদারজাদ ওলী হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও বিরহ যাতনা, চিন্তার নিবিষ্টতা, নিগূঢ় মনন ও গভীর অনুসন্ধিৎসায় জীবনব্যাপী আন্দোলিত হয়েছেন। জামাল ও জালালের অভাবিত সমন্বয়, কোলাহলমূখর জনবসতিতে একাকীত্বের ভিত্ নির্মাণ, আপন ঘরে পরবাসের বিশিষ্টতা, মিলন-বিরহের দুঃসহ সংকটের মাঝে আল্লাহ্ পাক উনাকে দান করেছেন আনন্দ-বেদনা বিমুগ্ধ অতুলনীয় এক মনন। অতি শৈশবেই আম্মাকে হারিয়ে এক বেদনাবিধূর পরিবেশ-প্রতিবেশে প্রত্যয়ী মনের অধিকারী হয়েছেন তিনি। জীবনের সকল যুদ্ধেই তিনি বিজয়ী হয়েছেন। লাভ করেছেন আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার অপরিমেয় সন্তুষ্টি। কিন্তু বিরহ জ্বালায় দগ্ধ অন্তর্বেদনা কত যে দূর্বিষহ! বিবাগী মনের অতলান্ত বেদনা থেকে মুক্তি উনার কাম্য নয়। এমন অবস্থা অর্জনের জন্যেইতো আল্লাহ্ প্রেমিকগণের ব্যাকুল অপেক্ষা। উৎকক্তাভরে এমন যন্ত্রণাকাতরতা আস্বাদনের জন্যেইতো নিজেকে সযতে¦ গুছিয়ে তোলা। যাঁর যে দুঃখ, সে দুঃখ উনারই। তবে আহলে দিল কারো কাছে হৃদয়ের লালিত দুঃখ জানাতে পারায় ক্ষণিকের জন্যে হৃদয় হালকা হলেও মূলতঃ সে দুঃখের অভিঘাত আরো গভীর হয়। তখন সে যন্ত্রণা হয় মধুর। এতে পরওয়ারদিগার-উনার নৈকট্য হাছিলের সোপানগুলো ক্রমান্বয়ে অতিক্রান্ত হয়। আকর্ষণকারী আল্লাহ্ পাক এবং আকর্ষিত ব্যক্তির মাঝে রচিত হয় প্রেমময় সেতুবন্ধন। আল্লাহ্ পাক-উনার প্রেম দিওয়ানা হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কাঙ্খিত মুর্শিদ হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজী কান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার সন্নিধানে হাজির হয়েছেন বাইয়াত হবার মানসে। পূর্বে কতবার দেখেছেন মুর্শিদকে। কিন্তু আজই যেন নতুন দেখা। যেন প্রথম চেনা। আল্লাহ্ পাক-উনার পরিপূর্ণ মুহব্বত ও মারিফাত হাছিলের অনুধ্যানে বিভোর এবং অনুক্ষণ অভ্যস্ত বেদনার বিষন্নতায় প্রাণের আকাঁ মুর্শিদকে প্রত্যক্ষ করে আজকের এই শুভ মুহুর্তে যেন নিজেকে নতুন করে আবিস্কারের পালা। পর্দার নিরাবরণে উভয়ই একান্ত কাছাকাছি, মুখোমুখি। তৃষিত অন্তরে প্রেমের ফল্গুধারা। পারস্পরিক জানাজানির ঘনিষ্টতম সান্নিধ্যের মুবারক মৌন মুহুর্তে এখন দুজনেই মগ্ন। (অসমাপ্ত)

আবা-৮০

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-২০

 


আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

 নতুন মুর্শিদের পরিচয় এবং উনার সান্নিধ্যলাভ-

 হযরত শেখ বুরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল এক মহান ব্যক্তিত্ব। বুযুর্গীর জন্য দেশ জুড়ে উনার খ্যাতি। আল্লাহ্ পাক-উনার সন্তুষ্টি হাছিলের অনিবার্য মাধ্যম তাসাউফ উপলব্ধি ও অনুশীলনে মানুষকে উজ্জ্বীবিত করার প্রাণপুরুষ তিনি। ইল্ম, আমল ও সুন্নত অনুসরণের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনে তার জনপদে মোহময় এক আবহ সৃষ্টি করেছেন তিনি। উনার কাছে গিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট মানুষ দ্বীন খুঁজে পায়। পাপাসক্ত ব্যক্তিরা তাদের ঈমান নবায়নের মাধ্যমে নেক কাজে মনোযোগী হবার সুযোগ লাভ করে। চাঁদপুর জিলার মতলব থানাধীন ফরাজীকান্দি গ্রামের মানুষ তিনি। সেখানেই উনার জন্ম। ওয়াইসিয়াসিলসিলার একজন কামিলে মুকাম্মিল পীর ক্বিবলা সাহেব ছিলেন তিনি। পুরনো ঢাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শেখ বুরহানুদ্দিন কলেজউনারই মুবারক নামে প্রসিদ্ধিলাভ করেছে। দীর্ঘকাল আগে উনার প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি দেশকে অনেক বরেণ্য সন্তান উপহার দিয়েছে। এছাড়া নিজ জন্মভূমি ফরাজীকান্দিতে তিনি স্থাপন করেছেন সুবিশাল এক ইসলামী বিদ্যাপিঠ। তারনাম আল ওয়াইসিয়া ফরাজীকান্দি আলিয়া মাদ্রাসা।ইসলামী ইল্ম-উনার বহুমুখী শাখায় বিভাজিত এ মাদ্রাসায় অধ্যায়ণ করে অসংখ্য মানুষ আল্লাহ্ পাক-উনার সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হয়েছেন। তারা নিজেরা আল্লাহ্ ওয়ালা হয়ে অন্যকে আলোকিত করেছেন। বৃহত্তর সরিসরে মাদ্রাসাটি এখনো চালু আছে।

 আমাদের দেশে মূলতঃ দুধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান। মাদ্রাসা-মক্তবসহ অন্যান্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠান এবং সকল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ দুটো ধারা পরস্পর বিরোধী ও বিপরীত ধর্মী। এ বৈপরীত্য দীর্ঘকালের। আধুনিকীকরণের নামে মাদ্রাসাগুলোতে যেসব বিষয়ের অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে, তাতে দ্বীনি শিক্ষা ও সমঝ পূর্ণতা পাচ্ছেনা। এতে মানুষ না শিখছে দ্বীন, না শিখছে দুনিয়া। বিষয় বিন্যাসের অসংগতি, শিক্ষক, ছাত্র ও কর্তৃপক্ষের অমনোযোগিতা, পাঠ্যসূচীতে তাসাউফ-উনার অনুপস্থিতি এবং পরিবেশগত ত্রুটির কারণে দ্বীনের সহীহ্ সমঝ অর্জনে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা অপূর্ণ ও অন্তরায়। প্রচলিত এ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রকৃত ইল্ম ও সহীহ্ সমঝ অর্জনের সুযোগ না থাকায় আলিম নামধারী মানুষগুলোর মধ্যে ইসলামী আক্বীদাভিত্তিক ব্যক্তিত্ব ও আত¦মর্যাদাবোধের সমন্বয় ও সমাবেশ ঘটছেনা। ফলে তাদের অনেকেই তিমিরে থেকে যাচ্ছেন। অপরদিকে মাদ্রাসা-মক্তব বিমূখ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোয় নিরেট দুনিয়া-সম্পৃক্ত এমন সব বিষয়ের সমাবেশ, সেখানে প্রকৃত দ্বীন অনুপস্থিত। প্রেক্ষিত কারণে মাদ্রাসা-মক্তব এবং বিপরীত-মুখী অন্য সকল বিদ্যাপিঠে শিক্ষিত মানুষের মন ও মননের দ্বন্দ্ব-সংঘাত উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। উভয়ের আদর্শিক ব্যবধানও দুস্তর। সমাজ, মানুষ তথা ইসলাম ধর্মের ক্ষতিসাধনকারী সর্বাধিক গুরুত্ববহ এ বিষয়টির উপর নজরদারীর অভাবে বর্তমান পরিস্থিতি জটিলতর। ব্যক্তি, ব্যস্টি ও সমষ্টির মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বর্তমান দুর্গতি উত্তরণে খালিছ ইসলামী শিক্ষায় উজ্জ্বীবিত হওয়া জরুরী। একথা সুবিদিত যে, অর্থহীন দুনিয়ার বিষয়কর্ম ও নশ্বর জীবনের অসারতা যিনি সম্যক উপলব্ধি করবেন, তার পক্ষেই আল্লাহ্ পাক-উনার প্রতি পূর্ণ অনুগত হওয়া সম্ভব। খালিছ ইসলাম নির্ভর ইল্ম অর্জনের সাথে জাগতিক বিষয়কর্ম সম্পর্কিত জ্ঞানেও সাধ্যমতো ব্যুৎপত্তি লাভ করা প্রয়োজন। কারণ উভয় শিক্ষার সংমিশ্রণ মানুষের গভীর উপলব্ধি ও পূর্ণ আনুগত্যের সহায়ক হয়। সম্ভবতঃ এ উপলব্ধি থেকেই হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি অনেক মসজিদ মাদ্রাসার পাশাপাশি স্কুল কলেজও প্রতিষ্ঠা করেছেন।

 হযরত শেখ বুরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ্ পাক-উনার নৈকট্যপ্রাপ্ত মহান ওলী। হৃদয়ের পরম মমতায় মানুষকে আপন করেন তিনি। ইল্ম, আমল, সমঝ ও ইখলাস-উনার সমন্বয়ে আল্লাহ্ পাক উনাকে দান করেছেন এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। উনার সান্নিধ্যে মানুষ নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়। দুনিয়া আসক্ত মানুষ উনার মুবারক সোহ্বতে গিয়ে আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি পূর্ণ মনোযোগী হয় এবং অবিরাম সুন্নত পালনের অভ্যস্ততায় ক্রমান্বয়ে ওলী আল্লাহ্ হয়ে উঠে। এমন একজন ওলী আল্লাহ্-উনার সোহ্বত-উনার অপেক্ষায়ই নিরন্তর ব্যাপৃত আছেন হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি।  উনার হৃদয়ে কতো অব্যক্ত বেদনা! কতো না বলা কথা! একান্ত কাছে থেকে তিনি প্রাণের আঁকা মুর্শিদ হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে দেখেছেন। প্রত্যক্ষ করেছেন উনার আমল, আখলাক, বুযুর্গী ও কারামত। অল্প কিছু দিনের সাক্ষাৎ ও পরস্পর আলাপচারিতার পর্যায়ে উভয়ের জানাজানি হয়েছে গভীরতর। পর্যবেক্ষণের কোন এক দূর্লভ মুহুর্তে মুর্শিদের প্রতি মনঃসংযোগ হয়েছে নিজের অজান্তেই। এমন মুর্শিদের কাছে নিজেকে সঁপে দিতে আর কোন বাধা নেই। এখন শুধু বাইয়াত হবার আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষামাত্র। (অসমাপ্ত)

আবা-৭৯

 

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১৯

 


একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে-

 বিরহ যন্ত্রনা অবসানে নতুন মুর্শিদ অনুসন্ধানে উদ্বেলিত মনোযোগ-

 ওলী আল্লাহ্গণের প্রত্যেকের কামিয়াবীর স্তর আপেক্ষিক। সকলেই আপন আপন মহিমায় একক অধিষ্ঠানে সমাসীন। উনাদের মুবারক অবয়ব, আচরণ ও আনুগত্যের প্রকৃতি দেখে উত্তরণের সোপান নিরুপন করা অসাধ্য। তবে স্বীকৃত অভিমত যে, শ্রেণীভিত্তিক অবস্থানে আল্লাহ্ পাক-উনার মনোনীত ওলীগণের কেউ কেউ অপরজনের উপরে এবং কেউ কেউ অন্যজনের নীচে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ মাকামে একক। কেবলমাত্র আল্লাহ্ পাকই উনার কবুলকৃত ওলীগণের অবস্থান সম্পর্কে সম্যক অবহিত। বিগত আওলিয়া-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার মুবারক জীবন চরিত পাঠে জানা যায়, উনাদের অনেকে মন্জিলে মাকসুদে উপনীত হয়েও নতুন নতুন মুর্শিদের মুবারক সোহবতে গিয়ে নবতর অনুভূতি, অভিনব উপলব্ধি ও অনির্বচনীয় নিয়ামত নির্যাসে অভিষিক্ত হয়েছেন। এতে উনাদের পরবর্তী উত্তরণের সোপান অবারিত হয়েছে। এরূপ ওলীগণের অনেকের পারস্পরিক অর্জন ও অবদান পরিপূরক হিসেবে গণ্য। সোহ্বত এখ্তিয়ারে ওলীআল্লাহ্গণের আচরিত এই পদ্ধতি আজ অবধি অনুসৃত হয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও একই ধারা অনুসৃত হতে থাকবে। অপরদিকে একজন ওলীআল্লাহ্-উনার লব্ধ নিয়ামতরাজি, মাহাত্ম্যপূর্ণ উপলব্ধি, ভাব, ভালোবাসা ব্যক্ত ও লেনদেনের প্রয়োজনেও অন্ততঃ সমপর্যায় অথবা উর্ধ্ব মাকামের অন্য একজন ওলীআল্লাহ্-উনার নিগূঢ় সাহচর্য বাঞ্ছিত হয়ে পড়ে। মূল কথা হলো, লব্ধ নিয়ামতের নির্যাস প্রয়োজনে প্রকাশ, বিকাশ ও বিতরণের লক্ষ্যে জাহেরীভাবে এবং অনেকক্ষেত্রে লোকচক্ষুর অন্তরালে বাতেনীভাবেও ওলীআল্লাহ্গণের পারস্পরিক যোগাযোগ, সোহ্বত, সম্বন্ধ স্থাপনের অনিবার্য ধারা পূর্ব থেকেই দুনিয়াব্যাপী অব্যাহত রয়েছে। একই লক্ষ্যে মুর্শিদের ইন্তিকালে বিরহ যন্ত্রনা অবসানের প্রয়োজনে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহিও এখন নতুন একজন মুর্শিদ তালাশে ব্যাপৃত।

        নিজ শায়খের সাথে আনুগত্যপূর্ণ অন্তরঙ্গ সম্বন্ধ স্থাপন করা সালেকের জন্য অত্যাবশ্যক। ইচ্ছা অথবা অনিচ্ছায় শায়খের আদেশ নির্দেশের প্রতি অনীহা প্রদর্শন, উনার ইচ্ছার অবমাননা, উনার সিদ্ধান্তের বিপরীত নিজস্ব কোন মতামত গ্রহণ, এমনকি অন্তরে বিরুদ্ধ কোন ধ্যান-ধারণা পোষণ করাও মুরীদের পক্ষে জায়েয নেই। কথা, কাজ, আচরণ, মনোভাব, চিন্তা ও ধ্যানে মুর্শিদের প্রতি নাখোশ হওয়া, খারাপ আক্বীদা পোষণ করা, তা সে বিষয় যতো ক্ষুদ্র অথবা তুচ্ছই হোক, নাজায়েয এবং মুরীদের জন্য অবধারিত হলাহল তুল্য। মুর্শীদের যে কোন অসন্তুষ্টি মুরীদের সর্বনাশ ডেকে আনে। এসব অবাঞ্ছিত আচরণ থেকে পরহেজ করার মূল উদ্দেশ্য হলো, মুর্শীদের ‘‘জাত’’-উনার সাথে মুরীদের আপন জাত” (সত্ত্বা) অবিভাজ্যরূপে মিলিয়ে দেয়া। আল্লাহ্ পাক-উনার মাহবুব ওলী-উনার সাথে এমন মধুর সম্মিলন সালেকের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার নিশ্চিত নিয়ামক। এমন অবস্থায়, অন্য মুর্শীদের সাক্ষাতে অথবা সোহ্বতে যেতে মুরীদের অভিপ্রায় থাকার প্রশ্ন অবান্তর। যদি থাকে তবে বুঝতে হবে, সে মুরীদ অকৃত্রিম নয়, মেকী। তার জন্য চুড়ান্ত সর্বনাশ অপেক্ষায় থাকে। প্রাণের আঁকা নিজ পীর সাহেব ক্বিবলা-উনার বিনা অনুমতিতে অন্য পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হলে ঐ লক্ষ্যভ্রষ্ট সালেক ত্বরীকত বিনষ্টকারী এবং স্বেচ্ছায় নিজেকে ধ্বংসকারী হিসেবে গণ্য হয়। তবে, তিনটি কারণে একজন মুরীদ অন্য মুর্শীদের নিকট বাইয়াত হতে পারে।

কারণ তিনটি হলো-

(১) নিজ মুর্শীদের ইন্তিকাল হলে,

(২) মুরীদ তার মুর্শীদ থেকে দূরবর্তী অবস্থানে থাকলে। অধিক দূরত্বের জন্য মুর্শীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব না হলে এবং 

(৩) আল্লাহ্ পাক না করুন, মুর্শীদ গোমরাহ হয়ে গেলে। মুর্শীদের সোহ্বত এখ্তিয়ার-উনার অভাবে (মুরীদ পূর্ণতায় পৌঁছে না থাকলে) কামিয়াবী হাছিলের ক্ষেত্রে এই তিনটি কারণই অন্তরায় সৃষ্টি করে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন মুর্শীদের নিকট বাইয়াত হওয়া জায়েয। ক্ষেত্রভেদে জরুরীও বটে।

        হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার অবস্থা অবশ্য এক্ষেত্রে ভিন্ন। হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার পর ইতোমধ্যে দশ বছর অতিবাহিত হয়েছে। মুর্শীদ বিহনে উনার বেদনাঘেরা একাকীত্ব আর ভালো লাগেনা। একজন নতুন মুর্শীদের সান্নিধ্যে যাবার ব্যাকুল অপেক্ষা এখন। কিন্তু কোথায় সে মুর্শীদ! দীর্ঘ অনুসন্ধানে কাঙ্খিত মুর্শীদের সন্ধান মিলে। উনার নাম মুবারক হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজী কান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি। আল্লাহ্ পাক-উনার সদয় মর্জিতে উনার মুবারক হাতে বাইয়াত হওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এখন। (অসমাপ্ত)

আবা-৭৮

 

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১৮

 


একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 আমাদের সম্মানীত দাদা হুজুর ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার স্মরণে -

 মুর্শিদের ইন্তিকালে বিরহকাতর হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-

   আচরণ, বিচরণ ও জীবন যাপনের প্রয়োজনে দুনিয়ার গুরুত্ব ও বাস্তবতা অনস্বীকার্য। অসার ও নশ্বর দুনিয়ার অবস্থানে বসতি নির্মাণ, পরিবার-পরিজন প্রতিপালন ও নিজের রুজি- রিযিক তালাশে মানুষের নিত্যদিনের  কর্মব্যস্ততা ক্ষণকালের জন্য হলেও তাঅনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সকল পাপের মূলে রয়েছে দুনিয়ার প্রতি আসক্তি।দুনিয়ার যে সম্পৃক্ততা মানুষকে মন্দ করে ছাড়ে এবং তার আখিরাত সমূলে ধ্বংস করে দেয়, তার পুরোটাই নিন্দনীয় ও পরিত্যাজ্য। প্রকৃত প্রস্তাবে দুনিয়া আদৌ মন্দ নয়। কারণ, আখিরাতে কামিয়াবী হাছিলের উপাদানসমূহ এবং অনুকূল সকল বিষয়কর্ম আল্লাহ পাক দুনিয়ার সাথেই সংশ্লিষ্ট করে রেখেছেন। দুনিয়া আখিরাতের কর্ষণক্ষেত্র”- এ হাদিস শরীফের মর্মমতে আখিরাতের ফায়দা হাছিলের অন্যকোন বিকল্প ক্ষেত্র নেই। হাঁসের বাচ্চাকে চৌবাচ্চা, ডোবা, পুকুর, অথবা নদীতে নামিয়ে দিলে শুধুমাত্র তার বুক নাগাদ পানিতে ভিজে। সাঁতার শেষে শুকনোয় উঠে ডানা ঝাপটা দিলেই অবাঞ্ছিত পানি গা থেকে ঝরে পড়ে। ওলী আল্লাহগণও দুনিয়ায় বাস করে অনুক্ষণ আখিরাতের ফসল ঘরে তোলেন। হিজরী দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মুজাদ্দিদ, আফজালুল আওলিয়া, কাইউমে আউয়াল, খাজিনাতুর রহমত, শায়খ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি দুনিয়া ও আখিরাতের তাৎপর্য এবং কামিয়াবীর চূড়ান্ত সোপানে উনার দৃঢ় অবস্থান বুঝাতে গিয়ে মাকতুবাত শরীফে বলেছেনঃ আল্লাহ পাক আমাকে এমন নিগূঢ় নৈকট্য দান করেছেন, হাজার বছর দুনিয়াতে ডুবিয়ে রাখলেও আমার মাকামের কোন পরিবর্তন সূচিত হবেনা। (দুনিয়ার তাছির আমাকে পরাভুত করবেনা)।দুনিয়ার প্রতি নির্লিপ্ততা সম্পর্কে হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার গন্তব্যে দৃঢ় থাকার ব্যাপারে এমন প্রত্যয়ী উচ্চারণ করেছেন দুনিয়ায় অর্জিত সাফল্যের ভিত্তিতেই। অর্থাৎ মন্জিলে মকসুদে উপনীত হতে দুনিয়া উনাকে সহায়তা করেছেন।, বৈরী হতে পারেনি।

দুনিয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেছেন,

ربنا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة

অর্থঃ পরওয়ারদিগার আমাদেরকে দুনিয়ায় পূণ্যদিন এবং আখিরাতেও পূণ্য দিন”(সুরা বাক্বারা)। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এভাবে দুআ করেছেন- আল্লাহপাক আমার বিরুদ্ধে আমার শত্রুকে হাসাবেন না, আমাকে কেন্দ্র করে আমার আপনজনের ক্ষতিসাধন করবেন না, ধর্মকাজে আমাকে বিপদ দিবেন না এবং দুনিয়াকে কখনো আমার একমাত্র লক্ষ্যস্থল করবেন না।লক্ষ্যণীয় যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার দুআয় দুনিয়াকে অস্বীকার করেননি। বরং কেবলমাত্র দুনিয়ার লোভেই দুনিয়ার প্রতি অনুরক্ত হওয়া থেকে আল্লাহ পাকের কাছে পানাহ্ চেয়েছেন। দুনিয়া সম্পর্কে উপরোক্ত আয়াত শরীফের মর্মবাণী হলো যে, আল্লাহ্পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-উনার মহব্বত, মারিফাত ও রেজামন্দী হাছিলের ক্ষেত্রে দুনিয়াকে অনুপস্থিত রাখা শর্ত নয়। শর্ত যাতাহলো, একমাত্র দুনিয়ার লোভেই দুনিয়ার মোহে আচ্ছন্ন হয়ে না পড়া। 

          ইতোপূর্বে বলা হয়েছে, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার প্রাণের আঁকা মুর্শিদ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। বিরহকাতর অন্তরে এখন অতলান্ত বেদনা। নিঃসীম বেদনাঘেরা নিথর নীরবতা উনাকে দান করেছে কাঙ্খিত পরম প্রাপ্তি। এমন প্রাপ্তিতে দুনিয়া ও আখিরাতের মাঝে এখন আর কোন ভেদ রেখা নেই। সকলের পরিচিত জগৎ-সংসারে উনার বসবাস, সেখানেই উনার ভাব, ভালোবাসা ও বিষয়কর্মের প্রাত্যহিক লেনদেন, সেখানেই ধর্মপালন এবং সে আবহেই উনার ইবাদত-বন্দেগীর নিরবচ্ছিন্ন ব্যস্ততা। অথচ অনেক দিনের চেনা পৃথিবী যেন কতো অচেনা! মাটির পৃথিবী এখন আর উনাকে আকৃষ্ট করেনা। আনুগত্যপূর্ণ মন ও মনন নিরন্তর ঝুঁকে থাকে পরওয়ারদিগারের প্রতি। আশেপাশে কতো কোলাহল! কতো বৈচিত্র! কিন্তু মুর্শিদ বিহনে তিনি বড়ো একা। অশ্রুভেজা চোখে তিনি হতবাক, অসহায়। যেমন বলা হয়ে থাকেঃ ‘‘আল্লাহ্ পাক-উনার আশেক হিম্মতহীন।’’ এরূপ অবস্থায় না থাকে স্বস্তি, আর না থাকে বিচ্ছেদ ঘটানোর শক্তি। এমন নির্মম একাকীত্বের অবসান দরকার। তাই সঙ্গী চাই। নতুন কোন মুর্শিদের সন্নিধানে যাবার প্রয়োজনের ভাবনা এখন হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার মুবারক তন্ময়তাকে বার বার আন্দোলিত করে যায়। (অসমাপ্ত)

আবা-৭৭