একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-২৪

 


আমাদের সম্মানিত দাদা হুজুর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম -উনার স্মরণে-

 খিলাফত মুবারক লাভ-

নিয়ামতের নির্যাস ধারণ ও বহণের পরিপূর্ণ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমুল্লাহি আলাইহি-উনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। মূলতঃ প্রধান খলীফা মনোনীত হবার বিষয়টি উনার অজ্ঞাত ছিল। এই পরম নিয়ামতে অভিষিক্ত হওয়া সম্পর্কে মুরীদ অনবহিত থাকারই কথা এবং এটাই নিয়ম। মুরীদের পক্ষেতো বটেই, এমনকি নিয়ামত সোপর্দকারী মুর্শিদেরও জানা থাকে না, কাকে নিয়ামত দান করতে হবে। এ নিগূঢ় বিষয়টি একান্তভাবে আল্লাহ্ পাক-উনার এখতিয়ারে। আরিফগণের পৃথক পৃথক জীবন সাধনা, কৃচ্ছতা, অনুসন্ধান, অনুভব ও  অনুশীলনের বিচিত্র প্রেক্ষিত রচিত হয় উনাদের আপন আপন অবস্থানে। অবশ্য উনাদের মহিমাময় কামালত ও পরিপূর্ণতা লাভ ঘটে মহামিলনের একই মন্জিলে, যদিও গন্তব্যস্থল এক হওয়া সত্ত্বেও সকলের মন্জিলের সোপান এক নয়। কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুসরণে আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টি অর্জনই একজন মুমীনের অভিষ্ট লক্ষ্য। এ লক্ষ্য হাছিলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পথ পরিক্রমার স্তর অতিক্রমণে ওলী আল্লাহ্গণের অনুসৃত রীতি ও নীতি ত্বরীকতঅভিধায় অভিহিত। মুহব্বত ও মারিফাত চর্চায় মানুষকে দীক্ষিত ও অভ্যস্ত করে তোলার জন্য আল্লাহ্ পাক উনার মনোনীত ওলী আল্লাহ্গণকে প্রদত্ত নিয়ামত, উনাদের মাধ্যমে অন্যজনে হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় দুনিয়ায় ত্বরীকত তথা ইসলাম ধর্মের আবাদ করেন। ওলী আল্লাহ্গণকে নিয়ামত সম্ভারে পরিপূর্ণতা দান এবং সমৃদ্ধ করে তোলা যেমন মহান আল্লাহ্ পাক-উনার সদয় মর্জি, ঠিক তেমনি প্রদত্ত নিয়ামত হস্তান্তর করণে ব্যক্তি নির্বাচন ও মনোনয়ন দানও আল্লাহ্ পাক-উনারই সদয় এখতিয়ার। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মুর্শিদের ভূমিকা এক্ষেত্রে প্রাধান্যে এলেও আল্লাহ্ পাক-উনার ইচ্ছাই চূড়ান্ত। আল্লাহ্ পাক অনুগ্রহ করে না জানালে মুর্শিদের জানাই থাকে না, নিয়ামত ধারণ ও বহণে উনার কোন মুরীদ যোগ্যতম। খিলাফত কোন পরিত্যক্ত সম্পত্তি নয়। উনার জন্য যোগ্যতা প্রয়োজন। তবে যোগ্যতা ও নিয়ামত যুগপৎ আল্লাহ্ পাক-উনারই মহান দান। মুরীদের যোগ্যতার পরিধি এবং নিয়ামতের ব্যাপ্তি ও গভীরতা সম্পর্কে মুর্শিদের অবহিতি থাকলেও উনার গূঢ় রহস্য ও পরিণত স্তর অজ্ঞাত থাকায় তিনি আল্লাহ্ পাক-উনার আদেশের অপেক্ষায় থাকেন। অবশেষে আল্লাহ্ পাক-উনার তরফ থেকে সময়োচিত আদেশ প্রাপ্তিতে তিনি উনার জীবনের সঞ্চিত মহামূল্যবান নিয়ামত দান করার লক্ষ্যে তৎপর হয়ে উঠেন। আল্লাহ্ পাক-উনার মহান ওলী হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ্ পাক-উনার এমন আদেশ পেয়ে উনার লব্ধ নিয়ামত সোপর্দ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন।

 নিয়ামত সোর্পদ করার দিন আজ সমাগত। হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি  রহমতুল্লাহি আলাইহি অনেক মুরীদ ও খলীফা পরিবেষ্টিত হয়ে খানকা শরীফে বসে আছেন। আজকের এই বরকতময় মাহ্ফিলের বিশেষ মেহমান আল্লাহ্ পাক-উনার লক্ষ্যস্থল, মাদারজাদ ওলী, কুতুবুজ্জামান, আরিফবিল্লাহ্, আওলাদে রাসূল, হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি উনার প্রাণের আঁকা মুর্শিদের দিকে মুতাওয়াজ্জেহ হয়ে আপন মনে বসে রয়েছেন। সকলেই নিশ্চুপ, নির্বাক। মুর্শিদ উনাকে কাছে ডাকলেন। মুর্শিদ ক্বিবলার মমতামাখা আহবানে তিনি সাড়া দিলেন। একান্ত নিকটবর্তী হয়ে তিনি মুর্শিদের কদম মোবারকে নিজেকে নিবেদন করলেন। এখন আর বাধা-বিপত্তির কোন পর্দা নেই। শুধুই দুজনে দুজনার। পর্দার নিরাবরণে মুর্শিদ সন্নিধানে মুরীদ আজ ধন্য। নিয়ামত ধারণ ও বহণের যোগ্য মুরীদ পেয়ে মুর্শিদও এত্মিনান। সকলের অলক্ষ্যে জীবনের অর্জিত নিয়ামতের পরম নির্যাস আল্লাহ্ পাক-উনার আদেশে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহিকে সোপর্দ করে হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি  রহমতুল্লাহি আলাইহি আজ নির্ভার হলেন এবং উনাকে প্রধান খলীফা মনোনীত করলেন।

 শায়েখ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বিছাল শরীফ লাভ -

হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমতুল্লাহি আলাইহি জীবনব্যাপী নিজেকে ইসলাম ধর্মের খিদমতে নিয়োজিত রেখেছেন। উনার প্রতিষ্ঠিত মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তবসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরাসরি উনার সক্রিয় ব্যবস্থাধীনে পরিচালিত হয়েছে। এসবের পাশাপাশি তিনি একান্ত অরাজনৈতিক জনসেবামূলক একটি সংস্থা নেদায়ে ইসলামগঠন করেন। উনার জীবাদ্দশাতেই এই সংস্থাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং জনহিতকর কাজে অত্যুজ্জ্বল ভূমিকা রাখে। মুরীদের দেখাশুনা, প্রতিষ্ঠিত সকল প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধান এবং অপরিমেয় আধ্যাত্মিক শ্রমের ফলে উনার স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতি ঘটতে থাকে। এমন অবস্থায় ১৯৬৪ সালের ৯ মে তিনি মহান আল্লাহ্ পাক-উনার দিদারে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। উনার সহধর্মিণী হযরত আহমদ জামিলা খাতুন মুদ্দাজিল্লুহাল আলিয়া ৭৭ বছর বয়স মুবারকে ৮জুন/২০০০ সালে ইন্তিকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) (অসমাপ্ত)

আবা-৮৩

 

0 Comments: