একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১৯

 


একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে-

 বিরহ যন্ত্রনা অবসানে নতুন মুর্শিদ অনুসন্ধানে উদ্বেলিত মনোযোগ-

 ওলী আল্লাহ্গণের প্রত্যেকের কামিয়াবীর স্তর আপেক্ষিক। সকলেই আপন আপন মহিমায় একক অধিষ্ঠানে সমাসীন। উনাদের মুবারক অবয়ব, আচরণ ও আনুগত্যের প্রকৃতি দেখে উত্তরণের সোপান নিরুপন করা অসাধ্য। তবে স্বীকৃত অভিমত যে, শ্রেণীভিত্তিক অবস্থানে আল্লাহ্ পাক-উনার মনোনীত ওলীগণের কেউ কেউ অপরজনের উপরে এবং কেউ কেউ অন্যজনের নীচে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ মাকামে একক। কেবলমাত্র আল্লাহ্ পাকই উনার কবুলকৃত ওলীগণের অবস্থান সম্পর্কে সম্যক অবহিত। বিগত আওলিয়া-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার মুবারক জীবন চরিত পাঠে জানা যায়, উনাদের অনেকে মন্জিলে মাকসুদে উপনীত হয়েও নতুন নতুন মুর্শিদের মুবারক সোহবতে গিয়ে নবতর অনুভূতি, অভিনব উপলব্ধি ও অনির্বচনীয় নিয়ামত নির্যাসে অভিষিক্ত হয়েছেন। এতে উনাদের পরবর্তী উত্তরণের সোপান অবারিত হয়েছে। এরূপ ওলীগণের অনেকের পারস্পরিক অর্জন ও অবদান পরিপূরক হিসেবে গণ্য। সোহ্বত এখ্তিয়ারে ওলীআল্লাহ্গণের আচরিত এই পদ্ধতি আজ অবধি অনুসৃত হয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও একই ধারা অনুসৃত হতে থাকবে। অপরদিকে একজন ওলীআল্লাহ্-উনার লব্ধ নিয়ামতরাজি, মাহাত্ম্যপূর্ণ উপলব্ধি, ভাব, ভালোবাসা ব্যক্ত ও লেনদেনের প্রয়োজনেও অন্ততঃ সমপর্যায় অথবা উর্ধ্ব মাকামের অন্য একজন ওলীআল্লাহ্-উনার নিগূঢ় সাহচর্য বাঞ্ছিত হয়ে পড়ে। মূল কথা হলো, লব্ধ নিয়ামতের নির্যাস প্রয়োজনে প্রকাশ, বিকাশ ও বিতরণের লক্ষ্যে জাহেরীভাবে এবং অনেকক্ষেত্রে লোকচক্ষুর অন্তরালে বাতেনীভাবেও ওলীআল্লাহ্গণের পারস্পরিক যোগাযোগ, সোহ্বত, সম্বন্ধ স্থাপনের অনিবার্য ধারা পূর্ব থেকেই দুনিয়াব্যাপী অব্যাহত রয়েছে। একই লক্ষ্যে মুর্শিদের ইন্তিকালে বিরহ যন্ত্রনা অবসানের প্রয়োজনে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহিও এখন নতুন একজন মুর্শিদ তালাশে ব্যাপৃত।

        নিজ শায়খের সাথে আনুগত্যপূর্ণ অন্তরঙ্গ সম্বন্ধ স্থাপন করা সালেকের জন্য অত্যাবশ্যক। ইচ্ছা অথবা অনিচ্ছায় শায়খের আদেশ নির্দেশের প্রতি অনীহা প্রদর্শন, উনার ইচ্ছার অবমাননা, উনার সিদ্ধান্তের বিপরীত নিজস্ব কোন মতামত গ্রহণ, এমনকি অন্তরে বিরুদ্ধ কোন ধ্যান-ধারণা পোষণ করাও মুরীদের পক্ষে জায়েয নেই। কথা, কাজ, আচরণ, মনোভাব, চিন্তা ও ধ্যানে মুর্শিদের প্রতি নাখোশ হওয়া, খারাপ আক্বীদা পোষণ করা, তা সে বিষয় যতো ক্ষুদ্র অথবা তুচ্ছই হোক, নাজায়েয এবং মুরীদের জন্য অবধারিত হলাহল তুল্য। মুর্শীদের যে কোন অসন্তুষ্টি মুরীদের সর্বনাশ ডেকে আনে। এসব অবাঞ্ছিত আচরণ থেকে পরহেজ করার মূল উদ্দেশ্য হলো, মুর্শীদের ‘‘জাত’’-উনার সাথে মুরীদের আপন জাত” (সত্ত্বা) অবিভাজ্যরূপে মিলিয়ে দেয়া। আল্লাহ্ পাক-উনার মাহবুব ওলী-উনার সাথে এমন মধুর সম্মিলন সালেকের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার নিশ্চিত নিয়ামক। এমন অবস্থায়, অন্য মুর্শীদের সাক্ষাতে অথবা সোহ্বতে যেতে মুরীদের অভিপ্রায় থাকার প্রশ্ন অবান্তর। যদি থাকে তবে বুঝতে হবে, সে মুরীদ অকৃত্রিম নয়, মেকী। তার জন্য চুড়ান্ত সর্বনাশ অপেক্ষায় থাকে। প্রাণের আঁকা নিজ পীর সাহেব ক্বিবলা-উনার বিনা অনুমতিতে অন্য পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হলে ঐ লক্ষ্যভ্রষ্ট সালেক ত্বরীকত বিনষ্টকারী এবং স্বেচ্ছায় নিজেকে ধ্বংসকারী হিসেবে গণ্য হয়। তবে, তিনটি কারণে একজন মুরীদ অন্য মুর্শীদের নিকট বাইয়াত হতে পারে।

কারণ তিনটি হলো-

(১) নিজ মুর্শীদের ইন্তিকাল হলে,

(২) মুরীদ তার মুর্শীদ থেকে দূরবর্তী অবস্থানে থাকলে। অধিক দূরত্বের জন্য মুর্শীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব না হলে এবং 

(৩) আল্লাহ্ পাক না করুন, মুর্শীদ গোমরাহ হয়ে গেলে। মুর্শীদের সোহ্বত এখ্তিয়ার-উনার অভাবে (মুরীদ পূর্ণতায় পৌঁছে না থাকলে) কামিয়াবী হাছিলের ক্ষেত্রে এই তিনটি কারণই অন্তরায় সৃষ্টি করে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন মুর্শীদের নিকট বাইয়াত হওয়া জায়েয। ক্ষেত্রভেদে জরুরীও বটে।

        হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার অবস্থা অবশ্য এক্ষেত্রে ভিন্ন। হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার পর ইতোমধ্যে দশ বছর অতিবাহিত হয়েছে। মুর্শীদ বিহনে উনার বেদনাঘেরা একাকীত্ব আর ভালো লাগেনা। একজন নতুন মুর্শীদের সান্নিধ্যে যাবার ব্যাকুল অপেক্ষা এখন। কিন্তু কোথায় সে মুর্শীদ! দীর্ঘ অনুসন্ধানে কাঙ্খিত মুর্শীদের সন্ধান মিলে। উনার নাম মুবারক হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজী কান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি। আল্লাহ্ পাক-উনার সদয় মর্জিতে উনার মুবারক হাতে বাইয়াত হওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এখন। (অসমাপ্ত)

আবা-৭৮

 

0 Comments: