“লংমার্চ” পালন করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম, নাজায়িজ ও কুফরী ।



“লংমার্চ” পালন করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম, নাজায়িজ ও কুফরী ।


পর্ব-০১ -

মুসলমান মাত্রই প্রত্যেককে যেকোন কাজ করতে হলে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা এবং কিয়াসের ভিত্তিতে করতে হবে। তাই লংমার্চ করা শরীয়তসম্মত কিনা আর লংমার্চ শব্দ ব্যবহার করা জায়েয কিনা তার সমাধান করতে হলে প্রথমে এর উৎপত্তি, ইতিহাস সম্বন্ধে জানতে হবে এবং তারপর কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের সাথে মিলাতে হবে, যদি মিলে তাহলে তা জায়েয আর যদি না মিলে তাহলে তা নাজায়েয। এখন যেহেতু প্রথমে আমাদের ইতিহাস উৎপত্তি সম্বন্ধে জানতে হবে তাই লংমার্চের ইতিহাস নিম্নে উল্লেখ করা হলো- লংমার্চের প্রাক ইতিহাসঃ ১৯২৭ সালটা চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির জন্যে এক দুর্যোগপূর্ণ সময় বলে ধরা হয়। পার্টির নির্দেশে মাওসেতুং তার কর্মক্ষেত্র হুনান প্রদেশে শরৎকালীন ফসল তোলার পূর্বে এক কৃষক বিদ্রোহ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। হুনানের পার্শ্ববর্তী প্রদেশ কিয়াংসির প্রধান শহর নানচাঙ-এ আরেক কমিউনিষ্ট নেতা আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মোটামুটি সফল হয়। এ বাহিনী সদম্ভে ক্যান্টেনের দিকে অভিযান চালাতে গিয়ে চীনের তৎকালীন কমিউনিষ্ট বিরোধী প্রেসিডেন্ট চিয়াঙ কাইশেকের বাহিনীর নিকট পরাজয় বরণ করে। নানচাঙ কয়েক দিনের জন্যে কমিউনিষ্ট পার্টির ফৌজের অধীনে থাকলেও ক্যান্টেনের অভিযানে পরাজিত হয়ে একেকজন একেক দিকে পালিয়ে যায়। হোলাঙ সাংহাইতে, চৌ-এন লাই হংকং-এ, মাওসেতুং তার অবশিষ্ট সৈন্য বাহিনী নিয়ে হুনান আর কিয়াংশি প্রদেশের সীমান্তবর্তী পার্বত্য অরণাঞ্চল চিঙ্খানশান এ পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। কিছুদিন পর চু-তে এখানে এসে মিলিত হয় মাওসেতুং এর সাথে। এদিকে এ বৎসরটি শেষ হওয়ার পূর্বেই কমিন্টার্ণ চীনের এখানে ওখানে কয়েকটি সোভিয়েত প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সোভিয়েত বলতে কমিউনিষ্টদের ভাষায় একটি ভুখন্ড, যেখানে কমিউনিষ্টরা তাদের কথিত সাম্যবাদের নীতিতে দেশটাকে শাসন করে অর্থাৎ সেখানে উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থা হবে জমিদার বা কারখানা মালিক ও কৃষক-মজদুরের তথাকথিত যৌথ স্বার্থে। জমিদার বা কারখানা মালিকরা এ ব্যবস্থা মেনে না নিলে পুলিশ ও মিলিটারী দিয়ে তাদের বাধ্য করা হবে। কারণে কমিউনিষ্টরা সোভিয়েত প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে নিজস্ব ফৌজ বা গণফৌজ তৈরী করতে সচেষ্ট হয়। প্রথম সোভিয়েত প্রতিষ্ঠা হয়েছিল কোয়াংতুং প্রদেশের হাই-লু-ফেং সোভিয়েত। এর নেতা ছিল পেং পাই। প্রায় সাত-আট লক্ষ কৃষকদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল এ সোভিয়েত কিন্তু এক বছর না যেতেই ১৯২৮ সালের মার্চে তাকে নির্মূল করে ফেলা হয়। সেক্রেটারী জেনারেলের পদ- ত্যাগ করে চু-চিউ পাই মস্কো চলে যায়। দলের নেতৃত্বভার গ্রহণ করে লি-লি সান। তার প্রধান সহকারী নিযুক্ত হয় চৌ এন লাই। তিন বছর এর মধ্যেই ব্যাপক আকারের বিপ্লব কর্মসূচী হাতে নেয় লিলি সান। তার আশা ছিল এ বিপ্লব শুধু চীনেই নয় বরং তা হবে সমগ্র বিশ্বে এবং এটাই হবে চুড়ান্ত বিপ্লব এবং বিশ্বের শেষ এবং চুড়ান্ত শ্রেণী সংগ্রাম। ১৯৩০ সালের জুনে লি- মাওসেতুং আর চু-তের অধীনস্ত গণফৌজ নিয়ে পার্শ্ববর্তী কারখানা আছে এমন শহরগুলো বিশেষ করে উহান আর হুনান প্রদেশের রাজধানী চাংশা দখল করে নেয়ার জন্যে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে হুকুমনামা জারী করে। কিন্তু গণফৌজ সে যুদ্ধে পরাজিত হয়। পেং তে হুয়ির পঞ্চম বাহিনী চাংশা দখল করেও স্থায়িত্ব পায়নি। ফলে পরাজিত বাহিনীর অবশিষ্ট ফৌজ নিয়ে মাওসেতুং এবং চুতে পুনরায় পর্বত কন্দরে পালিয়ে যায়। ১৯৩১ সালের গোড়ার দিকে লিলিসানকে সরে দাঁড়াতে হল নেতৃৃত্বের পদ থেকে। পার্টির নতুন নেতৃত্ব গ্রহণ করে মস্কো ফেরৎ ছাত্রদল, যারা ‘অষ্টবিংশতিবলশেভিক’ নামে পরিচিত। এ দলের তিন জন ছিল চীনা বিপ্লবী। এদের ছদ্ম নাম যথাক্রমে- ওয়াং মিং, পে-কু এবং লো ফু। দলের নেতা ছিল ওয়াং ফু। কিন্তু তার নীতিতে কার্যকর হলনা কিছুই। পার্টির ভিতর হতাশা নেমে এল। শহরাঞ্চলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে হতাশা নেমে এলেও চিঙ্খানশান পার্বত্য ভূখন্ডের গভীরে তিন বন্ধু মাওসেতুং, চুতে আর পেনতে হুয়ি অন্যভাবে কাজ করে যাচ্ছিল। চিঙ্খানশানের কিয়াংশি সোভিয়েতঃ হুনান আর কিয়াংশি প্রদেশের সীমান্তে চিঙ্খানশান একটা অরণ্য পর্বত পরিধিতে প্রায় দেড়শ মাইল বিস্তৃত। পাইন আর বাঁশ ঝাড়ের জঙ্গল, নেকড়ে, বুনো শুয়োর আর চিতা বাঘের আড্ডা। চম্বল অরণ্যের মতো এখানেও যুগে যুগে আশ্রয় নিয়েছে ডাকাতের দল। ১৯২৭ সালের শেষদিকে পরাজিত ভগ্নহৃদয় সৈন্যদলের ভগ্নাংশ নিয়ে মাওসেতুং ঐ জঙ্গলে এসে আশ্রয় নেয়। তখন তার সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র এক হাজার। হুনান এর কৃষক বিদ্রোহের ব্যর্থতা, নানচাঙ এর পতন, ক্যান্টেনের চুড়ান্ত পরাজয় আর পার্টি থেকে মাওসেতুং এর বহিস্কার ইত্যাদি সব মিলিয়ে মাও এর অবস্থা শোচনীয়। তবুও হতাশ না হয়ে অদম্য স্পৃহা আর মনোবল নিয়ে ডাকাত দলের সাথে সমঝোতা করে ঐ অরণ্যেই একটা সোভিয়েত গড়ে তুলবার চিন্তায় বিভোর হল মাও। কেন্দ্রীয় কমিটির ভৎসনাকে উপেক্ষা করেই মাও ভাব জমিয়ে তুলল ছয়’শ জন সদস্য বিশিষ্ট ডাকাত দলের সর্দারের সাথে। ছয় মাস পরে ১৯২৮ এর বসন্তকালে মাও এর সাথে নয় শত সৈন্য আর চেনয়ি ও লিন পিয়াও নামের দু’জন সহকারী সহ হাজির হয় চুতে। একই বছরে হুনান এর কৃষক নেতা পেনতেহুয়ি হাজারখানিক নিজস্ব সৈন্য নিয়ে এসে মিলিত হয় তাদের সাথে। তিন বন্ধুর মিলিত বাহিনীর সাথে ডাকাত দল আর স্থানীয় কৃষকদের সমন্বয়ে মোটামুটি একটা সৈন্যদল গঠিত হল। সেই সাথে মাও তার নয়া যুদ্ধনীতি প্রবর্তন করে। কিয়াংশি জঙ্গলে যখন এসব ঘটনা ঘটছে, বহিঃচীন তখন জাপানের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। জাপান চীনের মাঞ্চুরিয়া দখল করে নেয়ায় চীনের জনগণ জাপান বিরোধী মনোভাব ব্যক্ত করলে চিয়াঙ জাপানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং উল্টোভাবে জাপান বিরোধী আন্দোলন দমনে সক্রিয় হয়ে উঠে। চীনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট চিয়াঙ কাইশেক এরপর ঐ কিয়াংশি সোভিয়েতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যে পর পর কয়েকটি অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়। অভিযান পরিচালিত হয় ১৯৩০ সালের ডিসেম্বরে, দ্বিতীয়বার ১৯৩১ এর বসন্তকালে। এ অভিযানকালে গণফৌজ চিয়াঙ-এর বিশ হাজার সৈন্যকে বন্দী করে তাদের সব আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে নেয়। জেনারালেসিমো চিয়াঙ কাইশেক তৃতীয় অভিযান পরিচালনা করতে নিজেই এসে আস্তানা গাড়ে, গণফৌজের দশগুণ সৈন্য সমাবেশ করে এবারও ব্যর্থ হয়। মাও এবং চু-র গেরিলা যুদ্ধনীতিতে চিয়াঙ এর দুটি বিগ্রেড আত্মসমর্পন করে। বন্দী হয় বিশ হাজার সৈন্য। সেই সাথে তাদের বিশ হাজার রাইফেল এবং কয়েকশ মেশিনগান। গণফৌজের সৈন্য সংখ্যা তখন দুই লক্ষ। তাদের আছে প্রায় দেড় লাখ রাইফেল। জাপানের সাথে যুদ্ধ বাঁধার ফলে ১৯৩২ সালে চিয়াঙ চতুর্থবার অভিযান পরিচালনা করেও মাও বাহিনীকে পর্যদুস্ত করতে ব্যর্থ হয়। এরই মধ্যে ১৯৩২ সালে ওয়াং মিং অবসর নিয়ে ফিরে যায় রাশিয়ায়। সেক্রেটারী জেনারেল পো-কু তার সহকারী চৌ-এন লাই এবং একজন জার্মান অটোব্রন, যার ছদ্মনাম লি তে, চিয়াঙ এর চতুর্থ বারের ব্যর্থতায় সাহস বেড়ে গেল ওদের। এক লক্ষ গণফৌজ নিয়ে আশ-পাশের শহরাঞ্চলগুলো দখলের হুকুম জারী করল। মাওসেতুং এ নীতির ঘোর বিরোধী থাকার ফলে তার দলের অনেক অনুচরকেই তখন বহিস্কার করা হয়। কিন্তু পো কু আর লি তের আশা সফল হলনা। ঘটনা প্রবাহিত হল ভিন্ন দিকে। চিয়াঙ জাপানের সঙ্গে আতাত করবে না কমিউনিষ্টের সঙ্গে আতাত করে বহিঃশত্রু জাপানকে তাড়াবে তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল। অবশেষে জাপানের সাথে মামুলী ধরণের একটা সন্ধি করে গৃহশত্রুকে সবংশে নির্মূল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে পঞ্চম এবং শেষ অভিযান পরিচালনা করতে গণফৌজকে নির্মূলীকরণে পশ্চিমা শক্তির দেয়া পাঁচ কোটি ডলার মূল্যের গম, আগ্নেয়াস্ত্র এবং চারশ বিমান আর দশ লক্ষ সৈন্যের বিরাট বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয় কিয়াংশি সোভিয়েতের বহিঃদ্বারে। রণনীতি বদলে চিয়াঙ এবার চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলল লাল এলাকা। চিয়াঙ সম্মুখ যুদ্ধ না করে সমস্ত এলাকা ঘিরে রাতারাতি পাকা সড়ক নির্মাণ করে রাস্তার উপর সাজোয়া গাড়ী সাজিয়ে মেশিনগান দিয়ে সৈন্যদের বসিয়ে রাখে। ছেলে-মেয়ে, বাচ্চা-বুড়ো যে কেউ ঐ জঙ্গল ছেড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলে দেখা মাত্রই গুলি করার নির্দেশ জারী হলো। অতঃপর পরিখা খনন করে কাঁটা তারের বেড়া দিল চার পাশে। যাতে কেউ জঙ্গল ছেড়ে এপারে আসতে না পারে। ঐ ম্যালেরিয়া অধ্যুষিত পার্বত্য অরণ্যে এক গ্রেন কুইনিন প্রবেশের ক্ষেত্রেও কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অবস্থা পর্যবেক্ষণ পূর্বক এ বিপদ থেকে বাঁচার জন্যে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বুহ্য ভেদ করে বেরিয়ে যাওয়ার জন্যে মাও এবং চু পরামর্শ দিয়েছিল সেনাপতিকে। কিন্তু জার্মান সেনাপতি লি তে-তা অগ্রাহ্য ১৯৩৪ সালের এপ্রিলে লি তে মাও এর যুদ্ধনীতি অগ্রাহ্য করে ফুকিয়েন-কিয়াংশি সীমান্তে কোয়াংচাঙ এর রণক্ষেত্রে সম্মূখ যুদ্ধে মর্মান্তিকভাবে পরাজিত হয়। এতে গণফৌজের চার হাজার সৈন্য নিহত এবং বিশ হাজার সৈন্য আহত হয়। অবশেষে বাধ্য হয়ে তাদের ফিরে আসতে হল অবরুদ্ধ জঙ্গলে। এতদিনে পলিটব্যুরো মাওয়ের মত মেনে নিলো। সোভিয়েত ছেড়ে সদলবলে পালানোর জন্যে প্রস্তুত হলো। আর মাওসেতুং এর কথানুযায়ী কমিউনিষ্ট তথা লাল ফৌজ বা গণ ফৌজ বাহিনীর এই পলায়ণের কাহিনীই ইতিহাসে লংমার্চ নামে অভিহিত। ১৬ইঅক্টোবর ১৯৩৪ সালে শুরু হলো এই কথিত মহাযাত্রা লংমার্চ। পালানোর কৌশল হিসেবে তারা চীনের দক্ষিণ-পূর্ব কিয়াংশি থেকে পশ্চিম দিক দিয়ে ঘুরে প্রায় (৬-৮) হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে চীনের উত্তর পশ্চিম সেনসি প্রদেশে পৌঁছে। পথে তাদের ১৮টি পাহাড়ের সারি ও ২৪টি নদী অতিক্রম করতে হয়। মাওসেতুং এর নেতৃত্বে কমিউনিস্টদের এই দীর্ঘ বিপদসঙ্কুল পথ পলায়নের কাহিনীই ইতিহাসে লংমার্চ নামে অভিহিত বা মশহুর। চিত্র: মাওসেতুং লংমার্চ ম্যাপ- ১৯৩৪ সাল · মাও জেডোঙের(মাও সেতুং) পলায়ন এবং এর সম্পর্কে উদ্ধৃতি · "লংমার্চ " পালন এবং এ শব্দ ব্যবহার ও ইসলাম উনার দৃষ্টিতে হারাম · বিধর্মীদের সাথে অমিল এবং তাদের তৈরীকৃত জিনিস ব্যবহার প্রসঙ্গে


পর্ব-০২

১৯৩৪ সালের ১৫ই অক্টোবর প্রায় ১লাখ ৩৫জন লোক নিয়ে মাওসেতুং এই পলায়ন অভিযান আরম্ভ করে। এদের মধ্যে ৮৫ হাজার ছিল কমুনিস্ট সৈন্য, ১৫ হাজার বেসামরিক ব্যক্তি ও ৩৫ জন মেয়েলোক। পলায়নের সময় একদিকে নতুন সৈন্য অন্তর্ভূক্তির ব্যর্থতা অপরদিকে সমরাস্ত্র, খাদ্য, চিকিৎসা ইত্যাদির অভাবে তাদের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়ে। যার ফলে তারা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং প্রায় ৮ হাজার লোক জীবিত অবস্থায় ১৯৩৫ সালের অক্টোবরে সেনসি প্রদেশে পৌঁছে। উল্লেখ্য এর মধ্যে অবশ্য অনেককে ইচ্ছে করেই বিভিন্ন গ্রামে রেখে আসা হয়, সে অঞ্চলে বিপ্লবের বীজ বপন করতে। অবশেষে তৎকালীন চীনের প্রেসিডেন্ট চিয়াং কাইশেকের কাছেও খবরটা পৌঁছল। মাওসেতুং-এর নেতৃত্বে কমিউনিষ্টরা উত্তর-পশ্চিম চীনের সেনসিতে মিলিত হয়েছে। ১৯৩৬ সালের অক্টোবরে চিয়াং কাইশেক স্বয়ং এল সেনসিতে। সব সেনাপতিকে ডেকে কমিউনিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযানের কথা বললো চিয়াং কাইশেক। কিন্তু এদিকে তখন চীনের বহিঃশক্র জাপানের আক্রমণ তুঙ্গে। তাই মার্শাল চ্যান্ড সহ কতিপয় সেনাপতি কমিউনিষ্টদের সাথে সন্ধি করে বহিঃশত্রু জাপানের বিরুদ্ধে একযোগে আক্রমণের পরামর্শ দেয়। কিন্তু চিয়াং কাইশেক তাতে রাজী না হলেও ছাত্র জনতার চাপ এমনকি মার্শাল চ্যান্ড এর মত কতিপয় সেনাপতির কৌশলে চিয়াং কাইশেক এক পর্যায়ে বন্দী হয়ে অবশেষে মাওসেতুং এর কমিউনিষ্ট পার্টির বিরুদ্ধে আক্রমণ বাদ দিয়ে বরং তার সাথে মিলিত হয়ে জাপানের বিরুদ্ধে লড়তে সম্মত হয়। আর এদিকে চিয়াং কাইশেকের সাথে মিলিত হওয়ার পেছনে মাও-এর দর্শন ছিল যে, জাপানীদের থেকে রাজনৈতিক ভাবে স্বাধীনতা লাভের জন্য তখন চিয়াং কাইশেকের সাথে মিলিত হয়ে যুক্তফ্রন্ট করা দরকার। কিন্তু মাওসেতুং বিশ্বাস করত যে এ যুক্তফ্রন্ট বেশী দিন চলবেনা। কিন্তু ঐভাবে মাওসেতুং চিয়াং কাইশেকের সৈন্যদলের ভিতর ঢুকে পড়তে চেয়েছিলো। তার সে চেষ্টা সফল হয়েছিল। আর এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৯ সালে আরেক বিরোধে মাওসেতুং জয় লাভ করে, চিয়াং কাইশেক পদত্যাগ করে এবং ১৯৫০ সালে চিয়াং কাইশেক সপরিবারে ফরমোসায় পলায়ন করলে পুরো চীনে মাওসেতুং এর কমিউনিষ্ট পার্টি কমিউনিষ্ট শাসন জারী করে। কারণ মাওসেতুং এর কথানুযায়ী তার লংমার্চ যদি না করা হত তাহলে কিয়াংশি প্রদেশেই সমস্ত কমুনিষ্টদের চিয়াং কাইশেকের সেনাবাহিনীর হাতে মৃত্যুবরণ করতে হত। কিন্তু মাওসেতুং-এর লংমার্চের কারণেই তারা প্রাণে বেচেঁছে এবং পরিণামে কমিউনিষ্ট মতবাদও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আর মাওসেতুং নিজেও জানে যে কমিউনিষ্ট মতবাদ প্রতিষ্ঠার পেছনে এই লংমার্চের নেপথ্যে ছিল তার একক কৃতিত্ব। (কমিউনিষ্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাওসেতুং সেনসিতে পৌঁছার দুই মাস পরে ২৭ শে ডিসেম্বর ১৯৩৬ সালে লংমার্চের স্মৃতিচারণ করে যা লিখে তা তার Selected works of Mao Ise tung vol, 1, page ১৬১-১৬২ এ সংকলিত হয়েছে। যার বর্ণনা নিম্নরূপঃ চেয়ারম্যান মাও জেডোঙের(মাও সেতুং) উদ্ধৃতিঃ “ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহে লংমার্চ এ ধরণের প্রথম ঘটনা। একটি ইস্তেহার, একটি প্রচার বাহিনী, একটি বীজ বপনকারী যন্ত্র। পানগু যখন স্বর্গ থেকে মর্ত আলাদা করে দেয় এবং তিন রাজা ও পাঁচ সম্রাট রাজত্ব করত সেই থেকে ইতিহাস কি কখনো আমাদের মত একটি লংমার্চ প্রত্যক্ষ করেছে? দীর্ঘ বারো মাস বেশ কিছু বিমান আকাশ থেকে আমাদের ওপর নজর রেখেছে এবং বোমা ফেলেছে। মাটিতে কয়েক শত-সহস্র মানুষের এক বিশাল বাহিনী আমাদের ঘেরাও, অনুসরণ, গতিরোধ করেছে এবং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, পথে আমরা অবর্ণনীয় কষ্ট এবং বিপদের মোকাবেলা করেছি; তথাপি দু’পা ব্যবহার করে আমরা এগারটি প্রদেশের দৈর্ঘ্যে এবং প্রস্থে বিশ হাজার লী’র বেশী দূরত্ব অতিক্রম করেছি। জিজ্ঞেস করতে চাই ইতিহাসে কি কখনো এ ধরণের লংমার্চের ঘটনা ঘটেছে? না, কখনোই নয়। লংমার্চ একটি ইস্তেহার। লংমার্চ গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে লাল ফৌজ বীরদের বাহিনী, সাম্রাজ্যবাদীরা এবং তাদের পা চাটা কুকুর জিয়াং জিয়েশি (চিয়াং কাই-শেক) ও তার দোসররা নপুংসক, আমাদের ঘেরাও, অনুসরণ, প্রতিরোধ এবং গতিরোধে তাদের চরম ব্যর্থতার কথাও লংমার্চ জানিয়ে দিয়েছে। লংমার্চ একটি প্রচারণী শক্তিও। এগারোটি প্রদেশের প্রায় ২০ কোটি জনগণকে লংমার্চ দেখিয়েছে লাল ফৌজের পথই তাদের মুক্তির একমাত্র পথ। লংমার্চ ছাড়া ব্যাপক জনগণ স্বল্প সময়ে কিভাবে লাল ফৌজের বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে পারতেন? লংমার্চ বীজ বপনকারী যন্ত্রও। এগারোটি প্রদেশে লংমার্চ যে অসংখ্য বীজ বুনেছে, তা মুঞ্জরিত হবে, পাতা গজাবে, বিকশিত হবে, ফল ধারণ করবে এবং ভবিষ্যতেও ফসল দেবে। এক কথায় আমাদের জন্য বিজয় এবং শত্রুর জন্য পরাজয়ের মধ্য দিয়ে লংমার্চ শেষ হয়েছে। কারা লংমার্চকে বিজয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছে? কমিউনিষ্ট পার্টি। কমিউনিষ্ট পার্টি ছাড়া এ ধরণের একটি লংমার্চ কল্পনাই করা যেতনা। চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি, এর নেতৃত্ব, ক্যাডার এবং সদস্যরা কোন প্রতিকূলতা অথবা কষ্টকে ভয় পায়না। বিপ্লবী যুদ্ধ পরিচালনায় আমাদের দক্ষতা সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন তুললে সুবিধাবাদের আবর্তে নিক্ষিপ্ত হবে। লংমার্চ শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে এক নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। যিলুওযেনের যুদ্ধে কেন্দ্রীয় লাল ফৌজ এবং উত্তর পশ্চিমের লাল ফৌজ মৈত্রীবদ্ধ হয়ে লড়াই করে সেনসী-গানসু সীমান্ত এলাকার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতক জিয়াং জিয়েশি-এর “ঘেরাও এবং দমন” নীতিকে চূর্ণ করে দিয়েছে এবং পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মসূচীর অর্থাৎ উত্তর পশ্চিম চীনে বিপ্লবের জাতীয় হেডকোয়ার্টারের ভিত্তি স্থাপন করেছে।” কমিউনিষ্ট মতবাদ প্রতিষ্ঠার মূলে এই লংমার্চের একক কৃতিত্বের দাবীদার মাওসেতুং ও তার লংমার্চ সম্পর্কে বিশ্বকোষ গুলোতেও বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে Encyclopaedia Britannica তে লেখা হয়েছেঃ LONG MARCH: (1934-35), the 6,000-mile (10,000-kilometre) historic trek of the Chinese Communists, Which resulted in the relocation of the Communist revolutionary base from Southeast China to Northwest China and in the emergence of Mao Zedong as the undisputed party leader. Fighting National-ist forces under Chiang Kai-shek throughout their journey. the Communist troops crossed 18 mountain ranges and 24 rivers to reach the norhwestern province of Shensi. The heroism Attributed to the Long March inspired maû young Chinese to join th Chinese Communist Party during the late 1930s and early 1940s. Between 1930 and 1934 Chiang Kai-shek launched a series of five military encirclement campaigns against the Chinese Communists in an attempt to annihilate their base area (the Kiangsi Soviet) on the kiangsi- Fukien border in Southeastern China. The Communists Successfully fought off the first four campaigns using tactics of mobile infiltration and guerrilla warfare developed by Mao. In the fifth campaign Chiang mustered about 700,000 troops and established a series of cement blockhouses around the Communist positions. The Chinese Communist Central Committee, which had removed Mao from the leadership early in 1934, Abandoned his guerrilla warfare strategy and used regular positional warfare tactics against the better-armed and more numerous Nationalist forces. As a result the Communist forces suffered heavy losses and were nearly crushed. On Cot. 15, 1934, the remaining 85,000 troops, 15,000 administrative personnel, and 35 women broke through the Nationalist lines at their weakest points and fled westward. Mao, at the time of the Communists, departure, was not in control of events; Zhu De was the commander of the army, and Zhou Enlai was the political commissar of party. The first three months of the march were disastrous for the Communists: subjected to constant bombardment form ChiangÕs air force and repeated attacks from his ground froops, they lost more than half of their army. Morale was lwo when they arrived in Tsun-i, in the southwestern province of Kweichow, but at a conference in Tsun-i in January 1935 Mao was able to gather enough support to establish his dominance of the party. The march then headed toward Northwest China, near the safety of the Soviet border and close to the territory occupied by the Japanese in northeastern china. In June 1935 a force under Chang Kuo-tÕao, a longtime communist leader, joined the main army, and at Maoerh-kai in western syechwan a power struggle ensued between Mao and Chang. ChangÕs group, accompanied by Zhu De, headed to ward the extreme southwestern part of china. The main body under Mao proceeded to ward northern shensi, where the Communist leaders Gao Gang and Liu Zhidan had built up another Soviet area. Mao arrived at this destination is October 1935 along with only about 8,000 survivors. Along the route some Communists had left the march to mobili“e the peasantry; but most of the missing had been eliminated by fighting, disease, and starvation. Among the missing were MaoÕs two small children and his younger brother, Mao Zetan. MaoÕs troops joined the local Red Army contingent of 7,000 men, and other unlts (including that of Zhu De) swelled their total strength by late 1936 to about 30,000 troops. In December 1936 the Communists moved to the nearby district of Yen-an in Shensi, where they remained throughout the war with the Japanese. The Long March decisively established MaoÕs leadership of the Chinese communist Party, and it enabled the embattled Communists to reach a base area beyond the direct control of the Nationalists. From their base at Yen-an the Communists grwe in strength and eventually defeated the Nationalists in the struggle to control mainland china. Abyiƒc- Encyclopedia Amaricana, World Book, Lexicon universal Encyclopedia, Macmilan Encyclopedia, সহ আরো অনেক বিশ্বকোষ এবং লংমার্চের ইতিহাস সম্বলিত পুস্তকে এই কাহিনী বর্ণিত রয়েছে।

পর্ব-০৩

ইসলামের আলোকে লংমার্চের উপরোক্ত ইতিহাস আলোচনা করলে বিষয়টি দুভাবে মূল্যায়িত হতে পারেঃ (ক) প্রথম দিক হচ্ছে- (১) লংমার্চ করার অর্থ মাওসেতুংকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা। অথচ আল্লাহ্ পাক বলেন, لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة. অর্থঃ- “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুজুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহ্যাব/২১) (২) লংমার্চ কমিউনিষ্ট নেতা মাওসেতুং-এর একক আবিস্কার। সুতরাং লংমার্চ করা তাকেই অনুসরণ করা। অথচ আল্লাহ্ পাক বলেন, اطيعوا الله ورسوله ان كنتم مؤمنين. অর্থঃ- “যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাক তাহলে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করো।” (সূরা আনফাল/১) (৩) লংমার্চ করার অর্থ কমিউনিজমকে সমর্থন করা ও বাতিল মতবাদের সাহায্য নেয়া। অথচ আল্লাহ্ পাক বলেন, ولاتعاونوا على الاثم والعدوان. অর্থঃ- “তোমরা পাপ ও শত্রুতার মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করনা।” (সূরা মায়িদা/২) (৪) লংমার্চ করার অর্থ কমিউনিষ্ট আইন-কানুনকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা উদ্যোগ নেয়া বা চাওয়া। অথচ আল্লাহ্ পাক বলেন, افحكم الجاهلية يبغون ومن احسن من الله حكما لقوم يوقنون. অর্থঃ- “তোমরা কি জাহিলিয়াতের হুকুম-আহকাম, নিয়ম-কানুন চাও? অথচ আল্লাহ্ পাক থেকে উত্তম হুকুম দাতা ও আইন-কানুন প্রণেতা কে রয়েছেন বিশ্বাসীদের জন্য।” (সূরা মায়িদা/৫০) (৫) ইসলামকে অপূর্ণ মনে করা। অথচ আল্লাহ্ পাক বলেন, اليوم اكملت لكم دينكم واتممت عليكم نعمتى ورضيت لكم الاسلام دينا. অর্থঃ- “আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে কামিল বা পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং নিয়ামতকে তোমাদের উপর পূর্ণ করে দিলাম এবং দ্বীন ইসলামকে তোমাদের জন্য মনোনীত করে দিলাম।” (সূরা মায়িদা/৩) (৬) হক্ব ও নাহক্বকে মিশ্রিত করা। অথচ আল্লাহ্ পাক বলেন, ولا تلبسوا الحق بالباطل. অর্থঃ- “তোমরা হক্বকে নাহক্বের সাথে মিশ্রিত করোনা।” (সূরা বাক্বারা/৪২) (৭) ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম তালাশ করা। অথচ আল্লাহ্ পাক বলেন, من يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخسرين. অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে তার থেকে তা কখনই গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” (সূরা আলে ইমরান/৮৫) (৮) লংমার্চ করলে গণফৌজ, লালফৌজ, চীনা কমিউনিষ্ট তথা মাওসেতুং বর্ণিত লংমার্চের মধ্যে বিশ্ব মুক্তির বীজ লুকিয়ে আছে এ কথা স্বীকার ও প্রমাণ করা। অথচ আল্লাহ্ পাক বলেন, افغير دين الله يبغون وله اسلم من فى السموت والارض طوعا وكرها واليه يرجعون. অর্থঃ- “তোমরা কি আল্লাহ্ পাক-এর দ্বীন (ইসলাম) ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম তালাশ কর। অথচ তাঁর জন্য আসমান-যমীনের সবকিছু ইচ্ছা এবং অনিচ্ছায় সমর্পিত রয়েছে এবং সবকিছু তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে।” (সূরা আলে ইমরান/৮৩) (খ) আর দ্বিতীয় দিক হচ্ছে- (১) লংমার্চ না হলে চীনা কমিউনিষ্টরা সিয়েনসি প্রদেশ থেকে বের হতে পারতো না। সুতরাং কমিউনিষ্ট মতবাদও প্রতিষ্ঠা পেতনা। অথচ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, من سن فى الاسلام سنة سيئة كان عليه وزرها ووزر من عمل بها. অর্থঃ- “যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামের মধ্যে কোন বদ প্রথা প্রচলন করলো এর গুণাহ্ তার উপর বর্তাবে এবং যারা উক্ত বদ প্রথা আমল করবে তার গুণাহ্ও তার উপর বর্তাবে।” (মুসলিম, মিশকাত) (২) লংমার্চ সম্মুখ জয়ের কাহিনী নয় বরং পিছন দিকে পলায়নের কাহিনী বা প্ররিক্রমা। অথচ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, من وقر صاحب بدعة فقد اعان على هدم الاسلام. অর্থঃ- “যে ব্যক্তি কোন বিদ্য়াতী বা গোমরাহ্কে সম্মান করল সে যেন ইসলাম ধ্বংসের কাজে সাহায্য করল।” (মিশকাত শরীফ) (৩) লংমার্চ মাওসেতুং, গণফৌজ, লালফৌজ তথা কমিউনিষ্টদের কৃতিত্ব ও বীরত্বগাঁথাকে প্রচার ও প্রকাশ করা। অথচ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, اذا مدح الفاسق اهتز له العرش. অর্থঃ- “যখন কোন ফাসিক-ফুজ্জার বা কাফিরের প্রশংসা করা হয় তখন তার কারণে আল্লাহ্ পাক-এর আরশ কাঁপে।” (মিশকাত শরীফ) লংমার্চ শব্দ ব্যবহার করা জায়েয নেইঃ উপরোক্ত পর্যালোচনার পর আমরা লংমার্চ শব্দ ব্যবহার করা জায়েয কিনা তা তাহকীক্ব করব। লংমার্চ শব্দ ব্যবহার করা জায়েয নেই। আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন, يايها الذين امنوا لاتقولوا راعنا وقولوا انظرنا واسمعوا وللكفرين عذاب اليم. অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ তোমরা রঈনা বলোনা উনজুরনা বল এবং শ্রবণ কর (বা শুনতে থাক) আর কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (সূরা বাক্বারা/১০৪) এ আয়াতের শানে নুযুলে বলা হয়, ইহুদীরা হুজুরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেবার জন্য রঈনা শব্দ ব্যবহার করত যার একাধিক অর্থ। একটি অর্থ হলো- ‘আমাদের দিকে লক্ষ্য করুন’ যা ভাল অর্থে ব্যবহৃত হয় আর খারাপ অর্থে ‘হে মূর্খ’, ‘হে মেষ শাবক’ এবং হিব্রু ভাষার একটি বদ্দোয়া। ইহুদীরা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রঈনা বলে সম্বোধন করত। যাতে প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল খারাপ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করা। অন্যান্য ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ রঈনা শব্দের ভাল অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করে হুজুর পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করলে তখন ইহুদীরা খারাপ অর্থ চিন্তা করে হাসাহাসি করত। এতে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কষ্ট পেতেন তবুও কিছু বলতেন না। কেননা, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহী ছাড়া কোন কথা বলতেন না। যেমন, কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, وما ينطق عن الهوى ان هو الاوحى يوحى. অর্থঃ- “তিনি (হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওহী ব্যতীত নিজের থেকে মনগড়া কোন কথা বলেন না।” (সুরা নজম/৩,৪) এর ফলশ্রুতিতে আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফের আয়াত নাযীল করে রঈনা শব্দের বদলে উনজুরনা শব্দ ব্যবহার করতে বললেন। কারণ রঈনা শব্দ ভাল খারাপ উভয় অর্থে ব্যবহৃত হলেও উনজুরনা শব্দ শুধুমাত্র ভাল অর্থেই ব্যবহৃত হত। তাই যে সকল শব্দ ভাল মন্দ উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়, সে সকল শব্দের পরিবর্তে উপরোক্ত আয়াত মোতাবিক ওটার সমার্থক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করতে হবে, যা শুধুমাত্র ভাল অর্থেই ব্যবহৃত হয়। তাই লংমার্চ শব্দের দু’টি অর্থ- আভিধানিক ও ব্যবহারিক থাকলেও, আর আভিধানিক অর্থে লংমার্চের অর্থ লম্বা সফর হলেও এ অর্থে লংমার্চ কখনও ব্যবহৃত হয়নি বরং তার ব্যবহারিক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ব্যবহারিক অর্থে নাস্তিকদের পলায়নের ও নাস্তিক্যবাদের প্রতিষ্ঠার এক বিশেষ পদ্ধতিকে বুঝায় এবং এই অর্থেই এটা মশহুর। তাই লংমার্চ যেহেতু ভাল ও মন্দ উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হতে পারে। তাই কুরআন শরীফের উপরোক্ত আয়াত শরীফ অনুযায়ী এই শব্দ ব্যবহার করা যাবেনা। কারণ লংমার্চ সর্ব প্রথম বিধর্মী নাস্তিক্যবাদের ধারক ও বাহক মাওসেতুং কর্তৃক উদ্ভাবিত হয়। লংমার্চ করা জায়েয নেইঃ আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন, ان الدين عند الله السلام. অর্থঃ-“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাকের নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হলো ইসলাম।” (সুরা আলে ইমরান/১৯) আর এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ্ পাক অন্য আয়াত শরীফে ইরশাদ করেছেন, ومن يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخسرين. অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (নিয়ম-নীতি, অন্য ধর্ম) তালাশ করে, তা কখনই তার থেকে গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” (সূরা আলে ইমরান/৮৫) আর এ আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, وعن جابر عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اتاه عمر فقال: انا نسمع احاديث من يهود تعجبنا افترى ان نكتب بعضها فقال امتهوكون انتم كما تهوكت اليهود والنصارى؟ لقد جئتكم بها بيضاء نقية ولو كان موسى حيا ماوسعه الا اتباعى. অর্থঃ- হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, আমরা ইহুদীদের অনেক ধর্মীয় কাহিনী, কথা-বার্তা, নিয়ম-কানুন ইত্যাদি শ্রবণ করে থাকি যা আমাদের নিকট ভাল লাগে। আমরা এর থেকে কিছু লিখে রাখতে পারবো কি? তখন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমরাও কি তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্থ বা বিভ্রান্ত রয়েছ? যেভাবে ইহুদী-নাসারাগণ বিভ্রান্ত রয়েছে? আল্লাহ্ পাক-এর কসম! আমি তোমাদের নিকট সম্পূর্ণ পরিষ্কার ও পরিপূর্ণ দ্বীন এনেছি। হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম যদি এখন থাকতেন, তাহলে তাঁকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।” (আহমদ, বায়হাক্বী, শোয়াবুল ঈমান, মিশকাত) পর্ব-০৪ বিধর্মদের সাথে অমিল রাখা শরীয়তের মুবারক নির্দেশঃ তাই আমরা দেখতে পাই ইহুদী-খ্রীষ্টান তথা বিধর্মীরা যে সকল আমল করত হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে সকল জিনিস স্বয়ং নিজেও অনুসরণ করতেন না এবং আমাদেরকেও কঠোরভাবে অনুসরণ না করার জন্য তাগিদ দিতেন। যেমন, ইহুদী-নাসারারা আশুরার একদিন রোযা রাখত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মুহম্মদীকে দুইদিন রোযা রাখতে বললেন। ইহুদী-নাসারারা দেরী করে ইফতার করত। এর পরিপ্রেক্ষিতে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণকে তাড়াতাড়ি ইফতার করতে বলেন। আবার ইহুদীরা শুধুমাত্র পাগড়ী ব্যবহার করত। এর পরিপ্রেক্ষিতে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টুপি ছাড়া পাগড়ী পরতে নিষেধ করেছেন এবং টুপীসহ পাগড়ী ব্যবহার করতে বলেছেন। দাড়ি ও মোঁচের ব্যাপারে মজুছী (অগ্নি উপাসক) ও মুশরিকদের বিরোধিতা করতে বলেছেন। যেমন, তারা দাড়ি কাটতো ও মোঁচ বড় করত। তাই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা দাড়ী বড় কর ও মোঁচ ছোট কর। ইত্যাদি প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ্ পাকের রসুল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের আস্তিক, নাস্তিক, ইহুদী-নাসারা, মজুছি-মুশরিক তথা বিজাতীয় বিধর্মীদের অনুসরণ না করে বরং খিলাফ করতে বলেছেন। কারণ, আল্লাহ্ পাক বলেন, هو الذى ارسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الدين كله وكفى بالله شهيدا. অর্থঃ- তিনিই (আল্লাহ্ পাক) তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ (পূর্বের) সমস্ত দ্বীনের উপর প্রাধান্য দিয়ে পাঠিয়েছেন। এক্ষেত্রে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ্ পাকই যথেষ্ট।” (সূরা ফাত্হ/ ২৮) আল্লাহ্ পাক আরো বলেন, قل ان هدى الله هو الهدى ولئن اتبعت اهواءهم بعد الذى جاء ك من العلم مالك من الله من ولى ولا نصير. অর্থঃ- “বলে দিন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর হিদায়েতই প্রকৃত হিদায়েত। আপনার কাছে সত্য ইল্ম (অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম) আসার পরও যদি আপনি তাদের নফসের বা মনগড়া নিয়ম-নীতির অনুসরণ করেন তবে আপনার জন্য আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী নাই বা পাবেননা।” (সুরা বাক্বারা/১২০) উপরোক্ত আয়াত শরীফ অনুযায়ী আমাদের কোন আমল করতে হলে বিধর্মী, বিজাতীয় বা নফসের কোন অনুসরণ করা যাবে না। বা তাদের থেকে কোন নিয়ম-নীতি গ্রহণ করা যাবে না কারণ তা আল্লাহ্ পাক বাতিল ঘোষণা করেছেন। শুধুমাত্র কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও কিয়াস অনুযায়ী আমল করতে হবে সেটাই নির্দেশ দিয়েছেন। বেদ্বীন ও বদ্দ্বীনদের অনুসরণ ও অনুকরণ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ليس منا من تشبه بغيرنا. অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমাদের ভিন্ন অন্য জাতির অনুসরণ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (তিরমিযী, মিশকাত) তিনি আরো বলেন, من تشبه بقوم فهو منهم. অর্থঃ- “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভূক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” (আবূ দাউদ, মুসনদে আহমদ) এই হাদীস শরীফ প্রসঙ্গে নিম্নলিখিত ঘটনা উল্লেখ করা যায়, হিন্দুস্থানে একজন জবরদস্ত আল্লাহ্ পাক-এর ওলী ছিলেন। যিনি ইন্তিকালের পর অন্য একজন বুযুর্গ ব্যক্তি স্বপে¦ তাকে দেখে জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহ্ পাক-এর ওলী, আপনি কেমন আছেন?” তখন সেই আল্লাহ্ পাক-এর ওলী জাওয়াবে বলেন, “আপাতত আমি ভালই আছি কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে। যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আমার ইন্তিকালের পর আমাকে ফেরেশ্তারা সরাসরি আল্লাহ্ পাক-এর সম্মুখে পেশ করেন। আল্লাহ্ পাক ফেরেশতাদের বলেন, “হে ফেরেশ্তাগণ! তোমরা কেন তাঁকে এখানে নিয়ে এসেছ”? ফেরেশ্তাগণ বলেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! আমরা তাকে খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাত করার জন্য নিয়ে এসেছি।” এটা শ্রবণ করে আল্লাহ্ পাক বললেন, “তাকে এখান থেকে নিয়ে যাও, তার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে। কেননা সে পূঁজা করেছে। এটা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং আমার সমস্ত শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগল। তখন আমি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট আরজু পেশ করলাম, “আয় আল্লাহ্ পাক! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো সব সময় আপনার এবং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফরমাবরদার ছিলাম। কখনও ইচ্ছাকৃত নাফরমানি করিনি এবং কখনো পুঁজা করিনি আর মন্দিরেও যাইনি।” তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, “তুমি সেইদিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন হিন্দুস্থানে হোলি পূঁজা হচ্ছিল। তোমার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে সমস্ত গাছ-পালা, তরু-লতা, পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ সবকিছুকে রঙ দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় তোমার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ যাচ্ছিল যাকে রঙ দেয়া হয়নি। তখন তুমি পান চিবাচ্ছিলে, তুমি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি পানের রঙীন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলে, “হে গর্দভ তোমাকে তো কেউ রঙ দেয়নি, এই হোলি পূঁজার দিনে আমি তোমাকে রঙ দিয়ে দিলাম।” এটা কি তোমার পূঁজা করা হয়নি? তুমি কি জান না, من تشبه بقوم فهو منهم. অর্থঃ- “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভূক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” সুতরাং তোমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে।” যখন আল্লাহ্ পাক এই কথা বললেন, তখন আমি লা-জওয়াব হয়ে গেলাম এবং ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে বললাম, “আয় আল্লাহ্ পাক! আমি এটা বুঝতে পারিনি।” কিছুক্ষণ পর আল্লাহ্ পাক বললেন, “হ্যাঁ তোমাকে অন্যান্য আমলের কারণে ক্ষমা করা হয়েছে।” বনী ইসরাঈল আমলের অনুরূপ আরও একটি ওয়াকেয়া তফসীরে উল্লেখ করা হয়। আল্লাহ্ পাক হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস্ সালাম-এর উপর ওহী নাযিল করলেন, হে আমার নবী! আপনার উম্মতের মধ্যে ১ লক্ষ লোককে ধ্বংস করে দেয়া হবে, যার মধ্যে ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত (গোমরাহ)। তখন হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস্ সালাম বললেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত তাই তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে কিন্তু বাকী ৪০ হাজার লোককে ধ্বংস করা হবে কেন?” তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, “যেহেতু তারা তাদের সাথে মিলা-মিশা ও ওঠা-বসা করে এবং সম্পর্ক রাখে আর গুণাহের কাজে বাধা দেয় না, তাই তাদেরকেসহ ধ্বংস করে দেয়া হবে।” উপরোক্ত আয়াত শরীফ, হাদীস শরীফ এবং তার ব্যাখ্যার দ্বারা এটাই সাবেত হলো যে, বিজাতীয় বিধর্মীদের কোন নিয়ম-নীতি, আমল-আখলাক ও সীরত-সূরত কোনটাই অনুসরণ-অনুকরণ করা যাবেনা। যদি কেউ করে তবে তার থেকে সেটা আল্লাহ্ পাক গ্রহণ করবেন না বা কোন সওয়াবও দেবেন না এবং আল্লাহ্ পাকের তরফ থেকে কোন মদদ পাবেনা। যার ফলে সে ইহকালে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং পরকালেও তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে যাদেরকে সে অনুসরণ করতো। কাজেই লংমার্চ কোন মতেই জায়েয নেই। বিধর্মীদের তৈরী দ্রব্য-সামগ্রী ব্যবহার করা জায়েয রয়েছে। সমরাস্ত্র ঃ বিধর্মীদের আকিষ্কৃত সমরাস্ত্র মুসলমানদের জন্য ব্যবহার করা জায়েয। কেননা কাফিররা হলো মুসলমানদের খাদিম, শুধু তাই নয় সমগ্র মখলুকাতকেই সৃষ্টি করা হয়েছে মুসলমানদের ফায়দার জন্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন, هو الذى خلق لكم ما فى الارض جميعا. অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক যিনি তোমাদের (ফায়দার) জন্য দুনিয়ার সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা বাক্বারা/২৯) হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, ان الدنيا خلقت لكم وانكم خلقتم للاخرة. অর্থঃ-“নিশ্চয়ই দুনিয়া তোমাদের (খিদমতের) জন্য তৈরী করা হয়েছে আর তোমরা সৃষ্টি হয়েছ পরকাল (আল্লাহ্ পাক)-এর জন্য।” কাজেই কাফিররা মুসলমানদের খাদিম। তারা অনেক কিছু আবিষ্কার করেছে এবং করবে। যেমন (গাড়ী, মাইক, ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশন) ইত্যাদি। মুসলমানগণ যখন দেখেন কাফিরদের খিদমত শরীয়তের খেলাফ নয়, তখন তারা ইচ্ছা করলে তা গ্রহণ করতে পারেন। আর শরীয়তের খেলাফ হলে অবশ্যই তা বর্জন করতে হবে। অবশ্য কোন মুসলমানও যদি শরীয়তের খেলাফ কিছু আবিষ্কার করে তবে সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আল্লাহ্ পাক বলেন, تعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان. অর্থঃ- “তোমরা নেকী এবং পরহেযগারীর মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য কর। পাপ এবং শত্রুতার মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করোনা।” (সূরা মায়িদা/২) শুধু তাই নয়, বরং কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা বা সমর্থনও করা যাবে না। তাই আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, اذا عملت الخطيئة فى الارض من شهدها فكرهها كان كمن غاب عنها ومن غاب فرضيها كان كمن شهدها. অর্থঃ- “পৃথিবীতে যখন কোন অন্যায় বা পাপ সংঘটিত হয়, তখন যে ব্যক্তি ঐ স্থানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও ওটাকে ঘৃণা করে, সে যেন সেস্থানে উপস্থিত ছিলনা। আর যে ব্যক্তি অনুপস্থিত থেকেও পাপের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, সে যেন তথায় উপস্থিত ছিল।” সুতরাং সমগ্র কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও কিয়াসে কোথাও বিধর্মীদের জিনিসপত্র ব্যবহার করা নাজায়েয ঘোষণা করা হয়নি। আল্লাহ্ পাক বলেন, يايها الذين امنوا لاتحرموا طيبت ما احل الله لكم ولا تعتدوا ان الله لا يحب المعتدين. অর্থঃ- “হে মু’মিনগণ! তোমরা ঐসব পবিত্র বস্তু হারাম করনা, যেগুলো আল্লাহ্ পাক তোমাদের জন্য হালাল করেছেন এবং সীমা অতিক্রম করনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক সীমা অতিক্রমকারীকে পছন্দ করেননা।” (সূরা মায়িদা/৮৭) কাজেই সমরাস্ত্র ব্যবহার করা জায়েয, যেহেতু প্রথমত তারা আমাদের খাদিম এবং এগুলি ব্যবহার করলে তাদের অনুসরণ-অনুকরণ করা হয়না এবং আমলও গ্রহণ করা হয় না। হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিধর্মীদের বহু জিনিসপত্র ব্যবহার করেছেন কিন্তু তাদের নিয়ম-নীতি কখনও অনুসরণ-অনুকরণ করেননি। যেমন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুমী জুব্বা, মিশরীয় সূতী, ইয়ামানী চাদর, যুদ্ধাস্ত্র, শিরস্ত্রাণ ইত্যাদি বিধর্মীদের নানা প্রকার জিনিস ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তাদের নিয়ম-নীতি আমল-আখলাক কখনও অনুসরণ করেননি। তাই বিধর্মীদের জিনিসপত্র যেমন সমরাস্ত্র মুসলমানদের জন্য ব্যবহার করা জায়েয পক্ষান্তরে লংমার্চ, হরতাল যা তাদের বিশেষ আমল, করলে তাদের নিয়ম-নীতি অনুসরণ-অনুকরণ করা হয় এবং তাদের আমলকে গ্রহণ করা হয়। যা স্পষ্টতঃই শরীয়তে নিষিদ্ধ ও হারাম।