একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৬৯

 


ওলীয়ে মাদারজাত, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশ্ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্বরণে- একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

 

খাজিনাতুর রহমত, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয় অনুমতিতে দেশে ফেরা

          সাইয়্যিদুল খলায়িক্ব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমুদয় সৃষ্টির উপলক্ষ এবং তিনি আল্লাহ পাককে হাছিলের মূল প্রবেশদ্বার। খালিক্ব ও মাখলুক্বের মধ্যে পার্থক্যের এবং খালিক্ব আল্লাহ পাককে হাছিলের বোধগম্য পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা ও পন্থা তিনিই দান করেছেন।

          পরিপূর্ণ মাছূম হওয়া সত্ত্বেও কান্না বিজড়িত কণ্ঠে তিনি যখন সবিনয় প্রার্থনা জানানঃ আয় আল্লাহ পাক! আমি আপনার নিকট ইস্তেগফার করছি। অনুগ্রহ করে ইস্তেগফার কবুল করুন এবং আমাকে ঐসব ব্যক্তির কাতারভুক্ত করুন, উনাদের উপর আপনি অনাদি-অনন্তকালের জন্য প্রসন্ন হয়ে গেছেন, তখন আসমানের ফেরেশতাকুল বিস্ময়াভিভূত হয়ে বিনীতভাবে জানতে চানঃ আয় আল্লাহ পাক! আপনার প্রিয়তম হাবীব, আকরামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো মাছূম। তিনি একি করছেন! জবাবে আল্লাহ্ পাক বলেনঃ তোমরা আনুগত্য ও বিনয় প্রকাশের আদব শিক্ষা লাভ কর। 

          মাখলুক্ব বিরাগী অনন্য মানসে অনুপম আনুগত্য ও উনার সকাতর প্রার্থনায় অনুক্ষণ নিমগ্ন থাকার এই অপরিসীম বিপ্লব আল্লাহ্পাক উনার মাশুক, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই দান করেছেন। ওয়ারিশ সূত্রে আশিক ওলীআল্লাহগণ এই বিপ্লবের মিছদাক হয়েছেন। যেমন হয়েছেন উনার  প্রিয়তম আওলাদ, হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান, আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী, ওয়াল কুরাঈশী আলাইহিস সালাম। নিয়ামত নয়, হাছিলকৃত ছাহিবে নিয়ামত-উনার আরো পরম নৈকট্য সুধায় অবগাহন প্রত্যাশায় তিনি নিশিদিন প্রার্থনায় নিমগ্ন রয়েছেন পবিত্র রওযা মুবারক সন্নিধানে।

  হজ্জ সমাপন এবং রওযা মুবারক যিয়ারতের উদ্দেশ্যে উনারা সঙ্গে গিয়েছিলেন এবং অন্য উনারা পরিচিত ছিলেন, উনারা সবাই আপন গন্তব্যে দেশে ফিরে গেছেন। ওলীয়ে মাদারজাদ, ফখরুল আউলিয়া, লিসানুল হক্ব, আশিকে নবী, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনারও কাজ শেষে সাধারণ নিয়মে অন্য সবার মতো অনেক আগেই দেশে ফেরার কথা। কিন্তু পবিত্র মদীনা শরীফের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য আকর্ষণ, বিশেষতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, মাশুকে মাওলা, খাজিনাতুর রহমত, রহমাতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আরো নিগূঢ় সান্নিধ্যলাভ এবং পরবর্তী কর্মপন্থা সম্পর্কে উনার সদয় নির্দেশনা লাভের পরম প্রত্যাশায় তিনি পবিত্র রওযা মুবারক-উনার সন্নিকটে উপস্থিত রয়েছেন।

          জীবনের আয়াসসাধ্য আয়োজনগুলো একটুও বিফলে যায়নি। নিয়ামতের মুবারক উৎস ভা-ার, ছাহিবে নিয়ামত, রসূলু রব্বিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হাছিল ও উনার পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি লাভ এবং উনার দায়িমী নিয়ন্ত্রণে জীবন যাপন ও আমরণ যাবতীয় কর্ম পরিচালনার পরম সৌভাগ্য লাভে তিনি আশৈশব অন্তরে লালিত প্রত্যাশা পূরণের শীর্ষ সোপানে উপনীত হয়েছেন। জীবনের সকল দুঃখ আনন্দে এবং সকল প্রশান্তি বেদনার গভীরে একাকার হয়ে গেছে। অর্থাৎ জীবনের শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত অর্জনে জগৎ-সংসার ও আখিরাতের ভেদ রেখা মুছে গেছে। এখন কেবল অন্তর্গূঢ় ইশক ও মুহব্বতে আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি অনুক্ষণ বিভোর থাকা।

          পূর্বের আলোচনায় জানা গেছে যে, কুতুবুয্ যামান, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনার একজন মুজাদ্দিদে আযম কিশোর পুত্রের পরিচর্যা করা এবং তালীম ও তরবিয়ত দান তাঁকে সমৃদ্ধ করে তোলার লক্ষ্যে মদীনা শরীফে অবস্থান না করে দেশে ফিরে আসাই উনার জন্য এখন অতি জরুরী। নিবিড় ছোহবত লাভ এবং সদয় নির্দেশনা সম্বলিত একান্ত আলাপনে তিনি ইতোমধ্যেই জেনে গেছেন যে, রহমতে ইলাহী, ছাহিবু লাওলাক, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয় ইচ্ছাও তাই। এখন শুধু মুবারক নির্দেশনার অপেক্ষা। (অসমাপ্ত) 

আবা-১২৮

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৬৮



ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে- একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

খাজিনাতুর রহমত, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয়  অনুমতিতে দেশে ফেরা অবিচ্ছেদ্য মনঃসংযোগের অনাবিল যোগসূত্রে ব্যথাতুর প্রেমিকের পাবার আকুতি প্রেমাস্পদের অবিদিত থাকেনা। সম্পর্ক স্থাপনকালে আশিক প্রেমিকের জানাই থাকেনা তার কি চাই, কতটুকু চাই। মুহব্বতের পরিণত স্তর পর্যন্ত নিয়ামত প্রাপ্তির গতি ও প্রকৃতি বদলাতে থাকে।  পর্যায়ক্রমে এসবের উৎকর্ষ সাধিত হয়। আজ যে প্রাপ্তি অতি জরুরী ও আনন্দের, কাল তাঅপ্রয়োজনীয় হলেও মুল্যহীন হয়ে পড়েনা। কারণ, অতীতের স্তরটি উপরে উঠার অপরিহার্য সিঁড়ি।

 জীবনে চাওয়া-পাওয়ার সকল সোপানে অবিরাম প্রার্থনায় নিমগ্ন থাকাই ওলীআল্লাহ্গণের সহজাত প্রবৃত্তি। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালিন, রহমতুল্লিল আলামিন, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার অন্তর মুবারকের গভীরে মিশে থাকা মধুর যন্ত্রণা, চিন্তার অনুপম নিবিষ্টতা, মোরাকাবার তন্ময়তায় তিনি বেমেছাল (অতুলনীয়) বিনয় ও অনুগত্যপূর্ণ মানসিকতার অধিকারী ছিলেন। পরওয়ারদিগার আল্লাহ পাক-উনার প্রতি অপার আগ্রহ ও আকর্ষণ এবং সীমাহীন নিবেদনে তিনি অবিরাম ব্যাপৃত রয়েছেন। অপরিসীম বেদনা ও উদ্বেলতায় নিশিদিন তিনি নিমগ্ন থেকেছেন। যদিও তিনি ছিলেন মাছূম (নিষ্পাপ)।

  এই সুন্নত মুবারক অনুসরণেই ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছূর রহমান আলাইহিস সালাম আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি কাতর প্রার্থনায় নিবেদিত রয়েছেন।  আল্লাহ পাক উনার সৃষ্ট কোন মাখলুক সম্পর্কেই উদাসীন নন্। সকলের প্রতিই উনার সমান (পরিপূর্ণ) দৃষ্টি। মাহবুব ওলীগণের মনোবাঞ্ছা সম্পর্কেও তিনি পরিপূর্ণরূপে পরিজ্ঞাত। সুন্নত পরিপালনে তাঁরা (ওলীআল্লাহ্গণ) দুনিয়া বিরাগী মানসিকতায় নিরন্তর প্রার্থনায় রত থাকার দায়িমী অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ পাক বলেছেন,

انا عند ظن عبدى بى

 অর্থঃ আমি আমার বান্দার ধারণার অনুরূপ।যে যা চায়, সে তাই  পায়। এ পাওয়ার মধ্যে তার দৃষ্টি সীমার বিপরীত এবং অনুভবের অতিরিক্ত (অন্যকিছু) বিষয় থাকেনা। পাওয়ার বিষয় দুটি।  একটি নিয়ামত এবং অপরটি ছাহিবে নিয়ামত। যিনি নিয়ামতের মালিক, তিনিই ছাহিবে নিয়ামত। আল্লাহ্ পাক ছাহিবে নিয়ামত। আল্লাহ পাক ছাড়া সবকিছুই গায়রুল্লাহ্। ছহিবে সুলতানিন্ নাছীর, ছাহিবে খুলুক্বে আযীম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ছাহিবে নিয়ামত। আল্লাহ্ পাক-উনার তরফ থেকে পরিপূর্ণরূপে দান সমৃদ্ধ হয়ে তিনিও নিয়ামতের অধিকারী এবং আপন সদয় ইচ্ছায় নিয়ামত বণ্টনকারী। উনার বোধগম্য ব্যাখ্যায় তিনি বলেন,

 انما انا قاسم والله يعطى.

অর্থঃ বণ্টন করি আমি, আর দাতা আল্লাহ পাক।সমগ্র বিশ্ব জগৎ প্রতিপালন ও পচিালনায় মাশুকে মাওলা, রফিকু ছাহিবুল কুদরত, রহমতে ইলাহী, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্পৃক্ত করে নিয়ে আল্লাহ্ পাক উনাকে আপন ইচ্ছা ও ইখতিয়ার প্রয়োগের জন্য ক্ষমতাবান করেছেন।  আল্লাহ্ পাক এবং নিয়ামত বণ্টনের জন্য ক্ষমতা প্রাপ্ত ছাহিবে লাওলাক, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হাছিল করাই মাহবুব ওলীগণের অভীষ্ট লক্ষ্য। এ নিয়ামত হাছিলে কামিয়াব হয়েছেন কুতুবুয্ যামান, ওলীয়ে মাদারজাত, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছূর রহমান আলাইহিস সালাম।  (অসমাপ্ত)

আবা-১২৭ 

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৬৭

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

খাজিনাতুর রহমত, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয়  অনুমতিতে দেশে ফেরা

এতোক্ষণের আলোচনায় বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় যে, আশিকে নবী, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ্ ও কারামত, ফখরুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মূল কাজ পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থান করা নয়। আল্লাহ পাক-উনার  অপার অনুগ্রহ এবং দলীলে কাবায়ে মাক্বছূদ, হাবীবে আযম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয় বন্টন ব্যবস্থায় উনার দায়িত্ব পালনের স্থান দেশের পরিচিত জনপদে, আপন ঠিকানায়। তাই সহসাই আল্লাহ পাক-উনার সকল কাজের ইন্তিজামকারী, মাশুকে মাওলা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয় নির্দেশে তিনি দেশে ফিরে আসবেন, এটাইতো স্বাভাবিক ও সংগত। জগতিক সকল বন্ধন ও আসক্তিহীনতায় পবিত্র রওযা মুবারক সান্নিধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সময় বয়ে যাচ্ছে। সময় অতিক্রান্তির এই গতি অতি দ্রুততর। কাঙ্খিত নিয়ামতপ্রাপ্তিতে চাওয়া-পাওয়ার একীভূত অবস্থায় পরম প্রশান্তির পূর্ণতায় সময়ের ধাবমানতা ক্ষিপ্র মনে হয়। নিত্যদিন নিবিড় যোগাযোগ ও একান্ত সাক্ষাৎ হচ্ছে। রওযা মুবারকের নিকট সান্নিধ্যে রাত-দিনের দায়েমী আরজুঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ, ইয়া রহমাতাল্লিল আলামীন, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমাকে ধন্য করুন, পূর্ণ করুন, আরো এতমিনান দান করুন। পরিপূর্ণ এতমিনান (প্রশান্তি) হাছিল করেও আরো অধিক নিয়ামতলাভে নিরন্তর মাহবুব ওলীগণের অন্তরের ক্রমবর্ধিঞ্চু যে যন্ত্রণাকাতর প্রত্যাশা, তা তাঁদের পার্থিব জীবনাবসানের মাধ্যমে ছাহিবুল মাফাতীহ, রউফুর রহীম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মুবারক উছীলায় জান্নাতের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে আল্লাহ্ পাক-উনার দিদারলাভ না হওয়া পর্যন্ত পূরণ হবার নয়। এ উপলব্ধি মন ও মননে ধারণ করেও অন্তরের সহজাত বেদনা এবং লব্ধ নিয়ামতের আপেক্ষিকতা বিবেচনায় আরো পাবার আকুতি নৈকট্য প্রাপ্ত মাহবুব ওলীগণের কখনোই ফুরায়না। পাবার এ তীব্র আকাঙ্খা ইন্তিকাল অবধি জাগরূক থাকে। কামিয়াবী হাছিলকারী সূক্ষ্মদর্শী ওলীগণের সামগ্রিক জীবন পরিক্রমার এই মুল বৈশিষ্ট্য আল্লাহ্ পাক-উনারই মহান দান। উনার তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যা আমরা জানতে পাই এমন কামিযাবীর শীর্ষ সোপানে অধিষ্ঠানকারী আফযালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, ক্বাইউমে আউয়াল, মুজাদ্দিদে আলফেসানী, হযরত শয়খ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার নিগূঢ় অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ বাণীতে। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজেকে তৃপ্ত মনে করে, সে বঞ্চিত। পক্ষান্তরে নিজেকে যে অতৃপ্ত ও অপূর্ণভাবে, সে প্রাপ্ত। অর্থাৎ সে পরিপূর্ণ, সে নিয়ামত সমৃদ্ধ। অতৃপ্তিবোধের এমন দহনে মুহ্যমান ওলীয়ে মাদারজাদ, আফযালুল ইবাদ, লিসানুল হক্ব, ফখরুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি সবকিছু পেয়েও আরো পাবার প্রত্যাশায় প্রার্থনায় নিমগ্ন রয়েছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাজিনাতুর রহমত, খাজিনু কামালিল্লাহ, হাবীবে আযম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পাক দরবার শরীফে। পাবার সান্ত¡না ও আসন্ন বিচ্ছেদের সীমাহীন যন্ত্রনায় মন ভারাক্রান্ত। কাছের ও দূরের, এমনকি অনেক দূরের দৈহিক অবস্থানেও আশিক ও মাশুক-উনার মনোগত সংযোগ একই বৃত্তে সম্মিলিত থাকে। দৈহিক নৈকট্য অথবা দূরবর্তীতার প্রশ্ন এখানে অবান্তর। তবে সার্বিক সতর্কতা, অনাবিল মনোযোগ ও পূর্ণ হুজুরীতে মাশুকের সরাসরি সান্নিধ্যে যে অভাবনীয় নিয়ামত হাছির হয়, তা তুলনাহীন। যদিও কেউ কেউ বিশ্বাস করতে অভ্যস্ত যে, দূরের পাওয়াই পাওয়া। কাছের পাওয়ায় কখনো কখনো ফাঁক থাকে। প্রেমাস্পদের পরম সান্নিধ্য থেকে দৈহিক বিয়োজনে প্রেমিকের মনে যন্ত্রণাকাতর বেদনার দহন অনুক্ষণ দ্বিগুণ-বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ দহন নিবৃত্তির প্রয়াস, প্রত্যাশী প্রেমিক ও দাতা প্রেমাস্পদ দুজনেরই। আর যারা জানেন তাদের তো একথা জানা যে, সকল ইচ্ছাই প্রেমাস্পদের এবং অপার বেদনা ও সীমাহীন দুঃখভরা যতো প্রত্যাশা তা কেবল আশিক প্রেমিকের। (অসমাপ্ত)

আবা-১২৬

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৬৬

 


একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 খাজিনাতুর রহমত, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয়  অনুমতিতে দেশে ফেরা -

মাহবুব ওলীআল্লাহগণের মাধ্যমে আল্লাহ পাক-উনার আহকাম উনার নির্ধারিত ব্যবস্থায় হুবহু পরিপালন এবং যমীনে তা বাস্তবায়নের স্থান সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয় ইচ্ছায় বন্টিত হয়। আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পরিপূর্ণ আশিক ওলীগণকে আবশ্যিকভাবে হিম্মতহীন এবং আপন প্রত্যাশা মুক্ত হতে হয়। মাহবুব ওলী আল্লাহগণের  মন ও মননের দায়িমী হুযূরীতে আপন ইখতিয়ারের প্রশ্ন অবান্তর। দুনিয়ায় দ্বীন ইসলাম আবাদের জন্য আল্লাহ পাক-উনার লক্ষ্যস্থল প্রত্যেক ওলীআল্লাহ-উনার দায়িত্ব-সম্পৃক্তি বহুতর এবং তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ও পরিধিও ভিন্নতর।

 আয়াসসাধ্য আয়োজন, আকুতি ও হিদায়াতের কর্মপ্রণালী একজন থেকে অন্যজনের পৃথক। তবে অনেক ক্ষেত্রে ওলীআল্লাহগণের কর্ম বিভাজন এবং প্রতিপালনের পদ্ধতি ভিন্নতর হলেও সকলের গন্তব্য ঠিকানা এক ও অভিন্ন। সব ফুলই গন্ধ বিলায় কিন্তু রং, সুবাস ও আকর্ষণ আলাদা।

 সকলেরই জানা যে, ইমামে আযম হযরত আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ইল্মে তাছাউফে দীক্ষিত হওয়ার অনিবার্য প্রয়োজনে আওলাদুর রসূল হযরত ইমাম বাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং অতঃপর উনার সুযোগ্য সন্তান হযরত ইমাম জাফর ছাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার নিকট বাইয়াতের মাধ্যমে এতো বড় ওলীআল্লাহ হয়েছিলেন যে, জগৎ-সংসারে উনার তুলনা মেলা ভার। অথচ আল্লাহ পাক বাহ্যিকভাবে উনাকে ফিক্বাহ শাস্ত্রের ইমাম হিসেবে মশহুর করেছেন। অপরদিকে গাউছূল আযম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, বড় পীর ছাহিব, হযরত মুহিউদ্দীন আবদুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আফযালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, ক্বাইউমে আউয়াল, মুজাদ্দিদে  আলফে সানী, হযরত শায়খ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রত্যেকেই এতো বড় ফক্বীহ ছিলেন যে, জগৎ-সংসারে উনাদের তুল্য কজন? কিন্তু উনাদেরকে আল্লাহ পাক তরীক্বতের ইমাম হিসেবে প্রসিদ্ধিদান করেছেন।

আল্লাহ পাক-উনার লক্ষ্যস্থল ওলীগণের যে জনপদে যে বিশেষ দায়িত্ব-সংযোগ, উনাদেরকে সেখানেই সে কাজে আজীবন নিবিষ্ট থাকতে হয়। ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদুর রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার দায়িত্ব পালনের নির্ধারিত স্থান উনার দেশে, আপন জনপদে। সেখানে মূল কর্মসংযোগ হলো উনার একজন মুজাদ্দিদে আযম পুত্র সন্তানের পরিচর্যা করা। আল্লাহ পাক-উনার নিবিড় লক্ষ্যস্থল মাত্র দশ বছর বয়সের কিশোর সন্তানের শিরা, ধমনী, মন ও  মননে মুবারক পূর্বপুরুষ সুত্রে প্রচ্ছন্নভাবে মিশে থাকা ইমামত ও মুজাদ্দিদিয়াতের কিশলয়গুলো পল্লবিত করে  তোলা। আপন কোশেশ, পরিচর্যা তালীম ও তরবিয়তদানে সে মুবারক সন্তানকে বড় করে তোলা।

 মহান আল্লাহ পাক-উনার উদ্দিষ্ট ব্যবস্থা এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, রসূলু রব্বিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয় ইচ্ছায় সে সন্তানের প্রতি পরিপূর্ণ মনোনিবেশ করা; অন্য যাবতীয় কাজের  মধ্যে এটি অনন্য। দুনিয়া জুড়ে গজিয়ে উঠা বাতিল ফিরক্বা ও মতবাদের মূলোৎপাটন, কালের প্রবাহে দ্বীন ইসলামে অবলীলায় ঢুকে পড়া  অসংগত দর্শন, চিন্তা, আমল ও আচরণ ওহীর বাণী ও হাদীছ শরীফের নিয়ন্ত্রনে দূরীভূত করা এবং অবলুপ্ত সুন্নত যিন্দা করা একজন মুজাদ্দিদের মূল কাজ। কাজেই দুনিয়ায় মুজাদ্দিদের আবির্ভাব অপরিহার্য। এ মহান লক্ষ্যে সংস্কার কাজে নিরবধি তৎপর ও কামিয়াব ঔরসজাত মুজাদ্দিদে আযম পুত্রকে বিশ্ববাসীর কাছে উপহার দেয়া হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর আলাইহিস সালাম-উনার মূল কাজ এবং এটি উনার অনন্য কারামত। এ বিষয়ে সবিস্তার আলোচনার স্থান এখানে নয়। এ সম্পর্কে যথাস্থানে আলোকপাত করা হবে।   (অসমাপ্ত)

আবা-১২৫