“সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ”
Image result for শবে মিরাজ“সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ”
“بسم الله الرحمن الرحيم”
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য এবং দুরুদ ও সালাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহা মানব মুহাম্মদ(সঃ)সহ সকল সাহাবায়ে কেরাম ও সকল ইসলামি অনুসারিদের উপর ।
“আমর বিল মারূফ এবং নেহি আনিল মুনকার” ইসলামের একটি অত্যবশ্যকীয় দায়িত্ব। একটি মৌলিক স্তম্ভ এবং এ ধর্মের অনন্য বৈশিষ্ট্য। সংস্কার ও সংশোধনের বিশাল মাধ্যম। তার মাধ্যমে সত্যের জয় হয় এবং মিথ্যা ও বাতিল পরাভূত হয়। তার মাধ্যমে শান্তি ও সমৃদ্ধির বিস্তার ঘটে। কল্যাণ ও ঈমান বিস্তৃতি লাভ করে। যিনি আন্তরিকতা ও সততার সাথে এ দায়িত্ব পালন করেন তার জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার ও মর্যাদাপূর্ণ পারিতোষিক।আজকে আমাদের সমাজে ইসলামের এই স্তম্ভটাই পালনে আমরা সবচেয়ে বেশী অবহেলা করছি,আমাদের সমাজে নির্বিচারে অন্যায়,জুলুম,পাপ কার্য সংঘটিত হচ্ছে কিন্তু আমরা নিরব আমরা এমন ভাবে আখেরাতকে ছেড়ে দুনিয়া মুখি হয়ে গেছি যে এখন আর আমাদের কোন অনৈতিক কাজেই কোন প্রতিক্রিয়া হয় না।বরং আমরা কেউ কেউ অন্যায় কাজের সহযোগিতা করতেছি বিভিন্ন ভাবে।অথচ অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করাও এক ধরনের জেহাদ আর এই জেহাদ থেকেই আমরা মুসলমানেরা আজ বিমুখ।অথচ হাদিস শরিফে বর্নিত আছে,
– عنْ أَبِي سَعيد الْخُدريِّ رضي اللَّه عنه عن النبيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال: «أَفْضَلُ الْجِهَادِ كَلِمَةُ عَدْلٍ عندَ سلْطَانٍ جائِرٍ » رواه أبو داود ، والترمذي وقال: حديثٌ حسنٌ .
আবু সায়ীদ আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যালেম শাসকের সামনে ইনসাফের কথা বলা উত্তম জিহাদ। (বর্ণনায়: আবু দাউদ ও তিরমিজী, ইমাম তিরমিজী হাদীসটিকে হাসান বলে মন্তব্য করেছেন)
আফসুস আজকে আমরা মানছি না আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের কোন আদেশ বা নির্দেশনা।অথচ তাহাই আমাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও আদর্শ হওয়া উচিত ছিল।
আল্লাহ সুবহানা হুয়া তায়ালা পবিত্র কোরআনে অসংখ্য আয়াত ও প্রিয় নবীর অগণিত হাদিস এর প্রমাণ বহন করে। এর অল্প কিছু নীচে বর্ননা করা হল।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ-
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ. (التوبة:71)
অর্থাৎ আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক-সুহৃদ। তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। সালাত প্রতিষ্ঠিত করে, জাকাত দেয়, এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ রহম ও দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী। প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা : ৭১)
আয়াতে পরিষ্কার দেখা গেল যে আল্লাহ তাআলা “আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের” উপর রহমতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন|এবং এইটাও বলা হইছে যে ইহা ইমানদারদের একটি গুন।
মহান রাব্বুল আলামীন আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের দায়িত্ব পালন কারীদের প্রশংসা এবং তাদের পরিণাম ও শেষ ফল কল্যাণময় বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন :
وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (آل عمران:104)
আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে। আর তারাই সফল কাম। (আলে ইমরান : ১০৪)
এই আয়াতেও আল্লাহ “সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ” কারীদের সফল কাম বলেছেন অর্থাৎ এই কাজটি যারাই করবে তারাই সফল হবে।
আল্লাহ অন্য এক আয়াতে বলেছেন,”তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর আহলে-কিতাবরা যদি ঈমান আনতো, তাহলে তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হতো। তাদের মধ্যে কিছু তো রয়েছে ঈমানদার আর অধিকাংশই হলো পাপাচারী। (আলে ইমরান: ১১০)
আল্লাহ এই আয়াতেও উম্মতি মুহাম্মদিকে শ্রেষ্ট উম্মত বলে সম্ভধন করেছেন কারন এই উম্মত “সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ” করে থাকে।এবং আগের উম্মতের বিষয়ে বলেছেন যে সেই উম্মত এই কাজটা করেনাই তাই তাদের মঙ্গল হয় নাই অর্থাৎ তারা ধবংশ প্রাপ্ত হয়েছিল।
আর এই উম্মতের ব্যাপারেও হুশিয়ারি আছে ঠি একই রকম,
– عَنْ حذيفةَ رضي اللَّه عنه أَنَّ النبي صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : « والَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بالْمعرُوفِ ، ولَتَنْهَوُنَّ عَنِ المُنْكَرِ ، أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللَّه أَنْ يَبْعثَ عَلَيْكمْ عِقَاباً مِنْهُ ، ثُمَّ تَدْعُونَهُ فَلاَ يُسْتَجابُ لَكُمْ » رواه الترمذي وقال : حديثٌ حسنٌ .
হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সেই সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার জীবন, তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ করবে আর মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে। যদি না কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের উপর শাস্তি পাঠাবেন। অত:পর তোমরা তাকে ডাকবে আর তোমাদের ডাকের সাড়া দেয়া হবে না। (বর্ণনায়: তিরমিজী, ইমাম তিরমিজী হাদীসটিকে হাসান বলে মন্তব্য করেছেন)
এখন আমাদেরই বুঝা উচিত আসলে আমাদের কি করা উচিত “সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ”করব নাকি আল্লাহর আযাবের জন্য প্রস্তুত থাকব।
আমর বিল মারূফ ও নেহি আমিল মুনকার-এর ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য সর্বাপেক্ষা জরুরি বিষয় হচ্ছে : সবর ধৈর্য এবং সহনশীলতা।
লোকমান হাকিম স্বীয় পুত্রকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন :
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ (لقمان:17)
হে বৎস ! সালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও। মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর, এটিই তো দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লোকমান : ১৭)
এই আয়াত দ্বারা ইটাই স্পষ্ট হয় যে এই কাজটি করা অনেক কঠিন এবং এই কাজটি করতে অনেক ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রয়োজন হয় সাথে সাহসেরও,কারন এই কাজটি করতে গেলে অনেক বিপদ আসবে বাঁধা আসবে আর এই সব বাঁধা-বিপদকে সরিয়েই এগিয়ে যেতে হবে তবেই আল্লাহর সন্তুষ্টি পাব আমরা।
“সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ”এর কাজটি আমাদের শুরু করতে হবে নিজেদের পরিবার থেকেই কারন পরিবার খারাপ কাজে লিপ্ত থাকবে আর আপনি বাইরের লোকদের নচিহত করে বেড়াবেন ভাল কাজ করার জন্য সেইটা কোন ভাবেই শোভনীয় নয় বরং এতে আপনি অসম্মানিত হবেন তাই পবিত্র ক্বোর’আনে পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের ভয়াবহ শান্তি হতে বাঁচিয়ে রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূরা আত-তাহরীমে এসেছে-
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦ ﴾ [التحريم: ٦]
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশ্‌তাকূল, যারা আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে অবাধ্য হয় না। আর তারা তাই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়।’’
অতএব বলা যায় যে, বিভিন্নভাবে এ পৃথিবীতে মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। আর তা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো পারস্পারিক সৎ ও কল্যাণকর কাজে সহযোগিতা ও অসৎ এবং গুনাহের কাজ বর্জন করা।
সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ রাসূলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এ গুণের পথিকৃত ছিলেন। তিনি নবুওয়তের পূর্বে অন্যায় অবিচার রুখতে হিলফুল ফুযুলে অংশ নিয়েছেন। ছোট বেলা থেকে মৌলিক মানবীয় সৎ গুণাবলী তাঁর চরিত্রে ফুটে উঠায় আল-আমিন, আল সাদিক উপাধিতে তিনি ভুষিত ছিলেন। তাঁর গুণাবলীর বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন-
﴿يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنۡهُمۡ إِصۡرَهُمۡ وَٱلۡأَغۡلَٰلَ ٱلَّتِي كَانَتۡ عَلَيۡهِمۡۚ﴾ [الاعراف: ١٥٧]
‘‘তিনি সৎকাজের আদেশ করেন এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করেন। মানবজাতির জন্য সকল উত্তম ও পবিত্র জিনিসগুলো বৈধ করেন এবং খারাপ বিষয়গুলো হারাম করেন।’’
আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে তাঁর রিসালাতের পূর্ণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সত্ত্বা, যাঁর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ বলেন, তাকে পাঠানো হয়েছে যাতে তিনি সৎকাজের আদেশ দেন, সকল অসৎ কর্ম হতে বারণ করেন, সব উত্তম বিষয় হালাল করেন এবং অপবিত্রগুলো হারাম করেন। এজন্যে রাসূল নিজেও বলেছেন-
«بعثت لأتمم مكارم الأخلاق»
‘‘আমি সকল পবিত্র চরিত্রাবলী পরিপূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’’
আর সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম পরস্পরের সাথে সাক্ষাত হলে এ মহতি কাজটির কথা স্মরণ করে দিতেন। সেজন্য তাদের কেউ কেউ অধিকাংশ সময় মজলিশ হতে বিদায় বেলায় ও প্রথম সাক্ষাতে সূরা আছর তেলাওয়াত করতেন বলে কোনো কোনে বর্ণনায় এসেছে । আল্লাহ বলেন-
﴿ وَٱلۡعَصۡرِ ١ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَفِي خُسۡرٍ ٢ إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡحَقِّ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ ٣ ﴾ [العصر: ١، ٣]
‘‘সময়ের কসম, নিশ্চয় আজ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ততায় নিপতিত। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।”
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা মুমিনের গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত সৎ কাজের আদেশ দান ও অসৎকাজে বাধা দান মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব। মুমিন নিজে কেবল সৎকাজ করবে না, বরং সকলকে সে কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস চালাতে হবে। কেননা, তারা পরস্পরের বন্ধু। অতএব একবন্ধু অপর বন্ধুর জন্য কল্যাণ ব্যতীত অন্য কিছু কামনা করতে পারে না। এদিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ বলেন-
﴿وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَيُطِيعُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ أُوْلَٰٓئِكَ سَيَرۡحَمُهُمُ ٱللَّهُۗ ٧١ ﴾ [التوبة: ٧١]
‘‘মুমিন নারী ও পুরুষ তারা পরস্পরের বন্ধু। তারা একে অপরকে যাবতীয় ভাল কাজের নির্দেশ দেয়, অন্যায় ও পাপ কাজ হতে বিরত রাখে, সালাত কায়েম করে, যাকাত পরিশোধ করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে। তারা এমন লোক যাদের প্রতি অচিরেই আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে।’’
কুরআনের অসংখ্য আয়াতে মুমিনের অন্যতম চরিত্র-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সকল স্থানে অন্যান্য গুণাবলীর পাশাপাশি অন্যতম গুণ হিসেবে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের অবতারণা করা হয়েছে।
আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন,
﴿ ٱلتَّٰٓئِبُونَ ٱلۡعَٰبِدُونَ ٱلۡحَٰمِدُونَ ٱلسَّٰٓئِحُونَ ٱلرَّٰكِعُونَ ٱلسَّٰجِدُونَ ٱلۡأٓمِرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَٱلنَّاهُونَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَٱلۡحَٰفِظُونَ لِحُدُودِ ٱللَّهِۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ١١٢﴾ [التوبة: ١١٢]
‘‘তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী, আল্লাহর গোলামীর জীবন-যাপনকারী। তাঁর প্রশংসা উচ্চারণকারী, তাঁর জন্য যমীনে পরিভ্রমণকারী, তাঁর সম্মুখে রুকু ও সিজদায় অবনত। সৎ কাজের আদেশ দানকারী, অন্যায়ের বাধা দানকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমা রক্ষাকারী। হে নবী, তুমি এসব মুমিনদের সুসংবাদ দাও।”
সুবাহা আল্লাহ এই আয়াতের যেই সব গুনা বলির কথা বলা হয়েছে সেই গুলি ইমানদারদের গুনা বলি আর এই সব গুণাবলী যাদের মাঝে বিদ্যমান তাদের সুসংবাদ অর্থাৎ জান্নাতের সুসংবাদের কথা বলা হয়েছে।
সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের বাধা দান দীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মূলত: দীন হলো পরস্পরের কল্যাণ কামনা। আর এটি সৎ কাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ ব্যতীত অসম্ভব। কারণ সৎ কাজে উদ্বুদ্ধ করলে পরস্পর কল্যাণের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে পারে। আবার অসৎ কাজে বাধা দিলে ক্ষতি থেকে বিরত রাখা সহজ হয়। অতএব এটি দীনের অন্যতম মূলনীতি।অথচ আমরা এই কাজটি করছিনা বরং নিজেকে ভাল ইমানদার হিসাবে জাহির করছি,আমরা স্বগর্ভে বলছি নামাযতো পড়ছি,রোজাতো রাখছি তবে কেন আমরা ভাল মুসলমান নয়।এর উত্তর নিম্নের হাদিস গুলুতেই আছে,
– عن أَبي سعيدٍ الخُدْريِّ رضي اللَّه عنه قال : سمِعْتُ رسُولَ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يقُولُ : « مَنْ رَأَى مِنْكُم مُنْكراً فَلْيغيِّرْهُ بِيَدهِ ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطعْ فبِلِسَانِهِ ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبقَلبهِ وَذَلَكَ أَضْعَفُ الإِيمانِ » رواه مسلم .
আবু সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি : তোমাদের কেউ যখন কোন খারাপ কাজ হতে দেখবে তখন সে যেন তা হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয় (অর্থাৎ নিষেধ করবে) যদি সে এ সামর্থ না রাখে তাহলে তার মুখ দিয়ে। যদি এ সামর্থও না থাকে তাহলে অন্তর দিয়ে। আর এটা হচ্ছে ঈমানের দুর্বলতর স্তর। (মুসলিম)
– عن ابنِ مسْعُودٍ رضي اللَّه عنه أَنَّ رسولَ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : «مَا مِنَ نَبِيٍّ بعَثَهُ اللَّه في أُمَّةٍ قَبْلِي إِلاَّ كان لَه مِن أُمَّتِهِ حواريُّون وأَصْحَابٌ يَأْخذون بِسُنَّتِهِ ويقْتدُون بأَمْرِه، ثُمَّ إِنَّها تَخْلُفُ مِنْ بعْدِهمْ خُلُوفٌ يقُولُون مَالاَ يفْعلُونَ ، ويفْعَلُون مَالاَ يُؤْمَرون ، فَمَنْ جاهدهُم بِيَدهِ فَهُو مُؤْمِنٌ ، وَمَنْ جاهدهم بقَلْبِهِ فَهُو مُؤْمِنٌ ، ومَنْ جَاهَدهُمْ بِلِسانِهِ فَهُو مُؤْمِنٌ ، وليس وراءَ ذلِك مِن الإِيمانِ حبَّةُ خرْدلٍ » رواه مسلم .
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার পূর্বে আল্লাহ তাআলা কোন জাতির কাছে যে নবীই পাঠিয়েছেন, তাঁর সহযোগিতার জন্য তাদের মধ্য হতে কিছু সাথী থাকত। তারা তাঁর সুন্নতকে আঁকড়ে ধরত এবং তাঁর নির্দেশের অনুসরণ করত। কিন্তু এদের পর এমন কিছু লোকের অভ্যূদয় ঘটল, তারা যা বলত নিজেরা তা করত না। আর এমন সব কাজ করত যার নির্দেশ তাদের দেয়া হয়নি। অতএব তাদের বিপক্ষে যে ব্যক্তি হাত দিয়ে জিহাদ করবে, সে ঈমানদার। যে তাদের সাথে অন্তর দিয়ে জিহাদ করবে সে ঈমানদার। আর যে তাদের সাথে মুখ দিয়ে জিহাদ করবে সে ঈমানদার। এ তিন অবস্থা ব্যতীত সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও নেই। (মুসলিম)
– عن ابنِ مسْعُودٍ رضي اللَّه عنه أَنَّ رسولَ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : «مَا مِنَ نَبِيٍّ بعَثَهُ اللَّه في أُمَّةٍ قَبْلِي إِلاَّ كان لَه مِن أُمَّتِهِ حواريُّون وأَصْحَابٌ يَأْخذون بِسُنَّتِهِ ويقْتدُون بأَمْرِه، ثُمَّ إِنَّها تَخْلُفُ مِنْ بعْدِهمْ خُلُوفٌ يقُولُون مَالاَ يفْعلُونَ ، ويفْعَلُون مَالاَ يُؤْمَرون ، فَمَنْ جاهدهُم بِيَدهِ فَهُو مُؤْمِنٌ ، وَمَنْ جاهدهم بقَلْبِهِ فَهُو مُؤْمِنٌ ، ومَنْ جَاهَدهُمْ بِلِسانِهِ فَهُو مُؤْمِنٌ ، وليس وراءَ ذلِك مِن الإِيمانِ حبَّةُ خرْدلٍ » رواه مسلم .
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার পূর্বে আল্লাহ তাআলা কোন জাতির কাছে যে নবীই পাঠিয়েছেন, তাঁর সহযোগিতার জন্য তাদের মধ্য হতে কিছু সাথী থাকত। তারা তাঁর সুন্নতকে আঁকড়ে ধরত এবং তাঁর নির্দেশের অনুসরণ করত। কিন্তু এদের পর এমন কিছু লোকের অভ্যূদয় ঘটল, তারা যা বলত নিজেরা তা করত না। আর এমন সব কাজ করত যার নির্দেশ তাদের দেয়া হয়নি। অতএব তাদের বিপক্ষে যে ব্যক্তি হাত দিয়ে জিহাদ করবে, সে ঈমানদার। যে তাদের সাথে অন্তর দিয়ে জিহাদ করবে সে ঈমানদার। আর যে তাদের সাথে মুখ দিয়ে জিহাদ করবে সে ঈমানদার। এ তিন অবস্থা ব্যতীত সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও নেই। (মুসলিম)
এই সব হাদিসের সামনে যদি আমাদের ইমানকে দাঁড় করাই তবে আমরা একশতে কত পাব একবার কি ভেবে দেখবনা?নাকি কোন নাম্ভারই পাবনা তাও একবার পরিক্ষা করা উচিত।
আজকে আমরা শেষ জামানায় দাঁড়িয়ে আছি যেই জামানায় ইমান রক্ষা করা খুবই কঠিন হবে।তাই আমাদের দরকার বেশী সৎ কাজ করা সৎ কাজের প্রতিযোগিতায় নামা।অথচ আমরা আজকে এই সব ভুলে দুনিয়া মুখি হয়ে গেছি ভুলে গেছি একদিন আল্লহার সামনে আমাদের দাঁড়াতে হবে আসামীর বেশে হিসাব দিতে হবে এই জীবনে যা কিছু কর্ম করেছি।
তাই আসুন আমরা “সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ” এর মতন মহান এবাদতটি বেশী বেশী করি নিজেদের ভাল ইমানদার বানাই নিজেদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করি।
মনে রাখবেন এই ইসলাম হইল নচিহতের দ্বীন সৎ উপদেশের দ্বীন।সারা বিশ্বকে বাঁচানোর দ্বীন সারা দুনিয়ার মানুষের কল্যানের দ্বীন,তাইতো এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
«الدين النصيحة.قلنا لمن قال للله ولرسوله ولأئمة المسلمين وعامتهم».
দীন হলো মানুষের কল্যাণ কামনা। আমরা বললাম এটা কাদের জন্য? রাসূল বললেন, এটা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও সকল মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও জনসাধারণের জন্য।”
সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ দীনের সবকিছু অন্তর্ভুক্ত করে। মহান আল্লাহ যাবতীয় হালাল ও বৈধ বস্তুকে সৎকাজের নামান্তর এবং অবৈধ জিনিসকে অসৎ কাজ হিসেবে বারণ করার অধীন করেছেন।
অনেক এমন লোক আছে যে সে অন্যকে করতে না দেখা পর্যন্ত কোনও ভাল কাজ বা খারাপ কাজ করে না, তারপর অপরের দেখাদেখি সেটা করে বসে।
আর এজন্যই কোন ভাল বা মন্দ কাজের সূচনাকারী ( তার) অনুকরণকারীদের সকলের সমান পূর্ণ বা পাপের অধিকারী হবে। যেমন- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন-
«مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً، فَلَهُ أَجْرُهَا، وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ، وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً، كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ»
‘‘যে ব্যক্তি কোনও সুন্দর আদর্শের প্রচলণ করবে সে সেটার প্রতিফল (সাওয়াব) তো পাবেই তদুপরি কিয়ামত পর্যন্ত যারা তার অনুসরণে আমল করবে তাদের সকলের সম্মিলিত ‘আমলের সাওয়াবও ঐ প্রচলনকারী পাবে(অথচ) ঐ সকল অনুসরণকারীদের সাওয়াবে কোনরূপ ঘাটতি হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি কোন খারাপ আদর্শের প্রচলন করবে সে সেটার ফলে পাপী তো হবেই তদুপরি কিয়ামত পর্যন্ত যারা তার অনুসরণে আমল করবে তাদের সকলের সম্মিলিত পাপরাশির পরিমাণ পাপের দায়ীও সে ব্যক্তি হবে, (অথচ) ঐ সকল অনুসরণকারীদের পাপে এতটুকুও ঘাটতি হবে না। (মুসলিম: কিতাবুল ‘ইলম: ৮/৬১, কিতাবুল যাকাত: ৩/৮৭, আন- নাসায়ী: ৫/৭৮; ইবনে হাম্বল: ৪/৩৫৭-৩৫৯)
পরিশেষে বলতে চাই আসুন আমরা এই মুহুর্ত থেকেই নেমে পরি “সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ” এর কাজে নিজে বাঁচি এবং অন্যকেও বাঁচাই জাহান্নামের আগুন থেকে।
আল্লাহ আমাদের সবাই কে হেদায়েত দান করুন কবুল করুন “সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ” এই মহান আমলটি করার তৌফিক দান করুন-আমীন।
মিরাজ শরীফ রাতে নামাযে গাফলতি , যাকাত না দেওয়া এবং ব্যাভিচারী ও ব্যাভীচারিনীর শাস্তি অবলোকন
Related imageমিরাজ শরীফ রাতে নামাযে গাফলতি , যাকাত না দেওয়া এবং ব্যাভিচারী ও ব্যাভীচারিনীর শাস্তি অবলোকন

নামায-এ গাফলতিকারীদের শাস্তি:
মি’রাজ শরীফ-এর রাতে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক দলকে দেখলেন, যাদের মাথা পাথর দ্বারা পিষিয়ে চূর্ণ-বিচুর্ণ করা হচ্ছে। পিষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় তা আগের মতো হয়ে যাচ্ছে। পুনরায় পেষা হচ্ছে এবং এভাবেই চলতে থাকে। হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এরা হচ্ছে তারা, যারা নিদ্রায় বিভোর থাকে ও নামাযের ব্যাপারে অলসতা করে। নাউযুবিল্লাহ!
যাকাত না দেয়ার শাস্তি :
মি’রাজ শরীফ-এর রাতে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক দলকে দেখলেন, যাদের লজ্জাস্থানের অগ্রভাগ ও পশ্চাদভাগ কাপড়ের টুকরা দ্বারা জড়িত। আর তারা উট ও গবাদি পশুর ন্যায় দৌড়াচ্ছে এবং যাক্কুম (তিক্ত ফল বিশিষ্ট এক প্রকার কাটাযুক্ত বৃক্ষ) ও জাহান্নামের পাথর ভক্ষণ করছে। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হচ্ছে সেই সব লোক, যারা নিজ মালের যাকাত দেয়নি। নাউযুবিল্লাহ!
ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিনীর শাস্তি :
মি’রাজ শরীফ-এর রাতে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি দলকে দেখলেন, তাদের সামনে একটি পাতিলে পাকানো গোশত রয়েছে এবং অপর একটি পাতিলে কাঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত গোশত রয়েছে। সে লোকেরা পাকানো গোশত বর্জন করে কাঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত গোশত খাচ্ছে। হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এরা আপনার উম্মতের সে সব পুরুষ যারা পূণ্যবতী স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও কোন দুশ্চরিত্রা ও ব্যভিচারিনী মহিলার সাথে রাত যাপন করে ও সকাল পর্যন্ত তার নিকটই কাটায়। আর আপনার উম্মতের সে সব মহিলা, যারা পূণ্যবান স্বামী ত্যাগ করে কোন দুশ্চরিত্র ও ব্যভিচারী পুরুষের সাথে রাত যাপন করে। নাউযুবিল্লাহ!



মিরাজ শরীফে মহান আল্লাহ পাক উনার দিদার
Image result for শবে মিরাজমিরাজ শরীফে মহান আল্লাহ পাক উনার দিদার


মহান আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন,
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় হাবীবকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। (সূরা বনি ইসরাঈল ১)
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, তিনি বলেন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুইবার আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছেন। একবার চক্ষু মোবারক দ্বারা একবার অন্তর মোবারক দ্বারা। (মু’জামুল আওসাত ৩/৩৫৬, হাদীস ৫৭ ৫৭, মু’জামুল কবীর ১২/১৭: হাদীস ১২৫৬৪, মাওয়াহিবুল্লাদুন্নিয়া ৩/৩৯৭, উমদাতুল ক্বারী ১৯/১৯৯ , খাসায়েসুল কোবরা ১/২৬৭)
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুসনাদে সহীহ সনদে বর্ননা করেন, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, তিনি বলেন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আমি আল্লাহ তাবারক ওয়া তায়ালকে দেখেছি। (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ১/২৯০: হাদীস ২৬৩৪, জামেউছ ছগীর : হাদীস ৪৩৭৭)
লা’মাযহাবীদের গুরু নাছির উদ্দীন আলবানী তার সহীহুল জামের ৩৪৬৬ নং হাদীসে উক্ত বর্ননা কে সহীহ বলে উল্লেখ করেছে।
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আইশ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন , আমি মহান রব তায়ালাকে উত্তম সূরতে দেখেছি।” (দারেমী শরীফ ২/১৭০: হাদীস ২১৪৯, মিশকাতুল মাছাবীহ ১/২২৫: হাদীস ৭২৫, মিরকাতুল মাফাতীহ : কিতাবুল মসজিদ, শরহে শিফা ১/৪২৮)
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান রব্বুল আলামীন উনাকে দেখেছেন। (ইবনে খুযাইমা ২/৮৮৯, শরহে মাওয়াহেব ৬/১১৮)
বিশিষ্ট তাবেয়ী শারীক রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, অত্র আয়াত শরীফ (হৃদয় যা দেখেছে তা মিথ্যা নয়) প্রসঙ্গে , হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তায়ালার দর্শন লাভ করেছেন। (শরহে শিফা ১/৪২৬)
হযরত মুয়াজ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আমি আমার প্রভুকে দেখেছি। (মিশকাতুল মাছাবীহ ৭২ পৃষ্ঠা)
হযরত হাছান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি কসম করে বলেছেন, নিশ্চয়ই হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক ইনাকে দেখেছেন। (শিফা শরীফ ১/১১৫)
হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই আমি আমার রব তায়ালা উনাকে দেখেছি। (তিরমিযী শরীফ : হাদীস শরীফ ৪২৩৫, ফিরদাউস লি দয়লামী ২/২৫৪ : ৩১৮৩)
উক্ত হাদীস শরীফ সর্ম্পেকে ইমাম তিরমীযি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলতে শুনছি এই হাদীস শরীফ সহীহ।
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আমি আমার রব তায়ালা উনাকে দেখেছি। উনার কোন তুলনা বা মেছাল নেই।” (ফিরদাউস লি দয়লামী ২/২৫৪ : ৩১৮৩)
ইমাম আবু আছেম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে সহীহ সনদে হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রব তায়ালা উনাকে দেখেছেনঃ। (আস সুন্নাহ লি ইবনে আছিম ১/১৯০ : ৪৩৭)
হযরত ক্বাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন। (খাছায়েছুল কোবরা ১/২৫৯)
ইমাম বাজ্জার রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রব তায়ালা উনাকে দেখেছেন। (মুসনাদে বাযযার ৫১৮৫, আবু ইয়লা ২৬০৮)
ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত মারওয়ান রহমতুল্লাহি একদা হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন ? তিনি বললেন হ্যাঁ। (শরহে শিফা ১/১১৯)
ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ কথা সহীহ যে মিরাজ শরীফ রজনীতে , হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন। (ইহয়াউ উলুমুদ্দীন)
মুসলিম শরীফ এর ব্যাখ্য কারক ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম উনাদের অভিমত হচ্ছে মিরাজ শরীফের রাতে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক উনাকে কপাল মুবরাক এর চক্ষু মুবারক দ্বারা দেখেছেন। (শরহে মুসলিম, শরহে মাওয়াহেব ৬/১৬৬)
আর তাই মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন,
ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّىٰ
فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَىٰ
فَأَوْحَىٰ إِلَىٰ عَبْدِهِ مَا أَوْحَىٰ
مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَىٰ
مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَىٰ
অতঃপর নিকটবর্তী হলেন ও ঝুঁকে গেলেন। দুই ধনুকের অথবা আরও কম। তখন আল্লাহ যা ওহী করবার, তা করলেন। অন্তর মিথ্যা বলেনি যা তিনি দেখেছে। তোমরা কি বিষয়ে বিতর্ক করবে যা তিনি দেখেছেন? (সূরা নজম ৮-১২)
ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে রজবিয়া হারাম কিন্তু মিরাজ শরীফ উপলক্ষ্যে রোযা রাখা ফযীলতপূর্ণ
Related imageইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে রজবিয়া হারাম কিন্তু মিরাজ শরীফ উপলক্ষ্যে রোযা রাখা ফযীলতপূর্ণ
পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ রাতে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়তম রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বশরীর মুবারক-এ মহান আল্লাহ পাক উনার দিদার মুবারক-এ যান। তাই রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ রাত হচ্ছে পবিত্র লাইলাতুল মিরাজ শরীফ বা শবে মিরাজ শরীফ উনার রাত। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা এবং অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা পবিত্র মিরাজ শরীফ প্রমাণিত। উনার শান-মান, ইজ্জত ঐতিহ্য, বুযূর্গী ও মর্যাদা এত অধিক যে, যা বর্ণনা করার ভাষা মানুষের নেই। এক কথায় বলা যায় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার শান-মান, বুযূর্গী, মর্যাদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহান শান-মান ও মর্যাদা উনাদের অনুরূপ। পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার দিবাভাগে রোযা রাখার ব্যাপারে অসংখ্য হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে এবং মিরাজ শরীফ উপলক্ষ্যে ২৭শে রজব তারিখের রোযার অসংখ্য ফাযায়িল-ফযীলতও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। যা গুনাহখতা মাফ ও ক্ষমা, মর্যাদা বৃদ্ধি, অসংখ্য ফযীলত ও নাযাতের কারণও বটে।
এ প্রসঙ্গে ওলীয়ে মাদারজাত, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, মাহবুবে ইলাহী, মুজাদ্দিদে যামান, গাউছুল আযম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, আওলাদুর রসূল সাইয়্যিদ মহিউদ্দিন আব্দুল কাদির জিলানী বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তার বিশ্বখ্যাত কিতাব “গুন্ইয়াতুত তালিবীন” নামক কিতাবে শবে মিরাজ-এর তথা রজব মাসে ২৭ তারিখের রোযার ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফগুলো বর্ণনা করেন। যেমন-
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه عـن النبى صلى الله عليه وسلم قال من صام يوم السابع والعشرين من رجب كتب له ثواب صيا م ستين شهرا.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখে তথা শবে মিরাজ শরীফ উনার দিবাভাগে রোযা রাখবে তার আমলনামায় ৬০ মাসের রোযা রাখার ছওয়াব লেখা হবে। (সুবহানাল্লাহ) (আল ইতহাফ ৫ম খণ্ড পৃষ্ঠা ২০৮, আল মা’য়ানী আনিল হামলিল ইসফার প্রথম খণ্ড ৩৬৭ পৃষ্ঠা, গুনিয়াতুত তালিবীন, ক্বিসমুস ছায়ালিস ৩৩২ পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه وسلمان الفارسى رضى الله عنه قالا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان فى رجب يوما و ليلة من صام ذالك اليوم وقام تلك اليلة كان له من الاجر كمن صام مأة سنة وقامهما وهى لثلاث بقين من رجب.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সালমান ফারিসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের উভয়েই বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার এমন একটি দিন ও রাত আছে ওই রাত্রে যে ব্যক্তি ইবাদত-বন্দিগী করবে এবং দিবাভাগে রোযা রাখবে তার আমলনামায় ওই পরিমাণ ছওয়াব লেখা হবে যে পরিমাণ ছওয়াব কোন ব্যক্তি একশত বছর রাতে ইবাদত-বন্দিগী করলে এবং একশত বছর দিনের বেলায় রোযা রাখলে তার আমলনামায় যেরূপ ছওয়াব লেখা হয়। আর সেই মুবারক রাত ও দিনটিই হচ্ছে রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ তথা পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ উনার রাত ও দিনটি।” (সুবহানাল্লাহ)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ খাদিম হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে মুসলমান নর ও নারী রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার মধ্যে একদিন রোযা রাখবে এবং একরাত ইবাদত করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার আমলনামায় পূর্ণ এক বছর দিনে রোযা রাখার ও রাতে ইবাদত করার ছাওয়াব লিখে দিবেন। সুবহানাল্লাহ।
উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ উনার রাত্রিতে ইবাদত-বন্দিগী করা এবং দিবাভাগে রোযা রাখা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে।
অথচ কিছু বিদয়াতী রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার মধ্যে রোযা রাখার বিরোধিতা করে থাকে। তারা দলীল হিসেবে যে হাদীছ শরীফখানা পেশ করে তাহলো-
“হযরত খারশাতা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনাকে দেখেছি যে, তিনি এক ব্যক্তিকে রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার মধ্যে রোযা রাখার কারণে তার হাতে বেত্রাঘাত করেছেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি রোযা ভঙ্গ না করেছে।”
মূলতঃ বিদয়াতীরা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঠিক ব্যাখ্যা না জানার কারণেই বিভ্রান্তিতে পড়েছে। উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঠিক ব্যাখ্যা হলো- জাহিলিয়াতের যুগে যিলহজ্জ শরীফ মাস ও রজবুল হারাম শরীফ মাস উনাদের মধ্যে কুরবানী করা হতো এবং রোযাও রাখা হতো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার কুরবানী ও রোযা বহাল রেখেছেন আর রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার কুরবানী ও কুরবানী উপলক্ষ্যে যে রোযা রাখা হতো যাকে রজবিয়া বলা হতো তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি যে ব্যক্তিকে বেত্রাঘাত করেছেন সে জাহিলিয়াত যুগের রসম অনুযায়ী রজবিয়া রোযা রেখেছিল। তাই তিনি তার রোযা ভাঙ্গতে বাধ্য করেন। নচেৎ হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার কি একথা জানা ছিল না যে, বছরের মাত্র পাঁচ দিন রোযা রাখা ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে নিষিদ্ধ।” এছাড়া বছরের যে কোন দিন বা মাসে রোযা রাখা জায়িয। যদি তাই হয়ে থাকে তবে অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা রজছুল হারাম শরীফ মাস উনার রোযা রাখা প্রমাণিত হওয়ার পরও তিনি কেন তাকে রোযা রাখতে নিষেধ করবেন।
কাজেই যেসব নামধারী আলিম তথা উলামায়ে সূ’রা পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ উপলক্ষ্যে রোযা রাখাকে বিদ্্য়াত ও গুনাহের কাজ বলে তাদের উক্ত সমস্ত কথা ও কাজগুলো পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ তথা ইসলামী শরীয়ত উনার বিরোধী, মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও কুফরীমূলক। অর্থাৎ সেসব নামধারী আলিম তথা উলামায়ে সূ’রা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে বিদ্য়াত বলে মূলত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করে থাকে। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ যেহেতু পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় ওহীর অন্তর্ভুক্ত। কাজেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করার অর্থই হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে অস্বীকার করা। যা কাট্টা কুফরী।
ইসলামী শরীয়ত উনার মূল উছূল হচ্ছে- কোন মুসলমান যদি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করে, বিদ্য়াত বলে কিংবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, সে ঈমান থেকে খারিজ হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদে পরিণত হবে।
আর মুরতাদের হুকুম হচ্ছে- সে যদি বিয়ে করে থাকে তাহলে তার স্ত্রী তালাক হবে, হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হবে, সমস্ত নেক আমল বরবাদ হবে। এ অবস্থায় মারা গেলে তার গোসল কাফন-দাফন এবং জানাযা কোনটাই করা জায়িয হবে না। এবং তাকে কোন মুসলমানদের করবস্থানেও দাফন করা যাবে না। তাকে কুকুর, শৃগালের ন্যায় গর্তে পুঁতে রাখতে হবে। আর যদি সে ইমাম বা খতীব হয়ে থাকে, তাহলে মুসলমান হিসেবে মুছল্লীদের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে উক্ত ইমাম ও খতীবকে ইমাম ও খতীবের পদ থেকে বহিস্কার করে এলাকাবাসীর সকল মুছল্লীদের ঈমান আক্বীদা হিফাযত করা। এরূপ কুফরীমূলক ফতওয়া দেয়ার পর থেকে তার পিছনে নামায-কালাম পড়া কোনটাই জায়িয হবে না। যদি কেউ তার পিছনে নামায আদায় করে থাকে তাহলে মুছল্লীদের দায়িত্ব-কর্তব্য হবে সমস্ত নামায দোহরায়ে পড়া। যা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। (ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়েক, আইনী ইত্যাদি ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহ)
শবে মি’রাজ এর আমল ।
Image result for শবে মিরাজশবে মি’রাজ এর আমল ।

আজ দিবাগত রাতটিই সেই পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ এর বরকতময় রাত। তাই প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, ছেলে-মেয়ে সকলের জন্যই দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, এ বরকতময় রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী, তওবা-ইস্তিগফার, পবিত্র মীলাদ শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ ও দোয়া-মুনাজাত করা এবং পরের দিন অর্থাৎ ইয়াওমুল ছুলাছা (মঙ্গলবার) দিনে রোযা রাখা।

ওলীয়ে মাদারজাত, সাইয়্যিদুল আউলিয়া,গাউছুল আযম, আওলাদুর রসূল সাইয়্যিদ মহিউদ্দিন আব্দুল কাদির জিলানী বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তার বিশ্বখ্যাত কিতাব “গুন্ইয়াতুত তালিবীন” নামক কিতাবে শবে মিরাজ-এর তথা রজব মাসে ২৭ তারিখের রোযার ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফগুলো বর্ণনা করেন।
“হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রজবুল হারাম শরীফ মাস এর ২৭ তারিখে তথা শবে মিরাজ শরীফ এর দিবাভাগে রোযা রাখবে তার আমলনামায় ৬০ মাসের রোযা রাখার ছওয়াব লেখা হবে। (সুবহানাল্লাহ)
সুত্রঃ
* আল ইতহাফ ৫ম খণ্ড পৃষ্ঠা ২০৮,
* আল মা’য়ানী আনিল হামলিল ইসফার প্রথম খণ্ড ৩৬৭ পৃষ্ঠা,
* গুনিয়াতুত তালিবীন, ক্বিসমুস ছায়ালিস ৩৩২ পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে,
“হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সালমান ফারিসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের উভয়েই বর্ণনা করেন। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার এমন একটি দিন ও রাত আছে ওই রাত্রে যে ব্যক্তি ইবাদত-বন্দিগী করবে এবং দিবাভাগে রোযা রাখবে তার আমলনামায় ওই পরিমাণ ছওয়াব লেখা হবে যে পরিমাণ ছওয়াব কোন ব্যক্তি একশত বছর রাতে ইবাদত-বন্দিগী করলে এবং একশত বছর দিনের বেলায় রোযা রাখলে তার আমলনামায় যেরূপ ছওয়াব লেখা হয়। আর সেই মুবারক রাত ও দিনটিই হচ্ছে রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ তথা পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ উনার রাত ও দিনটি।” (সুবহানাল্লাহ)
*ইমাম বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি ফাযায়েলুল
আওকাত.-পৃ-৯৬ হাদিস নং১১
নিশ্চয় জান্নাতে একটি নদী আছে যার নাম রজব | এই নদীর পানি দুধের চেয়েও শুভ্র এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি | যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোযা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ঐ নদীর পানি পান করাবেন |
* ইমাম বায়হাকী.রহমতুল্লাহি আলাইহি ফাযায়েলুল আওকাত.পৃ.৯০,হাদিস নং-৮

তাই আমাদের সকলের উচিৎ দিনটির যথাযথ মর্যাদা দেয়া।




পবিত্র রজব মাসের ২৭ তারিখের আমল ও রোজার বিষয়ে সহীহ হাদীছ সনদ সহকারে
Image result for বিভিন্ন তসবিহপবিত্র রজব মাসের ২৭ তারিখের আমল ও রোজার বিষয়ে সহীহ হাদীছ সনদ সহকারে

পবিত্র রজব মাসের ২৭ তারিখের আমল ও রোজার বিষয়ে সহীহ হাদীছ সনদ সহকারে।
أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، حَدَّثَنِي أَبُو نَصْرٍ رَشِيقُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الرُّومِيُّ إِمْلَاءً مِنْ كِتَابِهِ بالطَّابِرانِ، أَخْبَرَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِدْرِيسَ الْأَنْصَارِيُّ، حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ الْهَيَّاجِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ سُلَيْمَانَ التَّيْمِيِّ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " فِي رَجَبٍ يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ مَنْ صَامَ ذَلِكَ الْيَوْمَ، وَقَامَ تِلْكَ اللَّيْلَةَ كَانَ كَمَنْ صَامَ مِنَ الدَّهْرِ مِائَةَ سَنَةٍ، وَقَامَ مِائَةَ سَنَةٍ وَهُوَ ثَلَاثٌ بَقَيْنَ مِنْ رَجَبٍ، وَفِيهِ بَعَثَ اللهُ مُحَمَّدًا "، " وَرُوِيَ ذَلِكَ بِإِسْنَادٍ آخَرَ أَضْعَفُ مِنْ هَذَا كَمَا "
যেমন- হজরত সায়্যিদুনা সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত- প্রিয় নবী, হুজুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, "রজবে এমন একটি দিন ও একটি রাত রয়েছে, যে এদিন রোজা রাখবে, আর রাত জেগে ইবাদত করবে, তবে সে যেন ১০০ বছরের রোজা রাখল এবং ১০০ বছরের রাত জেগে ইবাদত করলো, আর তা হচ্ছে রজবের ২৭ তারিখ।" (শোয়ায়বুল ঈমান- তাকছিছু শাহরী রজব বিল যিকরী, ৫ম খন্ড ৩৪৫পৃ, হাদিস-৩৫৩০, ফাদ্বায়িলুল আওকাত ১/৯৬, জামিউল আহাদীস ১৪/৪৯৬ : হাদীস ১৪৮১২, কানযুল উম্মাল ১২/৩১২: হাদীস ৩৫১৬৯, জামেউ জাওয়ামে ১ খন্ড, নেদায়ে রাইয়ান ফি ফিক্বহিস সওমে ওয়া ফদলী রমাদ্বান ১/৪২১)

أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، أَخْبَرَنَا أَبُو صَالِحٍ خَلَفُ بْنُ مُحَمَّدٍ بِبُخَارَى، أَخْبَرَنَا مَكِّيُّ بْنُ خَلَفٍ، وَإِسْحَاقُ بْنُ أَحْمَدَ، قَالَا: حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ الْحُسَيْنِ، أَخْبَرَنَا عِيسَى وَهُوَ الْغُنْجَارُ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْفَضْلِ، عَنْ أَبَانَ، عَنْ أَنَسٍ، عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ: " فِي رَجَبٍ لَيْلَةٌ يُكْتَبُ لِلْعَامِلِ فِيهَا حَسَنَاتُ مِائَةِ سَنَةٍ، وَذَلِكَ لِثَلَاثٍ بَقَيْنَ مِنْ رَجَبٍ، فَمَنْ صَلَّى فِيهَا اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً يَقْرَأُ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ فَاتِحَةَ الْكِتَابِ وَسُورَةٌ مِنَ الْقُرْآنِ يَتَشَهَّدُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ، وَيُسَلِّمُ فِي آخِرِهِنَّ، ثُمَّ يَقُولُ: سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ مِائَةَ مَرَّةٍ، وَيَسْتَغْفِرُ اللهَ مِائَةَ مَرَّةٍ، وَيُصَلِّي عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِائَةَ مَرَّةٍ، وَيَدْعُو لِنَفْسِهِ مَا شَاءَ مِنْ أَمْرِ دُنْيَاهُ وَآخِرَتِهِ، وَيُصْبِحُ صَائِمًا فَإِنَّ اللهَ يَسْتَجِيبُ دُعَاءَهُ كُلَّهُ إِلَّا أَنْ يَدْعُو فِي مَعْصِيَةٍ "
রজব মাসে একটি রাত আছে ওই রাতের আমলকারীর সমস্ত আমলের ছওয়াব ১০০ গুণ করে লিপিবদ্ধ করা হয় সে রাতটি হলো ২৭মে রজব। যে ব্যক্তি ওই রাতে ১২ রাকায়াত নামায আদায় করবে যাতে সূরা ফাতিহা সহ অন্য কোন আয়াত শরীফ পাঠ করবে প্রতি দু’রাকায়াতে তাশাহুদ (দুরুদ শরীফ ও দুয়ায়ে মাছুরাসহ) পাঠ শেষে সালাম ফিরাবে। এবং নিম্নক্তো দুআ ১০০ বার পাঠ করবে-
سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ

অতপর ১০০ বার ইস্তিগফার পাঠ করবে অতপর ১০০ বার দুরুদ শরীফ পাঠ করবে। ওই ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত কল্যানকর যত দু‘আই করবে এবং সকালে রোযাদার অবস্থায় অবস্থান করবে তার সকল দু‘আই কবুল করা হবে, শুধুমাত্র গুণাহের কাজে জন্য দু‘আ ব্যতীত। (শোয়াবুল ঈমান- তাকছিছু শাহরী রজব বিল যিকরী, ৫ম খন্ড ৩৪৬পৃ, হাদিস-৩৫৩১, ফাদ্বায়িলুল আওকাত ১/৯৭ : হাদীস ১২, তাবয়িনুল আযাব বিমা উরিদা ফি ফাদলি রজব ১/৩১, জামিউল আহাদীস ১৪/৪৯৬ : হাদীস ১৪৮১২, কানযুল উম্মাল ১২/৩১২: হাদীস ৩৫১৭০, জামেউ জাওয়ামে ১ খন্ড বাবু হারফূ ফা, আসারুল মারফুয়া ১/৬১ , তানযিয়াতু শরীয়াতিল মারফুয়া ২/৮৯)

সূতরাং সবাই এই রাতে ইবাদত করে দিনে রোজা রেখে সহীহ হাদীসের উপর আমল করুন।