২৪৮ নং- সুওয়াল : জুমুয়ার ছানী  আযান মসজিদের ভিতরে না বাইরে দিতে হবে?

সুওয়াল : জুমুয়ার ছানী  আযান মসজিদের ভিতরে না বাইরে দিতে হবে?
জাওয়াব : ইজমা মতে জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে ইমামের সম্মুখে দিতে হবে।  হাদীছ শরীফে আছে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় থেকে দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকাল পর্যন্ত জুমুয়ার নামাযে অন্যান্য  আযানের ন্যায় একটি মাত্র আযানই প্রচলিত ছিল। অতঃপর হযরত ওসমান আলাইহিস সালাম উনার সময়ে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থিত যাওরা নামক স্থানে দ্বিতীয় আর একটি আযান (বর্তমান প্রথম  আযান) মিম্বরের নিকটে ইমাম ছাহেবের সম্মুখে দেয়া শুরু করেন। তাফসীরে আহকামুল কুরআন, শফি/ইবনুল আরাবী/আবু বকর যাসমাস, তাফসীরে রুহুল মাআনী, কুরতবী, মাযহারী, ফতহুল বারী, এলাউস্ সুনান, দুররুল মুখতার, শামী, বাদায়ে, ফতহুল ক্বাদীর ইত্যাদি কিতাবে জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে ইমাম ছাহেবের সামনে দেয়ার ব্যাপারে উম্মতের মুহাক্কিক ইমাম ও আলিমগণ উনাদের পবিত্র ইজমা শরীফ মত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।        আরো বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ৯ম সংখ্যায় জুমুয়ার নামায ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াটি পড়ুন।
 আবা-১৯ 

জুমার নামায ফরযে আইন ফতোয়া - লিংক 

২৪৭ নং- সুওয়াল: ‌পবিত্র সুরা লাহাব শরীফ উনার শানে নুযূল জানতে চাই। কেউ কেউ বলে, পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-সিফত করা হয়ছে, এটা কতটুকু সত্য? আর উক্ত সূরার মধ্যে উম্মতে হাবীবী উনাদের জন্যে কি নসীহত রয়েছে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

সুওয়াল: ‌পবিত্র সুরা লাহাব শরীফ উনার শানে নুযূল জানতে চাই। কেউ কেউ বলে, পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-সিফত করা হয়ছে, এটা কতটুকু সত্য? আর উক্ত সূরার মধ্যে উম্মতে হাবীবী উনাদের জন্যে কি নসীহত রয়েছে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।


জাওয়াব:  প্রথমতঃ পবিত্র সূরা লাহাব  শরীফ মক্কা শরীফ উনার বরকতময় স্থানে অবতীর্ণ হয়েছে। এ পবিত্র সূরা উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সংখ্যা হলো- পাঁচটি। পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ উনার শানে নুযূল সম্পর্কে বলা হয়- যখন মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করলেন যে, انذر عشير تك الاقربين.
অর্থঃ- আপনি আপনার নিকটাত্বীয়দেরকে ভয় প্রদর্শন করুন।
যেহেতু সে সময় আরব দেশের নিয়ম ছিল, কোন কোন বিশেষ কথা বলতে হলে সাফাপাহাড়ে উঠে গোত্রের লোকদের উদ্দেশ্যে ডাকা হতো। তাই নিয়ম মোতাবেক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাফা পাহাড়ে উঠে গোত্রের লোকদের ডেকে একত্র করলেন। অতঃপর বললেন, “হে লোক সকল, আমি যদি বলি পাহাড়ের অপর প্রান্তে তোমাদের জন্য এক বিরাট শত্রুদল অপেক্ষা করছে এবং তারা যে কোন সময় তোমাদের উপর আক্রমণ করতে পারে। তোমরা কি আমার একথা বিশ্বাস কর?” সকলে এক সাথে বলে উঠলো, হ্যাঁ আমরা অবশ্যই তা বিশ্বাস করি। যেহেতু  আপনি আল আমীন, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আমি শিরক ও কুফরীর কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে নির্ধারিত এক কঠিন আযাব সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করছি। অর্থাৎ তোমরা যদি মুর্তি পূঁজা না ছাড়, এক মহান আল্লাহ পাক উনাকে স্বীকার না কর, তবে তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।একথা শুনে আবূ লাহাব বলে উঠলো-
تبالك يا محمد
 (হে মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনার ধ্বংস হোক নাউজুবিল্লাহ! অতঃপর সে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাথর মারতে উদ্যত হলো। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ অবতীর্ণ হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
ابى لهت وتب...
অর্থঃ- আবূ লাহাব ও তার দুই হাত ধ্বংস হোক।....(বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ) দ্বিতীয়তঃ কোন কোন মুফাসসির, মুদাক্কিক্বগণ বলেন, পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ ব্যতীত সমগ্র পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত, মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনা করা হয়েছে। আর কেউ কেউ বলেন, পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ উনার মধ্যেও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সানা-সীফত, মর্যাদা-মর্তবা প্রকাশ পায়। এটা এভাবে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে বেয়াদবী করার কারণে আবূ লাহাব ও তার স্ত্রী ধ্বংস হয়ে গেল, তারা চির জাহান্নামী হয়ে গেল। অতএব, এটা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা, মর্তবা, শান-শওক্বতেরই বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ উনার মধ্যে মধ্যেও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-সিফত রয়েছে। তৃতীয়তঃ পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ উনার মধ্যে আমাদেরকে এ উপদেশই দেয়া হয়েছে যে, وما اتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا.
অর্থঃ- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যা নিয়ে এসেছে, তা আঁকড়িয়ে ধর, আর যার থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তার থেকে বিরত থাক।
যদি তা না কর, তবে আবূ লাহাব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা অমান্য করার কারণে তার যে অবস্থা হয়েছে, তোমাদেরও তদ্রুপ অবস্থা হবে। কাজেই আমাদের মূল দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যথাযথ তাযীম-তাকরীম ও মুহব্বত করা। আর প্রতিটি অবস্থায় উনার হুকুম-আহ্কাম, আদেশ-নিষেধ মুবারক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলা। মনগড়া মত-পথ অনুসরণ-অনুকরণ থেকে বিরত থাকা, নচেৎ আবূ লাহাবের মত অবস্থা আমাদেরও হতে পারে। কেননা মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ, অতঃপর পবিত্র সূরা মুজ্জাম্মিল শরীফ, পবিত্র সূরা মুদ্দাচ্ছির শরীফ অতঃপর পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ, তারপর পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ নাযিল করেন। পবিত্র সূরাগুলো এ তরতীবে নাযিল হওয়ার পিছনে অনেক রহস্য রয়েছে। তার মধ্যে একটি রহস্য হলো- প্রথমতঃ আমাদেরকে ইলম অর্জন করতে হবে, অতঃপর ইলম অনুযায়ী আমল করতে হবে, অতঃপর সরল পথে থাকার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করতে হবে। যদি কেউ এ ধারাবাহিকতা বজায় না রাখে, তবে তার অবস্থা আবূ লাহাবের মতই হবে।     
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা-মর্তবা মুবারক সঠিকভাবে উপলব্ধি করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
আবা-১৯
২৪৬ নং- সুওয়াল : আযানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শুনে চোখে বুছা দেয়া কি?

সুওয়াল : আযানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শুনে চোখে বুছা দেয়া কি?
জাওয়াব : আযানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শুনে চোখে বুছা দেয়া সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু; যা ছহীহ মারফু হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। (দাইলামী শরীফ, মাজমাউল বিহার, মাকাসিদুল হাসানা, মাউজুয়াতে কবীর, মারাকিউল ফালাহ্, ফতওয়ায়ে বরকতিয়া ইত্যাদি)
আরো বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকার তৃতীয় সংখ্যায় দেখুন, তাতে ৪৮টি নির্ভরযোগ্য দলীলের মাধ্যমে চোখে বুছা দেয়াকে সুন্নাতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম হিসাবে প্রমাণ করা হয়েছে।
 আবা-১৯

২৪৫ নং- সুওয়াল : পানি থাকা সত্বেও কোন অবস্থায় তাইয়্যম্মুম করা জায়েয আছে কি?

সুওয়াল : পানি থাকা সত্বেও কোন অবস্থায় তাইয়্যম্মুম করা জায়েয আছে কি?
জাওয়াব : হ্যাঁ, দুঅবস্থায় জায়েয আছে। প্রথমতঃ যে ইবাদতে তাহারাত শর্ত নেই, সে ইবাদতে পানি পাওয়া সত্বেও তাইয়্যাম্মুম করা জায়েয আছে। যেমন- মৌখিক পবিত্র কুরআন শরীফ পড়া, দ্বীনি তালীম দেয়া, রুগী দেখতে, সালাম দেয়া ও সালামের জাওয়াব দেয়া ইত্যাদি। দ্বিতীয়তঃ যে কাজে তাহারাত শর্ত আছে কিন্তু তরক করলে কাজা আদায় করতে হয়না, সে সমস্ত কাজে ওযূ করতে গেলে যদি ওটা ফৌত হওয়ার আশংকা হয়, তবে সেক্ষেত্রে তাইয়্যাম্মুম করা জায়েয আছে। যেমন- জানাযা, ঈদ, কছূফ, খুসফ ইত্যাদি। (শামী)
আবা-১৯
২৪৪ নং- সুওয়াল: আজকাল দেখা যায়, অনেকে পবিত্র কুরআন শরীফ বাংলায় অনুবাদের পাশাপাশি বাংলা ভাষায় উচ্চারণ দেয়া থাকে, আমার প্রশ্ন হলো- কেউ যদি আরবীতে পবিত্র কুরআন শরীফ পড়া না শিখে বাংলায় উচ্চারণ দেখে পবিত্র কুরআন শরীফ পড়ে, তবে তা জায়েয হবে কি?

সুওয়াল: আজকাল দেখা যায়, অনেকে পবিত্র কুরআন শরীফ বাংলায় অনুবাদের পাশাপাশি বাংলা ভাষায় উচ্চারণ দেয়া থাকে, আমার প্রশ্ন হলো- কেউ যদি আরবীতে পবিত্র কুরআন শরীফ পড়া না শিখে বাংলায় উচ্চারণ দেখে পবিত্র কুরআন শরীফ পড়ে, তবে তা জায়েয হবে কি?
জাওয়াব : না, জায়েয নেই। বাংলায় লিখিত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উচ্চারণ পড়লে মাখরাজ আদায় করা কখনোই সম্ভব নয়। যেমন-
ج ذ , ظ ز ,  ا    ع     ,  ح    ط   ت
ইত্যাদি হরফ বা অক্ষরগুলি বাংলায় পার্থক্য করা দুরূহ্ ব্যাপার। আর মাখরাজ আদায় করা ফরজ। কারণ মহান আল্লাহ পাক  তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বলেন, 
ورتل القران تر تيلا.
অর্থঃ- তোমরা তারতীল (তাজবীদ)-এর সাথে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত কর। কাজেই আমাদের সকলের উচিৎ, আরবীতে তিলাওয়াত শিখে পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করা।
আবা-১৯
২৪৩ নং- সুওয়াল : আমার স্বামী পর্দা করা পছন্দ করেনা, এই অবস্থাতে আমি কি করবো?

সুওয়াল : আমার স্বামী পর্দা করা পছন্দ করেনা, এই অবস্থাতে আমি কি করবো?







জাওয়াব : পর্দা করা ফরজ। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক ফরমান-
 وقرن فى بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولى.
অর্থঃ- তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান কর। আইয়্যামে জাহিলিয়াতের মত (অন্ধকার যুগ) বে-পর্দা হয়ে সৌন্দর্য প্রদর্শন করোনা। 
আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
 المرأة عورة فاذا خرجت استشر فها الشيطان.
অর্থঃ- মেয়েরা পর্দায় অবস্থান করবে। যখন কোন মেয়ে ঘর থেকে বের হয়, তখন শয়তান তার দ্বারা পাপ কার্য করানোর জন্য চেষ্টা চালায়।
কাজেই কোন অবস্থাতেই শরয়ী পর্দা উনার খেলাফ চলা যাবেনা। সকল অবস্থায়ই শরয়ী পর্দা উনার হুকুম মেনে চলতে হবে। কারণ অন্যান্য ফরজের ন্যায় মহিলাদের জন্য পর্দা করা ফরজে আইন। স্বামী পর্দায় চলতে না দিলেও পর্দা করতে হবে। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন,
لا طاعة لمخلوق فى معصية الخالق.
অর্থঃ- মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী করে কোন মাখলুকাতের আনুগত্য করা জায়েয নেই।    সুতরাং যেভাবেই হোক স্বামীকে বুঝায়ে পর্দা মোতাবেক চলতে হবে। যেহেতু স্বামী মুসলমান, সেহেতু হেকমতের সাথে তাকে বুঝাতে চেষ্টা করতে হবে এবং পর্দা করতে হবে। কেননা হযরত আছিয়া আলাইহাস সালাম উনার স্বামী ফেরাউন কাফির হওয়া সত্বেও তিনি পরিপূর্ণরূপে দ্বীন উনার উপর হক্ব উনার উপর ছিলেন। কাজেই কোন অবস্থাতেই সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার হুকুমের খেলাফ চলা যাবেনা। 
আবা-১৯
২৪২ নং- সুওয়াল : ওযুর নিয়তে তাইয়্যাম্মুম করলে ফরজ গোসলের তাইয়্যাম্মুম আদায় হবে কি?

সুওয়াল : ওযুর নিয়তে তাইয়্যাম্মুম করলে ফরজ গোসলের তাইয়্যাম্মুম আদায় হবে কি?
জাওয়াব : হ্যাঁ, আদায় হয়ে যাবে। (হেদায়া)
আবা-১৯
২৪১ নং- সুওয়াল : নামায ক্বিরায়াত পাঠ করা ফরজ আমরা জানি। আর পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করা ওয়াজিব। এখন যদি কোন ব্যক্তি শুধু পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করার পর রুকু-সিজদা করে  নামায শেষ করে, তবে ক্বিরায়াত পাঠ করা যে ফরজ, সে ফরজ আদায় হবে কি?

সুওয়াল : নামায ক্বিরায়াত পাঠ করা ফরজ আমরা জানি। আর পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করা ওয়াজিব। এখন যদি কোন ব্যক্তি শুধু পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করার পর রুকু-সিজদা করে  নামায শেষ করে, তবে ক্বিরায়াত পাঠ করা যে ফরজ, সে ফরজ আদায় হবে কি?



জাওয়াব : হ্যাঁ, নামাযে ক্বিরায়াত পাঠ করা ফরজ, আর পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার পবিত্র ৭ আয়াত শরীফ পাঠ করা ৭টি ওয়াজিব। শুধু পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করলেই ক্বিরায়াতের ফরজ আদায় হয়ে যাবে, তবে সূরা মিলানো ওয়াজিব। আর যদি কেউ শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করে ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য সূরা না মিলায়ে নামায শেষ করে, তবে নামায পুণরায় পড়া ওয়াজিব। আর যদি কেউ পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করার পর ভুলে অন্য পবিত্র সূরা শরীফ না মিলায়ে রুকু-সিজদা করে ফেলে, তাহলে তার সিজদায়ে সাহু দেয়া ওয়াজিব। আর সিজদায়ে সাহু দিলেই  নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। নামাযে ক্বিরায়াত পড়া ফরজ। ফরজ পরিমাণ ক্বিরায়াত হলো- বড় এক পবিত্র আয়াত শরীফ অথবা ছোট পবিত্র তিন আয়াত শরীফ। অক্ষরের সংখ্যা হলো- পবিত্র বড় আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ১৮ অক্ষর এবং ছোট আয়াত শরীফে ৬ অক্ষর।

আবা-১৯
২৪০ নং- সুওয়াল : বিনা ব্যথায় কান হতে পুঁজ অথবা পানি বের হলে ওযু কি ভঙ্গ হবে?

সুওয়াল : বিনা ব্যথায় কান হতে পুঁজ অথবা পানি বের হলে ওযু কি ভঙ্গ হবে?
জাওয়াব : ব্যথা ব্যতীত পুঁজ অথবা পানি কান থেকে বের হলে ওযু ভঙ্গ হবেনা। যদি ব্যথা হয়ে পুঁজ অথবা বদরস (পানি) বের হয়, তবে ওযু ভঙ্গ হবে। (আলমগীরী)

আবা-১৯
২৩৯ নং- সুওয়াল : শরহে জামী কিতাব উনার মুছান্নিফ আল্লামা আব্দুর রহমান জামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কি বাইয়াত হয়েছিলেন? হলে উনার হযরত পীর ছাহেব উনার নাম মুবারক কি ছিল?

সুওয়াল : শরহে জামী কিতাব উনার মুছান্নিফ আল্লামা আব্দুর রহমান জামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কি বাইয়াত হয়েছিলেন? হলে উনার হযরত পীর ছাহেব উনার নাম মুবারক কি ছিল?
জাওয়াব : হযরত আল্লামা আবদুর রহমান জামী  রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বাইয়াত হয়েছিলেন এবং উনার পীর সাহেব ক্বিবলা উনার নাম মুবারক হলো- হযরত খাজা ওবায়দুল্লাহ্ আহরান। হযরত খাজা ওবায়দুল্লাহ আহ্বার রহমতুল্লাহি আলাইহি নক্শবন্দীয়া সিলসিলার উর্দ্ধতন বুযুর্গদের অন্তর্ভূক্ত।

আবা-১৯
২৩৮ নং- সুওয়াল : দেখা যায় অনেকে টিয়া, বানর ও গণকদের দ্বারা ভাগ্য গণনা করে থাকে, শরীয়তের দৃষ্টিতে এর ফয়সালা কি?

সুওয়াল : দেখা যায় অনেকে টিয়া, বানর ও গণকদের দ্বারা ভাগ্য গণনা করে থাকে, শরীয়তের দৃষ্টিতে এর ফয়সালা কি?
জাওয়াব :  পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,
 ان رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن ثمن الكلب ومهر البغى وحلوان الكاهن.
অর্থঃ- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিষেধ করেছেন, কুকুর বিক্রির মূল্য (নেয়া) হতে, বেশ্যাবৃত্তীর মজুরী নেয়া হতে ও (ভাগ্য) গণনার মজুরী হতে।
          উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে বুঝা যায়, ভাগ্য গণনা তা যেভাবেই হোক না কেন, যে ভাগ্য গণনা করবে ও যে করাবে উভয়টাই হারাম, সেটা টিয়া দিয়ে, বানর দিয়ে আর তারকা নক্ষত্র দেখে যেভাবেই হোক না কেন, সর্বাবস্থায়ই হারাম হবে।

আবা-১৯
২৩৭ নং- প্রশ্নঃ- খুৎবার সময় যে আযান দেয়া হয়, সে আযানের জবাব কি শুধু ইমাম সাহেবই দিবেন, নাকি মুসল্লিগণকেও দিতে হবে? জবাব দেয়া কি জরুরী নয়”

সুওয়াল: মাসিক মদিনা নভেম্বর-১৯৯৪ সংখ্যায় নিম্নলিখিত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-
প্রশ্নঃ- খুৎবার সময় যে আযান দেয়া হয়, সে আযানের জবাব কি শুধু ইমাম সাহেবই দিবেন, নাকি মুসল্লিগণকেও দিতে হবে? জবাব দেয়া কি জরুরী নয়  
উত্তর (মদীনা পত্রিকা): ইমাম যখন খুৎবার জন্য মিম্বরে আরোহন করেন, তখন থেকে খুৎবা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কোন কথাবার্তা বলা এমনকি  নামায পড়াও জায়েয নয়। একই কারণে আযানের জবাব দেয়া, খুৎবার মধ্যে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উচ্চারিত হতে শুনলে শব্দ করে দরূদ শরীফ পড়া ইত্যাদি কিছুই জায়েয নয়।         
মাসিক মদীনা পত্রিকার এ উত্তর শুদ্ধ হয়েছে কি?
জাওয়াব: মাসিক মদীনা পত্রিকার উল্লিখিত উত্তর শুদ্ধ হয়নি। জুমুয়ার দিন ছানী আযানের জাওয়াব দেয়া জায়েয, যার স্বপক্ষে বহু নির্ভরযোগ্য দলীলসমূহ রয়েছে। নিম্নে তার অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলসমূহ পেশ করা হলো-      এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن ابى امامة قال سمعت معاوية بن ابى سفيان رضى الله عنهما- وهو جالس على المنبر اذن المؤذن فقال الله اكبر، الله الكبر- الخ- فلما ان قضى التأذين- قال يا ايها الناس انى سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم على هذا المجلس حين اذن المؤذن بقول ماسمعتم منى من مقالتى. (بخارى شريف، نسائ شريف)
অর্থঃ- হযরত আবূ উমামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি শুনেছি ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জুমুয়ার দিন মিম্বরের উপর বসে মুয়াজ্জিনের আযানের সঙ্গে সঙ্গে নিজেও আযানের শব্দসমূহকে উচ্চারণ করেন এবং আযান শেষে বলেন, হে লোক সকল! আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জুমুয়ার দিন মিম্বরে বসা অবস্থায় মুয়াজ্জিনের  আযান শ্রবণে এরূপ বলতে শুনেছি, যেরূপ তোমরা আমার থেকে শুনতে পেলে।(বুখারী শরীফ, নাসাঈ শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
قال النبيى صلى الله عليه وسلم- من قال مين يسمع الاذان والاقامة اللهم ربهذه الدعة الخ. حلت له شفاعتى يوم القيامة. (بخارى شريف)
অর্থঃ- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি আযান ও ইক্বামত শ্রবণ করে, আল্লাহুম্মা রব্বা হাজিহিদ্ দাওয়্যাতি ..... এ দোয়া পাঠ করবে, তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আমি শুপারিশ করবো।(বুখারী শরীফ)          ওমদাতুর রিওয়াইয়্যাহ কিতাবে উল্লেখ আছে, ছানী আযানের পর দোয়া করা যাবে কিন্তু ইমাম সাহেব খুৎবা শুরু করার পূর্বে দোয়া করতে হবে।          কেউ কেউ নিম্নোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা ছানী আযানের পর দোয়া করা নাজায়েয বলে থাকেন।     পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
  اذاخرج الامام ضلا صلوة ولا كلام. (طبرانى شريف)
অর্থঃ- ইমাম ছাহেব যখন (খুৎবার জন্য) বের হয়, তখন নামায পড়া ও কথা বলা নিষেধ। (তিবরানী শরীফ)     অথচ উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ছাহেবাইন অর্থাৎ হযরত ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- ইমাম ছাহেব হুজরা (রুম) হতে বের হলে  নামায পড়া নিষেধ, কিন্তু খুৎবা শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত (দ্বীনি) কথা বলা জায়েয।(আলমগীরী, কাফী, সিরাজুল ওয়াহহাজ্, তাহতাবী)
এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুয়াত্তা শরীফ কিতাব উনার মধ্যে উল্লেখ করেন, হযরত ইবনে শিহাব জুহুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
  خروج الامام يقطع الصلوة وخطبته يقطع الكلام.
অর্থঃ- ইমাম ছাহেবে উনার আগমন নামাযকে বন্ধ করে দেয়, আর উনার খুৎবা কথা-বার্তাকে বন্ধ করে দেয়।অর্থাৎ ইমাম ছাহেব যখন খুৎবার জন্য হুজরা (রুম) হতে বের হবেন, তখন নামায (সুন্নত বা নফল) পড়া নিষেধ। আর যখন খুৎবা শুরু করে দিবেন, তখন নামাযের সাথে সাথে কথা-বার্তা বলাও নিষেধ। কাজেই খুৎবা শুরু করার পূর্বে দোয়া-দুরূদ, তাসবীহ্-তাহ্লীল ও দ্বীনী কথা-বার্তা বলা জায়েয।
মূলতঃ জুমুয়ার ছানী আযানের জাওয়াব দেয়া এবং ছানী আযানের পর দোয়া করা বা পড়া সম্পর্কে আইম্মায়ে মুজতাহিদগণ উনাদের মধ্যে ইখতিলাফ (মত বিরোধ) রয়েছে। হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে মাকরূহ্ তানযীহী। কিন্তু সাহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে মুস্তাহাব। (হেদায়া, নূরুদ্ দেরায়া, নুরুল হিদায়া, ইনায়া, নিহায়া, ইমদাদুল মুফতীন, মায়ারেফে মাদানিয়া) তবে         সহীহ্ ক্বওল মতে হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকটও ছানী আযানের জাওয়াব দেয়া ও দোয়া পড়া মাকরূহ্ নয়।
যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
  واما قبل الشروع بعد صعوده على المنبر قيكره الكلام الدنيوى اتفاقا- واما الكلام الدينى كا لتسبيح والتهليل فلا يكره عندهما- وروى بعض المشائخ عنه انه بكره والاصح انه لا يكره عنده ايضاسرحيه فى النهاية وغيره- فعلى هذا لا يكره اجابة اذان الثانى ودعاء الوسيلة بعده مالم يشرغ الامام فى الخطبة وقد ثبت ذلك من فعل معاوية رضى الله عنه فى الصحيح البخارى- حاشيهء هذاية، وهكذا فى النهايه، وحاشيهء شرح وقايه)
অর্থঃ- ইমাম ছাহেব মিম্বরে উঠে খুৎবা পাঠ শুরু করার পূর্বে দুনিয়াবী (পার্থিব) কথা-বার্তা বলা সর্ব সম্মতিক্রমে মাকরূহ্। আর হযরত ইমাম আবূ ইউসূফ  রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ  রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে দ্বীনী কথা-বার্তা যেমন, তাসবীহ-তাহ্লীল, দোয়া-দুরূদ পাঠ করা মাকরূহ্ নয়। কোন কোন মাশায়েখ বর্ণনা করেন যে, ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট জুমুয়ার ছানী আযানের জাওয়াব দেয়া মাকরূহ্। তবে অধিক সহীহ্ মত হলো- ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকটও ছানী আযানের জাওয়াব দেয়া মাকরূহ্ নয়।এ ব্যাপারে নেহায়া ও অন্যান্য কিতাবে স্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ছানী আযানের জাওয়াব দেয়া ও খুৎবা শুরু করার পূর্বে আযানের দোয়া পড়া মাকরূহ্ নয়। (বরং জায়েয) আর এটা সহীহ্ বুখারী শরীফ উনার মধ্যে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আমল দ্বারাও প্রমাণিত হয়। এরূপ শরহে বেকায়ার হাশীয়াতেও উল্লেখ আছে। (হাশিয়ায়ে হেদায়া, নেহায়া, শরহে বেকায়া) এবং বুখারী শরীফ উনার মধ্যে হযরত আবূ উমামাহ্  রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আমল দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, ছানী আযানের পর দ্বীনী কথা-বার্তা যেমন : দোয়া-দুরূদ, তাসবীহ্-তাহ্লীল, মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দেয়া জায়েয, তবে তা খুৎবা শুরু করার পূর্বে হতে হবে। সুতরাং ছানী আযানের জাওয়াব দেয়া  জায়েয প্রমাণিত হয়। আর ছানী আযানের পর খুৎবা শুরু করার পূর্বে যদি দ্বীনী কথা-বার্তা বলা নিষেধ বা নাজায়েয হতো, তবে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আযানের পর কথা বলতেন না। আর তাই বুখারী শরীফ উনার শরাহ্ আইনী কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
  مما يستفاد، منه تعلم العلم وتعليمه من الامام وهو على المنبر وفيه اجابة الخطيب للمؤذن وهو على المنبر وفيه قول المجيب وانا كذالك وظاهره ان هذا المقداريكفى لكن الا ولى ان يقول مثل قول المؤذن. (عينى شرح بخارى)
অর্থঃ- উল্লেখিত (হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আযানের পর কথা বলা সংক্রান্ত) পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা (নিম্নলিখিত) বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে যায় যে, (১) খতীব ছাহেব মিম্বরে থাকা অবস্থায় মুক্তাদীগণ উনাদেরকে কোন মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দেয়া, (২) মুক্তাদীগণ কোন মাসয়ালা শিক্ষা করা, (৩) মুয়াজ্জিনের আযানে (আমি এরূপ বলছি) শ্রোতাদের জবাব দেয়া জায়েয। প্রকাশ থাকে যে, ঐভাবে সংক্ষেপে জবাব দিলেও চলবে, তবে পরিপূর্ণ জবাব দেয়াই উত্তম। (আইনী শরহে বুখারী)
          উপরোক্ত কিতাবের ইবারত দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, ছানী আযানের জবাব দেওয়া ও দোয়া পড়া জায়েয। সুতরাং জুমুয়ার দিন ছানী আযানের জাওয়াব দেয়া এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শুনে দরূদ শরীফ পড়া জায়েয। শুধু তাই নয়, ছানী  আযানের জাওয়াব দেয়ার সাথে সাথে আযানের পর খুৎবা শুরু করার পূর্বে হাত উঠায়ে মুনাজাত করাও জায়েয। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১৮তম সংখ্যা পড়ে দেখুন। সেখানে বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব হতে মোট ২৮টি দলীল দ্বারা প্রমাণ করা হয়েছে যে, ছানী  আযানের জাওয়াব দেয়া ও হাত উঠায়ে মুনাজাত করা জায়েয।
 আবা-১৯

২৩৬ নং- সুওয়াল:  চুলে বা দাড়ীতে কলপ দেয়া জায়েয কিনা, বিস্তারীত জানতে চাই।

সুওয়াল: মাসিক মদীনার নভেম্বর-১৯৯৪ সংখ্যায় নিম্মোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপানো হয়-
প্রশ্ন:- চুলে বা দাড়ীতে কলপ দেয়া জায়েয কিনা, বিস্তারীত জানতে চাই।
উত্তর (মদীনা পত্রিকা):- হযরত নবী করীম (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুল দাড়ীতে খেযাব ব্যবহার করেছেন কিনা এ সম্পর্কিত বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। এ কারণে খেযাবের মাসআলাও বিভিন্ন ধরণের হয়েছে। তবে সর্বপেক্ষা নির্ভর করার মত হচ্ছে, প্রিয় নবীজী কখনও কখনও চুল দাড়ীতে খেযাব ব্যবহার করেছেন। এ জন্য হানাফী ইমামগণ খেযাব ব্যবহার মোস্তাহাব এবং শাফী মাযহাবের ইমামগণ সুন্নত বলেছেন। তবে কালো খিযাব সম্পর্কে হানাফীগণ উনাদের অভিমত হচ্ছে এটা মকরূহ্। না করা উচিৎ। কিন্তু শাফী মাযহাবের বর্ণনায় কালো খিযাব অবৈধ সাব্যস্ত করা হয়। 
এখন আমি জানতে চাই উক্ত উত্তর কি সঠিক হয়েছে? দলীলসহ জানালে কৃতজ্ঞ হবো।
জাওয়াব: মাসিক মদীনা পত্রিকার প্রশ্নের উত্তর শুদ্ধ হয়নি। কারণ সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও সহীহ্ বর্ণনা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমগ্র পবিত্র হায়াত মুবারকে একবারও খেযাব বা কলপ ব্যবহার করেননি। কেননা বিভিন্ন রেওয়ায়েত অনুযায়ী দেখা যায়- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাদা চুল ও দাড়ী মুবারক উনার সংখ্যা ছিল মোট- ১৪, ১৭, ১৮, ২০ ইত্যাদি। যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেভাবে দেখেছেন, তিনি সেভাবেই বর্ণনা করেছেন। তবে ২০টির বেশী কেউ বর্ণনা করেননি। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عن عيد الله بن عمر رضى الله عنهما قال انما كان شيب رسول الله صلى الله عليه وسلم نحوا من عشرين شعرة بيضاء.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল মোবারক বিশটির মত সাদা হয়েছিল।
উক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাড়ী মুবারক ও চুল মোবারকসহ মোট ২০টি সাদা হয়েছিল। তাও আবার চুল মুবারক বা দাড়ী মোবারক উনার একস্থানে নয় বরং বিভিন্ন স্থান মিলিয়ে, যার কারণে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল বা দাড়ী মোবারক কালোই দেখা যেতো। খেয়াল না করলে পাকা চুল মুবারক বা দাড়ী মুবারক দেখা যেতো না। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে মাত্র ২০টি চুল মুবারক ও দাড়ী মুবারক উনার জন্যে খেযাব ব্যবহার করার প্রশ্নই উঠেনা। কারণ খেযাব ব্যবহার করা হয় সাদা চুলের জন্যে।
নিম্মোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা একথাটি আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়-
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
عن قتادة قال قلت لانس بن مالك هل خضب رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لم يبلغ ذلك اغاكان شيبا فى صدغيه. (ترمذى شريف)
অর্থঃ- হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন- আমি হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম,  নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খেযাব ব্যবহার করেছেন কি? হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল মুবারক বা দাড়ী মুবারক ওগুলো খেযাব ব্যবহার করার অবস্থায় পেীঁছেনি, উনার কান মোবারকদ্বয়ের পাশে মাত্র কয়েকখানা চুল মোবারক সাদা হয়েছিল।(তিরমিযী শরীফ)
কাজেই হযরত আনাস ইবনে মালিক  রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণনা দ্বারাও স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো খেযাব ব্যবহার করেননি। আর যারা বলেছেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খেযাব ব্যবহার করেছেন, তাদের এরূপ বলার কারণ হলো- চুল বা দাড়ী সাদা হওয়ার পূর্বে সাধারণতঃ কিছুটা লালচে রং ধারণ করে থাকে, সম্ভবতঃ যারা খেযাবের পক্ষে বলেছেন, তারা উক্ত লালচে রং দেখেই বলেছেন।
তবে হ্যাঁ, খলীফাতু রাসূলিল্লাহ্ হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালামসহ অনেক হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা খেযাব ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সে খেযাব ছিল কাতম মিশ্রিত মেহদী বা মেন্দি। অর্থাৎ মেহদী পাতার সাথে কাতম নামক গাছ মিশ্রিত করে, তার দ্বারা খেযাব লাগানো হতো, ওটা ব্যবহারে দাড়ী লাল বা জাফরানী রং ধারণ করতো।
অতএব, দাড়ী বা চুল রঙ্গিন করার জন্যে মেহদী পাতার খেযাব ব্যবহার করা জায়েয ও সুন্নতে ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। কিন্তু কালো খেযাব ব্যবহার করা আমাদের হানাফী মাযহাব মোতাবেক মাকরূহ তাহরীমী। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কালো খেযাব ব্যবহার করতে সম্পূর্ণ নিষেধ করেছেন। কালো খেযাব তা দুধরণের হয়ে থাকে- (১) যেটা ব্যবহার করলে আবরণ বা প্রলেপ পড়েনা কিন্তু কালো হয়, এ ধরণের কালো রংয়ের খেযাব ব্যবহার করাও ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে নিষেধ রয়েছে। অর্থাৎ মাকরূহ্ তাহরীমী।  (২) যেটা ব্যবহার করলে চুল বা দাড়িতে নেল পালিশের ন্যায় একটি আবরণ পড়ে যায়, যার কারণে মূল দাড়ী বা চুলে পানি পৌঁছেনা, যেকারণে তার ওযূ ও ফরজ গোসল কিছুই দুরস্ত হবেনা। সুতরাং যতদিন সে উক্ত খেযাব বা কলপ ব্যবহার করবে, ততদিন সে পবিত্র হবেনা। এরূপ কালো খেযাব ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম। আমাদের দেশে খেযাবগুলো সাধারণতঃ এ ধরণের হয়ে থাকে।       
অতএব, মূলকথা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওনার হায়াত মুবারকে কখনো খেযাব ব্যবহার করেননি, এটাই সর্বপেক্ষা বিশুদ্ধ ও নির্ভযোগ্য মত। যেটা পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই স্পষ্ট প্রমাণিত। আর যে কালো খেযাব বা কলপ ব্যবহার করার কারণে দাড়ী বা চুলে আবরণ বা প্রলেপ পড়েনা, তা ব্যবহার করা হানাফী মাযহাব মোতাবেক মাকরূহ্ তাহরীমী। আর যেটা ব্যবহার করলে চুল বা দাড়ীতে নখ পালিশের ন্যায় আবরণ বা প্রলেপ পড়ে যায়, যার কারণে ওযূ বা গোসলের সময় তার মূল দাড়ী বা চুলে পানি পৌঁছেনা। আর এ অবস্থায় যদি সে মারা যায়, তবে তার জানাযার  নামায শুদ্ধ হবেনা। কারণ তাকে গোসল দেয়ার সময় তার দাড়ী বা চুলে পানি না পৌঁছার কারণে সে পবিত্র হবেনা।
আর আমরা তাহক্বীক্ব করে দেখেছি, বর্তমানে বাজারে যেসকল কলপ বা খেযাব পাওয়া যায়, তা ব্যবহার করলে চুল বা দাড়ীতে নখ পালিশের ন্যায় প্রলেপ পড়ে যায়। প্রলেপ পড়েনা এ ধরণের খেযাব বা কলপ বাজারে পাওয়া যায়না। অতএব, বর্তমান বাজারের খেযাব বা কলপ ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয।
 আবা-১৯