২৩৬ নং- সুওয়াল: চুলে বা দাড়ীতে কলপ দেয়া জায়েয কিনা, বিস্তারীত জানতে চাই।


সুওয়াল: মাসিক মদীনার নভেম্বর-১৯৯৪ সংখ্যায় নিম্মোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপানো হয়-
প্রশ্ন:- চুলে বা দাড়ীতে কলপ দেয়া জায়েয কিনা, বিস্তারীত জানতে চাই।
উত্তর (মদীনা পত্রিকা):- হযরত নবী করীম (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুল দাড়ীতে খেযাব ব্যবহার করেছেন কিনা এ সম্পর্কিত বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। এ কারণে খেযাবের মাসআলাও বিভিন্ন ধরণের হয়েছে। তবে সর্বপেক্ষা নির্ভর করার মত হচ্ছে, প্রিয় নবীজী কখনও কখনও চুল দাড়ীতে খেযাব ব্যবহার করেছেন। এ জন্য হানাফী ইমামগণ খেযাব ব্যবহার মোস্তাহাব এবং শাফী মাযহাবের ইমামগণ সুন্নত বলেছেন। তবে কালো খিযাব সম্পর্কে হানাফীগণ উনাদের অভিমত হচ্ছে এটা মকরূহ্। না করা উচিৎ। কিন্তু শাফী মাযহাবের বর্ণনায় কালো খিযাব অবৈধ সাব্যস্ত করা হয়। 
এখন আমি জানতে চাই উক্ত উত্তর কি সঠিক হয়েছে? দলীলসহ জানালে কৃতজ্ঞ হবো।
জাওয়াব: মাসিক মদীনা পত্রিকার প্রশ্নের উত্তর শুদ্ধ হয়নি। কারণ সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও সহীহ্ বর্ণনা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমগ্র পবিত্র হায়াত মুবারকে একবারও খেযাব বা কলপ ব্যবহার করেননি। কেননা বিভিন্ন রেওয়ায়েত অনুযায়ী দেখা যায়- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাদা চুল ও দাড়ী মুবারক উনার সংখ্যা ছিল মোট- ১৪, ১৭, ১৮, ২০ ইত্যাদি। যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেভাবে দেখেছেন, তিনি সেভাবেই বর্ণনা করেছেন। তবে ২০টির বেশী কেউ বর্ণনা করেননি। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عن عيد الله بن عمر رضى الله عنهما قال انما كان شيب رسول الله صلى الله عليه وسلم نحوا من عشرين شعرة بيضاء.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল মোবারক বিশটির মত সাদা হয়েছিল।
উক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাড়ী মুবারক ও চুল মোবারকসহ মোট ২০টি সাদা হয়েছিল। তাও আবার চুল মুবারক বা দাড়ী মোবারক উনার একস্থানে নয় বরং বিভিন্ন স্থান মিলিয়ে, যার কারণে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল বা দাড়ী মোবারক কালোই দেখা যেতো। খেয়াল না করলে পাকা চুল মুবারক বা দাড়ী মুবারক দেখা যেতো না। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে মাত্র ২০টি চুল মুবারক ও দাড়ী মুবারক উনার জন্যে খেযাব ব্যবহার করার প্রশ্নই উঠেনা। কারণ খেযাব ব্যবহার করা হয় সাদা চুলের জন্যে।
নিম্মোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা একথাটি আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়-
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
عن قتادة قال قلت لانس بن مالك هل خضب رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لم يبلغ ذلك اغاكان شيبا فى صدغيه. (ترمذى شريف)
অর্থঃ- হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন- আমি হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম,  নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খেযাব ব্যবহার করেছেন কি? হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল মুবারক বা দাড়ী মুবারক ওগুলো খেযাব ব্যবহার করার অবস্থায় পেীঁছেনি, উনার কান মোবারকদ্বয়ের পাশে মাত্র কয়েকখানা চুল মোবারক সাদা হয়েছিল।(তিরমিযী শরীফ)
কাজেই হযরত আনাস ইবনে মালিক  রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণনা দ্বারাও স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো খেযাব ব্যবহার করেননি। আর যারা বলেছেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খেযাব ব্যবহার করেছেন, তাদের এরূপ বলার কারণ হলো- চুল বা দাড়ী সাদা হওয়ার পূর্বে সাধারণতঃ কিছুটা লালচে রং ধারণ করে থাকে, সম্ভবতঃ যারা খেযাবের পক্ষে বলেছেন, তারা উক্ত লালচে রং দেখেই বলেছেন।
তবে হ্যাঁ, খলীফাতু রাসূলিল্লাহ্ হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালামসহ অনেক হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা খেযাব ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সে খেযাব ছিল কাতম মিশ্রিত মেহদী বা মেন্দি। অর্থাৎ মেহদী পাতার সাথে কাতম নামক গাছ মিশ্রিত করে, তার দ্বারা খেযাব লাগানো হতো, ওটা ব্যবহারে দাড়ী লাল বা জাফরানী রং ধারণ করতো।
অতএব, দাড়ী বা চুল রঙ্গিন করার জন্যে মেহদী পাতার খেযাব ব্যবহার করা জায়েয ও সুন্নতে ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। কিন্তু কালো খেযাব ব্যবহার করা আমাদের হানাফী মাযহাব মোতাবেক মাকরূহ তাহরীমী। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কালো খেযাব ব্যবহার করতে সম্পূর্ণ নিষেধ করেছেন। কালো খেযাব তা দুধরণের হয়ে থাকে- (১) যেটা ব্যবহার করলে আবরণ বা প্রলেপ পড়েনা কিন্তু কালো হয়, এ ধরণের কালো রংয়ের খেযাব ব্যবহার করাও ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে নিষেধ রয়েছে। অর্থাৎ মাকরূহ্ তাহরীমী।  (২) যেটা ব্যবহার করলে চুল বা দাড়িতে নেল পালিশের ন্যায় একটি আবরণ পড়ে যায়, যার কারণে মূল দাড়ী বা চুলে পানি পৌঁছেনা, যেকারণে তার ওযূ ও ফরজ গোসল কিছুই দুরস্ত হবেনা। সুতরাং যতদিন সে উক্ত খেযাব বা কলপ ব্যবহার করবে, ততদিন সে পবিত্র হবেনা। এরূপ কালো খেযাব ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম। আমাদের দেশে খেযাবগুলো সাধারণতঃ এ ধরণের হয়ে থাকে।       
অতএব, মূলকথা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওনার হায়াত মুবারকে কখনো খেযাব ব্যবহার করেননি, এটাই সর্বপেক্ষা বিশুদ্ধ ও নির্ভযোগ্য মত। যেটা পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই স্পষ্ট প্রমাণিত। আর যে কালো খেযাব বা কলপ ব্যবহার করার কারণে দাড়ী বা চুলে আবরণ বা প্রলেপ পড়েনা, তা ব্যবহার করা হানাফী মাযহাব মোতাবেক মাকরূহ্ তাহরীমী। আর যেটা ব্যবহার করলে চুল বা দাড়ীতে নখ পালিশের ন্যায় আবরণ বা প্রলেপ পড়ে যায়, যার কারণে ওযূ বা গোসলের সময় তার মূল দাড়ী বা চুলে পানি পৌঁছেনা। আর এ অবস্থায় যদি সে মারা যায়, তবে তার জানাযার  নামায শুদ্ধ হবেনা। কারণ তাকে গোসল দেয়ার সময় তার দাড়ী বা চুলে পানি না পৌঁছার কারণে সে পবিত্র হবেনা।
আর আমরা তাহক্বীক্ব করে দেখেছি, বর্তমানে বাজারে যেসকল কলপ বা খেযাব পাওয়া যায়, তা ব্যবহার করলে চুল বা দাড়ীতে নখ পালিশের ন্যায় প্রলেপ পড়ে যায়। প্রলেপ পড়েনা এ ধরণের খেযাব বা কলপ বাজারে পাওয়া যায়না। অতএব, বর্তমান বাজারের খেযাব বা কলপ ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয।
 আবা-১৯

0 Comments: