২৪৭ নং- সুওয়াল: ‌পবিত্র সুরা লাহাব শরীফ উনার শানে নুযূল জানতে চাই। কেউ কেউ বলে, পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-সিফত করা হয়ছে, এটা কতটুকু সত্য? আর উক্ত সূরার মধ্যে উম্মতে হাবীবী উনাদের জন্যে কি নসীহত রয়েছে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।


সুওয়াল: ‌পবিত্র সুরা লাহাব শরীফ উনার শানে নুযূল জানতে চাই। কেউ কেউ বলে, পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-সিফত করা হয়ছে, এটা কতটুকু সত্য? আর উক্ত সূরার মধ্যে উম্মতে হাবীবী উনাদের জন্যে কি নসীহত রয়েছে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।


জাওয়াব:  প্রথমতঃ পবিত্র সূরা লাহাব  শরীফ মক্কা শরীফ উনার বরকতময় স্থানে অবতীর্ণ হয়েছে। এ পবিত্র সূরা উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সংখ্যা হলো- পাঁচটি। পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ উনার শানে নুযূল সম্পর্কে বলা হয়- যখন মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করলেন যে, انذر عشير تك الاقربين.
অর্থঃ- আপনি আপনার নিকটাত্বীয়দেরকে ভয় প্রদর্শন করুন।
যেহেতু সে সময় আরব দেশের নিয়ম ছিল, কোন কোন বিশেষ কথা বলতে হলে সাফাপাহাড়ে উঠে গোত্রের লোকদের উদ্দেশ্যে ডাকা হতো। তাই নিয়ম মোতাবেক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাফা পাহাড়ে উঠে গোত্রের লোকদের ডেকে একত্র করলেন। অতঃপর বললেন, “হে লোক সকল, আমি যদি বলি পাহাড়ের অপর প্রান্তে তোমাদের জন্য এক বিরাট শত্রুদল অপেক্ষা করছে এবং তারা যে কোন সময় তোমাদের উপর আক্রমণ করতে পারে। তোমরা কি আমার একথা বিশ্বাস কর?” সকলে এক সাথে বলে উঠলো, হ্যাঁ আমরা অবশ্যই তা বিশ্বাস করি। যেহেতু  আপনি আল আমীন, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আমি শিরক ও কুফরীর কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে নির্ধারিত এক কঠিন আযাব সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করছি। অর্থাৎ তোমরা যদি মুর্তি পূঁজা না ছাড়, এক মহান আল্লাহ পাক উনাকে স্বীকার না কর, তবে তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।একথা শুনে আবূ লাহাব বলে উঠলো-
تبالك يا محمد
 (হে মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনার ধ্বংস হোক নাউজুবিল্লাহ! অতঃপর সে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাথর মারতে উদ্যত হলো। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ অবতীর্ণ হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
ابى لهت وتب...
অর্থঃ- আবূ লাহাব ও তার দুই হাত ধ্বংস হোক।....(বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ) দ্বিতীয়তঃ কোন কোন মুফাসসির, মুদাক্কিক্বগণ বলেন, পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ ব্যতীত সমগ্র পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত, মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনা করা হয়েছে। আর কেউ কেউ বলেন, পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ উনার মধ্যেও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সানা-সীফত, মর্যাদা-মর্তবা প্রকাশ পায়। এটা এভাবে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে বেয়াদবী করার কারণে আবূ লাহাব ও তার স্ত্রী ধ্বংস হয়ে গেল, তারা চির জাহান্নামী হয়ে গেল। অতএব, এটা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা, মর্তবা, শান-শওক্বতেরই বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ উনার মধ্যে মধ্যেও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-সিফত রয়েছে। তৃতীয়তঃ পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ উনার মধ্যে আমাদেরকে এ উপদেশই দেয়া হয়েছে যে, وما اتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا.
অর্থঃ- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যা নিয়ে এসেছে, তা আঁকড়িয়ে ধর, আর যার থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তার থেকে বিরত থাক।
যদি তা না কর, তবে আবূ লাহাব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা অমান্য করার কারণে তার যে অবস্থা হয়েছে, তোমাদেরও তদ্রুপ অবস্থা হবে। কাজেই আমাদের মূল দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যথাযথ তাযীম-তাকরীম ও মুহব্বত করা। আর প্রতিটি অবস্থায় উনার হুকুম-আহ্কাম, আদেশ-নিষেধ মুবারক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলা। মনগড়া মত-পথ অনুসরণ-অনুকরণ থেকে বিরত থাকা, নচেৎ আবূ লাহাবের মত অবস্থা আমাদেরও হতে পারে। কেননা মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ, অতঃপর পবিত্র সূরা মুজ্জাম্মিল শরীফ, পবিত্র সূরা মুদ্দাচ্ছির শরীফ অতঃপর পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ, তারপর পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ নাযিল করেন। পবিত্র সূরাগুলো এ তরতীবে নাযিল হওয়ার পিছনে অনেক রহস্য রয়েছে। তার মধ্যে একটি রহস্য হলো- প্রথমতঃ আমাদেরকে ইলম অর্জন করতে হবে, অতঃপর ইলম অনুযায়ী আমল করতে হবে, অতঃপর সরল পথে থাকার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করতে হবে। যদি কেউ এ ধারাবাহিকতা বজায় না রাখে, তবে তার অবস্থা আবূ লাহাবের মতই হবে।     
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা-মর্তবা মুবারক সঠিকভাবে উপলব্ধি করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
আবা-১৯

0 Comments: