রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি-১৩
মহিলাদের তালীমের ব্যবস্থা এবং মহিলা মাদ্রাসার অনন্য বৈশিষ্ট্য
মহিলাগণের তালীম দেবার সুন্নত জারী রয়েছে হযরত উম্মুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের কাছ থেকে এবং পরবর্তীতে অনেক মহিলা সাহাবী রদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহুমা উনারাও তালীম দেবার সুন্নত জারী রেখেছেন। ইতিহাস ঘাটলে অনেক আল্লাহওয়ালীগণের নাম পাওয়া যায় যারা তালীম দিয়েছেন । কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে উনাদের তালিমের বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্যভাবে লিপিবদ্ধ না হবার কারণে পরবর্তীতে মহিলাগণের মাঝে তালিম দেবার একটা বড় সংকট দেখা দেয়। তাছাড়া শুধু কেতাব পড়ে মহিলাগণের জন্য আল্লাহওয়ালী হওয়া সম্ভব নয় উনাদের জন্যও প্রয়োজন একজন মহিলা শাইখা বা খাস আল্লাহ ওয়ালী উনার মুবারক সোহবত এবং তালীম তালকিন।
এই বিষয়ে সবচেয়ে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন যিনি ১৫ শতকের সম্মানিত মুজাদ্দিদ,যামানার লক্ষ্যস্থল ওলী আল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুস্তাহিদ মুজাদ্দিদে আযম মামদুহ হযরত মুরশিদ কিবলা আলাইহিস সালাম এবং উনার সম্মানিতা সাহেবাতুল মুকাররামা আমাদের উম্মুল উমাম আম্মাজী কিবলা আলাইহাস সালাম। উম্মুল উমাম আম্মাজী কিবলা আলাইহাস সালাম তিনি খাস আওলাদে রসূল এবং ওলী আল্লাহ হবার কারণে তাছাড়া উম্মুল মুমিনিন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম এবং উম্মুল মুমিমীন হযরত সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম উনাদের সঙ্গে গভীর নিসবত থাকার কারণে উনার তালীম মুবারকের মধ্যে ইলম ও হিদায়েতের নূর বিচ্ছুরণ হয় অগণিত ধারায়। সে কারণেই মহিলাগণ উনার মুবারক সোহবত ইখতিয়ার করে তালীম গ্রহন করে আল্লাহওয়ালী হচ্ছেন। কিন্তু এই আল্লাহওয়ালী হবার ধারা অব্যাহত রাখার জন্যই উনারা প্রতিষ্ঠা করেছেন মহিলা মাদরাসা।
খাস পর্দার সাথে, মহিলাগণের মাধ্যমে বালিকাদের শিক্ষা দেবার বিষয়টি একটি মহিলা মাদরাসায় থাকতেই হবে যা কিনা বর্তমান প্রচলিত মহিলা মাদ্রাসাগুলোতে নেই কিন্তু মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মহিলা মাদরাসায় এই পরিবেশতো আছেই বরং পাঁচ বছরের একটি মেয়ে কোন পুরুষের সামনে যায় না। তাছাড়া অপ্রাপ্তাবয়স্কা অবস্থা থেকেই মেয়েরা খাস পর্দার অনুশীলন করে। এছাড়াও আমাদের মহিলা মাদরাসার অনেক অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আমরা মাদরাসার পরিচিতি পর্বে তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ। কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই মাদরাসা সম্পূর্ণভাবে হযরত উম্মুল উমাম আম্মাজী কিবলা আলাইহাসালাম উনার মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত। সুবহানাল্লাহ।
রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি-১২
মাদরাসা প্রতিষ্ঠা
সমস্ত প্রশংসা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্য, যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করে উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হিসেবে এবং পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলাম উনার উপর পাঠিয়েছেন। অসংখ্য দরূদ ও সালাম আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি যিনি সৃষ্টি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল ইলমের অধিকারী। অসংখ্য ছলাত ও সালাম আমাদের প্রাণের আক্বা, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, গাউছুল আ’যম, পঞ্চদশ হিজরী শতকের সুমহান মুজাদ্দিদ, সাইয়্যিদুনা মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার প্রতি; যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেখে যাওয়া ইলমের প্রকৃত ওয়ারিছ। সেই ইলমের প্রচার প্রসারের লক্ষ্যে মানুষকে নবুওওয়াতের আলোয় গড়তে, সঠিক দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেবার প্রয়াসে আমাদের প্রাণের আক্বা সাইয়্যিদুনা মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন, “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা।” পবিত্র দরবার শরীফ উনার মাঝে মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয় হিজরি ১৪০৭ সালে। এখানে রয়েছে বালক শাখা, বালিকা শাখা এবং হেফজ খানা।
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা হচ্ছে বর্তমান যামানার সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষার পাশাপাশি ইলমে তাছাউফ শিক্ষা প্রদানের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয় এবং সুন্নত উনার অনুসরণ-অনুকরণ ও আমলের উপর দায়িম-কায়িম থাকার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়; যাতে অধ্যয়নরত সকল ছাত্র/ছাত্রী মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ সন্তুস্টি অর্জন করতে পারে।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে সম্মানিত দরবার শরীফ উনার মাঝে ইলম ও হিদায়েতের নূর বিতরন করছেন খাসভাবে যিনি ইমামুল ইমাম মামদুহ হযরত মুরশিদ কিবলা আলাইহিস সালাম এবং উম্মুল উমাম হযরত আম্মাজী কিবলা আলাইহাসসালাম। উনাদের প্রতি সোহবত শরীফেই ইলম বিতরণ করা হয় এবং সে সকল মাজলিসে সকল বয়সের মানুষ সেই ইলম মুবারক শিখে নিজেদের আলোকিত করছেন। ইলম হাছিলের এরকম পরিবেশ সকল যুগে সকল মুজাদ্দিদ এবং আউলিয়া কিরাম উনাদের খানকা শরীফ মাঝে উপস্থিত ছিল । কিন্তু শিশু বয়স থেকে গড়ে তুলতে হলে, আল্লাহওয়ালা এবং আল্লাহ ওয়ালী হিসেবে বড় করতে চাইলে প্রয়োজন কিছুটা ব্যাতিক্রম পরিবেশ যেখানে পাঠদান শুরু হবে অক্ষর জ্ঞান থেকে আর তাই প্রতিষ্ঠা করা হয় “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা।”
একজন মহিলা আল্লাহওয়ালী হলে পুরো পরিবার আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু হয়ে যান----- এই চরম সত্য কথার বাস্তবরূপ দেন উম্মুল উমাম হযরত আম্মাজী কিবলা আলাইহাস সালাম। তিনি মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যেমনি অগনিত অসংখ্য মহিলাকে আল্লাহওয়ালী বানিয়ে চলেছেন তেমনি প্রতিদিন "ফাল ইয়াফরাহু" মাহফিলের মাধ্যমে এবং ইসনাইনীল আযীম শরীফ এবং জুমুয়া শরীফে বিশেষ তালিম প্রদানের মাধ্যমে হিদায়েতের নূর বিলিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও বছরের দুটি মুবারক মাস পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ এবং পবিত্র রমাদান শরীফ মাসেও থাকে মাসব্যাপী বিশেষ শিক্ষা কোর্সের ব্যবস্থা। সুবহানাল্লাহ।