একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-২৫

 


আমাদের সম্মানিত দাদা হুজুর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে

 মুর্শিদ ক্বিবলা  বিছাল লাভ করার পর আবার বিরহকাতরতা-

   হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি দশ বছর হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মুবারক সোহবতে ছিলেন। প্রাণের আঁকা মুর্শিদ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। উনার ইন্তিকালে হৃদয়ের গভীরে আবার অতলান্ত বেদনার আবহ। প্রথম মুর্শিদ হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি অনেক আগেই আল্লাহ্ পাক-উনার সন্নিধানে চলে গেছেন। উনার মুবারক সোহবতের জাহেরী যবনিকায় অন্তরের অব্যক্ত বেদনা উপশমের লক্ষ্যে মাদারজাদ ওলী, আওলাদে রাসূল, কুতুবুজ্জামান, আলহাজ্ব, হযরত মাওলানা শাহ সূফী সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি একজন মুর্শিদের সঙ্গে নিগূঢ় সম্বন্ধ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন।

 এই প্রয়োজনের অনিবার্যতায় দীর্ঘ অনুসন্ধানে তিনি হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মুবারক সান্নিধ্যে নিজেকে সংলগ্ন করেছিলেন। জীবন-মরণ নিত্য আবর্তন ধারায় সে ভালোলাগা মুর্শিদকে তিনি হারালেন। মুর্শিদ বিরহের যাতনা অপার। হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে হারানোর ব্যাথা তিনি কি ভুলেছিলেন? উপশম হয়েছিল কি উনার মন ও মননের দুঃসহ বেদনাভার? আসলে সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনাঘেরা যে কোন অর্জন জীবনের অক্ষয় সঞ্চয়ে স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকে। আনন্দ-বেদনার সমন্বয়ে অন্তরের গভীরে ঠাঁই পাওয়া স্মৃতিরাশিই এক অর্থে জীবনের চালিকাশক্তি। স্মৃতির রেশ ধরেই আবর্তিত হয় মানব জীবন। জীবনের যতো তন্ময়তা ও ভাবালুতা এই স্মৃতিকে কেন্দ্র করেই। বিগত জীবনে মানুষ যা কিছু ফেলে আসে, তা হারিয়ে যায়না। অবশিষ্ট জীবনের যতো আয়োজন ও প্রয়োজন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা পূর্বের অভিজ্ঞতা ও অনুমান নির্ভর। ধ্যান, ধারণা, অনুমান, অনুসন্ধান ও অভিজ্ঞতা মানুষকে সে সঞ্জীবনী সুধা দান করে, তারই নাম স্মৃতি। স্মৃতি কখনো মধুময়, কখনো বেদনাসিক্ত। তবু সম্পাদিত কৃতকর্ম ও লব্ধ অভিজ্ঞতার সংশ্লিষ্টতায় তিল তিল করে জমে উঠা স্মৃতির ভান্ডারকে কেন্দ্র করেই মানুষ তার পরবর্তী জীবনের পথ পরিক্রমা এবং কাঙ্খিত উত্তরণের সোপান রচনা করে। মূলতঃ উত্তরণের পথে জীবনের অভিযাত্রা এখান থেকেই শুরু। সংগত কারণেই এমন স্মৃতির ভান্ডার যার যতো গভীর ও সমৃদ্ধ তার কামিয়াবী ততো বেশী।

 বিগত জীবনের সুখ ও দুঃখ কেউই ভুলেনা, ভোলা সম্ভবপর হয়না। জীবন-সংশ্লিষ্ট বেদনা ও অভিঘাত থেকেও কেউ নিস্কৃতি পায়না, পাওয়ার কোন উপায়ত্ত থাকেনা। জীবন প্রবাহের নিয়ামক পরিবৃত্তে কেবল দুঃখ ও বেদনার সাময়িক নিবৃত্তি ঘটে মাত্র। আল্লাহ্ পাক-উনার উদ্দিষ্ট নিয়মে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ও মিলন-বিরহের নিঠুর দহনেই মানব জীবনের পরিপুষ্টি সাধিত হয়। আল্লাহ্ পাক-উনার সদয় ইচ্ছায় জীবনের সমৃদ্ধির প্রয়োজনেই হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার প্রাণের আঁকা প্রথম মুর্শিদ হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার নিদারুণ বিরহ উপশম এবং মুহব্বত-মারিফাতের দরিয়ায় নবতর যোগসূত্র স্থাপনের প্রত্যাশায় নতুন মুর্শিদ হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মুবারক সোহবতে নিজেকে নিবেদন করেছিলেন, আত্মমগ্ন হয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ্ পাক-উনার অমোঘ আহবানে তিনিও নশ্বর দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন। এখন আর কাকে নিয়ে বেঁচে থাকা, মুহব্বত-মারিফাতের তাত্ত্বিক আলাপচারিতায় এখন আর কার সঙ্গে বিভোর হওয়া, কার মুবারক পরশে এখন আল্লাহ্ পাক-উনার অথৈ প্রেম সাগরে নিত্য অবগাহন করা। তিনি গভীর তন্ময়ে ভাবেন, ইন্তিকালই নশ্বর জীবনের অনিবার্য পরিণতি। তবু বেঁচে থাকার জন্য মানুষের কী তীব্র বাসনা! কিন্তু অধিকাংশ মানুষই বিপর্যস্ত আক্বীদায় অভ্যস্ত, সুন্নতের গুরুত্ব সম্পর্কে অজ্ঞ ও বীতশ্রদ্ধ, ইল্ম ও আমল বিমুখ এবং ইখলাস বিবর্জিত।

        জীবনের পরিসর একান্তই ক্ষুদ্র। এই ক্ষুদ্রায়তনেই আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত-মারিফাত উপযোগী মাত্রায় সমাবেশ ঘটাতে হয়। তাসাউফ-উনার ব্যাপকতার তুলনায় সীমিত জীবনের প্রাণান্তকর প্রয়াস নিতান্তই নগন্য। তাই অর্জন যতো বড়োই হোক, তুল্য বিবেচনায় তা ক্ষুদ্রই থেকে যায়। অতৃপ্ত বাসনার তীব্রতায় না পাওয়ার যন্ত্রনা প্রবল হয়ে দেখা দেয়। ওলী আল্লাহ্ গণের অন্তরের এমন নিরন্তর বেদনা উনাদের স্বভাব সঞ্জাত। উনাদের কারো কারো ভাবনায় প্রেম ভালো। কিন্তু বিচ্ছেদ আরো ভালো।  (অসমাপ্ত)

আবা-৮৪

0 Comments: