একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৩৭

 

আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম  উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদার উনার মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক লাভ-

  এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশিষ্ট খলিফা অভিধায় সম্মানিত হবার ধারণা ও ইচ্ছা হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনার আদৌ ছিলনা। না থাকাই শোভন ও সংগত। কারণ, তাছাউফের সূক্ষ্ম বিবেচনায় এ ধরণের  ইচ্ছা গায়রুল্লাহ্ হাছিলের প্রত্যাশার নামান্তর। সত্য যে, নিয়ামত ধারণ, বহন এবং পরবর্তী যথাপ্রয়োজনে তা অন্য বিশিষ্ট পাত্রে সোপর্দ করণে যিনি উপযুক্ত, তিনিই খলিফা মনোনীত হবার যোগ্য। অন্য কথায় যিনি খাছ খলিফা, তিনিই নাজ-নিয়ামতের উপযুক্ত। এই উপযুক্ততা মুর্শিদ ক্বিবলা সন্নিধানে উনার সত্ব তত্ত্বাবধান এবং অনিঃশেষ বখ্শিশে অর্জিত হয়। মুর্শিদ ও মুরীদের এমন মধুরতম মুয়ামেলায় আল্লাহ্ পাক-উনার পরম নৈকট্যের দ্বার  অবারিত হয়। মুহব্বত-মারিফাতের জন্য সতত উম্মুখ খাছ মুরীদগণের প্রাথমিক ও পরিণত বিবেচনায় গায়রুল্লাহ্ সর্বোতভাবে বরবাদ হয় এবং একমাত্র আল্লাহ্ পাক-উনার সন্তুষ্টি হাছিলই পরম লক্ষ্যবস্তু হয়ে দাঁড়ায়। খলিফা অভিধায় সম্মানিত হওয়া উনাদের বিবেচনার খিলাফ এবং এতে তাঁরা নিরানন্দ। কিন্তু খাছ নিয়ামত সোপর্দ করণের লক্ষ্যে একান্ত উপযুক্ত মুরীদকে খলিফা মনোনীত করা ত্বরীকতের বিধান। এই বিধানেরই আওতায় ত্বরীকতের সমকালীন প্রাণ পুরুষ, কুতুবুল আলম, কাইয়্যুমুয্যামান, শাইখুল ইসলাম, ইমামুল হুদা, আলহাজ্ব, হযরত মাওলানা আবু নছর মুহম্মদ আবদুল হাই ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার লব্ধ নিয়ামতের নির্যাস সোপর্দ করণের প্রয়োজনে বিশিষ্ট খলিফা মনোনীত করার প্রশ্নে ওলীয়ে মাদারজাদ, কুতুবুজ্জামান, আওলাদে রসূল, আলহাজ্ব, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম এখন মহান আল্লাহ্ পাক-উনার খাছ লক্ষ্যস্থল।

          অনুগত বান্দাগণের যতো চাওয়া ও পাওয়া, আল্লাহ্ পাক-উনার তরফ থেকে প্রাপ্ত নিয়ামত তার মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ। ক্রমবর্ধিষ্ণুরূপে পেতে থাকা নিয়ামতের অক্ষুন্ন ধারায় বান্দা পরম সৌভাগ্যবান বলে পরিগণিত হয়। বান্দার পাওয়া মূল নিয়ামতের নাম আল্লাহ্ পাক-উনার সন্তুষ্টিএবং এই সন্তুষ্টিই সবচেয়ে বড়। সজ্ঞানে-অজ্ঞানে আল্লাহ্ পাক-উনার নৈকট্য সকলেরই কাম্য। নৈকট্য হাছিলের বিষয়টি আপেক্ষিক। তাএজন্য যে, বান্দাকে নিয়ামত দান, তার উপর সন্তুষ্ট হওয়া এবং সন্তুষ্ট থাকা আল্লাহ্ পাক-উনার সদয় মর্জির উপর নির্ভরশীল। সতর্কতা ও পূর্ণ মনোযোগে নিরবচ্ছিন্নভাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সুন্নত অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক-উনার প্রতি আনুগত্য ও নিবেদনের প্রেক্ষিতে নৈকট্যের পরিমাণ ও পরিধি নির্ণীত হয়।

          সাধারণ বান্দাগণের বিষয়-আশয়, চাওয়া-পাওয়া, আনন্দ-বেদনা ও মিলন- বিরহ ওলীগণের থেকে সংগত কারণেই পৃথক। কি চাওয়া হয়, কি পাওয়া হয় এবং আরো কি বাকী থাকে, তা সাধারণ বান্দার কাছে গোপনই থেকে যায়। পাওয়ার আনন্দে এবং না পাওয়ার বেদনায় তাঁরা ব্যাকুল হয়না, গুরুতর ভাবনায় কখনোই আক্রান্ত হয়না। ওলীগণের বিষয়কর্ম ও নিবেদন অতি সূক্ষ্ম। উনাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ পাক-উনার ফায়সালা আরো সূক্ষ্ম। সূক্ষ্মদর্শী ওলীগণের লক্ষ্য নিয়ামত হাছিল নয়; মুবারক জীবনব্যাপী আয়াসসাধ্য আয়োজনে উনাদের মূল লক্ষ্য হলো ছাহেবে নিয়ামত (আল্লাহ্ পাককে) হাছিল করা। নিয়ামতের মালিক আল্লাহ্ পাককে হাছিলের পর আখিরাতে দিদারে ইলাহী ছাড়া ইহকাল ও পরকালে ওলীগণের কাম্যবস্তু আর কিছুই বাকী থাকেনা। এই পরম নিয়ামতের সঙ্গে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনার নিগূঢ় জানাজানি অনেকদিনের। প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলার সঙ্গে অন্তরঙ্গ মিলনের মুবারক উছীলায় এই জানাজানির গভীরতায় তিনি হয়ে উঠেছেন আরিফ বিল্লাহ্। মুর্শিদ ক্বিবলার সদয় দানে আজ আবার উনার অনুভব ও উপলব্ধির দ্বার অবারিত হবে নবতর আয়োজনে। (অসমাপ্ত)

আবা-৯৬

0 Comments: