একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৩৮

 


আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক লাভ-

   একজন খাছ মুরীদের আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ, উদ্বেগ-স্বস্তি, মিলন-বিরহ উনার প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা সন্নিধানে একাকার হয়ে যায়। মুর্শিদ ক্বিবলার মুবারক উছীলায় মন ও মননে যে অনুভব ও সমঝ-উনার উন্মেষ ঘটে, মূলতঃ যে নিয়ামত হাছিল হয়, তা দায়িমীভাবে মুরীদকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আল্লাহ্ পাক-উনার প্রতি সম্পৃক্ত করে রাখে। নৈকট্যের শীর্ষ সোপানে উপনীত হয়েও অসীম আল্লাহ্ পাক উনাকে পূর্ণাঙ্গরূপে হাছিলের এক ধরণের অপূর্ণতায় ওলীগণ নিরন্তর দুঃসহ যাতনায় মুহ্যমান থাকেন। সূক্ষ্মদর্শী কোন কোন ওলীর অভিজ্ঞ বিবেচনায় সকল প্রকার খবর ও অবস্থা থেকে বেখবর ও গাফিল থাকার নামই প্রকৃত তাসাউফ।এ কারণে এক অর্থে সকলেরই কামিয়াবীর স্তর পূর্ণ এবং ব্যাপক অর্থে অপূর্ণ। অর্থাৎ প্রত্যেকেরই নেকট্য হাছিলের সোপান আপেক্ষিক। প্রেক্ষিত অবস্থায় পরিণত স্তরে সুন্নত অনুসরণে বেদনাবিদ্ধ অন্তরে অনুক্ষণ দীনতা ও হীনতা প্রকাশই মাহবুব ওলীগণের সংগত স্বভাবে পরিণত হয়। এই পর্যায়ে ইহকাল ও পরকালের চিন্তা ও পেরেশানী বিলীন হয়ে একমাত্র আল্লাহ্ পাকই উনাদের অভীষ্ট লক্ষ্য হয়ে পড়েন। তখন জীবনের সকল অর্জনই একান্ত তুচ্ছ বলে গণ্য হয়, মহিমান্বিত ইল্মও অজ্ঞতার আবরণ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। কামিয়াবীর এমন স্তরে দুনিয়া ও আখিরাতের ভেদরেখা মুছে যায়। চাওয়া-পাওয়ার বিদ্যমান নিয়মের অবসান ঘটে। আল্লাহ্ পাক-উনার সঙ্গে নিগূঢ় নৈকট্য-সংযোগ স্থাপিত থাকায় অবলীলায় নিয়ামতের পরিবৃদ্ধিতে ওলীগণের উত্তরণের দ্বার অবারিত থাকে।

          মুবারক জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে কামিয়াবীর এমন পরিপূর্ণ স্তরে উপনীত হয়ে প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা আমীরে শরীয়ত, মাহতাবে তরীক্বত, হাদিউস্ সাক্বালাইন, শাইখুল ইসলাম, ইমামুল হুদা, কুতুবুল আলম, কাইউমুয্ যামান, আলহাজ্ব, হযরত মাওলানা আবু নছর মুহম্মদ আব্দুল হাই ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এখন পরপারের ডাক শুনতে পান। আল্লাহ্ পাক-উনার মতে এবং উনার প্রিয়তম হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পথে যমীনে ইসলাম ধর্ম আবাদের আঞ্জাম দেয়ার জন্য মুবারক জীবনব্যাপী আয়াসসাধ্য আয়োজন এবং সতর্ক তত্ত্বাবধানে তিনি একটি বিশাল কাফেলা তৈরী করেছেন। ওলীয়ে মাদারজাদ, কুতুবুজ্জামান, আওলাদুর রসূল, আলহাজ্ব, শাহ ছূফী, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম  সে মুবারক কাফেলার এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, মুর্শিদ ক্বিবলার অন্তরঙ্গ মুরীদ, যোগ্যতম উত্তরসূরী। উনাকেই মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সঞ্চিত পরমতম নিয়ামতের নির্যাস দান করবেন।

          নিয়ামত সোপর্দকারী কোন মুর্শিদ কি নিঃস্ব হয়ে যান (নাউযুবিল্লাহ)? বিষয়টির আলোচনা এখানে জরুরী এজন্য যে, কাউকে কাউকে বলতে শোনা গেছে, অন্তর নিংড়ে নিয়ামত দানের পর মুর্শিদের অবশিষ্ট কিছু থাকে কি? নিয়ামত হারিয়ে ইন্তিকালের পর তিনি কি নিয়ে আল্লাহ্ পাক-উনার সঙ্গে মিলিত হবেন? আসলে এসব ধারণা মানুষের অজ্ঞতার ফসল। আসলে একজন ওলীর মূল লক্ষ্য আল্লাহ্ পাক উনাকে হাছিল করা। তা যখন হয়ে যায়, তখন লব্ধ নিয়ামত উনার জন্য গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। নিয়ামতের সংজ্ঞা সূক্ষ্ম ও ব্যাপক। নিয়ামত আল্লাহ্ পাক-উনার মহান দান। আলোচ্য ক্ষেত্রে অন্ততঃ একটু বুঝে নেয়া চাই যে, যে সব মহান উপলক্ষ্যের মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক উনাকে পাওয়া যায়, সামগ্রিকভাবে সেসব উপলক্ষ্যের নাম নিয়ামত। যে নিয়ামতের উছীলায় পূর্ববর্তী স্তরের কামিয়াবী হাছিল হয়, পরবর্তী উন্নত স্তরে গিয়ে তা তুচ্ছ হয়ে পড়ে। তাএ কারণে যে, নিয়ামতদাতা মহান আল্লাহ্ পাক-উনারই সদয় ইচ্ছায় পূর্বের নিয়ামতের প্রয়োজন ও গুরুত্ব গৌণ হয়ে যায়। সকলেরই জানা যে, হজ্ব সমাপনের পর বাহনের গুরুত্ব আর থাকেনা, যদিও বাহনের জন্য আল্লাহ্ পাক-উনার শুকরিয়া আদায়ের নিরবচ্ছিন্ন মানসিকতা বহাল থাকা জরুরী।

          মূলতঃ একমাত্র আল্লাহ্ পাক ছাড়া অন্য সকল কিছুই গায়রুল্লাহ্, এমনকি আল্লাহ্ পাক-উনার দান নিয়ামতও। তাই নিয়ামত নিঃশেষে অন্যজনে সোপর্দ করার পরও আল্লাহ্ পাক-উনার নৈকট্যলাভকারী ওলীগণের কিছুই হারায়না, কোন কিছু ফুরিয়েও যায়না। মহান মুর্শিদ ক্বিবলা উনার লব্ধ সেই অফুরন্ত নিয়ামতের নির্যাস আজ দান করবেন প্রিয়তম ব্যক্তিত্ব হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনাকে। (অসমাপ্ত)

আবা-৯৭

0 Comments: