একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৪২

আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক লাভ-

নিয়ামত হাছিলের ক্ষেত্রে ছালিকের জন্যও একই নিয়ম প্রযোজ্য। মুর্শিদ ক্বিবলা উনার (মহান আল্লাহ্ পাক উনার মাহবুব ওলী) মুবারক সম্পৃক্ততা ব্যতীত মুরীদের কোন নিয়ামতই অর্জিত হয়না। মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে মাহবুবিয়াত হাছিলের জন্য আপন মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নেক দৃষ্টি অত্যাবশ্যক।

 মহান আল্লাহ্ পাক তিনি এমন অপরিমেয় নিয়ামতের সমাবেশ ঘটিয়েছেন উনার মনোনীত বন্ধু ওলীয়ে মাদারজাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আযম, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফজালুল ইবাদ, কুতুবুজ্জামান, আওলাদুর রসূল, আলহাজ্ব, শাহ্ ছূফী, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার অন্তর মুবারকে। মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিগূঢ় নৈকট্য হাছিলে অবিরাম উত্তরণের এমন পর্যায়ে দুনিয়া বা অন্য কিছুর প্রতি এক নিমিষের তরেও উনার পিছুটানের প্রশ্ন অবান্তর।

  এই অন্তর মুবারকই উনার প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার জীবনব্যাপী লব্ধ নিয়ামতের নির্যাস সোপর্দকরণের একান্ত উপযুক্ত স্থান।

বিশিষ্ট খলীফা মনোনয়নের অতি প্রয়োজনীয় কাজটি ইতোমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে। প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা মনে প্রাণে বুঝে নিয়েছেন, উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ পাক উনার উদ্দিষ্ট কাজ বাস্তবায়নের পর্যায় শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থানের সময় এখন প্রায় সমাগত। আবহমান পদ্ধতি অনুসরণে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মহান দান নিয়ামত উনার নির্যাস একান্ত আপনজনকে দান করে তিনি এখন নির্ভার হতে চান। নিয়ামত সোপর্দকরণে যোগ্যতম মুরীদ খুঁজে পাবার আনন্দ অপার। মহান আল্লাহ্ পাক ও উনার প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টিধন্য একজন মুর্শিদ উনার জীবদ্দশায় পরমতম আনন্দ ও পরিতৃপ্তি সাধিত হয় উপযুক্ত খলীফা হিসেবে একজন অন্তরঙ্গ মানুষকে খুঁজে পাওয়ায় এবং তাকে নিয়ামত দানের একান্ত গোপন আনুষ্ঠানিকতায়। সমকালীন ও আগামী প্রজন্মকে ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শিক্ষায় উজ্জীবিত ও অভ্যস্তকরণ এবং ইসলাম ভিত্তিক মানবতার বিকাশ সাধনই একজন মুর্শিদ উনার মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে চলমান প্রক্রিয়ায় অন্যজনে নিয়ামত হস্তান্তর অবধারিত। কারণ, অন্যান্য সমুদয় বিষয়সহ এই নিয়ামতের সঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মহাপয়গাম এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অনুসৃত ও নিদের্শিত মুবারক পন্থা সম্পৃক্ত। মুর্শিদ ও মুরীদের নিগূঢ় সম্পর্কে এটি এমন এক অনির্বচনীয় ভাব বিনিময়, যা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা এবং যৌক্তিক অনুশীলনে বুঝে ফেলা অসম্ভব।

সাধারণভাবে একজন মুর্শিদ উনার কামিয়াবী উপলব্ধির বাহ্যিক অনেক মানদন্ড নিরূপিত আছে। মুর্শিদ সন্নিধানে উপযুক্ত খলীফা তৈরী হওয়া সেসব মানদন্ডের মধ্যে একটি। তবে এটি জরুরী নয় যে, খলীফা না থাকলে বা নিয়ামত সোপর্দ করার মতো কাউকে না পেলেই তিনি (মুর্শিদ) মহান আল্লাহ্ পাক উনার মাহবুব ওলী হবেননা। মূলকথা যা, তা হলো, যিনি খলীফা, আপন মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নেক নজরদারি ও সতর্ক তত্ত্বাবধানে তিনি অবশ্যই উপযুক্ত হবেন এবং পর্যায়ক্রমে তিনিও মহান আল্লাহ্ পাক উনার একান্ত মাহবুব হয়ে উঠবেন।
উপযুক্ত খলীফা মনোনয়ন ও নিয়ামত সোপর্দকরণের পরম পরিতৃপ্তিবোধে হযরত খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবদ্দশায় বলেছেন যে, মহান আল্লাহ্ পাক যদি জানতে চান, তিনি কী সম্বল নিয়ে আখিরাতে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে কাল বিলম্ব না করেই সবিনয়ে জবাব দিবেন, তিনি সুলতানুল হিন্দ, হাবীবুল্লাহ, শায়খ সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুঈনুদ্দীন হাসান সাঞ্জেরী ছুম্মা আজমিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে যোগ্য খলীফা হিসেবে আখিরাতে নিয়ে গেছেন। যিনি এক কোটিরও বেশী বিধর্মীকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছেন। যমীনে মহান আল্লাহ্ পাক উনার আহকাম প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অজানা ও অবলুপ্ত সমুদয় সুন্নত মুবারক যিন্দা করেছেন। মানুষকে সুন্নত মুবারক পালনে অভ্যস্ত করে তুলেছেন। উনার সিলসিলা ক্বিয়ামত পর্যন্ত কায়িম থাকবে। তিনি ছিলেন ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত, আতায়ে রসূল, ইমামুল আইম্মা, মুঈনুল মিল্লাত, সুলতানুল আরিফীন, গরীবে নেওয়াজ, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, মাহিয়্যুল বিদয়াত। সর্বোপরি তিনি ছিলেন মহান আল্লাহ্ পাক উনার লক্ষ্যস্থল।  (অসমাপ্ত)

আবা-১০১

0 Comments: