হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৪০৪-১৬৭৬) (জ)


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
সম্মানিত উহুদের জিহাদে উম্মুল মু’মিনীন আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার ভাই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
 হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সম্মানিত উহুদ জিহাদের দিন সম্মানিত জিহাদ শুরু হওয়ার পূর্বে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাকে নিরিবিলিতে নিয়ে বললেন, চলুন আমরা দু’জন কোথাও আলাদাভাবে বসে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দোয়া মুবারক করি। আর আমরা একে অপরের দোয়ায় আমীন বলি। হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, উনার প্রস্তাব অনুযায়ী আমরা দু’জন সকলের থেকে পৃথক হয়ে এক স্থানে বসে দোয়া মুবারক করতে শুরু করলাম। প্রথমে আমি দোয়া মুবারক করলাম ‘হে বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আজ আপনি আমাকে তাওফীক্ব দান করুন যেন এমন প্রতিপক্ষের সাথে আমার মুকাবিলা হয় যার শক্তি-সাহস, ক্রোধ সকল কিছুই অধিক পরিমাণে বিদ্যমান থাকে, যে অত্যন্ত সাহসী, নির্ভীক, বড় যোদ্ধা ও ক্রোধপূর্ণ হয়। কিছুক্ষণ আমি সেই কাফিরের সাথে জিহাদ করবো কিছুক্ষণ সে আমার সাথে লড়বে। অবশেষে ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাকে বিজয় দান করুন, আমি যেন তাকে হত্যা করতে পারি, আর তার সাথে থাকা সকল কিছুই আমার অধিকারে দিয়ে দিন।’ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার দোয়া মুবারকে আমীন বললেন। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দোয়া মুবারক শুরু করলেন, ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আজ আমাকে এমন প্রতিপক্ষের সাথে মুকাবিলা করার তাওফীক্ব দান করুন যে অনেক শক্তিশালী, অনেক বেশি সাহসী ও ক্রোধে ভরপুর হয়। আমি তার সাথে এবং সে আমার সাথে যে লড়াই করবে তা হবে নিছক আপনারই সন্তুষ্টি মুবারকের জন্য। যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত সে আমাকে শহীদ করে ফেলবে, আমার নাক কেটে ফেলবে, কান কেটে ফেলবে। এ অবস্থায় আমি যখন খ¦লিক মালিক মহান আল্লাহ পাক আপনার সাথে সাক্ষাৎ মুবারক করব, আপনি আমাকে বলবেন, হে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার নাক ও কান কোথায় কাটা পড়ল? তখন আমি বলল, ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনার ও আপনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে। আপনি তখন বলবেন, আপনি সত্যই বলেছেন। হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমার দোয়া মুবারক থেকে উনার দোয়া মুবারক কতই না উত্তম ছিলো। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (মুসতাদরিকে হাকীম, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, মু’জামে ত্ববারানী, ফিকহুস সীরাত, সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হায়াতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)
 হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জিসম মুবারক সম্মানিত জিহাদের ময়দানে নাক ও কান কর্তিত অবস্থায় অবস্থান মুবারক করছিলেন।
 হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমার দোয়া মুবারকও মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করেছিলেন। আমিও এক বড় কাফির যোদ্ধার মুকাবিলা করি এবং শেষ পর্যন্ত সে আমার হাতে মৃত্যুবরণ করে এবং তার পরিত্যক্ত সম্পদ গনিমত হিসাবে আমি লাভ করি। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 এক বর্ণনায় প্রখ্যাত তাবিয়ী হযরত সায়ীদ ইবনে মুসাইয়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সেদিন যে দোয়া মুবারক করেছিলেন তা হচ্ছে,
 اللَّهُمَّ إِنِّي أُقْسِمُ عَلَيْكَ أَنْ أَلْقَى الْعَدُوَّ غَدًا فَيَقْتُلُونِي، ثُمَّ يَبْقُرُوا بَطْنِي، وَيَجْدَعُوا أَنْفِي وَأُذُنِي، ثُمَّ تَسْأَلُنِي بِمَا ذَاكَ؟ فَأَقُولُ فِيكَ.
 অর্থ: “ইয়া রাবী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আমি আপনার ক্বসম করে বলছি, আগামিকাল আপনার (ও আপনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার) শত্রুর সাথে অবশ্যই মুকাবিলা করব, অতঃপর তারা আমাকে শহীদ করবে। এরপর তারা আমার বক্ষ মুবারক চিরে ফেলবে, আমার নাক ও কান কেটে দিবে। অতঃপর আপনার আমি দরবার মুবারকে উপস্থিত হলে আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন, কেন এমন হলো? তখন আমি বলবো, আপনার (এবং আপনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার) সন্তুষ্টি ও রেজামন্দী মুবারকের জন্যই আমার এ অবস্থা হয়েছে।
 হযরত সায়ীদ ইবনে মুসাইয়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রথম দোয়া মুবারক সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করা যেমন কবুল করেছেন, তেমনিভাবে দ্বিতীয় দোয়া মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে হাযির হলে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সত্যায়ন করা হবে কবুল করে নিয়েছেন।
 হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশের পর উনার সম্মানিত লক্বব মুবারক হয়,
مُجْدَعْ فِى اللهِ
 মুজদা’ ফিল্লাহ’ তথা মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় কর্তিত নাক কানের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (মুসতাদরিকে হাকীম, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, খছায়িছুল কুবরা, মু’জামে ত্ববারানী, ফিকহুস সীরাত, সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হায়াতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনার সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
 হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত উহুদ জিহাদে সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
 এ প্রসঙ্গে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। আমার পিতা সম্মানিত উহুদ জিহাদে শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। কাফির মুশরিকরা উনার অঙ্গ মুবারক বিকৃত করে ফেলে। এরপর যখন উনার জিসম মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আনা হলো, তখন উনার মুখ মুবারক চাদর দিয়ে ঢাকা ছিলো। আমি চাদর সরিয়ে উনার মুখ মুবারক দেখতে চাইলে উপস্থিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আমাকে খুলতে নিষেধ করলেন। পুনরায় আমি আবার মুখ মুবারকের চাদর সরাতে চাইলে এবারও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আমাকে নিষেধ করলেন কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরবর্তীতে আমাকে অনুমতি মুবারক দান করলেন।
 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أنَّهُ قَالَ جِيءَ بِأَبِي إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ مُثِّلَ بِهِ وَوُضِعَ بَيْنَ يَدَيْهِ فَذَهَبْتُ أَكْشِفُ عَنْ وَجْهِهِ فَنَهَانِي قَوْمِي فَسَمِعَ صَوْتَ صَائِحَةٍ (نَائِحَةٍ) فَقِيلَ ابْنَةُ عَمْرٍو أَوْ أُخْتُ عَمْرٍو فَقَالَ لِمَ تَبْكِي أَوْ لَا تَبْكِي مَا زَالَتِ الْمَلَائِكَةُ تُظِلُّهُ بِأَجْنِحَتِهَا.
 অর্থ: “হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সম্মানিত উহুদ জিহাদ মুবারকের শেষে আমার পিতার জিসম মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে অঙ্গ-প্রতঙ্গ কাটা অবস্থায় আনা হলো এবং উনার সামনে রাখা হলো। আমি উনার চেহারা মুবারক খুলতে চাইলাম, আমার গোত্রের হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আমাকে নিষেধ করলেন। এমন সময় কোন কান্নাকারীনির কান্নার ধ্বনী শুনতে পেলেন। বলা হলো তিনি হযরত আমর ইবনে হারামের কন্যা বা ভগ্নি। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তিনি কাঁদছেন কেন? অথবা তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তিনি যেন না কাঁদেন। হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা উনাকে ডানা দ্বারা ছায়াদান করছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (বুখারী শরীফ, হুলিয়াতুল আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিম, উমদাতুল ক্বরী)
অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে দেখে ইরশাদ মুবারক করলেন, হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু! আপনার কি হয়েছে? আপনাকে বেশ চিন্তিত দেখছি। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা তিনিতো সম্মানিত উহুদ জিহাদে শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন কিন্তু রেখে গেছেন উনার পরিবার-পরিজন এবং অনেক ঋণ। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি কি আপনাকে একটি সুসংবাদ মুবারক শুনাবো? আমি বললাম, অবশ্যই ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি দয়া করে শোনান। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যারা ইন্তেকাল করেছেন উনাদের কারো সাথে মহান আল্লাহ পাক তিনি এমনিতে কথা বলেননি, কথা বলেছেন পর্দার আড়াল থেকে। কিন্তু আপনার সম্মানিত পিতার বেলায় ব্যকিক্রম ঘটেছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার পিতাকে জীবিত করে উনার সাথে সামনাসমনি একে অপরকে দেখে দেখে কথা বলেছেন। উনাকে বলেছেন, হে আমার বান্দা! আপনার কোন আকাঙ্খা আমার নিকট পেশ করুন, তখন আপনার পিতা বললেন, ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আমার আকাঙ্খা হচ্ছে আমি জীবিত হয়ে আবার আপনার পথে শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করতে চই। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে বললেন, এটিতো হবার নয়। কেননা, এ বিষয়ে ফয়সালা হয়ে গেছে যে, ইন্তেকালের পর আর এ দুনিয়ায় কাউকে পুনরায় পাঠানো হবে না।
 আরো উল্লেখ রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সম্মানিত উহুদ জিহাদের পূর্বে হযরত মুবাশশার ইবনে আব্দুল মুনাযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে একদিন স্বপ্নে দেখলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু! আপনি খুব শীগগিরই আমাদের নিকট চলে আসবেন। আমি উনাকে জিজ্ঞাস করলাম, আপনি কোথায়? তিনি বললেন, সম্মানিত জান্নাতে। যেখানে ফাল-ইয়াফরাহু তথা খুশি প্রকাশ করে ঘুরে বেড়াতে পারি। আমি উনাকে বললাম, আপনি সম্মানিত বদর জিহাদে শহীদ হননি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। কিন্তু আমাকে পরে আবার কায়িয়াবী জীবন দান করা হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এরপর আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ স্বপ্ন মুবারক বর্ণনা করলে তিনি বললেন, হে হযরত আবূ জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! এর ব্যাখ্যা হচ্ছে শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করা অর্থাৎ আপনিও সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করবেন।’ সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (যাদুল মায়াদ, ফতুহুল বারী, সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হযরত আমর ইবনে জামূহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
সম্মানিত উহুদ জিহাদে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত ভগ্নিপতি হযরত আমর ইবনে জামূহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশের ঘটনা অত্যন্ত আশ্চার্যজনক। হযরত আমর ইবনে জামূহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পায়ে ছিল খঞ্জত্ব। আর তা সামান্য পরিমাণ নয় বরং বেশি পরিমানই ছিলো। উনার চার জন ছেলে সন্তান ছিলেন। উনারা সকলেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম উনাদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। আর এ চার ছেলে সন্তান উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে প্রতিটি জিহাদ মুবারকে অংশ গ্রহণ করেছেন।
 সম্মানিত উহুদের জিহাদে হযরত আমর ইবনে জামূহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছেলে সন্তান উনারা যখন সম্মানিত জিহাদ মুবারকের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন উনারা উনাদের পিতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনিতো অসুস্থ (তথা মাজুর), আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যারা মাজুর তাদের জন্য জিহাদ করার আদেশ দেননি। এখন হযরত আমর ইবনে জামূহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অসুস্থতা নিয়ে জিহাদে যেতে আগ্রহী, তিনি সম্মানিত জিহাদে যাওয়ার অনুমতি মুবারকের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে উপস্থিত হলেন। তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার অসুস্থতার কারণে আমার ছেলে সন্তান উনারা আমাকে সম্মানিত জিহাদ মুবারকে যেতে অনুমতি দিচ্ছেন না। তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি এই খঞ্জ অবস্থা নিয়েই আপনার সাথে সম্মানিত জান্নাত মুবারক পর্যন্ত যেতে চাই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনিতো মাজুর, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার প্রতি সম্মানিত জিহাদে অংশ গ্রহণ করা ফরয করেননি। এরপর উনার সন্তান উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনাদের কি ইচ্ছা? যদি আপনারা উনাকে সম্মানিত জিহাদে যেতে বাধা দান না করেন তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক দান করবেন। অতঃপর তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত অনুমতি মুবারক নিয়ে সম্মানিত জিহাদ মুবারকে শামিল হলেন এবং সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
হযরত আমর ইবনে জামূহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে ক্বিবলামুখী হয়ে দোয়া মুবারক করেছিলেন,
اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي الشَّهَادَةَ، وَلا تَرُدَّنِي إِلَى أَهْلِي
অর্থ: ‘ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাকে শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার তাওফীক দান করুন। আমাকে আর আমার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে নিবেন না। (উসদুল গবা, উয়ূনুল আছার, শুহাদায়ে উহুদ, সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এই সম্মানিত জিহাদে হযরত আমর ইবনে জামূহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এক পুত্র হযরত খাল্লাদ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। হযরত আমর ইবনে জামূহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিতা আহলিয়া ছিলেন। হযরত হিন্দা বিনতে আমর ইবনে হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি। যিনি হচ্ছেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিতা বোন। সম্মানিত উহুদ জিহাদে হযরত হিন্দা বিনতে আমর ইবনে হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার ভাই হযরত আব্দুল্লাহ আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি, উনার ছেলে হযরত খাল্লাদ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং উনার আহাল হযরত আমর ইবনে জামূহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সম্মানিত জিহাদ মুবারক শেষে যখন উনাদের তিনজনের সম্মানিত জিসম মুবারক একটি উটের পিঠে উঠিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন তখন দেখা গেল উটটি মাটিতে বসে পড়ছে, কিন্তু সম্মানিত উহুদ ময়দানের দিকে ফিরালে দ্রুত চলতে শুরু করে। এ অবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত হিন্দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে বললেন, হযরত আমর ইবনে জামূহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বের হওয়ার সময় কোন দোয়া করেছিলেন কি? হযরত হিন্দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহা তিনি বললেন, তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বের হওয়ার সময় দোয়া মুবারক করেছিলেন, ‘ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাকে শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার তাওফীক দান করুন। আমাকে আর আমার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে নিবেন না।’ তা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এজন্য উটটি পবিত্র মদীনা শরীফের দিকে ফিরছে না। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
 وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنَّ مِنْكُمْ مَنْ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللَّهِ لأَبَرَّهُ، مِنْهُمْ حَضْرَتْ عَمْرُو بْنُ الْجَمُوحِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَلَقَدْ رَأَيْتُهُ يَطَأُ فِي الْجَنَّةِ بِعَرَجَتِهِ،
 অর্থ: “আমার নূরুল আমর তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র প্রাণ মুবারক যার কুদরতী হাত মুবারকে উনার ক্বসম! আপনাদের মধ্যে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্বসম খেলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তা পূর্ণ করেন, হযরত আমর ইবনে জামূহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাদের মধ্যে একজন। আমি উনাকে এ খঞ্জ অবস্থাতেই সম্মানিত জান্নাতে চলতে ও ফিরতে দেখছি। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবাহান মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (যুরকানী, রাওদ্বুল উনূফ, উয়ূনুল আছার, সীরতে হালাবিয়্যাহ, সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে ছালিহ ইবনে কাইসান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন যে, সম্মানিত উহুদ জিহাদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে যাঁরা সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছিলেন, উনাদেরকে হযরত হিন্দা বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (তিনি তখনও সম্মানিত ঈমান গ্রহণ করেননি) তিনি ও উনার সঙ্গিনীরা উনাদের নাক-কান মুবারক কেটেছিলো। এমন কি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কর্তিত নাক-কান মুবারকগুলো বিচ্ছিন্নভাবে ফেলে রেখেছিলো। এই সম্মানিত জিহাদে শত্রুরা সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনার কলিজা মুবারক ছিঁড়ে চিবাতে ও গিলতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু গিলতে পারেনি। এরপর হযরত হিন্দা বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি আক্রমনের ভয়ে সেখান থেকে সরে একটি উঁচু পাহাড়ে উঠে এই কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন,
نَحْنُ جَزَيْنَاكُمْ بِيَوْمِ بَدْرٍ ... وَالْحَرْبُ بَعْدَ الْحَرْبِ ذَاتُ سُعْرِ
আজ আমরা সম্মানিত বদর জিহাদের প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছি। আর প্রথম যুদ্ধের পর দ্বিতীয় যুদ্ধ আরো উত্তেজনা পূর্ণ হয়ে থাকে।
مَا كَانَ عَنْ عُتْبَةَ لِي مِنْ صَبْرِ ... وَلَا أَخِي وَعَمّهِ وَبَكْرِي
কাট্টা কাফির উতবার বেদনা বরদাশত করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না, আমার ভাইয়ের পক্ষেও তা সম্ভব ছিলো না, আর সম্ভব ছিল না উতবার চাচা ও আমার প্রথম সন্তানের পক্ষে।
شَفَيْت نَفْسِي وَقَضَيْت نَذْرِي ... شَفَيْت وَحْشِيّ غَلِيلَ صَدْرِي
আমি আমার প্রাণ জুড়িয়েছি, আমি আমার মান্নত পূরণ করেছি। হে হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু! (তিনি তখন সম্মানিত ঈমান মুবারক গ্রহণ করেননি) আপনি আমার মনের দাহ নির্বাপিত করেছেন।
فَشُكْرُ حَضْرَتْ وَحْشِيّ رَضِىَ اللهُ تَعَالىَ عَنْهُ عَلَيّ عُمْرِي ... حَتّى تُرَمّ أَعْظُمِي فِي قَبْرِي
সুতরাং আজীবন আমি হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কৃতজ্ঞ থাকবো, যতদিন না আমার হাঁড় কবরে জীর্ণ হয়ে যায়।        
 উপরোক্ত কবিতার জবাবে হযরত হিন্দা বিনতে উছাছাহ ইবনে আব্বাদ ইবনে মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন,
خَزِيت فِي بَدْرٍ وَبَعْدَ بَدْرٍ ... يَا بِنْت وَقّاعٍ عَظِيمِ الْكُفْرِ
হে লাঞ্ছিত, পতিত ও কট্টর কাফিরের মেয়েরা। সম্মানিত বদর জিহাদে তোমরা আপদস্থ হয়েছ, আর সম্মানিত বদর জিহাদের পরেও।
صَبّحَك اللّهُ غَدَاةَ الْفَجْرِ ... مِلْهاشِمِيّينِ الطّوّالِ الزّهْرِ
 মহান আল্লাহ পাক তিনি করুন, সকাল সকালেই কর্তনশীল তরবারিসহ দীর্ঘকায় বিশিষ্ট সুন্দর সুন্দর হাশিমী উনাদের সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ ঘটুক।
 بِكُلّ قُطّاعٍ حُسَامٍ يَفْرِي ...حَضْرَتْ حَمْزَةُ عَلَيْهِ السَّلاَمِ لَيْثِيٌ وَ حَضْرَتْ عَلِيّ عَلَيْهِ السَّلاَمِ صَقْرِيّ.
 সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি হলেন আমার সিংহ, আর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি হলেন, আমার বাজপাখী।
إذَا رَامَ شَيْبٌ وَأَبُوك غَدْرِي ... فَخَضْبًا مِنْهُ ضَوَاحِي النّحْرِ
 যখন কাট্টা কাফির শায়বা আর আপনার পিতা আমার সাথে গাদ্দারী করেছে, তখন সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি ও সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি তাদের বক্ষের বাইরের অংশগুলোকে রক্তে রঞ্জিত করে দিয়েছেন। তাদের এ মন্দ প্রতিজ্ঞা, অত্যন্ত ঘৃণিত প্রতিজ্ঞা।
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত হিন্দা ইবনে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনিও এ সময় এই পংক্তিগুলো আবৃত্তি করেছিলেন,
شَفَيْت مِنْ حَمْزَةَ نَفْسِي بِأُحُدْ ... حَتّى بَقَرْت بَطْنَهُ عَنْ الْكَبِدْ
সম্মানিত উহুদের মাঠে সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করে আমার কলিজা ঠান্ডা করেছি এবং পেট ফেড়ে উনার কলিজা পর্যন্ত বের করে নিয়েছি। নাউযূবিল্লাহ!
أَذَهَبَ عَنّي ذَاكَ مَا كُنْت أَجِدْ ... مِنْ لَذْعَةِ الْحُزْنِ الشّدِيدِ الْمُعْتَمِدْ
এর দ্বারা এক কঠিন জীবননাশক মর্মপীড়ার সেই অস্থিরতার ভাব শেষ হয়ে গিয়েছে, যা আমি আমার বক্ষে অনুভব করছিলাম।
وَالْحَرْبُ تَعْلُوكُمْ بِشُؤْبُوبٍ بَرِدْ ... تُقْدِمُ إقْدَامًا عَلَيْكُمْ كَالْأَسَدِ
 এ যুদ্ধে আপনাদের উপর শিলাবৃষ্টির ন্যায় উছলিয়ে পড়ছিল এবং তা রক্ত পিপাসু সিংহের ন্যায় আপনাদের উপর চড়াও হচ্ছিল। (শরহে কুসত্বলানী, রওদ্বুল উনূফ, সীরাতে হালাবিয়্যাহ, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, উয়ুনুল আছার, তারিখুল খমীস, আল কামিলু ফিত তারিখ)

হযরত খাইছামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
হযরত খাইছামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত উহুদ জিহাদের প্রস্তুতিকালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আর্জি মুবারক জানালেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার জন্য আফসুস যে, আমি সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারকে যেতে পারিনি। কিন্তু আমি সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারকে যেতে খুবই আগ্রহী ছিলাম। আমার ছেলে হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও আগ্রহী ছিলেন। শেষ পর্যন্ত লটারী করি। লটারীতে আমার নাম উঠেনি, তাই সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারকে আমার যাওয়া হয়নি। আমার ছেলে হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারকে অংশ গ্রহণ করে সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 আজ রাত্রিতে আমি আমার ছেলে হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে স্বপ্নে দেখেছি। খুব সুন্দর উজ্জ্বল উনার জিসম মুবারকের গড়ন, তিনি সম্মানিত জান্নাতের বাগান ও নহরে ইচ্ছা মাফিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি আমাকে বললেন, আব্বা! আপনিও এখানে চলে আসুন, তাহলে আমরা দু’জনে এক সঙ্গেই থাকতে পারবো। তিনি আরো বললেন, আমার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার সাথে যে ওয়াদা মুবারক করেছেন আমি তার সবই সত্য, সঠিক ও যথাযথ পেয়েছি। ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! স্বপ্নের পর থেকে আমি আমার ছেলের সাথে একত্রে থাকতে খুবই আগ্রহী ও উৎসাহ বোধ করছি। আমার বয়স অনেক হয়ে গেছে, হাড়ের শক্তি কমে গেছে। তাই প্রবল ইচ্ছে হচ্ছে যে, আমার রব মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে মিলিত হতে। ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার জন্য সম্মানিত দোয়া মুবারক করুন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাকে সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক নসীব করেন এবং আমার ছেলে হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে সম্মানিত জান্নাতে একত্রে অবস্থান মুবারক করার তাওফীক দান করেন।
 সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত খাইছামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য সম্মানিত দোয়া মুবারক করলেন। হযরত খাইছামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত উহুদ জিহাদেই সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (যাদুল মায়াদ, সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বীরত্ব:
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে কিছু সংখ্যক বিজ্ঞ আলিম বর্ণনা করেছেন যে, সম্মানিত উহুদের জিহাদে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মুখ মুবারকে একটি পাথর লেগেছিল যার ফলে উনার সামনের একটি দাঁত ভেঙ্গে যায় এবং উনার দেহে বিশ বা তার চেয়েও অধিক আঘাত মুবারক লেগেছিল। কিছু আঘাত লেগেছিল উনার পা মুবারকেও। যার কারণে তিনি খোঁড়া হয়ে গিয়েছিলেন। (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি )

 হযরত সা’দ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানী জযবা মুবারক:
হযরত সা’দ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমার অন্তর মুবারকে কোন মানুষকে হত্যা করার তীব্র ইচ্ছা কখানো জন্মেনি, যতটা আমার ভাই কাট্টা কাফির উতবাকে হত্যা করার ব্যাপারে জন্মেছিল। যদিও আমি জানতাম যে, এ কারণে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাকে ঘৃণা করবে। কিন্তু আমার জন্য নূরে মুুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ইরশাদ মুবারকই যথেষ্ট। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
 اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى مَنْ دَمَّى وَجْهَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
 অর্থ: “সে ব্যক্তির উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত বা গযব খুবই কঠোর, যে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল মুজাজজাম তথা মহাসম্মানিত জিসম মুবারক নূরুন নাজাত বা মুবারক রক্তে রঞ্জিত করে দিয়েছে। (বুখারী শরীফ, ইবনে হাব্বান, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, মুসনাদে আহমদ, ফায়যুল বারী)
হযরত ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে:
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আসিম ইবনে উমর ইবনে কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের মধ্যে হাতিব ইবনে উমাইয়া ইবনে রাফির এক ছেলে ছিলেন যিনি ছিলেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম উনাদের অন্তর্ভূক্ত। উনার নাম মুবারক হযরত ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সম্মানিত উহুদ জিহাদে তিনি আহত হন। উনাকে ঘরে আনা হলো। তখন তিনি মুমূর্ষ অবস্থায় অবস্থান মুবারক করছিলেন। পরিবারস্থ সকলেই উনার চারিপাশে সমবেত হলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অনেকেই উনাকে বলতে লাগলেন, হে হাতিব তনয়! আপনি সম্মানিত জান্নাত মুবারকের সুসংবাদ গ্রহণ করুন। তখন হযরত ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা সে ছিল এক বৃদ্ধ লোক। তার অন্তরে তখনও জাহিলিয়াত বর্তমান ছিল। এ সময় তার নিফাক্বী তথা মুনাফিক্বী প্রকাশ পেয়ে গেল। সে বলে উঠলো, আপনারা উনাকে কিসের সুসংবাদ দিচ্ছেন, হারমান জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন? নাউযূবিল্লাহ! সে আরো বলল, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আপনারা প্রতারণা করে এই যুবকের জীবন ধ্বংস করলেন। নাউযূবিল্লাহ! (উল্লেখ যে, হারমান হলো এমন একটি গাছের নাম, যার থেকে ছোট কালো দানা উৎপন্ন হয়। সাধারণত: এ গাছ কবরস্থানে জন্মে থাকে। (রওদ্বুল উনূফ, সীরতে হালাবিয়্যাহ, উয়ূনুল আছার, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
মুনাফিক অবস্থায় কুযমানের মৃত্যু:
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে হযরত আসিম ইবনে আমর ইবনে কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেছেন। আমাদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল যার সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না যে, সে কোন গোত্রের। তার নাম ছিল কুযমান। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে তার সম্পর্কে আলোচনা করা হলে, তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
إنّهُ لَمِنْ أَهْلِ النّارِ
 অর্থ: “নিশ্চয়ই সেতো জাহান্নামীদের অন্তর্র্ভূক্ত।”
 সম্মানিত উহুদ জিহাদে কুযমান বেশ উদ্যমের সাথে সম্মানিত জিহাদে অংশগ্রহণ করে। এমনকি সে একাই সাত/আটজন মুশরিককে হত্যা করে। সে অত্যন্ত শক্তিশালী ছিলো। অবশেষে সে মারাত্মকভাবে আহত হয়, যার কারণে উঠতে পারছিল না। তাকে উঠিয়ে বানূ যাফারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো।
 فَقَالَ لَهُ رِجَالٌ مِنْ الْمُسْلِمِينَ أَبْشِرْ يَا قُزْمَانُ، فَقَدْ أَبْلَيْت الْيَوْمَ وَقَدْ أَصَابَك مَا تَرَى فِي اللّهِ قَالَ بِمَاذَا أَبْشِرُ فَوَاَللّهِ مَا قَاتَلْت إلّا حَمِيّةً عَنْ قَوْمِي؛ فَلَمّا اشْتَدّتْ بِهِ جِرَاحَاتُهُ وَآذَتْهُ أَخَذَ سَهْمًا مِنْ كِنَانَتِهِ فَقَطَعَ بِهِ رَوَاهِشَ يَدِهِ فَقَتَلَ نَفْسَهُ،
 অর্থ: “অতঃপর তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে একজন বলতে লাগলেন, হে কুযমান! তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর। অবশ্যই আজকে তোমার জন্য পরীক্ষা রয়েছে, নিশ্চয়ই তোমার জন্য মুছিবতের বিষয় যে, তুমি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্পর্কে কি আক্বীদা পোষন করো? সে বলল, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমাকে কিসের সুসংবাদ দেওয়া হচ্ছে। আমিতো নিছক আমার ক্বওম বা সম্প্রদায়ের মর্যাদা রক্ষার্থে লড়েছি। অন্যথায় কখনো আমি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতাম না। এরপর যখন তার যখমের যন্ত্রণা তীব্র হলো, তখন সে তূণীর থেকে তীর বের করে আত্মহত্যা করলো ”। নাউযূবিল্লাহ! (আর রওদ্বুল উনূফ, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, উয়ূনুল আছার ফি ফুয়ূনুল মাগাযী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক)
হযরত মুখাইরীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঘটনা সম্পর্কে:
হযরত মুখাইরীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ইহুদী ধর্মের রাহিব বা ধর্মজাযক ও জ্ঞানী বা পন্ডিত। উনার ছিলো বিরাট খেজুর বাগান। তিনি উনার জীবনের শেষ মুহূর্তে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান মুবারক গ্রহণ করেন এবং সেই সাথে সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। সম্মানিত উহুদ জিহাদে মুখায়রীক নামে এক ব্যক্তি সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছিলেন। হযরত মখাইরীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন, বানূ ছা’লাবা ইবনে ফিতূয়নের এক সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি সম্মানিত উহুদ জিহাদের দিন ইহুদীদের লক্ষ্য করে বললেন,
 يَا مَعْشَرَ يَهُودَ وَاَللّهِ لَقَدْ عَلِمْتُمْ أَنّ نَصْرَ حَضْرَتْ مُحَمّدٍ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَلَيْكُمْ لَحَقّ، قَالُوا إنّ الْيَوْمَ يَوْمُ السّبْتِ قَالَ لَا سَبْتَ لَكُمْ. فَأَخَذَ سَيْفَهُ وَعُدّتَهُ وَقَالَ إنْ أُصِبْت فَمَالِي لِمُحَمّدِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَصْنَعُ فِيهِ مَا شَاءَ ثُمّ غَدَا إلَى رَسُولِ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَقَاتَلَ مَعَهُ حَتّى قُتِلَ فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِيمَا حَضْرَتْ بَلَغَنَا مُخَيْرِيقٌ رَضىَ اللهُ تَعَالىَ عَنْهُ خَيْرُ يَهُودَ.
 অর্থ: “হে ইহুদী সম্প্রদায়! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তোমরা জানো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক করা তোমাদের জন্য অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব তথা ফরযে আইন। তখন ইহুদীরা বলল, আজতো ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার। হযরত মুখাইরীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়াওমুস সাবতি বলতে তোমাদের কিছু নেই। এরপর হযরত মুখাইরীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আসবাবপত্র ও তরবারি নিয়ে বললেন, যদি আমি সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করি তবে আমার সমস্ত ধন-সম্পদ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যে। তিনি তা যেভাবে চান সেভাবেই ব্যবহার করবেন। এরপর হযরত মুখাইরীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গিয়ে উনার সম্মানিত ছোহবত মুবারক থেকে সম্মানিত জিহাদ মুবারকে অংশ গ্রহণ করলেন এবং সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমাদের কাছে খবর এসেছে যে, হযরত মুখাইরীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইহুদীদের মধ্যে খুবই উত্তম ছিলেন।” (ফতহুর রব্বানী, রওদ্বুল উনূফ, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, উয়ূনুল আছার, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক)
হারিছ ইবনে সুওয়াইদ ইবনে ছামিতের মুনাফিক্বী প্রকাশ:
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হারিছ ইবনে সুওয়াইদ ইবনে ছামিত নামে এক মুনাফিক্ব সম্মানিত উহুদ জিহাদে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে বের হয়। যখন উভয় দল তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এবং মক্কার কাফির মুশরিকরা মুখোমুখি হলেন, তখন এই কাট্টা মুনাফিক হযরত মুজাযার ইবনে যিয়াদ বালাওয়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও বানূ যুবাইয়াহ- এর জনৈক ছাহাবী হযরত কাইস ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং উনাদের উভয়কে শহীদ করলো। নাউযূবিল্লাহ! তারপর সে পবিত্র মক্কা শরীফে গিয়ে কুরাইশ কাফির মুশরিকদের সাথে মিলে গেল।
 প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে,
 قَدْ أَمَرَ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنَ الْخَطّابِ عَلَيْهِ السَّلاَمِ بِقَتْلِهِ.
 অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে নির্দেশ মুবারক দিলেন যে, তাকে পেলে অবশ্যই হত্যা করে ফেলবেন।”
 কিন্তু সে পালিয়ে বেড়াতে লাগলো। সে এক সময় পবিত্র মক্কা শরীফেই অবস্থান করতেছিলো। এরপর সে তার ভাই হযরত জুল্লাস ইবনে সুওয়াইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে তাওবার আবেদন নিয়ে পাঠালো, যেন সে নিজ ক্বওমের কাছে ফিরে আসতে পারে। (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, রওদ্বুল উনূফ )
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার যে বর্ণনা পেয়েছি, সে মতে এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করলেন,
 كَيْفَ يَهْدِي اللَّـهُ قَوْمًا كَفَرُوا بَعْدَ إِيمَانِهِمْ وَشَهِدُوا أَنَّ الرَّسُولَ حَقٌّ وَجَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُۚ وَاللَّـهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ.
 অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি কি করে ঐ সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করবেন? যারা সম্মানিত ঈমান মুবারক আনার পর কুফরী করে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হক্ব বা সত্য বলে সাক্ষ্য দেয়ার পর উনার নাফরমানী করে এবং উনার নিকট পবিত্র কুরআন শরীফ ও সম্মানিত সুন্নাহ শরীফ উনাদের সুস্পষ্ট বিধান আসার পর তা অমান্য করে। এরা মূলত; যালিম। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যালিম সম্প্রদায়কে সম্মানিত হিদায়েত মুবারক দান করেন না। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৮৬)
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যাদের উপর আমার আস্থা রয়েছে এমন কিছু সম্মানিত আলিম ব্যক্তি আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। হযরত মুজাযযার ইবনে যিয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কাট্টা মুনাফিক্ব হারিছ ইবনে সুওয়াইদ শহীদ করে। তবে কাইস ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শহীদ করেনি। এর প্রমাণ হলো, হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত কাইস ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নাম মুবারক সম্মানিত উহুদ জিহাদে যারা সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন উনাদের তালিকায় উনার নাম মুবারক উল্লেখ করেননি।
 অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে,
 فَبَيْنَا رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي نَفَرٍ مِنْ أَصْحَابِهِ إذْ خَرَجَ الْحَارِثُ بْنُ سُوَيْد مِنْ بَعْضِ حَوَائِطِ الْمَدِينَةِ، وَعَلَيْهِ ثَوْبَانِ مُضَرّجَانِ فَأَمَرَ بِهِ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ حَضْرَتْ عُثْمَانَ بْنَ عَفّانَ عَلَيْهِ السَّلَأم، فَضَرَبَ عُنُقَهُ.
 অর্থ: “একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেকে নিয়ে এক স্থানে অবস্থান মুবারক করছিলেন। এমন সময় কাট্টা মুনাফিক হারিছ ইবনে সুওয়াইদ পবিত্র মদীনা শরীফের কোন এক বাগান থেকে বেরিয়ে এলো। তখন তার গায়ে ছিলো দু’টি লাল রং-এর কাপড়। তাকে দেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে নির্দেশ মুবারক দিলেন তাকে হত্যা করুন। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত নির্দেশ মুবারকা পেয়ে তার গর্দান ফেলে দিলেন। সুনহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! অন্য বর্ণনায় রয়েছে, জনৈক আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাকে হত্যা করেন। (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)

0 Comments: