হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৪০৪-১৬৭৬) (ট)


ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ সংরক্ষণ:

 ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইসম বা নাম মুবারক যে কারণে ইতিহাসের পাতায় ও মু’মিনদের মনে অত্যান্ত মর্যাদার সাথে লেখা হয়ে আছে তাহলো তিনি ছিলেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার সংরক্ষক বা হেফাযতকারী। ইয়ামামার যুদ্ধে বহু সংখ্যক হাফিযে কুরআন শহীদ হলে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এ ঘটনায় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার কাছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ সংকলনের প্রস্তাব পেশ করেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সেই সম্মানিত প্রস্তাব মুবারক গ্রহণ করেন। অবশেষে যায়েদ ইবনে সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার উপর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ সংকলনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। হযরত যায়েদ ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বিভিন্ন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের সহায়তায় কঠোর পরিশ্রম করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার একখানা পা-ুলিপি তৈরী করেন। এটি ছিল সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খেলাফতকালে সর্বজন স্বীকৃত পা-ুলিপি। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার জীবদ্দশায় পা-ুলিপিখানা উনার কাছে সংরক্ষিত ছিলো। উনার সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার এ পা-ুলিপিখানা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইসি সালাম উনার নিকট সংরক্ষিত থাকে। আর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইসি সালাম উনার সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত যতœসহকারে নিজের কাছে উক্ত পা-ুলিপিখানা সংরক্ষণ করে রাখেন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّ حَضْرَتْ حُذَيْفَةَ بْنَ اليَمَانِ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ قَدِمَ عَلـٰى سَيِّدِنَا حَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَكَانَ يُغَازِىْ اَهْلَ الشَّأْمِ فِـىْ فَتْحِ اَرْمِيْنِيَةَ وَاَذْرَبِيْجَانَ مَعَ اَهْلِ الْعِرَاقِ فَاَفْزَعَ حَضْرَتْ حُذَيْفَةَ بْنَ اليَمَانِ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ اخْتِلاَفُهُمْ فِـى الْقِرَاءَةِ فَقَالَ حَضْرَتْ حُذَيْفَةُ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ لِسَيِّدِنَا حَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا اَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْـنَ اَدْرِكْ هٰذِهِ الْاُمَّةَ قَبْلَ اَنْ يَّـخْتَلِفُوْا فِـى الْكِتَابِ اخْتِلَافَ الْيَهُوْدِ وَالنَّصَارٰى فَاَرْسَلَ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِلـٰى اِبْنَتِ اَبِيْهَا اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْـنَ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلرَّابِعَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ حَفْصَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ) اَنْ اَرْسِلِـىْ اِلَيْنَا بِالصُّحُفِ نَنْسَخُهَا فِـى الْمَصَاحِفِ ثُـمَّ نَرُدُّهَا اِلَيْكِ فَاَرْسَلَتْ بِـهَا اِبْنَتُ اَبِيْهَا اُمُّ الْـمُؤْمِنِيْـنَ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلرَّابِعَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ حَفْصَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ) اِلـٰى سَيِّدِنَا حَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَاَمَرَ حَضْرَتْ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ وَحَضْرَتْ عَبْدَ اللهِ بْنَ الزُّبَيْـرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَحَضْرَتْ سَعِيْدَ بْنَ الْعَاصِ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ وَحَضْرَتْ عَبْدَ الرَّحْـمٰنِ بْنَ الْـحَارِثِ بْنِ هِشَامٍ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ فَنَسَخُوْهَا فِـى الْمَصَاحِفِ وَقَالَ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ لِلرَّهْطِ الْقُرَشِيِّـيْـنَ الثَّلاَثَةِ اِذَا اخْتَلَفْتُمْ اَنْتُمْ وَحَضْرَتْ زَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ فِـىْ شَىْءٍ مِّنَ الْقُرْاٰنِ فَاكْتُبُوْهُ بِلِسَانِ قُرَيْشٍ فَاِنَّـمَا نَزَلَ بِلِسَانِـهِمْ فَفَعَلُوْا حَتّٰى اِذَا نَسَخُوْا الصُّحُفَ فِـى الْمَصَاحِفِ رَدَّ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ الصُّحُفَ اِلـٰى اِبْنَتِ اَبِيْهَا اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْـنَ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلرَّابِعَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ حَفْصَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ) وَاَرْسَلَ اِلـٰى كُلِّ اُفُقٍ بـِمُصْحَفٍ مِّـمَّا نَسَخُوْا وَاَمَرَ بِـمَا سِوَاهُ مِنَ الْقُرْاٰنِ فِـىْ كُلِّ صَحِيْفَةٍ اَوْ مُصْحَفٍ اَنْ يـُّحْرَقَ.
 অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। একদা হযরত হুযায়ফাহ্ ইবনে ইয়ামান রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট আগমন করেন, আর তখন তিনি ইরাকীদের সাথে থেকে আর্মেনিয়া ও আযারবাইজান জয় করার জন্য সিরিয়াবাসীদের সাথে জিহাদ করতেছিলেন। লোকের বিভিন্ন রীতিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ হযরত হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে উদ্বিগ্ন করে তুলে। হযরত হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বলেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! ইহুদী এবং নাছারাদের ন্যায় এই উম্মত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কিতাব কুরআন শরীফ নিয়ে ইখতিলাফ করার পূর্বে আপনি উনাদেরকে রক্ষা করুন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট (এ কথা বলে লোক) পাঠান যে, (দয়া করে) আপনার নিকট রক্ষিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার সহীফাহসমূহ (পা-ুলিপিখানা) আমাদের নিকট পাঠিয়ে দিন। আমরা তা বিভিন্ন মাসহাফে (কিতাবে) অনুলিপি করে পুনরায় আপনার সম্মানিত খিদমত মুবারক পেশ করবো। সুবহানাল্লাহ! তখন ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি তা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট পাঠিয়ে দেন।’ সুবহানাল্লাহ!
 অত:পর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হযরত যায়েদ ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা উনাকে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা উনাকে, হযরত সাঈদ ইবনে ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা উনাকে এবং আব্দুল্লাহ ইবনে হারিছ ইবনে হিশাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে তা অনুলিপি করতে নির্দেশ দেন। তারপর উনারা তা বিভিন্ন মাসহাফে অনুলিপি করেন। আর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি কুরাইশ গোত্রীয় এই তিনজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে বলে দিয়েছিলেন যে, যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার কোন স্থানে হযরত যায়েদ ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সাথে আপনাদের ইখতিলাফ হবে, তখন আপনারা তা কুরাইশদের রীতিতেই লিপিবদ্ধ করবেন। কেননা নিশ্চয়ই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ কুরাইশদের ভাষায় নাযিল হয়েছেন। উনারা সেই অনুযায়ী কাজ করেন। সুবহানাল্লাহ! ‘অবশেষে যখন উনারা সহীফাসমূহ (পা-ুলিপিখানা) বিভিন্ন মাসহাফে অনুলিপি করেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত সহীফাসমূহ (পা-ুলিপিখানা) ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট ফেরত পাঠান।’ সুবহানাল্লাহ! আর উনারা যা অনুলিপি করেছিলেন, তার এক এক কপি সম্মানিত ইসলামী খিলাফত উনার এক এক অঞ্চলে পাঠিয়ে দেন। আর এছাড়া যে কোনো সহীফায় বা মাসহাফে লিখা ‘কুরআন শরীফ’ উনাকে জ্বালিয়ে দিতে নির্দেশ মুবারক দেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, ফাতহুল বারী, ‘উমদাতুল ক্বারী, মেশকাত, মেরক্বাত ইত্যাদি)
 এভাবে ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার দয়া-ইহসান মুবারক-এ সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সঠিক এবং সুন্দরভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ সংকলন করেন। যার অবিকল পা-ুলিপি আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছেন।
 সুতরাং যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার লিখন ও পঠনে সম্মানিত মুসলমানদের মাঝে চরম এক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিলো, তখন ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট সংরক্ষিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার পা-ুলিপিখানাই সম্মানিত মুসলমান উনাদেরকে সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার সর্বজন স্বীকৃত পা-ুলিপিখানা মুবারক সংরক্ষণ করে সমস্ত জিন-ইনসান এবং তামাম কায়িনাতবাসী সকলের প্রতি অত্যন্ত দায়া-ইহসান মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! তাই তিনি সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের অন্তরে চিরস্মরণীয় হয়ে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে সম্মানিত তা’লীম মুবারক গ্রহণ:
ইবনে মাজাহ শরীফ এবং ত্ববারনী শরীফ’ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
 عَنْ حَضْرَتْ حَفْصَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ إِنِّي لأَرْجُو أَلاَّ يَدْخُلَ النَّارَ أَحَدٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى مِمَّنْ شَهِدَ بَدْرًا وَالْحُدَيْبِيَةَ قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ أَلَيْسَ قَدْ قَالَ اللَّهُ وَإِنْ مِنْكُمْ إِلا وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا قَالَ أَلَمْ تَسْمَعِيهِ يَقُولُ ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا.
 অর্থ: “ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই আমি এটা প্রত্যাশা করি যে, যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি চান, তাহলে যে সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা সম্মানিত বদর ও হুদায়বিয়ায় অংশগ্রহণ করেছেন, উনাদের কেউ জাহান্নামে যাবেন না। ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি কি ইরশাদ মুবারক করেননি যে,
 وَإِنْ مِنْكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا
 তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, সেখানে (জাহান্নামে) পৌঁছবে না। এটা আপনার রব মহান আল্লাহ পাক উনার অনিবার্য ফায়ছালা মুবারক।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৭১)
 নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনি কি এটা শুনেননি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,
ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا
 অতঃপর আমি মুত্তাক্বী উনাদেরকে নাজাত দিবো এবং জালিমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দিবো।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৭২)
ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্:

 দ্বাদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘ইযালাতুল খফা শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
بَيْنَا حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ ذَاتَ لَيْلَةٍ يَعُسّ سَمِعَ صَوْتِ اِمْرأةٍ مِنْ سَطْحِ وَهِيَ تُنْشَدُ
تَطَاوَلَ هَذَا الَّليَلُ وَازْدرَّ جَانِبُهُ - وَلَيْسَ اِلَي جَنْبِي خَلِيْلٌ اُلَاعِبُهُ
فَوَاللهِ لَوْ لَا اللهُ لَا شَئ غَيْرُهُ - لَزُعْزُعَ مِنْ هَذَا السَّرِيْرِ جَوَانِبُهُ
مَخَافَةُ رَبِّيْ وَالْحَيَاءُ يَصُدُّنِي - وَاُكْرِمُ بَعْلِيْ اَنْ تَنَالُ مَرَاكِبُهُ
 অর্থ: “এক রাতে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ঘুরে ঘুরে জনগনের অবস্থা দেখছিলেন। তখন তিনি এক ঘরের ছাদ থেকে একজন মহিলার আওয়াজ শুনতে পেলেন। মহিলা কবিতা পাঠ করছিলেন, ‘এ রাত দীর্ঘ হয়ে গেছে, আঁধারও ছেয়ে গেছে অথচ আমার পাশে বন্ধু নেই যার সাথে মন দেয়া-নেয়া করব। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি না হতেন, তাহলে তিনি ছাড়া আর কেউ ছিল না বাধা দেয়ার। তখন এ খাটের সর্বাংশ অবশ্যই কাঁপতে থাকত। নিজ প্রতিপালকের ভয় ও লজ্জা আমাকে বাধা দিচ্ছে। তা ছাড়া নিজ আহাল বা স্বামীর মর্যাদাবোধ আমার রয়েছে। তাই তার সওয়ারীতে আমি তো অন্য কাউকে আরোহী করতে পারি না।’
 فَقَالَ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ لَا َحَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ مَاذَا صَنَعْتَ يَا حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِنِسَاءِ الْمَدِيْنَةِ ثُمَّ جَاءَ فَضَرَبَ الْبَابَ عَلَي حَضْرَتْ حَفْصَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اِبْنَتَهُ فَقَالَتْ مَاجَاءَ بِكَ فِي هَذِهِ السَّاعَةُ قَالَ اَخْبِرِيْنِيْ كُمْ تَصْبِرُ الْمَرْأةُ الْمَغِيْبَةُ عَنْ اَهْلِهَا قَالَتْ اَقْصَاهُ اَرْبَعَةَ اَشْهُرِ فَلَمَّا اَصْبَحَ كَتَبَ اِلَي اَمْرَائَهُ فِي جَمِيْعِ النَّوَاحِيْ اَنْ لَا َتَجمَّرَ الْبُعُوْثُ وَاَنْ لَا يَغِيْبَ رَجُلٌ عَنْ اَهْلِهِ اَكْثَرُ مِنْ اَرْبَعَةَ اَشْهُرِ.
 সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এ কবিতা শুনে বলে উঠলেন, ‘লা-হাওলা ওয়া লা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। তখন সেই মহিলা বললেন, হে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আপনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার নারীদের সাথে কিরূপ আচরণ করতেছেন? অত:পর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি গিয়ে নিজের মহাসম্মানিত মেয়ে ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার দরজা মুবারক-এ কড়া নাড়লেন। ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি এগিয়ে এসে বললেন, কী কারণে আপনি এই সময় এখানে উপস্থিত হয়েছেন? তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমাকে সংবাদ দিন, কোনো মহিলার আহাল বা স্বামী বিদেশে থাকা অবস্থায় মহিলা তার আহাল বা স্বামীর জন্য কতদিন ধৈর্য ধারণ করতে পারেন? তিনি জবাব দিলেন, খুব বেশী হলে চার মাস।
অত:পর সকাল হওয়া মাত্রই সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সমস্ত গভর্নর বা দায়িত্বশীল উনাদের নিকট লিখলেন, কোনো সৈন্যকে যেন বেশী দিন আটকে না রাখা হয়। বিশেষত বিবাহিত সৈনিকদের যেন চার মাস অন্তর ছুটি দেয়া হয়।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 অপর বর্ণনায় রয়েছে,
 ثُمَّ دَخَلَ عَلَى حَضْرَتْ حَفْصَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَقَالَ إِنِّي سَائِلُكِ عَنْ أَمْرٍ قَدْ أَهَمَّنِي فَأَفْرِجِيهِ عَنِّي كَمْ تَشْتَاقُ الْمَرْأَةُ إِلَى زَوْجِهَا فَخَفَضَتْ رَأْسَهَا فَاسْتَحَيَتْ فَقَالَ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ فَأَشَارَتْ ثَلَاثَةَ أَشْهُرٍ وَإِلَا فَأَرْبَعَةً فَكَتَبَ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَلَّا تُحْبَسَ الْجُيُوشُ فَوْقَ أَرْبَعَةِ أَشْهُرٍ.
 অর্থ: “অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি (গভীর রাতেই) ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট গিয়ে বললেন যে, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে এমন একটি বিষয়ে সুওয়াল করছি, যে বিষয়টা আমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। আপনি আমাকে সে বিষয়ে সংবাদ দিন। একজন মহিলা কতদিনে তাঁর আহাল বা স্বামীকে কামনা করে? তখন ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি লজ্জায় উনার সম্মানিত মাথা মুবারক নিচু করে ফেলেন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ
 নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সত্য বিষয় প্রকাশে লজ্জাবোধ করেন না।’
 তখন ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি ইশারা মুবারক করলেন- ‘তিন মাস। আর যদি তা না হয়, তাহলে চার মাস’। অর্থাৎ তিন থেকে চার মাস। অত:পর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি দায়িত্বশীলদের নিকট চিঠি লিখেন, সৈন্যদেরকে যেন চার মাসের অধিক সময় আটকিয়ে রাখা না হয়। অর্থাৎ প্রতি চার মাস অন্তর যেন ছুটি দেয়া হয়।” সুবহানাল্লাহ! (মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)
 সুতরাং ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন একমাত্র যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের মহাসম্মানিত মু‘য়াল্লিমাহ। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত দয়া-দান, ইহসান মুবারকের বদৌলতেই সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলে ইলম মুবারকসহ সমস্ত প্রকার নিয়ামত মুবারক হাছিল করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!

ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদণ্ড-:
ইমাম ত্ববারনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন,
 عَنِ حَضْرَتْ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ أَنَّ جَارِيَةً حَضْرَتْ لِحَفْصَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَحَرَتْهَا، فَاعْتَرَفَتْ بِهِ عَلَى نَفْسِهَا، فَأَمَرَتْ حَضْرَتْ حَفْصَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ حَضْرَتْ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بن زَيْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، فَقَتَلَهَا.
 অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার একটা দাসী ছিলো, সে ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করে। তারপর সে নিজে এ বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয়। তখন ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি (উনার চাচাতো ভাই) হযরত আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে খত্ত্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে উক্ত দাসীকে ক্বতল করার নির্দেশ মুবারক দেন। তারপর তিনি তাকে ক্বতল করেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর)
হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘মুয়াত্ত্বা শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
أَنَّ حَضْرَتْ حَفْصَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَتَلَتْ جَارِيَةً لَهَا سَحَرَتْهَا ،
 অর্থ: “নিশ্চয়ই ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে উনার এক দাসী জাদু করার কারণে তিনি তাকে ক্বতল করেন।” (মুয়াত্ত্বা শরীফ)
 আল হাফিুল কাবীর আবূ বকর আব্দুর রাজ্জাক্ব ইবনে হাম্মাম আছ ছন‘আনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (বিলাদত শরীফ: ১২৬ এবং বিছাল শরীফ: ২১১ হিজরী শরীফ) উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল মুছান্নাফ শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
 عَنِ حَضْرَتْ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ ্রأَنَّ جَارِيَةً حَضْرَتْ لِحَفْصَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ سَحَرَتْهَا, وَاعْتَرَفَتْ بِذَلِكَ فَأَمَرَتْ بِهَا حَضْرَتْ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ زَيْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ فَقَتَلَهَا.
 অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার একটা দাসী ছিলো, সে ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করে। তারপর সে নিজে এ বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয়। তখন ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি হযরত আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে উক্ত দাসীকে ক্বতল করার নির্দেশ মুবারক দেন। তারপর তিনি তাকে ক্বতল করেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)
 হযরত ইমাম আবূ মুহম্মদ আব্দুল্লাহ ইবেন ওয়াহাব ইবনে মুসলিম মিছরী কুরাইশী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ:১৯৭ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল জামি’ শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
 عن حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ بْنِ عُمَرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ أَنَّ جَارِيَةً حَضْرَتْ لِحَفْصَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَحَرَتْهَا، فَأَمَرَتْ بِهَا فَقُتِلَتْ.
 অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার একটা দাসী ছিলো, সে উনাকে জাদু করে। ফলে ইবনাতু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি উক্ত দাসীকে ক্বতল করার নির্দেশ মুবারক দেন। তারপর তাকে ক্বতল করা হয়।” (আল জামি’)
 সুতরাং যারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে কষ্ট দিবে, তাদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ-।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ ৩য় হিজরী সনের ১৫ই রমাদ্বান শরীফ:
আমীরুল মু’মিনীন, ইমামুশ শুহাদা, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সিবতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল হুমাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার তারিখ ৩য় হিজরী সনের পবিত্র ১৫ই রমাদ্বান শরীফ, ইয়াওমুল আরবিয়া, বাদ-আছর। তিনি এই দিবসে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করে সমগ্র কুলকায়িনাতবাসীকে রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাত ও নাজাত মুবারক দানে ধন্য করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের পরপরই সম্মানিত নানাজান নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসে উনার সম্মানিত পিতাজান সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞেস করেন, পবিত্র আওলাদ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নাম মুবারক কি রেখেছেন? সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, উনার মহাসম্মানিত নাম মুবারক ‘হারব’ রাখবো বলে ভেবেছি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন ইরশাদ মুবারক করলেন, না উনার নাম মুবারক সাইয়্যিদুনা হযরত হাসান আলাইহিস সালাম। অর্থ মুবারক: ‘উত্তম থেকে উত্তমতম’। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
এর আগে সমগ্র আরবজাহানে আর কেউই নিজ সন্তানের জন্যে এ নাম রাখেনি। এ নাম মুবারক উনার সাথে তাদের পরিচয়ও ছিলো না।
যেমন এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
 حَضْرَتْ اَلْـحَسَنُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ اَلْـحُسَيْنُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِسْـمَانِ مِنْ اَهْلِ الْـجَنَّةِ.
 অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নাম মুবারক দু’টি পবিত্র জান্নাতী নাম মুবারকসমূহের অন্তর্ভুক্ত।” সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)
 মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আক্বীক্বা মুবারক: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘নূরুল ফাতহ তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র চুল মুবারক’ কাটিয়ে সমপরিমাণ রূপা ছদকা করে দিতে নির্দেশ মুবারক দেন। আর সপ্তম দিবসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আক্বীক্বা মুবারক উনার উদ্দেশ্যে মোটাতাজা দুটি দুম্বা মুবারক যাবেহ করেন। মহাসম্মানিতা দুধ মাতা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে দুম্বা মুবারকের একটি রান দেন। তারপর তিনি উনার নুরুল মাগফিরাহ তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাত দিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল হুদা তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাথা মুবারক উনার মধ্যে সুগন্ধি মুবারক মেখে দেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা ও মহাপবিত্রা দুধ-মাতা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার পরে খ¦তিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিতা আহলিয়া হযরত উম্মুল ফযল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনিই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্রতম দুধ মুবারক পান করান। সুবহানাল্লাহ! তিনি বলেন, একদিন আমি উনাকে নিয়ে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল আযহার তথা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কোল মুবারক উনার মধ্যে দেই। নূরুল আযহার তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কোল মুবারক উনার মধ্যে দেয়া মাত্রই তিনি নূরুশ শিফা মুবারক প্রকাশ করেন। তখন আমি উনার কাঁধ মুবারক উনার উপর আলতোভাবে তথা হালকাভাবে আমার হাত মুবারক রাখলাম। এ দেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বলেন, আমার আওলাদ আলাইহিস সালাম উনাকে আপনি ব্যথা দিলেন! মহান আল্লাহ পাক আপনার উপর ইহসান মুবারক করুন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক:
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কি পরিমাণ মুহব্বত মুবারক করতেন তা ভাষায় বর্ণনাতীত।
 সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফাযায়িল-ফযীলত প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-
 عَنْ حَضْرَتْ اَلْبَرَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَـى عَنْهُ قَالَ رَاَيَتُ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحَضْرَتْ اَلْـحَسَنُ بْنُ عَلِىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَه عَلَيْهِمَا السَّلَامُ عَلَى عَاتِقِهِ يَقُولُ اللَّهُمَّ إِنِّي أُحِبُّهُ فَأَحِبَّهُ.
অর্থ: “হযরত বারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছি যে, তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী ইবনে কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে নিজের নূরুন নুবুওওয়াহ তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কাঁধ মুবারক উনার উপর রেখে ইরশাদ মুবারক করছেন, ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আমি উনাকে মুহব্বত করি, আপনিও উনাকে মুহব্বত করুন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীমাহীন ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَـى عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَامِل حَضْرَتْ اَلْـحَسَن بْن عَلِىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَه عَلَيْهِمَا السَّلَامُ عَلى عَاتِقِه فَقَالَ رَجُلٌ نِعْمَ الْمُرَكَّبَ رَكِبْتَ يَا غُلَامُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنِعْمَ الرَّاكِبُ هُوَ.
 অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী ইবনে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিমাস সালাম উনাকে নিজের নুরুন নুবুওওয়াহ তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কাঁধ মুবারক উনার উপর বসিয়ে রেখেছিলেন। তখন এক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে আওলাদ তথা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কত উত্তম মাক্বাম মুবারক উনার মধ্যেই না আপনি আরোহণ করেছেন? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তিনিও তো অতি উত্তম আরোহী! সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)
 গঠনপ্রকৃতি মুবারক উনার দিক থেকে তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুবহু সাদৃশ্যপূর্ণ।
 এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
 عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَـى عَنْهُ قَالَ لَمْ يَكَنْ أَحَدٌ أَشْبَهَ بِالنَّبِي ِّصَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ حَضْرَتْ اَلْـحَسَنِ بْنِ عَلِىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَه عَلَيْهِمَا السَّلَامُ.
 অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিমাস সালাম উনার থেকে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ ছূরত মুবারক অন্য কেউই ছিলেন না। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, শুয়াইবুল ঈমান, শরহুস সুন্নাহ, ফাতহুল বারী, উমদাতুল ক্বরী)
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীমাহীন ফযীলত সম্পর্কে আরো বর্ণিত আছে। হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যতবার আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছি, ততবার আমার দু’চোখ মুবারক দিয়ে অশ্রু মুবারক ঝরেছে। কারণ, একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা শরীফ থেকে বাইরে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। আমি তখন পবিত্র মসজিদ মুবারকে। এসে আমার হাত মুবারক ধরে আমার শরীর মুবারক-এ ভর দিয়ে চলতে থাকেন। চলতে চলতে আমরা ‘কাইনুকা বাজারে’ এসে পৌঁছি। সেখানে পৌঁছে তিনি ঘুরে ফিরে বাজারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দেখে ফিরে আসেন। সঙ্গে আমিও ফিরে আসি। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিয়ে- আমাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, হে হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আমার আওলাদ আলাইহিস সালাম উনাকে নিয়ে আসুন।’ একটু পর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল আযহার তথা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কোল মুবারকে দেয়া হয়। এ সময় সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরুল আযহার তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কোল মুবারকে বসে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুন নি’য়ামাহ তথা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র দাড়ি মুবারক ধরে নাড়তে থাকেন। অতঃপর উনার মুখ মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুখ মুবারক উনার সাথে মিলিয়ে দেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اُحِّبُّهٗ وَاَحِبَّ مَنْ يّـُحِبُّهٗ.
 অর্থ: “আয় আল্লাহ পাক! সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি মুহব্বত করি এবং উনাকেও মুহব্বত করি যিনি উনাকে মুহব্বত করেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, সুনানে নাসায়ী শরীফ)
 পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম মূল মধ্যমণি হচ্ছেন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুল রাবিয়া’ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা। আর উনাদের মাধ্যমেই নবী পরিবার ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে স্পষ্টভাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
 عَنْ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ كُلُّ سَبَبٍ وَّ نَسَبٍ مُّنْقَطِعٌ يَّوْمَ الْقِيَامَةِ اِلَّا سَبَبِىْ وَنَسَبِىْ..... كُلُّ وَلَدِ أَبٍ فَإِنَّ عَصَبَتَهُمْ لأَبِيْهِمْ مَاخَلَا وَلَدُ حَضْرَتْ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَإِنِّيْ أَنَا أَبُوْهُمْ وَعَصَبَتُهُمْ.
 অর্থ: “হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি- ক্বিয়ামতে আমার বংশ পরম্পরা ব্যতীত অন্য সব বংশ বন্ধ হয়ে যাবে। প্রত্যেক সন্তানের সম্বন্ধ তাদের পিতার সাথে হয়। কিন্তু উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্রতম দু’নূরী আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনাদের পবিত্রতম পূর্ববংশীয় পিতা আমিই এবং উনাদের পূর্বপুরুষও আমি।” (তবারানী শরীফ, বাইহাক্বী শরীফ, মুসনাদে আহমদ, হুলিয়াতুল আ্উলিয়া)
 সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম ইমামতিতে আমরা পবিত্র ছলাত আদায় করছিলাম তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়াবী দৃষ্টিকোণ থেকে অল্প বয়স মুবারকের অধিকারী ছিলেন, এমতাবস্থায় পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করতেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যতবার সিজদা মুবারক-এ যেতেন, ততবার তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কাঁধ মুবারক-এ এবং নূরুল আত্বহার তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পিঠ মুবারক উনার মধ্যে উঠতেন। এমতাবস্থায় সিজদা মুবারক থেকে উঠার সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে প্রথম নামাতেন, অতঃপর ধীরে ধীরে স্বীয় নূরুল হুদা মুবারক তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাথা মুবারক উঠাতেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে এমন মুহব্বত দেখি যা অন্য কারো সঙ্গে এরকম মুহব্বত দেখি না! সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি দেখেছি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন আসেন; নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন সিজদারত। এসেই তিনি সোজা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল আত্বহার মুবারক তথা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র পিঠ মুবারক উনার উপর উঠে বসেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওইভাবেই থাকেন। যতক্ষণ তিনি নিজে নূরুল আত্বহার মুবারক তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পিঠ মুবারক থেকে নেমে না গেছেন; নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে নামাননি। আবার কখনো দেখেছি রুকু মুবারক অবস্থায় এসেছেননূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন নূরুদ দারাজাহ তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু’পা মুবারক ফাঁক করে দিয়েছেন, তিনি অপর দিক দিয়ে বেরিয়ে গেছেন।
 নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি খুব খেয়াল রাখতেন। কখনো কখনো এমনও দেখা গেছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত খুতবা মুবারক দিচ্ছেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা মানুষের মাঝখান দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে এগিয়ে আসছেন। আসার সময় হোঁচট খাচ্ছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন খুতবা মুবারক বন্ধ করে দিয়ে মিম্বার শরীফ থেকে নেমে যেতেন। গিয়ে উনাদের উঠিয়ে নিয়ে এসে একেবারে নিজের সামনে বসাতেন। সুবহানাল্লাহ!
 শুধু তাই নয়; সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদত মুবারক এতই নরম ছিলেন তা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। একদিনের ঘটনা- কোনো ব্যক্তি উনার প্রতি খারাপ ব্যবহার করলে তিনি তার প্রতি রূঢ় হতেন না। একদিন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মদীনা শরীফ-এ একটি বাজারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় একজন সিরীয় ব্যক্তি উনার মহান ব্যক্তিত্ব দেখে উনার পরিচয় জানতে চাইলে লোকেরা বললো, তিনি ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এতে লোকটি উত্তেজিত হয়ে গেল এবং উনার কাছে এসে উনাকে গালাগালি করতে লাগলো। নাউযূবিল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শান্তভাবে তার গালমন্দ শুনলেন। যখন সে থামলো তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাহলে তুমি আমার সঙ্গে আসো এবং আমার সঙ্গেই থাকো। এ কথা বলে তাকে অনেক উপঢৌকন দিলেন। সুবহানাল্লাহ! শত্রুদের সাথে কিরূপ আচরণ করা দরকার তা কায়িনাতবাসীর জন্য ইবরত ও নছীহত মুবারক রেখে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!
 হযরত ইমাম আবূ না’ঈম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাকে হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, যখনই আমি সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতাম, তখন আমার চোখে পানি আসতো। এটা এ কারণে যে, একদিন আমি দেখতে পেলাম সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দ্রুতবেগে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল আযহার তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কোল মুবারক-এ বসে গেলেন। অতঃপর তিনি দুই হাত মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুন নি’য়ামাহ তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দাড়ি মুবারক ধরলেন।
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মুখ মুবারক সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মুখ মুবারক উনার নিকটবর্তী করলেন এবং ইরশাদ মুবারক করলেন:
اللَّهُمَّ إِنِّي أُحِبُّهُ فَأَحِبَّهُ
 অর্থ: “ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আমি উনাকে অবশ্যই মুহব্বত করি, সুতরাং আপনিও উনাকে মুহব্বত করুন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
 সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছীফত মুবারক বর্ণনায় খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম। ‘তাবাকাতে ইবনে সাদ’ নামক বিশ্ববিখ্যাত কিতাবে বর্ণিত রয়েছে- হযরত উকাবা ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিছালী শান মুবারক জাহির হবার কিছুদিন পর খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে আমি পবিত্র ছলাতুল আছর উনার জামায়াত পড়ার জন্য বের হলাম। এসময় আমাদের সাথেই ছিলেন ইমামে আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। পথিমধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার যিয়ারত মুবারক হলো। তখন অনেক শিশু-কিশোর বয়সী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যমণি হিসেবে সেখানে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবস্থান করছিলেন। জিয়ারত মুবারক হবার সাথে সাথেই খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কোল মুবারকে তুলে নিলেন এবং উনাকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলেন- আমার পিতা-মাতা আপনার সুমহান শান মুবারকে কুরবান হউক! চেহারা ছুরত মুবারকে আপনিতো হুবহু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মতোই শানদার হয়েছেন, কিন্তু আপনার সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুনা কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মতো নন! সুবহানাল্লাহ! এই কথা মুবারক শ্রবণ করে ইমামে আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি অত্যন্ত খুশি মুবারক প্রকাশ করে মুচকি হাসি মুবারক দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
 এমনই ছিলো হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুমহান নক্ষত্র এবং লক্ষ্যস্থল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারকে খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বদ্ধমূল আক্বীদা মুবারক যা উনার পবিত্র অন্তর মাঝে বিরাজমান ছিলো তাই তিনি প্রকাশ করে দিলেন।
 খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলিম জাতিকে মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইউস সুন্নাহ, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আওলাদে রসূল, জামিউল আলক্বাব ওয়ান নিসবাত, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উসীলায় মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের খাছ করে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারক অনুধাবন করে উনার প্রতি যথাযথ হুসনে যন পোষণ করতঃ আমাদের ঈমান আমলকে সঠিকভাবে নবায়ন করার তাওফীক দান করুন। এবং সেই সাথে পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, হাবীবে আ’যম, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি আখাছছুল খাছ আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আহলে বাইতে শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভূক্ত। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে উনাদের পরিপূর্ণ অনুসরণ অনুকরণ করে উনাদের হাক্বীক্বি মুহব্বত তায়াল্লুক নিছবত মুবারক অর্জন করার এবং উনাদের নূরুদ দারাজাত মুবারকে অনন্তকালব্যাপী পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
সম্মানিত হিজরী তৃতীয় সনে রাজী’র মর্মান্তিক ঘটনা:
 সম্মানিত হিজরতের ছত্রিশতম মাসে মাহে ছফর শরীফে এই ঘটনা সংঘটিত হয়। রাজী’ অভিযানটি পরিচালিত হয় হুযাইল গোত্রের বসতির দিকে। স্থানটি পবিত্র মক্কা শরীফ ও গাতফান এর মধ্যবর্তী হিজাজের দিকের একটি এলাকা। এ ঘটনাটি যেহেতু রাজী’ নামক স্থানের নিকটেই সংঘটিত হয়েছে, তাই এ নামেই এর নামকরণ করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
 হযরত আবু মুহম্মদ আব্দুল মালিক ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, হযরত যিয়াদ ইবনে আব্দুল্লাহ বাককয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক্ব মুত্তালিবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, হযরত আসিম ইবনে উমর ইবনে কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, সম্মানিত উহুদ জিহাদের পর আযল ও কারাহ গোত্রের একদল লোক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হয়।
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আযল ও কারা হচ্ছে হাওন ইবনে খুযাইমা ইবনে মুদরিকার শাখা গোত্র।
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, হাওনকে হূনও বলা হয়।
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সেই গোত্রের লোকজন এসে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে বলল: ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের গোত্রে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিস্তার লাভ করেছে। কাজেই আপনার সম্মানিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে কিছু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে আমাদের সাথে দয়া করে পাঠিয়ে দিন, যাতে উনারা আমাদেরকে মহাসম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিধি-বিধান সম্পর্কে শিক্ষা দিবেন, আমাদেরকে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করাবেন এবং মহাসম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিস্তারিত তা’লীম তালক্বীন মুবারক আমাদেরকে দিবেন। তখন তাদের কথার প্রেক্ষিতে কিছু সংখ্যক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে তাদের সাথে পাঠানো হয়।
 এ প্রসঙ্গে প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে,
 فَبَعَثَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ نَفَرًا سِتّةً مِنْ أَصْحَابِهِ وَهُمْ حَضْرَتْ مَرْثَدُ بْنُ أَبِي مَرْثَدٍ الْغَنَوِيّ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَ حَضْرَتْ خَالِدُ بْنُ الْبُكَيْرِ اللّيْثِيّ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَ حَضْرَتْ عَاصِمُ بْنُ ثَابِتِ بْنِ أَبِي الْأَقْلَحِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَ حَضْرَتْ خُبِيْبُ بْنُ عَدِيّ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَ حَضْرَتْ زَيْدُ بْنُ الدّثِنّةِ بْنِ مُعَاوِيَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللّهِ بْنُ طَارِقٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ.
 অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের সাথে ছয়জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে পাঠিয়ে দিলেন। উনারা হচ্ছেন- ১. হযরত মারছাদ ইবনে আবূ মারছাদ গানাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ২. হযরত খালিদ ইবনে বুকাইর লায়সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ৩. হযরত আসিম ইবনে ছাবিত ইবনে আবুল আক্বলাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ৪. হযরত খুবাইব ইবনে ’আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ৫. হযরত যায়িদ ইবনে দাসিনা ইবনে মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও ৬. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ত্বারিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। (উমদাতুল ক্বরী, উয়ূনুল আছার, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 কোন কোন বর্ণনায় দশজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কথা উল্লেখ রয়েছে। (ইবনে সা’দ, সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
 স্মরণীয় যে, হযরত মারছাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মিত্র। হযরত খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন ‘আদী ইবনে কা’ব গোত্রের মিত্র। হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন, জাহজাবা ইবনে কুলফা ইবনে আমর ইবনে আওফ গোত্রের সম্মানিত ব্যক্তি। হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন, বানূ বায়াযা ইবনে আমর ইবনে যুরাইকা ইবনে আবদ হারিছা ইবনে মালিক ইবনো গাযব ইবনে জুশাম ইবনে খাযরাজ গোত্রের সম্মানিত ব্যক্তি এবং হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন, বানূ যাফর ইবনে খাযরাজ ইবনে আমর ইবনে মালিক ইবনে আওসের মিত্র। সুবহানাল্লাহ!
 সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত মারছাদ ইবনে মারছাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সকলের আমীর মনোনীত করেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত মারছাদ ইবনে মারছাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বাকিদেরকে নিয়ে রওয়ানা হলেন। হিজাযের প্রান্তভাগে হাদআর উপকন্ঠে হুযাইল গোত্রের একটি খালের নাম রাজী’। উনারা সেখানে পৌঁছলে আযল ও কারাহ গোত্রের লোকেরা উনাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলো। নাউযূবিল্লাহ! তারা বানূ হুযাইলকে সাহায্যের জন্য ডাকলো। দেখতে না দেখতে তরবারিধারী লোকজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে ঘিরে ফেললো। উনারা সাওয়ারী হতে অবতরণ করারও অবকাশ পেলেননা। এ অবস্থাতেই উনারা তরবারি মুবারক হাতে নিয়ে জিহাদের জন্য প্রস্তুতি মুবারক গ্রহণ করলেন। শত্রুরা ভয় পেয়ে বলল, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরা আপনাদের শহীদ করতে চাই না। আসলে আমরা আপনাদের বিনিময়ে পবিত্র মক্কাবাসীদের থেকে কিছু অর্থ আদায় করতে চাই। আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র নাম মুবারকে ওয়াদা দিচ্ছি আপনাদেরকে শহীদ করব না।
 একথা শুনে হযরত মারছাদ ইবনে মারছাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি, হযরত খালিদ ইবনে বুকাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ও হযরত আসিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরা কোন মুশরিকদের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি কখনও গ্রহণ করব না।
তখন হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আবৃত্তি করলেন,
 مَا عِلّتِي وَأَنَا جَلْدٌ نَابِلٌ ... وَالْقَوْسُ فِيهَا وَتَرٌ عُنَابِلُ
 অর্থ: ‘আমার কিসের দুর্বলতা, যেখানে আমি একজন শাক্তিমান বর্শাধারী? আমার রয়েছে ধনুক, অতি মজবুত তার ছিলা।
تَزِلّ عَنْ صَفْحَتِهَا الْمَعَابِلُ ... الْمَوْتُ حَقّ وَالْحَيَاةُ بَاطِلُ
 তার থেকে নিক্ষিপ্ত হয় দীর্ঘ ফলাবিশিষ্ট তীর। প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুই পরম সত্য, জীবন সেতো মিথ্যা।
وَكُلّ مَا حَمّ الْإِلَهُ نَازِلُ ... بِالْمَرْءِ وَالْمَرْءُ إلَيْهِ آئِلُ
إنْ لَمْ أُقَاتِلْكُمْ فَأُمّي هَابِلُ
 মহান আল্লাহ পাক তিনি যা স্থির করেছেন, তা মানুষের জন্য অবধারিত। শেষ পর্যন্ত মানুষতো উনারই নিকট ফিরে যাবে। শোন, আমি যদি তোমাদের সাথে জিহাদ না করি, তবে আমার মা হোক সন্তানহারা।’ (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, আর রওদ্বুল উনূফ, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, তারিখুল খমীস, উয়ূনুল আছার, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, হায়াতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম)
 হযরত আসিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরো বলেন,
حَضْرَتْ أَبُو سُلَيْمَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ وَرِيشُ الْمُقْعَدِ ... وَضَالّةٌ مِثْلُ الْجَحِيمِ الْمُوقَدِ
অর্থ: ‘আমি আবূ সুলাইমান, আমি মুকআদ (জনৈক তীর প্রস্তুতকারক)- এর তীরের পালক। আমি দালা বৃক্ষ দ্বারা নির্মিত কামান, যা জাহান্নামের আগুনের মত লেলিহান।
إذَا النّوَاجِي اُفْتُرِشَتْ لَمْ أُرْعَدْ ... وَمُجْنَأٌ مِنْ جِلْدِ ثَوْرٍ أَجْرَدِ
وَمُؤْمِنٌ بِمَا عَلَى حَضْرَتْ مُحَمّدٍ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ
 যখন দ্রুতগামী উটও ভয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে, তখনও আমার মধ্যে কম্পন সৃষ্টি হয় না। আমি গরুর পশমহীন চামড়া দ্বারা প্রস্তুত ঢাল। আর আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অবতীর্ণ কিতাবে দৃঢ় ঈমাদার তথা বিশ্বাসী।’ তিনি আরও বলেন,
حَضْرَتْ أَبُو سُلَيْمَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ وَمِثْلِي رَامِي ... وَكَانَ قَوْمِي مَعْشَرًا كِرَامَا
 অর্থ: ‘আমি আবূ সুলাইমান, আমার মত তীরন্দাজ আর কে আছে? আমার গোত্রে আমি অতি মর্যাদাবান ও সম্মানীত।’
হযরত আসিম রদ্বয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপনাম ছিল আবূ সুলাইমান। এরপর তিনি শত্রুদের সাথে জিহাদ করতে করতে সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক গ্রহণ করলেন। উনার সঙ্গীদ্বয়ও উনারা সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন।
 হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশের পর হুযাইল গোত্রের লোকেরা চাইল। উনাদের মাথা নিয়ে সুলাফা বিনতে সা’দ ইবনে শাহীদের কাছে বিক্রি করবে। সুলাফার দুই পুত্র কাট্টা কাফির সম্মানিত উহুদ জিহাদে হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত মুবারকে নিহত হয়েছিল। তাই সে মানত করেছিল, যদি সে হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাথা মুবারক হস্তগত করতে পারে, তবে সে উনার মাথা মুবারকের খুলিতে মদ পান করবে। নাউযূবিল্লাহ! কিন্তু এক ঝাঁক বোলতা বা মৌমাছি হুযাইল গোত্রের ইচ্ছায় বাঁধ সাধলো। তারা হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাথা মুবারক ঘিরে রাখল। দুর্বৃত্তরা বলল, এখন রেখে দাও। সন্ধ্যাবেলা এসব চলে যাবে। তখন আমরা মাথা মুবারক কেটে নিয়ে যাবো। কিন্তু এরই মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি সেখানে বন্যা নাযিল করে দিলেন। সেই ¯্রােত হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জিসিম মুবারক ভাসিয়ে নিয়ে গেল। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দুয়া মুবারক করেছিলেন, যেন কোন মুশরিক উনার জিসম মুবারক স্পর্শ করতে না পারে এবং তিনিও যেন কোনদিন কোন কাফির মুশরিককে স্পর্শ না করেন। তিনি আক্বীদা তথা বিশ্বাস করতেন যে, মুশরিকদের দেহ অপবিত্র।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ
 অর্থ: নিশ্চয়ই কাফির মুশরিকরা অপবিত্র বা নাপাক”। (পবিত্র সূরা তাওবাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ২৮)
 সাইয়্যিদুনা হযরত হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যখন শুনলেন, বোলতা বা মৌমাছি হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জিসম মুবারক হিফাযত করেছে, তখন তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মু’মিন বান্দাদেরকে এভাবেই হিফাযত করেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু তিনি মানত করেছিলেন, কোন মুশরিক যেন উনার জিসম তথা গায়ে হাত লাগাতে না পারে, আর তিনি নিজেও কোন মুশরিককে জীবনে স্পর্শ করবেন না। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার পরও উনাকে তেমনি হিফাযত করেছেন, যেমন তিনি উনাকে জীবদ্দশায় হিফাযত করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 আর হযরত যায়িদ ইবনে দাসিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি, হযরত খুবাইব ইবনে ‘আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে তারিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম তিনি কঠোর পন্থা অবলম্বন না করে তাদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শন করলেন এবং হিকমত মুবারক অবলম্বন করলেন। সে মতে উনারা নিজেদেরকে শত্রুর নিকট হিকমতের সাথে ধরা দিলেন। শত্রুরা উনাদেরকে বন্দী করে পবিত্র মক্কা শরীফের পথে অগ্রসর হলো। উদ্দেশ্য, সেখানে নিয়ে উনাদেরকে তারা বিক্রি করবে। নাউযূবিল্লাহ! জাহরান নামক স্থানে পৌঁছলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে তারিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি রশি থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিলেন এবং উনার তরবারি মুবারক উঁচিয়ে রুখে দাঁড়ালেন। শত্রুরা খানিক দূরে সরে উনার প্রতি পাথর ছুড়তে লাগলো এবং শেষ পর্যন্ত এভাবেই তিনি সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। এই জাহরান নামক স্থানে উনার সম্মানিত কবর মুবারক রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
 বাকি হযরত খুবাইব ইবনে ‘আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ও হযরত যায়িদ ইবনে দাসিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে তারা পবিত্র মক্কা শরীফে নিতে সক্ষম হলো।
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র মক্কা শরীফের কুরাইশ কাফির মুশরিকদের কাছে হুযাইল গোত্রের দু’জন বন্দী ছিলো। তাদের বিনিময়ে তারা হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ও হযরত ‘আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বিক্রি করে দেয়। নাউযূবিল্লাহ!
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বানূ নাওফলের মিত্র হুজাইর ইবনে আবূ ইহাব উকাবা ইবনে হারিছ ইবনে আদি ইবনে নাওফেলের পক্ষে হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ক্রয় করল। হুজাইরের পিতা আবূ ইহাব ছিলো উকবার পিতা হারিছ ইবনে আমিরের বৈপিত্রেয় ভাই। হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শহীদ করে উকবা তার পিতৃ হত্যার প্রতিশোধ নিবে। নাউযূবিল্লাহ!
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হারিছ ইবনে আমির ছিলো আবূ ইহাবের মামা, আর আবূ ইহাব ছিল উসাইদ ইবনে আমর ইবনে তামীম গোত্রের লোক। কারো মতে, সে বানূ তামীমের শাখা আদাস ইবনে যায়িদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে দারিম গোত্রের লোক।
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া ইবনে খালফের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য হযরত যায়িদ ইবনে দাসিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কিনে নেয়। সে উনাকে শহীদ করার জন্য নিজ মাওলা (আযাদকৃত গোলাম) নিসতাসের সাথে হারাম এলাকার বাইরে তানয়ীম নামক স্থানে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিসহ কুরাইশ গোত্রের কতিপয় কাফির মুশরিক উপস্থিত ছিল। হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে যখন শহীদ করার জন্য সামনে আনা হয়, তখন হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে বললেন, হে হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আপনি বলুনতো আপনার এ স্থলে যদি এখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক আনতেন এবং আপনার পরিবর্তে উনাকে আমরা শহীদ করতাম, আর আপনি নিজ পরিবারবর্গের কাছে নিরাপদ চলে যেতেন, তা কি আপনি পছন্দ করতেন না? তিনি দীপ্ত কন্ঠে বললেন,
 وَاَللَّهِ مَا أُحِبُّ أَنَّ مُحَمَّدًا الْآنَ فِي مَكَانِهِ الَّذِي هُوَ فِيهِ تُصِيبُهُ شَوْكَة تؤذيه، وأنّى جَالِسٌ فِي أَهْلِي. قَالَ: يَقُولُ حَضْرَتْ أَبُو سُفْيَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَا رَأَيْتُ مِنْ النَّاسِ أَحَدًا يُحِبُّ أَحَدًا كَحُبِّ أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ مُحَمَّدًا صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ،
 অর্থ: ‘মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এখন যেখানে অবস্থান মুবারক করছেন সেখানেও যদি উনার জিসম মুবারকে কেউ একটি কাটা ফুঁটা উনাকে কষ্ট দেয়, আর আমি আমার পরিবার পরিজনের কাছে বসে থাকা সেটাও আমার পছন্দ নয়। একথা শুনে হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেমন উনাকে মুহব্বত করেন, এমন মুহব্বত আমি আর কাউকে কখনও করতে দেখিনি।’ সুবহানাল্লাহ! এরপর নিসতাস উনাকে শহীদ করে ফেলল। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার উপর খাছ রহমত মুবারক বর্ষণ করুন। (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, ছহীহুল আছার ওয়া জামীলুল ইবর, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলক)
 বাকি থাকলেন হযরত খুবাইব ইবনে ‘আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। হুজাইর ইবনে আবূ ইহাবের দাসী মারিইয়ার সূত্রে যিনি পরবর্তীতে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ নুজায়হ আমর (ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার) কাছে বর্ণনা করেছেন। মাবিইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার কাছে, আমার একটি কক্ষে বন্দী ছিলেন। আমি একদিন উনার কাছে উপস্থিত হই। আমি দেখতে পাই যে উনার হাত মুবারকে এক থোকা আংগুর, যারা মানুষের মাথার মত বড়। তিনি তা থেকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছেন। আমার জানা মতে মহান আল্লাহ পাক উনার এ যমীনে তখন কোথাও এ আংগুর ছিল না।
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে হযরত আসিম ইবনে উমর ইবনে কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে নুজাইহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উভয়ে উনারা বর্ণনা করেন যে, মাবিইয়া বলেছেন, সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারকের পূর্বে হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাকে বললেন, আপনি আমার কাছে একটি ক্ষুর পাঠিয়ে দিন। সম্মানিত বিছালী শান মুবারকের আগে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে নেই। আমি পাড়ার একটি শিশুকে দিয়ে উনার কাছে একটি ক্ষুর পাঠিয়ে দিলাম। শিশুটি উনার কাছে প্রবেশ করলে আমার চেতনা ফিরে এলো এবং আমি বললাম, আমি এ কি করলাম? ঐ ব্যক্তিতো শিশুটিকে হত্যা করে আগেই নিজের সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশের প্রতিশোধ নিয়ে বসতে পারেন। হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শিশুটিকে কোলে তুলে নেন। শিশুটির মা এ অবস্থা দেখে খুবই বিচলিত হয়ে পড়ে, হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তা বুঝতে পারলেন। তখনও উনার হাত মুবারকে ক্ষুরটি ছিলো। তিনি বললেন, তোমার মা তোমাকে পাঠিয়েছে নিশ্চয়ই সে ভয় পাচ্ছে এবং ভাবছে আমি এই ক্ষুর দিয়ে তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি। আমি ইনশায়াল্লাহ তা করবো না। এই বলে তিনি শিশুটিকে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।’ (সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, হায়াতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম)
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, কারো মতে শিশুটি উনার পুত্র ছিলেন।
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এরপর শত্রুরা হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নিয়ে বের হলো। তানঈম নামক স্থানে পৌঁছে তারা যখন উনাকে শূলবিদ্ধ করতে চাইল, তখন তিনি তাদের বললেন, তোমরা আমাকে দু’রাকয়াত পবিত্র ছলাত তথা নামায আদায় করার সুযোগ দাও? তারা বলল, অসুবিধা নেই, আদায় করে নিন। তিনি মনের খুশু-খুযুর সাথে অতি সুন্দরভাবে দু’রাকয়াত ছলাত মুবারক আদায় করে নিলেন। এরপর তাদের সামনে অগ্রসর হয়ে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তোমরা হয়ত; ভাবছো আমি বিদায়ের ভয়ে ছলাত দীর্ঘ করছি, মূলত সেটা নয়। তোমরা এরূপ ধারণা না করলে আমি আরও দীর্ঘ ছলাতেরত হতাম। সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য বিদায় প্রাককালে দু’রাকআত পবিত্র ছলাত আদায় করা সুন্নত। এ সম্মানিত সুন্নত মুবারক সর্বপ্রথম হযরত খুবাইব ইবনে ‘আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিই চালু করেন। সুবহানাল্লাহ!
 তারপর শত্রুরা উনাকে শূলে চড়াল। তারা উনাকে বাঁধা শেষ করলে তিনি দু’আ মুবারক করলেন-
 اللهُمّ إنّا قَدْ بَلّغْنَا رِسَالَةَ رَسُولِك، فَبَلّغْهُ الْغَدَاةَ مَا يُصْنَعُ بِنَا، ثُمّ قَالَ اللهُمّ أَحْصِهِمْ عَدَدًا، وَاقْتُلْهُمْ بَدَدًا وَلَا تُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا. ثُمّ قَتَلُوهُ رَحِمَهُ اللهُ.
 অর্থ: ‘ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! নিশ্চয়ই আমরা আপনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হাদীছ শরীফ তথা কথা মুবারক পৌঁছে দিয়েছি। দয়া করে আপনি আমাদের সাথে এদের ঘৃনিত আচরণের সংবাদ আপনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে পৌঁছে দিন। ইয়া বারী ইলাহী! এদের সকলকে গুনে গুনে এক এক করে খতম করে দিন। কাউকে নিস্তার দিবেন না। অবশেষে তারা উনাকে শহীদ করল। মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।’
 হযরত মুয়াবিয়া ইবেন আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলতেন, সেদিন হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত বিদায় কার্য দেখতে যারা সমবেত হয়েছিল, আমি তাদের একজন ছিলাম।
 حَضَرْتُهُ يَوْمَئِذٍ فِيمَنْ حَضَرَهُ مَعَ حَضْرَتْ أَبِي سُفْيَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، فَلَقَدْ رَأَيْتُهُ يُلْقِينِي إلَى الْأَرْضِ فَرْقًا مِنْ دَعْوَةِ حَضْرَتْ خُبَيْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَكَانُوا يَقُولُونَ: إنَّ الرَّجُلَ إذَا دُعِيَ عَلَيْهِ، فَاضْطَجَعَ لِجَنْبِهِ زَالَتْ عَنْهُ.
 অর্থ: আমার পিতা হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে আমি গিয়েছিলাম এবং সেখানে উপস্থিত হই। (তখনও আমরা সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করি নাই)। হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বদদোয়া মুবারকের কারণে আমার উপর লা’নত পড়ার ভয়ে আমার পিতা আমাকে মাটিতে শুইয়ে দিয়েছিলেন। তখন এই ধারনা বা কথা প্রচলন ছিলো যে, নিশ্চয়ই কারো প্রতি অভিসম্পাত করা হলে তৎক্ষণাৎ সে যদি মাটিতে শুয়ে পড়ে, তবে তাকে সে অভিসম্পাত স্পর্শ করবে না।’ (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, আর রওদ্বুল উনূফ, হায়াতুছ ছাহাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ইয়াইইয়া ইবনে আব্বাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা হযরত আব্বাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি হযরত উকবা ইবনে হারিছ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলতো শুনেছি, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শহীদ করিনি। কারণ তখনও আমার বয়স বেশি হয়নি। হ্যাঁ, আব্দুদদার গোত্রীয় মাইসারা আমার হাতে বর্শা তুলে দেয় এবং সে আমার হাত ও বর্শা ধরে আঘাত করে হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শহীদ করে। নাউযূবিল্লাহ!
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার জনৈক সাথী বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বানূ জুমাহ এর হযরত সাঈদ ইবনে আমির ইবনে হিযয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শামের এক অংশের গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি মাঝে মধ্যে লোকের সামনে হঠাৎ মুর্ছা যেতেন। এ কথা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে জানানো হলো। এবং বলা হলো, হযরত সায়ীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আসরগ্রস্ত। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এক সাক্ষাৎকারে উনাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তিনি বললেন, হে হযরত সায়ীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার মাঝে মধ্যে এসব কি হয়? তিনি বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমার কোন অসুখ নেই। তবে আসল ব্যাপার এই যে, হযরত খুবাইব ইবনে ‘আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে যখন শহীদ করা হয়, তখন আমি সেখানে উপস্থিত দর্শকদের মাঝে ছিলাম। আমি উনার বদদোয়া শুনেছিলাম। তাই যে কোন মাজলিসে সে কথা আমার মনে পড়লেই আমি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলি। একথা শোনার পর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার কাছে হযরত খুবাইব ইবনে ‘আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বেমেছাল মর্যাদা মুবারক স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবাহনাল্লাহ!
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আশহুরে হারাম (নিষিদ্ধ মাসসমূহ) পর হওয়া পর্যন্ত হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাদের কাছে বন্দী থাকেন এরপর তারা উনাকে শহীদ করে। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হায়াতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 হযরত যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র হায়াত মুবারকে পবিত্র দু’রাকয়াত নামায আদায়ের উছীলায় মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে গায়িবী মদদের বিষয় একটি ঘটনা ঘটেছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আর ঘটনাটি ছিলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত দিদার মুবারকে যাওয়ার পূর্বের। একদা হযরত যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা তায়ালা আনহু তিনি তায়িফ নামক স্থান থেকে ফিরে আসবেন, এজন্য তিনি একটি খচ্চর ভাড়া করেন। খচ্চরের মালিকও উনার সাথে ছিলো। লোকটি পথ চলতে চলতে এক নির্জন স্থানে উনাকে নিয়ে এলো। সেখানে অনেক মৃত লোকের দেহ পড়েছিলো। সেই স্থানেই খচ্চরের মালিক হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেও শহীদ করতে উদ্যত হলো। তখন তিনি তার কাছে দু’রাকয়াত পবিত্র নামায আদায় করার অনুমতি চাইলেন। লোকটি ঠাট্টাভরা কন্ঠে বলল, ঠিক আছে, আপনি দু’রাকয়াত নামায আদায় করে নিতে পারেন। আপনার আগে এই সমস্ত লোকগুলোও নামায পড়ার অনুমতি চেয়েছিল। তারা নামায পড়লেও তাদের সে নামাযে কোন লাভ হয় নাই। নাউযূবিল্লাহ!
 হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দু’রাকয়াত পবিত্র নামায আদায় করলেন। সে লোকটি উনাকে শহীদ করতে আসছে দেখে তিনি পাঠ করলেন,
يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ

0 Comments: