যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ৪)

পবিত্র দ্বীন ইসলামে ছোঁয়াচে রোগের প্রতি বিশ্বাস রাখা হারাম ও শিরকের অন্তর্ভূক্ত, সূতরাং যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ৪)
গতপর্বে আমরা দেখেছি বাহ্যিক কিছু রেওয়ায়েত আছে যা দেখে কিছু মানুষ ছোঁয়াচে রোগের প্রতি বিশ্বাস করে বসে। অথচ ঐসকল বর্ণনা দ্বারাই বরং প্রমাণ হয় ছোঁয়াচে রোগের আক্বীদা রাখা যাবে না। কেউ তেমন বিশ্বাস করে বসলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। এ ধরনের আরো একটি বর্ণনা হাদীছ শরীফের কিতাবে বর্ণিত আছে,
عَنْ عَمْرِو بْنِ الشَّرِيدِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَ فِي وَفْدِ ثَقِيفٍ رَجُلٌ مَجْذُومٌ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّا قَدْ بَايَعْنَاكَ فَارْجِعْ
হযরত আমর ইবনে শারীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, বনী সাক্বীফের প্রতিনিধি দলে একজন ব্যক্তি কুষ্ঠরোগী ছিলেন। তখন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম সে ব্যক্তির নিকট সংবাদ পাঠিয়ে বললেন, “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বাইয়াত করে নিয়েছি সুতরাং আপনি ফিরে যান।” (মুসলিম শরীফ ২২৩১)
এই হাদীছ শরীফ দেখিয়ে বাতিল ফির্কার লোকেরা বলে থাকে কুষ্ঠরোগ ছোঁয়াচে বলেই সেই কুষ্ঠরোগীকে আসতে না করা হয়েছে। উল্লেখ্য উক্ত ব্যক্তিকে ছোঁয়াচে রোগের কারনে আসতে না করা হয়নি। বরং যেহেতু কুষ্ঠের মত কষ্টসাধ্য রোগে তিনি আক্রান্ত ছিলেন তাই উনাকে কষ্ট আসতে না করা হয়েছে। যিনি রহমাতুল্লীল আলামীন ছল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন দয়া করে ইহসান করে উক্ত ব্যক্তির উপর রহম করে বলেছেন আপনার বাইয়াত নেয়া হয়েছে, কষ্ট করে আপনাকে আসতে হবে না, আপনি ফিরে যান। ছোঁয়াচে রোগের কারনে উনাকে ফিরে যেতে বলা হয়েছে এমন আক্বীদা রাখা স্পষ্ট কুফরী। কারন আমরা আগেই জেনেছি ছোঁয়াচে রোগ বলতে ইসলাম উনার মধ্যে কিছু নেই।
এই বক্ত্যেবে স্বপক্ষে সহীহ হাদীছ শরীফ মওজুদ রয়েছে। ইমাম হযরত তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে উল্লেখ করেন,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ بِيَدِ مَجْذُومٍ فَأَدْخَلَهُ مَعَهُ فِي الْقَصْعَةِ ثُمَّ قَالَ كُلْ بِسْمِ اللَّهِ ثِقَةً بِاللَّهِ وَتَوَكُّلًا عَلَيْهِ
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে যে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন কুষ্ঠরোগীর হাত ধরলেন, অতঃপর তার হাতকে উনার সাথে (খাবার খাওয়ানোর জন্য) স্বীয় খাবারে পাত্রে প্রবিষ্ট করলেন। এরপর বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নামে খান, মহান আল্লাহ পাকের উপর ভরসা রাখুন।” (তিরমিযী শরীফ ১৮১৭)
এখানে প্রশ্ন আসে যদি কুষ্ঠরোগ ছোঁয়াচে হওয়ার কারনে বনী সাক্বীফ গোত্রের সেই ব্যক্তিকে ফিরে যেতে বলা হয় তাহলে এই হাদীছ শরীফে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত একজনের হাত ধরলেন, একই পাত্রে খাবার খেলেন এর ব্যাখ্যা বাতিল ফির্কার লোকেরা কি দিবে? ব্যাখ্যা হচ্ছে সেটাই, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত কুষ্ঠরোগীর হাত ধরে, একই পাত্রে খাবার খাইয়ে এটাই দেখিয়ে দিয়েছেন যে ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই। আর বনী সাক্বীফের সে ব্যক্তিকে ফিরে যেতে বলার কারন সে ব্যক্তির অসুস্থ হওয়ার কারনে এত রাস্তা অতিক্রম করে আসতে যেন কষ্টে পতিত হতে না হয়।
এ কারনে আমরা পবিত্র হাদীছ শরীফের মাধ্যমে জানতে পারি, কুষ্ঠরোগীর সাথে নির্দ্বিধায় সুস্থ মানুষের থাকা খাওয়া ইত্যাদির বর্ণনাও রয়েছে,
عَنْ عَائِشَة قَالَتْ لَنَا مَوْلًى مَجْذُوم فَكَانَ يَأْكُل فِي صِحَافِي وَيَشْرَب فِي أَقْدَاحِي وَيَنَام عَلَى فِرَاشِي
উম্মুল মু’মিনিন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের একজন আযাদকৃত গোলাম ছিলো যে কুষ্ঠরোগী ছিলো। সে আমার থালায় খাবার খেতো, আমার পেয়ালায় পানি পান করতো এবং আমাদের (বাড়ির) বিছানায় ঘুমাতো।” (তাহযিবুল আছার লি তাবারী ৪/৬, ফতহুল বারী ১০/১৫৯, শরহে সহীহুল বুখারী লি ইবনে বাত্তাল ৯/৪১০, শরহে নববী আলা মুসলিম ৭/৩৯৩, তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/২০, আওনুল মা’বুদ ৯/৮৭৬)
কুষ্ঠরোগের মত রোগ যদি ছোঁয়াচেই হতো তাহলে কি করে একজন কুষ্ঠরোগীকে একই পাত্রে খাবার, পানি, সেইসাথে বিছানা দেয়া হলো?
সূতরাং প্রমাণ হলো কোন রোগই ছোঁয়াচে নয়। ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস করা স্পষ্ট হাদীছ শরীফের বিরোধিতা ও কুফরী। (চলবে..)

0 Comments: