যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ৫)

পবিত্র দ্বীন ইসলামে ছোঁয়াচে রোগের প্রতি বিশ্বাস রাখা হারাম ও শিরকের অন্তর্ভূক্ত, সূতরাং যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ৫)
বাতিল ফির্কার লোকেরা ছোঁয়াচে রোগ প্রমাণ করার জন্য বুখারী শরীফ থেকে আরেকটি দলীল দেয়ার চেষ্টা করে,
وَفِرَّ مِنَ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنْ الأَسَدِকুষ্ঠরোগী থেকে এমনভাবে দূরে থাকো যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাকো। (বুখারী শরীফ ৫৭০৭)
অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হচ্ছে কুষ্ঠরোগ যেহেতু ছোঁয়াচে তাই এ রোগ থেকে বাঁচার জন্য বাঘের হাত থেকে বাঁচার মত সতর্ক হতে বলা হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে যারা হাদীছ শরীফখানার এ অংশ তুলে দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তারা এই হাদীছ শরীফের পূর্ণাংশ উল্লেখ করে না। এই হাদীছ শরীফের প্রথমেই বলা হয়েছে,
سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ عَدْو‘ى وَلاَ طِيَرَةَ وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ وَفِرَّ مِنَ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنْ الأَسَدِহযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই, কুলক্ষণ বলে কিছু নেই, পেঁচা অশুভের লক্ষণ নয়, সফর মাসের কোন অশুভ নেই।”
হাদীছ শরীফের শুরুতেই বলে নেয়া হয়েছে ‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’ অর্থাৎ আক্বীদার বিষয়টা পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। তাহলে পরের অংশ ‘কুষ্ঠরোগী থেকে এমনভাবে দূরে থাকো যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাকো’ এ কথার তাৎপর্য কি? আর ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি কুষ্ঠরোগীর সাথে একসাথে এক পাত্রে খাবার খাওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তাহলে এর ফয়সালা কি?
এ মর্মে হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
فَإِنَّهُ لَا يُصِيبُكَ مِنْهُ شَيْءٌ إِلَّا بِتَقْدِيرِ اللَّهِ تَعَالَى، وَهَذَا خِطَابٌ لِمَنْ قَوِيَ يَقِينُهُ، أَمَّا مَنْ لَمْ يَصِلْ إِلَى هَذِهِ الدَّرَجَةِ فَمَأْمُورٌ بِعَدَمِ أَكْلِهِ مَعَهُ كَمَا يُفِيدُهُ خَبَرُ: (فِرِّ مِنَ الْمَجْذُومِ)“উক্ত বর্ণনায় কুষ্ঠরোগী বা সে ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি বিনয় ও ঈমান পোষণ করে খাবার খাওয়ার জন্য বলা হয়েছে এ কারণে যে, সেই রোগীর থেকে কোনকিছু তোমার নিকট মহান আল্লাহ পাকের ফয়সালা ব্যাতিত পৌঁছবে না। আর এ সম্বোধন ঐ ব্যক্তির জন্য যার ঈমান ও ইয়াকীন মজবূত। কিন্তু যে ব্যক্তি সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে নি, তার জন্য হুকুম হলো, সে ঐ ধরনের রোগীর সাথে খাবে না। যেমন এ ব্যাপারে অপর হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, তুমি কুষ্ঠরোগী থেকে পলায়ন করো।” (ফাইদ্বুল ক্বাদীর শরহু জামিউছ ছগীর, ৫/ ৪৩ )
অর্থাৎ যাদের ঈমান ও ইয়াকিন দূর্বল যারা ছোঁয়াচে রোগের ধারনা করে বসে নিজের মূল্যবান ঈমান হারিয়ে বসতে পারে তাদের জন্য কুষ্ঠরোগী থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে। কারন কুষ্ঠরোগীর কাছে তারা যদি যায়, আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় তাদের যদি কুষ্ঠরোগ হয়ে যায় তখন তারা যদি আক্বীদা পোষন করে কুষ্ঠরোগীর সংস্পর্শে যাওয়ার কারনে ছোঁয়াচে রোগের হেতু তাদের এ রোগ হয়েছে সেটা শিরিক ও কুফরী হয়ে ঈমান নষ্ট হবে। এই ধরনের দুর্বল ঈমানের মানুষের জন্য সর্তকবাণী স্মরূপ কুষ্ঠরোগী থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে।
আর যারা সূদৃঢ় আক্বীদার অধিকারী যাদের বিশ্বাসে কোন অবস্থাতেই ফাটল ধরবে না সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমের প্রতি অবিচল আস্থা থাকবে ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস রেখে ঈমান হারাবে না তাদের কুষ্ঠরোগীর সাথে একসাথে খাবারও খাওয়ার ব্যাপারেও উৎসাহিত করা হয়েছে। যা আমরা বিগতপর্বে আলোচনা করেছি।
এ ধরনের বিশুদ্ধ আক্বীদার মানুষের জন্য বরং হাদীছ শরীফের মধ্যে বলা হয়েছে,
عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ كُلْ مَعَ صَاحِبِ الْبَلَاءِ تَوَاضُعًا لِرَبِّك وَإِيمَانًاহযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সাথে খাও তোমার প্রতিপালকের প্রতি বিনয় এবং উনার প্রতি দৃঢ় ঈমানের সাথে। (আওনুল মা’বুদ শরহে সুনানে আবু দাউদ ৯/৮৭৫, জামিউস ছগীর ২/১৬৬, ফতহুল কবীর ২/৩০০, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১২/১৭২)
সূতরাং প্রমাণ হয়ে গেলো, কুষ্ঠরোগী থেকে বাঘের মত বেঁচে থাকার কথা শুধুমাত্র দুর্বল ঈমানের লোকদের জন্যই বলা হয়েছে। (চলবে..)

0 Comments: