প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ ( ১০ নং )

প্রচলিত তাবলীগ  জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট 

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
كنتم خير امة اخرجت اللناس تأمرون بالمعروف وتنهون عن المنكر وتؤمنون بالله.
অর্থ : তোমরা (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হওয়ার কারণে) শ্রেষ্ঠ উম্মত, তোমাদেরকে মানুষের মধ্য হতে বের করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনবে।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১১০)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তাবলীগ তথা সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের সাথে সাথে আরো একটি শর্ত যুক্ত করে দিয়েছেন। সেটা হলো- تؤمنون অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং দ্বীন সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সঠিক ও পরিশুদ্ধ ঈমান আনা। অর্থাৎ তৎসম্পর্কে বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করা। তবেই সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের মাধ্যমে পরিপূর্ণ ফায়দা বা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব হবে।
স্মরণযোগ্য যে, বর্তমান প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকদের বেশকিছু লেখনী, বক্তব্য, বিবৃতি, আমল ও আক্বীদা ইত্যাদি সম্পর্কে সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের মনে নানাবিধ সংশয় ও প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকারপাঠক, গ্রাহক, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীদের পক্ষ হতে মাসিক আল বাইয়্যিনাতেরআকর্ষণীয় ও নির্ভরযোগ্য বিভাগ সুওয়াল-জাওয়াববিভাগে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লেখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচারিত বেশকিছু আপত্তিজনক আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ উল্লেখ করে অসংখ্য চিঠি আসে। কারণ মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থ : যদি তোমরা না জান, তবে আহলে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (পবিত্র সূরা নহল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩ ও পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
      অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যাঁরা জানেন, উনাদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।
অতএব, যাঁরা জানেন, তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন,
من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থ : যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুনের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযা, হম শরীফ, মিশকাত শরীফ, বযলুল মাজহুদ, উরফুশশাজী, তোহফাতুল আহওয়াজী, মায়ারেফুস সুনান, মেরকাত, শরহুত ত্বীবী, তালীক, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ ইত্যাদি)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ্বা আগুনের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।
কাজেই উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে, যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকারঅগণিত পাঠক, গ্রাহক ও সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের প্রেরিত সুওয়ালসমূহে উল্লেখকৃত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহের শরীয়তসম্মত তথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, জমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে জাওয়াব বা ফতওয়া দেয়া হলো।

প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়

এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, মূলতঃ আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খেলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থ : যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মুহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী, বজলুল মাজহুদ, উরফুশশাজী, তোহফাতুল আহওয়াজী, মায়ারেফুস সুনান, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, শরহুত ত্বীবী, তালীক, মোজাহেরে হক্ব, লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ ইত্যাদি)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতসম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো- প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কেউল্লেখকৃত আক্বীদাসমূহের সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান এবং প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের দাওয়াতের কাজে যারা মশগুল রয়েছে, তাদের মধ্যে যারা উক্ত আক্বীদাসমূহ জেনে হোক বা না জেনেই হোক বিশ্বাস করে এবং তা জনসাধারণের নিকট প্রচার করে, নিজেদের ও জনসাধারণের ঈমান ও আমলের বিরাট ক্ষতি করছে, তাদের সে ঈমান ও আমলের হিফাযত করা ও সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই তাদের ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলত মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মুমিন অপর মুমিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ পবত্রি হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,      
المؤمن مرأة المؤمن.
অর্থ : এক মুমিন অপর মুমিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত আনছার এবং মুহাজির হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহকামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইবনে সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন, তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়।এ কথা শুনে হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম বললেন, “তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মাআরেফ)
সুতরাং উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে অসংখ্য, অগণিত পাঠকগণের পূণঃ পূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের আক্বীদা ও আমল হিফাযতের লক্ষে বর্তমানে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহের শরয়ী ফায়সালা প্রদান করা হলো। যাতে করে সত্যান্বেষী, সমঝদার মুসলমান ও প্রচলিত তাবলীগকারীগণ সে আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের সঠিক শরয়ী ফায়সালা অবগত হন, যার ফলশ্রুতিতে সকলেই উক্ত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলের হিফাযত করে সঠিকভাবে দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও খেদমত করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, দ্বীনের তাবলীগ যা খাছ ও আম তা শত-সহস্র লোক করবে এবং অবশ্যই করতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত সম্মতভাবে করতে হবে। কারণ আক্বীদা শুদ্ধ না হলে দ্বীনী কোন খিদমতই মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে কবুলযোগ্য নয়। উপরন্ত কুফরী আক্বীদা থাকার কারণে তাকে হতে হবে চির জাহান্নামী।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে বিশুদ্ধ আক্বীদার সাথে দ্বীনী তাবলীগ (যা আম ও খাছ) করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)

সুওয়াল : আমরা শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে সঠিক তত্ত্ব জানতে আগ্রহী। কারণ আমরা অনেকদিন যাবত তাবলীগ জামায়াতের সাথে জড়িত ছিলাম এবং এখনো তাবলীগ জামায়াতের অনেক লোকের সাথে আমাদের মেলামেশা আছে। তাতে তাদের বেশ কিছু বক্তব্য বা আক্বীদা, যা আমরা অতীতেও জেনেছি এবং এখনো তা অবহিত হচ্ছি। তার মধ্যে অনেকগুলো তাদের লেখা কিতাবেও উল্লেখ আছে। সে সমস্ত আক্বীদাসমূহ আমাদের মনে হয় ইসলামের দৃষ্টিতে আপত্তিকর। সেগুলো আমরা নিম্নে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করলাম –
(৫৪) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অনেকেই ধারণা করে থাকে যে, দ্বীন ইসলামের বাইরেও বিধর্মীদের মাঝে, এমন অনেক শিক্ষণীয়, নছীহতপূর্ণ ও অনুসরণীয় বিষয় রয়েছে, যদ্বারা ইছলাহ্ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা যায়।। এ কথার প্রমাণ তাদের লেখা কিতাবেও রয়েছে। যেমন- তাবলীগ-ই-উত্তম জিহাদনামক কিতাবের ৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “হিন্দু যোগীরা ইবাদতে আলস্য দূর করার জন্যে সারা রাত একই অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে, এসব দৃষ্টান্ত থেকে অন্তরের চিকিৎসার পদ্ধতি জানা জায়।অর্থাৎ হিন্দু যোগীদের মধ্যেও শিক্ষণীয় ও অনুসরণীয় অনেক কিছু রয়েছে। আর মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের মলফুযাতের৯৫ পৃষ্ঠায় ১৩৬নং মলফূযে একথা লেখা আছে যে, আমাদের এই কাজ (প্রচলিত তাবলীগ) এক প্রকার যাদুমন্ত্রের মত।
(৫৫) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বেশ কিছু মুরুব্বী ও আমীর এবং তাদের অনুসারীরা মনে করে থাকে যে, তাদের প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য বা তাবলীগ জামায়াতের প্রতি উৎসাহিত করার জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র হাদীছ শরীফ বহির্ভূত বিষয়ে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত পরিমাণের বাইরে বহু বহু ফযীলতের বর্ণনা করা জায়েয।
(৫৬) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, “মসজিদে নববী ছাড়া বিশ্বের যে তিনটি দেশে, তিনটি মসজিদে প্রচলিত তাবলীগের বিশেষ মারকায, সেখানেই চব্বিশ ঘন্টা আমল জারী থাকে। যেমন- প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা লিখিত এক মুবাল্লিগের পয়লা নোট বইনামক কিতাবের (সংকলক- এঞ্জিনীয়ার মু.জু.আ. মজুমদার) ৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “সারা বিশ্বে মাত্র ৪টি মসজিদে ২৪ঘন্টা আমল চালু থাকে। যথা- (১) কাকরাইল, ঢাকা (২) নিজামুদ্দীন বস্তী, দিল্লী (৩) রায়বন্ড, লাহোর। (৪) মসজিদে নববী, মদীনা শরীফ।
(৫৭) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত-এর লোকেরা বলে থাকে যে, তারা পবিত্র কুরআন শরীফ উনাপবিত্র সূরা ইমরান শরীফ উনার  ১০৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ
ولتكن منكم امة يدعون الى الخير- يامرون بالمعروف وينهون عن المنكر واولتك هم المفلحون.
অর্থ : তোমাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় হওয়া জরুরী, যারা (মানুষকে) কল্যাণের দিকে ডাকবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে ও বদ্ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই মূলতঃ কামিয়াব।এর আমল করে থাকে যা তাদের ৬ উছুল ভিত্তিক কাজের দ্বারাই সাধিত হয়।
(৫৮) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অনেকেই মনে করে থাকে যে, তাদের ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগের দাওয়াত মোতাবেক যাদের জীবন পরিবর্তিত হবে, শুধুমাত্র তাদের দ্বারাই আল্লাহ পাক হিদায়েত বা দ্বীনের কাজ নিবেন। যেমন- হযরতজীর কয়েকটি স্বরণীয় বয়াননামক কিতাবের (সংকলক- মাওলানা নোমান আহমদ) ২য় খন্ড ২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, যাদের জীবন দাওয়াত মোতাবেক পরিবর্তন অর্জিত হবে, তাদের দ্বারা আল্লাহ পাক হিদায়েত ছড়াবেন, .....। যাদের জীবনে দাওয়াত মোতাবেক পরিবর্তন আসবেনা, তাদের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা দ্বীনের প্রকৃত কাজ নিবেন না।
(৫৯) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা প্রচার করে থাকে যে, তাদের ৬ উছুল ভিত্তিক দোয়া ও তাসবীহ পড়াই সুন্নত। যা করলেই যিকির-এর হক্ব আদায় হয়ে যায়। এবং তার দ্বারাই অনেক অনেক ফযীলত, রহমত ও বরকত পাওয়া যায়। আর এর দ্বারাই দিল ইসলাহ্ হয়। অর্থাৎ তাছাউফ ভিত্তিক ক্বলবী যিকিরের আর দরকার হয়না। অপরদিকে তাদের কথানুযায়ী তাসাউফী বা ক্বলবী যিকির হল নফল এবং যার ফযীলত নগণ্য। আর এসব কথা নাকি তাদের হযরতজীর মলফুজাতএবং মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দীর তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্বনামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।
(৬০) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা প্রচার করে থাকে যে, মুর্শিদদের দ্বারা দ্বীনের ব্যাপক খেদমত কখনোই সম্ভব নয়। তাই তারা পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া বা ইলমে তাছাউফ চর্চা করাকে মোটেও গুরুত্ব দেয় না। একথার সত্যতা তাদেরই লোক দ্বারা লিখিত আয়নায়ে তাবলীগনামক কিতাবের (লেখক- মুহম্মদ দাউদ আলী) ৮৮ পৃষ্ঠায় নিম্নোক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হয়। ইক্ত কিতাবে লিখা হয়েছে- তাবলীগের মধ্যে পীর-মুরীদীর প্রচলন সম্ভব নহে, কেননা পীরী-মুরীদীর দ্বারা সাধারণতঃ গন্ডিবদ্ধ একটা দলের সৃষ্টি হইয়া থাকে। ..... এইরূপ একটা দলের দ্বারা ব্যাপক কোন কাজ করা সম্ভব নহে। .... তাই বাধ্য হইয়া তাবলীগ এই পথ এড়াইয়া চলিয়া থাকে।
উপরোক্ত সুওয়ালসমূহের আলোকে এখন আমরা জানতে চাই, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য বা আক্বীদাসমূহ শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু ঠিক? এবং তা শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু প্রয়োজনীয় ও কোন স্তরের আমলের অন্তর্ভূক্ত? পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, জমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে জাওয়াব দিয়ে ঈমান ও আমল হিফাযত করণে সাহায্য করবেন।
জাওয়াব : (আপনাদের তরফ থেকে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগে প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে বিভিন্ন সুওয়ালসহ প্রায় শতাধিক (শত শত) চিঠি এসে পৌঁছেছে। তার মধ্যে যেসব সুওয়ালগুলি মানুষের ঈমান ও আমলের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত এবং যেগুলির জবাব না দিলেই নয়, সেরূপ অর্ধ শতাধিক সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হয়েছে এবং এরূপ প্রয়োজনীয় প্রায় সকল সুওয়ালেরই জাওয়াব দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। তার মধ্যে গত (৩৫, ৩৬, ৩৭ ও ৩৮তম) সংখ্যা চারটিতে যথাক্রমে (৭+৩২+৬+৮) মোট = ৫৩টি সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হয়েছে। বর্তমান (৩৯তম) সংখ্যায় ৭টি সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হলো। বাকীগুলোর জাওয়াব পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।)
আপনাদের বর্ণিত সুওয়াল মোতাবেক যদি প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের আক্বীদা হয়ে থাকে, তাহলে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে অবশ্যই আপত্তিজনক, যা গোমরাহীমূলক, বিভ্রান্তিকর ও জেহালতপূর্ণ এবং তারমধ্যে কোন কোনটিতে কুফরীমূলক বক্তব্যও রয়েছে।
তবে আপনারা যেহেতু দলীল ভিত্তিক জাওয়াব চেয়েছেন, তাই আমরা উপরোক্ত প্রত্যেকটি প্রশ্নেরই শরীয়তসম্মত তথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, জমা ও ক্বিয়াস উনাদের ভিত্তিতে জাওয়াব দিব। (ইনশাআল্লাহ)
কারণ মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে বলেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থ : তোমরা যারা জাননা, যারা জানেন, তাদের কাছ থেকে জেনে নাও।” (পবিত্র সূরা নহল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)
আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থ : যাকে ইলমের বিষয় সর্ম্পকে কোন প্রশ্ন করা হয়, আর সে জানা থাকা সত্ত্বেও তা চুপিয়ে রাখে, তাহলে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুনের বেড়ী পড়িয়ে দেয়া হবে।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ, আহমদ, মিশকাত, বজলুল মাজহুদ, তোহফাতুল আহওয়াযী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেরকাত, উরফুশশাজী, তালীক, শরহুত ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ, লুময়াত)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, “তার জিব কেটে দেয়া  হবে ইত্যাদি।
তাই নিম্নে পর্যায়ক্রমে আপনাদের প্রেরিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর বক্তব্য বা আক্বীদাসমূহের পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, জমা ও ক্বিয়াস উনাদের অকাট্য দলীলসমূহের ভিত্তিতে শরয়ী ফায়সালা প্রদান করা হলো-

তাবলীগের অর্থ ও প্রকারভেদ
[সুওয়াল সমূহের জাওয়াব দেয়ার পূর্বে প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়ে আলোচনা করা অতি জরুরী। কারণ তাবলীগ সম্পর্কে বুঝতে হলে প্রথমে তা কত প্রকার ও কি কি এবং তার অর্থ কি, তা জানতে হবে।
তাবলীগত্ম (تبليغ) অর্থ হলো- প্রচার করা। তাবলীগ দুপ্রকার অর্থাৎ সাধারণতঃ ইসলাম দুভাবে প্রচার করা হয়ে থাকে- (১) তাবলীগে আম (عام) বা  সাধারণভাবে,  (২) তাবলীগে খাছ (خاص) বা বিশেষভাবে। আবার দ্বীন প্রচারকারী (মুবাল্লিগ) ও দুপ্রকার- (১) মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন প্রচারক) ও (২) মুবাল্লিাগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক)।

মুবাল্লিগে আম ও তার
হিদায়েতের ক্ষেত্র

মুবাল্লিগে আম অর্থাৎ সাধারণ মুবাল্লিগ (দ্বীন প্রচারক)- তার বিশেষ কোন যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। শুধু দ্বীনী সমঝ বা বুঝ থাকলেই চলবে। সে খাছ বা বিশেষভাবে যেমন ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, ভাই-বোন, ভাতিজা-ভাতিজী ও কর্মচারী তথা তার অধীনস্থ সকলকে দ্বীনী আমলের জন্য তথা দ্বীনদারী হাছিলের জন্য তাকীদ বা উৎসাহিত করবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবত্রি কুরআন শরীফ উনা মধ্যে সূরা তাহরীমের ৬নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেন,
يا ايها الذين امنوا قوا انفسكم واهليكم نارا.
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে আগুন (জাহান্নাম) থেকে বাঁচাও।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الا كلكم راع وكلكم مسؤل عن رعيته.
অর্থ : সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই (নিজের অধীনস্থদের ব্যাপারে) রক্ষক এবং প্রত্যেকেই তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ফতহুল বারী , ওমদাতুল ক্বারী, তাইসীরুল ক্বারী, ইরশাদুস সারী, শরহে নববী, মিরকাত, লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ, মিরআতুল মানাজীহ ইত্যাদি)
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
بلغوا عنى ولو اية.
অর্থ : তোমরা আমার থেকে একটি পবিত্র আয়াত (পবিত্র হাদীছ শরীফ) শরীফ হলেও তা (মানুষের নিকট) পৌঁছে দাও।” (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, তাইসীরুল ক্বারী, রশাদুস সারী)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে- তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে আমল করবো, ততক্ষণ পর্যন্ত কি আমরা সৎ কাজের আদেশ দিব না? অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সমস্ত খারাবী হতে ক্ষান্ত হবো, ততক্ষণ পর্যন্ত কি অসৎ কাজে নিষেধ করবো না? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- না, বরং তোমরা সৎকাজের আদেশ দান করবে, যদিও তোমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে আমল করতে না পার। তদ্রুপ মন্দ কাজে নিষেধ করবে, যদিও তোমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে তা থেকে বেঁচে থাকতে না পার। (তিবরানী শরীফ)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
الدين نصيحة.
অর্থ : দ্বীন হচ্ছে নছীহত স্বরূপ।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ জিজ্ঞাসা করলেন, কাদের জন্য? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য এবং মুসলমানের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের জন্য এবং সাধারণ মুসলমানদের জন্য।” (মুসলিম শরীফ, শরহে নববী, ফতহুল মুলহিম)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ মুবাল্লিগে আম ও মুবাল্লিগে খাছ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। অর্থাৎ এর হুকুম কারো জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি।
কাজেই যারা মুবাল্লিগে আম, তারা তাদের দায়িত্ব ও ক্ষেত্র অনুযায়ী উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আমল করবেন। আর যারা মুবাল্লিগে খাছ, তারাও তাদের দায়িত্ব ও যোগ্যতা এবং ক্ষেত্র অনুযায়ী উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপর আমল করবেন।
অতএব প্রত্যেক মুবাল্লিগে আম-এর জন্য তার ক্ষেত্র হচ্ছে- তার অধীনস্থগণ। যাদেরকে তার তরফ থেকে দ্বীনের জন্য তালীম দেয়া ও তাকীদ করা দায়িত্ব ও কর্তব্য। অর্থাৎ এটা হচ্ছে তাবলীগে খাছ যা করা- মুবাল্লিগে আম-এর জন্য ফরজে আইনের অন্তর্ভূক্ত। (তাফসীরে মাযহারী, রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী, ফতহুল ক্বাদীর, খাযেন, বাগবী, কুরতুবী, ইবনে কাছীর, কবীর)

মুবাল্লিগে খাছ ও তার হিদায়েতের ক্ষেত্র
           
মুবাল্লিগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক), মুবাল্লিগে আম-এর মত নয়। অর্থাৎ তিনি কেবল তার অধীনস্থদেরই নয় বরং তিনি আমভাবে সকল উম্মতকেই হিদায়েত করার উপযুক্ত। পক্ষান্তরে মুবাল্লিগে আম কেবল তার অধীনস্থদেরই বলার যোগ্যতা রাখেন।
আর যাঁরা খাছ মুবাল্লিগ অর্থাৎ বিশিষ্ট দ্বীন প্রচারক, তাঁদের প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
ولتكن منكم امة يدعون الى الخير ويأمرون بالمعروف وينهون ن المنكر وارلئك هم المفلحون.
অর্থ : তোমাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় হওয়া জরুরী, যারা (মানুষকে) কল্যাণের (পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ তথা দ্বীন ইসলাম উনার) দিকে ডাকবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে এবং বদ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই মূলত কামিয়াব।” (পবিত্র সূরা ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৪)
 অর্থাৎ তাঁকে অবশ্যই দ্বীনী বিষয়ে বিশেষ যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে এবং ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাসাউফে বিশেষ দক্ষতা তথা ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নত পরিমাণ ইলম, আমল এবং ইখলাছ হাছিল করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন 
فلولا نفر من كل فرقة منهم طائفة ليتفقهوا فى الدين ولينذروا قومهم اذا رجعوا اليهم لعلهم يحذرون.
অর্থ : কেন তাদের প্রত্যেক ক্বওম বা ফেরক্বা থেকে একটি দল বের হয়না এজন্য যে, তারা দ্বীনী ইলমে দক্ষতা অর্জন করবে এবং তাদের ক্বওমকে ভয় প্রদর্শন করবে, যখন তারা তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে। আশা করা যায়, তারা বাঁচতে পারবে।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১২২)
(তাফসীরে মাজহারী, রুহুল মায়ানী, রুহুল বয়ান, ফাতহুল ক্বাদীর, কাশশাফ, হাশিয়ায়ে সাবী, যাদুল মাসীর, খাজেন, বাগবী, কুরতুবী, কবীর, ইবনে কাছীর ইত্যাদি)
আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
تعلموا العلم وعلموه الناس.
অর্থ : তোমরা দ্বীনী ইলম শিক্ষা কর এবং  মানুষকে তা শিক্ষা দাও।” (দারেমী, দারে কুত্নী, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ, লুময়াত ইত্যাদি)
মূলতঃ যাঁরা মুবাল্লিগে খাছ, তাঁদেরকে অবশ্যই ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানী হতে হবে। আর হক্কানী, রব্বানী আলেমগণের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
انما يخشى الله من عباده العلماء.
অর্থ : নিশ্চয়ই বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন।” (পবিত্র সূরা ফাতির শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “যার মধ্যে যতবেশী আল্লাহ ভীতি রয়েছে, তিনি তত বড় আলেম।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ  উনার মধ্যে রয়েছে,
من ارباب العلم؟ قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء؟ قال الظمع.
অর্থ : “(জিজ্ঞাসা করা হলো) আলেম কে? উত্তরে বললেন, যাঁরা ইলম অনুযায়ী আমল করেন। পুণরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন জিনিস আলেমের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয়? তিনি বললেন, লোভ (দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা)।”  (দারেমী, মিশকাত, মিরকাত, মোযাহেরে হক্ব, শরহুত ত্বীবী, তালীক, আশয়াতুল লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ, লুময়াত ইত্যাদি)
অর্থাৎ যিনি ইলম অনুযায়ী আমল করেন, তিনিই হক্কানী-রব্বানী আলেম।
কাজেই যিনি ইলম, আমল ও ইখলাছ হাছিল করেছেন, তিনিই হক্কানী আলেম, আর তিনিই নবী আলাইহিস সালামগণের ওয়ারিছ। যাঁদের শানে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
العلماء ورثة الانبياء.
অর্থ : আলেমগণ হলেন- নবীগণের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী।” (হম, তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, বজলুল মাজহুদ, তোহ্ফাতুল আহওয়াযী, মায়ারেফুস সুনান, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ, উরফুশশাজী, তালীক)
অর্থাৎ হযরত নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের দাওয়াত ও তাবলীগ, তালীম ও তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র যেমন আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি প্রযোজ্য, তদ্রুপ যাঁরা মুবাল্লিগে খাছ, উনারা হযরত নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের ওয়ারিছ হওয়ার কারণে উনদেরও দাওয়াত ও তাবলীগ, তালীম ও তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি প্রযোজ্য। আর এ আম তালীম বা তাবলীগ ফরজে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত। যা অতীতে ও বর্তমানে ওলামায়ে হক্কানী- রব্বানীগণ তাছাউফ শিক্ষা দিয়ে, মাদ্রাসায় পড়িয়ে, মসজিদে ইমামতি করে, কিতাবাদি লিখে, ওয়াজ-নছীহত করে ইত্যাদি নানানভাবে দাওয়াত ও তালীম-তালক্বীন দিয়ে হিদায়েতের কাজ করে মুবাল্লিগে খাছ-এর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে, তাবলীগে আম-এর (ফরজে কেফায়ার) ও তাবলীগে খাছ-এর (ফরজে আইনের) খেদমতের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।

মুবাল্লিগে আম-এর জন্য তাবলীগে আম করার হুকুম এবং মুবাল্লিগে খাছ-এর যোগ্যতা ও তাবলীগে আম-এর শর্ত

স্মরণীয় যে, যারা মুবাল্লিগে আম এবং যাদের জন্য শুধু তাবলীগে খাছ করা ফরজে আইন, তাদের জন্য কোন ক্রমেই এবং কষ্মিনকালেও তাবলীগে আম বা ব্যাপকভাবে দ্বীন প্রচার করা (যা মুবাল্লিগে খাছ তথা লামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণের জন্য নির্দিষ্ট তা) জায়েয নেই।
এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে যে, একদিন এক লোক উনার সাক্ষাতে আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি কর?” সে জাওয়াব দিল, দ্বীন প্রচার করি। তখন তিনি তাকে বললেন, “তুমি কি ঐ সকল পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের আমল করেছ?” যা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে-
(১) পবিত্র সূরা সফ শরীফ উনার ২নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক বলেন,
يا ايها الذين امنوا لم تقولون مالا تفعلون.
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা করনা, তা কেন বল?”
তুমি কি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আমল করেছ?” সে জাওয়াব দিল, না।
(২) তিনি আবার বললেন যে, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ৪৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেছেন,
اتأمرون الناس بالبر وتنسون انفسكم وانتم تنلون الكتاب.
অর্থ : তোমরা কি মানুষকে সৎ কাজের আদেশ কর, আর নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও? অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াত করে থাক।
তুমি কি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আমল করেছ?” সে জাওয়াব দিল, না।
(৩) পুণরায় তিনি বললেন, “তুমি কি ঐ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আমল করেছ? যা হযরত শোয়াইব আলাইহিস সালাম উনার ক্বওমকে বলেছিলেন,
وما اريد ان اخالفكم الى ما انهاكم عنه.
অর্থ : আমি এটা চাইনা যে, তোমাদেরকে যে কাজ থেকে নিষেধ করি, আমি তার খেলাফ করি। অর্থাৎ আমি যা বলি, তা করি আর যা বলিনা, তা করিনা।” (পবিত্র সূরা হুদ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৮)
তুমি কি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আমল করেছ? সে জাওয়াব দিল, না।
তখন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে বললেন, “তুমি প্রথমে এ পবিত্র আয়াত শরীফসমূহের আমল কর, অতঃপর তুমি দ্বীন প্রচারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত কর।অর্থাৎ উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের আমল ব্যতিরেকে তাবলীগে আম করা জায়েয নেই।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, তাবলীগে খাছ মুবাল্লিগে আম ও খাছ উভয়ের জন্যেই ফরজে আইন। আর তাবলীগে আম শুধুমাত্র মুবাল্লিগে খাছ তথা হক্কানী আলেমগণের জন্যেই প্রযোজ্য, যা উনাদের জন্যে ফরজে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত। অতএব, মুবাল্লিগে আম বা সাধারণ লোকদের জন্যে তাবলীগে আম করা কখনো শুদ্ধ হবেনা বরং তাদের জন্যে তা করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম হবে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, “বর্তমানে প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগযাকে তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাবলীগে আম বলে থাকে, (যা আমাদের নিকট মক্তবী শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত যদি আক্বীদা শুদ্ধ হয়ে থাকে) যদি তাদের কথা মোতাবেক তাকে তাবলীগে আম ধরা হয়, তাহলে তো অবশ্যই তা মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য করা উচিৎ ছিল। অথচ তা এমন সব লোকেরা করে থাকে যারা মুবাল্লিগে খাছ তো নয়ই, বরং তাদের মধ্যে অনেকেই মুবাল্লিগে আম-এরও উপযুক্ত নয়। যদিও কিছু সংখ্যক মুবাল্লিগে আম রয়েছে।
অতএব তাবলীগে আম মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্যই করা ফরজে কেফায়া। যা মুবাল্লিগে আম-এর জন্য করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। আর সাধারণ লোকেরতো প্রশ্নই উঠেনা।
এখন হয়তো কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, অনেক সময় দেখা যায় এমন কতক লোক, যারা মুবাল্লিগে খাছ ও আম কোনটাই নয়, তারা অনেকেই নামাজের জামায়াতে যাওয়ার সময় বা নামায পড়ার সময় অন্যকে নামাজে ডেকে নিয়ে যায়, রোজার মাসে রোজা রাখার কথা বলে, ইত্যাদি অনেক নেক কাজের কথাই বলে থাকে, যা তাদের দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত ছিলনা তবে তার ফায়সালা কি? এটাও কি নাজায়েয ও হারাম?
এর ফায়সালা হলো, ঐ সকল লোক মুসলিম শরীফ উনা মধ্যে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ- 
الدين نصيحة.
অর্থাৎ দ্বীন হচ্ছে অপরের ভাল কামনা করা।এর মেছদাক বা নমুনা। অর্থাৎ এদেরকে কেউ হিদায়েতের দায়িত্ব দেয়নি বা এরা হিদায়েতের ব্যাপারে কোন দায়িত্ব গ্রহণ করেনি। এরা হচ্ছে মানুষের খয়েরখাঁ বা হিতাকাঙ্খী।
এখানে আরো উল্লেখ্য যে, তিবরানী শরীফের উপরোক্ত হাদীসে দেখা যাচ্ছে যে, সৎকাজ না করলেও অপরকে সৎ কাজ করতে বলা হয়েছে। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক বলেন, “তোমরা ঐ কথা বল কেন, যা তোমরা নিজেরা করোনা।
তাহলে এই পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বক্তব্যের মধ্যে ফায়সালা কি?
মূলত এর ফায়সালা ওলামায়ে মুহাক্কিক, মুদাক্কিকগণ দিয়েছেন। উনাদের মতে তিবরানী শরীফ উনার হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সৎ কাজ না করলেও সৎ কাজের দাওয়াত দেয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন প্রচারক)-এর জন্য। যেমন কোন বাবা নিজে নামায বা অন্যান্য নেক কাজ না করা সত্বেও তার সন্তান ও অধীনস্থদের নামায বা অন্যান্য নেক কাজের জন্য বলতে পারেন।
আর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নিজে সৎ কাজ না করে অপরকে তা বলার জন্য যে নিষেধবাণী করা হয়েছে, তা হলো- মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য। অর্থাৎ মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য নিজে সৎ কাজ না করে অপরকে তা করতে বলা জায়েয নেই।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে,
عن انس قال- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مررت ليلة اسرى بى بقوم تقرض شفاههم بمقاريض من النار- فقلت يا جبريل من هؤلاء- قال هؤلاء خظباء امتك الذين يقولون مالا يفعلون.
অর্থ : হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মিরাজ শরীফ উনার রাত্রে এমন একটি ক্বওমের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, যাদের ঠোঁটগুলো আগুনের কেঁচি দ্বারা কাটা হচ্ছিল। আমি হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? জবাবে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম বলেন, এরা আপনার উম্মতদের মধ্যে ঐ সকল ওয়ায়েজ বা বক্তা, যারা এমন কথা বলতো, যেটা তারা নিজেরা আমল করতোনা।” (তিরমিযী, মিশকাত, তোহফাতুল আহওয়াজী, উরফুশ শাজী, মায়ারেফুস সুনান, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, যারা মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন প্রচারক), তারা তিবরানী শরীফের বর্ণনা মোতাবেক সৎকাজ না করেও অপরকে সৎকাজ করার কথা বলতে পারবেন। আর যারা মুবাল্লিগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক), তারা কুরআন শরীফের উক্ত আয়াত শরীফ মোতাবেক নিজে সৎকাজ না করে অপরকে সৎকাজ করার কথা বলতে পারবেন না। কারণ যদি সকলের জন্যে আমভাবে একথা বলা হয় যে, সৎকাজ না করেও অপরকে সৎকাজের কথা বলা জায়েয, তবে মিরাজ শরীফ উনাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত লোকদের জিহ্বা কাটা হলো কেন? এতে বুঝা গেল যে, তিবরানী শরীফ উনার উক্ত হুকুম সকলের জন্যে প্রযোজ্য নয়। বরং যারা মুবাল্লিগে আম, তাদের জন্যেই প্রযোজ্য। আর কুরআন শরীফের উক্ত আয়াত শরীফ ও মিরাজ শরীফ সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা যারা মুবাল্লিগে খাছ, তাদের জন্যে প্রযোজ্য।
সুতরাং হাক্বীক্বতে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে কোনই দ্বন্দ্ব নেই। অনেকে এর সঠিক ব্যাখ্যা না জানার ও না বুঝার কারণে এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলে থাকে। মূলত উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ যার যার ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রযোজ্য ও অনুসরণীয়।]
সুওয়ালে উল্লেখকৃত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের  আপত্তিকর বক্তব্যের  জাওয়াব –

৬৪নং সুওয়ালের জাওয়াবের পরবর্তী অংশ

সুওয়াল : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা ইলমে তাছাউফ শিক্ষা বা ইখলাছ অর্জন করাকে মোটেও গুরুত্ব দেয়না। যে কারণে তাদের বয়ানে ইলমে তাছাউফ বা ইখলাছ সম্পর্কে কোন আলোচনাই করতে দেখা যায়না। পক্ষান্তরে ইলমে তাছাউফ শিক্ষার মাধ্যমে ইখলাছ হাছিল করতঃ তাযকিয়ায়ে ক্বালববা অন্তর পরিশুদ্ধ করার ব্যাপারে তাদের বক্তব্য হলো- ইলমে তাছাউফ শিক্ষা ব্যতীত কেবল চিন্তা দ্বারা ও প্রচলিত তাবলীগ করার মাধ্যমেই ইখালছ হাছিল করা, অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও হুজুরী ক্বলব-এর সাথে নামাজ আদায় করা সম্ভব। এর জন্যে ক্বল্বী যিকিরের কোনই প্রয়োজন নেই, বরং বিভিন্ন প্রকার দোয়া-দরূদ ও তাস্বীহ্-তাহ্লীলের মাধ্যমেই তা অর্জিত হয়।এ ধরণের বক্তব্য তাদের দ্বারা লিখিত বিভিন্ন কিতাবের নানা স্থানে বিবৃত রয়েছে।
এখন আমাদের সুওয়াল হলো- দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে ইলমে তাছাউফ শিক্ষার মাধ্যমে ইখলাছ অর্জনের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? আর তা অর্জন করার শরয়ী পদ্ধতি কি? প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্য মোতাবেক সত্যিই কি চিন্তা ও খেয়ালের দ্বারা এবং তাবলীগ করার মাধ্যমে ইখলাছ হাছিল করতঃ তাযকিয়ায়ে ক্বলব অথবা অন্তর পরিশুদ্ধ হওয়া ও ক্বলবী যিকির ব্যতীত হুজুরী ক্বলব হাছিল করা সম্ভব? এর জন্য কি ক্বলবী যিকিরের মাধ্যমে ইলমে তাছাউফ শিক্ষার জরুরত নেই? কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে জাওয়াব দানে বিশেষভাবে উপকৃত করবেন।
 জাওয়াব : (পূর্ববর্তী অংশের পর) স্মর্তব্য, পূর্বেই বলা হয়েছে যে, তাছাউফ সংক্রান্ত বিষয়সমূহ সাধারণত দুভাগে বিভক্ত। (১) ইলমী যথাঃ- মুহ্লিকাত, মুন্জিয়াত, দশ লতীফা তথা সবক সম্পর্কিত ইলম এবং (২) কামিল পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হয়ে সে ইলমের আমল সম্পাদন ও মাকাম হাছিল। ইতিপূর্বে মুহ্লিকাত, মুন্জিয়াতসহ দশ লতিফার ইলমী বিষয়াদি আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু তা আমলে রূপায়িত করার জন্য প্রথমতঃ কামিল পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হয়ে মোরক্বাবা-মোশাহাদা করে জরুরত আন্দাজ ইলমে তাছাউফের মাকাম হাসিল করতে হবে। তবেই সত্যিকার অর্থে মুহ্লিকাত তথা বদ্ খাছলত সমূহ দূর হবে এবং মুন্জিয়াত তথা সদ্গুণ সমূহ অর্জিত হবে।
লতিফা সমূহে যিকির জারীর অর্থ উক্ত লতিফা সমূহে সর্বক্ষণ আল্লাহ্ আল্লাহ্ যিকির হওয়া। অর্থাৎ যার যে লতিফার যিকির জারী হবে সে ব্যক্তির চলা-ফেরা, উঠা-বসা, ঘুম-খাওয়া, ওযু-ইস্তেঞ্জা, সর্বাবস্থায় সর্বক্ষণ সে লতীফা আল্লাহ্ আল্লাহ্ যিকির করবে। আর তাতে তার উক্ত লতিফা সংশ্লিষ্ট বদ গুণ বিদূরীত হবে এবং সদগুণ অর্জিত হবে। যেমন- ক্বলব লতিফাকে বলা হয় তওবার মাকাম। যার ক্বলবের যিকির জারী হবে অর্থাৎ যার ক্বলব তার ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সর্বক্ষণ আল্লাহ্ আল্লাহ্ যিকির করবে। তখন এর সাথে তওবার মাকামের গুণ হিসেবে তার দ্বারা যদি কোন গুণাহ্ হয়ও তবে গুণাহ্ করার পর গাফিল থাকার মানসিকতা দূর হবে এবং গুণাহ্ করার সাথে সাথে খাছ তওবা করার যোগ্যতা পয়দা হবে। এছাড়াও ক্বলবের মাকামের আরো অনেক তাৎপর্য রয়েছে।
অনুরূপ ক্বলবের পরে যথাক্রমে রূহ্, ছের, খফী, আখফা, নফ্স, আব, আতেশ, খাক, বাদ অর্থাৎ দশ লতিফার প্রত্যেকটিতে যিকির জারী হলে সে লতিফার সংশ্লিষ্ট বদ্ গুণাবলী বর্জিত হয় এবং সৎ গুণাবলী অর্জিত হয়। হক্ব পীর সাহেবের হাতে বাইয়াত হয়ে প্রতিদিন একঘন্টা করে যিকির করলে সাধারণতঃ প্রতিটি লতিফার যিকির জারী হতে একমাস সময় লাগে। তবে কোশেশ ও ইখলাছের তারতম্যের কারণে কম-বেশী সময় লাগতে পারে। উল্লেখ্য, দশ লতিফার প্রত্যেকটিতে আলাদা আলাদা যিকির জারী হওয়ার পর সম্মিলিতভাবে দশ লতিফার যিকির করতে হয়। আর একেই বলা হয় সুলতানুল আযকার বা যিকিরের বাদশা। এতে প্রথমে প্রত্যেক পশমের গোড়ায় গোড়ায় অতঃপর পর্যায়ক্রমে চামড়া, গোশ্ত, রক্ত, হাড় ও তার মজ্জায় অর্থাৎ সমগ্র শরীরে আল্লাহ আল্লাহ যিকির জারী হয়ে যায়। তখন মাথার তালু হতে পায়ের তলা পর্যন্ত শরীরের সবকিছুই আল্লাহ্ আল্লাহ্ যিকির করতে থাকে। একেই বলা হয় সুলতানুল আযকার বা যিকিরের বাদশা। উল্লেখ্য, সুলতানুল আযকার যিকিরের তিনটি পর্যায় বা স্তর রয়েছে। প্রথমতঃ সালেক বা মুরীদ দেখতে পাবে যে, তার শরীরের সবকিছুই আল্লাহ আল্লাহ যিকির করছে। দ্বিতীয়তঃ সালেক দেখতে পাবে যে, তার আশে-পাশের গাছ-পালা, তরু-লতা সবকিছুই আল্লাহ্ আল্লাহ্ যিকির করছে। তৃতীয়তঃ সালেক দেখতে পাবে যে, তাহ্তাচ্ছারা হতে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত সবকিছুই আল্লাহ আল্লাহ যিকির করছে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ব্যতীত যত কায়েনাত বা মাখলুকাত রয়েছে, সবই আল্লাহ্ আল্লাহ যিকির করছে। যে প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক ফরমান
تسبح له السماوات السبع والارض ومن فيهن وان من شيئ الايسبح بحمده ولكن لا تفقهون تسبيحهم انه كان حليما غفورا.
অর্থ : সাত আসমান ও যমীন এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু রয়েছে, সব কিছুই তাঁর (মহান আল্লাহ পাক উনার) তাসবীহ্ পাঠ করছে। এমন কিছুই নেই, যা তাঁর প্রশংসা জ্ঞাপন করেনা। কিন্তু তোমরা তা বুঝনা। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ধৈর্য্যশীল ও ক্ষমাশীল।” (পবিত্র সূরা বণী ইস্রাঈল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৪)
তাছাউফের পরিভাষায় একেই সুলতানুল আযকারের শেষ স্তর বলা হয়। এ সবক্ব বা মোরক্বাবা-মুশাহাদার দ্বারাই সমগ্র মুহ্লিকাত  বা বদ্ গুণাবলী দূর হয়ে অন্তরে মুনজিয়াত বা সদ্ গুণাবলী পয়দা হয়, যার ফলে সালেক বেলায়েতের দরজা তথা বেলায়েতে আম হাছিল করে। তাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের সহীহ্ বর্ণনা সাপেক্ষে সকল ইমাম, মুজতাহিদ, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম ও মাশায়েখে ইজাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ এরূপভাবে যিকির-ফিকির, মুরাক্বাবা-মুশাহাদার মাধ্যমে ক্বলব তথা দশ লতীফায় যিকির জারী করতঃ অন্ততঃপক্ষে বেলায়েতে আম হাছিল করাকে ফরয-ওয়াজিব বলেছেন। উনাদের মতে অন্তর পরিশুদ্ধ করে ইখলাছ অর্জন করার এটাই একমাত্র উপায় বা পদ্ধতি। নচেৎ শুধুমাত্র তাসাউফী বিষয়সমূহের তথা মুহ্লিকাত ও মুনজিয়াতের তারীফ, সবক, আলামত ও এলাজ ইত্যাদি মুখস্ত করলে অথবা সারা জীবন চিল্লা দিলে বা তাস্বীহ্-তাহ্লীল পাঠ করলেও অন্তর পরিশুদ্ধ হবেনা। অতএব পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে এবং এতক্ষণের আলোচনা সাপেক্ষে সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইখলাছ অর্জন করতে হলে, অন্তর পরিশুদ্ধ করতে হলে ও হুজুরী ক্বলবের সাথে নামাজ আদায় করতে হলে ফরজ পরিমাণ ইলমে তাছাউফ হাছিল করতে হবে। অর্থাৎ তাছাউফ সংক্রান্ত ইলম অর্জন করার সাথে সাথে তাছাউফের আমালী বিষয় তথা সবক্ব সমূহ আদায় করে কমপক্ষে সুলতানুল আযকার জারী করতে হবে। অর্থাৎ অন্ততঃপক্ষে বেলায়েতে আম হাছিল করতে হবে।  আর তজ্জন্য একজন কামিল পীর বা শায়খের নিকট বাইয়াত হতে হবে। এটা সকলের জন্যই ফরজের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া শুধু প্রচলিত তাবলীগই নয়, অন্য কোন পদ্ধতিতেই অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুজুরী অর্জন করা বা বেলায়েতে আম হাছিল করা কস্নিনকালেও সম্ভব নয়। অতএব, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের এ বক্তব্য- ইলমে তাছাউফ শিক্ষা ব্যতীত কেবল চিন্তা দ্বারা ও প্রচলিত তাবলীগ করার মাধ্যমেই ইখলাছ হাছিল করা, অন্তুর পরিশুদ্ধ করা ও হুজুরী ক্বলবের সহিত নামাজ আদায় করা সম্ভব, এর জন্যে ক্বল্বী যিকিরের কোনই প্রয়োজন নেই বরং বিভিন্ন প্রকার দোয়া-দরূদ ও তাস্বীহ্-তাহ্লীলের মধ্যেমেই তা অর্জিত হয়।তা সম্পূর্ণই কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী, মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিমূলক, কল্পনা প্রসূত এবং গোমরাহী জনিত কথা। এ ধরণের বক্তব্য প্রদান ও আক্বীদা পোষণ করা হতে বিরত থাকা তাদেরসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যই ফরজ-ওয়াজিব। কামিল পীর বা শায়খের নিকট  বাইয়াত হওয়া ফরয
[বি : দ্র : তাছাউফের আমালী বিষয়সমূহ হাছিল করা যেহেতু একজন কামিল পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত, সেহেতু এখানে সংক্ষিপ্তভাবে কামিল পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়ার আহকাম ও কামিল পীরের পরিচয় বর্ণনা করা হলো] স্মরণযোগ্য যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ইলমে তাছাউফ অর্জন করতে হলে এবং দায়েমী বা সার্বক্ষণিকভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে মশগুল থাকার জন্য বা হুজুরী ক্বলব অর্জন করতঃ অন্ততঃপক্ষে বেলায়েতে আম হাছিল করতে হলে, অবশ্যই একজন কামিল পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে। কারণ কামিল পীর বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ব্যতীত ইলমে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুজুরী হাছিল করা বা বেলায়েতে আম হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। তাই অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও হযরত আওলিয়ায়ে কিরামগণ কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দৃষ্টিতে ইজ্তিহাদ করতঃ রায় বা ফতওয়া দেন যে, ইছলাহ্ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা ও হুজুরী ক্বলব হাছিল করতঃ বেলায়েতে আম হাছিল করার জন্য একজন কামিল পীর বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরজ।  কেননা এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, ইলমে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুজুরী ক্বলব হাছিল করা তথা অন্ততঃপক্ষে বেলায়েতে আম হাছিল করা ফরজ। এ ফরজ ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত একজন কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত না হবে। তাই বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরজ। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে মাজহারীতেউল্লেখ আছে যে,                
كل مايترتب عليه الاثر من الفروض الاعيان فهو فرض عين.
অর্থ : যে কাজ বা আমল ব্যতীত ফরজ সমূহ আদায় করা সম্ভব হয়না, ফরজগুলোকে আদায় করার জন্য সে কাজ বা আমল করাও ফরয।হানাফী মায্হাবের মশহুর ফিক্বাহের কিতাব দুররুল মোখ্তারেউল্লেখ আছে যে,
مالايتم به الفرض فهو فرض.
অর্থ : যে আমল ব্যতীত কোন ফরজ পূর্ণ হয়না, সে ফরজ পূর্ণ করার জন্য ঐ আমল করাটাও ফরজ।উল্লিখিত উছুলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে এটিই প্রমাণিত হয় যে, ফরজ পরিমাণ ইলমে তাছাউফ যেহেতু অর্জন করা ফরজ, আর তা যেহেতু কামিল মুর্শিদ বা পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়, সেহেতু একজন কামিল মুর্শিদ অর্থাৎ যিনি সর্বদা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে মশগুল, উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয। শুধু তাই নয়, কামিল মুর্শিদের বা ওলী আল্লাহগণ উনাদের সোহবত লাভ করা বা উনাদেরকে অনুসরণ করার নির্দেশ কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে পবিত্র সূরা তওবা শরীফ উনার ১১৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেন,
يا ايها الذين امنوا اتقوا الله وكونوا مع الصادقين.
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর এবং ছদেক্বীন বা সত্যবাদীগণের সঙ্গী হও।উপরোক্ত আয়াত শরীফে ছদেক্বীন দ্বারা তাঁদেরকেই বুঝানো হয়েছে, যাঁরা জাহির-বাতিন, ভিতর-বাহির আমল-আখলাক, সীরত-ছূরত, ক্বওল-ফেল সর্বাবস্থায় সত্যের উপর কায়েম রয়েছেন। অর্থাৎ যাঁরা ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাসাউফে তাক্মীলে (পূর্ণতায়) পৌঁছেছেন। এক কথায় যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হয়েছেন এবং সর্বদা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে মশগুল অর্থাৎ যাঁরা কামিল পীর বা মুর্শিদ, তাঁদেরকে বুঝানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেন,
واصبر نفسك مع الذين يدعون ربهم والغد اوة والعشى ير يدون وجهه.
অর্থ : আপনি নিজেকে তাঁদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যাঁরা সকাল-সন্ধায় তাঁদের রবকে ডাকে উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য ক্বলবী যিকির করেন, তাঁর অনুসরণ ও ছোহ্বত এখতিয়ার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক এ প্রসঙ্গে আরো বলেন,
واتبع سبيل من اناب اليى.
অর্থ : যে ব্যক্তি আমার দিকে রুজু হয়েছেন, উনার পথকে অনুসরণ কর।” (পবিত্র সূরা লোকমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)
কামিল মুর্শিদের গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
من يهد الله فهو المهتد ومن يضلل فلن تجد له وليامرشدا.
অর্থ : মহান আল্লাহ পাক যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে, তার জন্যে কোন ওলীয়ে মুর্শিদ (কামিল পীর) পাবেনা।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭)
অর্থাৎ যারা কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়না তারা পথভ্রষ্ট। কারণ তখন তাদের পথ প্রদর্শক হয় শয়তান। তাই সুলতানুল আরেফীন, হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত ত্বাইফা, হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেই বলেন যে,
من ليس له شيخ فشيخه شيطان.
অর্থ : যার কোন পীর বা মুর্শিদ নেই তার মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান।” (ক্বওলুল জামীল, নুরুন আলা নূর, তাছাউফ তত্ত্ব) আর শায়খ বা পীর সাহেবের গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে
الشيخ لقومه كالنبيى فى امته.
অর্থ : শায়খ (পীর সাহেব) উনার ক্বওমের মধ্যে তদ্রুপ, যেরূপ নবী আলাইহিস সালাম উনাদের উম্মতের মধ্যে।” (দায়লমী, মকতুবাত শরীফ) অর্থাৎ নবী আলাইহিস সালাম উনাদের দ্বারা যেরূপ উম্মতের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন সবক্ষেত্রে ইছলাহ্ লাভ হয়, সেরূপ শায়খ বা পীর সাহেবের দ্বারাও মুরীদের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন সবক্ষেত্রে ইছলাহ লাভ হয়। অতএব, হযরত নবী আলাইহিস সালাম উনাদের উম্মত না হয়ে যেরূপ হিদায়েত লাভ করা যায়না, তদ্রুপ কামিল মুর্শিদ বা পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত না হয়েও ইছলাহ্ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা যায়না। বরং শয়তানী প্রবঞ্চনায় পড়ে গোমরাহীতে নিপতিত হওয়াই স্বাভাবিক। আর একারণেই জগদ্বিখ্যাত আলেম, আলেমকুল শিরমনি, শ্রেষ্ঠতম মায্হাব হানাফী মায্হাবের প্রতিষ্ঠাতা, ইমামুল আইম্মা, ইমামুল আকবর, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
لولا سنتان لهلك ابو نعمان.
অর্থ : “(আমার জীবনে) যদি দুটি বৎসর না হতো, তবে আবু নোমান (আবু হানীফা) ধ্বংস হয়ে যেত।” (সাইফুল মুকাল্লেদীন, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া) অর্থাৎ আমি আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি যদি আমার শায়খ বা পীর সাহেব ইমাম বাকের ও ইমাম জাফর সাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বাইয়াত না হতাম, তবে (শয়তানী প্রবঞ্চনায়) ধ্বংস বা বিভ্রান্ত হয়ে যেতাম।  সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, যে ব্যক্তি কোন কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত না হবে, তার পক্ষে শয়তানী প্রবঞ্চনা ও বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকা আদৌ সম্ভব নয়। কেননা পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত ক্বাল্বে যিকির জারি করা অসম্ভব। আর ক্বাল্বে যিকির জারি করা ব্যতীত শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়। তাই পরিশুদ্ধতা লাভ করার জন্য বা ক্বাল্বে যিকির জারি করার জন্য অবশ্যই একজন কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হতে হবে। আর তাই এ যাবত পৃথিবীতে যত ইমাম, মুজতাহিদ ও হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি আগমন করেছেন, উনাদের প্রত্যেকেই কোন না কোন একজন পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হয়েছেন এবং তাঁদের অনেকেই তাঁদের স্ব স্ব কিতাবে পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাকে ফরয বলেছেন। যেমন- গাউসুল আযম, মাহ্বুবে সোবহানী, কুতুবে রব্বানী, ইমামুল আইম্মা, হযরত বড় পীর আব্দুল কাদির জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব সিররুল আসরারেলিখেন
ولذالك طلب اهل التلقين لحياة القلوب فرض.
অর্থ : ক্বলব জিন্দা করার জন্য অর্থাৎ অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য আহলে তালক্বীনতালাশ করা বা কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরজ। অনুরূপ ফাতহুর রব্বানীতেও উল্লেখ আছে।তদ্রুপ হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব সমাদৃত কিতাব ক্বিমিয়ায়ে সায়াদাতে, কাইউমুয্যামান হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাকতুবাত শরীফে, আওলাদে রাসূল, আশেক্বে নবী, হযরত আহমদ কবীর রেফাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আল বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ কিতাবে উল্লেখ করেন যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য বা ইলমে তাছাউফ অর্জন করার জন্য একজন কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হওয়া ফরজ। অনুরূপ তাফসীরে রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী ও কবীরে উল্লেখ আছে। মূলত কামিল মুর্শিদ বা পীর সাহেব হলেন, অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ বেলায়েত হাছিল করে মহান মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ নৈকট্য লাভ করার এক বিশেষ উসীলাহ্ বা মাধ্যম। আর তাই মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ মুবারক করেন,
يا ايها الذين امنوا وابتغوا اليه الوسيلة.
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য লাভ করার জন্য উসীলা তালাশ (গ্রহণ) কর।” (পবিত্র সূরা মায়েদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৫)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বা ব্যাখ্যায় তাফ্সীরে রুহুল বয়ানেউল্লেখ আছে যে,
الوصول لا يحصل الابالوسيلة وهيى العلماء الحقيقة ومشائخ الطريقة.
অর্থ : উসীলা ব্যতীত মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য লাভ করা যায়না। আর উক্ত উসীলা হচ্ছেন, হাক্বীক্বত ও তরীক্বতপন্থী আলেম বা মাশায়েখগণ অর্থাৎ কামিল মুর্শিদগণ।উপরোক্ত বিস্তারিত ও অকাট্য আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও হুজুরী ক্বলব অর্জন তথা  কমপক্ষে বেলায়েতে আম হাছিল করার জন্য জরুরত আন্দাজ ইলমে তাছাউফ অর্জন করা যেরূপ ফরজ তদ্রুপ একজন হক্কানী ও কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হওয়াও ফরজ। কামিল মুর্শিদ বা শায়খের আলামত ইলমে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ ইখলাছ হাছিল করার জন্য পীর বা শায়খের নিকট বাইয়াত হওয়া যেরূপ ফরজ, তদ্রুপ বাইয়াত হওয়ার পূর্বে যাচাই-বাছাই বা পূর্ণ তাহ্ক্বীক করাও ফরজ। অর্থাৎ যাঁর নিকট বাইয়াত হবে, তিনি হক্কানী পীর কিনা তা ভালরূপে যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে।  
কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
فانطروا عمن تأخذون دينكم.
অর্থ : তোমরা কিরূপ লোক থেকে তোমাদের দ্বীন (ইলম বা নছীহত) গ্রহণ করছো, তা ভালরূপে লক্ষ্য করো।” (মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহে নববী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেরকাত, লুময়াত আশয়্যাতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ, মোজাহেরে হক্ব) অর্থাৎ যে পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হবে, তাঁর আক্বীদা পরিপূর্ণভাবে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মোতাবেক ও আমল সম্পূর্ণভাবে সুন্নত অনুযায়ী হতে হবে। অর্থাৎ সুন্নতের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম, পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণকারী হতে হবে। প্রকৃতপক্ষে তাঁর আক্বীদা ও আমল, সীরত ও ছূরত সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত হতে হবে। তবেই তিনি হক্কানী পীর বা শায়খ। স্মরণযোগ্য যে, যিনি হক্কানী পীর হবেন, তাঁকে অবশ্যই আলেম হতে হবে। অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাছাউফ-এর অধিকারী হতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমলও থাকতে হবে।  অনেকেই মনে করে থাকে যে, টাইটেল বা দাওরা পাস করলে বা তৎসম্পর্কিত সার্টিফিকেট লাভ করলেই তাকে আলেম বলে। আবার কারো কারো ধারণা জালালাইন ও মেশকাত শরীফ পড়তে পারলেই সে আলেম বা কামিল পীর। মূলত এ ধারণা বা বক্তব্য সম্পূর্ণই শুদ্ধ ও কুরআন-সুন্নাহ্ অনুযায়ী নয়।  কারণ শরীয়তের কোথাও আলেম হওয়ার জন্য টাইটেল/ দাওরা পাস করাকে বা সার্টিফিকেট লাভ করাকে এবং শুধুমাত্র উক্ত কিতাবদ্বয় পড়তে সক্ষম হওয়াকে শর্ত করা হয়নি। বরং শরীয়তের দৃষ্টিতে আলেম ঐ ব্যক্তিই যিনি ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাছাউফের অধিকারী এবং মহান আল্লাহ পাককে ভয় করেন ও ইলম অনুযায়ী আমল করেন।  এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,                            
انما يخشى الله من عباده العلماء.
অর্থ : নিশ্চয় মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলেমগণই মহান আল্লাহ পাককে ভয় করে।” (পবিত্র সূরা ফাতির শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, হাম্বলী মায্হাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, ইমামুল আইম্মা, শায়খুল মুহাদ্দেসীন, হযরত আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে। তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, “যাঁর ভিতর যত বেশী খোদাভীতি রয়েছে তিনি ততবড় আলেম।উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে খোলাছায়উল্লেখ আছে যে,
"العلماء" سے اصطلاحی عالم یعنی کتابین پرہ لینے و الے مراد نھین- بلکہ کبریائے ذات و عظمت صفات کو نور ایمان شمع عرفان سے دیکھنے و الے اسلئے کہ اصحاب رسول صلی اللہ علیہ وسلم و ارباب و لایت و قبول سبکے سب علماء کتابی نہ تھی گو اونکا علم نافع اعلی درجے کا تھا-
অর্থ : উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ম্লহৈৃব্জপ্টশব্দ দ্বারা কিতাব সমূহ পাঠকারী তথা দাওরা বা টাইটেল পাসকারীদেরকে বুঝানো হয় নাই। বরং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আলেমতারাই, যারা মহান আল্লাহ পাক উনার মহিমাময় জাত ও অসীম গৌরবময় ছিফাত সমূহকে ঈমান ও মারেফতের নূরের আলোকে অবলোকন করেছেন। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয়তম সাহাবী আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ ও (পূর্ববর্তী) বেলায়েতপ্রাপ্ত ও মকবুল ওলীআল্লাহ্গণ কিতাবী তথা দাওরা বা টাইটেল পাস আলেম ছিলেন না। তথাপিও উনারা সর্বোচ্চ স্তরের উপকারী ইলমের অধিকারী ছিলেন। অর্থাৎ তারাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত প্রকৃত আলেম ছিলেন। উল্লিখিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত আলেম, ইমামুল মুফাস্সিরীন, হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ তাফসীরে ইবনে কাছীরে উল্লেখ করেন,
عن ابن مسعود رضى الله عنه انه قال ليس العلم عن كثرة الحديث ولكن العلم عن كثرة الخشية وقال احمدبن صالح المصرى عن ابن وهاب عن مالك قال ان العلم ليس لكثرة الرواية وانما العلم نوريجعله الله تعالى فى القلب.
অর্থ : হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি অধিক হাদীছ জানে সে ব্যক্তি আলেম নয়। বরং যাঁর মধ্যে আল্লাহ্ভীতি অধিক সে ব্যক্তিই আলেম। আর আহমদ বিন ছালেহ্ মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অধিক রেওয়ায়েত শিক্ষা করলেই আলেম হওয়া যায়না। মূলত ইলম হচ্ছে নূর বা জ্যোতি স্বরূপ। মহান আল্লাহ পাক তা মানুষের অন্তকরণে দান করেন।উক্ত তাফসীরে ইবনে কাছীরেউল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আরো উল্লেখ আছে যে,
قال سفيان الثورى..... العلماء ثلاثة عالم بالله وعالم بامر الله وعالم بالله ليس بعالم بامر الله وعالم بامر الله ليس بعالم بالله. فالعالم بالله وبامر الله الذى يخشى الله تعالى ويعلم الحدود والقرائض
অর্থ : হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আলেমগণ তিনভাগে বিভক্ত। (১) আলেম বিল্লাহ্ অর্থাৎ যারা শুধু মহান আল্লাহ পাককেই জানে। কিন্তু উনার হুকুম-আহকাম সম্পর্কে অজ্ঞ। (২) আলেম বিআমরিল্লাহ্। অর্থাৎ যারা শুধু হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জানে। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক সম্পর্কে অজ্ঞ বা আল্লাহ্ভীতি নেই। (৩) আলেম বিল্লাহ্ ওয়া বিআমরিল্লাহ্। অর্থাৎ যাঁরা মহান আল্লাহ পাক ও উনার শরীয়তের হুকুম-আহকাম ও ফারায়েজ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত এবং মহান আল্লাহ পাককে ভয় করেন। (উনারাই হাক্বীক্বী বা প্রকৃত আলেম।) আর হাক্বীক্বী আলেম সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
 العلماء ورثة الانبياء وان الانبياء لم يورثوا دينارا ولادرهما وانما ورثوا العلم
অর্থ : নিশ্চয় আলেমগণ নবী আলাইহিস সালামগণ উনাদের ওয়ারিছ। আর নিশ্চয় নবী আলাইহিস সালামগণ কোন দীনার-দিরহাম রেখে যাননি। বরং ইলম রেখে গেছেন।” (তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ্, আহমদ, মিশকাত শরীফ, মায়ারেফুস সুনান, উরফুশ শাযী, বজলুল মাযহুদ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব) উল্লেখ্য যে, নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ ওয়ারিছ স্বত্ব হিসাবে দুপ্রকার ইলম রেখে গেছেন। অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাছাউফ। যে প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
العلم علمان علم فى القلب فذاك علم النافع وعلم على للسان فذا لك حجة الله عزوجل على ابن ادم.
অর্থ : ইলম দুপ্রকার। (১) ক্বলবী ইলম (ইলমে তাছাউফ) যা উপকারী ইলম, (২) জবানী ইলম (ইলমে ফিক্বাহ্) যা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য দলীল স্বরূপ।” (দারেমী, বায়হাক্বী, দায়লামী, তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব) উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়ারিছ স্বত্ব হিসেবে ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাছাউফ উভয়টিই রেখে গেছেন। কাজেই যে ব্যক্তি উভয়টিই শিক্ষা করলো, সে ব্যক্তিই নায়েবে রসূল বা হাক্বীক্বী আলেম। উপরোল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ব্যাখ্যায় ইমামে রব্বানী, মাহ্বুবে সুবহানী, কাইয়ুমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব মকতুবাত শরীফেউল্লেখ করেন,
العلماء ورثة الانبياء- علميكه از انبياء عليهم الصلوات والتسليمات باقى مانده است دونوع است علم احكام وعلم اسرار وورث كسى هست كه اورا هردو نوع علم سهم بود نه أنكه اورا ازيك نوع نصيب بودنه ازنوع ديكركه ان منافى وراثت است- ..ه وراثت را از جميع انواع ترك مورث نصيب است نه ازبعض وانكه اورا ازمعين نصيب است داخل غرما است كه نصيب اوبجنس حق او نعلق كرفته است
অর্থ : আলেমগণ হযরত নবী আলাইহিস সালামগণ উনাদের ওয়ারিছএ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আলেম তারাই, যাঁরা নবী আলাইহিস সালামগণের রেখে যাওয়া ইলমে আহকাম (ইলমে ফিক্বাহ) ও ইলমে আসরার (ইলমে তাছাউফ) উভয় প্রকার ইলমের অধিকারী। অর্থাৎ তিনিই প্রকৃত ওয়ারিছ বা স্বত্বাধিকারী। আর যে ব্যক্তি শুধুমাত্র এক প্রকার ইলমের অধিকারী, সে ব্যক্তি নবী আলাইহিস সালামগণের প্রকৃত ওয়ারিছ নন। কেননা পরিত্যক্ত সম্পত্তির সকল ক্ষেত্রে অংশিদারী হওয়াকেই ওয়ারিছ বলে। আর যে ব্যক্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন নির্দিষ্ট অংশের অধিকারী হয় তাকে গরীম বলে। অর্থাৎ সে ওয়ারিছ নয় গরীমের অন্তর্ভুক্ত।হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মিশকাত শরীফ উনার বিখ্যাত শরাহ্ মিরকাত শরীফ উনারউল্লেখ করেন যে, মালেকী মায্হাবের ইমাম হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
 من تفقه ولم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف  ولم يتفقه فقد تزندق- ومن جمع بينهما فقد تحقق.
অর্থ : যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করলো না, সে ফাসেক। আর যে ব্যক্তি ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করলো কিন্তু ইলমে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করলো না, সে যিন্দিক (কাফের)। আর যে ব্যক্তি উভয়টি শিক্ষা করলো, সে মুহাক্কিক তথা হক্কানী আলেম।অর্থাৎ যে ইলমে ফিক্বাহ্ শিখলো, কিন্তু ইলমে তাছাউফ শিখলোনা, সে হচ্ছে ফাসেক। আর যে বলে আমি মারিফাত করি বা ইলমে তাছাউফ করি কিন্তু শরীয়ত বা ফিক্বাহ স্বীকার করেনা, সে হচ্ছে যিন্দীক। আর যিনি উভয়টাই শিক্ষা করলেন, তিনি হচ্ছেন মুহাক্কিক অর্থাৎ হাক্বীক্বী আলেম। হক্কানী বা প্রকৃত আলেম সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
من ارباب العلم؟ قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء؟ قال الطمع.
অর্থ : “(আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত কাব ইবনুল আহ্বার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন) আলেম বা ইলমের অধিকারী কে? তিনি উত্তরে বললেন, যাঁরা ইলম অনুযায়ী আমল করে। হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পুণরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন জিনিস আলেমদের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয়? তিনি উত্তরে বললেন, লোভ অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা।” (দারেমী, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্) বিশিষ্ট তাবেয়ী, আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলো- আলেম কে? তিনি জবাবে বলেন,
انما الفقيه الزاهد فى الدنيا والراغب الى الاخرة والبصير بذنبه والمداوم على عبادة ربه والوارع الكف عن اعرض المسلمين والعفيف عن اموالهم والناصح لجماعتهم.
অর্থ : ফক্বীহ্ বা আলেম হলো ঐ ব্যক্তি, যে দুনিয়া হতে বিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন, গুণাহের প্রতি সতর্ক, সর্বদা মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদতে মশগুল, পরহেজগার বা সুন্নতের পাবন্দ, মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং উনার অধীনস্থদেরকে নছীহত করেন।উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, যাঁর মধ্যে খোদাভীতি রয়েছে এবং অর্জিত ইলম অনুযায়ী আমল করেন, তিনিই আলেম। কাজেই যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকেনা এবং অর্জিত ইলম অনুযায়ী আমল করেনা, তারা আলেম নয়। যেমন বর্তমানে অনেকেই আলেম নাম দিয়ে ছবি তোলে, হরতাল, লংমার্চের নামে বেদ্বীনদেরকে অনুসরণ করে, দ্বীন ইসলাম উনার নামে হারাম গণতন্ত্র চর্চা করে এবং নিজ স্বার্থ টিকিয়ে রাখার জন্য হক্বের বিরোধিতা করে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের আলেম বলা যায়না। স্মরণযোগ্য যে, কামিল পীর বা শায়খের আরেকটি বিশেষ আলামত হচ্ছে এই যে, যিনি হক্কানী বা কামিল পীর হবেন তিনি অবশ্যই সুন্নতের সুক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করবেন। ইচ্ছাকৃতভাবে একটি সুন্নতও তিনি তরক করবেন না। কারণ  সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ ব্যতীত কারো পক্ষেই হক্কানী আলেম বা কামিল পীর হওয়া সম্ভব নয়।  যে প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামীন, পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ মুবারক করেন,
قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم والله غفورر حيم.
অর্থ : “(হে হাবীব) আপনি বলে দিন! যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাককে ভালবেসে বা মুহব্বত করে থাক, তবে আমাকে (সুন্নতকে) অনুসরণ করো। তবেই মহান আল্লাহ পাক তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন ও তোমাদের গুণাহ খাতাসমূহ ক্ষমা করবেন। মহান আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল এবং দয়ালু।” (পবিত্র সূরা ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
من احب سنتى فقد احبنى.
অর্থ : যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহব্বত(অনুসরণ) করলো, সে ব্যক্তি আমাকেই মুহব্বত (অনুসরণ) করলো।” (মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ, মোযাহেরে হক্ব) উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, মহান মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টি হাছিল করার বা আল্লাহ্ওয়ালা হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে পরিপূর্ণভাবে সুন্নতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা। তাই সুলতানুল আরেফীন, হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত্ ত্বাইফা, হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেক কামিল ওলীগণ বলেন, “কাউকে পানি দিয়ে হাঁটতে, বাতাস দিয়ে উড়তে ও আগুণের মধ্যে বসে থাকতে দেখেই তাকে ওলীআল্লাহ মনে করবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে সুন্নতের পূর্ণ অনুসরণ করতে না দেখবে। কেননা তাছাউফের কিতাব সমূহে উল্লেখ আছে যে, যিনি হক্কানী ও কামিল পীর বা ওলীআল্লাহ, তিনি ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ তরক করা বা ছেড়ে দেয়া তো দূরের কথা বরং তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন সুন্নতে যায়েদাহ্ বা মুস্তাহাবও তরক করবেননা। অনুরূপ হারাম ও নাজায়েয কাজ করা তো দূরের কথা বরং তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মাকরূহ্ কাজও করবেননা। তবে হ্যাঁ, যাঁরা কামিল ও হক্কানী পীর বা ওলীআল্লাহ যদি উনাদের দ্বারা অনিচ্ছা সত্বেও কোন সুন্নতও তরক হয়ে যায়, মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে তাঁদেরকে সতর্ক বা সাবধান করে দেয়া হয়। তাই তাঁরা সর্বদা বা দায়েমীভাবে শরীয়তের খেলাফ বা সুন্নতের খেলাফ কাজে মশগুল থাকতে পারেননা। যেমন- এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীক্বত, ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি একদিন মসজিদে প্রবেশ করার সময় বেখেয়ালে ডান পার স্থলে বাম পা আগে দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন। সাথে সাথে ইলহাম (গায়েবী আওয়াজ) হলো- হে সুফিয়ান ছাওরী! আপনার কি জানা নেই যে, মসজিদে প্রবেশ করার সময় প্রথমে ডান পা দেয়া আমার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি একথা শুনে বেহুশ হয়ে গেলেন। হুশ আসার পর ইস্তেগফার করলেন। মহান আল্লাহ পাক উনাকে ক্ষমা করে দিলেন।  এখানে ফিকিরের বিষয় এই যে, ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি অনিচ্ছাবশতঃ একটি সুন্নতে যায়েদাহ্ তরক করার কারণে মহান আল্লাহ পাক তাকে সতর্ক বা সাবধান করে দিলেন। এতে বুঝা গেল যে, যিনি কামিল পীর হবেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে একটি সুন্নতও তরক করতে পারবেন না বা সর্বদা হারাম, নাজায়েয ও সুন্নতের খেলাফ কাজে মশগুল থাকবেন না। অথচ আজকাল এমন কিছু লোক পীর বা হাদী দাবী করছে যাদের নেই ফরজ পরিমাণ ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাছাউফ যারা সুন্নত পালন করা তো দূরের কথা বরং সর্বদাই হারাম ও নাজায়েয কাজে মশগুল। যেমন- ছবি তোলা, লংমার্চ, হরতাল করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, দ্বীন ইসলাম উনার নামে হারাম গণতন্ত্র চর্চা করা ও ইলেকশন বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাসহ আরো বহুবিধ হারাম কাজে তারা লিপ্ত। অথচ একবারও মহান আল্লাহ পাক তাদেরকে সতর্ক বা সাবধান করে দেন না। এতে কি বুঝা যায় না যে, তারা হক্কানী বা কামিল ওলী আল্লাহ নয়। যেখানে কিতাবে লেখা হয়েছে যে,
حسنة الابرار سيئة المقربين.
অর্থ : সাধারণ লোকের জন্য যা নেকের কাজ, খাছ বা বিশেষ লোকদের (হাদীদের) জন্য তা গুণাহের কারণ।সেখানে পীর, হাদী, আলেম দাবী করে হারাম ও নাজায়েয কাজ করা কিরূপে সম্ভব? যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
خذوا نصف الدين من هذه الحميرة.
অর্থ : আমার পর তোমরা অর্ধেক দ্বীন শিক্ষা লাভ করবে, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে।নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর যেহেতু হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি হাদী হবেন, তাই হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেন, “হে আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম! মহিলাদের জন্য কয়েকটি জিনিস ব্যবহার করা জায়েয হলেও আপনার জন্য সেগুলো ব্যবহার করা জায়েয নয়। (১) রেশমী কাপড় পরিধান করা। (২) লাল রং-এর কাপড়  পরিধান করা। (৩) স্বর্ণের অলংকার ব্যবহার করা। কারণ আপনি আমার পরে হাদী হবে।তখন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি রেশমী ও লাল রং-এর কাপড় পরিধান নাইবা করলাম, কিন্তু আমি যেহেতু মহিলা আমার তো অলংকার ব্যবহার করতে হবে।তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যদি অলংকার ব্যবহার করতেই হয়, তবে রূপার অলংকার ব্যবহার করবে।হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, “আমি কি সে রূপার অলংকারগুলো স্বর্ণের পানিতে রং করে নিব?” নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যদি রং করতেই হয়, তবে জাফরানের পানিতে রং করে নিবে।উল্লিখিত ঘটনা দ্বারা বুঝা গেল যে, যিনি পীর, হাদী, আলেম, মুহাদ্দিস, মুফতী ও আমীর হন বা হবেন, তাঁদেরকে হারাম ও নাজায়েয কাজ থেকে তো বেঁচে থাকতে হবেই বরং স্থানবিশেষে মোবাহ্ কাজও তরক করতে হবে। যেমন- হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার জন্য রেশমী ও লাল রং-এর কাপড় পরিধান করা এবং স্বর্ণের অলংকার ব্যবহার করা জায়েয থাকা সত্ত্বেও, হাদী হওয়ার কারণে তা পরিধান ও ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। কাজেই যারা সব সময় হারাম ও নাজায়েয কাজে মশগুল থাকে, আর অপরকে করতে উৎসাহিত করে, তারা পীর বা হাদী হওয়ার উপযুক্ত নয় এবং তাদের নিকট বাইয়াত হওয়া ও তাদেরকে অনুসরণ করাও জায়েয নয়। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, যিনি কামিল পীর বা হক্কানী ওলী, তিনি ফরজ ওয়াজিব তো অবশ্যই বরং সুন্নতে যায়েদাগুলোও পূর্ণরূপে আমল করবেন। এর বিপরীত যার আমল সে হক্কানী বা কামিল পীর নয়। কামিল পীর বা হক্কানী ওলী আল্লাহ্গণের আরেকটি বিশেষ আলামত হচ্ছে এই যে, উনারা হাদিয়া গ্রহণ করার সময় হালাল-হারাম যাচাই-বাছাই করবেন। উল্লেখ্য যে, হাদিয়া দেয়া যেরূপ সুন্নত তদ্রুপ গ্রহণ করাও সুন্নত, তবে হালাল-হারাম যাচাই-বাছাই করা ফরজ।  এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
ياايها لناس كلوا مما فى الارض حلالاطيبا.
অর্থ : হে মানুষেরা যমীনে যা হালাল খাদ্য রয়েছে, তা ভক্ষন কর।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৮)
আর এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن عبد الله قال قال رسول الله طلب كسب الحلال فريضة بعض الفريضة.
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “(পুরুষের জন্য) অন্যান্য ফরজের পর হালাল কামাই করাও একটি ফরয।” (বায়হাকী, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ, মোযাহেরে হক্ব) পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن جابر قال قال رسول الله لا يدخل الجنة لحم نبت من السحت كل لحم نبت من السحت كانت النار اولىبه.
অর্থ : হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “গোশতের ঐ টুকরা যা হারাম রিযিক দ্বারা তৈরী, তা জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। কেননা প্রত্যেক ঐ গোশতের টুকরা, যা হারাম রিযিক দ্বারা তৈরী হয়েছে, তার জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত।” (আহমদ শরীফ, বায়হাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব) কাজেই যিনি হক্কানী পীর বা ওলীআল্লাহ তিনি যাচাই-বাছাই করে হাদিয়া গ্রহণ করবেন। যারা হাদিয়া গ্রহণ করার সময় যাচাই-বাছাই করবেনা বা হালাল-হারামের কথা জিজ্ঞাসা করবেনা তারা কামিল বা হক্কানী পীর নয় বরং তারা দুনিয়াদার বা নাহক্ব পীর।  এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, গাউছুল আযম, মাহ্বুবে সোবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত বড়পীর আব্দুল কাদির জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফে একবার বাগদাদের এক সম্রাট ইউসুফ বিন মনছুর, তার এক মন্ত্রীর দ্বারা কিছু স্বর্ণ-মুদ্রা হাদিয়া স্বরূপ পেশ করলে হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তোমার হাদিয়া গ্রহণ করা যাবেনা, কারণ তোমার এ স্বর্ণ-মুদ্রা হালাল নয় বরং হারাম। এরপরও মন্ত্রী বারবার পিড়াপীড়ি করতে লাগলো, তখন হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত স্বর্ণ-মুদ্রাগুলো হাতে নিয়ে চাপ দিলেন সাথে সাথে তার থেকে রক্ত বের হতে লাগলো। মন্ত্রী এ অবস্থা দেখে সম্রাটকে সংবাদ দিলে সম্রাট এসে দেখলো সত্যিই স্বর্ণ-মুদ্রা থেকে রক্ত ঝরছে। বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তখন বললেন, হে সম্রাট, তুমি জুলুম করে তা উপার্জন করেছ বিধায় এর থেকে রক্ত ঝরছে। কারণ প্রত্যেক জিনিস তার মূলের দিকেই প্রত্যাবর্তন করে। কাজেই তোমার এ হাদিয়া গ্রহণ করা যাবেনা। তখন সম্রাট হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট ক্ষমা চাইলেন ও খাছ তওবা করলেন। (খোলাছাতুল ক্বাদেরী) উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, যিনি হক্কানী বা কামিল পীর সাহেব তিনি অবশ্যই হাদিয়া গ্রহণ করার সময় হালাল-হারাম যাচাই-বাছাই করবেন। আর যে ব্যক্তি যাচাই-বাছাই করে হাদিয়া গ্রহণ করবেনা, সে কখনই হক্কানী বা কামিল পীর নয়। এরপর হক্কানী ওলী আল্লাহ্গণের আলামত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা আপনার বিদায়ের পর কিরূপ লোকের সোহ্বত লাভ করবো? অর্থাৎ কোন্ ব্যক্তি হাক্বীক্বী আল্লাহ্ ওয়ালা বা কামিল পীর? জবাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من ذكر كم الله وؤيته ومن زاد فى علم كم منطقه ومن ذكر كم بالا خرة اعماله.
অর্থ : যাঁকে দেখলে মহান আল্লাহ পাক উনার কথা স্মরণ হয়, যাঁর কথা শুনলে দ্বীনী ইলম বৃদ্ধি পায়, যাঁর আমল দেখলে পরকালের কথা স্মরণ হয়।” (সে ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আল্লাহ্ ওয়ালা বা কামিল পীর।) এছাড়াও কামিল পীর বা শায়খের আরো বহু আলামত রয়েছে এখানে অতি জরুরী বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। কেননা কামিল পীর বা হক্কানী ওলী আল্লাহ্ হতে হলে উল্লিখিত আলামতগুলো অবশ্যই থাকতে হবে। যাদের মধ্যে উল্লিখিত আলামতগুলো নেই তারা কামিল বা হক্কানী পীর নয়। যদিও তাদেরকে সারা বিশ্বের মানুষ চিনে, যদিও তাদের লক্ষ-কোটি মুরীদান থাকে। বরং এরূপ পীর সাহেব পরিত্যাগ করে উল্লিখিত গুণ সম্পন্ন একজন কামিল পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া ওয়াজিব।
কেননা তাছাউফের কিতাবে উল্লেখ করা হয়, তিন কারণে পীর সাহেব ছেড়ে দেয়া জায়েয ও স্থান বিশেষে ওয়াজিব। যেমন- (১) পীর সাহেব মারা গেলে মুরীদ যদি পূর্ণতায় না পৌঁছে থাকে, তবে অন্য পীর সাহেব গ্রহণ করতে হবে। (২) পীর সাহেব যদি দূরদেশে থাকেন, সেখানে যদি কোন রকম যোগাযোগই রক্ষা করা সম্ভব না হয়। (৩) হক্ব পীর সাহেব ধরার পর যদি দেখে পীর সাহেব শরীয়তের খেলাফ কাজ করেন, তবে উক্ত পীর সাহেব ছেড়ে অন্য হক্ব পীর সাহেব ধরা ওয়াজিব। (ক্বওলুল জামীল, জাদুত্ তাক্বওয়া, তাছাউফ তত্ত্ব)
চতুর্থ কারণ হিসেবে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন যে, মুরীদ এরূপ পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হয়েছে, যার মাধ্যমে মুরীদের রূহানী তরক্কী হচ্ছেনা বা আমলের পরিবর্তন হচ্ছেনা, তখন উক্ত পীর সাহেব ছেড়ে এমন পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হতে হবে, যাঁর দ্বারা রূহানী তরক্কী সম্ভব। অতএব, উপরোল্লিখিত আলোচনা দ্বারা এটা সাব্যস্ত হলো যে, যিনি পীর সাহেব বা হাদী হবেন, তাঁকে বিশেষভাবে ইলমে তাছাউফ ও ইলমে ফিক্বাহ্র অধিকারী হতে হবে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের উপর পরিপূর্ণভাবে কায়েম থাকতে হবে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতের পূঙ্খানুপূঙ্খভাবে অনুসরণ ও অনুকরণ এবং মোস্তাহাব পর্যন্ত উনাকে আমল করতে হবে। অপরদিকে যাবতীয় হারাম কাজ এমনকি মাকরূহ্ কাজ থেকেও তাঁকে বিরত থাকতে হবে। এর বিপরীত যারা করবে তারা অবশ্যই নাহক্ব বা বাতিল। তাদের পীর হবার কোনই যোগ্যতা নেই। আর তাদের নিকট বাইয়াত হওয়াও জায়েয নেই। সুতরাং ইলমে তাছাউফের ইলমী ও আমলী বিষয়াদি এবং কামেল পীরের আলামত সম্পর্কিত এতক্ষণের আলোচনা শেষে এই সাব্যস্ত হলো যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকসহ সকলের জন্যই ইলমে তাছাউফ হাছিল করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুজুরী বা ইখলাছ অর্জন তথা অন্ততঃপক্ষে বেলায়েতে আম হাছিল করার জন্য একজন হক্কানী ও কামিল পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া ফরজ-ওয়াজিব। অপরদিকে ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করা ব্যতীত কেবল চিন্তা দ্বারা ও প্রচলিত তাবলীগ করার মাধ্যমেই ইখলাছ হাছিল করা, অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও হুজুরী ক্বলবের সহিত নামাজ আদায় করা সম্ভব। এরজন্যে ক্বলবী যিকিরের কোনই প্রয়োজন নেই বরং বিভিন্ন প্রকার দোয়া-দরূদ ও তাস্বীহ্-তাহ্লীলের মাধ্যমেই তা অর্জিত হয়এরূপ কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী, মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিমূলক ও কল্পনা প্রসুত আক্বিদা থেকে প্রচলিত তাবলীগ জামাতসহ সংশ্লিষ্ট সকলেরই তওবা করাও ফরজ-ওয়াজিব।

(অসমাপ্ত

0 Comments: