হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৯২৫-১০৬৯) (ট)


সর্বপ্রথম হযরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অভিযান মুবারক:
আল বিদায়া ওয়াল নিহায়া’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে-
قال حضرت ابن جرير رحمة الله عليه وزعم حضرت الواقدي رحمة الله عليه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم عقد في هذه السنة في شهر رمضان على رأس سبعة أشهر من مهاجره لحمزة بن عبد المطلب رضى الله تعالى عنه لواء أبيض في ثلاثين رجلا من المهاجرين  ليعترض لعيرات قريش وأن حضرت حمزة رضى الله تعالى عنه لقي أبا جهل  في ثلا ثمائة رجل من قريش فحجز بينهم مجدي بن عمرو ولم يكن بينهم قتال، قال وكان الذي يحمل لواء حضرت حمزة رضى الله تعالى عنه حضرت أبو مرثد الغنوي رضى الله تعالى عنه.
অর্থ: ‘হযরত ইবনে জারির রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রথম পবিত্র হিজরত মুবারক উনার সাত মাসের মাথায় পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার মধ্যে একটি সাদা রঙের পতাকা নিয়ে ৩০ জন হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একটি দলকে নিয়ে কুরাইশ কাফিরদের এক বণিক কাফেলাকে ধরার জন্য প্রেরণ করেন। আবূ জাহেলের নেতৃত্বে পরিচালিত তিনশত কাফির কুরাইশ কাফেলা সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মুখামুখি হয়। মাজদী ইবনে আমরের মধ্যস্থতার ফলে কোন সংঘর্ষ হয়নি। রাবী বলেন, হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পতাকা বহন করেন হযরত আবূ মারছাদ আল গানাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।’
সীরাতুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে,’ কেউ কেউ বলেন, হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত মুবারকেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বপ্রথম জিহাদের সামরিক ঝা-া মুবারক তুলে দেন।
জনশ্রুতি অনুসারে হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ওই সময় যে কবিতা মুবারক আবৃত্তি করেছিলেন, তার অনুবাদ নিম্নে তুলে ধরা হলো-
হে আমার জাতি, তোমরা অজ্ঞতা ও ধৃষ্টতা এবং আপন নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ মতামত ও বাচালতা থেকে সাবধান হও। সেই সব জুলুমবাজ থেকেও সাবধান হও, যাদের যমীন বা ফসল, অন্য কারো পশু বা মানুষ কখনো মাড়ায়নি। আমরা যেনো তাদের সাথে শত্রুতা করছি, অথচ আমাদের সাথে তাদের কোন শত্রুতা নেই বরং আমরা তাদের পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেই, যা তারা গ্রহণতো করেইনা, উপরন্তু উনাকে উপহাসের বস্তুতে পরিণত করে।” নাউযুবিল্লাহ!
এ অবস্থা অব্যাহত থাকার কারণে শেষ পর্যন্ত আমি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক লাভের আশায় তীব্রগতিতে তাদের উপর আক্রমণ করলাম। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারকে আমি এই (অভিযানের) পথ বেছে নিয়েছি। যিনি আমার হাতে সর্বপ্রথম ঝা-া (পতাকা) মুবারক তুলে দিয়েছেন এবং আমার আগে আর কারো হাতে ঝা-া শোভা পায়নি। এই ঝা-া মুবারক ছিলো সেই মহা পরাক্রান্ত, সম্মানিত মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বিজয়ের প্রতীক যাঁর প্রতিটি কাজ সর্বোত্তম।
একদিন বিকালে শত্রুরা যেই সমবেত হয়ে রওয়ানা হলো, তখন আমরা সকলেই জজবায় উজ্জীবিত ও উত্তেজনায় ফেটে পড়ার উপক্রম হলাম। যখন আমরা উভয় পক্ষ মুখোমুখি হলাম, অমনি তারা তাদের চলা ক্ষান্ত করলো এবং আমরাও আমাদের চলা থামিয়ে দিলাম এবং আমরা একে অপরের খুবই কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম। তখন আমরা তাদের বললাম, আমাদের নিসবত বা সম্পর্ক মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে এবং তোমাদের সম্পর্ক কেবলমাত্র গোমরাহী বা কুফরীর সাথে। তখন আবু জাহেল বিদ্রোহী হয়ে উগ্রমূর্তি ধারণ করলো। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি আবু জাহেলের দুরভিসন্ধি বানচাল করে দিলেন। আমরা ছিলাম মাত্র ৩০ জন অশ্বারোহী আর তারা ছিলো দুই’শোরও অধিক। অতএব, হে লুয়াইয়ের বংশধর! তোমরা তোমাদের বিপথগামী লোকদের অনুসরণ করোনা এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সহজ পথের দিকে চলে এসো। কেননা, আমার আশঙ্কা তোমাদের উপর আযাব-গযব নেমে আসবে। তখন তোমরা অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ডাকবে।
উনার এ কবিতা মুবারক উনার জবাবে কাফির আবূ জাহেল সে একটি কবিতা আবৃত্তি করলো। যা হলো,
আমি এ বিদ্বেষ ও গোঁয়ার্তুমি দেখে অবাক হয়ে যাই। আরো অবাক হই বিরোধ ও গোলযোগ পাকানোর হোতাদের দেখে। আরো অবাক হই পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যম-িত রীতি-নীতি কুফরী বর্জনকারীদের দেখে, যারা ছিলো সঠিক নেতৃত্ব ও আভিজাত্যের অধিকারী। এ দলটি আমাদের কাছে একটি মিথ্যা দাবি নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল যাতে উনারা আমাদের বিবেক বুদ্ধিকে বিভ্রান্ত করতে পারে। নাউযুবিল্লাহ! কিন্তু তাদের এ মিথ্যা দাবি কোন বিবেকবান লোকের বিবেককে বিভ্রান্ত করতে পারে না।

আমরা তাদেরকে বললাম, ওহে আমাদের সজাতিভুক্ত লোকেরা! তোমরা আপন জাতির ঐতিহ্যের সাথে বিরোধিতা করো না। কেননা, ঐতিহ্যের বিরুদ্ধাচারণ চরম মুর্খতারই নামান্তর। নাউযুবিল্লাহ! কেননা যদি তোমরা এরূপ করো, তবে ক্রন্দনকারী মহিলারা হায় মুছীবত, হায় বিচ্ছেদের রোল তুলবে। আর তোমরা যা করেছ যদি তা পরিত্যাগ করে পৈতৃক ধর্মে ফিরে এসো তাহলে আমরা তো তোমাদেরই চাচাতো ভাই, অনুগ্রহ ও আনন্দের সাথে তোমাদের গ্রহণ করবো। কিন্তু উনারা জবাবে আমাদের বললেন, আমরা তো আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বাপেক্ষা জ্ঞানীও প্রজ্ঞাবান হিসেবে পছন্দমতো পেয়েছি। এভাবে তারা যখন আমাদের বিরোধিতায় অটল রইলো এবং ভালো ও মন্দ কাজ একত্রিত করলো, তখন আমরা সমুদ্রের পাড় থেকে তাদের ধ্বংস করার জন্য হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। নাউযুবিল্লাহ! কিন্তু মাজদী ইবনে আমর জুহানী এবং আমার অন্যান্য সাথীরা আমাকে এ থেকে বিরত রাখলো, অথচ এরাই আমাকে তরবারি ও তীর দিয়ে সাহায্য করেছিলো। এ মহানুভবতার কারণ এই যে, আমাদের মধ্যে একটা চুক্তি ছিলো যা পালন করা আমাদের জন্য জরুরী ছিলো, একজন বিশ্বাসী একে দৃঢ় ও মজবুত করেছিলো। যদি ইবনে আমর না থাকতো, তাহলে তাদের সঙ্গে এমন জিহাদ হতো যে, (ফলে) জিহাদের ময়দানে অবস্থানরত পাখিরা উড়ে যেতো এবং এর প্রতিশোধ গ্রহণের কোন আশঙ্কাও থাকতো না। কিন্তু মাজদী এমন সম্পর্কের দোহাই দিলো যে, হত্যার ব্যাপারে আমাদের হাতে তরবারির বাট সঙ্কুচিত হয়ে গেলো। যদি আমি বেঁচে থাকি, তবে চকচকে শাণিত তরবারি নিয়ে অন্য সময় তাদের উপর হামলা করবো। যে তরবারি বনু লুয়াই ইবনে গালিবের সাহায্যকারীদের হাতে থাকবে, দুর্ভিক্ষ ও দুর্যোগের সময় যাদের চেষ্টা সম্মানের দাবিদার।”
(হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কাব্যবিশারদ অধিকাংশদের মতে এ কবিতা আবু জাহেল কর্তৃক রচিত নয়।)


হযরত উবায়দা ইবনে হারিছ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অভিযান:

আল বিদায়া ওয়াল নিহায়া’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে-
قال حضرت ابن جرير رحمة الله عليه  وزعم حضرت الواقدي رحمة الله عليه أيضا أن النبي صلى الله عليه وسلم عقد في هذه السنة على رأس ثمانية أشهر في شوال لعبيدة بن الحارث  بن المطلب بن عبد مناف رضى الله تعالى عنه لواء أبيض وأمره بالمسير إلى بطن رابغ. وكان لواؤه مع حضرت  مسطح بن أثاثة رضى الله تعالى عنه
অর্থ: “হযরত ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হিজরত মুবারক উনার অষ্টম মাসের মাথায় পবিত্র শাওওয়াল শরীফ উনার মধ্যে হযরত উবায়দা ইবনে হারিছ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ইবনে আবদে মানাফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে একদল মুজাহিদ প্রেরণ করেন এবং উনাদেরকে ‘বাতনে রাবিগ’ (যা জুহফা থেকে কুদায়দ অভিমুখে যাওয়ার পথে ১০ মাইল দূরবর্তী একটি স্থান) অভিমুখে রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ মুবারক দান করেন। এ দলের সাদা পতাকা ছিলো, মিসতাহ ইবনে আছাছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হস্ত মুবারকে।”

হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ওদ্দান অভিযানের পর পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান কালেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্বীয় চাচাতো ভাই হযরত উবায়দা ইবনে হারিছ ইবনে মুত্তালিব ইবনে আবদে মানাফ ইবনে কুসাই রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে ৬০ অথবা ৮০ জন অশ্বারোহী হযরত মুহাজির সেনা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে এক অভিযানে পাঠান এবং উনাদের মধ্যে কোন হযরত আনসারী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ছিলেন না। উনারা হিজাযের ছানিয়াতুল মাররা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি খালের কাছে পৌঁছলে সেখানে কুরাইশ বংশের বিপুল কাফির-মুশরিক (তথা হযরত ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন তাদের সংখ্যা ছিলো ২০০ জন) লোকের সমাবেশ দেখতে পান। কিন্তু এ দু’দলের মধ্যে কোনো যুদ্ধ হয়নি। তবে হযরত সা’দ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একটি তীর নিক্ষেপ করেন, যা ছিলো সম্মানিত মুসলিম বাহিনীর পক্ষ থেকে তীর নিক্ষেপের প্রথম ওয়াকিয়া মুবারক।
অতপর মুসলিম বাহিনী কুরাইশ কাফির মুশরিকদের সমাবেশ থেকে দূরে সরে যান। এ সময় সম্মানিত মুসলিম বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। এ সময় মুশরিকদের দল থেকে বনূ যুহরার মিত্র হযরত মিকদাদ ইবনে আমর বাহরানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও বনূ নওকাল ইবনে আবদে মানাফের মিত্র হযরত উতবা ইবনে গাযওয়ান ইবনে জাবির মাযানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা চুপে চুপে সম্মানিত মুসলমান উনাদের নিকট আসেন। উনারা দু’জন সম্মানিত মুসলমান ছিলেন। কিন্তু উনারা কাফিরদের সাথে সখ্যতা স্থাপনের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। কাফিরদের নেতা ছিলো আবূ জাহলের পুত্র হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখনো তিনি মুসলমান হননি) তবে ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে ঐ দলের নেতা ছিলো মিকরায ইবনে হাফস।
ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত উবায়দা ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অভিযান সম্পর্কে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন অধিকাংশ কাব্য বিশারদ উনাদের মতে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি এ কবিতা আবৃত্তি করেননি।
যা হোক কবিতাটির অনুবাদ নিচে দেয়া হলো, মসৃন যমীনের বালুময় খালের পাশে অবস্থানকারিণী সালমার বিচ্ছেদ বেদনায় এবং তোমার বংশের মধ্যে নতুন কোনো বিপদের আশঙ্কায়, তোমার নিদ্রা কি তিরোহিত হয়েছে? বনূ নুআঈয়ের মাঝে তুমি বিচ্ছিন্নতা দেখতে পাচ্ছ- যাদের কোনো উপদেশ এবং প্রেরণা দানকারীর কোনো অনুপ্রেরণা কুফরী থেকে ফিরিয়ে রাখে না। একজন সত্যবাদী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের কাছে এলেন, কিন্তু তারা উনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো এবং তারা উনাকে বললো, আপনি আমাদের মাঝে বেশি দিন থাকতে পারবেন না।
যখনই আমরা তাদেরকে হক্ব বা সত্যের দিকে আহবান করেছি তখনই তারা পেছনে ফিরে গেছে এবং নিজেদের বাড়িতে গিয়ে হাঁপানো জন্তুর মতো হাঁপিয়েছে। আত্মীয়তার কারণে আমরা তাদের সাথে বারবার সদ্ব্যবহার করেছি। আর পরহেযগারী পরিত্যাগ করা তাদের জন্য আদৌ কোনো চিন্তার ব্যাপার নয়।
যদি তারা তাদের কুফরী ও অবাধ্যতা থেকে ফিরে আসে (তাহলে ভালো কথা), কেননা পবিত্র হালাল বস্তু অপবিত্র বস্তুর মতো নয়। আর যদি তারা তাদের গুমরাহী ও বিদ্রোহিতায় অবিচল থাকে, তাহলে তাদের কাছে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আযাব-গযব আসতে মোটেই বিলম্ব হবে না।
আমরা তো বনূ গালিবের উঁচু স্থরের লোক সেই সুবাদে তাদের শাখা গোত্রগুলোর কাছে আমাদের ইজ্জত ও সম্মান রয়েছে। আমি সন্ধ্যার সময় নর্তন-কুর্দনরত উঁচু লম্বা আক্বতির উটনী তার পিঠের উপর বসার আসন পুরান হয়ে গেছে, তার রব উনার ক্বসম করছি।
যে সব সাদা উট ও কালো পিঠধারী হরিণের মতো ক্ষিপ্র এবং যারা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার চারপাশে অবস্থান করে এবং কদর্যময় খালের পানি পান করতে আসে, যদি তারা শীঘ্র তাদের গুমরাহী থেকে তওবা করে ফিরে না আসে (আর আমি যখন কোনো ব্যাপারে ক্বসম খাই, তখন তা ভঙ্গ করি না), তবে অচিরেই তাদের উপর এমন হামলা পরিচালিত হবে, যা নারীদের পবিত্র অবস্থায় পুরুষদেরকে তাদের কাছে যাওয়া থেকে বঞ্চিত করবে। নিহত লোকদের চারপাশে পাখিরা ভিড় জমাবে এবং কাফিরদের প্রতি তা হযরত হারিছ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মতো অনুকম্পা দেখাবে না। তুমি বনূ সাহাম ও প্রত্যেক অকৃতজ্ঞ ফিতনা সৃষ্টিকারী লোকদের কাছে খবর পৌঁছে দাও; নির্বুদ্ধিতার কারণে যদি তোমরা আমার সম্মান বিনষ্ট করতে চাও, তবে আমি তোমাদের সম্মান নষ্ট করবো না।
এর জবাবে আব্দুল্লাহ ইবনে যাবআরী সাহমী যে কবিতা আবৃত্তি করে, তা অনুবাদ নিচে দেয়া হলো-
এ ঘরের ধ্বংসস্তূপের কাছে বসে যা বালুর নিচে চাপা পড়ে গেছে, তুমি কি এমনভাবে কাঁদছ যে, তোমার অশ্রু অবিরাম ধারায় ঝরছে? যুগের আজব বিষয়ের মধ্যে এটিও একটি আশ্চর্যের ব্যাপার, বস্তুত যুগের সকল বিষয়ই আশ্চর্যজনক, চাই তা নতুন হোক বা পুরাতন; (যা হলো;) ওই দুর্ধর্ষ মুজাহিদ বাহিনী যা আমাদের মুকাবিলায় হযরত উবায়দা ইবনে হারিছের নেতৃত্ব এ উদ্দেশ্যে এসেছে যে, আমরা যেন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত আমাদের মূর্তিগুলোর সামনে নত হওয়ার অভ্যাস বর্জন করি। যখন আমরা রুদায়নার তৈরি বর্শা নিয়ে সেই দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হলাম। এমন দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ে যা ধুলো উড়িয়ে চলছিলো।
আর আমরা এমন চকচকে তরবারি নিয়ে তাদের মুকাবিলা করেছিলাম, যার পিঠের উপর যেন লবণ লাগানো, আর সে তরবারিগুলো ছিলো সিংহের মতো দুর্ধর্ষ সিপাহীদের হাতে। আমরা সেই তরবারির সাহায্যে অহঙ্কারবশে যে ঘাড় বাঁকা করে তার ঘাড় সোজা করে দেই এবং অবিলম্বে আমাদের প্রতিশোধ স্পৃহাকে শান্ত করি। তারা ভয়ে প্রচ- ত্রাসে হতোদ্যম হয়ে পড়েছিলো। আর একজন দুরদর্শী সেনাপতির নির্দেশ তাদেরকে পুলকিত করে তুলেছে। তারা যদি সেই নির্দেশে পরিচালিত না হতো (এবং আমাদের মুকাবিলায় আসত), তাহলে বিধবা নারীরা শুধু কেঁদেই বুক ভাসাতো। আর তাদের নিহতরা এমনভাবে পড়ে থাকতো যে তাদের অনুসন্ধানকারী ও তাদের সম্পর্কে উদাসীনরা তাদের খবর দিতে পারতো না। অতএব, তুমি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে আমার এ খবর জানিয়ে দাও যে, তুমি বনূ ফিহরের মান-ইজ্জত রক্ষা করতে পারবে না।
তুমি জেনে রাখো আমার পক্ষ থেকে তুমি যে জবাব পাচ্ছ তা একটি দৃপ্ত ক্বসম! যা একটা নতুন জিহাদের সূচনা করতে পারে।
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমরা এ কবিতার একটি চরণ বাদ দিয়েছি। তবে অধিকাংশ কাব্য বিশারদ উনারা এটা ইবনে যাবআরীর কবিতা বলে স্বীকার করেন না।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার তীর নিক্ষেপ সম্পর্কে একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। কবিতাটি নি¤œরূপ-
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানতে পেরেছেন যে, আমি আমার সঙ্গীদেরকে আমার তীর দিয়ে রক্ষা করেছি। আমি তাদের প্রত্যেক প্রস্তুরময় ও নরম যমীনে তাদের শত্রুদের অগ্রবর্তীদের প্রতিরোধ করতে থাকবো। ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পূর্বে আর কেউ দুশমনের প্রতি তীর নিক্ষেপ করেনি। বস্তুত আপনার আনীত পবিত্র দ্বীন ইসলাম হক্ব বা সত্য, ন্যায় ও সুবিচারের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম। এ দ্বারা মু’মিন উনাদের পরিত্রাণ দেয়া হবে এবং কাফিরদের এ কারণে স্থায়ীভাবে লাঞ্ছিত করা হবে। হে আবু জাহলের পুত্র। তোমার জন্য আফসুস, তুমিতো বিপথগামী হয়েছ। এজন্য আমার প্রতি দোষারোপ করবে না। তুমি কিছুদিন অপেক্ষা করো (এবং দেখো তোমার পরিণতি কি হয়)।” 

0 Comments: