৫২৩ নং- সুওয়াল : দরগাহ, মাজার, ক্বিয়াম, মীলাদ এবং ওরশ শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ কি? এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাই।


সুওয়াল : মাসিক মদীনা নভেম্বর-৯৫ ঈসায়ী এর প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নাক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপানো হয়-
প্রশ্ন : দরগাহ, মাজার, ক্বিয়াম, মীলাদ এবং ওরশ শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ কি? এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর : দরগাহ ফারসী শব্দ, অর্থ আস্তানা, দরবার। মাযার আরবী শব্দ, অর্থ দর্শনীয় স্থান। ক্বিয়াম আরবী শব্দ, অর্থ দাঁড়ানো। মীলাদ আরবী শব্দ, অর্থ সন্তান প্রসব করানো যন্ত্র। ওরশ আরবী শব্দ, অর্থ নতুন বধুর বাস রাত্রি যাপন।
উপরোক্ত উত্তর সঠিক হয়েছে কিনা জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব : মাসিক মদীনা পত্রিকার উপরোক্ত প্রশ্নোত্তরে দরগাহ, ক্বিয়াম এবং ওরশ শব্দের আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ কিছুটা শুদ্ধ হলেও তা আংশিক বা অপূর্ণাঙ্গ হয়েছে। কেননা, কোন শব্দের প্রচলিত বা ব্যবহৃত অর্থ ব্যতীত শুধু শব্দের আভিধানিক অর্থের মাধ্যমে সেই শব্দের পূর্ণাঙ্গা অর্থ পরিস্ফুটিত ও বোধগম্য হয় না। তাই প্রশ্নে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। অথচ বিস্তারিত উল্লেখ করা তো হয়নি বরং এত সংক্ষেপ করা হয়েছে, যার ফলে পাঠক সমাজকে বিভ্রান্তির স্বীকার হতে হয়।
আর মাজার এবং মীলাদ শব্দের অর্থ সম্পূর্ণ ভুল হয়েছে। যেমন সে মাজার অর্থ লিখেছে দর্শনীয় স্থান। তার এ অর্থ শুদ্ধ হয়নি। কারণ সাধারণ অর্থে দর্শনীয় স্থান হলো- আকর্ষণীয় ও দেখার মতো এমন এক স্থান যা সৌন্দর্যময়, যা দেখার জন্যই লোকেরা সেখানে গিয়ে থাকে। আরো উল্লেখ্য যে, কোনো স্থান দর্শনীয় হওয়ার পিছনে কয়েকটি কারণ থাকে। যেমন, (১) ঐতিহাসিক মূল্য, (২) প্রাকৃতিক দৃশ্য বা নৈসর্গিক দশ্য, (৩) প্রত্মতাত্তিক নিদর্শন, (৪) নৃতাত্তিক চিহ্ণ, (৫) স্থাপত্য কৃতি বা শিল্পরীতি ইত্যাদি (৬) আধুনিক প্রযুক্তি, (৭) চিড়িয়াখানা ও সমজাতীয় ইত্যাদি।
উপরোক্ত শর্তসমূহের যে কোন একটি বিদ্যমান থাকলে সেটা দর্শনীয় স্থান হতে পারে। যেমন, তাজমহল যা মানুষ দেখার জন্য যেয়ে থাকে, তা দর্শনীয় স্থান। আর আজমীর শরীফ যেখানে সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শায়িত রয়েছেন, সেটা হচ্ছে মাযার শরীফ, যা যিয়ারত মোলাকাত, সাক্ষাতের স্থান যেটা মানুষ যিয়ারত করে থাকে। হ্যাঁ, সেখানে যদি দর্শনীয় কোনো কিছু থেকে থাকে, তবে সে স্থানও দর্শনীয় হতে পারে। কিন্তু মূলত এটা যিয়ারতের স্থান। কাজেই মাজার অর্থ হবে সাক্ষাত, মুলাকাত, যিয়ারত ও দর্শন করার স্থান।
আর মীলাদ শব্দের অর্থও সে সম্পূর্ণ ভুল লিখেছে। যা সম্পূর্ণ মনগড়া,ভিত্তিহীন, বানোয়াটি ও কল্পনাপ্রসূতভাবে লিখেছে, যা কোনো লোগাতী বা আভিধানিক অর্থ নয়। শুদ্ধ অর্থ হচ্ছে, জন্মের সময় এবং এ অর্থ মাসিক মদীনার সম্পাদক তার স্বীয় প্রকাশিত মদীনা পাবলিকেশনথেকে আল কাওসার আধুনিক আরবী বাংলা অধিধানে উল্লেখ করেছে। নিম্নোক্ত বিশ্ববিখ্যাত লোগাতসমূহ থেকে শব্দগুলির নির্ভুল ও সঠিক তাহক্বীক্ব দেয়া হলো-
দরগাহ : দরগাহ শব্দটি ফার্সী। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দরবার, খানকাহ, আস্তানা, জাভীয়া ও কাচারী।
দরবার শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন, মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার। হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের দরবার, যাকে খানকাহ বলা হয়ে থাকে এবং জায়গা বিশেষে আস্তানা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। আর সাধারণ লোকের দরবার, যাকে কাচারী বলা হয়। আর জাভীয়া বলা হয়, বাড়ীর এমন কোন বা কিনারা, যেখানে কোন প্রকার বিপদাপদ উপস্থিত হয় না। বর্তমানে যেহেতু বেশরা ফকির বা দুশ্চরিত্র লোকদের অবস্থান স্থলকে খারাপ অর্থে আস্তানা বলা হয়, সেহেতু হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অবস্থানস্থলকে আস্তানা না বলে খানকাহ বলা হয়ে থাকে।
আর পারিভাষিক অর্থে দরগাহ বলতে কোনো আউলিয়ায়ে কিরাম বুযূর্গানে দ্বীন উনাদের মাজার শরীফ বা মাক্বাবারাহ শরীফকে বুঝায়।
মাজার : আরবী শব্দ। এটা ইসমে জরফ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আভিধানিক অর্থ হলো জিয়ারত, মুলাকাত বা সাক্ষাতের জায়গা। আর পারিভাষিক অর্থে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের কবরকে মাজার শরীফ বলা হয়, যা মানুষ জিয়ারত করে থাকে।
ক্বিয়াম : আরবী শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ দাঁড়ানো। শরয়ী অর্থে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সালাম পাঠ করার সময় তাযীম বা সম্মানার্থে দাঁড়ানোকে বুঝায়।
মীলাদ শরীফ : আরবী শব্দ। এটি ইসমে জরফের অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে জন্মের সময়। আর শরয়ী অর্থে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্ম দিবসের সময় এবং উনার জীবন বৃত্তান্ত মুবারক আলোচনা ও ছানা-সিফত করাকে বুঝায়।
ওরশ : এটা আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ ওলীমা বা বিবাহের খান, জিয়াফত বিবাহের দাওয়াত, বাসর যাপন ইত্যাদি। পারিভাষিক ও রূপক অর্থ হলো কোনো হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও বুযূর্গানে দ্বীন উনাদের ইন্তিকালের দিন ফাতেহা পাঠ উপলক্ষে যে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। (আল কামুস আল মুহীত, লিসানুল আরব, তাজুল উরূস, আসাসুল বালাগাহ, আল মুনজিদ, মিসবাহুল লোগাত, আল কামুছুল জাদীদ, আল কামুছুল ইসত্বলাহী, আল মুজামুল ওয়াসিত, বয়ানুল লিসান, আল মুফীদ, লোগাতে হিরা, লোগাতে সাঈদী, গিয়াসুল লোগাত, লোগাতে কেশওয়ারী, কারীমুল লোগাত, ফারহাঙ্গে আমিরাহ, ফিরোজুল লোগাত, উর্দু জাদীদ, আরবী বাংলা অভিধান, বাংলা ও উর্দু অভিধান, কাওসার ইত্যাদি।)
আবা-৩১

0 Comments: