একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৮০

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইসমে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদুর রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 পরোপকার ও দানশীলতা-

মানুষ যে পরিমাণ দান করতে সক্ষম, তা করতে ত্রুটি করলে, সে ত্রটিকেই শরীয়ত কৃপণতা আখ্যা দেয়। অর্থাৎ, সক্ষম হয়েও দান করার মতো সম্পদ দান করতে যে ব্যক্তি কুণ্ঠিত, তাকেই কৃপণ নামে অভিহিত করা হয়। শরীয়তের নির্দেশ, বিবেকের ফায়ছালা এবং মানবতাবোধে যতোটুকু দান-খয়রাত করা ও যাকাত দেয়া অত্যাবশ্যক, ততোটুকু করতে পারলে ধর্ম বিধানে সে দানশীল-উনার পর্যায়ে পড়ে। বিবেক ও মানবতাবোধের সংমিশ্রণে শরীয়তের নির্দেশ পালনের স্বাভাবিকতায় সে ব্যক্তি দায়মুক্তি লাভ করে। সওয়াব ও আখিরাতের কল্যাণ লাভের মহৎ লক্ষ্যেই মানুষ শরীয়ত নির্দেশিত দান করতে উদ্বুদ্ধ হয়। তবে আখিরাতের কল্যাণ ও সওয়াব লাভের বশবর্তী না হয়ে কেবল মহান আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, মাশুকে মাওলা, ছাহিবে মাকামে মাহমুদ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি প্রগাঢ় মুহব্বতে আপন স্বার্থ ও সুবিধা ত্যাগে দান না করতে পারলে প্রকৃত দানশীলতার মাকাম অর্জিত হয় না।

গায়রুল্লাহ বিবর্জিত অনাবিল অন্তরে দানশীলতা এমন দুর্লভ গুণ অর্জন করা সাধারণের কাজ নয়। এখানে দানের পরিমাণগত বিষয়টি বিবেচ্য নয়। যাবিবেচ্য তা হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ সন্তুষ্টি লাভে গুণগত মান রক্ষায় অমলিন অন্তরের (ইসলাহপ্রাপ্ত অন্তর) উৎকর্ষতা। কোন সায়েলকে বঞ্চিত না করে তার হাতে অর্থ-সম্পদ তুলে দিলে এবং জাগতিক প্রয়োজনে ব্যক্তি ও ব্যষ্টির কল্যাণে সম্পদ ব্যয় করলেই দানশীল হওয়া যায় না। কাজটি অত্যন্ত কঠিন। অন্তর পরিপূর্ণ ইসলাহ না হওয়া পর্যন্ত যাকাত ও দান-খয়রাতের রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। তবে জগৎ-সংসার পরিপালন ব্যবস্থায় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের রিয়াযুক্ত (যাদের অন্তর মলিন) দান-খয়রাত ও যাকাত প্রদানে অভাবী মানুষের দুঃখ মোচন হয়। এ ধরণের ধন-সম্পদ আদান-প্রদানে দান গ্রহণকারীর কোন দোষ হয়না। কারণ, সাধারণত দাতার রিয়ার সঙ্গে সে আদৌ সংশ্লিষ্ট থাকে না। মহান আল্লাহ পাক উনার পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি বিধানে এমন দানশীলতার গুণে গুণান্বিত ছিলেন মাদারজাদ ওলী, কুতুবুয যামান, আশিকে নবী, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম।

দান-খয়রাতের জন্য সঙ্গতি থাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ, ধন-সম্পদ অধিকারে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ধন-সম্পদ সকলের জন্যই কল্যাণকর নয়। দুনিয়ার ধন-সম্পদ কেবলমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবুব ওলীগণ উনাদের জন্যই উৎকৃষ্ট। কারণ, উনারা সম্যকরূপে অবহিত যে, মহান আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য যতোটুকু প্রয়োজন, তার বেশি সম্পদ হলাহল তুল্য। অভাব মোচনের চেয়ে অতি বেশি সম্পদের মধ্যে বিনাশ নিহিত থাকে। সম্পদের প্রতি মোহগ্রস্ততার অপকার সম্পর্কে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন- تيس عبد الدينار والدرهم. অর্থ- স্বর্ণ ও রৌপ্যের গোলামের জন্য আফসুস।অর্থাৎ ধন-সম্পদের গোলাম ঊর্ধ্বপদ ও অধোমস্তক বিশিষ্ট হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি যে বিষয়ের প্রতি আসক্ত, সে ব্যক্তি সে বিষয়েরই গোলাম নামে অভিহিত হয়।

অপরদিকে অভাব মোচনের কম পরিমাণ সম্পদ থেকে কুফরীর গন্ধ বের হয়। তীব্র অভাব-অনটনের ভয়াবহতা সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

كاد الفقر ان يكون كفرا.

অর্থ: অত্যধিক অসচ্ছলতা কুফরীর উপক্রম ঘটায়।” (ত্ববারানী) উম্মতের সতর্কতার জন্য তাই ইহকাল ও পরকালের যাবতীয় সম্পদ ও প্রাচুর্য (নিয়ামত) বণ্টনের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে ইখতিয়ার (মালিকানা) প্রাপ্ত মাশুকে মাওলা, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এভাবে সবিনয় প্রার্থনা জানিয়েছেন- হে পরওয়ারদিগার মহান আল্লাহ পাক! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তান-সন্ততিকে অভাব মোচনের পরিমাণ জীবিকা দান করুন।

দুনিয়া এবং দুনিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় কর্মের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবুব ওলীগণ পরিপূর্ণরূপে নিস্পৃহ। সম্পদের মোহ উনাদের অন্তরকে আচ্ছন্ন করে না এবং সম্পদহীনতাও উনাদের ধৈর্যহানি ঘটায় না, পেরেশান করে না। এ কঠিন দুটি অবস্থাকেই ওলীআল্লাহগণ উনারা তুচ্ছ জ্ঞান করেন এবং দৃঢ়তার সঙ্গে পথ অতিক্রম করেন। যেমন বিপুল বিত্ত ও বৈভব অধিকারে থাকা সত্ত্বেও মাদারজাদ ওলী, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম তিনি সম্পদের প্রতি ছিলেন বিমুখ। (অসমাপ্ত)

আবা-১৪০

0 Comments: