একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৭৯

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুযযামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

পরোপকার ও দানশীলতা-

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছেঃ সর্বদা দানশীল মানুষের অপরাধ মার্জনা করো। কারণ, দানশীল মানুষের কোন প্রকার দুঃখকষ্ট হলে আল্লাহ পাক উনাদের সহায় হয়ে থাকেন।

উপরোক্ত হাদীছ শরীফে উল্লিখিত দানশীলতা ও সৎ স্বভাবের পরিপূর্ণ মিছদাক ছিলেন ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ দাওয়াত, আফজালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশ্ফ ও কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছাহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, আশিকে নবী, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম। অতুলনীয় কোমলান্তকরণময়তার জন্য উনার ছিল আকাশচুম্বী প্রসিদ্ধি। যে সব কারণে তিনি আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার একান্ত মাহবুব হয়েছেন, দানশীলতা উনার অন্যতম। এই কালজয়ী ওলীআল্লাহ মুবারক স্বভাব-সহজতায় বদান্যতা, অপরের প্রতি ইহসান ও সহানুভূতি প্রদর্শনে এতো উঁচু মাকামে উপনীত ছিলেন, এসব দেখে শত্রুপক্ষেরও বাকরুদ্ধ হয়েছে এবং তারা মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে।

অন্যের অভাব ও প্রয়োজনকে নিজের অভাব ও প্রয়োজনের উপর প্রাধান্য দিতে তিনি ছিলেন অকুণ্ঠচিত্ত। নিজের প্রয়োজন অপূর্ণ রেখে তিনি অপরের প্রয়োজন পূরণে তৎপর থেকেছেন আজীবন। এটি উনার বিরল গুণ। আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব ওলী ছাড়া অন্য কারো পক্ষে এ গুণ বৈশিষ্ট্যের মাকাম অর্জনের আশা কেবল দুরাশা মাত্র। কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছেঃ 

ويؤثرون على النفسهم ولوكان بهم خصاصة.

অর্থঃ- নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও তারা অন্যের অভাবকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।” (সূরা হাশর/৯)

উপরোক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লাহ পাক-উনার প্রিয়তম হাবীব, আকরামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন দ্রব্য পেয়ে যায়, যাতার বাঞ্ছিত, অতঃপর আপন আকাঙ্খা অপূর্ণ রেখে বাঞ্ছিত দ্রব্যটি সন্তুষ্ট চিত্তে সে অপরের প্রয়োজনে দান করে ফেলে, তবে আল্লাহ পাক তার যাবতীয় পাপ মার্জনা করেন।দানশীলতার প্রশংসায় হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ রয়েছেঃ

 

السخى حبيب الله ولو كان فاسقا البخيل عدو الله ولو كان عابدا.

অর্থঃ- দানশীল ব্যক্তি আল্লাহ পাক-উনার হাবীব (বন্ধু), যদিও সে ফাসিক হয় এবং কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ পাক-উনার শত্রু, যদিও সে ইবাদত গুজার বান্দা হয়।” (লুগাতুল হাদীছ) দানশীলতার অপরিসীম ফযীলত সত্ত্বেও মাহবুব ওলীআল্লাহগণ ব্যতীত অন্যরা সমর্থবান হলেও অন্তরের কদর্যতায় লোভ, লালসা ও প্রবৃত্তি চরিতার্থে তারা কৃপণতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

কার্পণ্যের মূল কারণ হলো, ধন-সম্পদের প্রতি প্রবল আকর্ষণ। মানুষ যে বিষয় মুহব্বত করে সে লক্ষ্যেই ছুটে চলে। এ চলায় তার বিরাম থাকে না। প্রাচুর্য ও বৈভবের মোহ মানুষের মজ্জাগত। কবরে না যাওয়া পর্যন্ত উনার মোহমুক্তি ঘটে না। ইবলিসের কুমন্ত্রণায় দারিদ্র্যের দুর্ভাবনায় মানুষ ক্লিষ্ট হয়। এ মর্মে আল্লাহ পাক বলেনঃ

الشيطن يعدكم الفقر ويامركم بالفحشاء.

অর্থঃ- শয়তান তোমাদেরকে অভাব-অনটনের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতায় উৎসাহ দেয়।” (সূরা বাক্বারা/২৬৮)

নশ্বর জীবনে যতোটুকু প্রয়োজন, তার বেশী প্রাপ্তির লালসাই শরীয়তের অমোঘ বিধান লঙ্ঘনের ক্ষেত্র তৈরী করে এবং কার্পণ্যের পথ প্রশস্ত করে। দুনিয়ার দুর্বার আসক্তিতে যার যতো বেশী দূরাশা ও দুর্লোভ, স্বভাবগত কারণে সে ততো বেশী কৃপণ। আখিরাতের প্রতি অমনোযোগিতা এবং অন্তরের সংকীর্ণতায় প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণে নিশিদিন সে ব্যাপৃত থাকে।

অসমাপ্ত

আবা-১৩৯

0 Comments: