একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৭৮

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে- একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

সুন্নত মুবারক অনুশীলনসহ ইসলাম ধর্ম  পালনে মানুষকে অভ্যস্ত করে  তোলায় নিরলস কোশেশ সুন্নত পরিপন্থী কোন কথা, আমল, আচরণ ও অনুভবের সঙ্গে তিনি কখনো আপোষ করেননি। আমরণ তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সুন্নতের উপর দায়িম-ক্বায়িম থেকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাপালন করেছেন। দৃঢ়চেতা, তেজোদ্দীপ্ত, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যে অনুপম, সদাচার ও মধুর বাক্যালাপে অতুলনীয়, একনিষ্ঠ আশিকে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব এই মাদারজাদ ওলীর সান্নিধ্যে এসে মানুষ দ্বীনের ছহীহ সমঝ্ লাভে সক্ষম হয়েছে এবং সুন্নত পালনে অভ্যস্ত হয়েছে। সূক্ষ্মদর্শী এই মহান ওলীআল্লাহ মানুষের অভ্যন্তরীণ ত্রুটি আবিষ্কার করেছেন অবলীলায় এবং তানিরবধি সংশোধন (ইছলাহ্) করেছেন সযত্নে প্রয়াসে।

 মাহবুব ওলীআল্লাহগণের মতো তিনিও জানতেন, নির্জন সময়ই প্রকৃত সময় এবং বর্তমান সময়ই মূল্যবান সময়। মূল্যবান সময় ব্যয়ে মহামূল্যবান নিয়ামত (আল্লাহ পাক-উনার আরো নিগূঢ় নৈকট্য) হাছিলের লক্ষ্যে অন্যসব ওলীআল্লাহ-উনার মতো তিনিও নিরন্তর নিমগ্ন রয়েছেন। স্বভাব গুণে আপন ঘরে পরবাস”-এ বিশ্বাসী ও অভ্যস্ত হয়েও মানুষের দুঃখ-দুর্দশা প্রচলিত বদ্ রুসম, বিশুদ্ধ ঈমান, আক্বীদা, ইল্ম, আমল-উনার প্রতি অনীহা এবং বিদ্য়াত-উনার প্রচার-প্রসার দেখে তিনি দুঃখ পেয়েছেন। এসব অনাচার নির্মূলে তিনি আজীবন জিহাদে নিয়োজিত থেকেছেন।

 এ জিহাদ তিনি করেছেন কথায়, কাজে, আমলে এবং প্রয়োজনে কখনো জামালী অথবা জালালী ব্যঞ্জনায়। উনার প্রত্যয়ী ব্যক্তিত্বের প্রভা অগণিত মানুষের অন্তর স্পর্শ করেছে। উনার মুবারক ছোহ্বতে মানুষ ইসলাম ধর্ম পালনে মনোযোগী ও অভ্যস্ত হয়েছে। যে অনন্য বৈশিষ্ট্যগুণে তিনি মহিমান্বিত হয়েছেন তাহলো সুন্নতের প্রতি মুহব্বত, দায়িমীভাবে সুন্নত পালন এবং এতে মানুষের মন ও মননকে আন্দোলিত করে তাদেরকে আমলে নিয়োজিত করে তোলা। সমস্যা ও সংকটে তিনি বার বার রুজু হয়েছেন খাজিনাতুর রহমত, রউফুর রহীম, রহমতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আবেহায়াতের দিকে। অর্থাৎ ওমা র্আসালনাকা ইল্লা রহমাতাল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আবেহায়াতের সঙ্গে তিনি অনুক্ষণ সম্পৃক্ত রয়েছেন।

 মুবারক সম্পর্কের নিরবচ্ছিন্নতায় অনবরত নিয়ামত সমৃদ্ধ হয়ে বিশুদ্ধ ঈমান ও আক্বীদায় ইসলাম ধর্ম পালনে উদ্বুদ্ধ করণে তিনি সমাজ-মানুষের শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।  পরোপকার ও দানশীলতা দানশীলতার ফযীলত অপরিসীম। আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে দানশীলতার প্রশংসা করেছেন এবং কার্পণ্যের নিন্দা করেছেন। দানশীলতা এমন এক মহৎ গুণ, যা মানুষকে আল্লাহ পাক-উনার নৈকট্য সোপানে উপনীত করে। পক্ষান্তরে কার্পণ্য এমন এক মন্দ দোষ, যামানুষকে আল্লাহ পাক-উনার রোষানলে উপনীত করে এবং কার্পণ্যের চর্চাকারী পরিণতিতে জাহান্নামের অবধারিত বাসিন্দা হয়। কার্পণ্যের নিন্দায় আল্লাহ পাক বলেনঃ

 ومن يبخل فانما يبخل عن نفسه.

 অর্থঃ- যে ব্যক্তি কৃপণতা করে, সে নিজের নফসের সঙ্গেই কৃপণতা করে।” (সূরা মুহম্মদ/৩৮)  দানশীলতার প্রশংসায় আল্লাহ পাক আরো বলেনঃ

 ومن يوق شح نفسه فاولئك هم المفلحون.

 অর্থঃ- যারা কৃপণ স্বভাব হতে মুক্ত রয়েছে, তারাই কামিয়াবী লাভ করবে।সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ পাক দানশীল ও সৎস্বভাব বিশিষ্ট মানুষ ভিন্ন অন্য কাকেও ওলী মনোনীত করেননি।তিনি আরো বলেনঃ মানুষের দুটি স্বভাবকে আল্লাহ পাক পছন্দ করেন। তার একটি সাখাওয়াত, অর্থাৎ দানশীলতা এবং দ্বিতীয়টি সৎস্বভাব। অনুরূপভাবে মানুষের দুটি দোষ আল্লাহ তায়ালা খুবই ঘৃণা করেন। তার একটি বখিলী, অর্থাৎ কৃপণতা এবং অন্যটি মন্দ স্বভাব।  (অসমাপ্ত)

আবা-১৩৮

0 Comments: