একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১৭

 


একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার খিলাফত লাভ-

 মাদারজাদ ওলী হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে উনার প্রাণের আকাঁ, মুর্শীদ হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার মধ্যস্থতায় আল্লাহ্ পাক অতি অল্প সময়ে কামিয়াবী দান করেন। তিনি দশ বছর মহান মুর্শিদের মুবারক সোহ্বত এখ্তিয়ার করেন। মুর্শিদ উনার এই যোগ্য মুরীদের প্রতি পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট ছিলেন এবং লব্ধ নিয়ামত সোপর্দ করার জন্য একজন উপযুক্ত পাত্র হিসেবে উনাকে খুঁজে পেয়েছিলেন। এ কারণে তিনি উনার অনেক পুরাতন ও অভিজ্ঞ মুরীদ থাকা সত্ত্বেও খাছ নিয়ামত দানের প্রশ্নে প্রিয়তম মুরীদ হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহিকেই বেছে নিয়েছিলেন এবং আল্লাহ্ পাক-উনার আদেশে বাইয়াত হবার কিছুদিনের মধ্যেই উনাকে খিলাফত দান করেছিলেন।    

 হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার ইন্তিকাল-

ইতোমধ্যে আল্লাহ্ পাক-উনার মাহবুব ওলী হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বার্ধ্যক্যে উপনীত হয়েছেন। সকল কর্মচাঞ্চল্য এবং আরোপিত দায়িত্ব পালনের রেশ জীবন সায়াহ্নে এসে পুঞ্জীভূত হয়েছে। আল্লাহ্ পাক-উনার মনোনীত দ্বীন পালনে মানুষকে অভ্যস্ত করে তোলা এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সুন্নত জিন্দা করণে বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও অভাবিত সাফল্যের আনন্দ-বেদনা ঘেরা অনুপম স্মৃতিরা উনার ঝাপসা দৃষ্টির সামনে এসে ভিড় করেছে। মনে হয় কতো কাজ বাকী রয়ে গেল। দায়িত্ব পালনের অনাবিলতায় আল্লাহ্ পাক-উনার বিবেচনায় কোন খাদ ধরা পড়েছে কিনা, সে দুর্ভাবনা মনকে অনিবার আন্দোলিত করে যায়। জীবন কতো ছোট! সাধ ও সাধ্যের গরমিল মনকে বেদনাক্লিষ্ট করে।  ওলী আল্লাহ্ গণের দায়িত্ব পালনের প্রকৃতি, পদ্ধতি, পরিধি ও পরিণতি মহান আল্লাহ্ পাক নির্ধারণ করে দিয়ে থাকেন। উদ্দিষ্ট কাজ শেষ হয়ে গেলেই জাগতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। কাজ ফুরিয়ে গেলে আপন অস্তিত্বেরও অবসান হয়। তখন বিদায়ের ঘন্টা বেজে উঠে। অর্পিত দায়িত্বের আঞ্জাম দান শেষে হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহিও জীবনের অন্তিম মূহুর্তে এসে দাঁড়িয়েছেন। এখন বিদায়ের পালা। আপন দেশে গিয়ে এখন কেবল রফিকে আলার সাথে মহামিলনের অধীর অপেক্ষা। উপস্থিত আপনজন, খলিফা এবং মুরীদগণকে হৃদয়ের পরম মমতা ও মুহব্বত মাখা নসীহতে শেষ বারের মত তিনি বলে যান নশ্বর দুনিয়ার অসারতার কথা, আল্লাহ্ পাক-উনার আহ্কাম পালন ও তাতে ইস্তিকামত থাকার কথা এবং ধ্যান, ধারণা ও অনুশীলনসহ সকল কাজে অনুক্ষণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আবেহায়াতের কাছেই ফিরে যাবার কথা। কামিয়াবীর সোপান ও যোগ্যতার শ্রেণীক্রমানুসারে সকল মুরীদকেই তিনি দান করে যান উনার জীবনের আয়াসসাধ্য অর্জন, অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত নিয়ামতের হিস্যা। হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে তিনি দিয়ে যান পুজ্ঞীভূত নিয়ামতের নির্যাস। অবশেষে হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইন্তিকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)

 মুর্শিদ আলাইহিস সালাম উনার ইন্তিকালে বিরহ কাতর হযরত

সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-

 যে মুর্শিদের মুবারক সন্নিধানে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার হৃদয়ের গভীরে লালিত ইচ্ছারা পল্লবিত হয়েছে, যাঁর মধ্যস্থতায় পরম প্রত্যাশিত আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত ও মারিফাত এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টি হাছিল হয়েছে, তিনি বিদায় নিয়েছেন। জীবন-জগৎ এখন দুর্বিষহ। পৃথিবী আগের মতোই আছে। বদলে গেছে কেবল আগের ভালোলাগা। অন্তরে ঠাঁই নিয়েছে প্রিয়তম মুর্শিদের বিরহ যন্ত্রণা। মুর্শিদের ছোহবতে পেতে থাকা অনাবিল প্রশান্তিধারা কোথায় হারিয়ে গেছে!

        বিরহ কাতর মন ও পেরেশান মননে এখন শুধুই নিস্তরঙ্গ নিরবতা। এ নিথর নিরবতা উনাকে এনে দিয়েছে হৃদয়ের কাঙ্খিত নিবেদন ও একাগ্রতা। বিবেক, অনুভূতি, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির এটি এমন এক অনির্বচনীয় অবস্থা, যেখানে দুনিয়া ও আখিরাত একাকার হয়ে গেছে। হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার অন্তর মুবারকে এখন দুনিয়ার মোহ আর অবশিষ্ট নেই। (অসমাপ্ত)

আবা-৭৬

0 Comments: