মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা ও স্থানান্তরিত করা কাট্টা হারাম এবং কুফরী হওয়ার অকাট্য ফতওয়া ( পর্ব ১)



পিডিএফ লিংক -  https://drive.google.com/open?id=14Opfey_ftWL9iOZuNwNnVPDcqMw13N-x



কুল কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত অনন্তকালব্যাপী জারীকৃত মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ
উনার সুমহান সম্মানার্থে প্রকাশিত
         
بِسْمِ اللهِ الرَّحْـمٰنِ الرَّحِيْمِ
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَتَّخِذُوا الْمَسَاجِدَ طُرُقًا.
অর্থ: “হযরত ইবনে ‘উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক সমূহকে (ভেঙ্গে) রাস্তা হিসেবে গ্রহণ করো না।” (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ১০/৪৫৩, আল মু’জামুল আওসাত্ব ১/১৪, শরহু সুনানি ইবনে মাজাহ লিল মুগলত্বাই ১/১২৪৪)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ
সড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, কল-কারখানা নির্মাণ এবং সৌন্দর্যবর্ধনসহ কথিত জনকল্যাণের নামে দুনিয়াবী কোন অজুহাতে
ভাঙ্গা ও স্থানান্তরিত করা কাট্টা হারাম
এবং কুফরী হওয়ার অকাট্য ফতওয়া


গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ

প্রকাশনায় :
গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
৫/১, আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা-১২১৭
ফোন (পিএবিএক্স) : ৯৩৩৮৭৮৭, ৮৩৩৩৯২৭
মোবাইল : ০১৭১১-২৩৮৪৪৭, ০১৭১১-২৬৪৬৯৪, ০১৭১২-৬৪৮৪৫৩
ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৯৩৩৮৭৮৮
ওয়েবসাইট : uswatun-hasanah.net, al-ihsan.net

প্রকাশকাল :
পবিত্র জুমাদাল ঊলা শরীফ                           ১৪৪১ হিজরী সন
ছামিন                                         ১৩৮৭ শামসী সন

প্রাপ্তিস্থান :
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ (বিক্রয়কেন্দ্র)
৫/১, আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা-১২১৭
ফোন (পিএবিএক্স) : ৮৩১৪৮৪৮ (বর্ধিত ১৪১)
মোবাইল : ০১৭১০-৩২০৪১২, ০১৭১৭-২২৬৬৬৪

কম্পিউটার অলঙ্করণ :
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ (কম্পিউটার বিভাগ)
৫/১, আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা-১২১৭
ফোন (পিএবিএক্স) : ৮৩১৪৮৪৮ (বর্ধিত ২৪৪)
মোবাইল : ০১৭১২-৮৫৫৩৪৫

মুদ্রণে :
মুহম্মদিয়া বুক বাইন্ডিং অ্যান্ড প্রিন্টিং প্রেস
১৩/২, গোলাপবাগ, ঢাকা। ফোন : ৭৫৪৭৭৯৬
মোবাইল : ০১৭১১-১৭৮৬৮৪, ০১৮৩৪-৯৬২১৬৮


হাদিয়া : ......... টাকা






اَلْـمُؤَسِّسُ وَالْـمُشْرِفُ لِـمَرْكَزِ الْبَحْثِ مُـحَمَّدِيَّةٍ جَامِعَةٍ شَرِيْفٍ وَالْـمَجَلَّةِ الشَّهْرِيَّةِ اَلْبَيِّنَاتِ وَالْـجَرِيْدَةِ الْيَوْمِيَةِ اَلْاِحْسَانِ- خَلِيْفَةُ اللهِ، خَلِيْفَةُ رَسُوْلِ اللهِ، اِمَامُ الشَّرِيْعَةِ وَالطَّرِيْقَةِ، قُطُبُ الْعَالَـمِ، اَلْغَوْثُ الْاَعْظَمُ، سُلْطَانُ الْاَوْلِيَاءِ، مَـخْزَنُ الْـمَعْرِفَةِ، خَزِيْنَةُ الرَّحْـمَةِ، مُعِيْنُ الْـمِلَّةِ، لِسَانُ الْاُمَّةِ، تَاجُ الْـمُفَسِّرِيْنَ، رَئِيْسُ الْـمُحَدِّثِيْنَ، فَخْرُ الْفُقَهَاءِ، حَاكِمُ الْـحَدِيْثِ، حُجَّةُ الْاِسْلَامِ، سَيِّدُ الْـمُجْتَهِدِيْنَ، مُـحْىُ السُّنَّةِ، مَاحِىُ الْبِدْعَةِ، صَاحِبُ الْاِلْـهَامِ، رَسُوْلِ نُـمَا، سَيِّدُ الْاَوْلِيَاءِ، سُلْطَانُ الْعَارِفِيْنَ، اِمَامُ الصِّدِّيْقِيْنَ، اِمَامُ الْاَئِـمَّةِ، اَلْـمُجَدِّدُ الْاَعْظَمُ، قَيُّوْمُ الزَّمَانِ، اَلْـجَبَّارِىُّ الْاَوَّلُ، اَلْقَوِىُّ الْاَوَّلُ، سُلْطَانُ النَّصِيْرِ، حَبِيْبُ اللهِ، جَامِعُ الْاَلْقَابِ، اَهْلُ بَيْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مَوْلَانَا
سَيِّدُنَا حَضْرَتْ اِمَامُ الْاُمَمِ عَلَيْهِ السَّلَامُ
اَلْـحَسَنِىُّ وَالْـحُسَيْنِىُّ وَالْقُرَيْشِىُّ وَالْـحَنَفِىُّ وَالْقَادِرِىُّ
وَالْچِشْتِىُّ وَالنَّقْشَبَنْدِىُّ وَالْـمُجَدِّدِىُّ وَالْـمُحَمَّدِىُّ
برَاجَارْبَاغْ شَرِيْفٌ، دَاكَا
গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ, দৈনিক আল ইহসান শরীফ এবং মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনাদের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক- খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরী‘য়াহ ওয়াত তরীক্বাহ, কুতুবুল ‘আলম, ¦উছুল আ’যম, সুলত্বানুল আউলিয়া, মাখযানুল মা’রিফাহ, খযীনাতুর রহমাহ, মুঈনুল মিল্লাহ, লিসানুল উম্মাহ, তাজুল মুফাসসিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ফখরুল ফুক্বাহা, হাকিমুল হাদীছ, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, মুহ্ইউস সুন্নাহ, মাহিউল বিদয়াহ, ¦াহিবুল ইলহাম, রসূলে নুমা, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, সুলত্বানুল ‘আরিফীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, ইমামুল আইম্মাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামি‘উল আল্ক্বাব, আহ্লু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা-
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম
আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাইশী ওয়াল হানাফী ওয়াল ক্বাদিরী
ওয়াল চিশতী ওয়ান নক্শবন্দী ওয়াল মুজাদ্দিদী ওয়াল মুহম্মদী
রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা।


সুমহান ক্বওল শরীফ
نَـحْمَدُهٗ وَنُصَلِّىْ وَنُسَلِّمُ عَلٰى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْـمِ وَاٰلِهٖ وَاَصْحَابِهٖ اَجْـمَعِيْنَ.
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আ’লামীন উনার জন্য এবং অসংখ্য পবিত্র দুরূদ শরীফ ও পবিত্র সালাম মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি।
¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّـمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনয়নকারী মু’মিন ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উনাদের রক্ষণাবেক্ষণ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)
এখানে দু’টি বিষয়। প্রথমত, মু’মিনের পরিচয় হচ্ছে তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উনাদের রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। দ্বিতীয়ত, যিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উনাদের রক্ষণাবেক্ষণ করবেন, তিনিই মু’মিন হিসেবে স্বীকৃত হবেন। অপর দিকে, যে বা যারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উনাদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে না, দুনিয়াবী বিভিন্ন অজুহাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উনাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে, ভাঙ্গা, স্থানান্তর বা কোন ধরণের ক্ষতি সাধনের অপচেষ্টা করবে তারা মু’মিন হিসেবে স্বীকৃত হবেনা। কেননা, ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاَنَّ الْمَسٰجِدَ لِلّٰهِ.
অর্থ: “আর নিশ্চয়ই সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য।” (পবিত্র সূরা জিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)
অর্থাৎ সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর মুবারক। সুবহানাল্লাহ! আর মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর মুবারকসহ উনার সাথে সংশ্লিষ্ট সবই উনার শি’য়ার বা নিদর্শন মুবারক। খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার শি’য়ার বা নিদর্শন মুবারক সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُـحِلُّوْا شَعَائِرَ اللهِ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! মহান আল্লাহ পাক উনার শি’য়ার বা নিদর্শন মুবারকসমূহ উনাদেরকে তোমরা অবমাননা করোনা।  (পবিত্র সূরা মায়িদাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حضرت عَيَّاشِ بْنِ اَبِي رَبِيعَةَ الْمَخْزُومِيِّ رضى الله تعالى عنه قَال قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَزَالُ هَذِهِ الْأُمَّةُ بِخَيْرٍ مَا عَظَّمُوا هَذِهِ الْحُرْمَةَ حَقَّ تَعْظِيمِهَا ، فَاِذَا ضَيَّعُوا ذَلِكَ هَلَكُوا
অর্থ: “হযরত আইয়াশ ইবনে আবী রবিয়াতাল মাখযূমী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিততিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এ উম্মত ততদিন পর্যন্ত খায়ের-বরকতে পরিপূর্ণ থাকবে, যতদিন পর্যন্ত তারা মহান আল্লাহ পাক উনার হুরমত বা নিদর্শন মুবারকসমূহ যথাযথভাবে তা’যীম-তাকরীম করবেযখন মহান আল্লাহ পাক উনার হুরমত বা নিদর্শন মুবারকসমূহ তারা অবমাননা করবে, তখন তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।” (ইবনে মাজাহ শরীফ)
অর্থাৎ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ যেহেতু মহান আল্লাহ পাক উনার শি’য়ার বা নিদর্শন মুবারক, সেহেতু মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উনাদের তা’যীম-তাকরীম এবং রক্ষণাবেক্ষণেই রয়েছে উম্মাহর কামিয়াবী। অপরদিকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উনাদের অবমাননা, উনাদের প্রতি অনীহা এবং দুনিয়াবী অজুহাতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ ভাঙ্গা, স্থানান্তরিত করা সবই উম্মাহর হালাকীর কারণ।
কাজেই, পুরুষ-মহিলা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব-কর্তব্য হলো, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উনাদের দিকে নজর রাখা, যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা। একইভাবে অত্যধিক গুরুত্বের সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, সৌন্দর্য্যবর্ধন করা, প্রশস্ত করাতাছাড়া মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বিরোধী সব ষড়যন্ত্র সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করা। কেউ যেন কোন ভাবেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উনাদের ক্ষতিসাধন বা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উনাদের অবমাননা করতে না পারে সে ব্যাপারে সদা তৎপর থাকা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উনাদের যথাযথ হক্ব আদায় করার মুবারক তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।



মুক্বাদ্দিমাতুল কিতাব
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَاَنَّ الْمَسٰجِدَ لِلّٰهِ.
অর্থ: “আর নিশ্চয়ই সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য।” (পবিত্র সূরা জিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)
অর্থাৎ সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلْـمَسْجِدُ بَيْتُ اللهِ وَالْـمَدْرَسَةُ بَيْـتِـىْ.
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক আর সম্মানিত ও পবিত্র মাদ্রাসা মুবারক আমার সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর মুবারক। যা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার শি’য়ার বা নিদর্শন মুবারক উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তাই সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করা, সার্বিকভাবে হিফাজত করা ও হিফাযত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয। আর এর বিপরীতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা, মানহানী করা ও করার সহযোগীতা করা সবই কাট্টা কুফরী ও হারাম এবং চির জাহান্নামী হওয়ার কারণ। না‘ঊযুবিল্লাহ!
তাই, মুসলিম উম্মাহ যেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ ও সার্বিকভাবে হিফাজত করে নিজেদের ঈমান-আমল রক্ষা করতে পারে, সে জন্য ইতিমধ্যে আমরা “সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করা ফরয” এই শিরোনামে একখানা কিতাব প্রকাশ করেছি।
বর্তমান সময়ে সরকারী-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ছলে-বলে-কৌশলে সড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, কল-কারখানা নির্মাণ এবং সৌন্দর্য বর্ধণসহ দুনিয়াবী বিভিন্ন অযুহাতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা ও স্থানান্তরিত করার ষড়যন্ত্র করছে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিরোধী এ কাজের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে এগিয়ে আসা মুসলমানদের বিভিন্ন প্রশ্ন আমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছে। তাই, পবিত্র দ্বীন ইসলাম এবং মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তম স্বার্থে নতুন আঙ্গিকে আরো দলীলসমৃদ্ধভাবে আমাদের এবারের বিশেষ আয়োজন “সড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, কল-কারখানা নির্মাণ এবং সৌন্দর্য্যবর্ধনসহ দুনিয়াবী কোন অজুহাতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা ও স্থানান্তরিত করা কাট্টা হারাম এবং কুফরী হওয়ার অকাট্য ফতওয়া” প্রকাশিত হলো।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের এ প্রচেষ্টাকে কবুল করুন। আমীন।


সুওয়াল-১
মসজিদ হওয়ার শর্ত কি?
জাওয়াব: কোন জায়গা বা সম্পত্তি মসজিদের জন্য ওয়াক্ফ করার পর মসজিদ কর্তৃপক্ষ সেই জায়গাতে নামায আদায়ের জন্য ঘর নির্মাণ করে আযান-ইক্বামত দিয়ে নামায আদায় করে ফেললেই তা মসজিদ হিসেবে গণ্য হয়ে যায়।
যেমন এ প্রসঙ্গে ফতওয়ায়ে আলমগীরী ২য় খ- ৪৫৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে-
واما الصلوة فلانه لابد من التسليم عند ابى حنيفة ومـحمد رحمهما الله هكذا فى البحر الرائق. والتسليم فى الـمسجد ان تصلى فيه الـجماعة باذنه ويشترط مع ذالك ان تكون الصلوة باذان واقامة جهرا الا سرا كذا فى الـمحيط والكفاية. ولو جعل رجلا واحدا مؤذنا واماما فاذن واقام وصلى وحده صارا مسجدا بالاتفاق كذا فى الكفاية وفتح القدير.
অর্থ: হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে, মসজিদকে নামায আদায়ের জন্য নিজ মালিকানা হতে হস্তান্তর করা অপরিহার্য। (বাহরুর রায়িক) আর দানকারীর অনুমতিক্রমে জামায়াতের সাথে নামায আদায় করার দ্বারা মসজিদের হস্তান্তর সাব্যস্ত হয়। সেই সাথে আরো শর্ত হচ্ছে যে, নামায আদায় হতে হবে আযান ও ইক্বামতসহ এবং তা প্রকাশ্যে হতে হবে। অপ্রকাশ্যে বা গোপনে নয়। (আল মুহীত, আল কিফায়া) যদি একই ব্যক্তিকে ইমাম ও মুয়াযযিন নিযুক্ত করে এবং সে ব্যক্তি একাকী নামায আদায় করে তবুও সর্বসম্মতিক্রমে মসজিদ হয়ে যাবে। (আল কিফায়া, ফতহুল ক্বাদীর)
আর ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তিতে ওয়াক্ফকারীর মালিকানা বহাল থাকে না। তা যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী মালিকানায় পরিণত হয়। যেমন এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব ফতওয়ায়ে আলমগীরী কিতাবের ২য় খ- ৩৫২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে-
اما حكمه فعندهما زوال الـعين عن ملكه الى الله تعالى.
অর্থ: “হযরত ছাহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের নিকট ওয়াক্ফের হুকুম হলো এই যে, ওয়াক্ফকৃত সম্পদের স্বত্ত্ব বা মালিকানা ওয়াক্ফকারীর অধিকারমুক্ত হয়ে তা মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী মালিকানায় পরিণত হয়।”
অর্থাৎ, মসজিদের জন্য ওয়াক্ফকৃত জায়গায় মসজিদ কর্তৃপক্ষ নামায আদায়ের জন্য ঘর নির্মাণ করে আযান দিয়ে নামায আদায় করার কারণে তা মসজিদ হিসেবে গণ্য হয়ে যায় এবং উক্ত মসজিদ উনার মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি হয়ে যান।
দলীলসমূহ : (১) কুদুরী, (২) আলমগীরী, (৩) দুররুল মুখতার, (৪) রদ্দুল মুহতার, (৫) শামী, (৬) তাহতাবী, (৭) আইনুল হিদায়া, (৮) বাহরুর রায়িক, (৯) ক্বাযীখান, (১০) কিফায়া, (১১) ফতওহুল ক্বাদীর ইত্যাদি।


সুওয়াল-২
খাস জায়গায় লিজ নিয়ে ৪০-৫০ বছর আগে জনগণের সুবিধার্থে মসজিদ বানানো হয়েছে। এখন সেই মসজিদ কি সরকার ভেঙ্গে ফেলতে পারবে?
জাওয়াব: খাস বা সরকারী জমি বলে কোন জমি নেই, সব জমির হাক্বিক্বতে মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং দেশ হিসেবে জনগণ মালিক। সরকারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য, তাকে জমির মালিকানা দেয়া হয়নি। তাই সরকারী জমি বলে কোন জমি নেই। অতএব, দেশের খাস জমি থাকলে তার মালিক জনগণই হবেন। এখন জনগণ যদি জনগণের প্রয়োজনে তাদের মালিকানাভূক্ত জমিতে মসজিদ বানায়, তবে সেই মসজিদ উনার হুকুম অন্য মসজিদ উনার মতোই হবে। সরকার সেই মসজিদে হাত দিতে পারবে না। তবে ব্যক্তি মালিকানার কোন জমিতে অনুমতি ছাড়া মসজিদ বানানো যাবে না।
জনগণের সুবিধার্থে খাস জায়গায় যে মসজিদ তৈরি করা হয়েছে এবং তাতে আযান দিয়ে নামায পড়া হয়েছে উক্ত মসজিদও ওয়াক্ফকৃত মসজিদের ন্যায় হুকুম রাখে। কেননা জনগণই হচ্ছেন খাস জায়গার মালিক। এখন জনগণই যখন মসজিদের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করে তাতে মসজিদের ঘর নির্মাণ করে সেখানে আযান দিয়ে নামায আদায় করেছেন তখন তা মসজিদ হিসেবে গণ্য হয়ে গেছে এবং উক্ত মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার মালিকানাধীন হয়ে গেছে।
আর খাস জায়গার মালিক সরকার নয়। তাই সরকারের পক্ষে খাস জায়গায় নির্মিত মসজিদ ভাঙ্গাও জায়িয নেই।
 এখন আর কেউ উক্ত মসজিদ ভাংতে পারবে না। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর মসজিদ ভাঙ্গার অধিকার কারো নেই।
কাজেই, সরকার হোক, জনগণ হোক সকলের দায়িত্ব হচ্ছে খাস জায়গায় নির্মিত মসজিদের তত্ত্বাবধান করা। বিশেষ করে সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে খাস জায়গাগুলো সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, যমীনের বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান হচ্ছে মসজিদ।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
هو الـمسجد وهو خير الاماكن وفى رواية خير الاماكن الا وهى الـمساجد
অর্থ : “সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান হচ্ছে মসজিদসমূহ।” (আরশীফু মুনতাদাল উলূকাহ, ইত্যাদি)
তাই যে সমস্ত খাস জায়গায় মসজিদ হয়েছে বা রয়েছে তা সর্বোত্তমভাবেই ব্যবহার হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে মুসলমান দেশের সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে মসজিদের রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ, পানির ব্যবস্থা ইত্যাদির সুবন্দোবস্ত করতঃ তত্ত্বাবধান করা।
কারণ এ দেশের সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত এবং জনগণের কল্যাণের জন্য গঠিত। জনগণের সুযোগ-সুবিধা দেয়া, জনগণের হক্ব বা অধিকার পূরণের জন্যেই সরকার ওয়াদাবদ্ধ।
কাজেই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, জনগণের দ্বীনি অধিকার পূরণের স্বার্থেই খাস জায়গায় তৈরিকৃত মসজিদ বহাল রাখার পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকতা করা।
আর সরকার জালিম কিংবা কাফির হলে তার মাসয়ালা আলাদা।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত কালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ اَنْ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهوَسَعَى فِي خَرَابِهَا اُولٰئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ اَنْ يَدْخُلُوهَا اِلَّا خَائِفِينَ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ.
অর্থ: “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে? যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত মসজিদসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরাণ করতে চেষ্টা করে। তাদের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অর্থাৎ খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা ব্যতীত মসজিদসমূহে প্রবেশ করা জায়িয নেই। তাদের জন্য রয়েছে ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১১৪)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ‘বড় যালিম’ উনার ব্যাখ্যায় বড় কাফির বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
দলীলসমূহ: (১) তাফসীরে আহ্কামুল কুরআন- লিল জাস্সাস, (২) তাফসীরে কুরতুবী, (৩) তাফসীরে বায়যাবী, (৪) তাফসীরে রূহুল মায়ানী, (৫) তাফসীরে খাযিন, (৬) তাফসীরে ইবনে কাছীর, (৭) তাফসীরে বাগবী, (৮) তাফসীরে মাদারিক, (৯) তাফসীরে ফতহুল ক্বাদীর, (১০) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (১১) তাফসীরে মাযহারী, (১২) তাফসীরে কবীর, (১৩) তাফসীরে দুররে মনছূর, (১৪) তাফসীরে তাবারী, (১৫) মায়ালিমুত তানযীল, (১৬) তাফসীরে আবিস সউদ (১৭) মাআরিফুল কুরআন (১৮) কুদুরী, (১৯) আলমগীরী, (২০) দুররুল মুখতার, (২১) রদ্দুল মুহতার, (২২) শামী, (২৩) তাহতাবী, (২৪) আইনুল হিদায়া, (২৫) বাহরুর রায়িক, (২৬) ক্বাযীখান, (২৭) কিফায়া, (২৮) ফতওহুল ক্বাদীর ইত্যাদি।

সুওয়াল-৩
মসজিদের মালিক কে? মসজিদ ভাঙতে হলে কার অনুমতি লাগবে? কার অনুমতি শরীয়তে গ্রহণযোগ্য?

জাওয়াব: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার একমাত্র মালিক হচ্ছেন খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি।
 যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেÑ
وَاَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلّٰهِ
অর্থ: আর নিশ্চয়ই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার । ( পবিত্র সূরা জ্বিন শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ- ১৮)
অর্থাৎ সমস্ত মসজিদের মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلْـمَسْجِدُ بَيْتُ اللهِ
অর্থ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর। সুবহানাল্লাহ!
বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব “ফতহুল ক্বাদীর” এর ৫ম খ-ের ৪২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَالْـخُرُوْجُ عَنْ مِلْكِهِ وَقَوْلُهٗ كَالْـمَسْجِدِ نَظِيْرٌ مَا خَرَجَ عَنِ الْـمِلْكِ بِالْاِجْمَاعِ.
অর্থ: “ওয়াক্ফকৃত সম্পদ ওয়াক্ফকারীর মালিকানা থেকে বের হয়ে যাবে। যেমন মসজিদ ওয়াক্ফ করলে ওয়াক্ফকারীর মালিকানা বের হয়ে যাওয়ার নজীর রয়েছে। যা সকল উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে।” অর্থাৎ মসজিদ ওয়াক্ফ করলে তা ওয়াক্ফকারীর মালিকানা থেকে বের হয়ে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মালিকানায় চলে যাবে তথা উক্ত মসজিদ-এর মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই হয়ে যান।”
হেদায়া মা’য়াদ দেরায়া” কিতাবের ২য় খ-ের ৬৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَعِنْدَهُمَا حَبْسُ الْعَيْنِ عَلٰى حُكْمِ مِلْكِ اللهِ تَعَالٰى فَيَزُوْلُ مِلْكُ الوَاقِفِ عَنْهٗ إِلَى اللهِ تَعَالٰى عَلٰى وَجْهٍ تَعُوْدُ مَـنْفَعَتُهٗ إِلَى الْعِبَادِ فَيَلْزَمُ وَلَايُبَاعُ وَلَايُوْهَبُ وَلَايُوْرَثُ ... لَـهُمَا قَوْلُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ حِيْنَ اَرَادَ اَنْ يَّتَصَدَّقَ بِاَرْضٍ لَهُ تُدْعَى ثَـمغ تَصَدَّقْ بِاَصْلِهَا لَايُبَاعُ وَلَايُوْرَثُ وَلَايُوْهَبُ
وَلَاِنَّ الـحَاجَةَ مَاسَّةٌ اِلَى أَنْ يَلْزَمَ الْوَقْفُ مِنْهُ لِيَصِلَ ثَوَابُهٗ اِلَيْهِ عَلَى الدَّوَامِ وَقَدْ أَمْكَنَ دَفْعُ حَاجَتِهٖ بِاسْقَاطِ الـمِلْكِ وَجَعَلَهُ لِلّٰهِ تَعَالٰى اِذْ لَهُ نَظِيْرٌ فِى الشَّرْعِ وَهُوَ الْـمَسْجِدُ فَيُجْعَلْ كَذَلِكَ.
অর্থ: “সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার ইমাম, হযরত আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে কোন মাল-সম্পদ বা জায়গাকে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার মালিকানার বিধানের ভিত্তিতে আবদ্ধ করার নামই ওয়াক্ফ। আর ওয়াক্্ফ হওয়া মাত্রই ওয়াক্ফকৃত স¤পদ থেকে ওয়াক্ফকারীর মালিকানা রহিত হয়ে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মালিকানায় এমনভাবে চলে য়ায় যে, যা আর ক্বিয়ামত পর্যন্ত ফিরে আসবেনা। আর উক্ত ওয়াক্ফকৃত সম্পদের মুনাফা বান্দাদের দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়। সুতরাং তার মালিকানা মহান আল্লাহ্্ পাক উনার হয়ে যায়। অতএব তা বিক্রি করা যাবে না, হিবা করা যাবে না এবং মীরাছ রূপে বণ্টন করাও যাবে না।... হযরত ছহেবাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের দলীল হলো এই যে, একদা ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যখন উনার মালিকানাধীন খায়বরের ‘ছামাগ’ নামক জমিটি ছদকা করতে ইচ্ছাপোষণ করলেন, তখন নূরে মুজাস্্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বলেছিলেন যে, “আপনি মূল জমিটিকে এমনভাবে ছদক্বা করুন, যা কখনোই বিক্রি করা যাবে না, মীরাছ রূপে বণ্টন করা যাবে না এবং হিবাও করা যাবে না। কেননা ওয়াক্্ফকারীর দিক থেকে ওয়াক্্ফ হাক্বীক্বীভাবে হওয়া উচিত। যাতে ওয়াক্ফ-এর ছওয়াব দায়েমীভাবে তার দিকে পৌঁছতে থাকে। আর ওয়াক্্ফকারীর মালিকানা রহিত করে মহান আল্লাহ্্ পাক উনার জন্য মালিকানা নির্দিষ্ট করে দেয়ার মাধ্যমে তার ওয়াক্্ফ পূর্ণ করা সম্ভব। কেননা সম্মানিত শরীয়তে এর নজীর রয়েছে। যেমন মসজিদ । সুতরাং এটাকেও সেরূপ করা হবে। অর্থাৎ খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার জন্য মসজিদ-এর মালিকানা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। যদিও তিনি সমস্ত কিছুর মালিক। সুতরাং মসজিদ-এর মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই।”
আল লুবাব লিল মায়দানী” কিতাবে উল্লেখ আছে-
(وَقَالَ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالٰى يَزُوْلُ مِلْكُهٗ عَنْهٗ) اَىِ الـمَسْجِدِ (بِقَوْلِهِ جَعَلْتُهٗ مَسْجِدًا) لِاَنَّ التَّسْلِيْمَ عِنْدَهٗ لَيْسَ بِشَرْطٍ لِاَنَّهٗ اِسْقَاطُ لْـمِلْكِهِ فَيَصِيْرُ خَالِصًا لِلّٰهِ تَعَالٰى بِسُقُوْطِ حَقِّهٖ.
অর্থ: “ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আমি জায়গাটিকে মসজিদ বানালাম” ওয়াক্ফকারীর এমন কথার দ্বারাই মসজিদ থেকে তার মালিকানা দূরীভূত হয়ে যাবে।
কেননা ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট ওয়াক্্ফকারীর মালিকানা দূরীভূত হওয়ার জন্য সোপর্দ করা শর্ত নয়, মালিকানা সাকেত হওয়াই যথেষ্ট। অতঃপর ওয়াক্্ফকারীর হক্ব সাক্বেত হওয়ার দ্বারাই উক্ত মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য খালেছভাবে হয়ে যাবে।” সুতরাং মসজিদ-এর মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই।”
আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ” কিতাবের ১ম খ-ের ৪৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَقَالَ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالٰى يَزُوْلُ مِلْكُهٗ بِقَوْلِهٖ جَعَلْتُهٗ مَسْجِدًا.
অর্থ: “হযরত ইমামআবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আমি জায়গাটিকে মসজিদ বানালাম” ওয়াক্ফকারীর এমন কথার দ্বারাই মসজিদ থেকে তার মালিকানা দূরীভূত হয়ে যাবে।” উক্ত মসজিদ-এর মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি।” (“আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ” কিতাবের ১ম খ-ের ৪৩৫ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় তা উল্লেখ আছে)
উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্য ভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মসজিদ উনার মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই অন্য কেহ নয়। আর মসজিদ উনার একচ্ছত্র মালিক যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি, তাই কোনো অবস্থাতেই অন্য কারো জন্য মসজিদ উনার জায়গা স্থানান্তরিত করা অর্থাৎ রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, নদী রক্ষণাবক্ষেণ বা সরকারী-বেসরকারী যে কোনো প্রয়োজনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা বা মসজিদ উনার জায়গা স্থানান্তরিত করা জায়িয নেই বরং তা সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।


সুওয়াল-৪
মসজিদ কমিটি, মুতাওয়াল্লী, মসজিদের খতীব ছাহেব ও মসজিদের ইমাম ছাহেব কি মসজিদ ভাঙ্গার অনুমতি দিতে পারে?
জাওয়াব : মসজিদ ভাঙ্গার অনুমতি দেয়ার অধিকার মাখলূক্বাতের কারো নেই। কারণ মসজিদ হচ্ছে যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর। এ পবিত্র ঘর উনার মালিক হচ্ছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই। কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার মালিকানাধীন পবিত্র ঘর মসজিদ সেটা সৃষ্টি তথা জিন ইনসানের পক্ষে কি করে ভাঙ্গা সম্ভব হতে পারে এবং ভাঙ্গার অনুমতি কি করে দিতে পারে? এসবই কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত এবং ঈমান-আমল বরবাদ হওয়ার ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। নাউযুবিল্লাহ!
প্রকৃতপক্ষে মসজিদের কমিটি, মুতাওয়াল্লী, মসজিদের খতীব ছাহেব ও মসজিদের ইমাম ছাহেব উনারা কেউই মসজিদের মালিক নন। উনারা কেবল মসজিদ সুষ্ঠভাবে ও শরীয়ত সম্মতভাবে পরিচালনাকারী মাত্র এবং উনাদেরকে মসজিদ পরিচালনা বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জিম্মাদার বানানো হয়েছে।
উনাদের এই জিম্মাদারী হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আমানত স্বরূপ। এই আমানত পালনে ত্রুটি করলে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অবশ্যই জবাবের সম্মুখীন হতে হবে এবং কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلَا كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ
অর্থ : “সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তার রক্ষিত বা দায়িত্বাধীন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি)
কাজেই, মসজিদ কিভাবে টিকে থাকবে, মসজিদের হুরমত বা সম্মান ও পবিত্রতা কিভাবে বজায় থাকবে সেই জিম্মাদারী পালন করাই হচ্ছে উক্ত ব্যক্তিবর্গ উনাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
কাজেই, উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ যেহেতু মসজিদের মালিক নন, তাই উনাদের কারোই মসজিদ ভাঙ্গার অনুমতি দেয়ার অধিকার নেই বা রাখেন না। কারণ প্রত্যেকেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার খাদিমের অন্তর্ভুক্ত।
এই জন্য এখনও পবিত্র কা’বা শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনাদের পরিচালনা ও তদারকীতে নিয়োজিত যারা রয়েছে তারাও খাদিম পরিচয় দিয়ে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে ও লিখে থাকে, খাদিমুল হারামাইনিশ শারীফাইন। তারা কেউই কিন্তু মালিকানা দাবী করে না।
কাজেই, বান্দা কেবলমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর মসজিদ উনার খাদিম হতে পারে। কিন্তু মালিক হতে পারে না বা দাবিও করতে পারে না। বরং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার মালিক হচ্ছেন স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি।
অতএব, মহান আল্লাহ পাক উনার মালিকানাধীন ঘর তথা মসজিদ ভাঙ্গার অনুমতি কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ অর্থাৎ বাদশাহ, রাজা, আমীর, ওমরাহ, রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী কেউই দিতে পারে না বা দেয়ার অধিকারও রাখে না।
কাজেই, যারা ভাঙ্গার অনুমতি দিবে বা দেওয়ার জন্য বলবে এবং যারা সাহায্য-সহযোগীতা বা সমর্থন করবে তারা প্রত্যেকেই কাট্টা কুফরী করবে এবং ঈমান থেকে খারিজ হয়ে যাবে।
(১) তাফসীরে আহ্কামুল কুরআন- লিল জাস্সাস, (২) তাফসীরে কুরতুবী, (৩) তাফসীরে বায়যাবী, (৪) তাফসীরে রূহুল মায়ানী, (৫) তাফসীরে খাযিন, (৬) তাফসীরে ইবনে কাছীর, (৭) তাফসীরে বাগবী, (৮) তাফসীরে মাদারিক, (৯) তাফসীরে ফতহুল ক্বাদীর, (১০) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (১১) তাফসীরে মাযহারী, (১২) তাফসীরে কবীর, (১৩) তাফসীরে দুররে মনছূর, (১৪) তাফসীরে তাবারী, (১৫) বুখারী, (১৬) মুসলিম, (১৭) আবু দাউদ, (১৮) তিরমিযী, (১৯) ইবনে মাজাহ্, (২০) বাইহাক্বী, (২১) কানযুল উম্মাহ্, (২২) মুসনাদে আহমাদ, (২৩) মিশকাত, (২৪) ফতহুল বারী, (২৫) উমদাতুল ক্বারী, (২৬) শরহে নববী, (২৭) উরফুশ্ শাজী, (২৮) বজলুল মাযহুদ, (২৯) আউনুল মা’বুদ, (৩০) মিরকাত, (৩১) আশয়াতুল লুময়াত, (৩২) লুময়াত, (৩৩) শরহুত্ ত্বীবী, (৩৪) তা’লীকুছ ছবীহ্, (৩৫) মুযাহিরে হক্ব, (৩৬) সীরাতুন্নবী (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইত্যাদি।
সুওয়াল-৫
অনেকে দাবী করে, জনকল্যাণ বা বৃহত্তর কল্যাণের জন্য মসজিদ স্থানান্তর করতে সমস্যা নেই। তাদের এই দাবী কতটুকু শরীয়ত সম্মত?
জাওয়াব : মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর। উক্ত পবিত্র ঘর উনার মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনিই। এখন উনার মালিকানাভুক্ত ঘর উনার অনুমতি ব্যতিরেকে সরানো বা স্থানান্তর করা জায়িয হবে না। একজনের মালিকানাধীন ঘর-বাড়ী তার অনুমতি বা সম্মতি ব্যতীত অন্যদের জন্য সরানো বা স্থানান্তর করা যদি জায়িয না হয় তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার অনুমতি বা সম্মতি ব্যতীত কি করে উনার পবিত্র ঘর মসজিদ স্থানান্তর করা জায়িয হতে পারে? তা সম্পূর্ণ কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। নাউযুবিল্লাহ!
তাছাড়া পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَاللهُ وَرَسُوْلُهٗ أَحَقُّ أَنْ يُرْضُوْهُ إِنْ كَانُوْا مُؤْمِنِيْنَ
অর্থ: যদি তারা মু’মিন হয়ে থাকে তবে তারা যেন মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও উনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সন্তুষ্ট করে। সন্তুষ্ট করার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই সর্বাধিক হক্বদার। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬২)
এখন মহান আল্লাহ পাক উনাকে সন্তুষ্ট করতে হলে তো ঈমানদারের জন্য উনার পবিত্র ঘর মসজিদকে হিফাজত করতে হবে। উনাকে অসন্তুষ্ট করে উনার স্বার্থ, হক্ব বা অধিকার নষ্ট করে জনগণের স্বার্থে বা কল্যাণের জন্য মসজিদ স্থানান্তর করাতো কোন ঈমানদারের কাজ নয়।
অতএব, জনকল্যাণ বা বৃহত্তর কল্যাণের জন্য মসজিদ স্থানান্তরিত করা জায়িয নেই। বরং, কাট্টা হারাম ও কুফরী।
দলীলসমূহ: তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে বায়দ্ববী, তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে খাযিন, তাফসীরে মাযহারী, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, জামউল ফতওয়া, ফতওয়ায়ে শামী, ফতওয়ায়ে বাহরুর রায়িক ইত্যাদি।
সুওয়াল-৬
অনেকে হাদীছ শরীফ উনার বরাত দিয়ে বলে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত যমীনকে সিজদার স্থান বানিয়ে দিয়েছেন। তবে কি সারা পৃথিবীর কিছুই ভাঙ্গা যাবে না?
জাওয়াব: সাইয়্যিদুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের জন্য সমস্ত যমীনকে সিজদার স্থান তথা নামাযের স্থান বানানো হয়েছে। এটা উনার অন্য সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপরে শ্রেষ্ঠত্বের কারণসমূহের মধ্যে একটি কারণ। বর্ণিত রয়েছে, অতীতের হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উম্মতের ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নির্ধারিত ইবাদতখানায় ইবাদত করা শর্ত ছিলো। অর্থাৎ ইবাদতখানা ব্যতীত ইবাদত করলে তা কবুল করা হতো না। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার উম্মতের জন্য সারা যমীনকে পবিত্র এবং নামাযের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। উনারা বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, অফিস-আদালত, নদী, নালা, সমুদ্র ইত্যাদি যেখানেই নামায পড়–ন না কেন তা কবুলযোগ্য হবে। সুবহানাল্লাহ!
তবে পূর্ববর্তী উম্মতের ইবাদতখানার ন্যায় আখিরী উম্মতের ইবাদতের জন্য বিশেষ করে নামায আদায়ের জন্য যে স্থান নির্ধারণ করা হয়ে থাকে অর্থাৎ ওয়াকফ করা হয় সেটাই শরীয়তে মসজিদ নামে অভিহিত। এ মসজিদ নির্মাণের জন্য এবং তা হিফাজতের জন্য, ইজ্জত-হুরমত রক্ষার জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে আদেশ-নির্দেশ মুবারক করা হয়েছে।
কাজেই, শরয়ী মসজিদ বা মসজিদের জন্য খাছ বা নির্ধারিত স্থান আর নামায পড়ার সাধারণ স্থানের হুকুম এক নয়। উভয় স্থানের হুকুম ও ফযীলতের মধ্যে বহু পার্থক্য রয়েছে। তা মুসলমান মাত্রই জানা ও বুঝার কথা।
দলীলসমূহ: মুসলিম শরীফ, ফতহুল মুলহিম, শরহে নববী, তাফসীরে ইবনে জারীর, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে মায়ালিমুত তানযীল, তাফসীরে দুররে মানছূর, মসজিদ স্থানান্তর করার রদ, ইমদাদুল ফতওয়া, দারুল উলূম দেওবন্দ ইত্যাদি।
সুওয়াল-৭
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, প্রশস্তকরণ, পুরাতন ভবন ভেঙ্গে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ বা মসজিদ সংশ্লিষ্ট যে কোন ধরণের উন্নয়নের জন্য ভাঙ্গা, আর রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, নদী রক্ষণাবক্ষেণ বা সরকারী/বেসরকারী যে কোনো প্রয়োজনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গার হুকুম কি একই রকম? দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, প্রশস্তকরণ, পুরাতন ভবন ভেঙ্গে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ বা যে কোন ধরনের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে আর রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, নদী রক্ষণাবেক্ষণ বা সরকারী/বেসরকারী যে কোনো প্রয়োজনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা কখনোই এক নয়।
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার কাজে মসজিদ সংস্কার আর মসজিদ উনার সংস্কার কাজ ব্যতীত মসজিদ ভাঙ্গার হুকুম এক নয়। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার কাজে মসজিদ ভাঙ্গা শরীয়ত সম্মত কিন্তু গায়েরে মসজিদ বা বাইরের কোন উদ্দেশ্যে মসজিদ ভাঙ্গা হারাম-নাজায়িয ও কুফরী।
মূলতঃ সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, প্রশস্তকরণ, বহুতল ভবন নির্মাণ বা যে কোনো ধরনের উন্নয়ন মূলক কাজ করা হাক্বীক্বতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ আবাদ বা তৈরী করারই অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فِـىْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেন- সম্মান করার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য অর্থাৎ না ভাঙ্গার জন্য, ঐ সকল মুবারক ঘরসমূহ উনাদেরকে যে সকল মুবারক ঘরসমূহে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্মরণ করা হয় ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা হয় সকাল-সন্ধ্যায়।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা নূর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে ত্ববারী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ فِىْ قَوْلِهٖ {فِـىْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ} يَعْنِـىْ كُلَّ مَسْجِدٍ يُصَلّٰى فِيْهِ جَامِعٍ اَوْ غَيْرِهٖ
অর্থ: “রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি فِـىْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ “মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেন- সম্মান করার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে আবাদ বা সংরক্ষণ করার জন্য ঐ সমস্ত ঘর মুবারক” এই আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বলেন-
كُلَّ مَسْجِدٍ يُصَلّٰى فِيْهِ جَامِعٍ اَوْ غَيْرِهٖ
অর্থাৎ প্রত্যেক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যেখানে নামায পড়া হয়। সেটা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জামি’ মসজিদ মুবারক হোক অথবা অন্য যে কোন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকই হোক।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে ত্ববারী শরীফ ১৯/১৮৯)
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংস্কার, সৌন্দর্য্যবর্ধন, প্রশস্তকরণ, বহুতল ভবন নির্মাণ এগুলো সব মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ আবাদ করারই নামান্তর। যা মহান আল্লাহ পাক উনারই সম্মানিত নির্দেশ মুবারক।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّهٗ سَـمِعَ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اِبْنُوا الْمَسَاجِدَ وَاَخْرِجُوا الْقُمَامَةَ مِنْهَا فَمَنْ بَنٰـى لِلّٰهِ مَسْجِدًا بَنَى اللهُ لَهٗ بَيْتًا فِى الْـجَنَّةِ قَالَ رَجُلٌ يَّا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهٰذِهِ الْمَسَاجِدُ الَّتِـىْ تُبْنٰى فِى الطَّرِيْقِ قَالَ نَعَمْ وَاِخْرَاجُ الْقُمَامَةِ مِنْهَا مُهُوْرُ حُوْرِ الْعِيْنِ
অর্থ: “হযরত আবূ ক্বিরছাফাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, তোমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করো এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখো। অর্থাৎ বেশী বেশী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ করো এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করো অর্থাৎ প্রশস্ত করো, সৌন্দর্য্যবর্ধন করো। সুবহানাল্লাহ! কেননা যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক আবাদ বা নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ একটি বালাখানা নির্মাণ করবেন। সুবহানাল্লাহ! একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক রাস্তায় নির্মাণ করা হয়?
(সেই সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনাদের হুকুম কী? ওই সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা নির্মাণ করবেন, উনাদের জন্যও কি জান্নাতে বালাখানা নির্মাণ করা হবে?) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ। সুবহানাল্লাহ! আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক থেকে ময়লা দূর করা তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, সৌন্দর্য্যবর্ধন করা সম্মানিত জান্নাতী হুর উনাদের মোহরানাস্বরূপ। সুবহানাল্লাহ! (ত্ববারনী শরীফ ৩/১৯, দুরররে মানছূর ৪/১৪৪, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১১৩, জামি‘উছ ছগীর ১/৫, ফাতহুল কাবীর ১/২১, জামি‘উল আহাদীছ ১/১৩৭, কাশফুল খফা ২/৩৪, আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ ৩/৪৮৮, কানযুল ‘উম্মাল ৭/৬৫৫ ইত্যাদি)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ اَلصِّدِّيْقَةِ (حَضْرَتْ عَائِشَةَ) عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ اَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِبِنَاءِ الْمَسَاجِدِ فِى الدُّوْرِ وَاَنْ تُنَظَّفَ وَتُطَيَّبَ
অর্থ: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাড়িতে বাড়িতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় সৌন্দর্য্যমন্ডিত করে রাখার জন্য উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, ইত্যাদি)
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংস্কার করা, সৌন্দয্যবর্ধন করা, প্রশস্তকরা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংরক্ষন বা আবাদ করারই অন্তর্ভুক্ত। যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনারই নির্দেশ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
পক্ষান্তরে রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল নির্মাণ, নদী রক্ষণাবেক্ষণ বা সরকারী বেসরকারী যে কোনো প্রয়োজনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা অর্থ হচ্ছে হাক্বীক্বতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বিরান বা ধ্বংস করা। নাউযুবিল্লাহ!
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার বাইরের কাজের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার গায়ে হাত দেয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ اَظْلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ وَسَعٰى فِـىْ خَرَابِـهَا اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَـهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَا اِلَّا خَآئِفِيْنَ لَـهُمْ فِـى الدُّنْيَا خِزْىٌ وَّلَـهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ.
অর্থ: “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে? যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে বিরান করতে চেষ্টা করে।
(অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভেঙ্গে ফেলে বা বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না তা’যীম-তাকরীম করে না) তাদের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অর্থাৎ খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা ব্যতীত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে প্রবেশ করা জায়িয নেই। তাদের জন্য রয়েছে ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)
এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে জালালাইন শরীফ ও তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
لَا اَحَدَ اَظْـلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ
অর্থ: “ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় যালিম, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয়।” (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বিরাণ করে বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না তা’যীম তাকরীম করে না) (তাফসীরে জালালাইন ১/২৪, তাফসীরে মাযহারী ১/১১৬)
তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ, তাফসীরে খাযিন শরীফ ও তাফসীরে বাগবী শরীফ’ উনার মধ্যে وَمَنْ اَظْـلَمُ “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে?” এই অংশের ব্যাখ্যায় উল্লেখ রয়েছে, وَمَنْ اَكْفَرُওই ব্যক্তির চেয়ে বড় কাফির আর কে? অর্থাৎ ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরাণ করতে চেষ্টা করে।” (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বন্ধ করে রাখে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গে বা ভাঙ্গার কোশেশ করে অর্থাৎ হক্ব আদায় করে না, তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করে না) না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ ১/৮৬, তাফসীরে খাযিন শরীফ ১/৭২, তাফসীরে বাগবী শরীফ ১/১৫৭)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর “তাফসীরে আহমদী” উনার ১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اِنَّـهَا تَدُلُّ عَلٰى اَنَّ هَدْمَ الْمسَاجِدِ وَ تَخْرِيْبَهَا مَمْنُوْعٌ وَ كَذَا الْمَنْعٌ عَنِ الصَّلٰوةِ وَ الْعِبَادَةِ وَ اِنْ كَانَ مَمْلُوْكَاَ لِلْمَانِعِ
অর্থ: উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা বুঝা যায় যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ধ্বংস করা বা বিরান করা নিষিদ্ধ। অনুরূপ উহাতে নামায ও ইবাদত করতে নিষেধ করাও হারাম, যদিও মসজিদটি নিষেধকারীর অধীনে থাকে।
যারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বিরান বা ধ্বংস করবে তাদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লামা কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
لَـهُمْ فِـى الدُّنْيَا خِزْىٌ قَتْلٌ وَسَبْـىٌ وَّذِلَّةٌ بِضَرْبِ الْـجِزْيَةِ وَّلَـهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ. اَلنَّارُ الْـمُؤَبَّدَةُ بِكُفْرِهِمْ وَظُـلْمِهِمْ.
অর্থ: “তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ার যমীনে লাঞ্ছনা। (অর্থাৎ) কতল (হত্যা, মৃত্যুদ-), বন্দিত্ব (জেল-হাজত) এবং জিযিয়া কর প্রদানের অবমাননা। আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (অর্থাৎ পরকালে) তাদের জন্য রয়েছে তাদের কুফরী ও যুলুমের কারণে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ১/১১৬)
উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংস্কার, সৌন্দর্য্যবর্ধন, প্রশস্তকরণ, বহুতলকরণ বা যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পূণঃনির্মাণ করা আর রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল নির্মাণ, নদী রক্ষণাবেক্ষণ বা সরকারী বেসরকারী যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা কখনোই এক নয়। কারণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ বা তৈরী করা আর বিরান বা ধ্বংস করা দুটো কখনোই এক হতে পারেনা। যারা এটাকে এক বলে তারা আশাদ্দুদ দরজার জাহিল অর্থাৎ চরম পর্যায়ের মূর্খ। তাদের বক্তব্য সম্মানিত শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।
দলীলসমূহ: ১. তাফসীরে ত্ববারী শরীফ, ২. তাফসীরে খাযিন শরীফ, ৩. তাফসীরে বাগবী শরীফ, ৪. তাফসীরে মাযহারী শরীফ, ৫. তাফসীরে আহমদী শরীফ, ৬. তাফসীরে সামারকন্দী শরীফ, ৭. তাফসীরে জালালাইন শরীফ, ৮. তাফসীরে দুররে মানছূর শরীফ, ৯. তাফসীরে নিশাপুরী, ১০. মাজমাউয যাওয়াইদ, ১১. জামি‘উছ ছগীর, ১২. ফাতহুল কাবীর, ১৩. জামি‘উল আহাদীছ, ১৪. কাশফুল খফা, ১৫. আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ, ১৬. কানযুল ‘উম্মাল, ১৭. সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, ১৮. মুছান্নাফে আবী শায়বা, ১৯. শুয়াবুল ঈমান, ২০. ত্ববারানী শরীফ ইত্যাদি।
বি: দ্র: এখানে সংক্ষিপ্তাকারে জাওয়াব দেয়া হলো। প্রয়োজনে আরো দলীলসহ বিস্তারিতভাবে ফতওয়া প্রদান করা হবে। ইনশাআল্লাহ!





0 Comments: