গোলটুপি ব্যতীত অন্যান্য টুপি মাকরূহ হওয়ার ফতওয়া ( ৮ নং )

খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়

সম্পর্কে ফতওয়া
গবেষণা কেন্দ্র
মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ

[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক-উনার অশেষ রহ্মতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ”-উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামাজ ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরজ নামাজের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-উনার নামাজে বা অন্যান্য সময় কোরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্ নামাজ বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপ্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ও দোয়াল্লাীন-যোয়াল্লীন-উনার শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফত্ওয়া প্রকাশ করার পর ১৭তম ফতওয়া হিসেবে খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটিশেষ করতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক-উনার দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।]
মাসিক আল বাইয়্যিনাতে টুপি সম্পর্কে পুণরায় ফতওয়া দেয়ার কারণ
            (বাতিলের আতঙ্ক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যায় টুপি সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক ফতওয়া প্রদান করা হয়েছিল। যাতে প্রায় ৫০টিরও অধিক নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে খাছ সুন্নতী টুপির বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছিল।
            টুপির উক্ত ফতওয়াটি সত্বান্বেষী ও সুন্নতের আশেক্ব মুসলমানগণের নিকট এতই সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য হয় যে, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই টুপির ফতওয়া সম্বলিত কপিখানার মজুদ সংখ্যাগুলিও ফুরিয়ে যায়। যার ফলে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগণিত পাঠক, টুপি সম্পর্কিত মুল্যবান ফতওয়াটি সংগ্রহে রাখতে ব্যর্থ হয়। তাই তারা মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অন্যতম বিভাগ- ফতওয়া বিভাগেটুপি সম্পর্কিত ফতওয়াটি পুণরায় প্রকাশ করার জন্য পুনঃ পুনঃ আবেদন জানায়।
            এতদ্বপ্রেক্ষিতে অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগনিত পাঠকের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবং হক্ব তালাশী ও সুন্নতের আশেক্ব, মুসলমানগণের ঈমান ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে সর্বপোরি মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার খাছ রেজামন্দী হাছিলের উদ্যেশ্যে টুপি সম্পর্কিত ফতওয়াটি কিছুটা পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও সংশোধনের মাধ্যমে এবং আরো অধিক দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে প্রকাশ করা হলো। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে উনারশাদ করেন,

فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون.

অর্থঃ- যদি তোউনারা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা নহল/৪৩ ও আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ তোউনারা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যাঁরা জানেন, তাঁদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।
            অতএব, যাঁরা জানেন, তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারশাদ করেন,

من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থঃ- যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুণের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, আহ্মদ, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, উেনারকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, উিনারআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
            অন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ¡া আগুণের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।
            কাজেই উপরোক্ত হাদীস শরীফে যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকারঅগণিত পাঠক, গ্রাহক ও হক্ব তালাশী বা সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কেশরীয়তসম্মত তথা কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে ফতওয়া দেয়া হলো।
            এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খেলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-উনার জন্যেই হতে হবে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উনারশাদ হয়েছে,
من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
           
অর্থঃ- যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-উনার (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেশকাত, উেনারকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, লুময়াত, উিনারআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
            বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীস শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
            কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” “খাছ সুন্নতী টুপি ও তার  সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্র্কে”  সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান করার মুল মাকছুদ হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যেন  প্রত্যেকেই খাছ সুন্নতী টুপি সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং সুন্নত মোতাবেক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
            মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মুমিন অপর মুমিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীস শরীফে উনারশাদ হয়েছে যে,
المؤمن مرأة المؤمن.
অর্থঃ- এক মুমিন অপর মুমিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)
            এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওউনার ইবনুল খাত্তাব রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত আনছার এবং মোহাজির রহমতুল্লাহি আলাইহিগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহ্কামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে তোউনারা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত ওউনার ইব্নুল খাত্তাব রহমতুল্লাহি আলাইহি দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইব্নে সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “যদি আপনি উনারূপ করেন, তবে আউনারা আপনাকে উনারূপ সোজা করবো, যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়।এ কথা শুনে হযরত ওউনার ইবনুল খাত্তাব রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “তোউনারাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মাআরেফ)
            অতএব, খাছ সুন্নতী টুপি সম্পর্কিত বিষয়ে যারা ফিৎনা বা বিভ্রান্তিতে রয়েছে, তাদের সে ফিৎনা ও বিভ্রান্তি নিরসন করা ও উপরোক্ত হাদীস শরীফের মেছদাক হওয়াই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে টুপি সম্পর্কিত ফতওয়া পুণরায় প্রকাশ করার মূল কারণ।)

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
টুপির ফতওয়া সম্পর্কিত কতিপয় বিষয়ের সংশয় নিরসন
(৯)
            কেউ কেউ ফতওয়ায়ে রশীদীয়ারবরাত দিয়ে বলে থাকে যে, সব ধরনের গোল টুপিই পরিধান করা জায়েয।আবার কেউ কেউ ফতওয়ায়ে মাহ্মুদীয়ার বরাত দিয়ে বলে থাকে যে, গোল টুপি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়। কারণ গোল টুপি সুনানে হুদাঅর্থাৎ দ্বীনী আমলের অর্ন্তভূক্ত নয়। সুতরাং টুপি একটি পরিধান করলেই চলে।
            তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, ফতওয়ায়ে রশীদীয়ার বক্তব্য দ্বারা কস্মিনকালেও সব ধরণের গোল টুপি জায়েয প্রমাণিত হয়না। কারণ টুপি সম্পর্কে ফতওয়ায়ে রশীদীয়া- ৫৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

سوالگول ٹوپی اوڑھنا کہ جس پردو پٹہ باعث دب جائے ٹوپی کے نہ باندہ سکتا ھو- اور درسیان میں خلا رھے یعنی سرپر درمیان میں نہ لگے تو اسکا استعمال کیسا ھے؟
جواب- گول ٹوپی درست ھے مگر جس میں مشابھت کسی قوم  ئے دین کی ھو وہ درست نھیں-

অর্থঃ- প্রশ্নঃ গোল টুপি যা ডেবে যাওয়ার আশঙ্কায় তার উপর রুমাল বাঁধা যায় না এবং সে টুপির মাঝে ফাকাঁ থাকে, মাথার সাথে লেগে থাকেনা, বরং মাথা হতে উচু হয়ে থাকে। এধরনের টুপি ব্যবহার করা কিরূপ?
উত্তরঃ- গোল টুপি পরিধান করা জায়েয। তবে যে টুপি পরিধান করাতে বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য হয়, সে টুপি পরিধান করা নাজায়েয।
            উল্লেখ্য, ফতওয়ায়ে রশীদীয়াতে যেরূপ সব ধরনের গোল টুপিকে জায়েয বলা হয়নি, তদ্রুপ নির্দিষ্ট করে প্রশ্নে বর্ণিত টুপিটিকেও জায়েয বলা হয়নি। যদি প্রশ্নে বর্ণিত টুপিটিকেই জায়েয বলা উদ্দেশ্য হতো, তবে উত্তরে একথা অবশ্যই উল্লেখ থাকতো যে, “প্রশ্নে বর্ণিত গোল টুপিটি পরিধান করা জায়েয।যেহেতু ইবারতে একথা উল্লেখ নেই, সেহেতু উক্ত বক্তব্যকে পুঁজি করে সব ধরণের গোল টুপিকে জায়েয বলারও কোন অবকাশ নেই। বরং ফতওয়ায়ে রশীদীয়ার পরবর্তী বক্তব্য দ্বারা প্রশ্নে বর্ণিত টুপিটি নাজায়েয হওয়াই স্বপ্রমাণিত হয়। কারণ টুপি সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে উক্ত ইবারতে একথাও উল্লেখ আছে যে, “যে টুপি পরিধান করাতে বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য হয়, সে টুপি পরিধান করা নাজায়েয।অর্থাৎ একথা দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, গোল টুপি যা মাথার সাথে লেগে থাকেনা বরং উচু হয়ে থাকে সে টুপি পরিধান করা জায়েয নেই। কারণ তাতে বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায়। যেমন খৃষ্টানদের টুপি অর্থাৎ বুরনুসটুপি যা মাথার সাথে লেগে থাকেনা, বরং উচু হয়ে থাকে, অথচ উক্ত টুপিটিও গোল।
            সুতরাং যদি গোল হলেই সে টুপি পরিধান করা জায়েয হয়, তবে বুরনুসটুপি পরিধান করাও জায়েয হবে। যেহেতু বুরনুস টুপিটিও গোল। অথচ বুরনুসটুপি পরিধান করা বিধর্মী বা খৃষ্টানদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার ক্ষেত্রে নাজায়েয, আর তা সাধারণভাবে পরিধান করা মাকরূহ তাহ্রীমী। অতএব, কোন টুপি গোল হলেই যে, তা জায়েয হবে তা নয়। বরং যে টুপি পরিধান করলে বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য হয়না, সে টুপি পরিধান করাই জায়েয। ফতওয়ায়ে রশীদীয়ার বক্তব্য দ্বারা মূলতঃ এটাই বুঝানো হয়েছে।
            আরো উল্লেখ্য যে, ফতওয়ায়ে রশীদীয়াতে মূলতঃ জায়েয টুপির কথা বলা হয়েছে সুন্নতী টুপির কথা নয়। কারণ সব জায়েয টুপিই সুন্নতী টুপির অন্তর্ভূক্ত নয়। বরং সুন্নতী টুপি তাকেই বলে যে টুপি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি গণ পরিধান করেছেন বলে হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। যেমন- সুন্নতের সংজ্ঞায় ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব তাহ্তাবীতেউল্লেখ আছে,

السنة مافعل النبى صلى الله عليه وسلم او واحد من اصحابه-
অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের কোন একজন যে কাজ করেছেন তাহাই সুন্নত।
            আর হাদীস শরীফ দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ গোল টুপি পরিধান করতেন, এমন গোল টুপি যা সব দিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকতো। মাথা হতে উচু হয়ে থাকতোনা এবং সে টুপিটি ছিল চার টুকরা বিশিষ্ট। সুতরাং ফওয়ায়ে রশীদীয়ারপ্রশ্নে বর্ণিত টুপিটি যেহেতু মাথার সাথে লেগে থাকেনা বরং উঁচু হয়ে থাকে, তাই তিনি উক্ত টুপিটিকে সুন্নতী টুপি বলে আখ্যায়িত করেননি। বরং বাড়িয়ে একথাও বলেছেন যে, এমন টুপি পরিধান করা জায়েয হবেনা, যে টুপি পরিধান করলে বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য হয়। (যদিও তা গোল হোক না কেন।)
            মূলকথা হলো- ফতওয়ায়ে রশীদীয়ার উক্ত বক্তব্য দ্বারা কস্মিনকালেও সব ধরনের গোল টুপি পরিধান করা জায়েয প্রমাণিত হয়না। বরং প্রশ্নে বর্ণিত টুপিটি নাজায়েয হওয়াই স্বপ্রমাণিত হয়।
            দ্বিতীয়তঃ ফতওয়ায়ে মাহ্মূদীয়াতে টুপি সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করা হয়েছে, তার দ্বারাও মূলতঃ গোল টুপিই সুন্নত প্রমাণিত হয়, যদিও উক্ত কিতাবের সুনানে আদিয়াহ ও সুনানে হুদা, সস্পর্কিত বর্ণনাটি সহীহ নয়। যেমন এ প্রসঙ্গে ফতয়ায়ে মাহ্মূদীয়ার ৫ম জিঃ ১১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

سوال- گول ٹوپی لگانا سنت ھے- اور رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم ٹوپی کیسے دیتے تھے- جو لوگ اصرار کرتے ھیں گول ٹوپی پر انکا اصرار کرنا کیسا ھے؟

অর্থঃ- প্রশ্নঃ গোল টুপি পরিধান করা কি সুন্নত? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিরূপ টুপি পরিধান করতেন? যে ব্যক্তি গোল টুপির ব্যাপারে ইছরার’ (বাড়াবাড়ি) করে, তার সে বাড়াবাড়ি কিরূপ?
            উত্তরঃ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে যে, (সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোল টুপি পরিধান করতেন, এমন গোল টুপি যা মাথার সাথে ভাল রূপে লেগে থাকতো এবং তা উঁচু হয়ে থাকতোনা। কিন্তু এ আমলটি সুনানে আদিয়ার অন্তর্ভূক্ত, সুনানে হুদার অন্তর্ভূক্ত নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি এটা আমল করবে, সে সওয়াব পাবে। কিন্তু উক্ত আমল পরিত্যাগকারীকে তিরস্কৃত করার অধিকার কারো নেই।
            উল্লেখ্য উক্ত ইবারতের প্রথম অংশ অর্থাৎ গোল টুপির বর্ণনাটি অবশ্যই সঠিক কিন্তু ফতওয়ায়ে মাহ্মুদীয়ার উপরোক্ত জাওয়াবের শেষের অংশটুকু কোরআন-হাদীসের খেলাফ হয়েছে। কেননা তারা বলেছে সুন্নত তরক করার কারণে নিন্দা ও সুন্নত পালনের জন্য তাকীদ করা যাবেনা।
            অথচ স্বয়ং আল্লাহ্ পাক কোরআন শরীফে ও আল্লাহ্র রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে সকল প্রকার সুন্নত অনুসরণ করার জন্য তাকীদ করেছেন।    এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন,
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.
অর্থঃ-তোমাদের জন্য আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহ্যাব/২১)
            আল্লাহ্ পাক কালামে পাকে আরো বলেন,

وما اتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا.
অর্থঃ- তোমাদের নিকটে আমার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), যা নিয়ে এসেছেন তা আঁকড়িয়ে ধর। আর যা থেকে তোমাদেরকে বিরত থাকতে বলেছেন, তা থেকে বিরত থাকো।” (সূরা হাশর/৯)
            উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে আল্লাহ্র রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ.
অর্থঃ- তোমাদের জন্য আমার সুন্নত ও আমার হিদায়েত প্রাপ্ত খোলাফা-ই-রাশেদীনের সুন্নত সমূহ পালন করা অবশ্য কর্তব্য। তোউনারা তা শক্ত করে মাড়ীর দাঁত দিয়ে আঁকড়িয়ে ধর।” (আহ্মদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ্, মেশকাত, বযলুল মাযহুদ, উেনারকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্)
            উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফ দ্বারা এটাই সাবেত হয় যে, আল্লাহ্ পাক-উনার রাসূল হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সুন্নত, মাথার তালু থেকে পায়ের তলা, হায়াত থেকে উনারত, সব অবস্থায় সব ক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ ও অনুকরণের জন্য অবশ্যই তাকীদযোগ্য।       
            অতএব, সুনানে হুদা অবশ্যই পালন করতে হবে আর তার জন্য তাকীদ এবং মালামতও করতে হবে। আর সুনানে আদিয়ার জন্যও তাকীদ ও মালামত করতে হবে, যাতে কেউ সে সুন্নত থেকে মাহ্রূম হয়ে বিধর্মী, বেদ্বীন ও বদ্দ্বীনদের অনুসরণ-অনুকরণকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে না যায়। কারণ মানুষ যে বিষয়ে সুন্নতের আমল তরক করবে, তবে সে বিষয়েই কোন না কোন বিদ্য়াতের মধ্যে লিপ্ত হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে রয়েছে,

ما احدث قوم بدعة الارفع مثلها من السنة فتمسك بسنة خيرمن احدث البدعة.
অর্থঃ- যখন কোন সম্প্রদায় একটি বিদ্য়াত কাজ করে তখন তৎপরিবর্তে একটি সুন্নত বিলুপ্ত হয়। সুতরাং বিদ্য়াত গ্রহণের চেয়ে সুন্নতের অনুসরণ অধিক উত্তম।” (আহ্মদ, মেশকাত, উেনারকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লমুয়াত, মোযাহের হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, ফতহুর রব্বানী)
            সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, সুনানে হুদা ও সুনানে আদিয়া সম্পর্কিত ফতওয়ায়ে মাহ্মুদীয়ারউক্ত বক্তব্য কোরআন-সুন্নাহ্র খেলাফ ও মনগড়া, তাই তা সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য। অতএব, টুপি একটি পরিধান করলেই চলবেনা, বরং হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত খাছ সুন্নতী টুপিই পরিধান করতে হবে, তবেই বিদ্য়াত পরিহার করে সুন্নতের উপর কায়েম থাকা সম্ভব।
চার টুকরা বিশিষ্ট সাদা রংয়ের গোলটুপি খাছ সুন্নত হওয়ার ও অন্যান্য টুপি খেলাফে সুন্নত হওয়ার অকাট্য দলীলসমূহ
           
            উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীল ভিত্তিক দীর্ঘ আলোচনা দ্বারা এটাই ছাবেত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি মোবারক ছিল- সাদা, গোল ও চার টুকরা বিশিষ্ট, যা সব দিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকতো, কখনো মাথা হতে কিঞ্চিৎ পরিমানও উঁচু হয়ে থাকতোনা। এ ধরণের টুপিই মূলতঃ খাছ সুন্নতী টুপি। তাই অনুসরণীয় সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহিগণ গোল টুপি পরিধান করতেন এবং সকলেই গোল টুপিকে সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন।
            অপরদিকে বুরনুস, কিস্তি, পাঁচ কল্লি ও জালী ইত্যাদি টুপি সুন্নতী টুপি নয়, কারণ পাঁচ কল্লি, জালী ইত্যাদি টুপিগুলো নব উদ্ভাবিত। যাকে শরীয়তে বিদ্য়াত বলে। আর বুরনুসটুপি ইসলাউেনার শুরু যুগে কেউ কেউ পরিধান করলেও বর্তমানে বুরনুস টুপি খ্রীষ্টানদের খাছ টুপি। অনুরূপ কিস্তি টুপিও হিন্দু তথা মারওয়ারীদের খাছ টুপি। বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে মুসলমানদের জন্য বুরনুস ও কিস্তি টুপি পরিধান করা নাজায়েয। নিম্নে হাদীস শরীফ, শুরুহাত, তাফসীর, ফিক্বাহ্, ফতওয়া ও সীরাত গ্রন্থ সমূহ হতে এ ব্যাপারে অকাট্য দলীল সমূহ পেশ করা হলো-
(১-৩)    
عن ابن عمر رضى الله عنه قال- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يلبس القلنسوة البيضاء. (المختصر الوفاء- مرقاة المفاتبح- الطبرانى)
অর্থঃ- হযরত ইব্নে ওউনার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদা রংয়ের টুপি পরিধান করতেন।” (আল্ মুখতাছারুল ওফা, উেনারকাতুল মাফাতীহ্, আত্ তিব্রানী)
(৪)       

عن ابى هريرة رضى الله عنه قال رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم قلنسوة بيضاء شامية- (المختصرالوفاء)
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরায়রা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মাথা মোবারকে শাম দেশীয় সাদা রংয়ের টুপি দেখেছি।” (আল মুখতাছারুল ওফা)
(৫-৭)
عن ابن عباس- انه صلى الله عليه وسلم كان يلبس القلانس تحت العمائم وبغير العمائم- (ابن عساكر- تاريخ الخميس. مرقاة المفاتيحج صفه ২৪৬)
অর্থঃ- হযরত ইব্নে আব্বাস রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাগড়ীর নীচে টুপি মোবারক পরিধান করতেন এবং পাগড়ী ব্যতীত শুধু টুপিও পরিধান করতেন।” (ইবনে আসাকির, তারীখুল খামীস, উিনারকাতুল মাফাতীহ্ ৮ম জিঃ পৃষ্ঠা-২৪৬)
(৮-১১)

عن عائشة رضى الله عنها- كانت له كمة بيضاء- (الدمياطىء مواهب اللدنية لقسطلانى، شرح مواهب للزرقانى، تحقيق المسائل)
অর্থঃ- হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার টুপি মোবারক ছিল সাদা গোল। (আদ্ দিমিয়াত্বী, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া লিল্ কুস্তলানী, শরহে মাওয়াহেব লিয্ যুরকানী, তাহ্ক্বীকুল মাসায়েল)
(১২-২০)
عن ابى كبشة قال- كان كمام اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم بطحا- (ترمذى، مشكوة المصابيح، تحفة الا حوذى ج صفه ৫৭৯، مرقاة المفاتيح جصفه ২৪৬، شرح الطيبى جصنفه ২১৫، التعليق الصبيح جصفه ৩৮৬ اشعة اللمعات ج ৩  صفه ৫৩৩، مرأة المناجيح جص ১০২)

অর্থঃ- হযরত আবূ কাব্শা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি মোবারক ছিল- গোল, যা ভালরূপে মাথার সাথে লেগে থাকতো।ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি বলেন, এ হাদীস শরীফখানা মুন্কার। (তিরমিযী, মেশকাত, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী জিঃ-৫, পৃষ্ঠা-৫৭৯, উিনারকাতুল মাফাতীহ্ জিঃ-৮, পৃষ্ঠা-২৪৬, শরহুত্ ত্বীবী জিঃ-৮ পৃষ্ঠা-২১৫, আত্ তালীকুছ্ ছবীহ-জিঃ ৪-পৃঃ ৩৮৬, আশয়াতুল লুময়াত-জিঃ ৩-পৃঃ ৫৪৩, মোযাহেরে হক্ব-জিঃ ৩-পৃঃ ৫৩৩, উিনারআতুল মানাজীহ্ জিঃ ৬- পৃঃ১০২)
            স্মর্তব্য যে, উক্ত হাদীস শরীফের একজন রাবী অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর বছরী রহমতুল্লাহি জঈফ হওয়ার কারণে হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি উক্ত হাদীস শরীফকে মুনকার বা জঈফ বলেছেন, অথচ সকলের মতে তিনি জঈফ নন। কারণ কেউ কেউ তাঁকে ছেক্বাহ বলেও উল্লেখ করেছেন। যেমন তিরমিযী শরীফের মশহুর শরাহ তোহফাতুল আহওয়াযী ৫ম জিঃ- ৪৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وقال فى الخلاصة- ضعفه القطان والنسائى والد ارقطنى ووثقه ابن حبان.
অর্থঃ- খোলাছা কিতাবে বলা হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর বছরী রহমতুল্লাহিকে ইয়াহ্ইয়া বিন সাঈদ, নাসাঈ ও দারে কুত্নী রহমতুল্লাহি জঈফ বলেছেন, আর হযরত ইবনে হাব্বান রহমতুল্লাহি তাঁকে ছেক্বাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন।
            অতএব, প্রমাণিত হলো যে, উক্ত হাদীস শরীফ খানা জঈফ হওয়ার ব্যাপারে সকলে একমত নন। তাছাড়া জঈফ হাদীস শরীফ দ্বারাও যে মুস্তাহাব-সুন্নত প্রমাণিত হয়, তা সংশয় নিরসনে দলীল ভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে।
            উল্লেখ্য যে, উপরোল্লিখিত বর্ণনাগুলোর মধ্যে তিনটি শব্দ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। (১) (بيضاء) বাইদা, (২) (كمة)  কুম্মাতুন, (৩) (بطحا) বুত্হা। অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি মোবারক কিরূপ ছিল, তা বুঝানোর জন্য উল্লিখিত শব্দত্রয় উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মেধ্যে (بيضاء) বাইদাশব্দ দ্বারা প্রমাণিত হয যে, সাদা রংয়ের টুপিই হচ্ছে খাছ সুন্নত। কাজেই কালো, সবুজ, খয়েরী ইত্যাদি রংয়ের টুপি পরিধান করলে কশ্মিনকালেও সুন্নত আদায় হবেনা। আর হাদীস শরীফে সুন্নতী টুপির ব্যপারে (كمة) কুম্মাতুনশব্দ উল্লেখ আছে, আর কুম্মাতুনশব্দ দ্বারা মূলতঃ গোল টুপিকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন কুম্মাতুন’-উনার ব্যখ্যায় নিম্মোক্ত কিতাব সমূহে উল্লেখ আছে যে,
(২১-২২)
(كمام) بكسر اللكاف جمع كمة بالضم كقباب وقبة وهى القلنسوة المد ورة سميت بها لانها تغطى الراس وقال الجزرى فى النهاية ..... يعنى انها كانت منبطحة غير منتصبة-
وقال فى القاموس الكمة بالضم القلنسوة المدورة. (تحفة الاحوذى ج ه صفه ৪৭৯)

অর্থঃ- কাফের নীচে যের দিয়ে কিমাম (كمام) হচ্ছে কুম্মাতুন (كمة)-উনার বহুবচন, যেমন ক্বিবাবশব্দটি কুব্বাতুন’-উনার বহুবচন। আর কুম্মাতুনশব্দের অর্থ হচ্ছে গোল টুপি । যেহেতু তা মাথাকে ঢেকে রাখে, তাই এ নামকরণ করা হয়েছে। ইমাম জায্রী তাঁর নেহায়া ইব্নুল আছীরে বলেন, .............. অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি মাথার সাথে মিলিত থাকতো, উঁচু হয়ে থাকতোনা, আর ক্বামূসেবলা হয়েছে- কুম্মাতুন (كمة) হলো গোল টুপি।” (তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী জিঃ-৫, পৃঃ ৪৭৯)
(২৩)
(كمام) بكسر الكاف جمع كمة بالضم كقباب وقبة وهى قلنسوة المدورة سميت بها لانها تغطى الرأس. (مرقاة المفاتيح جصفه ২৪৬)

অর্থঃ- ‘‘কাফের নীচে যের দিয়ে কিমাম (كمام) শব্দটি কুম্মাতুন’ (كمة) -উনার বহুবচন যেরূপ ক্বিবাব কুব্বাতুন-উনার বহুবচন। আর কুম্মাতুনশব্দের অর্থ হচ্ছে গোল টুপি। যেহেতু তা মাথাকে ঢেকে ফেলে, তাই এ নামকরণ করা হয়েছে।” (উিনারকাতুল মাফাতীহ্-জিঃ৮,পৃঃ২৪৬)ঃ
(২৪)

(كمام) هى جمع كمة- القلنسوة المدورة سميت بها لانها تغطى الرأس- (شرح الطيبى جصفه ২১৫)

অর্থঃ- কিমাম (كمام) শব্দটি কুম্মাতুন’ (كمة) -উনার বহুবচন। যার অর্থ হচ্ছে- গোল টুপি। যেহেতু তা মাথাকে ঢেকে রাখে, তাই এ নামকরণ করা হয়েছে।” (শরহুত্ ত্বীবী-জিঃ৮, পৃঃ২১৫)
২৫)      

(كمام) بكسر الكاف جمع كمة بالضم كقباب و قبة وهى القلنسوة المدورة سميت بها لانها تغطى الرأس- (التعليق الصبيح جصفه ৩৮২)

অর্থঃ- কাফের নীচে যের দিয়ে কিমামত্মরূহৃব্জহৃত্র শব্দটি কুম্মাতুন ত্মরূহৃব্ধত্র -উনার বহুবচন, যেমন ক্বিবাবকুব্বাতুন-উনার বহুবচন। আর (কুম্মাতুন) শব্দের অর্থ হলো- গোল টুপি। গোল টুপি যেহেতু মাথাকে আবৃত করে ফেলে, তাই এ নামকরণ করা হয়েছে।” (আত্ তালীকুছ্ ছবীহ্- জিঃ-৪, পৃঃ ৩৮৬)
(২৬-২৭)
بد انكه اكثر شراح كمام را بكسر كاف جمع كمة دائته اند بضم كاف- ... قباب حمع قبة وكمة بضم قلنسوةء مدور را كويند كذا فى القاموس- (اشعة اللمعات جصفه ৫৪৩)
অর্থঃ- জেনে রাখ যে, অধিকাংশ হাদীস শরীফের ব্যখ্যাকারগণ কিমামরূহৃব্জহৃ শব্দটিকে কুম্মাতুন’-উনার বহুবচন বলে সাব্যস্ত করেছেন। যেরূপ ক্বিবাবকুব্বাতুন-উনার বহু বচন। আর গোল টুপিকেই মুলতঃ কুম্মাতুন বলা হয়। অনুরূপ ক্বামূসেও উল্লেখ আছে।” (আশয়াতুল লুময়াত জিঃ-৩, পৃষ্ঠা-৫৪৩)
(২৮-২৯)

کھا اکثر شار حین کمام ساتھ زیر کاف کے جمع کمۃ کی ھے ساتھ پیش کاف کے- جیسے قباب جمع قبہ کی- اور کمہ کھتے ھیں ٹوپی مدور گو کذا فی القاموس- (مظاھر حق جصفہ ৫৩৩)
অর্থঃ- হাদীস শরীফের অধিকাংশ ব্যখ্যাকারগণ বলেছেন, কিমাম كمام  শব্দটি, কুম্মাতুন  (كمة)-উনার বহুবচন। যেরূপ ক্বিবাব শব্দটি কুব্বাতুন’-উনার বহুবচন। আর কুম্মাতুনবলা হয় গোল টুপিকে। উনারূপ ক্বামূসেও উল্লেখ আছে।” (মোযাহেরে হক্ব-জিঃ ৩, পৃঃ ৫৩৩)
(৩০)
کمام جمع کمہ کی کاف کے پیش سے- جیسے قبہ کی جمع ھے قباب- کمۃ کی اصل ھے کم بمعنی ڈھکنا- گھیرنا- اب اصطلاح میں ٹوپی کو کمہ کھا جاتا ھے کہ وہ سرکو گھیرتی اسے ڈھکتی ھے- (مرأۃ المناجیح جصفہ ১০২)
অর্থঃ- “‘কিমামশব্দটি কুম্মাতুন’-উনার বহু বচন, যেরূপ ক্বুব্বাতুন’-উনার বহুবচন হচ্ছে ক্বিবাব। আর কুম্মাতুনশব্দটির মুল হচ্ছে- কুম্মুন (كم)যার অর্থ হচ্ছে- আবৃত করা, পরিবেষ্টন করা। পরিভাষায় টুপিকেও কুম্মাতুনবলা হয়। যেহেতু টুপি মাথাকে আবৃত ও পরিবেষ্টন করে রাখে।” (উিনারআতুল মানাজীহ- জিঃ ৮, পৃঃ ১০২)
(৩১-৩২)

الكمة- قلنسوة مدورة لانها تغطى الرأس- (القاموس المحيط، لسان العرب)
অর্থঃ- আল্ কুম্মাতুহলো- গোল টুপি, কেননা গোল টুপি মাথাকে ঢেকে রাখে।” (আল ক্বামুসূল মূহীত, লিসানুল আরব)
(৩৩-৩৪)
الكمة- كول ثو.. دهكنا- (مصباح اللغات، المنجد)
অর্থঃ- কুম্মাতুনশব্দের অর্থ হচ্ছে- গোল টুপি, আবৃত করা। (মিছ্বাহুল লোগাত, আল মুন্জিদ)
            হাদীস শরীফে বর্ণিত কুম্মাতুন শব্দের উপরোক্ত ব্যাখ্যা ও অর্থ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি মোবারক ছিল গোল। কাজেই সাদা রংয়ের হওয়া যেরূপ সুন্নত, তদ্রুপ টুপিটি গোল হওয়াও সুন্নত। সুতরাং যে টুপি গোলাকার নয়, সে টুপি সুন্নতী টুপি নয়।
            আরো উল্লেখ্য যে, হাদীস শরীফে সুন্নতী টুপির ক্ষেত্রে বুত্হুন (بطح) শব্দও উল্লেখ আছে। মুহাদ্দিসীন-ই-কিরাম রহমতুল্লাহিগণ বুত্হুনশব্দের ব্যাখ্যা ও অর্থে যা লিখেছেন, নির্ভরযোগ্য কিতাব সমূহ হতে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
(৩৫)
(بطحا) بضم الموحده فسكون المهملة جمع بطحاء اى كانت مبسوطة على الرأس غير مرتفعة عنها. (تحفة الاخوذى ج ه صفه ৪৭৯)
অর্থঃ- বা-উনার উপর পেশ ও ত্বোয়া-উনার উপর সাকিন দিয়ে বুত্হুন (بطح) শব্দটির বহুবচন হচ্ছে-  (بطحاء) অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি মোবারক মাথার সাথে লেগে থাকতো, মাথা থেকে উচুঁ হয়ে থাকতোনা।” (তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী- জিঃ৫, পৃঃ ৪৭৯)
(৩৬)
(بطحا) اى لازقة بالرأس غير ذاهبة فى الهواء. (نهايه ابن الاثير ج صفه ১৩৫)

অর্থঃ- বুত্হুন- অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি মাথার সাথে ভালরূপে লেগে থাকতো, বাতাসে উঠে যেতনা।” (নেহায়া ইব্নুল আছীর- জিঃ১, পৃঃ ১৩৫)
(৩৭)
(بطحا) ............. يعنى انها كانت منيطحة غير منتصبة- (نهاية ابن الاثير ج صفه ২০০)

অর্থঃ- “‘বুত্হা’ ....... অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি মোবারক মাথার সাথে (সব দিক থেকে) মিশে বা জড়িয়ে থাকতো, মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকতোনা।” (নেহায়া ইব্নুল আছীর জিঃ৪ পৃষ্ঠা-২০)
(৩৮)
(بطحا) بضم الموحدة فسكون المهملة جمع بطحاء- اى كانت مبسوطة على رؤسهم لازقة غير مر تفعة عنها. (مرقاة المفاتيح ج صفه ২৪৬)
অর্থঃ- “‘বুত্হুনবা-উনার উপর পেশ, ত্বোয়া-উনার উপর সাকিন, ‘বুতহুন’-উনার বহুবচন হচ্ছে- বুতহাউন। অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি, তাঁদের মাথার সাথে লেগে থাকতো। এমনভাবে লেগে থাকতো যে, তা মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকতোনা।” (উিনারকাতুল মাফাতীহ্-জিঃ৮, পৃঃ ২৪৬)
(৩৯)     

(وبطحا) بضم الباء وسكون الطاء- معناه انها كانت مبسوطة لازقة برؤسهم غير مرتفعة عنها. (شرح الطيبى ج صفه ২১৫)
অর্থঃ- বা-উনার উপর পেশ ও ত্বোয়া-উনার উপর সাকিন দিয়ে বুত্হুন-উনার অর্থ হচ্ছে- নিশ্চয় হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি, তাঁদের মাথার সাথে চতুর্দিক থেকে লেগে থাকতো, মাথা থেকে উঁচু হয়ে থাকতোনা।” (শরহুত্ ত্বীবী-জিঃ ৮, পৃঃ ২১৫)
(৪০)
(بطحا) بضم الموحدة فسكون المهملة جمع بطحاء اى كانت مبسوطة على رؤسهم لازقة غير مر تفعة عنها. (التعليق الصبيح ج صفه ৩৮৬)
অর্থঃ- “‘বুত্হাবা-উনার উপর পেশ, ত্বোয়া-উনার উপর সাকিন। বুত্হুন-উনার বহুবচন হচ্ছে- বুত্হাউন। অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি তাঁদের মাথার সাথে ভালরূপে লেগে থাকতো। তাঁদের টুপি কখনোই মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকতোনা।” (আত্ তালীকুছ ছবীহ্- জিঃ৪, পৃঃ ৩৮৬)
(৪১)

بطح ............. یعنی بود کلاہ ھائے ایشاں مدور و مبسوط چپیدہ بسر نہ در از و بلند رفتہ بجانب ھوا- (اشعۃ اللمعات جصفہ ৫৪৩)

অর্থঃ- “‘বুত্হুন’ .... অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাাঃ)গণের টুপি মোবারক ছিল গোল এবং তা মাথার সাথে ভালভাবে লেগে থাকতো। তাঁদের টুপি লম্বা বা উঁচু ছিলনা এবং বাতাসে উঠে যেতোনা।” (আশয়াতুল লুময়াত- জিঃ৩, পৃঃ ৫৪৩)
(৪২)
بطح ....... یعنی تھیں ٹوپیاں ان کی مدور اور مبسوط لگی ھوئیں سرسے نہ در از و بلند گی ھوئیں اوپر ھوا کی طرف-
(مظاھر حق جصفہ ৫৩৩)

অর্থঃ- “‘বুত্হুন’ ........ অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি ছিল গোল এবং তা মাথার সাথে ভালভাবে লেগে থাকতো। তাঁদের টুপি লম্বা বা উঁচু ছিলনা এবং তা বাতাসেও উঠে যেতনা।”(মোযাহেরে হক জিঃ৩, পৃঃ ৫৩৩)
(৪৩)

(بطحا) یھاں بطحا سے مراد ھے چوڑی ٹوپی جو گول ھوں اور فراخ- کہ سر  سے اٹھی نہ رھے بلکہ ساری کھوپڑی پر چمٹی رھے- حضرت صحابہ کی ٹوپیاں ایسی ھی ھوتی تھی- (مرأۃ المناجیح جصفہ ১০৩)
অর্থঃ- “(বুত্হা) এখানে বুত্হাদ্বারা উদ্দেশ্য হলো চওড়া টুপি, যা গোল এবং প্রশস্ত, যা মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকেনা, বরং সম্পূর্ণরূপে মাথার সাথে মিলে থাকে। হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি উনারূপই হতো।” (উিনারআতুল মানাজীহ- জিঃ ৬, পৃঃ ১০৩)
            হাদীস শরীফে বর্ণিত (بطح) বুত্হুনের উক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই ছাবেত হলো যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ গোল টুপি পরিধান করতেন। এমন গোল টুপি, যা সবদিক থেকে ভালরুপে মাথার সাথে লেগে বা চেপে থাকতো। যার ফলে টুপিটি বাতাসে উড়ে যেতনা। আর তাঁদের টুপি লম্বা বা উঁচুও ছিলনা। কাজেই যে টুপি লম্বা বা উঁচু এবং সবদিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকেনা, সে টুপি সুন্নতী টুপি নয়।
            উল্লেখ্য, তিরমিযী শরীফে হযরত আবু কাবশা রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত হাদীস শরীফের শেষে বলা হয়েছে যে,

 "بطح يعنى واسعة"
অর্থাৎ- বুত্হুন শব্দের অর্থ হচ্ছে- প্রশস্ত।
            মূলতঃ  واسعة(ওয়াসিয়াতুন) বা প্রশস্ত”   শব্দ দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি ছিল প্রশস্ত, যার ফলে তা ভালরূপে মাথার ভিতর প্রবেশ করতো। অর্থাৎ তাঁরা উনারূপ টুপি পরিধান করতেন না, যে টুপি মাথায় পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করেনা এবং সবদিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকেনা বা মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকে। মুহাদ্দিসীনে কিরাম রহমতুল্লাহিগণ ওয়াসিয়াতুন বা প্রশস্ত-উনার যে ব্যখ্যা দিয়েছেন। নিম্নে তার দলীল সমূহ পেশ করা হলো-
(৪৪)

والمراد انها ما كانت ضيقة روميه او هندية بل كان وسعها مقدار شير= (مرقاة المفاتيح ج صفه ২৪৬)
অর্থঃ- “ ‘ওয়াসিয়াতুনশব্দ দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রা)গণের টুপি, রোমী বা হিন্দী টুপিরন্যয় সঙ্কুচিত ছিলনা। বরং তাঁদের টুপিপ্রায় এক বিঘত পরিমান প্রশস্ত বা চওড়া ছিল।” (উিনারকাতুল মাফাতীহ্- জিঃ ৮, পৃঃ ২৪৬)
(৪৫)

مرقاۃ نے فرمایا کہ حضرات صحابہ کی ٹوپیوں کی چوڑائی ایک بالشت ھوتی تہی- ساڑے سرپر چمٹی ھوتی تہی-
(مرأۃ المناجیح جصفہ ১০৩)
অর্থঃ- সাহেবে উিনারকাত বলেন, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপির প্রশস্ততা ছিল এক বিঘত পরিমান। তাই সমস্ত মাথায় ভালভাবে লেগে থাকতো।” (উিনারআতুল মানাজীহ্- জিঃ ৩, পৃঃ ১০৩)
            মূলতঃ চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপির দ্বারাই ওয়াসিয়াতুন বা প্রশস্ততার হুকুম পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করা সম্ভব। কারণ চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপির চারিদিকে তিনটি টুকরা ও উপরে গোলাকৃতির পৃথক একটি টুকরা থাকে। উপরে পৃথক একটি টুকরা থাকার ফলে টুপিটি যেরূপ প্রশস্ত হয়, তদ্রুপ মাথার ভিতর ভালরূপে প্রবেশ করে ও মাথার সাথে সবদিক থেকে ভালভাবে লেগে থাকে এবং মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকেনা। তাই হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি সাদা রংয়ের চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি পরিধান করেছেন। নিন্মে তার দলীল পেশ করা হলো-
(৪৬)     

حضرت حاضی شریف زندنی رحمہ اللہ علیہ ..... ارشاد فرما یا کہ اے عثمان جمکہ تمنے "کلاہ چھار ترکی" رپر رکھی ھے- لازم ھے کہ اسکا حق بجالاؤکے ....... حضرت خواجہء عالم صلی اللہ علیہ وسلم نے جس وقت سے اس، کلاہ کو اپنے سر مبارک پر رکھا فقر و فاقہ اختیار کیا- بعد اسکے حضرت علی کرم اللہ وجہہ نے پھنا اور فقر و فاقہ کو اپنی ذات پر لازم گردانا- اسیطرح سلسلۃ مجھ تک پھنچا= (انیس الارواح مجموعۃ ملفوظات خوا جگان چشت- باب اول صفہ ১১-১০)

অর্থঃ- হযরত হাজী শরীফ জিন্দানী রহমতুল্লাহি ... বলেন, হে ওছমান হারুনী! যখন তুমি চার টুকরা বিশিষ্ট টুপি মাথায় পরিধান করেছ, তখন তোমার জন্য তার হক আদায় করা আবশ্যক। .... সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন চার টুকরা বিশিষ্ট টুপি পরিধান করেন, তখন দারিদ্রতা ও উপবাসকে গ্রহণ করেন। তারপর হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রহমতুল্লাহি আলাইহি চার টুকরা বিশিষ্ট টুপি পরিধান করেন এবং দারিদ্রতা ও উপবাসকে নিজের জন্য জরুরী করে নেন। উনারূপভাবে পর্যায়ক্রমে চার টুকরা বিশিষ্ট টুপি আমার নিকট পৌছে।” (আনীসুল আরওয়াহ- মাজমুয়ায়ে মাল্ফুযাতে খাজাগানে চিশ্ত - ১ম বাব, পৃঃ ১০-১১)
(৪৭-৪৮) হে দরবেশগণ! চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিই প্রকৃত টুপি। হযরত জিব্রাইল (আঃ) বেহেশ্ত হতে এ টুপি এনে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরিধান করতে দিয়ে বলেন, আপনি পরিধান করুন এবং আপনি যাকে ইচ্ছা তাকে এ টুপি দান করে আপনার খলীফা নিযুক্ত করুন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতুমুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিটি মাথায় পরিধান করেন এবং পরবর্তীতে হযরত আবুবকর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ওউনার রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ওসমান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আলী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে একটি করে টুকরা দান করেন।
(ইসরারুল আওলিয়া-পৃঃ ১১৯, অনুরূপ আনীসুল আরওয়াতেও উল্লেখ আছে)।
            খলীফায়ে আযম, শায়খে শুয়ূখিল আলম, সানাদুল মুওয়াহ্হেদীন, সুলতানুল আরেফীন, ওয়ারিছুন নবী ফিল হিন্দ, মুঈনুল মিল্লাত ওয়াশ্ শরা ওয়াল হুদা ওযাদ্ দ্বীন, হাবীবুল্লাহ্ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি, সান্জেরী ছুম্মা আজউেনারী রহমতুল্লাহি-উনার মালফূযাত সম্বলিত বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব আনীসুল আরওয়াহ্ও ইমামুল আইম্মা, হযরত ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি-উনার মালফুযাত সম্বলিত কিতাব ইস্রারুল আওলিয়ানামক কিতাবের উক্ত বর্ণনা দ্বারা স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও বিশিষ্ট সাহাবী, খলীফায়ে রাশেদ রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি পরিধান করতেন। কাজেই চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিই হচ্ছে খাছ সুন্নতী টুপি, আর এ ধরণের সুন্নত সম্পর্কে হাদীস শরীফে উনারশাদ হয়েছে,                       

عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين، تمسكوابها وعضوا عليها بالنواجذ.
অর্থঃ- তোমাদের জন্য আমার ও খোলাফায়ে রাশেদীনগণের সুন্নত অবশ্যই পালনীয়, তোউনারা মাড়ীর দাঁত দ্বারা মজবুতভাবে উক্ত সুন্নতগুলো আঁকড়িয়ে ধর” (মেশকাত, উেনারকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, উিনারআতুল মানাজীহ)
            আর তাই অনুসরণীয় সকল আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহিগণ বিশেষতঃ চিশতীয়া খান্দানের বুযুর্গ আলেমগণ নিজে যেরূপ সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিপরিধান করেছেন, তদ্রুপ নিজ খলীফা ও মুরীদ-মুতাক্বিদগণকেও চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিপরিধান করার জন্য তাকীদ করেছেন। নিম্নে তার কিছু দলীল পেশ করা হলো-
(৪৯)
خواجہ حریق المحبت فرید الحق و الدین مسعود گنجشکر اجودھنی رحمۃ اللہ علیہ تحریر فرماتے ھیں کہ جب اس بندہء حقیر خادم  درویشاں کو دولت قدم بوسی حضرت قطب الاسلام رحمۃ اللہ علیہ کی حاصل ھوئی اپنے اسیوقت کلاہ چھار ترکی میرے سرپر رکھی-
(فوائد السالکین- مجلس اولصفہ ১০২
অর্থঃ- খাজা, হারীকুল মুহাব্বাত, ফরীদুল হক্ব ওয়াদ্দ্বীন, হযরত ফরীদুদ্দীন গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি লিখেন, যখন এই অধম বান্দা ও দরবেশদের খাদেম, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি-উনার কদমবুছী করার সৌভাগ্য লাভ করে, তখন তিনি আমাকে চার টুকরা বিশিষ্ট টুপি পরিয়ে দেন।” (ফাওয়ায়েদুস সালেকীন- ১ম মজলিস, পৃঃ ১০৬)
(৫০)

اسکے بعد ارشاد فرمایا کہ خواجہ عبد اللہ سھیل تستری رحمۃ اللہ علیہ نے درباب "کلاہ چھار ترکی تحریر کیا ھے کہ اس کلاہ میں جو چار خانہ ھیں انسے یہ مراد- خانئے اول انوار واسرار ھے خانئے دوممحبت و توکل ھے-خانئے سوم- عشق و اشتیاق ھے- خانئے چھارم- رضا و موافقت ھے- اسکے بعد ارشاد فرمایا کہ اے درویش کلاہ چھار ترکی "پھننے و الے کو لازم ھے کہ رعایت انسب امور کی کرے-
(راحت المحبین- مجلس چھارم- صفہ ৩২)
           
অর্থঃ- ... উনারপর উনারশাদ করেন, খাজা আব্দুল্লাহ্ সোহাইল তস্তরী রহমতুল্লাহি চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপির ব্যাপারে লিখেন যে, “চার টুকরা বিশিষ্ট টুপিরমধ্যে যে চারটি টুকরা রয়েছে, তার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- প্রথম টুকরা নূর ও আসরার, দ্বিতীয় টুকরা- মহব্বত ও তাওয়াক্কুল। তৃতীয় টুকরা- ইশ্ক্ব ও ইশ্তিয়াক্ব। চতুর্থ টুকরা- রেজা ও মোওয়াফেক্বত। তারপর বলেন, হে দরবেশগণ চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিপরিধানকারীদের জন্য উক্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা আবশ্যক। (রাহাতুল মুহিব্বীন- চতুর্থ মজ্লিস- পৃঃ ৩২০)
(৫১)
حضرت خواجہ قطب الاقطاب رحمۃ اللہ علیہ تحریر فرماتے ھیں کہ تاریخ مذکورہ بالاکو شھر بغداد کی مسجد ابو اللیث سمرقندی میں حاضر ھو کر شرف بیعت حضرت خوا جہ بزرگ سے مشرف ھوا- اپنے از روئے نوازش و کرم مجھ فقیر کو اپنے زمرہ حلقہ بگوشاں میں قبول فرما کر کلاہ چھار ترکی "عنایت فرمائی"
(دلیل العارفینمجلس اولصفی- ৪৭)
অর্থঃ- হযরত খাজা, কুতুবুল আক্বতাব, বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি লিখেন, উল্লিখিত তারিখে বাগদাদ শহরের আবুল লাইছ সউনারকন্দী মসজিদে হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমতুল্লাহি-উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করার সৌভাগ্য হয়। তিনি দয়া করে আমাকে উনারদলভুক্ত করেন এবং চার টুকরা বিশিষ্ট টুপি প্রদান করেন।” (দলীলুল আরেফীন- প্রথম মজলিস- পৃঃ- ৪৭)
            অতএব প্রমাণিত হলো যে, “চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিপরিধান করা সুন্নতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুন্নতে সাহাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও সুন্নতে আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি অর্থাৎ চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিই হচ্ছে, খাছ সুন্নতী টুপি।
(৫২-৫৪)

اور عمامہ کے نیچے سرمبارک سے چمٹی ھوئی ٹوپی ھوتی تھییہ ٹوپی سر سے پست و پیوست تھی بلند نہ تھی طاقیہ (جسے اجکل کلاہ کھتے ھیں) کی ماننداور حضور صلی اللہ علیہ وسلم کی ٹوپی سفید تھی- (مداج النبوۃسراج المنیراسوہء رسول)
অর্থঃ- পাগড়ীর নীচে মাথা মোবারকের সাথে মিলিত টুপি ছিল। এ টুপি মাথা মোবারকের সাথে ভালরূপে লেগে থাকতো, তাক্বিয়াহ (যাকে বর্তমানে কুলাহ বলে) উনার ন্যায় উচু ছিলনা। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার টুপি মোবারক সাদা রংয়ের ছিল” (মাদারেজুন্ নুবুওয়াত, সিরাজুম্ মুনীর, উস্ওয়ায়ে রাসূল)
(৫৫)
عمامہ کے نیچے سرسے لپٹی ھوئی ٹوپی ھوتی تھی اونچی ٹوپی کبھی استعمال نھیی فرمائی (سیرۃ النبیج২)

অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার  পাগড়ী মোবারকের নীচের টুপিখানা মাথার সাথে চেপে থাকতো। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনোই উচু টুপি ব্যবহার করেননি।
(সীরাতুন্ নবী- জিঃ২)
            বিখ্যাত আলেম ও হাদী হযরত মাওলানা রঈসুদ্দীন আহ্মদ রহমতুল্লাহি তাঁর দলীল সমৃদ্ধ বিখ্যাত কিতাব তাহ্ক্বীকুল মাসায়েল” -উনার ১২৯ পৃষ্ঠায় কোন টুপি সুন্নত, গোল না দোপাল্লা”? নামক অধ্যায়ে গোল টুপি সংক্রান্ত কতিপয় ফতওয়া সংকলন করেছেন। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো-
(৫৬-৬১)
           
سوالگول ٹوپی پھننا کیا ھے- حضرت نبی اکرم صلی اللہ علیہ وسلم یا صحابہ کرام کس قسم کی ٹوپی پھنتے ٹھے دوپلے یا گول-
প্রশ্নঃ- গোল টুপি পরা কি? হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবা রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ কি প্রকার টুপি ব্যবহার করতেন? গোল না দোপাল্লা (কিস্তি)?
উত্তরে সাহারানপুর মোজাহেরুল উলূম মাদ্রাসার মুফতী মুজাফ্ফর হোসাইন সাহেবের হস্তলিখিত প্রেরিত ফতওয়া (১নং  ১৪৭, তারিখ- ২৫/৮/৫৯ ইং হিজ্রী ১৩৭৯)

الجواب- گول پھننا جائز ھے- (فتاوی رشیدیہ صفہ -৪৮৩) صحابہ کرام کی ٹوپی اٹھی ھوئی نھیی ھوتی تھیمشکوۃ شریف صفہ৩৭৪ میں روایت ھے- عن ابی کبشۃ (رضی اللہ تعالی عنہ) قال کان کمام اصحاب رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم بطحا وفی المرقاۃ  ای مبسوطۃ علی رؤسھم لازقۃ مع رؤ سھم غیر مرتفعۃ فقطکتبہ مظفر حسین مظاھری (مفتی مظاھرالعلوم) کمۃ کاجمع کمام  ھے کمۃ کامعنی گول ٹوپی کذا فی القاموس و مصباح اللغات-

অর্থঃ- জাওয়াব- গোল টুপি পরিধান করা জায়েয, (ফতওয়ায়ে রশিদীয়া- ৪৮৩ পৃঃ) হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি উঠে থাকতোনা। মিশকাত শরীফের ৩৭৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে হযরত আবু কাবশা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার - সাহাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি গণের টুপি ছিল গোল, যা মাথার সাথে লেগে থাকতো, উচু হয়ে থাকতোনা। উিনারকাতেও অনুরূপ উল্লেখ আছে। উক্ত ফতওয়াটি লিখেছেন, মোজাফ্ফর  হুসাইন মোযাহেরী (মুফতী মোযাহের উলূম মাদ্রাসা), ‘কুম্মাতুন’-উনার বহুবচন হলো কিমাম, আর কুম্মাতুনঅর্থ- গোল টুপি, অনুরূপ ক্বামুস ও মিছ্বাহুল লোগাতেও উল্লেখ আছে।
(৬২-৬৩)

سوال : جضرت نبی اکرم صلی اللہ علیہ وسلم اور صحابہ کی ٹوپی گول تھی یا دوپلہ مدلل جواب عنایت فرماویں-

অর্থঃ- সুওয়ালঃ নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি গণের টুপি গোল ছিল, না দোপাল্লা বা কিস্তি? প্রমান সহ উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।
            প্রশ্নের জবাবে দেওবন্দ মাদ্রাসার মুফতী সাহেব লিখেছেন-
الجواب گول سرمبارک سے چپٹی ھوتیٹی ھوتی تھی کما ھو المستفاد من شرح المواھب الامام زرقانی- جصفہ৯-

অর্থঃ- জাওয়াব- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবীয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি গণের টুপি মোবারক ছিল গোল, যা মাথা মোবারকের সাথে চেপে থাকতো। যেমন- ইমাম যুরক্বানী রহমতুল্লাহি-উনার শরহে মাওয়াহেব-উনার ৫ম জিঃ ৯ম পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়।
(উক্ত প্রশ্নের জবাবে) বিহার শরীফ আযীযিয়া মাদ্রাসার হেড মাওলানা এবং মুফতী সাহেব লিখেছেন যে, (তাং ২০/৮/৫৯ইং)
(৬৪-৬৫)

الجواب :- گول ٹوپی پھنتے تھے جیسشا کہ مواھب الدنیہ میں مذکور ھے- عبد المتین مدرس اولومفتی مدرسہ عزیزیہ بھار شریف-
            অর্থঃ- জাওয়াব- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ গোল টুপি পরিধান করতেন। যেমন মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়াহ-উনার মধ্যে উল্লেখ আছে। (ফতওয়া লেখক আব্দুল মতীন, প্রথম মোদাররেস ও মুফতী-মাদ্রাসায়ে আযীযীয়া বিহার শরীফ)।
            স্মর্তব্য যে, “তাহকীকুল মাসায়েলেবর্ণিত সাহারানপুর, দেওবন্দ, ও বিহার শরীফের মুফতীগণের দেয়া ফতওয়া মোতাবেক এটাই ছাবেত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি গণ গোল টুপি পরিধান করতেন। এমন গোল যা সব দিক থেকে মাথার সাথে ভালরূপে লেগে থাকতো, মাথা হতে কিঞ্চিৎ পরিমাণও উঁচু হয়ে থাকতোনা, আর সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, তাঁরা কখনো কিস্তি টুপি পরিধান করেননি। কাজেই কিস্তি টুপিকে সুন্নত বলা গোউনারাহী বৈ কিছুই নয়।
            উল্লেখ্য, কিস্তি বা দোপাট্টা টুপি প্রকৃত পক্ষে টুপিরই অর্ন্তভূক্ত নয়, কারণ কিস্তি বা দোপাট্টা (টুপি) টুপির সংজ্ঞাতেই পরেনা। কেননা অভিধানে টুপির যে অর্থ করা হয়েছে তাতে এটাই ছাবেত হয় যে, গোলাকার বস্তুকেই মূলতঃ টুপি বলে, যেমন- এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত উর্দূ লোগাত জামে ফিরুযুল লোগাতের ৪২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
৬৬)

"ٹوپی"- (১) سرکی یوشاککلاہتاج – (২) بندوق کاپٹاخاجس پر گھوڑا لگنے سے اگ پیدا ھوتی ھے- (৩) شکاری جانور کے منہ پر چرھائے کی تھیلی (৪) پھل کے اوپر کا خول (৫) دور بین کے منہ کڈھکم نا (৬) حشفہ ذکر کا سر (৭) حقے پر رکھنے کا برتن (৮) کسی چیز کا بالائی حصہ
অর্থঃ- টুপি অর্থ হচ্ছে- (১) মাথার পোশাক, টুপি, তাজ (২) বন্দুকের ক্যাপ (৩) শিকারী পশুর মুখে লাগানোর থলী, (৪) ফলের উপরের খোসা (৫) অনুবীক্ষণ যন্ত্রের মুখের ঢাকনী (৬) পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ (৭) হুক্কার চিলিউেনার  উপর টিনের ঢাকনী (৮) কোন বস্তুর উপরের অংশ।
            উপরোল্লিখিত বস্তুগুলো যেহেতু গোলাকার তাই সেগুলোকে টুপি বলা হয়। কাজেই মাথায় ব্যবহৃত পোশাকটি যদি গোল হয়, তবেই তাকে টুপি বলা যাবেনচেৎ তা টুপির অর্ন্তভুক্ত নয়। অতএব, কিস্তি বা দোপাট্টা (টুপি) যেহেতু গোলাকার নয় বরং কিস্তি বা নৌকার ন্যায় লম্বা, তাই তা টুপিরই অন্তর্ভুক্ত নয়। তদ্বারা সুন্নত আদায় হওয়া তো অনেক দুরের কথা।
(৬৭)

سوالگول ٹوپی اوڑھنا کہ جس پردو پٹہ باعث دب جانے ٹوپی کے نہ باندہ سکتا ھو- اور درمیان میں خلا رھے یعنی سرپر درمیان میں نہ لگے تو اسکا استعمال کیسا ھے؟
جواب- گول ٹوپی درست ھے مگر جس میں مشابھت کسی قوم بے دیں کی ھو وہ درست نھیں (فتاوے رشیدیہ- صفی ৫৮৬)
র্
অর্থঃ- প্রশ্নঃ- গোল টুপি যা ডেবে যাওয়ার আশঙ্কায় তার উপর রুমাল বাধা যায়না এবং মাঝে ফাঁকা থাকে, মাথার সাথে লেগে থাকেনা বরং মাথা থেকে উঁচু হয়ে থাকে। এ ধরণের টুপি ব্যবহার করা কিরূপ?
উত্তরঃ- গোল টুপি পরিধান করা জায়েয। তবে যে টুপি পরিধান করাতে বিধর্মীদের সাথে স্বাদৃশ্য হয়, সে টুপি পরিধান করা নাজায়েয। (ফতওয়ায়ে রশীদীয়াহ-পৃঃ ৫৮৬)
            ফতওয়ায়ে রশীদীয়ার এ বক্তব্য দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, যে গোল টুপি মাথার সাথে লেগে থাকে তা পরিধান করা অবশ্যই জায়েয, কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি গণ এধরনের গোল টুপি পরিধান করেছেন বলে হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। আর যে টুপি মাথার সাথে লেগে থাকেনা বরং মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকে, চাই সে টুপি গোল হোক অথবা লম্বা, তা পরিধান করা নাজায়েয। কারণ তাতে বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য হয়। যেমন বুরনুস, কিস্তি ইত্যাদি টুপি। কারণ বুরনুস ও কিস্তি টুপি বিধর্মীদের টুপি এবং তা মাথার সাথে লেগে থাকেনা বরং উঁচু হয়ে থাকে।
            অতএব, ফতওয়ায়ে রশিদীয়ার বক্তব্য মোতাবেক বুরনুস ও কিস্তি টুপির ন্যয় যে টুপি পরিধান করলে বিধর্মীদের সাথে স্বাদৃশ্য হয় সে টুপি পরিধান করা নাজায়েয।
৬৮)
سوالگول ٹوپی لگانا سنت ھےاور رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم ٹوپی کیسی دیتے تھےجو لوگ اصرار کرتے ھیں گل ٹوپی پر انکا  اصرار کرنا کیسا ھے؟
الجواب حامدا و مصلیاگول ٹوپی سر سے ملی ھوئی (چپگی ھوئی) جو کہ اونچی نہ ھو حدیث شریف سے ثابت ھے مگر یہ چیز سنن عادیہ میں سے ھے سنن ھدی میں سے نھیںپس جو شخص اتباع کریگا وہ ماجور ھوگالیکن اس پر کسی کو اصرار کا حق نھیں کہ تارک پر ملامت کیجائے- (فتاوی محمودیہجصفہ ১১৮)

অর্থঃ- প্রশ্নঃ গোল টুপি পরিধান করা কি সুন্নত? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিরূপ টুপি পরিধান করতেন? যে ব্যক্তি গোল টুপির ব্যাপারে ইছরার’ (বাড়াবাড়ি) করে, তার সে বাড়াবাড়ি কিরূপ?
            উত্তরঃ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে যে, (সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোল টুপি পরিধান করতেন, এমন গোল টুপি যা মাথার সাথে ভাল রূপে লেগে থাকতো এবং তা উঁচু হয়ে থাকতোনা। কিন্তু এ আমলটি সুনানে আদিয়ার অন্তর্ভূক্ত, সুনানে হুদার অন্তর্ভূক্ত নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি এটা আমল করবে, সে সওয়াব পাবে। কিন্তু উক্ত আমল পরিত্যাগকারীকে তিরস্কৃত করার অধিকার কারো নেই।” (ফতওয়ায়ে মাহ্মুদীয়াহ্- জিঃ ৫, পৃঃ ১১৮)
            ফতওয়ায়ে মাহ্মুদীয়ার উক্ত বক্তব্য দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, যে টুপি গোল এবং মাথার সাথে সব দিক থেকে লেগে থাকে সে টুপিই সুন্নতী টুপি। আর যে টুপি গোল নয় বরং লম্বা এবং মাথার সাথে সব দিক থেকে লেগে থাকেনা ও মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকে সে টুপি সুন্নতী টুপি নয়, কারণ এ ধরণের টুপির প্রমাণ হাদীস শরীফের কোথাও নেই, যা উক্ত বক্তব্য দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যায়। তবে ফতওয়ায়ে মাহমুদীয়ার সুনানে আদিয়াহ ও হুদাসম্পর্কিত বক্তব্যটি সঠিক নয় কারণ উক্ত বক্তব্য লেখকের সম্পূর্ণই মনগড়া। এ সম্পর্কে সংশয় নিরসনে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
(৬৯)     
حدیث میں ھے کہ صاحبہ کرام رضی اللہ تعالی عنھم کی ٹوپی سر سے لگی ھوئی ھوتی تھیاسی عرض سے اکابر دین میں پانچ کلی کی ٹوپی کار واج ھوا ھے- (گلزار سنت  - صفہ ১০)

অর্থঃ- হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি মোবারক মাথার সাথে ভালভাবে লেগে থাকতো। আর এ উদ্দেশ্যেই আকাবিরে দ্বীনের মধ্যে পাঁচকল্লি টুপির প্রচলন হয়েছে।” (গুলজারে সুন্নত- পৃঃ ১০, লেখক আসগর হুসাইন, মুহাদ্দিস দারুল উলুম দেওবন্দ)
            গুলজারে সুন্নতের উক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পাঁচকল্লি টুপির উৎপত্তি কারক হচ্ছে আকাবিরে দেওবন্দ। অর্থাৎ পাঁচকল্লি টুপি নতুন আবিস্কৃত টুপি, যাকে বিদয়াত বলা হয়।
            উল্লেখ্য মাথার সাথে ভালভাবে লেগে থাকবে এ উদ্দেশ্যেকে সামনে রেখে আকাবিরে দেওবন্দ পাঁচকল্লি টুপির প্রচলন করলেও তদ্বারা এ উদ্দেশ্য মোটেও পূর্ণ হয়না। কারন পাঁচকল্লি টুপি পঞ্চকোনের কারনে এবং তা উপরের দিকে চোখা বা সঙ্কুচিত হওয়ায়। অর্থাৎ উপরের দিক ত্মঞ্জèব্জঃম্লব্ধত্র প্রশস্ত না হওয়ায় পাঁচকল্লি টুপি অনেক ক্ষেত্রেই মাথার সাথে ভালরূপে মিশে থাকেনা বরং উঁচু হয়ে থাকে। কাজেই এক্ষেত্রে পাঁচকল্লি টুপির দ্বারা কখনোই সুন্নত আদায় হবেনা। কারণ টুপির পূর্ণ সুন্নত আদায় হওয়ার জন্য, টুপিটি গোল হওয়া যেরূপ শর্ত, তদ্রুপ টুপিটি সবদিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকা এবং উপরের দিক সঙ্কুচিত না হওয়া বরং প্রশস্ত হওয়াও শর্ত। অতএব, পাঁচকল্লি টুপি নতুন আবিস্কৃত হওয়ার কারণে যেরূপ বিদয়াত তদ্রুপ মাথার সাথে লেগে না থাকার কারণে তা সুন্নতের খেলাফ।
৭০-৭২)
تکرہ الصلوۃ مع البرنس – (فتاوے عالمگیریہ ج صفہ ১০و کذا فی عتابیہ و التاتار خانیہ)

অর্থঃ- বুরনুসপরিধান করে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী” (ফত্ওয়ায়ে আলমগীরী- জিঃ ১, পৃঃ ১০৬, অনুরূপ এতাবিয়াহ ও তাতারখানীয়াহতে উল্লেখ আছে।)
            উপরোক্ত ইবারতে বুরনুসশব্দ উল্লেখ আছে আর বুরনুসশব্দটি একাধিক অর্থ বিশিষ্ট একটি শব্দ। বুরনুসশব্দের অর্থ- উঁচু টুপি, টুপি সংযুক্ত জুব্বা, রেইন কোর্ট, পশমী চাদর, ইত্যাদি। উক্ত ইবারতে বুরনুসশব্দ দ্বারা মুলতঃ উঁচু টুপি ও রেশম মিশ্রিত বুরনুসকেই বুঝানো হয়েছে। কারণ উঁচু টুপি বিধর্মী বা খ্রীষ্টানদের খাছ টুপি। আর রেশম পুরুষের জন্য হারাম।
            উল্লেখ্য, উঁচু টুপি নামক বুরনুসইসলাউেনার শুরু যুগে মুসলমানদের কেউ কেউ পরিধান করলেও বর্তমানে তা যে বিধর্মী বা খ্রীষ্টানদের টুপি তার বহু দলীল-প্রমাণ কিতাবে রয়েছে, নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো-
(৭৩-৭৪)
"البرنس" ....... قال الجوهرى هو قلنسوة طويلة كان النساك يلبسونها فى صدر الاسلام كذا فى المجمع. (حاشيهء بخارى شريف ة صفه ৮৬২)

অর্থঃ- ““বুরনুস” ...... জাওহারী রহমতুল্লাহি বলেন, বুরনুস হচ্ছে- লম্বা টুপি, যা আবিদ ও যাহিদ লোকেরা ইসলাউেনার প্রাথমিক যুগে পরিধান করতেন। অনুরূপ মাজমাকিতাবেও উল্লেখ আছে।” (হাশিয়ায়ে বোখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃষ্ঠা-৮৬২)
(৭৫)                 
"البرنس .... وقال الجوهرى قلنسوة طويلة كان النساك يلبسونها فى صدر الاسلام. (حاشيه ء ابوداود شريف ج صفه ১৫৩)
অর্থঃ- বুরনুস ...... ইমাম জাওহারী বলেন, বুরনুস শব্দের অর্থ হলো- লম্বা টুপি, যে টুপি আবিদ-যাহিদ লোকেরা ইসলাউেনার প্রাথমিক যুগে পরিধান করতেন।” (হাশিয়ায়ে আবূ দাউদ শরীফ ১ম জিঃ পৃষ্ঠা-১৫৩)
(৭৬)                 
"البرنس .......... وقال الجوهرى قلنسوة طويلة كان النساك يلبسونها فى صدر الاسلام. (حاشيهء نسائى شريف ج صفه ৯-৮)

অর্থঃ- বুরনুস ..... জাওহারী রহমতুল্লাহি বলেন, ‘বুরনুসলম্বা টুপিকে বলে, যা আবিদ-যাহিদ লোকেরা ইসলাউেনার প্রাথমিক যুগে পরিধান করতেন।” (হাশিয়ায়ে নাসাঈ শরীফ জিঃ২ পৃষ্ঠা-৮-৯)
(৭৭)     

"البرنس، .......... قلنسوة طويلة وكان النساك يلبسونها فى صدر الاسلام. (لسان العرب ج صفه ২৭০)
অর্থঃ- বুরনুস লম্বা টুপিকে বলে, যা ইসলাউেনার প্রাথমিক যুগে আবিদ-যাহিদ লোকেরা পরিধান করতেন।” (লেসানুল আরব ১ম জিঃ পৃষ্ঠা-২৭০)
(৭৮)
البرنس، قلنسوة طويلة كان النساك يلبسونها فى صدر الاسلام. (المغرب ج صفه ৬৯)
অর্থঃ- বুরনুস অর্থ লম্বা টুপি, যা আবিদ ও যাহিদ লোকেরা ইসলাউেনার শুরু যুগে পরিধান করতেন।” (আল মুগ্রিব ১ম জিঃ পৃষ্ঠা-৬৯)
(৭৯)
البرنس، وہ لمبی ٹوپی جو أغاز اسلام میں پھنی جاتی تھی – (المنجد صفہ ৮৪)

অর্থঃ- বুরনুস ঐ লম্বা টুপিকে বলে, যা ইসলাউেনার প্রাথমিক যুগে পরিধান করা হতো।
 (আল মুনজিদ পৃষ্ঠা-৮৪)
            শুধু তাই নয়, কিতাব সমূহে বুরনুসটুপিকে বেদ্বীন-বদ্দ্বীন, বিশেষ করে খৃষ্টানদের টুপি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যেমন-
(৮০)     

البرنس، بالصمکلاہ دراز کہ ترسایاں می پو شند – (حاشیہء نسائی شریف جصفہ ৭)

অর্থঃ- বা-উনার উপর পেশ দিয়ে বুরনুসশব্দের অর্থ হলো- লম্বা টুপি, যা অগ্নি উপাসকরা পরিধান করে।” (হাশিয়ায়ে নাসাঈ শরীফ ২য় জিঃ পৃষ্ঠা-৭)
(৮১)

برنس، ایک قسم کی ٹوپی جو أتش پرست استعمال کرتے ھیں – (لغات سعیدی)

অর্থঃ- বুরনুস এক প্রকার টুপি, যা অগ্নি উপাসকরা ব্যবহার করে।” (লোগাতে সাঈদী)
(৮২-৮৩)

برنس، لمبی ٹوپی جو راھب  پھنتےھیں (لغات ھیرا و کشوری)
অর্থঃ- বুরনুস হলো- লম্বাটুপি, যা খৃষ্টান রাহিব বা পাদ্রীরা পরিধান করে।” (লোগাতে হীরা ও কিশ্ওয়ারী)
(৮৪)                 

البرنس، .. .. بمعنی کلاہ دراز کہ کشیشاں می پوشند – (غیاث الغات صفہ ৭৪)
অর্থঃ- বুরনুস ..... অর্থ লম্বা টুপি, যা খৃষ্টান পাদ্রী বা মূর্তি পুজকরা পরিধান করে থাকে।” (গিয়াছুল লোগাত পৃষ্ঠা-৭৪)
(৮৫-৮৬)

"برنس" ... بعصوں نے کھا لمبی ٹوپی جس کو لوک شروع زمانہ اسلام میں پھنا کرتے تھے- ..... مجمع البحرین میں ھے برنس نصاری کی ٹوپی جو وہ سرپر رکھتے ھیں-
অর্থঃ- “....... কেউ কেউ বলেন, বুরনুস হচ্ছে- লম্বা টুপি, যা লোকেরা ইসলাউেনার শুরু যুগে পরিধান করতো। ............ মাজ্মাউল বাহ্রাইননামক কিতাবে উল্লেখ আছে, ‘বুরনুসনাছারাদের টুপি, যা তারা মাথায় দিয়ে থাকে।” (লোগাতুল হাদীস ১ম জিঃ পৃষ্ঠা-৫৪)
            উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, উঁচু বা লম্বা টুপিকেও বুরনুস বলে, মুসলমানদের কেউ কেউ ইসলাউেনার প্রাথমিক যুগে বুরনুসটুপি পরিধান করলেও বর্তমানে তা বিধর্মী বা খ্রীষ্টানদের খাছ টুপি। যা মুসলমানদের জন্য পরিধান করা খ্রীষ্টানদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার ক্ষেত্রে নাজায়েয এবং ফতওয়ায়ে আলমগীরীর বক্তব্য মোতাবেক বুরনুসটুপি পরিধান করে নামাজ পড়াও মাকরূহ্ তাহ্রীমী।
            অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ফতওযায়ে আলমগীরিতে বর্ণিত বুরনুসদ্বারা মূলতঃ উঁচু বা লম্বা টুপি নামক বুরনুসকেই বুঝানো হয়েছে, যেহেতু বুরনুসটুপি বিধর্মী বা খ্রীষ্টানদের খাছ টুপি, তাই বুরনুস টুপি পরিধান করে নামাজ পড়া মাকরূহ তাহ্রীমী।
            স্মর্তব্য যে, বোখারী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ ও নাসাঈ শরীফে উল্লেখ আছে যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম বুরনুসপরিধান করে নামাজ আদায় করেছেন। তা মূলতঃ টুপি সংযুক্ত জুব্বা। কারণ টুপি সংযুক্ত জুব্বাকেও বুরনুসবলে। নিম্নে ব্যখ্যা সহ তার দলীল পেশ করা হলো-
৮৭-৯১) 
عن ابن عمر ان رجلا قال يا رسول الله مايلبس المحرم من الثياب فقال النبى صلى الله عليه وسلم لا يلبس المحرم القميص ولا البسر اويل ولا البر نس ولا الخفين الا ان لايجد النعلين فليلبس ما اسفل من الكعبين. (بخارى شريف ج صفه ৮৬২، وكذا فى فتح البارى- عمدة القارى- ارشادالسارى، تيسير القارى)
অর্থঃ- হযরত ইবনে ওউনার রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত- এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! মুহ্রিম (হজ্বের সময়) কোন কোন পোশাক পরিধান করবে? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুহ্রিম ব্যক্তি ক্বামীছ, সেলোয়ার, ‘বুরনুসও মোজা পরিধান করবেনা। তবে কারো যদি জুতা-সেন্ডেল না থাকে, সে মোজা পরিধান করতে পারবে, তবে মোজা টাখনুর নীচে থাকতে হবে।” (বোখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃষ্ঠা-৮৬২, অনুরূপ ফাত্হুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, উনারশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারীতে উল্লেখ আছে)
            উক্ত হাদীস শরীফের বুরনুসশব্দের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে,
(৯২-১০১)          

قوله ولا البرنس- بضم موحده ونون- هو كل ثوب راسه منه ملتذق به من دراعة اوجبة او غيره قال الجوهرى هو قلنسوة طويلة كان النساك يلبسونها فى صدر الاسلام. (بخارى شريف ج صفه ৮৬২- وكذا فى نسائى- ابوداود- عمدة القارى- لسان العرب- القاموس- المغرب- الرائد- المنجد- لغات الحديث)
অর্থঃ- বা এবং নুনের উপর পেশ দিয়ে বুরনুসশব্দের অর্থ হচ্ছে- প্রত্যেক ঐ পোশাক, যার মাথার দিক তার সাথে সংযুক্ত বা লাগানো। তা কোট হোক অথবা জুব্বা। অর্থাৎ টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা কোট। জাওহারী বলেন, “বুরনুসহলো- লম্বা টুপি, যা আবিদ-যাহিদ লোকেরা ইসলাউেনার প্রাথমিক যুগে পরিধান করতেন।” (হাশিয়ায়ে বোখারী শরীফ, জিঃ২, পৃষ্ঠা- ৬৮২ অনুরূপ নাসাঈ, আবু দাউদ, আবূ ওমদাতুল ক্বারী, লিসানুল আরব, ক্বামুসুল মুহীত, আল মুগরিব, আর-রাইদ, আল মুন্জিদ, লোগাতুল হাদীস ইত্যাদি কিতাব সমূহেও উল্লেখ আছে।
            বোখারী শরীফ ও অন্যান্য কিতাব সমূহে বর্ণিত বুরনুসশব্দের ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, উক্ত হাদীস শরীফে যে বুরনুস-উনার কথা বলা হয়েছে, তাহলো- টুপি সংযুক্ত জুব্বা ইত্যাদি। লম্বা টুপির কথা মোটেও বলা হয়নি। তাছাড়া জাওহারীর বক্তব্য দ্বারা ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট হয়ে যায়, কেননা জাওহারী বলেছেন, লম্বা টুপি ইসলাউেনার প্রাথমিক যুগে ব্যবহার করা হতো। তাই এক্ষেত্রে বুরনুসঅর্থ লম্বা টুপি গ্রহণ করার কোন প্রশ্নই উঠেনা।
            এছাড়াও উক্ত হাদীস শরীফে বুরনুসশব্দ দ্বারা টুপিকে বুঝানো হয়নি, কারণ যদি টুপিই উদ্দেশ্য হতো, তবে আমভাবে (قلنسوة) কলানসুওয়াহ্শব্দই উল্লেখ করা হতো, কেননা এহ্রাম অবস্থায় যে কোন ধরণের টুপিই মাথায় দেয়া নিষিদ্ধ। সুতরাং এক্ষেত্রে বুরনুসশব্দের অর্থ- লম্বা টুপি গ্রহণ করা হলে, এহ্রাম অবস্থায় অন্যান্য টুপি পরিধান করা বৈধ প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ এটাই প্রমাণিত হয় যে, এহ্রাম অবস্থায় বুরনুসটুপি ব্যতীত সব টুপিই পরিধান করতে পারবে।
            অতএব এক্ষেত্রে বুরনুসশব্দের অর্থ টুপিসহ জুব্বা ইত্যাদি গ্রহণ করাই যুক্তিযুক্ত ও সঠিক। কারণ এহ্রাম অবস্থায় যেরূপ টুপি মাথায় দেয়া বৈধ নয় তদ্রুপ জুব্বা পরিধান করাও বৈধ নয়। অর্থাৎ সেলাই যুক্ত সব ধরণের পোশাকই এহ্রাম অবস্থায় পরিধান করা নিষেধ।
            তাছাড়া আবুদাউদ শরীফের একটি বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, বোখারী শরীফে এহ্রাম অবস্থায় যে বুরনুস পরিধান করতে নিষেধ করা হয়েছে তাহলো টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা পশমী চাদর ইত্যাদি। যেমন-
(১০২-১০৩)
عن ابن عمر- انه وجد القر فقال الف على ثوبا يا نافع فالقي عليه برنسا فقال تلقى على هذا وقد نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم ان يلتبسه المحرم. (ابوداد شريف جصه ২৭০، بذل المجهود)
অর্থঃ- হযরত ইবনে ওউনার রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত তিনি শীতে আক্রান্ত হয়ে বললেন, হে নাফে! আমার উপর কোন কাপড় ঢেলে দাও। আমি উনারউপর একটি বুরনুস দিয়ে দিলাম। তিনি বলেন, তুমি আমার উপর বুরনুসঢেলে দিলে অথচ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুহ্রিমদের জন্য তা নিষেধ করেছেন।” (আবূ দাউদ শরীফ ১ম জিঃ পৃষ্ঠা-২৭০, বজলুল মাযহুদ)
            উক্ত হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, হযরত ইবনে ওউনার রহমতুল্লাহি আলাইহি শীতে আক্রান্ত হয়ে শীত নিবারণের জন্য কিছু গায়ে দেয়ার নির্দেশ দিলে ইমাম নাফে রহমতুল্লাহি তাঁকে বুরনুস পরিধান করিয়ে দেন। এখন প্রশ্ন হলো- লম্বা টুপি পরিধান করলে শীত নিবারণ হবে কি? কখনো নয়। বরং টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা চাদর পরিধান করলেই শীত নিবারণ হয়।
            অতএব বোখারী শরীফের বর্ণনা দ্বারা বুরনুসপরিধান করা বৈধ প্রমাণিত হয়, এটা সত্য কথাই তবে লম্বা টুপি নয়, বরং টুপি সংযুক্ত জুব্বা ইত্যাদি।
            আর আবু দাউদ শরীফে যে, উল্লেখ আছে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বুরনুস পরিধান করে নামাজ পড়েছেন। তা মূলতঃ টুপি সংযুক্ত জুব্বাকেই বুঝানো হয়েছে,
(১০৪)   
عن وائل بن حجر قال- اتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم فرأيته يرفع يديه اذا افتح الصلوة ...... ثم اتيتهم من قابله فرأثتهم ير فعون يديهم فى البرانس. (نسائى شريف ج صفه ১৭৩)
অর্থঃ- হযরত ওয়ায়েল ইব্নে হাজ্র রহমতুল্লাহি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকট এসে দেখলাম - তিনি নামাজ শুরু করার সময় উভয় হাত মোবারক উত্তলন করেছেন। .......... অতঃপর পরবর্তী দিনে এসে দেখলাম হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি গণ তাঁদের উভয় হাত বুরনুসের মধ্য হতে উঠিয়েছেন।” (নাসাঈ শরীফ ১ম জিঃ পৃষ্ঠা-১৭৩)
            উক্ত হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বুরনুসের ভিতর থেকে হাত উঠালেনউনার দ্বারা কি এটাই প্রমাণিত হয়না যে, উক্ত বুরনুসটি ছিল টুপি সংযুক্ত জুব্বা। কারণ টুপির ভিতর থেকে তো আর হাত উঠানো সম্ভব নয়, কেননা নামাজের সময় হাত কখনো টুপির ভিতর থাকেনা।
            সুতরাং অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ যে বুরনুস পরিধান করেছেন বলে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, তা কস্মিনকালেও লম্বা টুপি নয়। বরং টুপি সংযুক্ত জুব্বা ইত্যাদি কারণ এগুলোকেও বুরনুস বলা হয়।
(১০৫)
وقد كره بعض السلف لبس البرنس لانه كان من لباس الرهبان وقد سئل مالك عنه فقال لا بأس به- قيل فانه من لبوس النصارى- قال كان يلبس ههنا وقال عبد الله بن ابى بكر- ما كان احد من القراء الاله برنس- واخرج الطبرانى من حديث ابى قرصافة- قال كسانى رسول الله صلى الله عليه وسلم برنسا فقال- البسه" وفى سنده من لا يعرف ولعل من كرهه اخذ بعموم حديث على رفعه اياكم ولبوس الرهبان فانه من تزيابهم او تشبه فليس منى احرجه الطبر انى فى الاوسط بسند لابئس به. (فتح البارى ج ১০ صفه ২৮৪)
অর্থঃ- সল্ফে ছালেহীনগণের অনেকেই বুরনুসপরিধান করাকে মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলেছেন। কেননা তা খ্রীষ্টান পাদ্রীদের পোশাক, আর ইমাম মালেক রহমতুল্লাহিকে বুরনুসসম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এতে কোন দোষ নেই। বলা হলো বুরনুস খ্রীষ্টানদের পোশাক। তিনি বলেন, এখানে তা পরিধান করা হচ্ছে। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আবূ বকর বলেন, প্রত্যেক ক্বারী সাহেবের বুরনুসছিল। তিবরানী শরীফে বর্ণিত আছে- হযরত আবূ কিরছাফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে একটি বুরনুসপরিয়ে দিয়েছেন এবং বলেছেন, এটি পরিধান করবে। এ হাদীসের সনদে একজন অপরিচিত ব্যক্তি রয়েছে। আর সম্ভবতঃ যাঁরা বুরনুসপরিধান করাকে মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলেছেন, তাঁরা হযরত আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত একখানা মারফূ হাদীস শরীফের আম অর্থ গ্রহণ করে বলেছেন। যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- তোউনারা রাহেব বা খৃষ্টান পাদ্রীদের পোশাক থেকে বেঁচে থাক। কারণ যে ব্যক্তি তাদের পোশাক দ্বারা সুসজ্জিত হবে অথবা তাদের সাদৃশ্যতা গ্রহণ করবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।ইমাম তিবরানী রহমতুল্লাহি তাঁর মুজামুল আওসাতকিতাবে এ হাদীস শরীফ খানা বর্ণনা করেছেন এবং এ হাদীস শরীফের সনদের ব্যাপারে কোনই আপত্তি নেই।” (ফাতহুল বারী  জিঃ১০ পৃষ্ঠা-২৮৪)
            উল্লেখ্য, ‘ফাতহুল বারীরবুরনুস সম্পর্কিত উক্ত বক্তব্য স্পষ্ট নয়, কারণ হযরত ইবনে হাজর রহমতুল্লাহি আমভাবে বুরনুসের আলোচনা করেছেন। অথচ বুরনুসএকাধিক অর্থবিশিষ্ট একটি শব্দ। অর্থাৎ বিভিন্ন ধরণের বস্তুকে বুরনুসবলা হয়। যেমন- টুপি সংযুক্ত জুব্বাকেও বুরনুসবলে। আবার উপরের দিকে একহাত পরিমাণ লম্বা টুপিকেও বুরনুসবলে। তাই সব ধরণের বুরনুসপরিধান করা যেরূপ নাজায়েয বা মাকরূহ্ নয়, তদ্রুপ সব ধরণের বুরনুসপরিধান করা জায়েয বা বৈধও নয়। বরং যে বুরনুসখৃষ্টানরা খাছভাবে পরিধান করে থাকে, সে বুরনুস পরিধান করাকে সল্ফে ছালেহীন তথা ইমাম-মুজতাহিদগণ মাকরূহ্ তাহরীমী বা নাজায়েয বলেছেন। আর তা হলো- উপরের দিকে একহাত পরিমান লম্বা টুপি নামক বুরনুস। লম্বা টুপি নামক বুরনুস যে খৃষ্টান বা বিধর্মীরা খাছভাবে পরিধান করে থাকে, তার বহু প্রমাণ নির্ভরযোগ্য কিতাব সমুহে রয়েছে। যেমন, সহীহ্ নাসাঈ শরীফের ২য় জিঃ ৭ পৃষ্ঠায়,    ফার্সী মশহুর লোগাত, লোগাতে হীরা ও কিশওয়ারীতে,        বিখ্যাত লোগাত, “গিয়াছুল লোগাত”-উনার ৭৪ পৃষ্ঠা,            আর লোগাতুল হাদীস ১ম জিঃ ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, বুরনুস অর্থাৎ লম্বা টুপি নাছারা অর্থাৎ খৃষ্টানদের টুপি।
            এছাড়া আরো অনেক কিতাবে বুরনুসবা লম্বা টুপিকে বিধর্মী বা খৃষ্টানদের টুপি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর তাই আমাদের হানাফী মায্হাবের নির্ভরযোগ্য ও বিখ্যাত ফিক্বাহের কিতাব এতাবিয়া, তাতার খানিয়া ও আলমগীরীতে বুরনুস অর্থাৎ লম্বা টুপি পরিধান করে, নামাজ পড়াকে মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলা হয়েছে। সুতরাং ফাতহুল বারীতেযে বলা হয়েছে,
وقد كره بعض السلف لبس البرنس.
অর্থাৎ সল্ফে ছালেহীনদের অনেকেই বুরনুসপরিধান করাকে মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলেছেন।
            এ কথার দ্বারা লম্বা টুপি নামক বুরনুসকেইবুঝানো হয়েছে। কারণ উনার পরেই উল্লেখ আছে,
لانه كان من لباس الرهبان.
অর্থাৎ- কেননা বুরনুস’ (লম্বা টুপি) খৃষ্টানদের পোশাক।
            আর ফাতহুল বারীর উক্ত বর্ণনায় ইমাম মালেকরহমতুল্লাহি কর্তৃক বুরনুস পরিধানের যে সমর্থন পাওয়া যায়, সকল ক্বারী সাহেবের বুরনুসছিল বলে যে বক্তব্য পেশ করা হয়েছে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক হযরত আবু কিরছাফাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বুরনুস পরিয়ে দেয়ার যে বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে, তা টুপি সংযুক্ত জুব্বা নামক বুরনুসকেই বুঝানো হয়েছে।
            কেননা টুপি সংযুক্ত জুব্বা নামক বুরনুসহযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের কেউ কেউ পরিধান করেছেন বলে বোখারী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ ও ইবনে মাজা শরীফের কোন কোন বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়। আর টুপি সংযুক্ত জুব্বাকেও যে বুরনুস বলা হয়, তার প্রমাণ বোখারী শরীফ সহ বহু কিতাবেই উল্লেখ আছে।          অতএব, প্রমাণিত হলো যে, টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা ক্বামিছকেও বুরনুস বলা হয়। আর এ ধরণের বুরনুসসকলের মতেই জায়েয, যেহেতু হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ অনেকেই এ ধরণের বুরনুস’ (টুপি সংযুক্ত জুব্বা) পরিধান করেছেন বলে প্রমাণিত রয়েছে এবং এ ধরণের বুরনুসকে খ্রীষ্টান বা বিধর্মীদের খাছ পোশাক বলে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। যেরূপ উল্লেখ করা হয়েছে লম্বা টুপি নামক বুরনুসের ক্ষেত্রে। তবে মুসলমানদের ন্যায় বিধর্মী বা খ্রীষ্টানরা টুপি সংযুক্ত জুব্বা ইত্যাদি পরিধান করাও অস্বাভাবিক কিছু নয়, কারণ বিধর্মী বা খ্রীষ্টানদের মধ্যে উনারূপ অনেক আমলই রয়েছে, যা মুসলমানদের খাছ আমল। যেমন মুসলমানদের ন্যায় বিধর্মীরাও দাড়ী রেখে থাকে, পাগড়ী পরিধান করে ও খৎনা ইত্যাদি করিয়ে থাকে। কাজেই মুসলমানদের কোন খাছ আমল বিধর্মীরা পালন করলেও তা বিধর্মীদের আমল বলে বিবেচিত হবেনা। হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি উক্ত বক্তব্য দ্বারা এদিকেই ইঙ্গিত করেছেন। অর্থাৎ তিনি এটাই বলতে চেয়েছেন যে, টুপি সংযুক্ত জুব্বা নামক বুরনুস খ্রীষ্টানরা পরিধান করলেও তা মূলতঃ মুসলমানদেরই পোশাক। কেননা এখানকার মুসলমানরা তা পরিধান করে আসছে।
(১০৬)               
(قوله برنسا) ذكر عبد الله بن ابى بكر ما كان احد من القراد الا له برنس ....... وسئل مالك عن لبسها اتكر هها فانه يشبه لباس النصارى قال لا يأس بها وقد كانوا يلبسونها هنا- (عمدة القارى ج ২১ صفه ৩০৬)
অর্থঃ- “ (বুরনুস) হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আবূ বকর রহমতুল্লাহি বলেন, এমন কোন ক্বারী সাহেব ছিলনা, যার বুরনুস ছিল না। ....... আর ইমাম মালেক রহমতুল্লাহিকে জিজ্ঞাসা করা হলো বুরনুসপরিধান করা মাকরূহ্ কি? কেননা তা নাছারাদের লেবাসের অনুরূপ। ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি বলেন, ‘বুরনুসপরিধান করাতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা মুসলমানগণ এখানে বুরনুস পরিধান করে থাকেন। (ওমদাতুল ক্বারী-জিঃ ২১, পৃঃ ৩০৬)
            উল্লেখ্য, ওমদাতুল ক্বারীর এ বক্তব্য, ফাতহুল বারীর বক্ত্যেব্যের অনুরুপ। অর্থাৎ ওমদাতুল ক্বারীতে যে  উল্লেখ করা হয়েছে, “প্রত্যেক ক্বারী সাহেবের বুরনুসছিল এবং ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি বুরনুসপরিধানকে বৈধ বলেছেনতা মূলতঃ টুপি সংযুক্ত জুব্বা নামক বুরনুস। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত বর্ণনা ইতিপূর্বে ফাতহুল বারীর বক্তব্যের ব্যখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে।
(১০৭)   
لبس الغيار وشد الزنار ونحو هما كفرا. (تفسير بيضاوى ج صفه ২৩)
অর্থঃ- গিয়ারপরিধান করা ও পৈতা বাঁধা এবং এতদুভয়ের ন্যায় পোশাক পরিধান করা কুফরী।”(তাফসীরে বায়জবী জিঃ১ পৃষ্ঠা-২৩)
            উল্লেখ্য, তাফসীরের কিতাবে গিয়ারশব্দের বিভিন্ন অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- গিয়ারশব্দের ব্যখ্যায় উল্লেখ আছে,
(১০৮)   

(قوله- لبس الغيار) وهو بكسر الغير علامة اهل الذمة- وقيل هو قلنسوة طويلة كانت تلبس فى ابتداء الاسلام وهى الان من شعار اه الكفر مختصة بهم. (حاشيهء شيخ زاده جصفه ১০৮)
অর্থঃ- গাইনউনার নীচে যের দিয়ে "غيار" শব্দের অর্থ হলো- জিম্মীদের চিহ্ন বিশেষ। আর কেউ কেউ বলেন, "غيار" হলো- লম্বা টুপি, যা ইসলাউেনার প্রাথমিক যুগে পরিধান করা হতো এবং বর্তমানে লম্বা টুপি কাফেরদের শেয়ার বা চিহ্ন ও লম্বা টুপি তাদের খাছ টুপি।” (হাশিয়ায়ে শায়খ যাদাহ্ জিঃ১, পৃষ্ঠা-১০৮)
(১০৯)    হযরত শায়খুল ইসলাম ইমামুল আইম্মা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জেশকর রহমতুল্লাহি ও হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি-উনার মতে টুপি দুপ্রকার। লাতিয়া ও নাশেজা।
লাতিয়াঃ- যে টুপি মাথার সাথে লেগে থাকে, উহাকে লাতিয়া বলে। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাতিয়া টুপি পরিধান করতেন। সুফী সম্প্রদায়ও এ টুপি পরিধান করে থাকেন।
নাশেজাঃ- আর যে টুপি উঁচু ও খাড়া, তাকে নাশেজা বলে। কোন কোন বুযুর্গ এটাও পরিধান করে থাকেন। উনার রং কালো। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব কমই এ টুপি ব্যবহার করেছেন। (অর্থাৎ প্রথম দিকে ব্যবহার করেছেন, পরবর্তীতে সম্পুর্ণই পরিহার করেছেন।) একবার কাজী আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি নাশেজা টুপি পরিধান করে মজলিসে বসে আলোচনা করছিলেন। ঘটনাক্রমে টুপিটি সাদা ছিলনা বরং কালো ছিল। এমন সময় এক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন- হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদা টুপি পরিধান করতেন, না কালো? কাজী আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি বলেন, ‘লাতিয়াটুপি। (অর্থাৎ সাদা রংয়ের টুপি পরিধান করতেন।) সে ব্যক্তি বললো- তবে আপনি নাশেজা টুপি পরিধান করে সুন্নত বিরোধী কাজ করেছেন। হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললেন- যদি তুমি লিল্লাহ্ একথা বলে থাক, তবে আমি, আমার ভুলের জন্য লজ্জিত। আর যদি আমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য বলে থাক, তবে তোমার ধ্বংস হোক। সে ব্যক্তি বললো- আমি লিল্লাহ্-ই একথা বলেছি, তাও আবার এজন্য যে, আপনি দ্বীনের রাহবার। আপনার দ্বারা এমন কোন ভুল হওয়া ঠিক নয়। (ইসরারুল আওলিয়া, মালফুযাতে ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি, পৃঃ- ১১৮)           
            স্মর্তব্য যে, ইমামুল মুজ্তাহেদীন, হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি ও ইমামুল আইম্মা হযরত ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি-উনার উক্ত বক্তব্য দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, যে টুপি মাথার সাথে লেগে থাকে এবং সাদা রংয়ের, সে টুপিই সুন্নতী টুপি। আর যে টুপি উঁচু বা খাড়া এবং কালো রংয়ের, সে টুপি সুন্নতের খেলাফ।
(১১০)    কিস্তি (লম্বা) টুপি খাছ মারওয়ারীদের ব্যবহৃত টুপি, কিন্তু এখন কতেক মুসলমান উহা ব্যবহার করে থাকে। ইহাতে হিন্দুদের সাথে তাসবীহ হওয়ার আশংকা হয়। (ফতোয়ায়ে আমীনিয়া, ২য় খন্ড পৃষ্ঠা-৩৬)
(১১১)    এ বিষয়ে গোল টুপি পরিধান করতে হবে, না দুপাট্টা এবং গোল টুপি মাসনুন হ্যায় ইয়া দুপাল্লা (নামক উর্দু ফতওয়া) বের হয়েছে। তাতে হাদীস শরীফ হতে বহু প্রমাণ রয়েছে এবং বাংলার ও হিন্দুস্থানের মুফ্তীগণের ফতওয়াসহ প্রচার হয়েছে। তাতে আরো লেখা আছে যে, মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ এবং সমগ্র আরবে গোল টুপি ব্যবহার হয়। দুপাট্টা টুপি ব্যবহার হয়না। মোটকথা মাথা গোল, তাই টুপিও গোল হওয়া চাই।
(১১২) কোর্ট, প্যান্ট, আলবার্ট, টেরী কলার ওয়ালা জামা, ওয়াছ কোর্ট, পার্সী কোর্ট, সাহেবী টুপি, ইংরেজী জুতা এবং কাছামারা ইত্যাদি নাজায়েয কাজ করবেন না। কিস্তি টুপি আমি পছন্দ করিনা। (মলফুজাত ফুরফুরা শরীফের মুজাদ্দিদে যামান, কুতুবুল আলম, শায়খুল মিল্লাত, আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী আবু বকর সিদ্দীকী রহমতুল্লাহি সাহেব)
(১১৩)    ফুরফুরা শরীফের মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সুন্নতের প্রতি বিশেষভাবে জোর দিতেন। এ গোল টুপি সুন্নত হিসেবে তখন অখন্ড বাংলার মুসলমানদের মধ্যে প্রচলন করেন। হুজুর কিবলা সর্বদা গোল টুপি পরতেন। দুপাট্টা টুপি কখনো পরিধান করেননি। মারওয়ারীদের সাথে অনুকরণ হয় বলে তাঁর মুরীদদেরকে ঐরূপ টুপি পরতে নিষেধ করতেন। (ফুরফুরা শরীফের মুর্শিদ রহমতুল্লাহি-উনার মত ও পথ)
(১১৪)    হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি বলেন- ইবলিস শয়তান একবার হযরত মুসা (আঃ)-উনার মজলিসে একটি লম্বা (কিস্তি) টুপি পরিধান করে উপস্থিত হয়েছিল। (আল মুরশিদুল আমীন)

পরিশিষ্ট:
            রাহ্মানুর রাহীম আল্লাহ্ পাক-উনার অশেষ রহ্মতে খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটিশেষ করতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক-উনার দরবারে অশেষ শুকরিয়া। আর আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি অশেষ ছালাত ও সালাম।
            প্রদত্ত ফতওয়ার শুরুতেই খাছ সুন্নতী টুপি সম্পর্কিত ফতওয়া প্রকাশ করার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করা হয়েছে। মূলতঃ পাঠকগণের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে টুপি সম্পর্কিত ফিৎনা সমূলে উৎপাটনের লক্ষ্যে, সর্বোপরি মহান আল্লাহ্ পাক ও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার খাছ সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যেই খাছ সুন্নতী টুপি সম্পর্কে বিস্তারিত ও আরো অধিক দলীল-আদিল্লাসহ পুণরায় ফতওয়া পেশ করা হয়েছে। যাতে করে হক্ব তালাশী ও সমঝদার মুসলমানগণ টুপি সম্পর্কিত সঠিক শরয়ী ফায়সালা ভালরূপে অবগত হতে পারে এবং যারা খাছ সুন্নতী টুপির ব্যাপারে নানাবিধ সংশয় ও বিভ্রান্তিতে রয়েছে, তাদের সে সংশয় ও বিভ্রান্তি চিরতরে দূরীভূত হয়ে তারা হক্ব মত ও হক্ব পথে কায়েম থাকতে পারে।    
            উল্লেখ্য, বহুল প্রচারিত, বাতিলের আতঙ্ক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীলভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতকর্তৃপক্ষ যেরূপ কারো সাথে বন্ধুত্ব রাখেনা, তদ্রুপ কারো সাথে বিদ্বেষও রাখেনা। হ্যাঁ মাসিক আল বাইয়্যিনাত তাদের সাথেই বন্ধুত্ব রাখে, যাদের আক্বীদা ও আমল কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস তথা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুরূপ। আর তাদের প্রতিই বিদ্বেষ পোষণ করে, যাদের আক্বীদা ও আমল উনার বিপরীত। মাসিক আল বাইয়্যিনাতের মূলনীতি এটাই। যে সম্পর্কে হাদীস শরীফে উনারশাদ হয়েছে,
من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد اشتكمل الايمان.

অর্থঃ- যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-উনার (সন্তুষ্টির) জন্য মহব্বত করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে ও নিশেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, মেশকাত, বজলুল মাযহুদ, উেনারকাত, আশয়াতল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে )
            কাজেই সকলেরই উচিৎ অন্ধ অনুসরণ ও নফসানিয়্যাতের মোহ পরিত্যাগ করতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ন্যায় উক্ত হাদীস শরীফের মেছদাক্ব হওযার কোশেষ করা। তবেই হক্ব মত ও হক্ব পথে ক্বায়েম থাকা সম্ভব।
            স্মর্তব্য যে, যারা সমঝদার ও হক্ব তালাশী, তাদের জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ৫৩তম সংখ্যা হতে ৫৯তম সংখ্যা পর্যন্ত খাছ সুন্নতী টুপিসম্পর্কে যে দলীল-আদিল্লা পেশ করা হয়েছে, তাই যথেষ্ট। যদিও আউনারা এ ব্যাপারে আরো অধিক দলীল-আদিল্লা পেশ করতে সক্ষম ইন্শাআল্লাহ্।
            আর যারা অন্ধ অনুসরণে মত্ত্ব ও গোউনারাহীতে দৃঢ়, তাদের নিকট লক্ষ-কোটি দলীলও মূল্যহীন। তাদেরকে যতই দলীল পেশ করা হোক না কেন, তারা তা মানতে সম্পূর্ণই নারাজ। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়- এক বিশাল বিত্তশালী একদিন কথা প্রসঙ্গে বললো- আমাকে যদি কেউ অমুক বিষয় বুঝিয়ে দিতে পারে, তবে আমি তাকে আমার স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি লিখে দিব। তখন তার স্ত্রী বললো- এমন অনেকেই রয়েছে, যে আপনার এ বিষয়টি বুঝিয়ে দিতে সক্ষম। কাজেই তখন আপনার সম্পত্তি তাকে দিয়ে দিতে হবে। লোকটি বললো- এটা কখনোই সম্ভব নয়। কারণ সে যতই বুঝাক না কেন, আমি বলবো- আমি বুঝিনি। কাজেই সে আমাকে বুঝাতেও পারবেনা আর সম্পত্তির মালিকও হতে পারবেনা।
            অতএব, যারা অন্ধ অনুসরণ ও নফসানিয়্যাতের মোহে মোহগ্রস্থ এবং গোউনারাহীতেই দৃঢ়, তাদেরকে যতই দলীল দেয়া হোক না কেন, তারা বলবে, এ দলীল গ্রহণযোগ্য নয়, আমাদের সিলসিলার পূর্ববর্তী মুরুব্বীরা উনার বিপরীত বলেছেন বা করেছেন অথবা এগুলো আমাদের বুঝে আসেনা ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন তাদের জন্য এ দোয়াই করতে হয় যে, “হে আল্লাহ্ পাক! আপনি তাদেরকে সহীহ্ সমঝ দান করুন এবং হিদায়েতের উপর ক্বায়েম রাখুন।      
            উল্লেখ্য, কারো কারো বক্তব্য এই যে, টুপি একটি সাধারণ আমল, এই সাধারণ বিষয় নিয়ে এত বাড়াবাড়ী ঠিক নয়। কারণ টুপি ছাড়াও নামাজ হয়। অথচ টুপি সাধারণ আমল নয়। টুপি হচ্ছে দায়েমী সুন্নত। আখেরী রাসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা বা দায়েমীভাবে টুপি মাথায় দিতেন। টুপি ছাড়া নামাজ হয়ে যায়, এটা হলো মাজুরের মাসয়ালা। অর্থাৎ কারো নিকট টুপি না থাকলে মাজুর হিসেবে টুপি ছাড়াও নামাজ পড়া যায়। কিন্তু টুপি থাকা সত্ত্বেও টুপি ছাড়া নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।
            তাছাড়া টুপি সম্পর্কে ফতওয়া দেয়া আমাদের মূল মাকছুদ নয়। আমাদের মূল মাকছুদ হচ্ছে- মুসলমানদের আক্বীদা ও আমলকে বিশুদ্ধ করা। কারণ অনেকে বলে থাকে যে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব ধরণের টুপি পরিধান করেছেন।অথচ তা হবে কাট্টা কুফরী। কারণ এতে আল্লাহ্র রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি মিথ্যারোপ করা হয়। কেননা বর্তমানে বাজারে অনেক টুপিই প্রচলিত রয়েছে, যেমন- কিস্তি টুপি, জালি টুপি বা নেট টুপি ইত্যাদি। যারা বলে সব ধরণের টুপি পরাই সুন্নত, তারা কি প্রমাণ করতে পারবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এ ধরণের টুপি পরিধান করেছেন?
            আবার অনেকে খাছ সুন্নতী টুপি কোন্টি, তা না জানার কারণে বেদ্বীন-বদ্দ্বীন বা বিধর্মীদের টুপি পরিধান করছে। যেমন- বুরনুস, বা উঁচু টুপি ও কিস্তি বা লম্বা টুপি, অথচ বিধর্মীদের সাথে যেকোন ব্যাপারে সাদৃশ্য রাখা হারাম।
            তাহলে দেখা গেল- মাসিক আল বাইয়্যিনাতে প্রকাশিত খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়ার ফলে, যেরূপ কুফরী থেকে বাচঁতে পারবে তদ্রুপ বেঁচে থাকতে পারবে বিধর্মীদের অনুসরণ-অনুকরণ থেকে। সাথে সাথে চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপির খাছ সুন্নত পালন করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে সক্ষম হবে। (ইন্শাআল্লাহ্)
            কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতের টুপি সংক্রান্ত ফতওয়াকে যারা বাড়াবাড়ী বলে মন্তব্য করে, তারা গোউনারাহ বৈ কিছুই নয়। তাদের উদ্দেশ্য হলো- মুসলমানদের আক্বীদাকে বিনষ্ট করা এবং সুন্নত পালনে নিরুৎসাহিত করা ও বিধর্মীদের আমল অনুসরণে উৎসাহিত করা। আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে তাদের ঈমান ও আমল বিধ্বংসী থাবা থেকে হিফাযত করুন।
            স্মর্তব্য যে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-উনার ৫৩-৫৯তম অর্থাৎ মোট সাতটি সংখ্যায় টুপি সম্পর্কে যে বিস্তারিত ও দলীল ভিত্তিক ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে, তার মূল বিষয় বস্তুগুলো হলো-
১। মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কেসঠিক বিশুদ্ধ ও শরীয়ত সম্মত ফায়সালা  প্রদান করার মুল মাকছুদ হলো- সত্যন্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা, যেন প্রত্যেকেই খাছ সুন্নতী টুপি সম্পর্কে আবগত হতে পারে এবং সুন্নত মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার খাছ রেজামন্দী বা সন্তষ্টি লাভ করতে পারে।
২। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব ধরণের টুপিই পরিধান করেছেন। একথা বলা সুস্পষ্ট কুফরী। কারণ তা রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নামে মিথ্যারোপ করার শামিল।
৩। সব ধরণের টুপিই সুন্নত নয়, বরং যে টুপি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  অথবা হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ পরিধান করেছেন বলে হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত, সে টুপিই সুন্নতী টুপি।
৪। যে টুপি সুন্নতী টুপি নয় এবং বেদ্বীন-বদ্দ্বীনদের টুপিও নয়, সে টুপি পরিধান করা জায়েয। তবে তা অবশ্যই সুন্নতের খেলাফ।
৫। টুপির নির্দিষ্ট কোন বর্ণনা ইসলামে নেই, একথা বলার অর্থই হলো- দ্বীন ইসলামকে অপূর্ণ সাব্যস্ত করা, অথচ দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ। কাজেই নির্দিষ্ট প্রকারের টুপির বর্ণনা অবশ্যই ইসলামে রয়েছে।
৬। হাদীস শরীফ ও তার ব্যাখ্যা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি মোবারক ছিল-সাদা, গোল ও চার টুকরা বিশিষ্ট। যা সব দিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকতো। মাথা হতে বিন্দুমাত্রও উঁচু হয়ে থাকতো না, আর এটাই মূলতঃ খাছ সুন্নতী টুপি।
৭। কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস দ্বারা প্রমাণিত যে, সুন্নতের সুক্ষ্মতিসুক্ষ্ম ও পুক্ষ্মানুপুক্ষ্ম অনুসরণ ও অনুকরণ ব্যতীত মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব. সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার রেজামন্দী বা সন্তুষ্টি হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
৮। হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করার কারণেই মহান আল্লাহ্ পাক-উনার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের সার্টিফিকেট লাভ করেছেন।
৯। হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহিগণ প্রতি ক্ষেত্রে সুন্নতের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ও পুক্ষ্মানুপুক্ষ্ম অসুসরণ-অনুকরণ করার মাধ্যমেই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার খাছ মারিফত ও মহব্বত হাছিল করেছেন। ১০। সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি রহমতুল্লাহি সুন্নতের পূর্ণ অনুসরণ করার কারণেই হাবীবুল্লাহ্ লক্বব লাভ করেছেন।
১১। যে টুপি বেদ্বীন-বদ্দ্বীন তথা বিধর্মীদের জন্য খাছ বা তাদের শেয়ার, সে টুপি পরিধান করা নাজায়েয ও হারাম। কারণ কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে বেদ্বীন-বদ্দ্বীনদের অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
১২। বুরনুস টুপি, যা উপরের দিকে এক হাত পরিমান লম্বা বা উঁচু। এ টুপি খ্রীষ্টান বা বিধর্মীদের খাছ টুপি। বুরনুস টুপি পরিধান করে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।
১৩। কিস্তি বা দোপাট্টা টুপি হিন্দুদের খাছ টুপি। হিন্দুদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে কিস্তি টুপি পরিধান করা নাজায়েয।
১৪।  পাঁচ কল্লি, জালী ইত্যাদি টুপি বিদ্য়াতের অর্ন্তভূক্ত। যেহেতু তা নতুন উদ্ভুত তাছাড়া খাইরুল কুরুনের কেউ পাচঁ কল্লি, জালী ইত্যাদি টুপি ব্যবহার করেছেন বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। আর না পাওয়া যাওয়াটাই স্বাভাবিক, যেহেতু খাইরুল কুরুনে পাঁচ কল্লি, জালী ইত্যাদি টুপির কোন অস্তিত্বই ছিলনা।
১৫। হযরত আবূ কাব্শা রহমতুল্লাহি হতে বর্ণিত হাদীস শরীফ খানা গোল টুপির দলীল হিসেবে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। কারণ মোস্তাহাব-সুন্নত প্রমাণ করার জন্য জঈফ হাদীস শরীফই যথেষ্ট।  যদিও উক্ত হাদীস শরীফখানা জঈফ হওয়ার ব্যাপারে সকলে একমত নয়, তাছাড়া গোল টুপির ব্যাপারে সহীহ্ হাদীস শরীফও বর্ণিত রয়েছে।
১৬। ক্বালান্সুওয়াহ (قلنسوة) শব্দের ব্যাপক অর্থের উপর ভিত্তি করে সব ধরণের টুপিকে জায়েয বা সুন্নত বলা জেহালত বৈ কিছুই নয়।
১৭। হাফিজুল হাদীস, আল্লামা দিমিয়াত্বী রহমতুল্লাহি ও সুলতানুল হিন্দ, খাজা হাবীবুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি বর্ণিত হাদীস শরীফদ্বয় নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য ও সহীহ্। কারণ উনারা উভয়েই হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত।
১৮। বুরনুস শব্দের উপর ভিত্তি করে কিস্তি টুপিকে সুন্নত বলা চরম জেহালত বা মুর্খতার বহিঃপ্রকাশ। কারণ বুরনুস টুপি হচ্ছে- উপরের দিকে এক হাত পরিমান লম্বা বা উঁচু, আর কিস্তি টুপি হচ্ছে- দোপাট্টা ও আড়াআড়ি ভাবে লম্বা। তাছাড়া বুরনুস টুপি পরিধান করাও নাজায়েয।
১৯। ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে যে বুরনুস পরিধান করে নামাজ পড়া মাকরূহ্ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তাহলো লম্বা টুপি নামক বুরনুস ও রেশম মিশ্রিত বুরনুস। কারণ লম্বা টুপি খ্রীষ্টানদের খাছ টুপি, আর রেশম পুরুষের জন্য ব্যবহার করা হারাম।
২০। যে সকল হাদীস শরীফে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ বুরনুসপরিধান করেছেন বলে উল্লেখ আছে, তা হলো টুপি সংযুক্ত জুব্বা। কারণ টুপি সংযুক্ত জুব্বাকেও বুরনুস বলা হয়।
২১। বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর, হাদীস শরীফ, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া ও সীরাত গ্রন্থসমূহের প্রায় ১০৩টি দলীল দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, সাদা গোল ও চার টুকরো বিশিষ্ট গোল টুপিই হচ্ছে খাছ সুন্নতী টুপি। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের টুপি ছিল- সাদা, গোল ও চার টুকরা বিশিষ্ট। এমন গোল, যা সব দিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকতো, যা কখনো মাথা হতে কিঞ্চিৎ পরিমানও উঁচু হয়ে থাকতোনা।
            কাজেই যারা বলে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব ধরণের টুপি পরিধান করেছেন এবং টুপির সুনির্দিষ্ট কোন বর্ণনা শরীয়তে নেই। তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, দলীল বিহীন ও শরীয়ত বিরোধী এবং ক্ষেত্রে বিশেষে কুফরীও বটে। এ ধরণের আক্বীদা ও বক্তব্য থেকে সংশ্লিষ্ট সকলের তওবা করা ফরজ।
            মহান আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলক পদত্ত ফতওয়া মোতাবেক আমল করার, সহীহ্ সমঝ হাছিল করার, সুন্নত মোতাবেক আমল করার ও হক্ব-মত হক্ব পথে কায়েম থাকার তৌফিক দান করুন। (আমীন