সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব উনার উপর মউত পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকা ফরয ( ৪৩ নং )


পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-
পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র
মাযহাব উনার উপর মউত পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকা ফরয
সম্মানিত ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ শরয়ী
দলীল হওয়ার আকলী বা জ্ঞানগর্ভ
দলীল বা প্রমাণ
নিচের ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ শরয়ী দলীল হওয়ার আকলী বা জ্ঞানগর্ভ  দলীল বা প্রমাণসমূহ যে কিতাব থেকে নেয়া হয়েছে, সেখানে লেখক তৎকালীন ভাষা প্রয়োগ করেছেন। জনসাধারণের বুঝার সুবিধার্থে আমরা বর্তমান ভাষায় রূপান্তরিত করে তা প্রকাশ করছি। এতে মূলকথা, ভাব ও মাসয়ালা হুবহু একই থাকবে। যাতে ভাষা প্রয়োগ ছাড়া মৌলিক কোন পরিবর্তন হবে না।
আকলী দলীল নম্বর: ১
(৯৫৮)
পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ আরবী ভাষায় লিখিত আছে, এ ভাষায় সর্বশুদ্ধ ৩০টি অক্ষর আছে। প্রথম অক্ষরটিকে ‘আলিফ’, দ্বিতীয়টিকে ‘বা’ ও তৃতীয়টিকে ‘তা’ বলা হয়। আমাদের গ্রাম্য শিক্ষকগণ ছাত্রদেরকে এরূপই শিক্ষা দিয়ে থাকেন এবং এ নিয়মে বিসমিল্লাহ হতে আরম্ভ করে সমস্ত ভাষা শিক্ষা করা হয়।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, উল্লেখিত অক্ষরগুলির এ প্রকার নাম পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নেই এবং উক্ত দলভুক্ত পণ্ডিতগণ পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে ইহার প্রমাণ দেখাতে পারবেন না। এরূপ ক্ষেত্রে যদি কোন ব্যক্তি আরবী ভাষার প্রকৃত উচ্চারণ বিকৃত করে ‘আল্হামদু’ স্থলে ‘জাল্হামদু’ এবং ‘বিসমিল্লাহ্’ স্থলে ‘ইসমিল্লাহ্’ পাঠ করে, তাতে কি সে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন মাজীদ পরিবর্তনের দায়ে দোষী হবে?
যদি কেউ এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে, অবশ্য সে ব্যক্তি দোষী বরং কাফির হবে। যেহেতু আরবী অক্ষর উচ্চারণ সম্বন্ধে তার পক্ষে শিক্ষক কিংবা আরববাসীদের মতালম্বন করা ওয়াজিব ছিল, সে ব্যক্তি এ ওয়াজিব বিধান তরক করেছে। তবে আমি বলবো- ইহাকেই তাক্বলীদ তথা ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের অনুসরণ বলে। কেননা, শিক্ষক ও আরববাসী পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ নন। এখন মাযহাব বিদ্বেষীরা পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ ভিন্ন অন্যের তাক্বলীদ বা অনুসরণ করে কাফির ও মুরশিক হবে কিনা?” (বোরহানোল মোকাল্লেদীন বা মজহাব মীমাংসা লেখক: আল-মুবাহিছুল আ’যম, আল-ওয়ায়িযুল আ’যম, কুতুবুল ইরশাদ, হাফিযুল হাদীছ, খাদিমুল ইসলাম আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ রূহুল আমীন বশীরহাটী হানাফী মাতুরীদী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ২০-২১ পৃষ্ঠা)
উক্ত দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ ফিকির করলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহাবিজ্ঞ হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইজতিহাদ বা গবেষণাকৃত ক্বিয়াসী বিষয়গুলো যা সম্মানিত শরয়ী বিধান পালনের জন্য সহায়ক উনাদের অনুসরণ করাও ফরয-ওয়াজিব উনার অন্তর্ভূক্ত। আর ইহাই তো তাক্বলীদ তথা হযরত ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের অনুসরণ। সুবহানাল্লাহ!
আকলী দলীল নম্বর: ২
(৯৫৯)
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রত্যেক আয়াত শরীফ উনাদের পরে অনেক প্রকার ছেদ (ওয়াক্ফ) চিহ্ণ আছে। কোনটিকে ওয়াকফে লাযিম, কোনটিকে ওয়াকফে তাম ও ওয়াকফে মুতলাক ইত্যাদি বলা হয়। এ চিহ্ণ বিশেষে অল্প-বিস্তর থামবার ও না থামবার নিয়ম আছে। এ চিহ্ণগুলির প্রবর্তক প্রাচীন বিদ্যানগণ ছিলেন। ইহার প্রমাণ পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নেই। মাযহাব বিদ্বেষীদল উপরোক্ত প্রাচীন আলিমগণের মতালম্বন (তাক্বলীদ) করে থাকেন, এরূপ ক্ষেত্রে উনারা এরূপ তাক্বলীদ করে কাফির ও মুশরিক হবেন কিনা?” (বোরহানোল মোকাল্লেদীন বা মজহাব মীমাংসা লেখক: আল-মুবাহিছুল আ’যম, আল-ওয়ায়িযুল আ’যম, কুতুবুল ইরশাদ, হাফিযুল হাদীছ, খাদিমুল ইসলাম আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ রূহুল আমীন বশীরহাটী হানাফী মাতুরীদী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ২১ পৃষ্ঠা)
উক্ত দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ ফিকির করলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহাবিজ্ঞ হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইজতিহাদ বা গবেষণাকৃত ক্বিয়াসী বিষয়গুলো যা সম্মানিত শরয়ী বিধান পালনের জন্য সহায়ক উনাদের অনুসরণ করাও ফরয-ওয়াজিব উনার অন্তর্ভূক্ত। আর ইহাই তো তাক্বলীদ তথা হযরত ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের অনুসরণ। সুবহানাল্লাহ!
আকলী দলীল নম্বর: ৩
(৯৬০)
পবিত্র কুরআন মাজীদ সপ্ত প্রকার বিভিন্ন অক্ষরে (ক্বিরায়াতে) অবতীর্ণ হয়েছে, এ কারণে উক্ত মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার সাত ক্বারী ছিলেন। যথা: বিশিষ্ট তাবিয়ী ইমাম আছিম কূফী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম কিছায়ী, হযরত ইমাম হামযাহ, নাফে’, হযরত ইমাম ইবনু কাছীর, হযরত ইমাম আবূ আমর ও হযরত ইমাম ইবনু আমির রহমতুল্লাহি আলাইহিম। প্রত্যেক ক্বারীর দু’ দু’জন করে সর্বশুদ্ধ চতুর্দশজন ছাত্র ছিলেন। এ ছাত্রম-লীর মধ্যে প্রত্যেকের পবিত্র কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করার প্রণালী বিভিন্নভাবে প্রকাশ আছে। ভারতবর্ষীও মুসলমানগণ হানাফী মাযহাব উনার ক্বিয়ায়াতের ইমাম হযরত ইমাম আছিম কূফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছাত্র হযরত ইমাম হাফ্ছ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রিয়াওয়ায়েত সম্মত মতালম্বন করে থাকেন। উক্ত সপ্ত আলিম এই বিভিন্ন প্রকারের পবিত্র কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের নিয়ম প্রকাশ করেছেন। এর প্রমাণ পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে কিছুমাত্র নেই। মাযহাব বিদ্বেষীদলও উপরোক্ত বিদ্বানগণের নিরূপিত মতানুযায়ী পবিত্র কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করে থাকে। এক্ষেত্রে তারা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভিন্ন অন্য লোকের তাক্বলীদ করে কাফির ও মুশরিক হবে কিনা?” 
(বোরহানোল মোকাল্লেদীন বা মজহাব মীমাংসা লেখক: আল-মুবাহিছুল আ’যম, আল-ওয়ায়িযুল আ’যম, কুতুবুল ইরশাদ, হাফিযুল হাদীছ, খাদিমুল ইসলাম আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ রূহুল আমীন বশীরহাটী হানাফী মাতুরীদী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ২১-২২ পৃষ্ঠা)
উক্ত দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ ফিকির করলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহাবিজ্ঞ সাত ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহিম ও উনাদের প্রত্যেকের দু’জন করে মোট চৌদ্দজন রাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে সরাসরি অনুসরণ করার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে কোন নির্দেশনা নেই। এরপরও উনাদেরকে অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব। কারণ, উনাদের ক্বিরায়াত অনুসরণ না করলে পবিত্র কুরআন মাজীদ তারতীল ও তাজবীদ অনুযায়ী পড়া কোনো মতেই সম্ভব হবে না। তেমনী ফিক্হী, আক্বায়িদী ইত্যাদী মাসয়ালায় ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করাও ফরয উনার অন্তর্ভূক্ত।
আকলী দলীল নম্বর: ৪
(৯৬১)
বাংলা ভাষাবিদ ব্যক্তি মাত্রই অবগত আছেন যে, বাংলা ভাষার অক্ষরগুলি যেরূপ কণ্ঠ, তালু, জিহ্বা, দন্ত ও ওষ্ঠ ইত্যাদি স্থানবিশেষ হতে উচ্চারিত হয়; আরবী ভাষার প্রত্যেক অক্ষরও সেরূপ কণ্ঠ, তালু, দন্ত ও ওষ্ঠ ইত্যাদি স্থান হতে উচ্চারিত হয়ে থাকে। যথা: কণ্ঠের অগ্রাংশ হতে গঈন ও খ, মধ্যাংশ হতে আঈন ও হা হুত্তি, শেষাংশ হতে হামযাহ ও হা হাওওয়াজ; জিহ্বার শেষভাগ হতে বড় ক্বাফ; তন্নিকটবর্তী স্থান হতে ছোট কাফ; জিহ্বার অগ্রভাগের একপার্শ হতে লাম, র ও নূন; জিহ্বার অগ্রভাগ ও উপরি দন্তদয়ের অগ্রভাগ হতে ছা, যাল ও যোয়া; জিহ্বার অগ্রভাগ ও উপরি দন্তদ্বয়ের মূল হতে তা, দাল ও তোয়া এবং জিহ্বার অগ্রভাগ ও নি¤œ দন্তদ্বয়ের অগ্রভাগ হতে যা, সীন ও ছোয়াদ উচ্চারিত হয়। ইহাকে বৈয়াকরণিক আলিমগণ মাখরাজ নিরূপন বলে থাকেন। এরূপ আরবী ৩০ অক্ষরের বিশেষ বিশেষ উচ্চারণ প্রণালী আছে।
তানবীন কিংবা নূন সাকীনের পরে বা অক্ষর থাকলে উহাকে মীম পড়তে হবে; আর নূন, মীম, ইয়া এবং ওয়াও থাকলে উক্ত নূনকে উহার সাথে যুক্ত করতে হবে এবং নাসিকায় আনবে, আর রা ও লাম থাকলে কেবল যুক্ত করবে, আর প্রথমে হা, খা, আঈন, গঈন, হা হাওওয়াজ ও হামযাহ্ থাকলে উক্ত নূনকে স্পষ্ট পড়বে, আর অবশিষ্ট ১৫ অক্ষর থাকলে উহাকে নাসিকায় এনে অস্পষ্টভাবে উচ্চারণ করবে।
মাদ্দ কয়েক প্রকার আছে। কোনোটি চার আলিফ, কোনোটি তিন আলিফ, কোনোটি দু’ আলিফ এবং কোনটি এক আলিফ পরিমাণ টেনে পড়তে হয়।
এরূপ মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআন মাজীদ পাঠকালে নানাবিধ নিয়ম অবলম্বন করাকে তাজবীদ বলে। এই তাজবীদের নিয়মাবলীর প্রমাণ পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নেই। ইহা কেবল ক্বারী বিদ্বানগণের মত। মাযহাব বিদ্বেষীদল পবিত্র ক্রুআন মাজীদ তিলাওয়াত করতে উক্ত প্রাচীন আলিমগণের তাক্বলীদ (মতাবলম্বন) করে থাকে। এখন তারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ভিন্ন অন্যের মতালম্বন করে কাফির ও মুশরিক হবে কিনা?” (বোরহানোল মোকাল্লেদীন বা মজহাব মীমাংসা লেখক: আল-মুবাহিছুল আ’যম, আল-ওয়ায়িযুল আ’যম, কুতুবুল ইরশাদ, হাফিযুল হাদীছ, খাদিমুল ইসলাম আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ রূহুল আমীন বশীরহাটী হানাফী মাতুরীদী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ২২-২৩ পৃষ্ঠা)
উক্ত দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ ফিকির করলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহাবিজ্ঞ তাজবীদের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে সরাসরি অনুসরণ করার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে কোন নির্দেশনা নেই। এরপরও উনাদেরকে অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব। কারণ, উনাদের ক্বিরায়াত অনুসরণ না করলে পবিত্র কুরআন মাজীদ তারতীল ও তাজবীদ অনুযায়ী পড়া কোনো মতেই সম্ভব হবে না। তেমনী ফিক্হী, আক্বায়িদী ইত্যাদী মাসয়ালায় ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করাও ফরয উনার অন্তর্ভূক্ত।
আকলী দলীল নম্বর: ৫
(৯৬২)
প্রত্যেক ভাষার ন্যায় আরবী ভাষারও অভিধান আছে, ইহা প্রাচীন আভিধানিক প-িতগণের কথা মাত্র। ইহা দ্বারা পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের প্রত্যেক শব্দের অর্থ অবগত হওয়া যায়। আরববাসী ও অনারব (আরবীভাষী নয় এমন) জগতের সমস্ত লোক পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ বুঝার জন্য এই অভিধান শিক্ষা করতে বাধ্য। এক্ষণে যদি মাযহাব বিদ্বেষীদল উহা অমান্য করে, তবে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ বুঝতে না পেরে পথভ্রষ্ট হবে। আর যদি উহা মান্য করে তবে মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ভিন্ন বিনা দলীলে অন্যের কথা মান্য করে কাফির ও মুশরিক হবে কিনা?” (বোরহানোল মোকাল্লেদীন বা মজহাব মীমাংসা লেখক: আল-মুবাহিছুল আ’যম, আল-ওয়ায়িযুল আ’যম, কুতুবুল ইরশাদ, হাফিযুল হাদীছ, খাদিমুল ইসলাম আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ রূহুল আমীন বশীরহাটী হানাফী মাতুরীদী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ২৩-২৪ পৃষ্ঠা)
উক্ত দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ ফিকির করলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহাবিজ্ঞ লুগাত বা অভিধানবীদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে সরাসরি অনুসরণ করার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে কোন নির্দেশনা নেই। এরপরও উনাদেরকে অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব। কারণ, উনাদের অভিধান অনুসরণ না করলে পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্হ-ফাতাওয়া বুঝা কোনো মতেই সম্ভব হবে না। তাই, ফিক্হী, আক্বায়িদী ইত্যাদী মাসয়ালায় ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করাও ফরয উনার অন্তর্ভূক্ত।
আকলী দলীল নম্বর: ৬
(৯৬৩)
সিবাওয়াইহি, খলীল, আখফাশ, মুর্বারাদ, যাব্বায়ী ও মাজিনী রহমতুল্লাহি আলাইহিম প্রভৃতি উনারা প্রাচীন প-িতগণ নাহু ও ছরফ বিদ্যা আবিস্কার করেছিলেন। এই বিদ্যার সাহায্যে ক্রিয়ার বিত্তান্ত, কাল, ধাতু, প্রত্যয়, লিঙ্গ, বচন ও পুরুষ ইত্যাদি ভাব অবগত হওয়া যায়। ইহা না জানলে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মর্মাবগত হওয়া যায় না। বরং বিভিন্ন প্রকার অর্থের সৃষ্টি হওয়ায় মহাপাপী হতে হয়। যথা: পবিত্র সূরাতুল ফাতিহাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ‘আন্য়ামতা আলাইহিম’ না পড়ে যদি কেউ ‘আন্য়ামতু আলাইহিম’ পাঠ করে, তবে সে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক দাবী করে কঠিন কুফরী গুনাহে গুনাহগার হবে। এক্ষণে মাযহাব বিদ্বেষীদল যদি এই বিদ্যা শিক্ষা না করে, তবে তারা পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ কখনোই বুঝতে পারবে না, বরং স্থল বিশেষে কুফরী পাপে নিমগ্ন হবে। আর যদি উহা মান্য করে তবে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ ভিন্ন অন্যের মত ধরে কাফির ও মুশরিক হবে কিনা?” (বোরহানোল মোকাল্লেদীন বা মজহাব মীমাংসা লেখক: আল-মুবাহিছুল আ’যম, আল-ওয়ায়িযুল আ’যম, কুতুবুল ইরশাদ, হাফিযুল হাদীছ, খাদিমুল ইসলাম আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ রূহুল আমীন বশীরহাটী হানাফী মাতুরীদী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ২৪ পৃষ্ঠা)
উক্ত দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ ফিকির করলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহাবিজ্ঞ নাহু ও ছরফবীদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে সরাসরি অনুসরণ করার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে কোন নির্দেশনা নেই। এরপরও উনাদেরকে অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব। কারণ, উনাদের প্রদর্শিত নিয়ম-কানূন অনুসরণ না করলে পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্হ-ফাতাওয়া বুঝা কোনো মতেই সম্ভব হবে না। তাই, ফিক্হী, আক্বায়িদী ইত্যাদী মাসয়ালায় ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করাও ফরয উনার অন্তর্ভূক্ত।
আকলী দলীল নম্বর: ৭
(৯৬৪)
হযরত ইমাম ইবনে হাজার, ইমাম যাহাবী, ইমাম মোজাই, ইমাম নববী, ইমাম ছাময়ানী, আল্লামা ছফিউদ্দীন, ইমাম ইবনে আব্দুল বার, ইমাম সুবুকি রহমতুল্লাহি আলাইহিম প্রভৃতি আলিমগণ তাকরীবুত্ তাহযীব, তাহযীবুত্ তাহযীব, মীযানুল ই’তিদাল, তাযকিরাতুল হুফ্ফায, কাশিফ, তাহযীবুল কামাল, তাহযীবুল আসমা, কিতাবুল আনছাব, খুলাছায়ে তাহযীবুল কামাল, জামিউল ইল্ম, আত-ত্ববাক্বাতুল কুবরা প্রভৃতি গ্রন্থে পবিত্র হাদীছ শরীফ প্রচারক আলিমগণের জীবনী ও ছানা-ছিফত বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। তৎসমুদয় গ্রন্থে প্রাচীন আলিমগণের বিচারে কোন রাবীকে বিশ্বাসভাজন, সত্যবাদী, কোন রাবীকে মিথ্যাবাদী, কাউকে মেধাবী, কাউকে পাপী, পথভ্রষ্ট, কাউকে অপরিচিত, কাউকে প্রতারক, জাল হাদীছ প্রচারক ইত্যাদি বলা হয়েছে। এতদ্বারা এই মত সমূহের সত্যাসত্য নির্ণয় করা হয়ে থাকে। এ মতসমূহ মান্য না করলে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার তত্ত্ব ও ছহীহ বা বাত্বিল হাদীছ শরীফ উনাদের প্রভেদ অবগত হওয়া বর্তমান যুগের লোকের পক্ষে একান্ত অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই মতামতের প্রমাণ পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফে বিন্দুবিসর্গ নেই বা এ সমস্ত মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কথা নহে। এ সমুদয় কেবল আলিমগণের ক্বিয়াসী কথা। ইহাকে ‘আসমাউর রিজাল’ বলা হয়। তাঁরা যাকে সত্যবাদী বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে সে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হতে পারে। তাঁরা কোনো হিংসুকের কথায় একজন সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদী বলতে পারেন। তাঁরা অজানিতভাবে একজন মেধাবী বা পরিচিত ব্যক্তিকে মেধাহীন বা অপরিচিত বলতে পারেন। তাঁরা প্রতারক, জাল হাদীছ শরীফ প্রতারককে সাধু নামে আখ্যায়িত করতে পারেন, আবার কোনো দুষ্ট লোকের কথায় একজন সাধু বা ধার্মিককে পাপিষ্ট, খারিজী, রাফিযী, মুরজিয়া ইত্যাদি বলতে পারেন। এক্ষণে যদি মাযহাব বিদ্বেষীগণ উপরোক্ত আলিমগণের ক্বিয়াসী মতসমূহ অমান্য করেন, তবে সমস্ত হাদীছ শরীফ পন্ড করেন। আর যদি তাঁদের বিনা দলীলের কথাগুলি মান্য করেন, তবে মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ভিন্ন অন্যের তাক্বলীদ করে কাফির ও মুশরিক হবে কিনা?” (বোরহানোল মোকাল্লেদীন বা মজহাব মীমাংসা লেখক: আল-মুবাহিছুল আ’যম, আল-ওয়ায়িযুল আ’যম, কুতুবুল ইরশাদ, হাফিযুল হাদীছ, খাদিমুল ইসলাম আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ রূহুল আমীন বশীরহাটী হানাফী মাতুরীদী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৩০-৩১ পৃষ্ঠা)
উক্ত দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ ফিকির করলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহাবিজ্ঞ আসমাউর রিজাল বিশেষজ্ঞ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে সরাসরি অনুসরণ করার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে কোন নির্দেশনা নেই। এরপরও উনাদেরকে অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব। কারণ, উনাদের প্রদর্শিত নিয়ম-কানূন অনুসরণ না করলে পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুসরণ করা কোনো মতেই সম্ভব হবে না। তাই, ফিক্হী, আক্বায়িদী ইত্যাদী মাসয়ালায় ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করাও ফরয উনার অন্তর্ভূক্ত।
আকলী দলীল নম্বর: ৮
(৯৬৫)
ইমাম ইবনে হাজার, নাবাবী, সুয়ূতী, ইবনু ছালাহ্, সাইয়্যিদ জুরজানী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহিম প্রভৃতি আলিমগণ নুখবাতুল ফিক্র, মুক্বাদ্দিমাতুল ফতহিল বারী, তাকরীব, মুক্বাদ্দিমায়ে তাদরীবুর রাবী, মুক্বাদ্দিমায়ে ইবনে ছালাহ্, মিফতাহুল উলূম, উছূলুল জুরজানী ইত্যাদি গ্রন্থ লিখেছেন। উপরোক্ত গ্রন্থাবলীতে মুতাওয়াতির, মাশহূর, আযীয, গরীব, ছহীহ, হাসান, দ্বঈফ, মারফূ, মাকতূ’, মুরসাল, মুয়াল্লাক, মুনক্বাতি’, শায, মুয়াল্লাল, মুদরাজ, মুয়ান্য়ান, মাওদূ’, মাতরূক ইত্যাদি বিবিধ প্রকার হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তৎসমুদয়ের মধ্যে কোন কোন হাদীছ শরীফ গ্রহণীয় ও কোন্ কোন্টি পরিত্যাজ্য?
বিদয়াতী, অপরিচিত, স্মৃতিশক্তি রহিত, ভ্রমকারী, সনদ গোপনকারী ব্যক্তির বর্ণিত হাদীছ শরীফ ছহীহ হবে কিনা? এরূপ হাদীছ শরীফ উনার অবস্থা বর্ণনাকে উছূলুল হাদীছ বলা হয়ে থাকে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সত্যাসত্য স্থির করতে হলে এই উছূলুল হাদীছ শরীফ মান্য করা অনিবার্য হয়ে পড়ে। কিন্তু এই বিদ্যার এক অক্ষরের প্রমাণ পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নেই। ইহা কেবল আলিমগণের কিয়াসী কথা। এক্ষণে যদি মাযহাব বিদ্বেষীরা ইহা অমান্য করে, তবে তারা নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার হতে বঞ্চিত হবে, আর যদি মান্য করে তবে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ ভিন্ন উপরোক্ত আলিমগণের তাক্বলীদ করে কাফির ও মুশরিক হবে কিনা?” (বোরহানোল মোকাল্লেদীন বা মজহাব মীমাংসা লেখক: আল-মুবাহিছুল আ’যম, আল-ওয়ায়িযুল আ’যম, কুতুবুল ইরশাদ, হাফিযুল হাদীছ, খাদিমুল ইসলাম আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ রূহুল আমীন বশীরহাটী হানাফী মাতুরীদী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৩১-৩২ পৃষ্ঠা)
উক্ত দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ ফিকির করলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহাবিজ্ঞ উছূলবীদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে সরাসরি অনুসরণ করার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে কোন নির্দেশনা নেই। এরপরও উনাদেরকে অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব। কারণ, উনাদের প্রদর্শিত নিয়ম-কানূন অনুসরণ না করলে পবিত্র হাদীছ শরীফ কোনো মতেই অনুসরণ করা সম্ভব হবে না। তাই, ফিক্হী, আক্বায়িদী ইত্যাদী মাসয়ালায় ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করাও ফরয উনার অন্তর্ভূক্ত।
আকলী দলীল নম্বর: ৯
(৯৬৬)
চারি ইমাম উনাদের মধ্যে প্রথম ইমাম আ’যম আবূ হানীফাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাবিয়ী ছিলেন। অবশিষ্ট তিনজন ইমাম হযরত ইমাম মালিক বিন আনাস, হযরত ইমাম শাফিয়ী ও হযরত ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা তাবে’ তাবিয়ীন ছিলেন। হযরত ইমাম সুফ্ইয়ান ছাওরী, আব্দুল্লাহ বিন মুবারক, শু’বা, ইহ্ইয়া বিন সাঈদ কাত্তান, আলী মাদানী, আব্দুর রহমান মাহদী, ইসহাক, আব্দুর রয্যাক, ইয়াযীদ বিন হারূন, লাইছ, ওয়াকী বিন র্জারাহ্, আওজায়ী ও ইয়াহ্ইয়া বিন মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উপরোক্ত ইমাম উনাদের সমসাময়িক, শিষ্য বা প্রশিষ্য ছিলেন। উনারা হাদীছ বিশারদ দলের প্রথম শ্রেণী ছিলেন। তৎপরে দু’শত হিজরীর কিছু পূর্বে বা পরে ইমাম বুখারী, মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ্ প্রভৃতি আলিমগণ জন্মগ্রহণ করে দ্বিতীয় শতাব্দীর পরে হাদীছ শরীফ শিক্ষা করতে লাগলেন। এই ছয়জন হাদীছ শরীফ তত্ত্ববীদ বিদ্বান নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দর্শন লাভ তো করেননি, বরং কোন ছহাবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ও তাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের দর্শনও লাভ করতে পারেননি। সুতরাং প্রথম শ্রেণীর হাদীছ তত্ত্ববীদ আলিমগণের ক্বিয়াসী মতসমূহের তাক্বলীদ করত: হাদীছ শরীফ উনাকে সত্য বা বাতিল, হাদীছ শরীফ প্রচারককে সত্যবাদী বা মিথ্যাবাদী, পরিচিত বা অপরিচিত, স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন বা স্মৃতিশক্তিহীন ও ধার্মিক বা বিদয়াতী বলেছেন। এক্ষেত্রে এ ছয়জন মুহাদ্দিছ শিক্ষকগণের তাক্বলীদ করেছেন। আবার তাঁরা কিয়াসী মতের উপর নির্ভর করে হাদীছ শরীফ উনার সত্যাসত্য বিচার করতে গিয়ে বিস্তৃত মতভেদ করেছেন। ইমাম বুখারী এরূপ ৪৩০ জন রাবীর হাদীছ শরীফ সমূহ ছহীহ বলে স্বীকার করেছেন, যাদের হাদীছ শরীফ সমূহ ইমাম মুসলিমের মতে ছহীহ নয়; পক্ষান্তরে ইমাম মুসলিম এরূপ ৬২৫ জন রাবীর হাদীছ শরীফসমূহ ছহীহ বলে স্বীকার করেছেন, যাদের হাদীছগুলি ইমাম বুখারীর মতে ছহীহ নয়। এরূপ অবশিষ্ট চারজন মুহাদ্দিছ উনাদের মধ্যে মতান্তর উপস্থিত হয়েছে। এ ছয়জন মহাত্মার লিখিত ছয় খ- হাদীছ গ্রন্থ ছহীহ কিতাব বা ছিহাহ্ সিত্তা বলে পরিচিত হয়েছে। হাদীছ শরীফ তত্ত্ববিদ আলিমগণ ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিমের ২২০টি হাদীছ শরীফকে দ্বঈফ বলেছেন। এরূপ অবশিষ্ট চারিখ- হাদীছ গ্রন্থে অনেক দ্বঈফ হাদীছ শরীফ আছে। এক্ষেত্রে উক্ত ছয় খ- কিতাবকে সর্ব্বতোভাবে ছহীহ গ্রন্থ বলা ক্বিয়াসী হলো, ইহার কোন প্রমাণ পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নেই। তৎপরে ছহীহ বুখারীকে সর্ব্বোত্তম গ্রন্থ বলাও ক্বিয়াসী কথা, পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে ইহার প্রমাণ নেই। ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইহ্ইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেছেন যে, ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুয়াত্তা সর্ব্বোত্তম গ্রন্থ। ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আবূ আলী নীসাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও একজন মাগরিবী আলিম বলেছেন যে, ছহীহ মুসলিম সর্ব্বোত্তম গ্রন্থ। অবশ্য অনেকের অনুমান এই যে, ছহীহ বুখারী সর্ব্বোত্তম গ্রন্থ। যা হোক, এরূপ অনুমানের প্রমাণ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নেই।
আবার অনুমানকারী দল অনুমান করে বলেন যে, ছিহাহ্ সিত্তা-র হাদীছ থাকতে অন্য কিতাবের হাদীছ ধর্তব্য নয়।” (বোরহানোল মোকাল্লেদীন বা মজহাব মীমাংসা লেখক: আল-মুবাহিছুল আ’যম, আল-ওয়ায়িযুল আ’যম, কুতুবুল ইরশাদ, হাফিযুল হাদীছ, খাদিমুল ইসলাম আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ রূহুল আমীন বশীরহাটী হানাফী মাতুরীদী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৩২-৩৩ পৃষ্ঠা)
উক্ত দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ ফিকির করলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহাবিজ্ঞ উছূলবীদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে সরাসরি অনুসরণ করার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে কোন নির্দেশনা নেই। এরপরও উনাদেরকে অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব। কারণ, উনাদের প্রদর্শিত নিয়ম-কানূন অনুসরণ না করলে পবিত্র হাদীছ শরীফ কোনো মতেই বুঝা সম্ভব হবে না। তাই, ফিক্হী, আক্বায়িদী ইত্যাদী মাসয়ালায় ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করাও ফরয উনার অন্তর্ভূক্ত।
উল্লেখিত ইবারত উনাদের থেকে এটাই স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে যে, সর্বশ্রেণী লোকের জন্য মাযহাব চতুষ্ঠয় তথা হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী উনাদের যেকোনো একটিকে নিজ জীবনের শেষ পর্যন্ত অনুসরণ করা ফরয। চাই সেই মুক্বাল্লিদ বা অনুসারী পরবর্তী মুজতাহিদ, ফক্বীহ, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, আদীব, মুয়াররিখ, মুছান্নিফ, মুহাক্কিক্ব, আমীর-উমারা ইত্যাদী যেকোনো পদস্থ হোন না কেন?
অতএব, মাযহাব চতুষ্ঠয়ের যেকোনো একটি মাযহাব অনুসরণ করার অপরিহার্যতা, প্রয়োজনীয়তা ও আবশ্যকতা কতখানি; তা উল্লেখিত আকলী বা জ্ঞানগর্ভ আলোচনা থেকেই পরিস্কার হয়ে গেল। এখন মাযহাব বিদ্বেষী ও অমান্যকারীরা এসমস্ত দলীলের বিপক্ষে কি জবাব দিবে? আসলে তাদের কোনোভাবেই দালীলিক কোন জবাব নেই