সুমহান ২রা মুহররমুল হারাম শরীফ ১৪৪০ হিজরী ( ঙ )



যুল ওয়াসীলাহ, খইরুল আলামীন, সাইয়্যিদুছ ছাক্বলাইন, ছাহিবুল কাওছার, যিক্রুল্লাহ, খইরু খলক্বিল্লাহ, আস সিরাজুল মুনীর, ইমামুল মুত্তাক্বীন, মালিকুল কায়িনাত, আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার একক অনন্য বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত,বুযূর্গী-সম্মান ও খুছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক

সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব মুবারক-এ আলোচনা মুবারক
নুযহাতুল মাজালিস’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
فَعَلِمَتْ اَحْبَارُ الشَّامِ بِـسَيِّـدِنَـا حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ لِاَنَّ فِـىْ كُتُبِهِمْ اِذَا قَطَرَتْ جُبَّةُ حَضْرَتْ يَـحْيٰـى عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَدْ وُلِدَ وَالِدُ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “শাম দেশের পাদ্রীরা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে জানতো। কেননা তাদের আসমানী কিতাবসমূহে লিখা ছিলো যে, যখন হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত জুব্বা মুবারক থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে রক্ত মুবারক ঝরতে থাকবে, তখন বুঝতে হবে যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (নুযহাতুল মাজালিস ২/৭৫)
আল্লামা হুসাইন ইবনে মুহম্মদ ইবনে হাসান দিয়ার বাকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ: ৯৬৬) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘তারীখুল খমীস শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
وَكَانَ يَوْمَ وُلِدَ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلِمَ بِـمَوْلِدِهٖ جَمِيْعُ اَحْبَارِ الشَّامِ وَذٰلِكَ اَنَّهٗ كَانَتْ عِنْدَهُمْ جُبَّةُ صُوْفٍ ۢبَيْضَاءُ وَكَانَتِ الْـجُبَّةُ مَغْمُوْسَةً فِىْ دَمِ حَضْرَتْ يَـحْيـَى بْنِ زَكَرِيَّا عَلَيْهِ السَّلَامُ وَكَانُوْا قَدْ وَجَدُوْا فِـىْ كُتُبِهِمْ اِذَا رَاَيْتُمُ الْـجُبَّةَ الْبَيْضَاءَ وَالدَّمُ يَقْطُرُ مِنْهَا فَاعْلَمُوْا اَنَّ اَبَا سَيِّـدِنَـا مُحَمَّدِ ۣ الْـمُصْطَفٰى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ وُلِدَ تِلْكَ اللَّيْلَةَ.
অর্থ: “যেই দিন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, সেই দিনই উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কে শাম দেশের সকল পাদ্রীরা জেনেছিলো। আর তা এই কারণে যে, তাদের নিকট একটি সাদা পশমী জুব্বা মুবারক ছিলো। উক্ত জুব্বা মুবারকখানা হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া আলাইহিস সালাম উনার রক্ত মুবারক-এ সিক্ত হয়েছিলো। তারা তাদের আসমানী কিতাবসমূহে পেয়েছিলো যে, যখন তোমরা দেখবে উক্ত সাদা জুব্বা মুবারক থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে রক্ত মুবারক ঝরছে, তখন তোমরা নিশ্চিতভাবে জানবে যে, ওই রাতেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (তারীখুল খমীস শরীফ ১/৮২)

তাহলে এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল। সুবহানাল্লাহ! যেটা ভাষায় প্রকাশ করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত বিশেষ শান মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ
এই সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
وَكَانَ سَيِّدُنَـا حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ يُـخْبِرُ اَبَاهُ بِـمَا يَرٰى مِنَ الْعَجَائِبِ يَقُوْلُ يَا اَبَتِ اِنّـِــىْ اِذَا خَرَجْتُ اِلـٰى بَطْحَاءِ مَكَّةَ وَصِرْتُ عَلـٰى جَبَلِ ثَبِيْرٍ خَرَجَ مِنْ ظَهْرِىْ نُوْرَانِ اَخَذَ اَحَدُهُـمَا شَرْقَ الْاَرْضِ وَالْاٰخَرُ غَرْبَـهَا ثُـمَّ اَنَّ ذَيْنِكَ النُّوْرَيْنِ يَسْتَدِيْرَانِ حَتّٰى يَصِيْرَا كَالسَّحَابَةِ ثُـمَّ تَنْفَرِجُ لَـهُمَا السَّمَاءُ فَيَدْخُلَانِ فِيْهَا ثُـمَّ يَـخْرُجَانِ ثُـمَّ يَرْجِعَانِ اِلـىَّ فِـىْ لَمْحَةٍ وَّاحِدَةٍ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যে সকল আশ্চর্যজনক ও বিস্ময়কর বিষয় মুবারক দেখতেন, সেগুলো তিনি উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতেন। একদা তিনি বলেন, হে আমার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম! আমি যখন সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার সমভূমি থেকে বের হয়ে ছাবীর পর্বতের উপর পৌঁছি, তখন আমার সম্মানিত পৃষ্ঠ মুবারক থেকে দুইখানা সম্মানিত নূর মুবারক বের হয়ে একখানা সম্মানিত নূর মুবারক পৃথিবীর পূর্ব প্রান্ত ঘেরাও করে নেন, অপরখানা নূর মুবারক পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্ত ঘেরাও করে নেন। অতঃপর নিশ্চয়ই ওই সম্মানিত দুইখানা নূর মুবারক গোলাকার হয়ে ঘুরতে ঘুরতে মেঘের মতো হয়ে যান। তারপর উক্ত সম্মানিত দুইখানা নূর মুবারক উনাদের জন্য আসমান ফেটে যায় এবং উক্ত সম্মানিত দুইখানা নূর মুবারক আসমানের ভিতর প্রবেশ করেন। অতঃপর আবার এক নিমিষে আমার নিকট প্রত্যাবর্তন করেন। অর্থাৎ পুনরায় আমার মাঝে অবস্থান মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ! (তারীখুল খমীস ১/১৮২)

সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কুল কায়িনাতের সকলেই চিনতো এবং বৃক্ষরাজী উনাকে সিজদা করতো
এই সম্পর্কে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি নিজেই উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট বর্ণনা করেন,
وَاِنّـِــىْ لَاَجْلِسُ فِـى الْـمَوْضِعِ فَاَسْـمَعُ فِيْهِ مِنْ تَـحْتِـىْ سَلَامٌ عَلَيْكَ اَيُّهَا الْـمُسْتَوْدِعُ ظَهْرُهٗ نُوْرُ سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاِنّـِــىْ لَاَجْلِسُ فِـى الْـمَوْضِعِ الْيَابِسِ اَوْ تَـحْتَ الشَّجَرَةِ الْيَابِسَةِ فَتَخْضَرُ وتُلْقِىْ عَلَىَّ اَغْصَانَـهَا فَاِذَا قُمْتُ وَتَرَكْـتُهَا عَادَتْ اِلـٰى مَا كَانَتْ فَقَالَ لَهٗ عَبْدُ الْـمُطَّلِبِ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَبْشِرْ يَا بُنَـىَّ فَاِنّـِـىْ اَرْجُوْ اَنْ يُّـخْرِجَ اللهُ مِنْ ظَهْرِكَ الْـمُسْتَوْدَعَ الْمُكَرَّمَ فَاِنَّا قَدْ وَعَدْنَا ذٰلِكَ وَاِنّـِـىْ رَاَيْتُ قَبْلَكَ رُؤْيَا كُلَّهَا تَدُلُّ عَلـٰى اَنَّهٗ يَـخْرُجُ مِنْ ظَهْرِكَ اَكْرَمُ الْعَالَـمِيْنَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি যখন কোনো স্থানে বসি, তখন আমি সেখানে শুনতে পাই, আমার নিচ থেকে কে যেন বলছেন, আপনার উপর সালাম। হে মহাসম্মানিত সংরক্ষণকারী! আপনার মাঝে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত অবস্থান মুবারক করছেন। সুবহানাল্লাহ! আর আমি যখন কোনো শুষ্ক স্থান অথবা শুকনো (বা মৃত) গাছের নিচে বসি, তখন উক্ত শুষ্ক স্থানটা সজীব হয়ে যায় আর শুকনো বা মৃত গাছটা সতেজ হয়ে যায়, প্রাণ ফিরে পায় এবং তার ডালপালাগুলো আমার দিকে ঝুঁকিয়ে দেয়। অর্থাৎ গাছ আমাকে সিজদা করে। সুবহানাল্লাহ! আর যখন আমি দাঁড়িয়ে যাই এবং তা ছেড়ে চলে যাই, তখন গাছ তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। সুবহানাল্লাহ! তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে বলেন, হে আমার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম! আপনি সম্মানিত সুসংবাদ মুবারক গ্রহণ করুন। সুবহানাল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি এটা আশা করছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার থেকে পবিত্র মহাসম্মানিত আমানত মুবারক তথা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বের করবেন অর্থাৎ আপনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম হবেন। সুবহানাল্লাহ! কেননা আমরা তথা আমি এবং আমার পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম আমরা সকলেই এই বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলাম। সুবহানাল্লাহ! আর নিশ্চয়ই আমি আপনার পূর্বে (এই বিষয়ে) সমস্ত প্রকার নিদর্শন মুবারক দেখেছি। সুবহানাল্লাহ! যা প্রমাণ করে যে, নিশ্চয়ই আপনার থেকেই তথা আপনার মাধ্যমেই আকরামুল ‘আলামীন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখবেন। অর্থাৎ আপনার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করবেন। আপনি হবেন উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম।” সুবহানাল্লাহ! (তারীখুল খমীস ১/১৮২)

সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে দেখলেই মুশরিকদের বড় বড় মূর্তিগুলো কান্না করতো
এই সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,   
وَكَانَ سَيِّدُنَـا حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَبُو النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلَّمَا اَصْبَحَ وَذَهَبَ لِيَدْخُلَ عَلـٰى صَنَمِهِمُ الْاَكْبَرِ وَهُوَ اللَّاتُ وَالْعُزّٰى صَاحَ كَمَا تَصِيْحُ الْـهِرَّةُ وَنَطَقَ وَهُوَ يَقُوْلُ مَا لَنَا وَلَكَ اَيُّهَا الْـمُسْتَوْدِعُ ظَهْرُهٗ نُوْرُ سَيِّدِنَـا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّذِىْ يَكُوْنُ هَلَاكُنَا وَهَلَاكُ اَصْنَامِ الدُّنْيَا عَلـٰى يَدَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
      অর্থ: “আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যখনই সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার ভিতর প্রবেশ করতেন বা নিকটে যেতেন বা সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার পাশ দিয়ে অতিক্রম করতেন, তখনই মুশরিকদের বড় বড় মূর্তি যেমন লাত, উয্যা এগুলো বিড়ালের ন্যায় চিৎকার করতো এবং কথা বলতো। সেগুলো বলতো, আমাদের কী হলো? আর আপনার জন্য আমাদের এই করুণ অবস্থা, হে মহাসম্মানিত সংরক্ষণকারী! আপনার মাঝে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবস্থান মুবারক করছেন। উনার সম্মানিত হাত মুবারক-এ আমাদের এবং পৃথিবীর সমস্ত মূর্তিগুলোর হালাকী ঘটবে। অর্থাৎ আপনার মহাসম্মানিত সুমহান আওলাদ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকেসহ পৃথিবীর সমস্ত মূর্তিগুলো ধ্বংস করে দিবেন, নিশ্চিহ্ন করে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তারীখুল খমীস ১/১৮২)

সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট আরব মহিলা উনাদের সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাব
এবং উনার বেমেছাল পবিত্রতা মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আরবের হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ সম্ভ্রান্তশীলা মহিলা উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কপাল মুবারক-এ ‘নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ অবলোকন করে আশিকাহ হয়ে উনার সাথে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ হওয়ার জন্য বেকারার-পেরেশান হয়ে গিয়েছিলেন এবং উনার নিকট সরাসরি এই ব্যাপারে প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। এই জন্য উনারা উনাদের ধন-সম্পদসহ সমস্ত কিছু; এমনকি নিজেদের জীবন কুরবান করে দেয়ার জন্য সদা প্রস্তুত ছিলেন। উনারা বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। যখনই উনারা উনাকে দেখতেন, তখনই উনারা উনাদের প্রস্তাব পেশ করতেন, আরজি পেশ করতেন। ” সুবহানাল্লাহ!
মূলত, সীরাতগ্রন্থগুলোতে এই বিষয়ে অনেক ঘটনা মুবারক উল্লেখ রয়েছে।
যেমন ‘শরহুয যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
سَيِّدُنَا حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ لِاَنَّهٗ كَانَ يَتَلَاْلَاُ نُوْرًا فِـىْ قُرَيْشٍ وَّكَانَ اَجْـمَلَهُمْ فَشَغَفَتْ بِهٖ نِسَاءُهُمْ وَكِدْنَ اَنْ تَذْهَلَ عُقُوْلُـهُنَّ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে মহাসম্মানিত নূর মুবারক  তথা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জ্বলজ্বল করতেন এবং তিনি ছিলেন সম্মানিত কুরাইশ তথা সমগ্র কায়িনাতবাসীর মাঝে সর্বাধিক সৌন্দর্য মুবারক উনার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! ফলে সম্মানিত কুরাইশী মহিলাগণ উনারা উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক-এ অত্যন্ত কঠিনভাবে গরক্ব ছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে দেখে বিস্ময়াভিভূত হয়ে সম্মানিত কুরাইশী মহিলাগণ উনাদের আক্বল-বুদ্ধি লোপ পেয়ে যেতো। উনারা বেকারার পেরেশান হয়ে যেতেন এবং উনাকে পাওয়ার জন্য, উনার সম্মানিত ছোহবত মুবারক গ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেন।” (শরহুয যারক্বানী ‘আলা মাওয়াহিব ১/২০৭, তারীখুল খমীস ১/৮২)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,
قَالَ اَهْلُ السِّيَرِ فَلَقِىَ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِـىْ زَمَنِهٖ مِنَ الـنِّـسَاءِ مَا لَقِىَ حَضْرَتْ يُوْسُفُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِـىْ زَمَنِهٖ مِنِ امْرَاَةِ الْعَزِيْزِ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার যামানায় মহিলা উনাদের কর্তৃক তদ্রুপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন, যেরূপ পরিস্থির সম্মুখীন হয়েছিলেন হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম তিনি উনার যামানায় আযীযে মিছর উনার আহলিয়া তথা হযরত যুলায়খা আলাইহাস সালাম উনার কর্তৃক।” (শরহুয যারক্বানী ‘আলা মাওয়াহিব ১/২০৭, তারীখুল খমীস ১/৮২)
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইমামুল মুহাদ্দিছীন মিনাল আউওয়ালীন ইলাল আখিরীন, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হযরত ইঊসুফ আলাইহিস সালাম উনাকে পাওয়ার জন্য তো শুধু একজন তথা হযরত যুলায়খা আলাইহাস সালাম তিনি বেকারার পেরেশান হয়ে গিয়েছিলেন এবং তিনি উনার সমস্ত কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে পাওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ মহিলা বেকারার পেরেশান হয়ে গিয়েছিলেন এবং উনারা উনাদের সমস্ত কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। এমনকি তৎকালিন তথাকথিত পরাশক্তি রোম-পারস্য শাসকদের পক্ষ থেকেও সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাদের মেয়েদের ব্যাপারে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! মূলত, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সৌন্দর্য মুবারক উনার সাথে অন্য কারো সৌন্দর্য মুবারকের তুলনা হবে না। সুবহানাল্লাহ! তুলনা করাটা চরম আদবের খিলাফ হবে এবং কাট্টা কুফরী ও চিরজাহান্নামী হওয়ার কারণ হবে। এখানে ওই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফখানাই প্রযোজ্য, যেই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ لَّا يُقَاسُ بِنَا اَحَدٌ.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিততিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো তুলনা করা যাবে না।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী ৪/২৮৩, জামি‘উল আহাদীছ ২২/২১৯, কানজুল ‘উম্মাল ১২/১০৪, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/২৪৯৫০, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ফী মানাক্বিবে যাওইল কুরবা লিমুহিব্বে ত্ববারী ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৭ ইত্যাদি)
আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে প্রথম স্তরে রয়েছেন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি। তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত সৌন্দর্য মুবারক এবং উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী।” সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
كَانَ سَيِّدُنَـا حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ اَحْسَنَ رَجُلٍ رُؤِىَ قَطُّ خَرَجَ يَوْمًا عَلـٰى نِسَاءِ قُرَيْشٍ مُّـجْتَمِعَاتٍ فَقَالَتِ امْرَاَةٌ مِّنْـهُـنَّ اَيَّتُكُنَّ تَتَزَوَّجُ بِـهٰذَا الْفَتٰى فَتَصْطَبُّ النُّوْرَ الَّذِىْ بَيْنَ عَيْنَيْهِ فاِنّـِـىْ اَرٰى بَيْنَ عَيْنَيْهِ نُورًا وَّفِـىْ رِوَايَةٍ وَّكَانَ بَيْنَ عَيْنَيْهِ نُوْرٌ .
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বাধিক সৌন্দর্য মুবারক উনার অধিকারী। উনার মত এরূপ সুদর্শন পুরুষ (কায়িনাতে) কখনও দেখা যেতো না। সুবহানাল্লাহ! একদা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত কুরাইশী মহিলা উনাদের একটি জামায়াতের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন মহিলা উনাদের মধ্য হতে একজন সবাইকে সম্বোধন করে বললেন, হে মহিলাগণ! আপনাদের মধ্যে কে আছেন যে এই সম্মানিত যুবক উনাকে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ করবেন। (আপনারা কি চান যে এই সম্মানিত যুবক তিনি আপনাদের কাউকে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ করেন।) অতঃপর উনার সম্মানিত কপাল মুবারক উনার মধ্যে যেই মহাসম্মানিত নূর মুবারক  রয়েছেন, সেই মহাসম্মানিত নূর মুবারক উনাকে ধারণ করবেন। সুবহানাল্লাহ! কেননা নিশ্চয়ই আমি উনার সম্মানিত কপাল মুবারক-এ মহাসম্মানিত নূর মুবারক  তথা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখতে পাচ্ছি। সুবহানাল্লাহ! অপর বর্ণনায় রয়েছে, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কপাল মুবারক-এ তখন নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবস্থান করছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/৩২৫, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ লিল বাইহাক্বী ১/১৩৩, আবূ নাঈম, খছায়িছুল কুবরা ১/৭১, মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক শরীফ ৫/৩১৩ ইত্যাদি)
মূলত, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কপাল মুবারক-এ দায়িমীভাবে ‘নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনাকে দেখা যেতো। সুবহানাল্লাহ! যার কারণে এই ‘মহাসম্মানিত নূর মুবারক’ লাভ করার জন্য আরবের সকল সম্ভ্রান্তশীলা মহিলাগণ উনারা উনাদের ধন-সম্পদসহ সমস্ত কিছু; এমনকি নিজেদের জীবনের বিনিময়ে হলেও সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ হওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত ছিলেন। অসংখ্য মহিলাগণ উনারা ধন-সম্পদের দোহাই দিয়ে সরাসরি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
সীরাতগ্রন্থগুলোতে এই বিষয়ে অনেক ওয়াকেয়া মুবারক উল্লেখ রয়েছে। এক দিনের ঘটনা। ফাতিমা বিনতে র্মুর নামক এক ইহুদী মহিলা যিনি সম্মানিত তাওরাত শরীফ, ইনযীল শরীফ তথা পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে অভিজ্ঞা ছিলেন। তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কপাল মুবারক-এ ‘নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ দেখে সেই মহাসম্মানিত নূর মুবারক নিজের মধ্যে পাওয়ার জন্য, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ছোহবত মুবারক লাভের জন্য উনাকে প্রস্তাব পেশ করে বললেন যে, যদি আপনি এখন আমার সঙ্গে অবস্থান মুবারক করেন, তাহলে আমি আপনাকে একশত উট হাদিয়া করবো। যেমন, এই সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
قَدْ قَرَاَتِ الْكُتُبَ يُقَالُ لَـهَا فَاطِمَةُ بِنْتُ مُـرِّۣ الْـخَثْعَمِيَّةُ فَرَاَتْ نُوْرَ النُّبُوَّةِ فِـىْ وَجْهِ سَيِّدِنَـا حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَتْ يَا فَتٰى هَلْ لَّكَ اَنْ تَقَعَ عَلَىَّ الْاٰنَ وَاُعْطِيْكَ مِائَةً مِّـنَ الْاِبِلِ. فَقَالَ سَيِّدُنَـا حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ:
اَمَّا الْـحَرَامُ فَالْمَمَاتُ دُوْنَهْ ... وَالْـحِلُّ لَا حِلٌّ فَاَسْتَبِيْنَهْ
فَكَيْفَ بِالْاَمْرِ الَّذِىْ تَبْغِيْنَهْ ... يَـحْمِى الْكَرِيْـمُ عِرْضَهٗ وَدِيْنَهْ.
 অর্থ: “তিনি পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব পড়েছেন। উনাকে ফাতিমা বিনতে র্মুর খছ‘আমিইয়্যাহ বলা হতো। তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কপাল মুবারক-এ ‘মহাসম্মানিত নূরুন নুবুওওয়াহ মুবারক তথা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ দেখতে পেলেন। অতঃপর উক্ত মহিলা তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে মহাসম্মানিত যুবক! আপনি কি এখন আমার সাথে অবস্থান মুবারক করবেন? তাহলে আমি আপনাকে একশত উট হাদিয়া মুবারক করবো।
জবাবে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন,
اَمَّا الْـحَرَامُ فَالْمَمَاتُ دُوْنَهْ ... وَالْـحِلُّ لَا حِلٌّ فَاَسْتَبِيْنَهْ
فَكَيْفَ بِالْاَمْرِ الَّذِىْ تَبْغِيْنَهْ ... يَـحْمِى الْكَرِيْـمُ عِرْضَهٗ وَدِيْنَهْ
অর্থ: “এতো হারাম! আর হারাম গ্রহণ অপেক্ষা মৃত্যুই শ্রেয়। আমি তো বৈধ সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার সন্ধান করছি। আর এমন কাজ মোটেও হালাল নয়, যা প্রকাশ করা যায় না। কিভাবে আমি আপনার আহ্বানে সাড়া দিবো? যে অবৈধ কাজে আপনি আগ্রহী তা আমার দ্বারা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। সম্ভ্রান্ত মানুষ তো নিজের মান-সম্মান ও দ্বীন রক্ষা করেন।” সুবহানাল্লাহ! (বিদায়াহ-নিহায়াহ, সীরাতুল মুস্তাফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এই জবাব মুবারক উনার থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি কত বেমেছাল পবিত্র ছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে উনার কতো বেমেছাল সম্মানিত তায়াল্লুক্ব-নিসবত মুবারক ছিলো। সুবহানাল্লাহ! যার কারণে তিনি লক্ষ লক্ষ মহিলা উনাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। অথচ এটা ছিলো আইয়ামে জাহিলিয়াতের যুগ। মানুষ হালাল-হারাম বিবেচনা করতো না এবং ব্যভিচারে-পাপাচারে লিপ্ত হওয়া তাদের জন্য একটা স্বাভাবিক বিষয় ছিলো। অন্যদিকে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন কুরাইশ উনাদের সাইয়্যিদ, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! তারপরেও তিনি স্পষ্ট ভাষায় অত্যন্ত শক্তভাবে জবাব দিয়ে দিলেন যে,
اَمَّا الْـحَرَامُ فَالْمَمَاتُ دُوْنَهْ ... وَالْـحِلُّ لَا حِلٌّ فَاَسْتَبِيْنَهْ
فَكَيْفَ بِالْاَمْرِ الَّذِىْ تَبْغِيْنَهْ ... يَـحْمِى الْكَرِيْـمُ عِرْضَهٗ وَدِيْنَهْ
অর্থ: “এতো হারাম! আর হারাম গ্রহণ অপেক্ষা মৃত্যুই শ্রেয়। আমি তো বৈধ সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার সন্ধান করছি। আর এমন কাজ মোটেও হালাল নয়, যা প্রকাশ করা যায় না। কিভাবে আমি আপনার আহ্বানে সাড়া দিবো? যে অবৈধ কাজে আপনি আগ্রহী তা আমার দ্বারা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। সম্ভ্রান্ত মানুষ তো নিজের মান-সম্মান ও দ্বীন রক্ষা করেন।” সুবহানাল্লাহ!
 তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি কতো বেমেছাল পবিত্রতা মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন, তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেন না। সুবহানাল্লাহ! আর তিনি উনার জবাবে, এটাও বলেছেন যে,
يَـحْمِى الْكَرِيْـمُ عِرْضَهٗ وَدِيْنَهْ
অর্থ: “সম্ভ্রান্ত মানুষ তো নিজের মান-সম্মান ও দ্বীন রক্ষা করেন।” সুবহানাল্লাহ!
তিনি উনার এই সম্মানিত বাক্য মুবারক উনার দ্বারা এটাই প্রমাণ করে দিলেন যে, তিনি একটি সম্মানিত দ্বীন উনার উপর রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আর সেই সম্মানিত দ্বীন মুবারক হচ্ছেন ‘দ্বীনে হানীফ’। সুবহানাল্লাহ!
আর প্রথমে যে তিনি বললেন,
اَمَّا الْـحَرَامُ فَالْمَمَاتُ دُوْنَهْ
অর্থ: “এতো হারাম! আর হারাম গ্রহণ অপেক্ষা মৃত্যুই শ্রেয়।”
তিনি এই কথা মুবারক দ্বারা এটাই প্রমাণ করে দিলেন যে, তিনি হারাম গ্রহণ করার চেয়ে মৃত্যুকে উত্তম মনে করেন। অর্থাৎ তিনি এটাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, হারাম থেকে বেঁচে থাকার জন্য যদি উনাকে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করতে হয়, তাহলে তিনি সেটাই করবেন। তারপরেও তিনি কস্মিনকালেও হারাম গ্রহণ করবেন না। সুবহানাল্লাহ!
উনার এই কথা মুবারক দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি কতো বেমেছাল পবিত্রতা মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন এবং সম্মানিত দ্বীন ও সম্মানিত ঈমান উনাদের উপর কতটুকু দায়িম-ক্বায়িম ও ইস্তিক্বামাত ছিলেন। যার কোনো মেছাল নেই। সুবহানাল্লাহ!
তারপরেও কিভাবে উলামায়ে ‘সূ’রা, গ- মূর্খরা বলতে পারে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ঈমানদার ছিলেন না। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! তিনি কুফরীর মধ্যে ইন্তেকাল করেছেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! তিনি জাহান্নামী। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!     
মূলত, যারা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে এরূপ চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করে, কুফরী মূলক বক্তব্য পেশ করবে, সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার ফতওয়া অনুযায়ী তারা সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, চিরজাহান্নামী, চির মাল‘ঊন। তারা যদি মুসলমান বা ঈমানদার দাবি করে, তাহলে তাদের উপর মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং মুরতাদের শাস্তিও বর্তাবে এবং তাদের প্রাপ্য হলো চির লা’নত ও চির জাহান্নাম। আর যদি কাফির হয়, তাহলে তারা তাদের কুফরীকে আরো বৃদ্ধি করলো। তাদের শাস্তিও মৃত্যুদ-। তাদেরও প্রাপ্য হলো চির লা’নত ও চির জাহান্নাম। তারা ইবলিসের ন্যায়; বরং ইবলিসের চেয়েও চরম মাল‘ঊন। তাদের প্রত্যেককেই লা’নাতুল্লাহি আলাইহি বলা ফরয, ফরয এবং ফরয।
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে আহাল হিসেবে না পাওয়ার কারণে দুঃখ-অনুতাপে দুই শত কুরাইশী মহিলা উনাদের ইন্তেকাল
হযরত ইমাম আল্লামা আবূ সা’দ আব্দুল মালিক ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম নীশাপুরী খরকূশী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ: ৪০৯ হিজরী) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
فَلَمَّا ابْتَنٰى بِـهَا سَيِّدُنَـا حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ الْـمُطَّلِبِ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ مَرِضَ نِسَاءُ قُرَيْشٍ وَّمَاتَ مِنْهُنَّ مِائَتَا امْرَاَةٍ اَسِفًا  عَلـٰى سَيِّدِنَـا حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الْـمُطَّلِبِ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ.
অর্থ: “যখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়, তখন কুরাইশ বংশীয় সমস্ত মহিলা উনারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমনকি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে (আহাল হিসেবে) না পাওয়ার দুঃখ-অনুতাপে দুইশত কুরাইশী মহিলা ইন্তেকাল করেন।” সুবহানাল্লাহ! (শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ ১/৩৪৭)
আবূ আব্দিল্লাহ মুহম্মদ ইবনে আব্দুল বাক্বী ইবনে ইঊসুফ ইবনে আহমদ ইবনে শিহাবুদ্দীন ইবনে মুহম্মদ যারক্বানী মালিকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (বিছাল শরীফ : ১১২২ হিজরী শরীফ) উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘শরহুয যারক্বানী আলাল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যাহ বিল মানহিল মুহম্মদিয়্যাহ শরীফ উনার ১ম খ-ের ১৯৩ পৃষ্ঠায়’ উল্লেখ করেন,
وَقَدْ رُوِىَ عَنْ سَيِّدِنَـا حَضْرَتْ اَلْعَبَّاسِ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّهٗ لَـمَّا بَنـٰى سَيِّدُنَا حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِسَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اٰمِنَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَحْصَوْا مِائَتَىِ امْرَاَةٍ مِّنْۢ بَنِـىْ مَـخْزُوْمٍ وَّبَنِـىْ عَبْدِ مَنَافٍ مُّتـْنَ وَلَـمْ يَتَزَوَّجْنَ اَسِفًا عَلـٰى مَا فَاتَـهُنَّ مِنْ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَاَنَّهٗ لَـمْ تَبْقَ امْرَاَةٌ فِـىْ قُرَيْشٍ اِلَّا مَرِضَتْ لَيْلَةً دَخَلَ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِسَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اٰمِنَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে। যখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আযীমুশ শান সম্মানিত  নিসবতে আযীম শরীফ প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন গণনা করে দেখা গেছে যে, বনূ মাখযূম এবং বনূ আবদে মানাফ এই দুই সম্প্রদায় থেকে দুইশত মহিলা দুঃখ-অনুতাপে (হার্ট ফেইল করে) ইন্তেকাল করেন। কারণ উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ হতে না পেরে এক মহাসম্মানিত নিয়ামত মুবারক হাতছাড়া করেছেন। (অর্থাৎ উনারা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লাভ করতে পারেননি।) আর যেই রাত সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ ছোহবত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন, সেই রাতে কুরাইশ বংশীয় সকল মহিলাগণ উনারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।” 
তারীখুল খমীস শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
فَلَيْلَةً ۢبَنـٰى سَيِّدُنَـا حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِـهَا لَـمْ تَبْقَ امْرَاَةٌ فِـىْ قُرَيْشٍ اِلَّا مَرِضَتْ قَالَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيْهِ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ عَبَّاسٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّ لَيْلَةً ۢبَنـٰى سَيِّدُنَا حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِسَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اٰمِنَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَحْصَيْنَا مِائَتَىِ امْرَاَةٍ مّـِنْۢ بَنِـىْ مَـخْزُوْمٍ وَّعَبْدِ شَـمْسٍ وَّعَبْدِ مَنَافٍ مُّتْـنَ وَخَرَجْنَ مِنَ الدُّنْيَا وَلَـمْ يَتَزَوَّجْنَ اَسِفًا عَلـٰى مَا فَاتَـهُنَّ مِنْ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ.
অর্থ: “যেই রাতে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ প্রতিষ্ঠিত হয়, সেই রাতে কুরাইশ বংশীয় সমস্ত মহিলাগণ উনারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উনার পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, যেই রাতে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ প্রতিষ্ঠিত হয়, আমরা গণনা করেছি বনূ মাখযূম, বনূ আবদে শামস এবং বনূ আবদে মানাফ গোত্র থেকে দুই শত মহিলা ইন্তেকাল করেছেন, দুনিয়ার যমীন থেকে বিদায় নিয়েছেন। এই দুঃখ-অনুতাপে যে, উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ হতে না পেরে এক বিশেষ সম্মানিত নিয়ামত মুবারক হাতছাড়া করেছেন। (অর্থাৎ উনারা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লাভ করতে পারেননি।)” (তারীখুল খমীস শরীফ ১/১৮৪-১৮৫)
এখন বলার বিষয় হচ্ছে দুই বা তিন গোত্র থেকে যদি দুই শত মহিলা ইন্তেকাল করেন, তাহলে অন্যান্য গোত্র এবং সারা পৃথিবী থেকে কতো মহিলা ইন্তেকাল করেছেন, সেটা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। সুবহানাল্লাহ!
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ছাহিবু ইলমিল আউওয়ালি ওয়াল ইলমিল আখিরি, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সেই বিষয়টিই স্পষ্ট করে দিয়ে ইরশাদ মুবারক করেছেন, “কিতাবে যদিও বলা হয়েছে যে, দুই শত মহিলা ইন্তেকাল করেছেন, প্রকৃতপক্ষে হাজার হাজার মহিলা ইন্তেকাল করেছেন এবং লক্ষ লক্ষ মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!
তাহলে এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি কতো বেমেছাল সৌন্দর্য মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন এবং তিনি সারা পৃথিবীতে কতো বেমেছাল সম্মান মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
মূলত, পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই একটি বিরল ঘটনা মুবারক যে, একজনের সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ হওয়ার পর উনাকে না পাওয়ার কারণে লক্ষ লক্ষ মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং হাজার হাজার মহিলা ইন্তেকাল করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনা মুবারক দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত জিন-ইনসান ও তামাম কায়িনাতবাসীকে এই বিষয়টিই স্পষ্টভাবে শিক্ষা দিয়েছেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি কায়িনাতের বুকে একক খুছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক উনার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! উনার সাথে সৃষ্টি জগতের কারো তুলনা করা যাবে না। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! 

 ****************************



আল ফাদ্গম, আল র্ফাদ, আল কামিল, আল মু’মিন, আল মা’ছূম, আল মু‘য়াল্লিম সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পূত-পবিত্র জবান মুবারক-এ সম্মানিত না’ত শরীফ পাঠ

সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি স্বয়ং নিজে উনার, উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার, উনার মহাসম্মানিত দাদাজান সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম উনার এবং উনার সমস্ত পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সকলের সম্মানিত শান মুবারক-এ বেমেছাল প্রশংসামূলক একখানা সম্মানিত বিশেষ ‘না’ত শরীফ পাঠ’ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! আর এই ‘সম্মানিত বিশেষ না’ত শরীফখানা’ ১০ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল হাওই লিল ফাতাওই ফিল ফিক্বহি ওয়া ‘উলূমিত তাফসীরি ওয়াল হাদীছি ওয়াল উছূলি ওয়ান নাহওই ওয়াল ই’রাবি ওয়া সায়িরিল ফুনূন শরীফ’ উনার ২য় খ-ের ২২১ পৃষ্ঠায় এবং অপর বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘মাসালিকুল হুনাফা ফী হুকমি ঈমানি ওয়ালিদাইল মুছত্বফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনার ৩৭ পৃষ্ঠায়, ইমাম মুহম্মদ ইবনে ইঊসুফ ছালিহী শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (বিছাল শরীফ : ৯৪২ হিজরী শরীফ) উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফী সীরাতি খইরিল ইবাদ ওয়া যিকরি ফাদ্বায়িলিহী ওয়া আ’লামি নুবুওওয়াতিহী ওয়া আফ‘আলিহী ওয়া আহ্ওয়ালিহী ফিল মাবদা’ ওয়াল মা‘আদ শরীফ’ উনার ১ম খ-ের ২৪৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও ‘সিমতুন নুজূমসহ’ আরো অন্যান্য কিতাবেও এসেছে। ‘সিমতুন নুজূম’ গ্রন্থকার তিনি উক্ত কিতাব উনার ১ম খ-ের ২৯৮ পৃষ্ঠায় বলেন,
وَمِنْ شِعْرِ سَيِّـدِنَـا حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ وَالِدِ نَـبِـيِّـنَـا عَلَيْهِ الصَّلـٰوةُ وَالسَّلَامُ نَقَلَهُ الصَّفَدِىُّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِـىْ تَرْجَـمَتِهٖ وَذَكَرَهٗ خَاتـِمَةُ الْـحُفَّاظُ جَلَالُ الـدِّيْـنِ السُّيُوْطِىُّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِـىْ كِتَابِهٖ مَسَالِكِ الْـحُنَفَا فِـىْ حُكْمِ اِيْـمَانِ وَالِدَىِ الْمُصْطَفـٰى قَوْلُهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ
অর্থ: “আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত জবান মুবারক-এ পাঠকৃত একখানা ‘সম্মানিত শে’র বা না’ত শরীফ’ ইমাম ছফাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘তরজমাতে’ এবং খাতিমুল হুফ্ফায হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘মাসালিকুল হুনাফা ফী হুকমি ঈমানি ওয়ালিদাইল মুছত্বফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত সম্মানিত না’ত শরীফখানা হচ্ছেন,
لَقَدْ حَكَمَ السَّارُّوْنَ فِـىْ كُلِّ بَلْدَةٍ ۢ...بِاَنَّ لَنَا فَضْلًا عَلـٰى سَادَةِ الْاَرْضِ
وَاِنَّ اَبِـىْ ذُو الْمَجْدِ وَالسُّؤْدَدِ الَّذِىْ ...يُشَارُ بِهٖ مَا بَيْنَ نَشْزٍ اِلـٰى خَفْضِ
وَجَدِّىْ وَاٰبَاءٌ لَّهٗ اَثَّلُوا الْعُلَا ...قَدِيـْمًاۢ بِطِيْبِ الْعِرْقِ وَالْـحَسَبِ الْمَحْضِ
অর্থ: “অবশ্যই অবশ্যই আমরা বেমেছাল প্রফুল্লতার সাথে, অত্যন্ত খুশির সাথে, সীমাহীন সম্মানিত শান-শওক্বত ইতমিনান মুবারক উনার সাথে প্রতিটি শহর, নগর, গ্রাম, স্থান, জনপদে শাসনকার্য পরিচালনা করেছি। কেননা আমাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হচ্ছে সারা পৃথিবীর, সারা কায়িনাতের সকল সর্দার, নের্তৃত্বশীল ও নেতা, আমীর-উমারা, রাজা-বাদশাহ, সুলতান সকলের উপরে আর বাতিনীভাবে ওলী, কুতুব, গাউস, নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সকলের উপরে। সুবহানাল্লাহ!
নিশ্চয়ই আমার মহাসম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবা, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক ও সম্মানিত কর্তৃত্ব মুবারক উনার অধিকারী। উনার সম্মানিত ইশারা-ইঙ্গিত মুবারক-এ, নির্দেশ মুবারক-এ পরিচালিত হয় উঁচু থেকে নিচু (সম্মানিত আরশে আযীম থেকে তাহ্তাছ ছারা পর্যন্ত) এতোদুভয়ের মাঝে (সারা কায়িনাতে) যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছু। সুবহানাল্লাহ!
আর আমার মহাসম্মানিত দাদা সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম (হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত) যাঁরা অতীত হয়েছেন উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন (যাহিরী-বাত্বিনী সর্বদিক থেকে) সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী। উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন বংশীয় শ্রেষ্ঠত্ব ও বংশীয় পবিত্রতার দিক থেকে অবিনশ্বর। অর্থাৎ উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন এতো সর্বশ্রেষ্ঠ ও পূত-পবিত্র বংশ মুবারক উনার অধিকারী এবং পূত-পবিত্র চরিত্র মুবারক উনার অধিকারী যে, উনাদের কারো মধ্যে কোনো প্রকার অপবিত্রার স্পর্শ পর্যন্ত লাগেনি। সুবহানাল্লাহ! (কেননা উনাদের মাঝে সরাসরি নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা মূল অজুদ মুবারক তিনি সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেছিলেন।)” সুবহানাল্লাহ! (‘আল হাওই শরীফ ২/২২১, মাসালিকুল হুনাফা ২৫ পৃষ্ঠা, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/২৪৭, সুমতুন নুজূম ১/২৯৮)
শাব্দিক অর্থ মুবারক : لَقَدْ حَكَمَ অবশ্য অবশ্যই শাসন করেছেন, اَلسَّارُّوْنَ প্রফুল্লকারীগণ, খুশি প্রকাশকারীগণ, আনন্দকারীগণ, فِىْ মধ্যে,  كُلّপ্রত্যেক, بَلْدَةٍ শহর, নগর, গ্রাম, স্থান, জনপদ, لَنَا আমাদের জন্য, فَضْلًا শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক, عَلـٰى উপর, سَادَةِ নেতাগণ, প্রভাব বিস্তারকারীগণ, নের্তৃত্বশীলগণ, সর্দারগণ। اَلْأَرْضِ পৃথিবী, কায়িনাত, وَ আর, اِنَّ নিশ্চয়ই, اَبِـىْ আমার সম্মানিত পিতা, ذُوْ অধিকারী, اَلْمَجْدِ মর্যাদা-মর্তবা, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক, اَلسُّؤْدَد সম্মানিত কর্তৃত্ব মুবারক, اَلَّذِىْ যিনি, يُشَارُ ইশারা প্রাপ্ত হয়, ইঙ্গিত প্রাপ্ত হয়, আদৃষ্ট হয়, بِهٖ উনার দ্বারা, مَا যা, بَيْنَ মাঝে, نَشْزٍ উঁচু জায়গা, اِلـٰى দিকে, থেকে, خَفْضٍ নীচুস্থান, جَدِّىْ আমার দাদা, اٰبَاءٌ পূর্বপুরুষগণ, اَثَّلُوْا উনারা সম্পদশালী হয়েছিলেন, ধনী হয়েছিলেন, اَلْعُلَا সর্বোচ্চ, সর্বশ্রেষ্ঠ قَدِيـْمًا অবিনশ্বর, চিরন্তন, চিরস্থায়ী لَهٗ উনার জন্য, طِيْبٌ সুগন্ধ, সুরভী, সুবাস, শ্রেষ্ঠত্ব, الْعِرْقِ শিকড়, মূল, বংশ, বংশমূল, اَلْـحَسَبِ নসব, বংশ, اَلْمَحْض খাঁটি, নির্ভেজাল, খাঁটি বংশীয়, পবিত্র বংশীয়।
এই সম্মানিত না’ত শরীফ উনার মাধ্যমে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি স্বয়ং নিজে উনার, উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার, উনার মহাসম্মানিত দাদাজান সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম উনার এবং উনার সমস্ত মহাসম্মানিত পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনার বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
 তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে,
بِاَنَّ لَنَا فَضْلًا عَلـٰى سَادَةِ الْاَرْضِ
কেননা আমাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হচ্ছেন সারা পৃথিবীর, সারা কায়িনাতের সকল সর্দার, নের্তৃত্বশীল ও নেতা, আমীর-উমারা, রাজা-বাদশাহ, সুলতান সকলের উপরে আর বাতিনীভাবে ওলী, কুতুব, গাউস, নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সকলের উপরে।” সুবহানাল্লাহ!
 সেটাই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَـلِـىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ شَجَرَةُ النُّبُوَّةِ وَمَعْدِنُ الرِّسَالَـةِ لَيْسَ اَحَدٌ مِّنَ الْـخَلَائِقِ يَفْضُلُ اَهْلَ بَيْـتِـىْ غَيْرِىْ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার সম্মানিত বৃক্ষ মুবারক অর্থাৎ মূল এবং সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার সম্মানিত খনি মুবারক অর্থাৎ মুল। সমগ্র সৃষ্টি জগতে আমি ব্যতীত আর কেউ আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক উনার অধিকারী নেই। অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টি জগতের মাঝে আমার পর পরই আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক ও সম্মানিত রিসালাত মুবারকসহ সমস্ত কিছু থেকে পবিত্র, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! উনাদের কারণেই সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, সমস্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা, সম্মানিত রহমত মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারকসহ সমস্ত কিছুই ফযীলতপ্রাপ্ত হয়েছেন, সম্মানিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
এ কারণেই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ لَّا يُقَاسُ بِنَا اَحَدٌ.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো তুলনা করা যাবে না।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী ৪/২৮৩, জামি‘উল আহাদীছ ২২/২১৯, কানজুল ‘উম্মাল ১২/১০৪, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/২৪৯৫০, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৭ ইত্যাদি)

******************************************


আল আয্হার, আল আমান, আল হাই, যুল ওয়াসীলাহ, খইরুল আলামীন, সাইয়্যিদুছ ছাক্বলাইন, ছাহিবুল কাওছার, আল গ¦ালিব, মালিকু জামিয়িন নি‘য়াম, আন নূরুল মুত্বহ্হার সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত যাবীহুল্লাহ শান মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ

সম্মানিত যাবীহুল্লাহ লক্বব মুবারক সম্পর্কে কিছু পর্যালোচনা
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
اَنَا ابْنُ الذَّبِـيْحَيْنِ
অর্থ: “আমি দুই যাবীহুল্লাহ আলাইহিমাস সালাম উনাদের সন্তান।” সুবহানাল্লাহ! (শারফুল মুস্ত¡ফা, শরহুশ শিফা, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ, কাশশাফ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, তারীখুল খমীস)
মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
قَوْلُهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَا ابْنُ الذَّبِـيْحَيْنِ اَىْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ اِسْـمٰعِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ, ‘আমি দুই যাবীহুল্লাহ আলাইহিমাস সালাম উনাদের সন্তান। অর্থাৎ (দুই যাবীহুল্লাহ আলাইহিমাস সালাম উনারা হচ্ছেন) সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তিনি।” সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ)
সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حَضْرَتْ مُعَاوِيَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ كُنَّا عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاَتَاهُ الْاَعْرَابِـىُّ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَلَّفْتُ الْبِلَادَ يَابِسَةً وَّالْمَاءَ يَابِسًا هَلَكَ الْعِـيَالُ وَضَاعَ الْمَالُ فَعُدْ عَلَىَّ بـِمَا اَفَاءَ اللهُ عَلَيْكَ يَا ابْنَ الذَّبِـيْحَيْنِ فَتَبَسَّمَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَـمْ يُنْكِرْ عَلَيْهِ.
অর্থ: “হযরত মুয়াবিয়া ইবনে আবূ সূফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমারা একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় এক আ’রাবী (গ্রামে বসবাসকারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত হয়ে আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ভূমি শুকিয়ে গেছে। পানি ফুরিয়ে গেছে। পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ধন-সম্পদ নষ্ট হয়ে গেছে।
হে দুই যাবীহুল্লাহ আলাইহিমাস সালাম উনাদের সন্তান, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে যা হাদিয়া মুবারক করেছেন, তা হতে আমাকে কিছু দান করুন! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বক্তব্য মুবারক শুনে মুচকি হাসি মুবারক দিলেন এবং তা অস্বীকার করলেন না।” সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ, মাদারিজুন নুবুওওয়াহ, খছাইছুল কুবরা, শারহুয যারক্বানী আলা মাওয়াহিব, মুস্তাদরকে হাকিম, শারফুল মুস্ত¡ফা, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ইত্যাদি)
এই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে একটি বিষয় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ বলে সম্বোধন করলে, তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন এবং খুশি মুবারক প্রকাশ করেন। অর্থাৎ উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনাকে ‘যাবীহুল্লাহ’ বললে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সন্তুষ্ট হন এবং খুশি মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
এখান থেকে আরো একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উসীলা দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কোন কিছু আরজী পেশ করলে, তিনি সেই আরজীকে বিশেষভাবে কবূল করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
মূলত ‘যাবীহুল্লাহ’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার একখানা আখাছ্ছুল খাছ লক্বব মুবারক। সুবহানাল্লাহ! এই সম্মানিত লক্বব মুবারকেই তিনি সকলের মাঝে সম্মানিত পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সকলে উনাকে এই সম্মানিত লক্বব মুবারকেই চিনে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
যাবীহুল্লাহ শান মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে, ‘সম্মানিত যমযম কূপ মুবারক খনন করার সময় কুরাইশদের সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে বিবাদ হয়েছিলো, তার প্রেক্ষিতে তিনি সম্মানিত মানত মুবারক করেছিলেন যে, যদি উনার দশ জন সম্মানিত আওলাদ (পুত্র সন্তান) আলাইহিমুস সালাম উনারা সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং প্রাপ্ত বয়স মুবারক-এ উপনীত হয়ে উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়ার উপযুক্ত হন, তাহলে উনাদের একজনকে মহান আল্লাহ পাক উনার রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার নিকটে সম্মানিত যবেহ বা কুরবানী মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ!
 সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পুত্র সন্তান আলাইহিমুস সালাম উনাদের সংখ্যা যখন দশ জন পূর্ণ হলেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের মাধ্যমে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত চোখ মুবারক উনাকে শিতল করলেন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক রজনী মুবারক-এ সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার নিকটে ঘুমিয়ে ছিলেন। তিনি স্বপ্ন মুবারক-এ দেখলেন যে,
قَائِلًا يَّـقُوْلُ يَا حَضْرَتْ عَبْدَ الْـمُطَّلِبِ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَوْفِ بِنَذْرِكَ لِرَبِّ هٰذَا الْبَيْتِ فَاسْتَيْقَظَ فَزِعًا مَّرْعُوْبًا وَّاَمَرَ بِذَبْحِ كَبْشٍ وَّاَطْعَمَهٗ لِلْفُقَرَاءِ وَالْـمَسَاكِيْنَ ثُـمَّ نَامَ فَرَاٰى اَنْ قَـرِّبْ مَا هُوَ اَكْبَرُ مِنْ ذٰلِكَ فَاسْتَيْقَظَ مِنْ نَوْمِهٖ وَقَــرَّبَ ثَوْرًا ثُـمَّ نَامَ فَرَاٰى اَنْ قَـرِّبْ مَا هُوَ اَكْبَرُ مِنْ ذٰلِكَ فَانْتَبَهَ وَقَــرَّبَ جَـمَلًا وَّاَطْعَمَهٗ لِلْمَسَاكِيْنَ ثُـمَّ نَامَ فَنُوْدِىَ اَنْ قَـرِّبْ مَا هُوَ اَكْبَرُ مِنْ ذٰلِكَ فَقَالَ مَا اَكْبَرُ مِنْ ذٰلِكَ فَقَالَ قَـرِّبْ اَحَدَ اَوْلَادِكَ الَّذِىْ نَذَرْتَهٗ.
অর্থ: “উনাকে একজন বললেন, হে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি এই সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার রব মহান আল্লাহ পাক উনার রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে আপনার সম্মানিত মানত মুবারক পূর্ণ করুন। এই স্বপ্ন মুবারক দেখে তিনি চিন্তিত ও শঙ্কিত অবস্থায় ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন এবং তিনি একটি দুম্বা মুবারক যবেহ করে ফক্বীর ও মিসকীনদেরকে খাওয়ালেন। তারপর তিনি পরবর্তী রাতে ঘুমিয়ে স্বপ্ন মুবারক-এ দেখলেন যে, উনাকে বলা হচ্ছে আপনি এর চেয়ে বড় কিছু কোরবানী করুন। তিনি ঘুম থেকে উঠে একটি ষাড় (গরু) কুরবানী মুবারক করেন। পরবর্তী রাতে তিনি ঘুমালেন। পুনরায় উনাকে স্বপ্ন মুবারক-এ বলা হলো, আপনি এর চেয়ে বড় কিছু কুরবানী করুন। তারপর তিনি ঘুম থেকে উঠে একটি উট কুরবানী মুবারক করে মিসকীনদেরকে খাওয়ালেন। এর পরবর্তী রাত্রিতে তিনি ঘুমালেন, তখন উনাকে নিদা মুবারক করা হলো, আপনি এর চেয়ে বড় কিছু কুরবানী মুবারক করুন। তিনি বললেন, এর চেয়ে বড় কী? তখন উনাকে বলা হলো, আপনি আপনার সম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে একজনকে কুরবানী মুবারক করুন, যেটা আপনি সম্মানিত মানত মুবারক করেছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (নিহায়াতুল ইজায ১/৪০, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ ১/৬৬, শারহুয যারক্বানী আলা মাওয়াহিব ১/১৭৬)
তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সকলকে একত্রিত করে উনার সম্মানিত মানত মুবারক সম্পর্কে অবহিত করলেন এবং উনাদেরকে উনার সম্মানিত ওয়াদা মুবারক পূরণ করার ব্যাপারে আহ্বান মুবারক করলেন। তখন উনারা সকলে বললেন,
اِنَّـا نُطِيْعُكَ فَمَنْ تَذْبَحُ مِنَّا
অর্থ: “হে আমাদের মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম, নিশ্চয়ই আমরা প্রত্যেকেই আপনার অনুগত। আপনি আমাদের মধ্য থেকে কাকে কুরবানী মুবারক করতে চান?”
তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার দশ জন সম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাঝে লটারী মুবারক করলেন। লটারী মুবারক-এ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক উঠলেন। তিনি উনার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কুরবানী মুবারক করার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি মুবারক গ্রহণ করেন এবং উনাকে নিয়ে সম্মানিত ক্বা’বা শরীফ উনার সামনে উপস্থিত হন। অতঃপর যখন তিনি উনাকে শুয়ায়ে ছুরি মুবারক দিয়ে কুরবানী মুবারক করবেন, তখন তা দেখে কুরাইশরা তাদের মজলিশ থেকে দৌড়ে এসে বললো, আপনি কি করছেন? তিনি বললেন, আমি উনাকে যবেহ করবো। কুরাইশ এবং উনার সম্মানিত আওলাদগণ যাঁরা ছিলেন উনারা সকলেই বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! কোনো নিশ্চিত বিকল্প ধারা না হওয়া পর্যন্ত আপনি উনাকে যবেহ করতে পারবেন না। যদি করেন তাহলে পুত্র কুরবানী দেয়ার ধারা চালু হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় মানুষের নিরাপত্তা কিভাবে রক্ষা হবে?
সম্মানিত মদীনা শরীফ-এ সাজাহ নামে একজন বিশেষ ব্যক্তি বসবাস করতেন। যিনি আসমানী কিতাব সম্পর্কে ইলম রাখতেন। কুরাইশরা সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ওই ব্যক্তি উনার নিকট যেয়ে এই বিষয়টি বলার জন্য অনুরোধ করলো।
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লোকজন নিয়ে সাজাহ নামীয় ওই বিশেষ ব্যক্তির নিকট যেয়ে সবকিছু খুলে বললেন। সব শুনে ওই ব্যক্তি বললেন, আপনাদের সমাজে মুক্তিপণের পরিমাণ কত? সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, দশটি উট। ওই ব্যক্তি বললেন, আপনারা দেশে ফিরে যান। গিয়ে দশটি উট ও আপনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে লটারী করুন। লটারী মুবারক-এ যদি আপনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক আসে, তাহলে আরো দশটি উট নিয়ে আবারো লটারী করুন। এভাবে দশটি করে উট বাড়িয়ে লটারী করতে থাকুন। অতঃপর যখন উটের নাম আসবে, তখন আপনি আপনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম উনার পরিবর্তে উটগুলো কুরবানী করুন। এতে মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে প্রমাণিত হবে। সুবহানাল্লাহ! আর আপনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম উনার জীবন মুবারকও বেঁচে যাবে। অর্থাৎ উনার সম্মানিত যাবীহুল্লাহ শান মুবারক উনার সম্মানিত বহিঃপ্রকাশ মুবারক ঘটবে। সুবহানাল্লাহ! 
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবাইকে নিয়ে সম্মানিত মক্কা শরীফ-এ আসলেন। অতঃপর সকলের উপস্থিতে লটারী শুরু হলো। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সম্মানিত দোয়া মুবারক করতে লাগলেন। প্রথমে দশটি উট ও সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে লটারী করা হলো। নাম আসলো সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার। এবার আরো দশটি উট বাড়িয়ে লটারী দেয়া হলো। এভাবে দশটি করে উট বাড়িয়ে লটারী করা হলো। কিন্তু প্রতিবারই সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক উঠতে লাগলেন। অবশেষে একশত উট আর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে লটারী দেয়া হলে উটের নাম উঠলো। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার সম্মুখে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সম্মানিত দোয়া মুবারক করছিলেন। কুরাইশরা উনাকে জানালেন যে, সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। সুবহানাল্লহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, না এতে আমি সন্তুষ্ট না। আরো তিনবার লটারী না করা পর্যন্ত আমি নিশ্চিত হতে পারছি না। সুবহানাল্লাহ! তারপর উনার কথা মুবারক অনুযায়ী আরো তিনবার লটারী করা হলো। প্রতিবারই উটের নাম আসলো। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিশ্চিত হলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া মুবারক আদায় করলেন। সুবহানাল্লাহ!
তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একশ উট মুবারক যবেহ করে বিশেষ ও সাধারণ সকল লোককে; এমন কি অন্যান্য মাখলূকাতকেও আহার করালেন। সুবহানাল্লাহ!
 এভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত যাবীহুল্লাহ শান মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক ঘটে। সুবহানাল্লাহ! এরপর থেকেই আরব দেশে এক ব্যক্তির রক্তপণ নির্ধারিত হলো একশত উট। যদিও ইতঃপূর্বে রক্তপণের জন্য নির্ধারিত ছিলো দশ উট। পরবর্তীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একশত উটই রক্তপণরূপে নির্ধারণ মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (মাদারিজুন নুবুওওয়াহ, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ, শারহুয যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব, আর রওদুল উনফ, আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ইত্যাদি)

**********************************************************


ওয়ালিদুর রসূল, সাইয়্যিদুল বাশার, সাইয়্যিদুল কাওনাইন, নূরে মুয়াজ্জাম, নূরে এলাহী, মালিকুল জান্নাহ, আবূ রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক

পরিচিতি মুবারক:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মুবারক। সুবহানাল্লাহ! উনার উসীলায় সমস্ত জিন-ইনসান এবং তামাম কায়িনাতবাসী সকলেই মর্যাদা-মর্তবা, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাছিল করেছে। সুবহানাল্লাহ! তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!
উনার সম্মানিত পিতা হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি এবং সম্মানিতা মাতা হচ্ছেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাত্বিমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
 উনারসম্মানিত ভাইগণ উনাদের সংখ্যা কত, এই ব্যাপারে সীরাত বিশারদগণ উনাদের মধ্যে ইখতিলাফ রয়েছে। কেউ বলেছেন ১৩ জন, কেউ বলেছেন ১২ জন, কেউ বলেছেন ১০ জন। আর উনার সম্মানিতা বোন ছিলেনমোট ৬ জন।

মহাসম্মানিত ওয়ালিদাইন শরীফাইন আলাইহিমাস সালাম
উনাদের বুযূর্গী-সম্মান মুবারক:
মহান আল্লাহ পাক তিনি আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে এমন মহাসম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে হাদিয়া মুবারক করেছেন যে, উনারা ছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার আখাছ্ছুল খাছ মাহবূব এবং মাহবূবাহ। ওই যামানার সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও ব্যক্তিত্বা মুবারক, মহান আল্লাহ পাক উনার আখাছ্ছুল খাছ লক্ষ্যস্থল এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! আর উনারা দু’জন হচ্ছেন, সাইয়্যিদুন নাস, যুল মাজদি ওয়াস সু’দাদ, জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, জাদ্দাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাত্বিমাহ বিনতে ‘আমর আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা। সুবহানাল্লাহ! উনারা শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন উনারা। সুবহানাল্লাহ!

জাদ্দু রসূলিল্লাহ উনার এবং জাদ্দাতু রসূলিল্লাহ আলাইহিমাস সালাম
উনাদের সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ:
মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা মুবারক অনুযায়ী জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম উনার এবং জাদ্দাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাত্বিমাহ বিনতে ‘আমর আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের উভয়ের মাঝে আযীমুশ শান বরকতপূর্ণ সম্মানিত নিসবেত আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত যমযম কূপ মুবারক পুনরুদ্ধার:
জুরহুম গোত্র সম্মানিত যমযম কূপ মুবারক বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়কাল পর্যন্ত সম্মানিত যমযম কূপ মুবারক উনার কোনো চিহ্ন বিদ্যমান ছিলো না। কেউ কেউ এর সময়কাল ৫০০ বছর আবার কেউ ৪০০ বছর বলে উল্লেখ করেছেন।
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হয়ে সম্মানিত যমযম কূপ মুবারক পুনরুদ্ধার করেন। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত স্বপ্ন মুবারক:
কিতাবে বর্ণিত আছে,
عَنْ سَيِّدِنَـا حَضْرَتْ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ بَيْنَا اَنَا نَائِمٌ فِـى الْـحِجْرِ اِذْ رَاَيْتُ رُؤْيَا هَالَـتْنِـىْ فَفَزِعْتُ مِنْهَا فَزَعًا شَدِيْدًا فَاَتَيْتُ كَاهِنَةَ قُرَيْشٍ وَعَلَىَّ مُطْرَفُ خَزٍّ وَّجُـمَّتِـىْ تَضْرِبُ مَنْكِـبَـىَّ فَلَمَّا نَظَرَتْ اِلَـىَّ عَرَفَتْ فِـىْ وَجْهِىَ التَّغَـيُّرَ وَاَنَا يَوْمَئِذٍ سَيِّدُ قَوْمِىْ فَقَالَتْ مَا بَالُ سَيِّدِنَـا قَدْ اَتَانَا مُـتَـغَـيِّـرَ اللَّوْنِ هَلْ رَاَيْتَ مِنْ حِدْثَانِ الدَّهْرِ شَيْئًا فَقُلْتُ لَـهَا بَلـٰى وَكَانَ لَا يُكَـلِّـمُـهَا اَحَدٌ مِّنَ النَّاسِ حَتّٰى يُـقَـبِّـلَ يَدَهَا الْيُمْنٰى ثُـمَّ يَضَعُ يَدَهٗ عَلـٰى اُمِّ رَاْسِهَا ثُـمَّ يَذْكُرُ حَاجَتَهٗ وَلَـمْ اَفْعَلْ لِاَنِّـىْ كُنْتُ كَبِيْرَ قَوْمِـىْ. فَجَلَسْتُ فَقُلْتُ اِنّـِــىْ رَاَيْتُ اللَّيْلَةَ وَاَنَا نَائِمٌ فِـى الْـحِجْرِ كَاَنَّ شَجَرَةً تَـنْۢـبُتُ قَدْ نَالَ رَاْسُهَا السَّمَاءَ وَضَرَبَتْ بِاَغْصَانِـهَا الْمَشْرِقَ وَالْمَغْرِبَ وَمَا رَاَيْتُ نُوْرًا اَزْهَرَ مِنْهَا اَعْظَمَ مِنْ نُّوْرِ الشَّمْسِ سَبْعِيْنَ ضِعْفًا. وَرَاَيْتُ الْعَرَبَ وَالْعَجَمَ سَاجِدِيْنَ لَـهَا وَهِىَ تَزْدَادُ كُلَّ سَاعَةٍ عِظَمًا وَّنُوْرًا وَّارْتـِفَاعًا سَاعَةً تَـخْفٰى وَسَاعَةً تَزْهَرُ وَرَاَيْتُ رَهْطًا مِّنْ قُرَيْشٍ قَدْ تَعَلَّقُوْا بِاَغْصَانِـهَا وَرَاَيْتُ قَوْمًا مِّنْ قُرَيْشٍ يُرِيْدُوْنَ قَطْعَهَا فَاِذَا دَنَوْا مِنْهَا اَخَّرَهُمْ شَابٌّ لَّـمْ اَرَ قَطُّ اَحْسَنَ مِنْهُ وَجْهًا وَّلَا اَطْيَبَ مِنْهُ رِيْـحًا فَيَكْسِرُ اَظْهَرَهُمْ وَيَقْلَعُ اَعْيُنَهُمْ فَرَفَعْتُ يَدِىْ لِاَتَنَاوَلَ مِنْهَا نَصِيْـبًا فَمَنَعَنِـىَ الشَّابُّ فَقُلْتُ لِمَنِ النَّصِيْبُ فَقَالَ النَّصِيْبُ لِـهٰؤُلَاءِ الَّذِيْنَ تَعَلَّـقُوْا بِـهَا وَسَبَقُوْكَ اِلَيْهَا فَانْتَـبَهْتُ مَذْعُوْرًا فَزِعًا فَرَاَيْتُ وَجْهَ الْكَاهِنَةِ قَدْ تَغَـيَّرَ ثُـمَّ قَالَتْ لَئِنْ صَدَقَتْ رُؤْيَاكَ لَيَخْرُجَنَّ مِنْ صُلْبِكَ رَجُلٌ يَّـمْلِكُ الْمَشْرِقَ وَالْمَغْرِبَ وَيَدِيْنُ لَهُ النَّاسُ.
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামতিনি বলেন, একদা আমি সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার হাতিম-এ ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন আমি একখানা বরকতময় স্বপ্ন মুবারক দেখি, যা আমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলো। আমি তা দেখে খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে আমি সম্মানিত কুরাইশ বংশীয় একজন মহিলা তা’বীরবিদ উনার নিকট গেলাম। আমার গায়ে ছিলো নকশাওয়ালা রেশমী চাদর মুবারক এবং আমার লম্বা চুল মুবারক (বাবড়ি চুল মুবারক) ঘাড় মুবারক-এ ঝুলছিলেন। আমার প্রতি দৃষ্টিপাত করে তিনি আমার চেহারায় পরিবর্তন টের পেয়ে যান। আমি তখন আমার সম্মানিত ক্বওম তথা সম্প্রদায়ের সাইয়্যিদ। তিনি বললেন, আমাদের মহাসম্মানিত সরদার উনার কী হলো যে, তিনি এমন বিবর্ণ চেহারা মুবারক নিয়ে আমার নিকট সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রেখেছেন? আপনি কী ব্যতিক্রম কোনো স্বপ্ন মুবারক দেখেছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তার নিয়ম ছিলো, কেউ তার নিকট আসলে প্রথমে আগন্তুককে তার ডান হাত চুম্বন করতে হতো এবং তার মাথার তালুতে হাত রাখতে হতো। এরপর তার সাথে কথা বলার ও সমস্যার কথা জানানোর সুযোগ পাওয়া যেত। আমি এসব করলাম না। অতঃপর আমি বসে বললাম, গত রাতে আমি সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার হাতিমে ঘুমিয়ে ছিলাম। তারপর আমি (স্বপ্ন মুবারক) দেখি, একটি সম্মানিত গাছ মুবারক মাটি থেকে অঙ্কুরিতহলো। দেখতে দেখতে উক্ত মুবারক বৃক্ষ উনার শাখা-প্রশাখা আকাশচুম্বী হয়ে গেলো এবং পূর্ব-পশ্চিম তথা সারা কায়িনাতে ছড়িয়ে পড়লো। আর এই সম্মানিত বৃক্ষ থেকে একটি নূর মুবারক নির্গত হলো। যার আলো সূর্য থেকে সত্তরগুণ তথা কোটি কোটি গুণ বেশি ছিলো। আরব-অনারব সকলেই সেই সম্মানিত বৃক্ষ মুবারক উনার সামনে সিজদাবনত ছিলো। প্রতিমুহূর্তে উক্ত সম্মানিত গাছ মুবারক উনার পরিধি, নূর মুবারক ও উচ্চতা মুবারক বেড়েই চলছিলো। সেই সম্মানিত গাছ মুবারক উনার নূর মুবারক কখনো ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেতো এবং কখনো গোপন হয়ে যেতো। আমি আরো দেখলাম, একদল কুরাইশ এই সম্মানিত বৃক্ষ উনার ডাল মুবারক ধরে ঝুলে আছেন। কুরাইশদের অপর একটি দল গাছটি কেটে ফেলার চেষ্টা করছে। তারা কাটার উদ্দেশ্যে সম্মানিত বৃক্ষ মুবারক উনার নিকটবর্তী হলে একজন সুদর্শন যুবক তাদেরকে হটিয়ে দিতেন। সেই সম্মানিত যুবক উনার মতো এতো অধিক সুন্দর ও সৌরভময় যুবক আমি আর কখনো দেখিনি। এই সম্মানিত যুবক তিনি পিটিয়ে তাদের হাড়-গোড় ভেঙ্গে দিচ্ছিলেন এবং তাদের চোখ উপড়ে ফেলছিলেন। আমি দু’হাত মুবারক বাড়িয়ে উক্ত সম্মানিত গাছ মুবারক থেকে কিছু নিতে চাইলাম। কিন্তু সম্মানিত যুবক তিনি আমাকে বারণ করলেন। আমি বললাম, তাহলে এ সম্মানিত গাছ মুবারক কাদের জন্য? তিনি বলেন, যাঁরা গাছ মুবারক ধরে ঝুলে আছেন এবং যাঁরা আপনার সামনে আসবেন অর্থাৎ পরবর্তীতে যাঁরা আসবেন। অর্থাৎ ভবিষ্যত বংশধরগণ উনাদের জন্য এই সম্মানিত গাছ মুবারক। এই স্বপ্ন মুবারক দেখে আমি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় জেগে উঠলাম।
আমি দেখতে পেলাম এই স্বপ্ন মুবারক শুনে ওই মহিলা তা’বীরবিদ উনার মুখমন্ডল বিবর্ণ হয়ে গেলো। তিনি বললেন, আপনার স্বপ্ন মুবারক যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে
لَيَخْرُجَنَّ مِنْ صُلْبِكَ رَجُلٌ يَّـمْلِكُ الْمَشْرِقَ وَالْمَغْرِبَ وَيَدِيْنُ لَهُ النَّاسُ
অবশ্য অবশ্যই আপনার মহাসম্মানিত বংশ মুবারক থেকে তথা আপনার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে এমন একজন মহাসম্মানিত সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক তিনি আগমন করবেন, যিনি পূর্ব-পশ্চিম তথা সারা কায়িনাতের মালিক হবেন তথা নবী-রসূল হবেন এবং সমস্ত মানুষ উনার সম্মানিত দ্বীন গ্রহণ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ নাঈম, বিদায়া-নিহায়াহ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ)
এখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে,
لَيَخْرُجَنَّ مِنْ صُلْبِكَ رَجُلٌ يـَّمْلِكُ الْمَشْرِقَ وَالْمَغْرِبَ وَيَدِيْنُ لَهُ النَّاسُ.
অর্থ: “অবশ্য অবশ্যই আপনার মহাসম্মানিত বংশ মুবারক থেকে তথা আপনার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে এমন একজন মহাসম্মানিত সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক তিনি আগমন করবেন, যিনি পূর্ব-পশ্চিম তথা সারা কায়িনাতের মালিক হবেন তথা নবী-রসূল হবেন এবং সমস্ত মানুষ উনার সম্মানিত দ্বীন গ্রহণ করবেন। অর্থাৎ আপনার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦াতামুন নাবীয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
এই সম্মানিত স্বপ্ন মুবারক উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার ব্যাপারে সম্মানিত সুসংবাদ মুবারক হাদিয়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ‘মহাসম্মানিত বরকতময় রগায়িব শরীফ’ সংঘটিত হওয়ার পূর্বে একখানা বরকতময় ঘটনা মুবারক:
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাত্বিমাহ বিনতে ‘আমর আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত রেহেম শরীফ-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করার অল্প কিছু দিন পূর্বের ঘটনা। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা শিকার করতে বনে যান। সারা দিন শিকারের পর তিনি খুব পিপাসার্ত ও ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার এক বিশেষ সম্মানিত কুদরত মুবারক যাহির হন। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হঠাৎ করে অত্যন্ত চমৎকার একটি পবিত্র ঝর্ণা মুবারক দেখতে পান। এই পবিত্র ঝর্ণা মুবারক উনার পানি ছিলো বরফের চেয়েও ঠা-া, মধুর চেয়েও মিষ্টি। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই সম্মানিত পানি মুবারক পান করলেন। তখন উনার মনে হলো বেহেশত ছাড়া আর কোনো জায়গায় এমন ঠা-া ও মিষ্টি পানি থাকতে পারে না। সুবহানাল্লাহ!
প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি তাই ছিলো। মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ‘সম্মানিত রগাইব শরীফ’ উনার পূর্বে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত জান্নাতী সুমিষ্ট পানি মুবারক পান করিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত রগাইব শরীফ উনার সম্মানিত সুসংবাদ মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছেন এবং উনার সম্মানিত ফযীলত মুবারক উনার বিষয়টি কায়িনাতের মাঝে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ‘মহাসম্মানিত বরকতময় রগায়িব শরীফ’:
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার অতিপছন্দনীয় এক মহাসম্মানিত রজনী মুবারক উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ‘মহাসম্মানিত রগায়িব শরীফ’ উনার মহাসম্মানিত রজনী মুবারক হিসেবে নির্দিষ্ট করেন। অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিমহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অতিপছন্দনীয় এক মহাসম্মানিত রজনী মুবারক-এ উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
সেই মহাসম্মানিত রজনী মুবারক-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি সারা কায়িনাতে বেমেছাল রহমত, বরকত ও সাকীনা মুবারক বর্ষণ করেছিলেন। সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনাকে অপরূপ সাজে সুসজ্জিত করেছিলেন। হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুবারকবাদ জানানোর জন্য নির্দেশ মুবারক প্রদান করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে
সম্মানিত সুসংবাদ মুবারক হাদিয়া:
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার আখাছ্ছুল খাছ মাহবূব ব্যক্তিত্ব মুবারক সাইয়্যিদুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার ব্যাপারে এবং উনার ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক বর্ণনা করে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত জাদ্দাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে অনেক সম্মানিত সুসংবাদ মুবারক হাদিয়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! বিশেষ করে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত রেহেম শরীফ-এ অবস্থানকালীন সময়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে আরো আখাছ্ছুল খাছ সম্মানিত সুসংবাদ মুবারক হাদিয়া মুবারক করেন এবং তিনি যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম হবেন সেই বিষয়েও আখাছ্ছুল খাছ সম্মানিত সুসংবাদ মুবারক হাদিয়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি কত সালে, কোন মাসে, কতো তারিখে, কোন দিন, কখন মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, এই বিষয়ে পৃথিবীর কোন কিতাবে কোন প্রকার আলোচনা নেই। বরং তিনি কত বছর দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেছেন, এই নিয়ে রয়েছে অনেক ইখতিলাফ। যার কারণে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি কোন মাসে, কতো তারিখে, কোন দিন, কখন মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, এই বিষয়টি পৃথিবীর কোন কিতাবাদি দ্বারা সমাধান করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য যে, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ছাহিবু ইলমিল আউওয়ালি ওয়াল ইলমিল আখিরি, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার রয়েছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে এক মহাসম্মানিত নিগূঢ় সম্পর্ক মুবারক, মহাসম্মানিত নিসবত মুবারক, যেখানে কারো পক্ষে পৌঁছা আদৌ সম্ভব নয়। তিনি উনার সেই মহাসম্মানিত নিগূঢ় সম্পর্ক মুবারক ও মহাসম্মানিত নিসবত মুবারক উনাদের মাধ্যেমে এই বিষয়টি ফায়ছালা মুবারক করেছেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার প্রায় ৭৮ বছর ৮ মাস ১০ দিন পূর্বে ২রা রজবুল হারাম শরীফ লাইলাতুস সাবত্ শরীফ সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার সম্মানিত কুরাইশ বংশ উনার হাশিমী গোত্রে মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” সুবহানাল্লাহ!
উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশকালে উনার মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত জান্নাত মুবারক থেকে বিশেষ বিশেষ সম্মানিতা ব্যক্তিত্বা মুবারক উনাদেরকে প্রেরণ করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ মুবারক উনাকে আলোকিত করে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশকালে উনার সম্মানিত নূর মুবারক উনার আলো মুবারক-এ সর্বত্র আলোকিত হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি সারা পৃথিবী, সারা কায়িনাত এবং সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনাকে অপরূপ সাজে সুসজ্জিত করেন। সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশে আহলান-সাহলান মুবারক জানান। সুবহানাল্লাহ! স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশে খুশি মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত জাদ্দাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা উনাদের মহাসম্মানিত প্রিয়তম আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশে বেমেছাল খুশি মুবারক প্রকাশ করেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার বেমেছাল প্রশংসা মুবারক করেন ও শুকরিয়া মুবারক আদায় করেন। সুবহানাল্লাহ! উনাদের সম্মানিত হুজরা শরীফ-এ খুশির মহাজোয়ার বয়ে যায়। সকলে এতো বেমেছাল খুশি মুবারক প্রকাশ করেন যে, তা চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত আক্বীক্বাহ মুবারক দেয়া এবং
সম্মানিত ইসম বা নাম মুবারক রাখা:
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের ৭ম দিন তথা ৮ই রজবুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ সম্মানিত আক্বীক্বা মুবারক করেন এবং উনার সম্মানিত ইসম বা নাম মুবারক রাখেন ‘সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম’। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর তিনি উনার সমস্তআত্মীয়-স্বজন ও সমস্ত কুরাইশ উনাদেরকে দাওয়াত দিয়ে বিশেষ মেহমানদারী মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত কুনিয়াত মুবারক:
আবূ মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আবূ আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আবূ কুছাম (اَبُوْ قُثَم) আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত লক্বব মুবারক:
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া যত সম্মানিত লক্বব মুবারক রয়েছে সমস্ত সম্মানিত লক্বব মুবারক উনাদের মালিক হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম, আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুল বাশার, মালিকুল জান্নাহ, আফদ্বলুন নাস বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুল কাওনাইন ইত্যাদি উনার সম্মানিত বিশেষ লক্বব মুবারক উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত লালন-পালন মুবারক:
সাইয়্যিদুল কাওনাইন, আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাহিস সালাম উনার, মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার এবং সম্মানিত ভাই-বোন আলাইহিমুস সালাম, আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের প্রত্যেকের বেমেছাল মুহব্বত মুবারক ও আদর-যতœ মুবারক-এ লালিত-পালিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি ছিলেন উনার সম্মানিত পরিবারের সকলের নিকট সর্বাধিক আদরনীয় এবং সর্বাধিক মুহব্বত মুবারক উনার পাত্র। পরিবারের সকলেই উনাকে সর্বাধিক মুহব্বত মুবারক ও আদর স্নেহ মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া:
মূলত ‘নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে অবস্থান মুবারক করার কারণে সমস্ত সৃষ্টি জগতই উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য বেক্বারার ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! গাছ-পালা, তরু-লতা, পশু-পাখি থেকে শুরু করে কায়িনাতের সকলেই উনাকে বেমেছাল তা’যীম-তাকরীম মুবারক করতো। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা দায়িমীভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিতেন। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত ইলম মুবারক:
মূলত, মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত ইলমে গইব মুবারকসহ সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছেন। উনার সম্মানিত ইলম মুবারক উনার কোনো কুল-কিনারা নেই। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ  حَضْرَتْ اَبِـىْ سَعِيْدِ ۣ الْـخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِتَّقُوْا فِرَاسَةَ الْمُؤْمِنِ فَاِنَّهٗ يَنْظُرُ بِنُوْرِ اللهِ.
অর্থ: “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মু’মিন তথা ওলীআল্লাহ উনার ফিরাসাত তথা অন্তরদৃষ্টি মুবারক উনাকে ভয় করো। কেননা তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নূর মুবারক দ্বারা দেখে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, আল মু’জামুল কাবীর ৭/১০৯, আল মু’জামুল আওসাত্ব ৩/৩১২, আহকামুশ শরীয়াহ ৩/২৯৩, মুসনাদুশ শামিয়্যীন ৩/১৮৩)
 মূলত, ওলীআল্লাহগণ উনারা নূর মুবারক উনার মাধ্যমেই সমস্ত কায়িনাত, জান্নাত-জাহান্নাম, সাত আসমান, সাত যমীন সমস্ত কিছু দেখতে পান। সৃষ্টি জগতের কোনো কিছুই উনাদের দৃষ্টি মুবারক উনার অন্তরালে থাকে না। আর উনারা এই সম্মানিত নূর মুবারক তথা ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ মুবারক লাভ করে থাকেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে যিনি যত বেশি সম্মানিত নূর মুবারক তথা ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ মুবারক গ্রহণ করতে পারেন, উনার সম্মানিত ইলম মুবারক উনার গভীরতা তত বেশি ও ব্যাপক হয়। যদি বিষয়টি এরূপ হয়, তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তো সরাসরি ‘নূরী হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ মূল অজুদ মুবারক’ উনাকে ধারণ মুবারক করেছেন, তাহলে উনার সম্মানিত ইলম মুবারক উনার বিষয়টি কত ব্যাপক হবে, সেটা সমস্ত মাখলূকাতের চিন্তা-কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!
মূলত, তিনি সম্মানিত ইলমে গইব মুবারকসহ যত প্রকার ইলম মুবারক রয়েছেন সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক উনাদের মালিক তথা ছাহিবু জামি‘য়িল ইলম, মালিকু জামি‘য়িল ইলম। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছুই দায়িমীভাবে উনার সামনে সুস্পষ্ট। কায়িনাতের কোনো কিছুই উনার নিকট অস্পষ্ট নেই, অজানা নেই। সুবহানাল্লাহ! এই বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করাটাও চরম আদবের খিলাফ ও সুস্পষ্ট কুফরী। নাঊযুবিল্লাহ!
 প্রকৃপক্ষে উনার সম্মানার্থেই ওলীআল্লাহগণ উনারা ইলম মুবারকসহ সমস্ত নিয়ামত মুবারক লাভ করে থাকেন। তাই মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আসসাফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার নিকট সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে নূর মুবারক, ইলম, পবিত্রতা, দয়া-দান, ইহসান ও তাওফীক্ব মুবারক ভিক্ষা চাচ্ছি। তিনি দয়া করে আমাদের সবাইকে আখাছ্ছুল খাছভাবে কবূল করুন। আমীন!

সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ثُـمَّ خَلَقَ اللهُ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنَ الْـاَرْضِ فَرَكَّبَ فِيْهِ النُّوْرَ فِـىْ جَبِيْنِهٖ ثُـمَّ انْتَقَلَ مِنْهُ اِلـٰى حَضْرَتْ شِيْثٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَكَانَ يَنْتَقِلُ مِنْ طَاهِرٍ اِلـٰى طَيِّبٍ وَمِنْ طَيِّبٍ اِلـٰى طَاهِرٍ اِلـٰى اَنْ اَوْصَلَهُ اللهُ صُلْبَ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الْـمُطَّلِبِ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করে উনার সম্মানিত কপাল মুবারক উনার মাঝে সেই মহাসম্মানিত নূর মুবারক তথা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রাখলেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর সেই মহাসম্মানিত নূর মুবারক হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার থেকে হযরত শীছ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে স্থানান্তরিত হলেন। সুবহানাল্লাহ! আর এই সম্মানিত স্থানান্তর মুবারক পূত-পবিত্র ও সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের থেকে সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠা ব্যক্তিত্বা মুবারক উনাদের মাঝে এবং সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠা ব্যক্তিতা¡ মুবারক উনাদের থেকে পূত-পবিত্র ও সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের মাঝে চলতে থাকলেন। সুবহানাল্লাহ! এইভাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি এই মহাসম্মানিত নূর মুবারক আমার মহাসম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে পৌঁছিয়ে দেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক্ব: হাদীছ শরীফ: ১৮, আল জুযউল মাফক্বূদ মিনাল জুযয়িল আউওয়াল মিনাল মুছান্নিছ লিহাফিযিল কাবীর আবী বকর আব্দির রাজ্জাক্ব ৬৩ পৃ.)
আর এই কারণে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কপাল মুবারক-এ সবসময় ‘নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনাকে দেখা যেতো। সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
اَنَّ سَيِّدَنَـاحَضْرَتْ عَبْدَ اللهِ بْنَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ كَانَ يُرٰى بَيْنَ عَيْنَيْهِ نُوْرُ النُّبُوَّةِ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কপাল মুবারক উনার মাঝখানে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার মহাসম্মানিত নূর মুবারক তথা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখা যেতো।” সুবহানাল্লাহ! (ইমতা’ ৪/৩৪)
 কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে যে,
سَيِّدُنَـاحَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ لِاَنَّهٗكَانَ يَتَلَاْلَاُ نُوْرًا
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কপাল মুবারক-এ মহাসম্মানিত নূর মুবারক তথা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জ্বলজ্বল করতেন।” সুবহানাল্লাহ! (শরহুয যারক্বানী ‘আলা মাওয়াহিব ১/২০৭, তারীখুল খমীস ১/৮২)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে যে,
كَانَ سَيِّدُنَـا حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ اَحْسَنَ رَجُلٍ رُؤِىَ قَطُّ خَرَجَ يَوْمًا عَلـٰى نِسَاءِ قُرَيْشٍ مُّـجْتَمِعَاتٍ فَقَالَتِ امْرَاَةٌ مِّنْـهُـنَّ اَيَّتُكُنَّ تَتَزَوَّجُ بِـهٰذَا الْفَتٰى فَتَصْطَبُّ النُّوْرَ الَّذِىْ بَيْنَ عَيْنَيْهِ فاِنّـِـىْ اَرٰى بَيْنَ عَيْنَيْهِ نُورًا وَّفِـىْ رِوَايَةٍ وَّكَانَ بَيْنَ عَيْنَيْهِ نُوْرٌ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বাধিক সৌন্দর্য মুবারক উনার অধিকারী। উনার মত এরূপ সুদর্শন পুরুষ (কায়িনাতে) কখনও দেখা যেতো না। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি একদিন একদল কুরাইশী মহিলাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন মহিলাদের মধ্য হতে একজন সবাইকে সম্বোধন করে বললেন, হে মহিলাগণ! আপনাদের মধ্যে কে আছেন যে এই মহাসম্মানিত যুবক উনাকে সম্মানিত শাদী মুবারক করবেন? (আপনারা কি চান যে এই মহাসম্মানিত যুবক তিনি আপনাদের কাউকে শাদী মুবারক করেন?) অতঃপর উনার সম্মানিত কপাল মুবারক উনার মধ্যে যেই মহাসম্মানিত নূর মুবারক রয়েছেন, সেই মহাসম্মানিত নূর মুবারক উনাকে ধারণ করবেন। সুবহানাল্লাহ! কেননা নিশ্চয়ই আমি উনার সম্মানিত কপাল মুবারক-এ মহাসম্মানিত নূর মুবারক তথা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে পাচ্ছি। সুবহানাল্লাহ! অপর বর্ণায় রয়েছে, ‘সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কপাল মুবারক-এ তখন নূরে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবস্থান মুবারক করছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/৩২৫, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ লিল বাইহাক্বী ১/১৩৩, আবূ নাঈম, খছায়িছুল কুবরা ১/৭১, মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৫/৩১৩)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,
وَالنُّوْرُ يَتَلَاْلَاُ فِـىْ جَبْهَتِهٖ وَفَرَّتْ وُحُوْشُ الْـمَشْرِقِ اِلـٰى وُحُوْشِ الْـمَغْرِبِ بِالْبِشَارَاتِ وَكَذٰلِكَ اَهْلُ الْبِحَارِ يُـبَـشِّـرُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কপাল মুবারক-এ নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জ্বলজ্বল করতেন। এ সম্মানিত সুসংবাদ মুবারক নিয়ে পূর্বপ্রান্তের পশু-পাখি পশ্চিমপ্রান্তের পশু-পাখিদের নিকট আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছুটাছুটি করতো। অনুরূপভাবে সাগর-মহাসাগর, নদী-নালা, খাল-বিলের প্রাণীরাও পরস্পরকে এই সুসংবাদ মুবারক বিনিময় করতো।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা ‘আলাল আ’লাম)

সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত গায়িবী নিদা মুবারক:
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তিনি একবার উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন যে, “হে আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম! আমি যখন কোনো নির্জন স্থানে যাই, তখন ‘সম্মানিত গায়িবী নিদা মুবারক তথা অদৃশ্য আওয়ায মুবারক’ শুনতে পাই- কে যেন আমাকে বলেন,
اَلسَّلَامُ عَلَيْكِ يَا اُمَّ سَيِّدِ الْمُرْسَلِيْنَ. اَلسَّلَامُ عَلَيْكِ يَا اُمَّ اِمَامِ الْمُرْسَلِيْنَ.
অর্থ: “হে সাইয়্যিদুল মুরসালীন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম! আপনাকে সালাম। সুবহানাল্লাহ! হে ইমামুল মুরসালীন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম! আপনাকে সালাম।” সুবহানাল্লাহ!
আবার কখনো বা বলেন,
بُشْرٰى لَكِ يَا اُمَّ اِمَامِ الْمُرْسَلِيْنَ
অর্থ: “হে ইমামুল মুরসালীন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম! আপনার জন্য সম্মানিত সুসংবাদ মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!
ঠিক একইরূপে সম্প্রতি একটি নতুন কথা মুবারক শুনতে পাইÑ কে যেন আমাকে বলেন,
مَرْحَبًا بِكِ يَا زَوْجَةَ سَيِّـدِنَا حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ.
অর্থ: “হে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিতা যাওযাতুম মুর্কারমাহ আলাইহাস সালাম! আপনি মুবারকবাদ গ্রহণ করুন।” সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত ওহাব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত স্বপ্ন মুবারক:
এরপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত ওহাব আলাইহিস সালাম তিনি এক রাতে এক বিশেষ স্বপ্ন মুবারক দেখেন। এক বুযূর্গ ব্যক্তি উনাকে বলছেন, “হে সাইয়্যিদুনা হযরত ওহাব আলাইহিস সালাম, স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার মহাসম্মানিতা মেয়ে উনার তত্ত্বাবধান ও নিরাপত্তার ভার গ্রহণ করেছেন। আপনি উনাকে এমন এক সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বংশের অধিকারী সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনার নিকট সমর্পণ করুন যেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাকে সম্মানিত কুরবানী মুবারক করার জন্য উনার সম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি মানত মুবারক করেছেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনিও উনার সম্মানিত কুরবানী মুবারক কবূল করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত সৌন্দর্য মুবারক:
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বেমেছাল সৌন্দর্য মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বাধিক সৌন্দর্য মুবারক উনার অধিকারী।” সুবহানাল্লাহ! (ইমতা’ ৪/৪১)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে, “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কপাল মুবারক উনার মাঝখানে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার সম্মানিত নূর মুবারক তথা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখা যেতো।” সুবহানাল্লাহ! (ইমতা’ ৪/৩৪)
আল বারাহীনুল ক্বিত্ব‘ইয়্যাহ ফী মাওলিদি খইরিল বারিয়্যাহ’ উনার মধ্যে ‘মাদারেজুন নুবুওওয়াত কিতাব’ উনার বরাতে উল্লেখ রয়েছে, “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক, সর্বোত্তম গুণাবলী মুবারক এবং জামালিয়াত তথা বেমেছাল সৌন্দর্য মুবারক উনার সুখ্যাতি সর্বত্র প্রসিদ্ধ ছিলো। উপরন্ত সম্মানিত কুরবানী মুবারক দেয়ার ঘটনা সারা দেশে প্রচার হয়ে উনাকে আরো বহুগুণে সুবিখ্যাত করে তুলেছিলো। তাই কুরাইশ মহিলারা উনার সম্মানিত পরিপূর্ণ সৌন্দর্য মুবারক-এ আশিকা হয়ে বিবাহ বসার উদ্দেশ্যে উনার গন্তব্য পথের মাথায় দাঁড়িয়ে থাকতো এবং নিজেদের দিকে উনাকে আহ্বান জানাতো। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক ও সম্মানিত ইছমত মুবারক উনাদের পর্দার আড়ালে সম্মানিত হিফাযত মুবারক-এ রেখে সম্মানিত ও পবিত্র থেকে পবিত্রতম অবস্থায় রেখেছিলেন।” সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট আরব মহিলাদের নিসবতে আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব:
আরবের অসংখ্য সম্ভ্রান্তশীলা মহিলা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কপাল মুবারক-এ নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবলোকন করে আশিকাহ হয়ে উনার নিকট নিসবতে আযীম শরীফ বসার জন্য বেকারার-পেরেশান হয়ে গিয়েছিলো এবং উনার নিকট সরাসরি এই ব্যাপারে প্রস্তাবও দিয়েছিলো। সীরাতগ্রন্থেগুলোতে এই বিষয়ে অনেক ঘটনা মুবারক উল্লেখ রয়েছে।
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনারসম্মানিত স্বপ্ন মুবারক:
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি একরাতে স্বপ্ন মুবারক দেখলেন যে, একদল বানর তলোয়ার নিয়ে উনাকে আক্রমণ করছে। কিন্তু এক সম্মানিত কুদরতী শক্তি মুবারক উনাকে শূন্যে উঠিয়ে নিলেন এবং আসমান থেকে একখ- আগুন এসে তাদেরকে পুড়িয়ে দিলো। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতস্বপ্ন মুবারক উনার ব্যাখ্যা:
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উপরোক্ত সম্মানিত স্বপ্ন মুবারক খুলে বললেন। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই স্বপ্ন মুবারক শুনে বললেন, হে আমার সম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে সমস্ত প্রকার বিপদ-আপদ থেকে হিফাযত মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! আর আপনার সম্মানিত কপাল মুবারক যেই সম্মানিত নূর মুবারক অবস্থান মুবারক করছেন এবং যেই সম্মানিত নূর মুবারক উনার কারণে আপনার বেমেছাল শান-মান মুবারক উনার বিষয়টি বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সেই সম্মানিত নূর মুবারক উনার কারণে বহু লোক আপনার ব্যাপারে হিংসা করছে, আপনার শত্রুতা পোষণ করছে, আপনার বিরোধিতা করছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! তারা আপনাকে শহীদ করার চেষ্টা করবে। না‘ঊযুবিল্লাহ! কিন্তু তা আপনার কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না; বরং তারা নিজেরাই পরিপূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, তাদের অস্তিত্ব চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে আহলে কিতাবদের দুশমনী:
আল বারাহীনুল ক্বিত্ব‘ইয়্যাহ ফী মাওলিদি খইরিল বারিয়্যাহ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, “আহলে কিতাব তথা ইহুদী-খ্রিস্টানরা (তাদের আসমানী কিতাবসমূহে বর্ণিত) বিভিন্ন আলামতের মাধ্যমে জানতো যে, আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে অবস্থান মুবারক করছেন। অর্থাৎ ‘ মহাসম্মানিত নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ এখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে অবস্থান মুবারক করছেন। সুবহানাল্লাহ! তাই তারা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বিরুদ্ধে কঠিন শত্রুতা শুরু করে দিলো। উনাকে শহীদ করার জন্য ওঁৎ পেতে থাকলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! শুধু তাই নয়, উনাকে শহীদ করার জন্য সর্বদা তাদের পক্ষ থেকে সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার আশে-পাশে অনেক গুপ্তচর আসা-যাওয়া করতে থাকলো। এই সকল গুপ্তচরেরা বিভিন্ন অলৌকিক ও আশ্চর্যজনক ঘটনা দেখে তথা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কারামত মুবারক দেখে ব্যর্থ, ভীত-সন্ত্রস্ত, লাঞ্ছিত, লজ্জিত ও ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় ফিরে যেত। সুবহানাল্লাহ! একদা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি একা শিকার করার উদ্দেশ্যে বের হলেন। এটা জেনে শাম দেশের দিক হতে শত্রুদের একটি বিরাট দল উনাকে শহীদ করার জন্য তরবারী নিয়ে এগিয়ে আসলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! এদিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনিও ঘটনাক্রমে সেই নির্জন ময়দানে উপস্থিত ছিলেন। (হঠাৎ করে) তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী একদল আশ্বারোহী সৈন্য দেখতে পেলেন। উনারা ইহজগতের কোনো মানুষের সাদৃশ্য ছিলেন না। (উনারা ছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য নিয়োজিত সম্মানিত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ!) উনারা অদৃশ্য থেকে এসে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার শত্রুবাহিনীকে পরিপূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিলেন।” সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ:
নুযহাতুল মাজালিস’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
অতঃপর যখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বড় হলেন, তারা (শাম দেশের পাদ্রীরা) উনাকে শহীদ করার জন্য ইচ্ছা পোষণ করলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করে উনাদের মাধ্যমে তাদেরকে হত্যা করলেন, নিশ্চিহ্ন করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান সাইয়্যিদুন নাস সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি পাহাড়ের উপর থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এই সম্মানিত কারামত মুবারক দেখলেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর তিনি বাড়িতে যেয়ে উনার মহাসম্মানিতা ‘যাওযাতুম মুকাররামাহ’ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান সাইয়্যিদাতুনা হযরত র্বারাহ বিনতে আব্দুল উয্যা আলাইহাস সালাম উনাকে এই সম্মানিত কারামাত মুবারক সম্পর্কে অবহিত করলেন। তারপর তিনি বললেন, আপনি কি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দিবেন? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার এই সম্মানিত কারামাত মুবারক দেখে তিনি এবং উনার মহাসম্মানিতা যাওজাতুম মুকাররমাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত বাররাহ আলাইহাস সালামতিনি অর্থাৎ উনারা দু’জনে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম উনার নিকট গেলেন। উনার সম্মানিত নাম মুবারক ছিলেন, ‘শায়বাতুল হামদ’ (এটা উনার বিশেষ লক্বব মুবারক। তবে উনার মূল নাম মুবারক ছিলেন ‘সাইয়্যিদুনা হযরত শায়বাহ আলাইহিস সালাম’। সুবহানাল্লাহ!) অতঃপর উনারা উভয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার ব্যাপারে প্রস্তাব মুবারক দিলেন। তারপর তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করলেন।” সুবহানাল্লাহ! (নুযহাতুল মাজালিস ২/৭৫)
আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,“হযরত হাসান বিন আহমদ বাকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূর মুবারক উনাকে উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ স্থানান্তরিত করার ইচ্ছা মুবারক করলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত অন্তর মুবারক-এ সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ করার আগ্রহ মুবারক সৃষ্টি করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! ফলে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আমার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম! আমি আশা করি, আপনি আমার পক্ষ থেকে এমন একজন মহাসম্মানিতা মেয়ে উনার কাছে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার বিষয়ে সম্মানিত প্রস্তাব মুবারক দিবেন, যিনি হবেন সর্বশ্রেষ্ঠা, সর্বোত্তম চরিত্র মুবারক উনার অধিকারিণী, অতি উত্তম জিসম মুবারক উনার অধিকারিণী, সুদর্শনা, ন্যায়পরায়ণা, উজ্জ্বল দীপ্তিময়ী, সর্বদিক থেকে পরিপূর্ণতার অধিকারিণী, বেমেছাল মান-সম্মান-ইজ্জত মুবারক উনার অধিকারিণী, সর্বশ্রেষ্ঠা ও সুউচ্চ বংশীয়া। সুবহানাল্লাহ! উনার মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম তিনি উত্তরে বললেন, হে আমার মহাসম্মানিত স্নেহের পুত্র আলাইহিস সালাম! আপনার জন্য সম্মানিত মুহব্বত মুবারক ও সম্মান-ইজ্জত মুবারক। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত কুরাইশ বংশ উনার ও আরবের সকল গোত্রের সমস্ত কুমারী মেয়ে উনাদের ব্যাপারে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সংবাদ নিলেন। কিন্তু তিনি একমাত্র সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনাকে ব্যতীত অন্য কাউকে উপরোক্ত সমস্ত গুণাবলী মুবারক উনাদের অধিকারিণী পেলেন না। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে আমার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম, আপনি  দ্বিতীয়বারের মতো আবারো উনাকে দেখুন। তারপর তিনি পুনরায় দেখতে গেলেন এবং উনার দিকে তাকালেন। তখন তিনি উনাকে এমতাবস্থায় দেখলেন যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তিনি যেন মুক্তা সাদৃশ্য তারকার ন্যায় নূর মুবারক বিচ্ছুরণ করছেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উভয়ের মধ্যে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করে দিলেন।” সুবহানাল্লাহ!
আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ অনুষ্ঠান:
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ পরিপূর্ণরূপে সম্মানিত সুন্নতী কায়দায় হয়েছিলো। সুবহানাল্লাহ! নির্দিষ্ট সময়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনাকে সম্মানিত মদীনা শরীফ থেকে সম্মানিত মক্কা শরীফ নিয়ে আসা হলো। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলেন ২৪ বছর ১১ মাস ২৯ দিন তথা পূর্ণ ২৫ বছর এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলেন ১৮ বছর ৩ মাস ২৫ দিন। সুবহানাল্লাহ! অনেক দিন পূর্ব থেকেই সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার প্রস্তুতি মুবারক চলছিলো। দিন যতই নিকটবর্তী হতে থাকলো, প্রস্তুতি মুবারক ততোই ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হচ্ছিলো। ইয়াওমুল খমীস সমস্ত মক্কা শরীফ-এ সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার আয়োজনের ধূম পড়ে গেলো। সম্মানিত কুরাইশ বংশীয় সাইয়্যিদযাদাহ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ। তাই সকলের মাঝে আনন্দের মহাজোয়ার বইছে। জিন, ফেরেশতা, হুর-মালায়িক সকলে খুশি প্রকাশ করছেন। আরশে আ’লা হতে তাহতাছ ছারা পর্যন্ত খুশির জোয়ার বইছে। শুভ মুহূর্ত নিকট থেকে নিকটবর্তী হচ্ছেন। সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার পাশেই সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ। সেখানেই আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার সম্মানিত মজলিস মুবারক অনুষ্ঠিত হবেন। তাই অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে সাজানো হয়েছে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার সম্মানিত মজলিস মুবারক। সকলেই সম্মানিত মজলিস মুবারক-এ উপস্থিত হতে লাগলেন। পূর্ণ প্রস্তুতি মুবারক সম্পন্ন হলো। পবিত্র জুমাদাল উখরা শরীফ উনার সূর্য অস্তিমত হয়ে পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ উনার চাঁদ উঁকি দিলো। বা’দ মাগরিব এবং সম্মানিত ইশা উনার ওয়াক্ত শুরু। আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার অনুষ্ঠানে সকলে উপস্থিত হলেন। এমনি শুভক্ষণে সকলের মধ্যমণি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত সম্মানিত মজলিস মুবারক-এ উপস্থিত হয়ে সকলকে ধন্য করলেন। সুবহানাল্লাহ! তখন উনার সম্মানিত ললাট ও সমস্ত জিসম মুবারক থেকে মুক্তা দানার ন্যায় অবিরত ধারায় মহাসম্মানিত নূর মুবারক  বিচ্ছূরিত হচ্ছিলেন। যেন সম্মানিত মজলিস মুবারক-এ নিশির পূর্ণ চাঁদ উদিত হয়ে সকলকে আলোকিত করছেন অথবা দিবালোকের সূর্য সকলের উদ্দেশ্যে আলো বিতরণ করছেন। সুবহানাল্লাহ! সকলের দৃষ্টি উনার দিকে। জিন, ফেরেশতা ও হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই সেই সম্মানিত মজলিস মুবারক-এ উপস্থিত। সকলের মাঝে আনন্দের মহাজোয়ার বইছে। এমতাবস্থায় সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক অনুযায়ী প্রথমে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা ও ছানা-ছিফত মুবারক করেন। তারপর সকলের উদ্দেশ্যে সম্মানিত নছীহত মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি বলেন, সেই মহান আল্লাহ পাক উনার অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করছি, উনার প্রশংসা মুবারক করছি যিনি আমাদেরকে অফুরন্ত নিয়ামত মুবারক হাদিয়া করেছেন, আমাদেরকে দয়া-ইহসান মুবারক করেছেন এবং আমাদের হৃদয়ে উনার সম্মানিত শুকরিয়া, প্রশংসা, ছানা-ছিফত মুবারক করার উপলব্ধি দিয়েছেন এবং তা করার তাওফীক্ব মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি আমাদেরকে সম্মানিত শহর মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী বানিয়েছেন। তিনি অন্যান্য গোত্রের উপর আমাদেরকে মর্যাদাবান করেছেন এবং দুর্যোগ ও দুরবস্থা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! সেই মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা করছি যিনি আমাদের জন্য সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ বৈধ করেছেন এবং অবৈধ সংসর্গ নিষিদ্ধ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! এইভাবে অনুষ্ঠান মুবারক সূচনা করে তিনি বলেন, এখন আপনাদের অবগতির জন্য পেশ করছি যে, আমাদের মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আপনাদের মহাসম্মানিতা আওলাদ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার সাথে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ হতে চান এবং আপনাদের সম্মতি হলে এই সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ নিষ্পন্ন করতে চান। আপনারা কি এ প্রস্তাবে রাজি রয়েছেন?
মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান খাজা সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমরা এই প্রস্তাব মুবারক গ্রহণ করলাম। সুবহানাল্লাহ! তারপর তিনিও মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা ও ছানা-ছিফত মুবারক করার পর সকলের উদ্দেশ্যে কিছু সম্মানিত নছীহত মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি বলেন, সেই মহান আল্লাহ পাক উনার অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করছি, উনার প্রশংসা মুবারক করছি যিনি আমাদেরকে দ্বীনে হানীফ উনার উপর প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন, উনার সম্মানিত শুকরিয়া, প্রশংসা, ছানা-ছিফত মুবারক করার তাওফীক্ব দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি আমাদেরকে সম্মানিত কুরাইশ গোত্র উনার বিশেষ শাখা সম্মানিত যুহরা গোত্র উনার অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং সম্মানিত শহর মদীনা শরীফ উনার অধিবাসী বানিয়েছেন। তিনি অন্যান্য গোত্রের উপর আমাদেরকে মর্যাদাবান করেছেন এবং মানুষের খিদমত করার সুযোগ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! সেই মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা করছি যিনি আমাদের জন্য সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ বৈধ করেছেন এবং অবৈধ সংসর্গ নিষিদ্ধ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এভাবে সাইয়্যিদুনা খাজা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সংক্ষিপ্ত নছীহত মুবারক শেষ করেন। এতে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত খুশি মুবারক প্রকাশ করেন। অতঃপর তিনি হাসিমুখে সায় দিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা সকলে এই সম্মানিত পবিত্র কাজের সাক্ষী থাকলেন। সুবহানাল্লাহ!
তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করেন এবং দোয়া মুনাজাত পরিচালনা করেন। সুবহানাল্লাহ!
এইভাবে সম্মানিত সুন্নতী তরতীব মুবারক অনুযায়ী সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন হয়।” সুবহানাল্লাহ!
সময়টি ছিলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের ৮ মাস ১২ দিন পূর্বে মহাসম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ১লা তারিখ লাইলাতুল জুমুয়াহ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَـلِـىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ اِنَّ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ خَرَجْتُ مِنْ نِكَاحٍ وَّلَـمْ اَخْرُجْ مِنْ سِفَاحٍ مِّنْ لَّدُنْ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِلـٰى اَنْ وَّلَدَنِـىْ اَبِـىْ وَاُمِّىْ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ لَـمْ يُصِبْنِـىْ مِنْ سِفَاحِ الْـجَاهِلِيَّةِ شَىْءٌ مَّا وَلَدَنِـىْ اِلَّا نِكَاحٌ كَنِكَاحِ الْاِسْلَامِ.
অর্থ: “আমি সর্বোত্তম বিশুদ্ধ সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ (ছহীহ নিকাহ বা শাদী মুবারক) উনার মাধ্যমে মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি; কস্মিনকালেও এর ব্যতিক্রমটি ঘটেনি। সুবহানাল্লাহ! আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে আমার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের পর্যন্ত আমি যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব ও ব্যক্তিত্বা মুবারক উনাদের মাঝে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেছি, উনারা প্রত্যেকেই উনাদের সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন সর্বোত্তম বিশুদ্ধ সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার মাধ্যমে। যাতে জাহিলী যুগের কোনো অপকর্ম কস্মিনকালেও স্পর্শ করেনি। আমি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সম্মানিত পবিত্র নিসবতে আযীম শরীফ উনার ন্যায় সম্মানিত পবিত্র নিসবতে আযীম শরীফ উনার মাধ্যমে মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল আওসাত্ব লিত ত্ববারনী ৫/৮০, আল বাদরুল মুনীর ৭/৬৩৭, আল মাত্বালিবুল আলীয়াহ ১৭/১৯৮, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/১৪৯, আল জামিউছ ছগীর ১/৩৬৪, আল ফাতহুল কাবীর ২/৮২, দায়লামী শরীফ ২/১৯০, জামিউল আহাদীছ ৯/৪৯৮, আল খছাইছুল কুবরা ১/৬৫, সীরাতে হালবিয়্যাহ ১/৬৮, দালাইলুন নুবুওওয়াহ লিআবী নাঈম ১/১৯, সুবুলুলহুদা ওয়ার রশাদ ১/২৩৭)
এই সমস্ত দলীল-আদিল্লাহ উনাদের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সম্মানিত সুন্নতী তরতীব মুবারক অনুযায়ী হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! মূলত এই সম্মানিত তরতীব মুবারক অনুযায়ী বিবাহ অনুষ্ঠান করা সকলের জন্য সম্মানিত সুন্নত মুবারক হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। অর্থাৎ উনারা সকলকে সম্মানিত সুন্নত মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত মোহরানা মুবারক:
এই সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার সম্মানিত মোহরানা মুবারক ছিলো নগদ এক উকিয়া স্বর্ণ ও এক উকিয়া রৌপ্য। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ওলীমা মুবারক:
 সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার ওলীমায় একশতটি উট, একশত গরু, একশত বকরী জবাই করে প্রচুর পরিমাণে খাবার প্রস্তুত করেন এবং সম্মানিত মক্কা শরীফ ও তৎসংলগ্ন এলাকার সবাইকে দাওয়াত করে মেহমানদারী মুবারক করেন। এই সম্মানিত মেহমানদারী মুবারক চারদিন পর্যন্ত চলে। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত রগায়িব শরীফ:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ফুল সজ্জিত সম্মানিত হুজরা শরীফ-এ পাঠানো হলো। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বিশেষ ছোহবত মুবারক তথা সাক্ষাৎ মুবারক-এ গেলেন এবং সম্মানিত নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ  সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। সুবাহনাল্লাহ! সেই রাতটি ছিলো সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ উনার ১লা তারিখ সম্মানিত জুমুয়াহ শরীফ উনার সম্মানিত রাত মুবারক। আল্লামা কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাব মুবারক উনার মধ্যে উল্লেখ করেন, এই রাতে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত কুদরত মুবারক উনার জগতে এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের জগতে বলে দেয়া হয়েছিলো যে, সম্মানিত নূর মুবারক দ্বারা সমস্ত সৃষ্টিজগতকে আলোকিত করে দিন। সুবহানাল্লাহ! আকাশ-যমীন, সারা কায়িনাতের সকল ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা মহা খুশিতে বিভোর হয়ে গিয়েছিলেন। সর্বশ্রেষ্ঠ জান্নাত ফেরদাউস উনার দরজা মুবারক খুলে দেয়ার জন্য সম্মানিত বেহেশত উনার রক্ষণাবেক্ষণকারী সম্মানিত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে হুকুম করা হলো। সমগ্র কায়িনাতকে বিভিন্ন প্রকার খুশবু দ্বারা খুশবুময় করে রাখার আদেশ আসিলো। আকাশের সকল স্তরে ও পৃথিবীর সকল ঘরে ঘরে খোশখবরি দেয়া হয়েছিলো যে, নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই সম্মানিত রাতে উনার মহাসম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক এনেছেন। সুবহানাল্লাহ!
তিজারাত তথা ব্যবসার উদ্দেশ্যে সফর:
মহাসম্মানিত আযীমুশ্ শান নিসবতে আযীম শরীফ উনার পর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে দুই মাস সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। অতঃপর তিনি কুরাইশদের সাথে ব্যবসার উদ্দেশ্যে শাম দেশে সফর মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ:
ব্যবসা শেষে উনারা সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। অতঃপর উনারা যখন সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই দিন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তাই তিনি বললেন-
أتخلف عند أخوالي بني عدي بن النجار.
অর্থ: “আমি সম্মানিত বনী আদী ইবনে নাজ্জার গোত্রের আমার সম্মানিত মামা উনাদের নিকট থেকে যাবো।”
অতঃপর তিনি সেখানে সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় এক মাস অবস্থান মুবারক করেন। (ইবনে সা’দ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/৩৩১)
মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি এক মাস মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করার পর সম্মানিত মদীনা শরীফেই ২রা মুহররমুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ সকালেমহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত রেহেম শরীফ উনার মধ্যে অবস্থানকাল মুবারক ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে।
সময়টি ছিলো সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার প্রায় ৫৩ বছর ২ মাস পূর্বে।অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার ২ মাস ১০ দিন পূর্বে।
দুনিয়ার যমীনে অবস্থান মুবারক:
মুজাদ্দিদে আ’যম সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়া সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সর্বাধিক বিশুদ্ধ অভিমত হচ্ছে- সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ২৫ বছর ৬ মাস দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত রওযা শরীফ:
সম্মানিত আবওয়া শরীফ।
সম্মানিত আওলাদ:
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত দ্বীন:
সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত দ্বীন অর্থাৎ দ্বীনে হানীফ। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি মুজাদ্দিদে আ’যম সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মুবারক উসীলায় মালিকুল জান্নাহ, আবূ রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক জানার, বুঝার উলব্ধি করার এবং উনার প্রতি বিশুদ্ধ হুসনে যন পোষণ করার তাওফীক্ব দান করুন এবং উনার সম্মানার্থে ইহক্বাল-পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী নছীব করুন। আমীন।



*******************************************************************


হযরত ওয়ালিদাইন শরীফাইন আলাইহিমাস সালাম উনারা শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনার অধিকারী

সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ طَلْقِ بْنِ عَـلِــىٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ لَوْ اَدْرَكْتُ وَالِدَىَّ اَوْ اَحَدَهُـمَا وَاَنَا فِىْ صَلَاةِ الْعِشَاءِ وَقَدْ قَرَاْتُ فِيْهَا بِفَاتِـحَةِ الْكِتَابِ تُنَادِىْ يَا مُـحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَاَجَبْتُهَا لَبَّيْكِ
অর্থ: “হযরত ত্বলক্ব ইবনে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যদি আমি আমার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনাকে এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনাকে অর্থাৎ উনাদের দু’জনকে অথবা উনাদের দু’জনের একজনকে দুনিয়ার যমীনে পেতাম, আর আমি সম্মানিত ইশা উনার নামায (ফরয নামায) মুবারক-এ দাঁড়িয়ে সম্মানিত সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করতে থাকতাম। এমতাবস্থায় উনারা যদি আমাকে এই বলে আহ্বান মুবারক করতেন, হে মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাহলে অবশ্যই অবশ্যই ওই অবস্থায় থেকেও (নামায ছেড়ে দিয়ে) আমি উনাদের সম্মানিত আহ্বান মুবারক-এ সাড়া দিয়ে ইরশাদ মুবারক করতাম, লাব্বাইক, হে আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম, হে আমার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম, আমি উপস্থিত, হাযির।” সুবহানাল্লাহ!
অপর বর্ণনায় এসেছে-          
لَوْ دَعَانِىْ وَالِدَىَّ اَوْ اَحَدُهُـمَا وَاَنَا فِى الصَّلَاةِ لَاَجَبْتُهٗ
অর্থ: “যদি আমার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা দু’জন অথবা উনাদের দু’জনের একজন আমাকে সম্মানিত নামায (ফরয নামায) মুবারক আদায় করা অবস্থায় আহ্বান মুবারক করতেন, তাহলে আমি অবশ্য অবশ্যই ওই অবস্থায় থেকেও (নামায ছেড়ে দিয়ে) উনাদের সম্মানিত আহ্বান মুবারক-এ সাড়া দিতাম।” সুবহানাল্লাহ! (শুয়াবুল ঈমান ১০/২৮৪, দায়লামী শরীফ ৩/৩৪৫, জামিউল আহাদীছ ১৮/৭৪, কাশফুল খফা ২/১৬০, আল মাক্বাছিদুল হাসানাহ ১/৫৫১, কানযুল উম্মাল ১৬/৪৭০, জামউল জাওয়ামি’ ১৬৮/১৩, মাসালিকুল হুনাফা ফী হুকমি ঈমানি ওয়ালিদাইল মুছত্বফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৩৭ পৃষ্ঠা, আল হাওই শরীফ ২/২৮১ ইত্যাদি)
স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে কায়িনাতবাসীকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক এবং পবিত্রতা মুবারক কত বেমেছাল। সুবহানাল্লাহ! তিনি সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টভাবে ইরশাদ মুবারক করেছেন যে,
لَوْ اَدْرَكْتُ وَالِدَىَّ اَوْ اَحَدَهُـمَا وَاَنَا فِـىْ صَلَاةِ الْعِشَاءِ وَقَدْ قَرَاْتُ فِيْهَا بِفَاتِـحَةِ الْكِتَابِ تُنَادِىْ يَا مُحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَاَجَبْتُهَا لَبَّيْكِ
অর্থ: ‘যদি আমি আমার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনাকে এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনাকে অর্থাৎ উনাদের দু’জনকে অথবা উনাদের দু’জনের একজনকে দুনিয়ার যমীনে পেতাম, আর আমি সম্মানিত ইশা উনার নামায (ফরয নামায) মুবারক-এ দাঁড়িয়ে সম্মানিত সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করতে থাকতাম। এমতাবস্থায় উনারা যদি আমাকে এই বলে আহ্বান মুবারক করতেন, হে মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাহলে অবশ্যই অবশ্যই ওই অবস্থায় থেকেও (নামায ছেড়ে দিয়ে) আমি উনাদের সম্মানিত আহ্বান মুবারক-এ সাড়া দিয়ে ইরশাদ মুবারক করতাম, লাব্বাইক, হে আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম, হে আমার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম, আমি উপস্থিত, হাযির। সুবহানাল্লাহ!’
তাহলে এখান থেকে অত্যন্ত সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক এবং পবিত্রতা মুবারক কত বেমেছাল। সুবহানাল্লাহ!
যেখানে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা বেকারার-পেরেশান কিভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়া যায়, কিভাবে উনার সম্মানিত ক্বদম মুবারক উনার ধূলি মুবারক নেয়া যায়, আর সেখানে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে ইরশাদ মুবারক করেছেন, যদি উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা দুনিয়ার যমীনে অবস্থান মুবারক করতেন, আর উনারা উনাদের মহাসম্মানিত আওলাদ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত নামায মুবারক পড়া অবস্থায় আহ্বান মুবারক করতেন।
তাহলে স্বয়ং যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত নামায মুবারক ছেড়ে দিয়ে উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের সম্মানার্থে উনাদের সম্মানিত আহ্বান মুবারক-এ সাড়া দিতেন এবং বলতেন, লাব্বাইক, হে আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম, হে মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম, আমি উপস্থিত, হাযির। সুবহানাল্লাহ!’
তাহলে উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান এবং পবিত্রতা মুবারক উনার বিষয়টি কত বেমেছাল, সেটা কি কায়িনাতের কেউ কখনও চিন্তা-ফিকির করে মিলাতে পারবে? কস্মিনকালেও পারবে না। সুবহানাল্লাহ!’
 সেটাই মুজাদ্দিদে আ’যম সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক এক কথায় উনারা শুধু যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক রয়েছে সমস্ত কিছুর অধিকারী হচ্ছেন উনারা। সুবহানাল্লাহ! উনারা শুধু জান্নাতীই নন; বরং উনারাই হচ্ছেন সম্মানিত জান্নাত মুবারকসহ সমস্ত কায়িনাতের মালিক। সুবহানাল্লাহ! সম্মানিত জান্নাত উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন কখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ দয়া করে প্রবেশ করবেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ প্রবেশ করলেই সম্মানিত জান্নাত মুবারক ধন্য হয়ে যাবেন, সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার নাম করণের বিষয়টি সার্থক হবে। সুবহানাল্লাহ! মূলত মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত জান্নাত মুবারক সৃষ্টিই করেছেন, উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়ার জন্য।” সুবহানাল্লাহ!
এখন বলার বিষয় হচ্ছে, যারা বলতে চায় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা ঈমনদার ছিলেন না, না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! উনারা জান্নাতী নন; না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! বরং জাহান্নামী। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!
তারা কি বলতে পারবে যে, শুধু যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে, উনার সৃষ্টি জগতে এমন কেউ আছে; যে কিনা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত নামায মুবারক-এ থাকা অবস্থায় আহ্বান করার দুঃসাহস দেখাবে আর সেই আহ্বানে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত নামায মুবারক ছেড়ে দিয়ে সাড়া দিবেন? না‘ঊযুবিল্লাহ! কস্মিনকালেও নয়। বরং যে এটা চিন্তা-ফিকির করবে সেও কাট্টা কাফির-চিরজাহান্নামী হবে। না‘ঊযুবিল্লাহ! অথচ স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে ইরশাদ মুবারক করেছেন, যদি উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা দুনিয়ার যমীনে অবস্থান মুবারক করতেন আর উনারা উনাদের মহাসম্মানিত আওলাদ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত নামায মুবারক পড়া অবস্থায় আহ্বান মুবারক করতেন, তাহলে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত নামায মুবারক ছেড়ে দিয়ে উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের সম্মানার্থে উনাদের সম্মানিত আহ্বান মুবারক-এ সাড়া দিতেন এবং বলতেন, লাব্বাইক, হে আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম, হে আমার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম, আমি উপস্থিত, হাযির। সুবহানাল্লাহ!’
সুতরাং এখান থেকে বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা শুধু ঈমানদারই নন; বরং উনারা হচ্ছেন শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী এবং উনারা শুধু জান্নাতীই নন; বরং সম্মানিত জান্নাত মুবারকসহ সমস্ত কায়িনাতের মালিক। সুবহানাল্লাহ! এখানে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। যে ব্যক্তি এই বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করবে, সে কাট্টা কাফির চিরজাহান্নামী হবে। না‘ঊযুবিল্লাহ!


********************************

মহাসম্মানিত হযরত ওয়ালিদাইন শরীফাইন আলাইহিমাস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীরা চিরজাহান্নামী ও চিরমাল‘ঊন

মুজাদ্দিদে আ’যম সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যারা বলবে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা ঈমানদার ছিলেন না, না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! উনারা সম্মানিত ঈমান ব্যতীত সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! উনারা জান্নাতী নন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার ফতওয়া অনুযায়ী তারা সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, চিরজাহান্নামী, চিরমাল‘ঊন। তারা যদি মুসলমান বা ঈমানদার দাবি করে, তাহলে তাদের উপর মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং মুরতাদের শাস্তিও বর্তাবে এবং তাদের প্রাপ্য হলো চির লা’নত ও চির জাহান্নাম। আর যদি কাফির হয়, তাহলে তারা তাদের কুফরীকে আরো বৃদ্ধি করলো। এবং তাদের শাস্তিও মৃত্যুদ-। তাদেরও প্রাপ্য হলো চির লা’নত ও চির জাহান্নাম। তারা ইবলীসের ন্যায়; বরং ইবলীসের চেয়েও চরম মাল‘ঊন। তাদের প্রত্যেককেই লা’নাতুল্লাহি আলাইহি বলা ফরয, ফরয এবং ফরয।”
এই প্রসঙ্গে দশম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল হাওই শরীফ উনার ২য় খ-ের ৮১ পৃষ্ঠায় এবং মাসালিকুল হুনাফা উনার ৩৬ পৃষ্ঠায়, ইমাম মুহম্মদ ইবনে ইউসূফ ছালিহী শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ : ৯৪২ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ শরীফ উনার ১ম খ-ের ২৬০ পৃষ্ঠায়, ইমাম আহমদ ইবনে মুহম্মদ হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ : ১০৯৮ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘গমযু উয়ূনিল বাছায়ির ফী শরহিল আশবাহি ওয়ান নাযায়ির উনার ৫ম খ-ের ৪৯২ পৃষ্ঠায়, হযরত ইমাম ইবনে আবিদীন হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ : ১২৫২ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল উকুদুদ দুররিয়্যাহ উনার ৭ম খ- ৪২২ পৃষ্ঠায়’ উল্লেখ করেছেন,
سُئِلَ حَضْرَتْ اَلْقَاضِىْ اَبُوْ بَكْرِ بْنُ الْعَرَبِـىِّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَحَدُ اَئِمَّةِ الْمَالِكِيَّةِ عَنْ رَجُلٍ قَالَ اِنَّ اَبَا النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِى النَّارِ فَاَجَابَ بِاَنَّ مَنْ قَالَ ذٰلِكَ فَهُوَ مَلْعُوْنٌ لِقَوْلِهٖ تَعَالـٰى{اِنَّ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ لَعَنَهُمُ اللهُ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ} قَالَ وَلَا اَذًى اَعْظَمُ مِنْ اَنْ يُّقَالَ عَنْ اَبِيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّهٗ فِى النَّارِ.
অর্থ: ‘হযরত ক্বাযী আবূ বকর ইবনুল আরবী তিনি ছিলেন মালিকী মাযহাব উনার একজন বিশ্বখ্যাত ইমাম। উনার নিকট এমন একজন ব্যক্তির সম্পর্কে ফতওয়া জানতে চাওয়া হয়েছিলো, যে বলে থাকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি জাহান্নামী। না’ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! তিনি ফতওয়া মুবারক দিয়েছিলেন, যে ব্যক্তি এই কথা বলবে, নিশ্চয়ই সে মাল‘ঊন, তার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত। (তারপর তিনি উনার ফতওয়ার পক্ষে দলীল মুবারক পেশ করেন,) কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে কষ্ট দেয় তাদের উপর স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়া এবং আখিরাতে তথা আবাদুল আবাদের তরে লা’নত বর্ষণ করেছেন।’ (সম্মানিত সূরা আহযাব শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ৫৭)
অতঃপর তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনাকে জাহান্নামী’ বলাই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সবচেয়ে বড় কষ্ট দেয়া। উনাদের জন্য এর চেয়ে আর কোনো বড় কষ্ট হতে পারে না।”
সুতরাং যারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনাকে এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে জাহান্নামী বলবে, না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! তারা চরম মাল‘ঊন। তাদের উপর অনন্তকালের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত। তাদের প্রত্যেককেই লা’নাতুল্লাহি আলাইহি বলা ফরয, ফরয এবং ফরয।
হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
قَالَ حَضْرَتْ اَلْاِمَامُ مُوَفَّقُ الـدِّيْنِ بْنُ قُدَامَةَ الْـحَنْبَلِىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِى الْمُقْنِعِ وَمَنْ قَذَفَ اُمَّ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُتِلَ مُسْلِمًا كَانَ اَوْ كَافِرًا.
অর্থ : “হযরত ইমাম মুওয়াফ্ফাকুদ্দীন ইবনে কুদামাহ হাম্বলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘মুক্বনি’ গ্রন্থে’ বলেন, যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার (এবং মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনাদের) শান মুবারক-এ অপবাদ দিবে, উনার (্উনাদের) প্রতি দোষারোপ করবে, উনার (উনাদের) দুর্নাম করবে (উনারা ঈমানদার ছিলেন না, উনারা ঈমান ব্যতীত সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, উনারা জাহান্নামী না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!)
সে নামধারী মুসলমান হোক অথবা কাফির হোক তাকে কতল করতে হবে। অর্থাৎ তাকে কতল করা ফরয-ওয়াজিব।” (মাসালিকুল হুনাফা ৩৭ পৃ., হাওই ২৮১, ইনসাফ ১০/১৬৮, আল মুবদি’ শরহুল মুক্বনি’ ৯/৮৭, আল মুহাররার ফিল ফিক্বহ ২/৯৭, শরহুয জারকাশী ৩/৮৬ ইত্যাদি )
সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার বিশ্বখ্যাত ফক্বীহ ও ইমাম হযরত ইবনে আবিদীন হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ : ১২৫২ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘রদ্দুল মুহতার ‘আলাদ দুররিল মুখতার উনার ৪র্থ খ-ের ২৩৩ পৃষ্ঠায়’ উল্লেখ করেন,
قَالَ حَضْرَتْ اَبُو الْـخَطَّابِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اِذَا قَذَفَ اُمَّ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تُقْبَلُ تَوْبَتُهٗ.
অর্থ: “হযরত ইমাম আবুল খত্তাব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন কেউ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার (এবং মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনাদের) শান মুবারক-এ অপবাদ দিবে, উনার (উনাদের) প্রতি দোষারোপ করবে, উনার (উনাদের) দুর্নাম করবে (উনারা ঈমানদার ছিলেন না, উনারা ঈমান ব্যতীত সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, উনারা জাহান্নামী না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!), তার তওবা কবূল হবে না। (অবশ্যই সে চিরজাহান্নামী হবে)।” না‘ঊযুবিল্লাহ!
ইমাম আবূ মুহম্মদ মুওয়াফ্ফাকুদ্দীন আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে মুহম্মদ হাম্বলী মুক্বাদ্দাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি ইবনে কুদামাহ হিসেবে প্রসিদ্ধ (বিছাল শরীফ : ৬২০ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল মুগনী ফী ফিক্বহিল ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল শায়বানী উনার ২০তম খ-ের ১৬৯ পৃষ্ঠায়’ উল্লেখ করেন,
مَنْ قَذَفَ اُمَّ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُتِلَ مُسْلِمًا كَانَ اَوْ كَافِرًا يَعْنِىْ اَنَّ حَدَّهُ الْقَتْلُ وَلَا تُقْبَلُ تَوْبَتُهٗ نَصَّ عَلَيْهِ حَضْرَتْ اَحْمَدُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ.
অর্থ: “যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার (এবং মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনাদের) শান মুবারক-এ অপবাদ দিবে, উনার (উনাদের) প্রতি দোষারোপ করবে, উনার (উনাদের) দুর্নাম করবে (উনারা ঈমানদার ছিলেন না, নাউযুবিল্লাহ! উনারা ঈমান ব্যতীত সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, নাউযুবিল্লাহ! উনারা জাহান্নামী না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!)
সে নামধারী মুসলমান হোক অথবা কাফির হোক তাকে কতল করতে হবে। অর্থাৎ নিশ্চয়ই তার হদ হচ্ছে কতল। তাকে কতল করতে হবে, মৃত্যুদ- দিতে হবে। তার তওবা কবূল হবে না। (অবশ্যই সে চিরজাহান্নামী, চিরমাল‘ঊন হবে)। আর এই সম্মানিত ফতওয়া মুবারক উনার উপর সম্মানিত হাম্বলী মাযহাব উনার সম্মানিত ইমাম তৃতীয় হিজরী শতক উনার মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নছ তথা সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার দ্বারা দলীল পেশ করেছেন।”
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
حَضْرَتْ نَوْفَلُ بْنُ الْفُرَاتِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَكَانَ عَامِلًا لِعُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيْزِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ كَانَ رَجُلٌ مِّنْ كُتَّابِ الشَّامِ مَأْمُوْنًا عِنْدَهُمُ اسْتَعْمَلَ رَجُلًا عَلـٰى كُوْرَةِ الشَّامِ وَكَانَ اَبُوْهُ يَزِنُ بِالْمَنَانِيَّةِ فَبَلَغَ ذٰلِكَ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيزِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَقَالَ مَا حَمَلَكَ عَلـٰى اَنْ تَسْتَعْمِلَ رَجُلًا عَلـٰى كُوْرَةٍ مِّنْ كُوَرِ الْمُسْلِمِيْنَ كَانَ اَبُوْهُ يَزِنُ بِالْمَنَانِيَّةِ؟ قَالَ اَصْلَحَ اللهُ اَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَمَا عَلَىَّ! كَانَ اَبُو النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُشْرِكًا وَفِىْ رِوَايَةٍ وَمَا يَضُرُّهٗ ذٰلِكَ يَا اَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ قَدْ كَانَ اَبُو النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَافِرًا فَمَا ضَرَّهٗ فَغَضِبَ حَضْرَتْ عُمَرُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ غَضَبًا شَدِيْدًا فَقَالَ حَضْرَتْ عُمَرُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اٰهٍ ثُـمَّ سَكَتَ ثُـمَّ رَفَعَ رَأْسَهٗ فَقَالَ اَاَقْطَعُ لِسَانَهٗ؟ اَاَقْطَعُ يَدَهٗ وَرِجْلَهٗ؟ اَاَضْرِبُ عُنُقَهٗ؟ ثُـمَّ قَالَ لَا تَلِىْ لِىْ شَيْئًا مَّا بَقِيْتُ وَفِىْ رِوَايَةٍ اُخْرٰى فَقَالَ جَعَلْتَ هٰذَا مَثَلًا فَعَزَلَهٗ.
অর্থ: “হযরত নওফিল ইবনে ফুরাত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন ৮ম খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একজন বিশিষ্ট আমিল। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক উনার মসনদ মুবারক-এ অধিষ্ঠিত, ওই সময় উনার খিলাফত মুবারক উনার অধীনে শাম দেশের একজন বিশ্বস্ত কাতিব ছিলো। সে শাম দেশের এক এলাকায় এমন এক ব্যক্তিকে কাজে নিয়োগ দিলো, যার পিতা ছিলো যিন্দিকের অভিযোগে অভিযুক্ত।
এই সংবাদটি যখন আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমত মুবারক-এ পেশ করা হলো, তখন তিনি সেই কাতিবকে আহ্বান করলেন এবং বললেন, তোমার ধারণা কী, তোমার কী হলো যে, সম্মানিত মুসলমান উনাদের এলাকাসমূহের এক এলাকায় এমন এক ব্যক্তিকে কাজে নিয়োগ দিয়েছো, যার পিতা যিন্দিকের অভিযোগে অভিযুক্ত? সে বললো, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমীরুল মু’মিনীন উনাকে ইছলাহ হাদিয়া করুন, এতে আমার দোষ কী! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি তো মুশরিক ছিলেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! অন্য বর্ণনায় এসেছে, তখন ওই ব্যক্তি বললো, আমি যাকে কাজে নিয়োগ দিয়েছি (তার পিতা যিন্দিক) তাতে তার সমস্যা কী? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি তো কাফির ছিলেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! এতে তো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন ক্ষতি হয়নি। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! এই কথা শুনে হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত কঠিনভাবে রেগে গেলেন, তার প্রতি কঠিন অসন্তুষ্ট হলেন। হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হায়! অতঃপর তিনি নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। (তিনি হতভম্বহয়ে গেলেন।) তারপর তিনি মাথা মুবারক উত্তোলন করে বললেন, আমি কি তার জিহ্বা কেটে দিবো না? আমি কি তার হাত ও পা কেটে দিবো না? আমি কি তার গর্দান উড়িয়ে দিবো না? অতঃপর তিনি তাকে বললেন, আমি যতদিন দুনিয়ার যমীনে অবস্থান করবো, তুমি সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার অধীনে কোন কাজ করতে পারবে না। অপর বর্ণনায় এসেছে, অতঃপর তিনি বললেন, তুমি এই দৃষ্টান্ত দিচ্ছো, এটা বলে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে সাথে সাথে বরখাস্ত করে দিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (মাসালিকুল হুনাফা লিস সুয়ূত্বী ৩৭ পৃ., আল হাওই লিস সুয়ত্বী ২/২৮০, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/২৬১, তারীখুল ইসলাম লিয যাহাবী ৭/৯৮, ইবনে আসাকির, আল ওয়াফী বিল ওফাইয়াত ৫/১২৬, যম্মুল কালাম ও আহলুহু ৫/৩৩ ইত্যাদি)

0 Comments: