সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল এর মাধ্যমেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রকৃত শান মুবারক উনার বহি:প্রকাশ ঘটে ২৯

সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল এর মাধ্যমেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রকৃত শান মুবারক উনার বহি:প্রকাশ ঘটে
=================================================
আলেম নামধারী অনকে জহেল প্রকৃতির লোকেরা বলে থাকে  ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ নাকি নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানে বাড়াবাড়ি হয়ে যায়। আল্লাহকে ডাকার পরিবর্তে নাকি নবীজী( ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে ডাকা এবং উনার সাহায্য চাওয়া পর্যন্ত রূপ নিতে পারে। এবং এই বিষয়ে তারা একটা হাদীস শরীফে উল্লেখ করে যেমন নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন  “আমার এমনভাবে প্রশংসা করো না যেমনটি খ্রীস্টানরা মরিয়মের পুত্রকে করে থাকে। কেননা আমি তাঁর বান্দাহ মাত্র। সুতরাং [আমার সম্পর্কে] বল: আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল।” (বুখারী)
মূলত এই বিষয়ে তাদের বক্তব্যে উল্লিখিত হাদীস শরীফ হতে এটা সুস্পষ্ট যে, খ্রীষ্টানরা হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক সাব্যস্ত করতো, যা একটি মহা শিরক। আর তাই উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যাতে এধরনের গর্হিত কাজে লিপ্ত না হয়ে পড়ে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক সাব্যস্ত না করে, সেজন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উম্মতকে সতর্ক-সাবধান করে দিয়েছেন। কিন্তু এর দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন বন্ধের কিংবা উনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা না করার দলীল পেশ করা মূর্খতা বৈ কিছুই নয়।
কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনিই ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّا اَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا ◌ لِّتُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَتُعَزِّرُوْهُ وَتُوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَاَصِيْلًا ◌
অর্থ: “হে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে। অতএব, তোমরা (উম্মতরা) মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি ঈমান আনো এবং তোমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করো, সম্মান মুবারক করো ও সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ সদা-সর্বদা উনার ছানা-ছিফত মুবারক করো।” (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮-৯)
সুতরাং উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দায়িমীভাবে সম্মান মুবারক করা মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
حَدَّثَتْنِي حَضْرَتْ مَيْمُونَةُ بِنْتُ الْـحَارِثِ زَوْجُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ بَاتَ عِنْدَهَا فِي لَيْلَتَهَا فَقَامَ يَتَوَضَّاُ لِلصَّلاةِ فَسَمِعَتْهُ يَقُوْلُ فِي مُتَوَضَّئِهِ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ ثَلاثًا نُصِرْتَ نُصِرْتَ ثَلاثًا فَلَمَّا خَرَجَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ سَـمِعْتُكَ تَقُولُ فِي مُتَوَضَّئِكَ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ ثَلاثًا نُصِرْتَ نُصِرْتَ ثَلاثًا كَاَنَّكَ تُكَلِّمُ اِنْسَانًا فَهَلْ كَانَ مَعَكَ اَحَدٌ؟ فَقَالَ هَذَا رَاجِزُ بَنِي كَعْبٍ يَسْتَصْرِخُنِي وَيَزْعُمُ اَنَّ قُرَيْشًا اَعَانَتْ عَلَيْهِمْ بَنِي بَكْرٍ
অর্থ : “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছালিছ ‘আশারা আলাইহাস সালাম বর্ণনা করেন, একরাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। তিনি যথারীতি তাহাজ্জুদ নামায আদায়ের জন্য উঠলেন এবং অযু মুবারক করার জন্য গমন করলেন। অতঃপর আমি শুনতে পেলাম যে, তিনি অযুখানায় তিনবার “লাব্বাইক” (আমি তোমার কাছে উপস্থিত) এবং তিনবার “নুছিরতা” (সাহায্য করা হল) বললেন। যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অযু মুবারক করে বের হলেন তখন আমি বললাম, ইয়া রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি শুনতে পেলাম- আপনি অযুখানায় তিনবার ‘লাব্বাইকা’ এবং তিনবার ‘নুছিরতা’ বলেছেন। যেন আপনি কোন মানুষের সাথে কথা বলছিলেন। আপনার কাছে আমি ব্যতীত কেউ ছিলেন কি? তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন, হযরত রাজিয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার কাছে ফরিয়াদ করছেন। কুরাইশরা উনার উপর বনী বকর গোত্রকে লেলিয়ে দিয়েছে।” (মু’জাম আছ ছগীর লি তাবরানী, ২য় খ-, হাদীছ শরীফ নং ৯৬৮, মু’জাম আছ কবীর লি তাবরানী, ২৩ খ-, ৪৩৩ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং ১০৫০)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থানরত হযরত রাজিয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাহায্যের ফরিয়াদ করেছেন। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে হযরত রাজিয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ফরিয়াদ শুনেছেন এবং উনাকে সাহায্য করেছেন। সুব্হানাল্লাহ!
সুতরাং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। সুতরাং উনার প্রতি সম্মানের বাড়াবাড়ি হয়ে যায়, আল্লাহকে ডাকার পরিবর্তে নবীজীকে ডাকা এবং উনার সাহায্য চাওয়া পর্যন্ত রূপ নিতে পারে’ এ ধরনের উক্তি করা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা এ ধরনের কথা বলা সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান মর্যাদা মুবারক উনার খিলাফ। 

0 Comments: