৫১৮ নং- সুওয়াল : বর্তমানে আমাদের দেশে এমন কোন রাজনৈতিক দল আছে কি? যারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ মুতাবিক আন্দোলন করছে? দলীল-আদীল্লাহসহ জানতে চাই।


সুওয়াল : বর্তমানে আমাদের দেশে এমন কোন রাজনৈতিক দল আছে কি? যারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ মুতাবিক আন্দোলন করছে? দলীল-আদীল্লাহসহ জানতে চাই।

জাওয়াব : বর্তমানে আমাদের দেশে যতগুলি দল আন্দোলন করছে, তা দ্বীন ইসলাম উনার নাম দিয়ে হোক, আর দ্বীন ইসলাম উনার নাম ব্যতীতই হোক, তারা প্রত্যেকেই গণতন্ত্র ভিত্তিক আন্দোলন করছে। গণতন্ত্র ইসলাম সম্মত নয়। ইসলামের নাম দিয়ে যারা গণতন্ত্র করে, তারা প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নয়। অর্থাৎ গণতন্ত্র সম্পর্কে তাদের তাহক্বীক নেই। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ان الدين عند الله الاسلام.
অর্থ : নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম।” (পবিত্র সূরা ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ, ১৯)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা এ কথাই স্পষ্ট হচ্ছে যে, বান্দারা তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক প্রতি ক্ষেত্রেই দ্বীন ইসলাম মেনে চলবে। এ প্রসঙ্গে বলা হয় যে, ‘হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদিন হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, ‘হে আল্লাহ পাক উনার রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা ইহুদীদের নিকট থেকে কিছু কথা শুনি, যাতে আশ্চর্য্যবোধ করি। তার থেকে কিছু কি আমরা লিখে রাখব? তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে হযরত ছাহাবয়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! আপনারাও কি ইহুদী-নাসারাদের মত (দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে) দ্বিধাগ্রস্থ রয়েছেন? নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ-উজ্জল দ্বীন নিয়ে এসেছি। এমন কি ইহুদীদের নবী হযরত মুসা আলাইহিস সালামও যদি জীবিত থাকতেন, তবে উনার উপরও আমার দ্বীন মানা ওয়াজিব হতো।” (আহমদ, বায়হাক্বী)
অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা ইমরান শরীফ উনার ৮৫নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেন, “যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম বা নিয়ম-নীতি তালাশ (অনুসরণ) করে, তার থেকে তা কখনই গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থের অন্তর্ভূক্ত হবে।
অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে ওহীর মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি নাযিলকৃত দ্বীন, যার শারেবা আইন-কানুন প্রণেতা হচ্ছেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যার মধ্যে কোন জ্বীন-ইনসানের পক্ষে কোন আইন-কানুন পরিবর্তন-পরিবর্ধন, সংশোধন-সংযোজন করার এবং দ্বিমত প্রকাশ করার কোন অবকাশ নেই। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
ماكان المومن ولا مؤمنة اذا قضى الله ورسوله امرا ان يكون لهم الخيرة من امرهم ومن يعص الله ورسوله فقد ضل ضللا مبينا.
অর্থ : কোন মুমিন নর-নারীর জন্য জায়িয হবেনা, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে ফয়সালা করেছেন, সেই ফয়সালার মধ্যে স্বীয়মত বা ইখতিয়ার পেশ করা। (যে ব্যক্তি স্বীয় মত পেশ করলো, সে নাফরমানী করল) আর যে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাফরমানী করে, সে প্রকাশ্য গোমরাহীতে (বিভ্রান্তিতে) গোমরাহ বা বিভ্রান্ত।” (পবিত্র সুরা আহযাব শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ, ৩৬)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেন,
من لم يحكم بما انزل الله فالئك هم الكافرون.
অর্থ : মহান আল্লাহ পাক তিনি যা নাযিল করেছেন, (শরীয়ত) সে অনুযায়ী যে হুকুম (আদেশ-নিষেধ) করে না, সে কাফির।
মুসলমান শব্দের অর্থ হচ্ছে-
كردن نهادن يطاعت
অর্থ : আনুগত্যতার সাথে আত¦সমর্পণ করা।
অর্থাৎ যে মুসলমান হবে সে মহান আল্লাহ পাক উনার মত ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হবে। এর খিলাফ কোন কাজ করতে পারবে না।
গণতন্ত্র শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- গণ অর্থ জনগণ, আর তন্ত্র অর্থ নিয়ম-নীতি ও পদ্ধতি। প্রচলিত অর্থে- জনগণের দ্বারা প্রবর্তিত নিয়ম-কানুন বা সরকার পদ্ধতি ও শাসন ব্যবস্থা, যা জনগণের খেয়াল খুশী মতই পরিচালিত হয়। আর এই জনগণ ইহুদী-নাসারা (খৃষ্টান), হিন্দ-বৌদ্ধ, মজুসী (অগ্নি উপাসক), মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীন, কাদিয়ানী-শিখ, পুরুষ ও মহিলা যে কেউ হতে পারে। অর্থাৎ গণতন্ত্র মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ হতে ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত নয় বরং জনগণের দ্বারা প্রণীত পদ্ধতি।
অতএব কোন ব্যক্তির পক্ষেই দ্বীন ইসলাম উনার নাম দিয়ে গণতন্ত্র করা জায়িয নেই। দ্বীন ইসলাম উনার নাম দিয়ে যদি কেউ আন্দোলন করতে চায়, তবে তার উচিৎ খিলাফত আলা মিনহাযিন নুবুওওয়াহ অর্থাৎ নুবুওওয়াতের দৃষ্টিতে খিলাফতের জন্য কোশেশ করা। দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে সমস্ত দলগুলিই গণতন্ত্র ভিত্তিক আন্দোলন করছে, যা শরীয়ত সম্মত নয়।

আবা-৩০

0 Comments: