একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১০৩

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইসমে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

রউফুর রহীম, রহমাতুল উম্মাহ, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে একই বিষয়ে একই সময়ে পিতা-পুত্রের সাক্ষাৎ ও নিয়ামত লাভ

এমন নছীহত শুনে বেদনা-বিমুগ্ধ অন্তরে হযরত আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি অবনত মস্তকে হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার ক্বদম মুবারকে লুটিয়ে পড়লেন এবং বাইয়াত হওয়ার জন্য বিনীত আরজু পেশ করলেন। ক্ষণিক পূর্বের কারামত প্রত্যাশী হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার এমন ভাবান্তরে সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বাইয়াত করালেন এবং ফয়েজ-সমৃদ্ধ করে দিলেন। উনার মাধ্যমে হযরত আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি ক্রমান্বয়ে এতোই উঁচু মাক্বামে অধিষ্ঠিত হলেন যে, তিনি আল্লাহ পাক-উনার লক্ষ্যস্থলে পরিণত হলেন। আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব ওলী অভিধায় জগৎ জুড়ে তাঁর সুনাম বিস্তৃত ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলো। (সুবহানাল্লাহ)

আজমীর শরীফে চিশ্তিয়া তরীক্বার ইমাম, কতুবুল আক্তাব, সুল্তানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ, হযরত খাজা সাইয়্যিদ মুঈনুদ্দীন হাসান চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপন অনুপম কারামত-উনার বহিঃপ্রকাশ

ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফদ্বালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখ্রুল আওলিয়া, লিসানুল হক্ব, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনার কামিয়াবীর সোপান ও কারামত উপলদ্ধির জন্য উপরের আলোচনা একান্ত সহায়ক। একই সঙ্গে তাছাউফ-উনার সংশ্লেষ বিহীন প্রগাঢ় ইল্মও যে অসার ও মূল্যহীন এবং আল্লাহ পাক ও তাঁর প্রিয়তম হাবীব, মাশুকে মাওলা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মারিফাত ও মুহব্বত হাছিলের অন্তরায় তা জানা গেছে। আরো জানা গেছে, সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মুবারক ছোহ্বতের অভাবে ইল্মে ফিক্বাহ ও হাদীছ শাস্ত্রে জগৎ বরেণ্য সূক্ষ্মদর্শী আলিম, হযরত আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি অজ্ঞানতা ও বিফলতার তিমিরে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। আল্লাহ পাক-উনার লক্ষ্যস্থল মাহবুব ওলীগণের মুবারক ছোহ্বত হাছিলের মাধ্যমে উনাদের নির্দেশিত পন্থায় সুন্নত অনুসরণের অভ্যস্ততায় যে অতুলনীয় কামিয়াবী অর্জিত হয়, প্রকৃত অর্থে তারই নাম কারামত

এমন কারামত-সমৃদ্ধ আল্লাহ পাক-উনার খাছ লক্ষ্যস্থল বিশিষ্ট ওলীগণের পরস্পরের সঙ্গে অবিরাম নিবিড় নিস্বত (সম্পর্ক) বিদ্যমান থাকে। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে এ সম্পর্কের সার্বক্ষণিক বিদ্যমানতা আদিকাল (রোজ আযল) থেকে। উনাদের পারস্পরিক সম্বন্ধের অটুট বন্ধন যেমন জীবদ্দশায়, তেমন কবরেও। তাই এ যোগাযোগ, ভাব বিনিময়, লেনদেন ও আলাপন স্থুল বিবেচনায় পরোক্ষ মনে হলেও মূলত: তাপ্রত্যক্ষ। প্রয়োজনে জীবিতগণ কখনো ছুটে যান কবরবাসীগণের কাছে, আবার কবরবাসীগণ কখনো যান জীবিতগণের সান্নিধ্যে। ইল্মে তাছাউফে অদীক্ষিতদের কাছে বিষয়টি অগম্য। তাই অবিশ্বাস্য। হাদীছ শরীফে উনার রহস্য এভাবে বিধৃত হয়েছেঃ

الا رواح جنود مجندة فما تعارف منها ائتلف وما تناكر منها اختلف.

অর্থঃ রূহসমূহ লশ্করের মতো একত্রিত রয়েছে। তাদের মধ্যে যারা আদিকালে (রোজ আযল) পরস্পরে মিলিত হয়ে যায়, দুনিয়াতেও তারা একে অপরের  সঙ্গে মুহব্বতের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।  আর যে সব রূহ অপরিচিত থেকে যায়, তারা পরস্পর পৃথক থাকে।” (বুখারী ও মুসলিম)

বলার অপেক্ষা রাখে না, ওলীআল্লাহগণের রূহ আল্লাহ পাক-উনার সদয় ইচ্ছায় আদিকালে পরস্পর মিলিত থেকে আরশের চারদিক প্রদক্ষিণ করেন। উনাদের জানাজানি ও পরিচয়ের ঘনিষ্ঠতা আদিকালের। অন্য এক হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছেঃ দুজন মুমিনের আত্মা একমাসের দূরত্ব থেকে এসে মিলিত হয়, অথচ তারা (দুনিয়ায়) একে অপরকে দেখেনি।

হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গায্যালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বাস্তব এক ঘটনায় পারস্পরিক মুহব্বতের সারবত্তা বর্ণনা করেছেন। তাহলোঃ পবিত্র মক্কা শরীফে এক ভাঁড় (ব্যাঙ্গ-পরিহাসে পটীয়সী) মহিলা ছিল। তার ভাঁড়ামীতে অনেকেই হাসতো। সে একবার মদীনা শরীফে গেলো এবং সেখানে তারই মতো এক ভাঁড় মহিলার আতিথ্য গ্রহণ করলো। ঘটনাচক্রে একদিন সে উম্মুল মুমিনীন, হযরত আয়িশা ছিদ্দিকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহা-উনার কাছে গেলো। সেখানে সে এমন সব কথা বলতে থাকলো, তাতে হযরত আয়িশা ছিদ্দিকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হেসে ফেল্লেন। জানতে চাইলেনঃ তোমার নিবাস কোথায়?” ভাঁড় মহিলার জবাবে জানা গেলো, অদূরেই এমন এক মহিলার গৃহে তার বসবাস, যে মহিলা তারই মতো পারঙ্গম ভাঁড়। উম্মুল মুমিনিন, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাকে বললেনঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য বলেছেন, আদিকালে (রোজ আযল) আত্মাসমূহ লশ্করের ন্যায় একত্রিত (পরিচিতির পরিণতিতে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে) হয়েছে।অর্থাৎ যার সাথে যার, তার সাথে তার (বন্ধুত্ব)। (চলবে)

আবা-১৬৩

0 Comments: