একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৫১

 

ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে  ইসমে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদুর রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

মুর্শিদ ক্বিবলা উনার বিরহে অতলান্ত মনোবেদনা         

আল্লাহ পাক উনার আদ্দিষ্ট সকল কাজ সমাপন শেষে মুর্শিদ ক্বিবলা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। ইন্তিকালে ওলীগণের কোন ক্ষতি নেই। কারণ, ইন্তিকালের মাধ্যমেই জান্নাতুল ফিরদাউসে অবস্থান এবং আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে কাঙ্খিত দিদারের পথ অবারিত হয়। হযরত আব্দুল্লাহ বিন যাকারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “ যদি আল্লাহ পাক একশত বছর জীবিত থেকে উনার ইবাদত-বন্দিগীতে মশগুল থাকতে অথবা আজই মৃত্যুবরণ করতে আমাকে স্বাধীনতা দিতেন, তবে আজই আমি মৃত্যুবরণ করাকে শ্রেয় মনে করতাম। যেহেতু মৃত্যুর মাধ্যমেই আমি আল্লাহ পাক উনার দিদার, উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আল্লাহ পাক উনার মাহবুব বান্দাগণের সঙ্গে অতি তাড়াতাড়ি মিলিত হবার সুযোগ পেয়ে যাবো।ইন্তিকালের জন্য অনুক্ষণ প্রস্তুত থেকে আখিরাতে আল্লাহ পাক উনার দিদার এবং ছহিবে শাফায়াতে কুবরা, মাশুকে মাওলা, হাবীবে আযম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে মুবারক ছোহবত লাভের এমন দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা মাহবুব ওলীগণের পক্ষেই সম্ভব। সাধারণ বান্দার পক্ষে কল্পনা মাত্র।

          আল্লাহ পাক আপন ইচ্ছায় উনার এক প্রিয় বান্দাকে দায়িত্ব পালন শেষে নির্ধারিত সময়ে নিজের দিকে ডেকে নিয়েছেন। সকল ইচ্ছা ও ইখতিয়ারের মালিক মহান আল্লাহ পাক। উনার সদয় ইচ্ছার সঙ্গে বান্দার ইচ্ছার অনাবিল সংযোগ সাধিত না হলে বন্দিগীর ভিত্তি বিনষ্ট হয়। ওলীয়ে মাদারজাদ, ফখরুল আউলিয়া, লিসানুল হক্ব, আওলাদুর রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনার ও নিজস্ব কোন মত বা ইচ্ছা নেই। সকল বিষয়েই তিনি আল্লাহ পাক উনার অভিপ্রায়ের সঙ্গে নিজ মন ও মনন পরিপূর্ণরূপে মিলিয়ে দিয়েছেন। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বিষাদ, যন্ত্রণা-সান্তনা, দারিদ্র-প্রাচুর্য, আহার-অনাহারসহ উনার যাবতীয় বিষয় এবং মানবিক প্রবৃত্তি ও প্রত্যাশা আল্লাহ পাক উনার সদয় অভিপ্রায়ে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত। তাই অপার বেদনা ও যন্ত্রণাকাতরতার মাঝেও প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ইন্তিকালকে তিনি মেনে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

          মুর্শিদ ক্বিবলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ বিচ্ছিন্নতার বেদনা সীমাহীন। সবাইকে হারাতে হচ্ছে। একে একে সকল মুর্শিদ ক্বিবলাই বিদায় নিলেন। অবশেষে যাঁর মুবারক সন্নিধানে অন্তরের প্রচ্ছন্ন ইচ্ছাগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে পল্লবিত হয়ে আল্লাহ পাক উনার সদয় মর্জির সঙ্গে পরিপূর্ণরূপে সমর্পিত হয়েছিল, সেই মুর্শিদ ক্বিবলা হাদিউস সাক্বালাইন, শাইখুল ইসলাম, ইমামুল হুদা, ক্বাইয়্যূমুয যামান, কুতুবুল আলম, নায়িবে মুজাদ্দিদ, খলীফাতুল্লাহ, বড় হুযূর ক্বিবলা, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা আবু নছর মুহম্মদ আব্দুল হাই ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও আর নেই। নিদারুণ ব্যথা। এ ব্যথার প্রকৃতি ও পরিধি অনভিজ্ঞ জন বুঝবে কি করে! প্রত্যক্ষ ও গোপন মুয়ামেলা ও ছোহবত লাভের জন্যে এখন আর কাকে পাওয়া যাবে? কোথায় পাওয়া যাবে? বেদনার গহীন আবর্তে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম এখন নিজেকে গভীরভাবে পরখ করে দেখছেন। দেখছেন যে, বর্তমান নৈকট্য সোপান থেকে আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে উনার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবার কোন কারণই আর অবশিষ্ট নেই।

          মুবারক জীবনব্যাপী মুর্শিদ ক্বিবলার যে কর্মপরিধি, তা ছিল বিপুল, বিশাল। দেশ-বিদেশে তিনি অসংখ্য মুরীদ ও অনেক খলীফা রেখে গেছেন। স্তর ভেদে উনারা সকলেই কামিয়াব। আল্লাহ পাক উনার সদয় মর্জিতে মুর্শিদ ক্বিবলার মুবারক সিলসিলা ক্রমবর্ধিষ্ণুরূপে আপন গতিতে প্রবাহমান। যে সব খলীফাগণ নিয়ামতলাভে পরিপূর্ণরূপে ধন্য ও কামিয়াব হয়েছেন, আফযালুল ইবাদ, কুতুবুয যামান, মাদারজাদ ওলী, আওলাদুর রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালামউনাদের মধ্যে বিশিষ্টজন। কারণ, মুর্শিদ ক্বিবলা উনার অন্তরঙ্গ খলীফা হিসেবে লব্ধ নিয়ামতের নির্যাস অকাতরে উনাকেই দান করেছেন। এই মাদারজাদ ওলী প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলার মুবারক ছোহবতে পরিপূর্ণ কামিয়াবী হাছিল করেছেন। কিছু আর এখন হারাবার নেই। আল্লাহ পাক উনার সন্নিধানে, এখন কেবলই উনার অগ্রযাত্রা। কিন্তু যে মুর্শিদ ক্বিবলার উছীলায় এতো পাওয়া, উনাকে ছাড়া তো জীবন দুর্বিষহ। (অসমাপ্ত)

আবা-১১০

0 Comments: