বাদশাহ মুজাফর রহমতুল্লাহি আলাইহি এর পুর্ব থেকেই ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রচলন ছিল

বাদশাহ মুজাফর রহমতুল্লাহি আলাইহি এর পুর্ব থেকেই ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রচলন ছিল
=================================================
অনেকে বলে থাকে বাদশাহ মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিই নাকি সর্বপ্রথম ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন শুরু করেন অথচ উনি সর্বপ্রথম রাষ্ট্রিয়ভাবে ব্যাপক জাকজমকের সাথে পালন করা শুরু করেন কিন্তু ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন এর পুর্ব  প্রচলন ছিল
যেমন আজ থেকে প্রায় ৯০০ বছর পুর্বে ওমর বিন মুল্লা মুহম্মদ মউসুলি রহমতুল্লাহি আলাইহি ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিবসকে নিয়মিতভাবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে জারী রাখার প্রচলন চালু করেন । উনার অনুসরনে ইসলামের অমর সিপাহসালার সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বোনজামাই আরবলের বাদশাহ মালিক আবু সাঈদ মুজাফফর আল দীন (১১৫৪- ১২৩২ খৃঃ) রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যপক প্রচার প্রসার ও জাকজমকের সাথে ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুষ্ঠান পালনের প্রচলন করেন ।  ইবনে খালকান আরবালি শাফেয়ী উক্ত অনুষ্ঠানের সাক্ষী।
‘তারিখ-ই-মারাত আয জামান” এর মতে ঐ অনুষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা খরছ করা হত । হিজরি ৭ম শতকের শুরুতে সে যুগের বিখ্যাত ওলামা ও প্রসিদ্ধ ফোজালাগণের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব আবুল খাত্তাব উমর বিন হাসান দাওহিয়া ক্বলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপর একটি বই লিখেন যার নাম দেন “আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর”।
ষষ্ঠ হিজরী শতকে মিশরের সুলতান পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করতেন। এ দিবসে হাজার হাজার স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করতেন। যার সাক্ষী হলেন হযরত ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি। সুলতান আবূ হামু মুসা তালামসানী এবং পূর্বেকার আন্দালুস ও আকসার শাসকেরা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতেন। আবদুল্লাহ তন্সী সুম্মা তালামসানী এ উদযাপনের উপর বিস্তারিত একটি কিতাব লিখেছেন যার নাম দিয়েছেন “রাহ আল আরওয়াহ”। (সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সিরাতি খাইরিল ইবাদ লি মুহম্মদ বিন আলী ইউসুফ দামিস্কী; আদ্দূররুল মুনাজ্জাম ফি হুকমী মাওলিদিন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম; আনওয়ারুস সাতিয়া ১৩০৭ হিজরী, পৃষ্ঠা ২৬১; ওয়াফইয়াতুদ দায়ান আনবা আবনাউয যামান, কায়রো; মুহাম্মদুর রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, লেখক : আল্লামা মুহম্মদ রাজা মিস্র্রী, লাহোর, পৃষ্ঠা ৩৩)
২. আজ থেকে প্রায় ৯০০ বছর আগে হাফিজুল হাদীছ আবুল ফয়েয হযরত আব্দুর রহমান ইবনুল জাওযী (১১১৬-১২০১ খৃঃ)  রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন,
لَازَالَ اَهْلُ الْـحَرَمَيْنِ الشَّرِيْفَيْنِ وَالْـمِصْرِ وَالْيَمَنِ وَالشَّامِ وَسَائِرِ بِلَادِ الْعَرَبِ مِنَ الْـمَشْرِقِ وَالْـمَغْرِبِ يَـحْتَفِلُوْنَ بِـمَجْلِسِ مَوْلِدِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَفْرَحُوْنَ بِقُدُوْمِ هِلَالِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ وَيَغْتَسِلُوْنَ وَيَلْبَسُوْنَ الثّيَابَ الْفَاخِرَةَ وَيَتَزَيّـِنُوْنَ بِاَنْوَاعِ الزّيْنَةِ وَيَتَطَيّـِبُوْنَ وَيَكْتَحِلُوْنَ وَيَأْتُوْنَ بِالسُّرُوْرِ فِىْ هٰذِهِ الْاَيَّامِ وَيَبْذُلُوْنَ عَلَى النَّاسِ بِـمَا كَانَ عِنْدَهُمْ مِنَ الْـمَضْرُوْبِ وَالْاَجْنَاسِ وَيَهْتَمُّوْنَ اِهْتِمَامًا بَلِيْغًا عَلَى السّمَاعِ وَالْقِرَاءَةِ لِـمَوْلِدِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَنَالُوْنَ بِذَالِكَ اَجْرًا جَزِيْلًا وَفَوْزًا عَظِيْمًا.
অর্থ : “হারামাইন শরীফাইন, মিশর, ইয়ামেন, সিরিয়া এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত আরবের সকল শহর ও নগরের অধিবাসীদের মধ্যে অব্যাহতভাবে এ নিয়ম চলে আসছে যে, তারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠান করেছেন। পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার নতুন চাঁদের আগমনে আনন্দিত হন, গোসল করেন, দামী পোশাক পরিধান করেন, নানা প্রকার সাজ-সজ্জা করেন, সুগন্ধি ব্যবহার করেন, সুরমা লাগান, এই দিনগুলোতে আনন্দ উৎসব করেন, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ ও শ্রবণের ব্যবস্থা করে অধিক ছাওয়াব এবং বিরাট সাফল্য অর্জন করেন। উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করে যে নিরাপত্তা ও স্বস্তি, জীবিকার মানোন্নয়ন, শিশু ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং শহরের শান্তি ও উনাদের সাফল্য অর্জন করেছেন তা প্রকাশ করতেন।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান লি শেখ ইসমাইল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি- ৯ম খ-, পৃষ্ঠা ৫৬; মীলাদুল উরুস- উর্দু “বয়ান-ই-মিলাদুন নবী”, পৃষ্ঠা ৩৪-৩৫, লাহোর; দুররুল মুনাজ্জাম, পৃষ্ঠা ১০০-১০১; মীলাদুন নবী, পৃষ্ঠা ৫৮)
সুতরাং ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতাকারীদের বক্তব্য ভুল বলে প্রমাণিত হল।