পবিত্র ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ হচ্ছে কুল-কায়িনাতের সকল রাত ও দিনের চেয়েও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি মর্যদাসম্পন্ন ও ফযীলতপূর্ণ রাত ও দিন মুবারক । সুবহানআল্লাহ !

পবিত্র ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ হচ্ছে কুল-কায়িনাতের সকল রাত ও দিনের চেয়েও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি মর্যদাসম্পন্ন ও ফযীলতপূর্ণ রাত ও দিন মুবারক । সুবহানআল্লাহ !
=================================================
পবিত্র ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ হচ্ছে কুল-কায়িনাতের সকল রাত ও দিনের চেয়েও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি মর্যদাসম্পন্ন ও ফযীলতপূর্ণ রাত ও দিন মুবারক। সুবহানআল্লাহ !
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّا اَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সম্মানিত কাউছার বা সমস্ত ভালাই অর্থাৎ সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয়গুলো হাদিয়া মুবারক করেছি।” সুবহানাল্লাহ!
(সম্মানিত সূরা কাওছার শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ: ১)
এই সম্মানিত কাওছার শরীফ উনার লক্ষ-কোটি ব্যাখ্যা মুবারক। তার মধ্যে একখানা ব্যাখ্যা মুবারক হচ্ছে, ‘খইরে কাছীর’ তথা সমস্ত প্রকার ভালাই। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত ভালাই তথা সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয়গুলো হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
অন্যদিক থেকে উনার সাথে যে বিষয় মুবারকগুলো সম্পৃক্ত হয়েছেন, সে বিষয় মুবারকগুলো সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে গেছেন। সুবহানাল্লাহ!
যার কারণে এই ব্যাপারে সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজমা করেছেন যে,
اِنَّ التُّرْبَةَ الَّتِىْ اِتَّصَلَتْ اِلٰى اَعْظُمِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَفْضَلُ مِنَ الْاَرْضِ وَالسَّمَاءِ حَتَّى الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ.
অর্থ: ‘নিশ্চয়ই নূরে মুজসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জিসম মুবারক উনার সাথে এক মুহূর্তের তরেও স্পর্শ মুবারক করেছেন, যেই মাটি, ধূলি-বালি তথা পদার্থ-বস্তু যা কিছুই হোক না কেন, তাই মহাসম্মানিত ও বরকতময় এবং ফযীলতপূর্ণ হয়ে গিয়েছেন। আসমান-যমীন; এমন কি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ কোটিগুণ বেশি। সুবহানাল্লাহ!
অন্য ইজমা মুবারক-এ বলা হয়েছে,
فَاِنَّهٗ اَفْضَلُ مُطْلَقًا مِنَ الْكَعْبَةِ وَالْكُرْسِىّ حَتّٰى الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ.
অর্থ: ‘নিশ্চয়ই নূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ মুবারক-এ যা কিছু এসেছেন তা অবশ্যই সম্মানিত কা’বা শরীফ, সম্মানিত কুর্সী শরীফ; এমনকি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি ফযীলতপ্রাপ্ত, সম্মানিত, শ্রেষ্ঠ।’ সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ মুবারক-এ যা কিছু এসেছেন তা আসমান-যমীন, সম্মানিত কা’বা শরীফ, সম্মানিত কুর্সী শরীফ, মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে যা কিছু রয়েছে; এমনকি সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি পবিত্র, ফযীলতপ্রাপ্ত, সম্মানিত এবং শ্রেষ্ঠ।’ সুবহানাল্লাহ!
এখন বলার বিষয় হচ্ছে, সাধারণ মাটি, ধূলি-বালি যার কোনো ক্বদর নেই; কিন্তু নূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত স্পর্শ মুবারক-এ আসার কারণে উক্ত মাটি, ধূলি-বালির মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব, পবিত্রতা যদি আসমান-যমীন, কা’বা শরীফ, কুর্সী শরীফ এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি হয়ে যায়, তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয় মুবারক উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কত বেমেছাল সেটা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
এই কারণেই যিনি সম্মানিত হাম্বলী মাযহাব উনার সম্মানিত ইমাম হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্মানিত ফতওয়া মুবারক দিয়েছেন যে, ‘সম্মানিত লাইলাতুর রগইব শরীফ’ তথা সম্মানিত রজব মাস উনার পহেলা জুমুয়াহ শরীফ উনার রাত্রি মুবারক উনার মর্যাদা সম্মানিত শবে ক্বদর উনার থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি। সুবহানাল্লাহ! কেননা সেই সম্মানিত রাত্রি মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুদরতীভাবে উনার সম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এই থেকে প্রমাণিত হয় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় বা বস্তু সেটা মাটি হোক বা দিন তারিখ হোক সকল বিষয়ই সমস্ত কিছুর চাইতে শ্রেষ্ট ও সম্মানিত।
সেটাই হযরত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাদের স্ব স্ব কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে আলোচনা মুবারক করেছেন। যেমন হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ শরীফ’ উনার মধ্যে বলেন,
اِنّهٗ وُلِدَ لَيْلًا فَتِلْكَ اللَّيْلَةُ اَفْضَلُ مِنْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ بِلَا شُبْهَةٍ.
অর্থ: ‘নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেই সম্মানিত রজনী মুবারক সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, নিঃসন্দেহে সেই সম্মানিত রজনী মুবারক ‘লাইলাতুল ক্বদর উনার থেকে অধিক (লক্ষ-কোটিগুণ বেশি) ফযীলতপূর্ণ।’
(মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ শরীফ ৩৯ পৃষ্ঠা)
আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে আবী বকর ইবনে আব্দুল মালিক কুসত্বলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (বিছাল শরীফ : ৯২৩ হিজরী শরীফ) বলেন,
اُجِيْبُ بِاَنَّ لَيْلَةِ مَوْلِدِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَفْضَلُ مِنْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ مِنْ وُجُوْهٍ ثَلَاثَةٍ.
অর্থ: ‘আমি জাওয়াব দিবো যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেই মহাসম্মানিত রজনী মুবারক-এ সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন তথা সম্মানিত ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ তিন কারণে ক্বদরের রজনী থেকেও অত্যধিক (লক্ষ-কোটিগুণ) বেশি সম্মানিত, ফযীলতপ্রাপ্ত, শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। সুবহানাল্লাহ!
(আল মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ বিল মিনাহিল মুহম্মদিয়্যাহ শরীফ ১/৮৮, শরহুয যারক্বনী আলাল মাওয়াহিব)
হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতল্লাহি আলাইহি তিনি উনার লিখিত ‘আল মাওলিদুর রওই শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
لَيْلَةُ مَوْلِدِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَفْضَلُ مِنْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ.
অর্থ: ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেই মহাসম্মানিত রজনী মুবারক-এ সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন তথা সম্মানিত ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ ক্বদরের রজনী থেকেও অত্যধিক (লক্ষ-কোটিগুণ) বেশি ফযীলতপূর্ণ, বরকতপূর্ণ, মর্যাদাসম্পন্ন।’ সুবহানাল্লাহ! (আল মাওলিদুর রওই শরীফ-৯৯)
হযরত কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল বারাহীনুল ক্বিত্বইয়্যাহ ফী মাওলিদি খইরিল বারিয়্যাহ’ উনার মধ্যে বলেন,
فَبِهٰذَا الْوَجْهِ لَوْ جُعِلَتْ لَيْلَةُ الْـمِيْلَادِ اَفْضَلَ مِنْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ لَكَانَ اَلْيَقَ وَاَحْرٰى وَقَدْ صَرَحَ بِهِ الْعُلَمَاءُ رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالٰى.
অর্থ: “এই কারণে যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের রজনী মুবারক উনাকে তথা সম্মানিত ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ উনাকে শবে ক্বদর থেকে অত্যধিক (লক্ষ-কোটিগুণ বেশি) ফযীলতপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠত্বপূর্ণ বলা হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে তা আরো অধিকতর সমুচিত হবে। এই মতের সমর্থনে হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অনেকেই বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।”
সুতরাং এই বিষয়ে যারা আপত্তি করবে বুঝতে হবে তারা মহান আল্লাহ পাক এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হাক্বীক্বত থেকে অনেক দূরে।