কলম্বাসের কয়েকশত বছর আগে আমেরিকা আবিষ্কার করেন মুসলিমরা

কলম্বাসের কয়েকশত বছর আগে আমেরিকা আবিষ্কার করেন মুসলিমরা !
পশ্চিমা সভ্যতা বিজয়ী হওয়ার পর তারা নিজেদের মত করে ইতিহাসকে সাজিয়েছে। লুপ্ত করে দিয়েছে মুসলিম সভ্যতার গৌরব ও মাহাত্মের অসংখ্য নিদর্শন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবলুপ্তির শিকার হয়েছে কলম্বাসের আগে আমেরিকায় মুসলিম সভ্যতার গৌরবময় অধ্যায়।
আমেরিকা ও কানাডার টেক্সট বইয়ে কলম্বাস-পূর্ব যুগ সম্পর্কে কিছুই পড়ানো হয় না। এমন ভাব করা হয় যেন এর আগে আমেরিকার কোনো ইতিহাস নেই। এ নিয়ে না আছে তেমন কোনো চর্চা, না আছে বিশেষ কোনো গবেষণা। বরং এ সময়টাকে ধামাচাপা দিতে পারলেই যেন আমেরিকান ঐতিহাসিকদের সুবিধা হয়।
প্রফেসর ড: ব্যারি ফিল এর বিখ্যাত গ্রন্থ “Saga America” (১৯৮০ সালে প্রকাশিত) উন্মোচন করেছে প্রাচীন আমেরিকায় মুসলিমদের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ। প্রফেসর ড: ব্যারি ফিল (১৯১৭-১৯৯৪) হলেন হার্ভার্ড মিউজিয়াম অফ কম্প্যারেটিভ জুলজি এর অধ্যাপক। বইটি প্রকাশিত হওয়ার পরে আমেরিকার বুদ্ধিবৃত্তিক মহলে তৈরি হয় ভিন্নরকম বিতর্ক।
ড:ফিল বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যুক্তি, প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন ও ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখান যে, প্রি-কলম্বিয়ান আমেরিকায় অন্তত দশটি স্থানে মাদ্রাসার অস্তিত্ব ছিলো। সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মাদ্রাসা ছিলো নেভাদা, নিউ মেক্সিকো, কলোরোডা ও ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে। এ সব মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার অনুমিত সময়কাল ৭০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। ড: ব্যারি ফিল প্রাচীন দস্তাবেজ নকশা দ্বারা এটাও প্রমান করেন যে প্রাচীন আমেরিকায় মাদ্রাসা শিক্ষা লাভ করেছিলো প্রভূত প্রসার ও উন্নতি।
বিখ্যাত “World Bulletin” পত্রিকায় ২০১৪ সালে ৪ জানুয়ারি "Muslim scholar discovered America 500 years before Columbus" শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ কলম্বাসের ৫০০ বছর আগে মুসলিমরা আমেরিকা আবিষ্কার করেন। [ লিঙ্ক - http://bit.ly/2oWKhob ]
এছাড়া আমেরিকার বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও লেখক এস ফ্রেডরিক স্টার (S. Frederick Starr) মুসলিম বিজ্ঞানী আবু রাইহান আলবেরুনীকে কলম্বাসের ৫০০ বছর আগে আমেরিকার আবিষ্কারক হিসাবে তুলে ধরেন। সেইসাথে তিনি এটাও জানান যে গ্যালিলিওর ৬০০ বছর আগে এই মুসলিম বিজ্ঞানী আবু রাইহান আলবেরুনী আবিষ্কার করেন যে পৃথিবী হল গোল। [ লিঙ্ক - http://bit.ly/AlBeruni ]
এই বিষয়ের উপর ‘মুসা আল হাফিজ’ সাহেব “আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার” নামক একটি বই লিখেছেন, যেটি কালান্তর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত। তিনি এই গ্রন্থে বহু ঐতিহাসিক সূত্র ও প্রমানপঞ্জীর মাধ্যমে অনেক গভীরে গিয়ে নৌ-ক্রুসেড এর খোলস উন্মোচন করেছেন এবং কলম্বাসের ক্রুসেডীয় চেতনাকে প্রমাণ করেছেন। আমেরিকায় প্রাচীন মুসলিম জনগোষ্ঠির উপর পরিচালিত এথনিক ক্লিনজিংকে সামনে নিয়ে এসেছেন। যার ফলে আন্দালুসিয়ার মত মুসলিম সভ্যতার দু:খজনক আরেকটি ট্রাজেডি আমাদের উন্মোচিত হল।
বিখ্যাত ঐতিহাসিক আল মাসুদীর (৮৯৬ - ৯৫৬) রচনা, বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম আকরগ্রন্থ "Meadows of Gold and Mines of Gems" থেকে এই নৌ-ক্রুসেড এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এই বই থেকে জানা যায় যে কর্ডোভার মুসলিম নাবিক খাসসাস ইবনে সাইদ ইবনে আসওয়াদ ৮৮৯ সালে স্পেনের ডেলভা বা বর্তমান প্যালস থেকে জাহাজে পাল তুলে আটলান্টিক পার হয়ে ‘আরদ্বে মজহুল’ অজানা জগত বা আজকের আমেরিকায় গিয়ে পৌঁছেন আর ফিরে যান চমকপ্রদ ধনরত্ন নিয়ে। দশম শতকে আবদুর রহমান দ্বিতীয় এর আমলে আরেকদল আফ্রিকান মুসলিম কুয়াশাভরা অন্ধকার মহাসাগরে পাল তুলে, ডেলভা বন্দর থেকেই। তারা ফিরে আসে অদ্ভুদ ও রহস্যময় দুনিয়া আবিষ্কারের অজানা কাহিনী নিয়ে।
স্পেন থেকে মুসলিমদের নির্মূল করার পর মুসলিমদের সমুদ্রযাত্রার প্রতিটি অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে থাকে খ্রিষ্ট্রিয় শক্তি। স্পেনের সেই ডেলভা থেকেই রাজা ফার্ডিনান্ড ও রানী ইসাবেলার সহযোগিতায় ১৪৮২ সালের ৩ আগস্ট সমুদ্র যাত্রা করে কলম্বাস।তার অবলম্বন ছিলো মুসলিমদের অঙ্কিত মানচিত্র ও সমুদ্রবৃত্তান্ত। ইতোপূর্বে যে জগতের সাথে পরিচিত হয়েছে মুসলিম স্পেন, সেই জগতের দিকে এগুতে লাগলো কলম্বাসের জাহাজ।
বিখ্যাত আমেরিকান ঐতিহাসিক লিও উইনার (Leo Wiener) তার ১৯২০ সালে প্রকাশিত বিখ্যাত গ্রন্থ "Africa and the discovery of America"তে লিখেছেন যে - কলম্বাস ভালো করেই জানত নতুন দুনিয়ায় (আমেরিকায়) রয়েছে মানডিনকানদের (মুসলিম) বসবাসের কথা। কলম্বাস এও জানত যে এই ভূখণ্ডে বহু আগ থেকেই পশ্চিম আফ্রিকান মুসলিমরা ব্যবসা বাণিজ্য করে আসছিলেন।
গবেষকদের লেখায় স্পষ্ট প্রমাণিত যে, কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের থিওরী একটা গাল-গল্প ছাড়া কিছুই নয়। প্রাথমিক যুগের মুসলিম বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও অনুসন্ধানকে মানুষের সামনে তুলে ধরা এখন সময়ের দাবী এবং আমাদের জন্য অবশ্যকর্তব্য।

0 Comments: