সুমহান ২রা ‍মুহররমুল হারাম শরীফ ১৪৪০ হিজরী ( ক )










সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ

 সম্মানিত তিজারাত তথা ব্যবসার উদ্দেশ্যে সম্মানিত সফর মুবারক:
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিহ ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ৬ মাস দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। তার মধ্যে ২ মাস সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। সম্মানিত তিজারত তথা ব্যবসার উদ্দেশ্যে যাওয়া-আসা মিলে ২ মাস, ১ মাস ব্যবসা এবং ১ মাস সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ অবস্থায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ অবস্থান মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
ব্যবসা ছিলো কুরাইশদের প্রধান পেশা। তখন কুরাইশরা সাধারণত কাপড় ও খাদ্য-শস্যের ব্যবসা মুবারক করতেন। উনারা শীতকালে ইয়ামেন এবং গ্রীষ্মকালে শাম দেশে (সিরিয়ায়) সফর করতেন। এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اِيْلَافِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَاءِ وَالصَّيْفِ
অর্থ: “উনাদের (কুরাইশ) আসক্তি হচ্ছে শীত ও গ্রীষ্মকালে সফর করা।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা কুরাইশ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
 মহাসম্মানিত ও মাহপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ এবং সম্মানিত শা’বান শরীফ এই দুই মাস সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। অতঃপর তিনি সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাসে সম্মানিত তিজারত তথা ব্যবসার উদ্দেশ্যে শাম দেশে সফর মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
এই সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
خَرَجَ سَيِّدُنَـا حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ الْـمُطَّلِبِ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ اِلَـى الشَّامِ فِـى تِـجَارَةٍ مَّعَ جَـمَاعَةٍ مِّنْ قُرَيْشٍ
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি কুরাইশদের একটি কাফেলা নিয়ে সম্মানিত তিজারত তথা ব্যবসার উদ্দেশ্যে শাম দেশে রওনা মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ! (তারীখুল খমীস ১/১৮৭, সিমতুন নুজূম ১/২৯০)

শাম দেশে সম্মানিত অবস্থান মুবারক
আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি দীর্ঘ এক মাস পর শাম দেশে পৌঁছেন। তারপর একমাস সেখানে সম্মানিত তিজারত তথা ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। মহান আল্লাহ পাক উনার ফযলে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত তিজারত তথা ব্যবসায় অনেক লাভবান হন। আর উনার সম্মানার্থে কুরাইশরা পূর্বের তুলনায় এবার ব্যবসায় কল্পনাতীত লাভবান হন। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
فَفَرَغُوْا مِنْ تِـجَارَتِـهِمْ، ثُـمَّ انْصَرَفُوْا فَمَرُّوا بِالْـمَدِيْنَةِ، وعبد الله بن عبد المطلب يومئذ مريض فقال: أتخلف عند أخوالى بنى عدى بن النجار
অর্থ: “দীর্ঘ একমাস শাম দেশে সম্মানিত তিজারত তথা ব্যবসা-বাণিজ্য করার পর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি কুরাইশদের নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। প্রায় এক মাস পর উনারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার কাছাকাছি এসে পৌঁছেন। অতঃপর উনারা যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তাই তিনি কুরাইশদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
أتخلف عند أخوالي بني عدي بن النجار.
অর্থ: “আমি সম্মানিত বনী আদী ইবনে নাজ্জার গোত্রের আমার সম্মানিত মামা উনাদের নিকট থেকে যাবো।” (ইবনে সা’দ ১/৯৯, বিদায়াহ-নিহায়াহ ৩/৩৮২, সীরাতে হালবিয়্যাহ ১/৭৪, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/৩৩১, ‘উয়ূনুল আছার ১/৩৮ ইত্যাদি)
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ থেকে যান। আর উনার সাথে যাঁরা ছিলেন উনারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ চলে যান।

সম্মানিত মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় মহাসম্মানিতক ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে সম্মানিত অবস্থান মুবারক এবং উনার সম্মানিত মামা উনাদের কর্তৃক উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আন্জাম মুবারক দেয়া
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার বনী আদী ইবনে নাজ্জার গোত্রের উনার সম্মানিত মামা উনাদের নিকট এক মাস অবস্থান মুবারক করেন। এই সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, 
فأقام عندهم مريضا شهرا
অর্থ: “অতঃপর তিনি উনার সম্মানিত মামা উনাদের নিকট সম্মানিত মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় এক মাস সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন।” (ইবনে সা’দ ১/৯৯, বিদায়াহ-নিহায়াহ ৩/৩৮২, সীরাতে হালবিয়্যাহ ১/৭৪, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/৩৩১, ‘উয়ূনুল আছার ১/৩৮ ইত্যাদি)
মাওলিদুল বারযান্জী শরীফ’ উনার লিখক সাইয়্যিদ জা’ফর ইবনে হাসান ইবনে আব্দুল কারীম ইবনে মুহম্মদ ইবনে আব্দুর রসূল বারযান্জী হুসাইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ : ১১২৮ হিজরী শরীফ এবং বিছাল শরীফ : ১১৭৭ হিজরী শরীফ) তিনি ‘মাওলিদুল বারযানজী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
وَكَانَ قَدِ اجْتَازَ بِاَخْوَالِهٖ بَنِىْ عَدِىٍّ مِّنَ الطَّائِفَةِ النَّجَّارِيَّهْ*
وَمَكَثَ فِيْهِمْ شَهْرًا سَقِيْمًا يُّعَانُوْنَ سُقْمَهٗ وَشَكْوَاهْ*
অর্থ: “যখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি নাজ্জারিয়াহ গোত্রের বনী আদী বংশের উনার সম্মানিত মামা উনাদেরকে অতিক্রম করছিলেন (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তাই), তিনি সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় উনার সম্মানিত মামা উনাদের নিকট এক মাস সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত মামা উনারা উনার সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় উনার (চিকিৎসাসহ) যাবতীয় সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেন।” সুবহানাল্লাহ! (মাওলিদুল বারযানজী ১৭পৃ.)

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশের কথা বর্ণনা এবং সাইয়্যিদুনা হযরত হারিছ আলাইহিস সালাম উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ প্রেরণ
অতঃপর যখন কুরইশরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ পৌঁছেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই সম্মানিত কাফেলায় সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহি সালাম উনাকে দেখতে না পেয়ে অত্যন্ত চিন্তিত হলেন। তিনি এ বিষয়ে সবাইকে জিজ্ঞাসা করেন। উনারা বলেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ প্রকাশ করেছেন। ফলে তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ বনী আদী ইবনে নাজ্জার গোত্রের উনার সম্মানিত মামা উনাদের নিকট রয়ে গেছেন। এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
فَلَمَّا قَدِمَ اَصْحَابُهٗ مَكَّةَ سَأَلَـهُمْ حَضْرَتْ عَبْدُ الْـمُطَّلِبِ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَنْهُ فَقَالُوْا خَلَّفْنَاهُ مَرِيْضًا فَبَعَثَ اِلَيْهِ اَخَاهُ الْـحَارِثَ فَوَجَدَهٗ قَدْ تُوُفّـِىَ.
অর্থ: “তারপর যখন সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথীগণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ যেয়ে পৌঁছলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন। উনারা জবাবে বললেন, সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। যার কারণে আমরা উনাকে (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ-এ) রেখে এসেছি। এ জবাব শুনার সাথে সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আওলাদ- সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার অবস্থা মুবারক জানার জন্য উনারই আপন ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত হারিছ আলাইহিস সালাম উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ প্রেরণ করেন। অতঃপর তিনি সেখানে গিয়ে দেখতে পেলেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
অপর বর্ণনায় রয়েছে,
فبعث حَضْرَتْ عَبْدُ الْـمُطَّلِبِ عَلَيْهِ السَّلَامُ أكبر ولده الحارث فوجده قد توفي.
অর্থ: “অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত বড় আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত হারিছ আলাইহিস সালাম উনাকে (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ) প্রেরণ করেন। অতঃপর তিনি সেখানে গিয়ে দেখতে পেলেন যে, সাইয়্যিদুনা খাজা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে,
وَلَـمَّا تَـمَّ مِنْ حَـمْلِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِتَّةُ اَشْهُرٍ عَلٰى مَشْهُوْرِ الْاَقْوَالِ الْـمَرْوِيَّهْ*
 تُوُفّـىَ بِالْـمَدِيْنَةِ الْـمُنَوَّرَةِ الشَّرِيْفَةِ حَضْرَتْ ذَبِيْحُ اللهِ الْمُكَرَّمُ اَبُوْهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ*
 অর্থ : “মশহূর তথা প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে, যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সম্মানিত অবস্থানকাল ছয় মাস পূর্ণ হয়, তখন উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা মুনাওওয়ারা শরীফ উনার মধ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করার ছহীহ ও সুন্নতী তরতীব)
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, মুজাদ্দিদে আয’ম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় দীর্ঘ এক মাস মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ অবস্থান মুবারক করেন। অতঃপর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ২রা মুহররমুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ সকালে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ অবস্থানকাল মুবারক ৬ মাস পূর্ণ হয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!
সময়টি ছিলো সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার ৫৩ বছর ২ মাস পূর্বে। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার ২ মাস ১০ দিন পূর্বে। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর কায়িনাতের অবস্থা:
একমাত্র যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত কায়িনাত সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার খাদিম। সুবহানাল্লাহ! ফলে উনার সম্মানিত জুদায়ী মুবারক উনার কারণে সমস্ত কায়িনাত শোক প্রকাশ করেছেন। স্বয়ং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও শোক প্রকাশ করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّهٗ قَالَ لَـمَّا تُوُفّـِىَ سَيّـِدُنَا حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَتِ الْـمَلَائِكَةُ يَا اِلـٰهَنَا وَيَا سَيّـِدَنَا بَقِىَ نَبِيُّكَ يَتِيْمًا وَفِىْ رِوَايَةٍ صَارَ نَبِيُّكَ بلا أب فَبَقِىَ مِنْ غَيْرِ حَافِظٍ وَمُرَبٍّ فَقَالَ اللهُ اَنَا لَهٗ حَافِظٌ وَنَصِيْرٌ  وَفِىْ رِوَايَةٍ اَنَا وَلِيُّهٗ وَحَافِظُهٗ وَحَامِيُهٗ وَرَبُّهٗ وَعَوَّنُهٗ وَرَازِقُهٗ وَكَافِيُهٗ فَصَلُّوْا عَلَيْهِ وَتَبَرَّكُوْا بِاِسْـمِهٖ.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা (কেঁদে কেঁদে) বলছিলেন- ইয়া বারে ইলাহী, খালিক, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক! আপনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো ইয়াতীম অর্থাৎ একক, বেনিয়ায তথা ছমাদিয়াতের বিশেষ শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
অপর বর্ণনায় রয়েছে- হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, ইয়া বারে ইলাহী! আপনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো পিতৃহীন হয়ে গেলেন। (আপনি ব্যতীত দুনিয়াবী দৃষ্টিতে) উনার তো কোন রক্ষনাবেক্ষণকারী এবং দেখা-শুনা তথা লালন-পালনকারী আর কেউ বাকী থাকলেন না। অর্থাৎ আপনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো বেনিয়ায তথা ছমাদিয়াতের বিশেষ শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! জবাবে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম (আপনারা সাক্ষী থাকুন-) আমিই উনার মহাসম্মানিত হিফাযতকারী এবং আমিই উনার সাহায্যকারী। সুবহানাল্লাহ! অপর বর্ণনায় রয়েছে, আমিই উনার মহাসম্মানিত ওয়ালী তথা বন্ধু, অভিভাবক, আমিই উনার রক্ষনাবেক্ষণকারী, আমিই উনার মহাসম্মানিত রব তা‘য়ালা তথা লালন-পালনকারী, আমিই উনার মহাসম্মানিত সাহায্যকারী, আমিই উনার মহাসম্মানিত রিযিকদাতা এবং সার্বিক বিষয়ে আমিই উনার জন্য যথেষ্ট। সুবহানাল্লাহ! কাজেই হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! আপনারা সকলেই আমার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ছলাত মুবারক পাঠ করুন তথা  উনার সম্মানার্থে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করুন। সুবহানাল্লাহ! এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ইসম বা নাম মুবারক দ্বারা সীমাহীন বরকত মুবারক হাছিল করুন।” সুবহানাল্লাহ! (তারীখুল খমীস ১/১৮৭, শারহুয যারকানী ১/২০৭)

সম্মানিত গোসল মুবারক করানো, সম্মানিত কাফন মুবারক পড়ানো এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখা
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ সকালে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর উনার সম্মানিত গোসল মুবারক এবং সম্মানিত কাফন মুবারক সম্পন্ন মুবারক করা হয়। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত ছলাতুল ‘আছর উনার ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বেই অত্যন্ত সম্মানিত তা’যীম-তাকরীম মুবারক উনার সাথে সম্মানিত খাটিয়া মুবারক-এ করে সম্মানিত আবওয়া শরীফ নামক স্থান মুবারক-এ নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর উনাকে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখা হয়। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের সম্মানিত সংবাদ মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ-এ পৌঁছা
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক-এ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে দেখার জন্য উনার আপন ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত হারিছ আলাইহিস সালাম তিনি আছরের ওয়াক্তে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পৌঁছেন। তখন তিনি দেখতে পান যে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত হারিছ আলাইহিস সালাম তিনি এই অবস্থা দেখে উনার মহাসম্মানিত ভাই উনার সম্মানিত জুদায়ী মুবারক উনার কারণে অত্যন্ত ব্যথিত হলেন এবং উনার দুই চোখ মুবারক দিয়ে অবিরত ধারায় অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগলেন। সুবানাল্লাহ! তারপর সাইয়্যিদুন হযরত হারিছ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের সম্মানিত সংবাদ মুবারক নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাক্কা শরীফ আসেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, মালিকাতুল জান্নাত, মালিকাতুল কায়িনাত সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা ‘আম্মাত তথা ফুফু আলাইহিন্নাস সালাম উনারা, উনার সম্মানিত ইখওয়ান তথা ভাই আলাইহিমুস সালাম উনারা, উনার সম্মানিত আখওয়াত তথা বোন আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং উনার সমস্ত আত্মীয়-স্বজন উনারা সকলে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের সম্মানিত সংবাদ মুবারক শুনে অত্যন্ত ব্যথিত হন এবং উনার সম্মানিত জুদায়ী মুবারক উনার কারণে অবিরত ধারায় সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত করেন, কান্না করেন। সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
فَرَجَعَ فَاَخْبَرَهٗ فَوَجَدَ عَلَيْهِ سَيِّدَنَـا حَضْرَتْ عَبْدَ الْـمُطَّلِبِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَعَمَّاتَهٗ  عَلَيْهِنَّ السَّلَامُ وَإِخْوَتَهٗ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ وَأَخْوَاتَهٗ عَلَيْهِنَّ السَّلَامُ وَجْدًا شَدِيْدًا.
অর্থ: “অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত হারিছ আলাইহিস সালাম তিনি (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ) প্রত্যাবর্তন করেন। তারপর তিনি উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের সম্মানিত সংবাদ মুবারক পেশ করেন। সম্মানিত সংবাদ মুবারক শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা ‘আম্মাত তথা ফুফু আলাইহিন্নাস সালাম উনারা, উনার সম্মানিত ইখওয়ান তথা ভাই আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং উনার সম্মানিত আখওয়াত তথা বোন আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত জুদায়ী মুবারক উনার কারণে অত্যন্ত কঠিভাবে ব্যথিত হন।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ শরীফ ১/৩৩১)
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ওয়ারিছত্ত হিসেবে যা রেখে যান:
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ওয়ারিছত্ত হিসেবে অনেক সম্পদ মুবারক রেখে যান। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেনÑ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু আইমন আলাইহাস সালাম তিনি, ৫ টি উট, একটি বকরীর পাল এবং একটি তরবারী মুবারক। সুবহানাল্লাহ! এই সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
تَرَكَ عَبْدُ اللهِ عليه السلام حَضْرَتْ اُمَّ اَيْمَنَ عَلَيْهَا السَّلَامُ وخمسة أجمال وقطعة من غنم وَفِىْ رِوَايَةٍ وسيفا وَهُوَ مأثور فورث ذلك رسول الله صلى الله عليه وسلم من أبيه وَكانت حَضْرَتْ اُمُّ اَيْمَنَ عَلَيْهَا السَّلَامُ تَحْضُنُهٗ وَاسْمُهَا بَرَكَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানতি ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পূর্বে ওয়ারিছত্ত হিসেবে রেখে যানÑ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু আইমন আলাইহাস সালাম উনাকে, ৫টি উট এবং একটি বকরীর পাল। অপর বর্ণনায় রয়েছে, এবং একটি তরবারী মুবারক, যা ছিলো ঐতিহ্যসূত্রে প্রাপ্ত। সুবহানাল্লাহ! ফলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার কাছ থেকে এই সমস্ত বিষয়গুলো ওয়ারিছত্ব হিসেবে লাভ করেন। সুবহানাল্লাহ! আর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু আইমন আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত কোল মুবারক-এ নিতেন এবং উনাকে সম্মানিত লালনপালন মুবারক করার ক্ষেত্রে সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিতেন। উনার সম্মানিত নাম মুবারক হচ্ছেন ‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত বারাকাহ আলাইহাস সালাম’।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/৩৩২, আল মুখতাছরুল কাবীর ফী সীরাতির রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১/২১, সীরাতে হালবিয়্যাহ ১/৭৭, নিহায়াতুল ঈজায ১/৫৮, তালক্বীহ ১/১৪, আত ত্ববাক্বতুল কুবরা লিইবনে সা’দ ১/৮০ ইত্যাদি)
মূলত, এই সম্মানিত তরবারী মুবারক সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পক্ষ থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যম দিয়ে বংশানুক্রমে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ এসে পৌঁছেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

দুনিয়ার যমীনে অবস্থান মুবারক:
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি দুনিয়ার যমীনে কতো বছর অবস্থান মুবারক করেছেন, এই বিষয়ে কিতাবে অনেক ইখতিলাফ রয়েছে। আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়া সালাম তিনি সমস্ত ইখতিলাফ মিটিয়ে দিয়ে ইরশাদ মুবারক করেন, “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার ৭৮ বছর ৮ মাস ১০ দিন পূর্বে ২রা রজবুল হারাম শরীফ লাইলাতুস সাব্ত শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং  সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার ৫৩ বছর ২ মাস পূর্বে অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার ২ মাস ১০ দিন পূর্বে ২রা মুহাররমুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ সকালে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং তিনি দুনিয়ার যমীনে ২৫ বছর ৬ মাস সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা আবূ রসূলিনা যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার মুবারক  তা’রীফ
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
قَلَّ لااسئلكم عَلَيْهِ أَجْرًا أَلَا المَوَدَّةَ فِي القُرْبَى
অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জানিয়ে দিন, আমি তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাচ্ছি না। আর চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়; তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। তবে তোমরা যদি ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চাও; তাহলে তোমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে, আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়া।” (পবিত্র সূরা শুরা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-২৩)
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত (ওয়ালিদ) পিতা উনার পবিত্র নাম মুবারক হলেন হযরত ‘আব্দুল্লাহ’ আলাইহিস সালাম। মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নিকট সবচেয়ে প্রিয় নাম মুবারক হচ্ছেন ‘আব্দুল্লাহ’ ও ‘আব্দুর রহমান’।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান নাম মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সর্বাধিক প্রিয় ও পছন্দনীয়। সুবহানাল্লাহ।” (মুসলিম শরীফ)
তবে তিনি ‘যাবীহুল্লাহ’ লক্বব মুবারকে মশহুর হয়েছেন বা পরিচিতি লাভ করেছেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম। উনার সম্মানিত মাতা হচ্ছেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম।
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ছানা-ছিফত, ফযীলত বেমেছাল। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার জিসিম মুবারকে মাস, বছর অবস্থান করেছেন। যা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।
সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার ১৩ ভাই। উনারা হলেন-
১.         হারিছ: তিনি পিতার বড় ছেলে ছিলেন। তিনি যমযম কূপ খননের সময় পিতাকে সহযোগিতা করেছেন। তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার যুগ পাননি।
২.         আবু ত্বালিব: যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম উনার প্রায় ৪২ বছর খিদমত মুবারক করেছেন। তিনি সুপারিশ পেয়ে জান্নাতী হবেন। (মুসলিম শরীফ)
৩.         যাবীর: উনার কুনিয়াত আবুল হারিছ। তিনিও যমযম কূপ খননের কাজে শরীক ছিলেন।
৪.         আব্দুল কা’বাহ: তিনি ছোটবেলাতেই লিখতে শিখেছিলেন।
৫.         আম্মুর রসূল সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত হামযাহ আলাইহিস সালাম: তিনি জলীলুল ক্বদর ছাহাবী ছিলেন। তিনি উহুদ জিহাদে সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
৬.         আম্মুর রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম: তিনি জলীলুল ক্বদর ছাহাবী ছিলেন।
৭.         মুক্বাব্বিম: উনার কুনিয়াত আবূ বকর।
৮.         হাজল: কেউ অন্য ক্বিরায়াতে জাহল পড়েছেন। উনার নাম মুগীরাহ। উনাকে ‘খালখাল’ও বলা হতো।
৯.         দ্বিরার: তিনি কুরাইশদের সুদর্শন ও দানশীল যুবক ছিলেন।
১০.       কুছাম: তিনি নাবালিগ অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।
১১.        আবু লাহাব: তার অপর নাম আব্দুল উযযা। তার ধ্বংসের ব্যাপারে পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ নাযিল হয়।
১২.        গাইদাক্ব: উনার নাম মুছআব। কেউ বলেন, নওফিল। তিনি অধিক দান করতেন এজন্য উনাকে গাইদাক্ব বলা  হতো। কেননা তিনি কুরাইশদের মধ্যে প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক ছিলেন এবং কুরাইশদের মধ্যে অধিক দানশীল ছিলেন।
১৩.       আবু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম।
(সুবুলুল হুদা ১১তম খ- ৮২ পৃষ্ঠা, হালাবিয়াহ ৩য় খ- ৪০০ পৃষ্ঠা, শরহুয যারকানী ৪ খ- ৪৬৪, ৪৬৫ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বোন ছিলেন ৬ জন। উনারা হলেন-
১.         উম্মু হাকীম: উনার নাম মুবারক ছিল বাইদ্বা।
২.         আতিক্বাহ: কারো মতে, তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
৩.         বাররাহ।
৪.         আরওয়া: কারো কারো মতে, তিনিও পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
৫.         আমীমাহ।
৬.         আম্মাতুর রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছফিয়্যাহ আলাইহাস সালাম: তিনি হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাতা ছিলেন। তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে হিজরত মুবারক করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
(আস সীরাতুল হালাবিয়া ৩য় খ- ৪০০ পৃষ্ঠা, শরহুয যারক্বানী ৪র্থ খ- ৪৮৮ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা ছহিবাহ তথা জাওযাতুম মুকররমাহ ছিলেন উম্মু রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা বিনতে ওহহাব আলাইহাস সালাম। যিনি হচ্ছেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা মাতা। তিনি ছিলেন সম্মানিত কুরাইশ বংশীয়। সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার জিসিম মুবারকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক অবস্থান করছিলেন। এজন্য দেখা গেছে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার চেহারা মুবারক অত্যন্ত নূরানীময় ছিলো সদাসর্বদাই জ্যোৎস্নার চাঁদের ন্যায় জ্বলজ্বল করতো এবং উনার জিসিম মুবারক থেকে নূর বিচ্ছুরিত হতো। সুবহানাল্লাহ! তিনি সকলের কাছেই সবচেয়ে প্রিয় ও পছন্দনীয় ছিলেন। তবে কিছু কাফির, মুশরিক, ইহুদী, নাছারা কিছু বদবখত, নাদান তারা উনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতো। উনার মাঝে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক অবস্থান করছেন- এটা ইহুদী-নাছারারা বুঝতে পেরে উনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য নানা প্রকার ষড়যন্ত্র করতো। কিন্তু কখনো তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত করতে পারেনি। 
মাদারিজুন নুবুওওয়াত’-এ উল্লেখ রয়েছে, আহলে কিতাব তথা ইহুদী, খ্রিস্টানরা যখন দেখতে পেলো সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার মধ্যেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক অবস্থান করছেন তখন তারা উনার বিরুদ্ধে শত্রুতা শুরু করলো উনাকে শহীদ করার জন্য নানা প্রকার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তসহ এই সমস্ত দুষ্টরা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে সমবেত হতে লাগলো। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে এসে বিভিন্ন মু’যিজা শরীফ, কারামত, বিস্ময়কর ঘটনা অবলোকন করে হতবাক ও হতাশ হয়ে পলায়ন করলো। পরাজয় ও লাঞ্ছিতের গ্লানি নিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরলো। একদা সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি শিকারে বের হলেন। আহলে কিতাব তথা ইহুদীদের একটা দুষ্ট দল তারা সিরিয়া থেকে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে এসেছিলো। এই সমস্ত ইহুদী নাছারারা উনাকে দেখে হিংসার বশবর্তী হয়ে শহীদ করতে উদ্যত হলো। নাঊযুবিল্লাহ! সেই স্থানে উপস্থিত ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে মান্নাফ আলাইহিস সালাম। যিনি ছিলেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহি আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত পিতা। হযরত ওয়াহাব ইবনে মান্নাফ আলাইহিস সালাম তিনি দেখতে পেলেন কোথা থেকে যেন কিছু অস্ত্রধারী লোক তরবারী নিয়ে ওই সমস্ত শত্রুদের তাড়িয়ে দিতে লাগলেন। শত্রুরা সেখান থেকে পালিয়ে গেলো। সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনিও বাড়িতে ফিরলেন। এদিকে সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে মান্নাফ আলাইহিস সালাম তিনি ঘরে ফিরে উনার পরিবারগণের নিকট ঘটনাটি জানান এবং বলেন, আমার মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহি আলাইহাস সালাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার সাথে নিসবতে আযীম মুবারক সম্পন্ন করতে মুবারক দিতে চাই। পরিবারের সকলেই সম্মতি প্রকাশ করলেন। অপরদিকে যখন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার কাছে সংবাদ পৌঁছলো তিনিও রাজি হয়ে গেলেন। অতঃপর যথাসময়ে সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ যাবীহিল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহি আলাইহাস সালাম উনার নিসবতে আযীম মুবারক সুসম্পন্ন হলো। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পুত্র সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি যাবীহিল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিসবতে আযীম মুবারক সম্পন্ন করার দেয়ার জন্য যাচ্ছিলেন পথিমধ্যে এক ইহুদী মহিলা যার নাম ছিলো ফাতিমা বিনতে মুররা। যে পবিত্র তাওরাত শরীফ ইনযীল শরীফ তথা আসমানী কিতাবে অভিজ্ঞা ছিলো। সে সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার কপাল মুবারকে উজ্জ্বল নূর মুবারক দেখে উনাকে দাওয়াত দিলো এবং উক্ত ইহুদী মহিলা সেই নূর মুবারক নিজের মধ্যে পাওয়ার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার সান্নিধ্য পাওয়ার প্রস্তাব পেশ করলো। যদি তিনি আমার সঙ্গে অবস্থান করেন তাহলে আমি উনাকে একশত উট হাদিয়া করবো। সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি খুব শক্ত ভাষায় জাওয়াব দিয়ে বললেন,
أما الحرام فالحمام دونه
والحل لا حل فأستبينه
فكيف بالأمر الذي تبغينه
يحمى الكريم عرضه و دينه-
অর্থ: “হারাম গ্রহণ অপেক্ষা মৃত্যুই শ্রেয় আর এমন কাজ মোটেও হালাল নয়, যা প্রকাশ করা যায় না। যে অবৈধ কাজে তুমি আগ্রহী তা আমার দ্বারা কখনো সম্ভব নয়। সম্মানিত ব্যক্তিগণ উনারা নিজের আব্রু, নিজের দ্বীনের হিফাযত করেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল মুস্তাফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহি আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র নিসবতে আযীম মুবারক সুসম্পন্ন হওয়ার পর পথিমধ্যে ওই ইহুদী মেয়েটি আবার দূর থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনাকে দেখতে পেলো। মেয়েটি জিজ্ঞাসা করলো, “হে সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম আপনি এখান থেকে চলে যাওয়ার পর কোথাও অবস্থান করেছেন? সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি এখান থেকে চলে যাওয়ার পর সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আব্দুল মান্নাফ আলাইহিস সালাম উনার বানাত সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহি আলাইহাস সালাম উনাকে নিসবতে আযীম মুবারক করেছি এবং উনার সঙ্গে তিন দিন অবস্থান করেছি। একথা শুনে ওই ইহুদী মহিলাটি বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি কোনো অসৎ চরিত্রা মহিলা নই। আপনার চেহারা মুবারকে পবিত্র নুবুওওয়াতের নূর মুবারক দেখে ইচ্ছা করেছিলাম যে, এই নূর মুবারক আমার থেকে প্রকাশিত হোক। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি যেখানে চেয়েছেন সেখানেই সেই পবিত্র নূর মুবারক রেখেছেন। (দালাইলু আবু নুআইম, তাবাকাতে ইবনে সা’দ)
আরো বর্ণিত রয়েছে, বনী আসাদ গোত্রের নাওয়াফিল উনার মেয়ে রুকাইকা নামক মহিলা পবিত্র কা’বা শরীফ উনার পার্শ্বে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি যাবীহিল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন এমন সময় ওই মহিলাটি সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার চেহারা মুবারক উনার দিকে তাকালে উনার কপাল মুবারকে উজ্জ্বল নূর মুবারক দেখতে পান। তখন সেই মহিলা সেই নূর মুবারক লাভ করার জন্য পাগলপারা হয়ে যান এবং বলতে থাকেন যে, হে সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম! আপনার জানের বদলে যে একশত উট কুরবানী করা হয়েছিলো, আমি সেই ১০০টি উট আপনার পক্ষ থেকে পরিশোধ করবো, আপনি আমাকে নিসবতে আযীম মুবারক উনার মাধ্যমে গ্রহণ করুন। মহিলাটি এই প্রস্তাব দিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি সেই মহিলাটির প্রস্তাব গ্রহণ না করে ফিরে আসলেন। (মাওয়াহিবুল লাদুননীয়া, আল বারাহীনুল ক্বতইয়াহ)
প্রকাশ থাকে যে, উক্ত মহিলাটির নাম সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। যেমন, উনার নাম ছিলো কুতাইলা তথা রুকাইযা ও লাইলা।
কাজেই  সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি যাবীহিল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা ও পবিত্রতা বেমেছাল যা মাখলুকাতের ফিকিরের ঊর্ধ্বে। মূলত, উনার মর্যাদা হচ্ছে তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা। সারা কায়িনাতের মধ্যে তিনি একক, যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাখলুকাতের মধ্যে একক। খলীক্ব হিসাবে যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি এক এবং একক। সুবহানাল্লাহ!

********************************



আবূ রসূলিনা সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার কপাল মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নূর মুবারক

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
قَدْ جَاءَكُمْ مِنْ اللهِ نُورٌ
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নূর (অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি) এসেছেন।” (সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ- ১৬)
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ললাট মুবারকে রাখেন। হযরত সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার আলাইহিস সালাম উনার থেকে উম্মুল বাশার সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনার হয়ে আবু রসুলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৌঁছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি  আলাইহিস সালাম উনার ললাট মুবারকে সেই নূর মুবারক সদাসর্বদাই চমকাতো। জিন-ইনসান থেকে শুরু করে সমস্ত মাখলুক সেই নূর মুবারক দেখে ইতমিনান হতো, খুশি প্রকাশ করতো। এমনকি সেই নূর মুবারক ধারণ ও উনার খিদমত করার জন্য আরবের মহিলাগণ অনেকেই সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি  আলাইহিস সালাম উনার সাথে নিসবতে আযীম মুবারক স্থাপনে আর্জি জানিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে-
বিশ্ববিখ্যাত হাদীছ শরীফ উনার কিতাব ‘মুছান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক’ উনার ৫ম জিলদ ৩১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عَنْ عَبْدُ الرَّزَّاقُ عَنْ مُحَمَّدٍ عَنْ الزُّهَرِيِّ قَالَ... وَكَانَ عَبْد الله أَحْسَنُ رَجُلٍ رُئِيَ فِي قُرَيْش مُجْتَمِعَاتٍ. فَقَالَتْ اِمْرَأَةٌ مِنْهُنَّ يَا نِسَاءُ قُرَيْش? أَيَّتُكُنَّ يَتَزَوَّجُهَا هَذَا الفَتَى فنصطت النُّورُ الَّذِي بَيْنَ عَيْنَيْهِ قَالَ وَكَانَ بَيْنَ عَيْنَيْهِ نُورٍ
অর্থ: হযরত আব্দুর রাযযাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি অত্যধিক সুদর্শন সুমহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন, এরূপ সুদর্শন পুরুষ কুরাইশ তথা কায়িনাতের মধ্যে কমই দেখা যেতো। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি একদিন মহিলাদের এক জামায়াতের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মহিলাদের মধ্য হতে একজন সবাইকে সম্বোধন করে বললেন, হে কুরাইশ মহিলাগণ! আপনারা কি চান যে, এই সম্মানিত পুরুষ তিনি আপনাদের কাউকে নিসবতে আযীম মুবারক করুন। অতঃপর উনার কপাল মুবারকে যে নূর মুবারক রয়েছেন তা আপনাদের মধ্যে অবস্থান করুন। রাবী বলেন, ‘সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র কপাল মুবারকে তখন নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবস্থান করছিলেন।’ সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,
وقال ابن سعد انا وهب بن جرير بن حازم ثنا أبى سمعت ابا يزيد المدنى قال نبئت ان عبد الله أتى على امراة من خثعم، فرأيت بين عينيه نورا ساطعا الى السماء، فقالت هل لك فى؟ قال نعم حتى ارمى الجمرة، فانطلق فرمى الجمرة ثم اتى امرأته امنة عليها السلام ثم ذكر الخثعمية فاتاها, فقالت هل أتيت امرأة بعدى؟ قال نعم امراتى امنة عليها السلام- قالت فلا حاجة لى فيك انك مررت وبين عينيك نور ساطع الى السماء, فلما وقعت عليها ذهب, فأخيرها انها قد حملت بخير أهل الارض
অর্থ: “হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত ওয়াহাব ইবনে জারীর ইবনে হাজিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি স্বীয় পিতা থেকে এবং আবূ ইয়াযীদ মাদানী থেকে শ্রবণ করেন। তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি খাছআমী গোত্রের এক নারীর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় সেই নারী (সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহ আলাইহিস সালাম) উনার কপাল মুবারক থেকে আসমান পর্যন্ত একটি নূর মুবারক দেখতে পেলেন। অতঃপর মহিলাটি উক্ত নূর মুবারক দেখে বললেন, আপনি কি আমার সাথে নিসবতে আযীম মুবারক স্থাপন করবেন? সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হ্যাঁ, কংকরগুলো ফেলে আসি। কংকর ফেলে দেয়ার পর তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট চলে গেলেন এবং উনার সঙ্গে অবস্থান করলেন। অতঃপর খাছআম গোত্রের মেয়েটির কথা স্মরণ হলে উনার কাছে গেলেন। উক্ত মেয়েটি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনাকে দেখেই বললেন, এখান থেকে চলে যাওয়ার পর কোনো নারীর সঙ্গে আপনার কি সাক্ষাৎ মুবারক হয়েছে? সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমার যিনি যাওজাতুম মুকাররমাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তখন সেই মহিলা বললো, হে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম এখন আপনাকে পাওয়ার সেই হাজত বা আকাঙ্খা আমার নেই। নিশ্চয়ই আপনি যখন আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন তখন আপনার কপাল মুবারক থেকে আসমান পর্যন্ত একখানা নূর মুবারক বিস্তৃত ছিলো। এখন সেই নূর মুবারক নেই আপনার আহলিয়া উনার নিকট সেই নূর মুবারক চলে গেছেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনাকে সুসংবাদ দিন যে, নিশ্চিয়ই তিনি যমীনের সর্বোত্তম ব্যক্তিত্বকে ধারণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (ইবনে আসাকির, খছায়িছূল কুবরা ১ম খন্ড, ৭০ পৃষ্ঠা)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال كانت امرأة من خثعم تعرض نفسها فى موسم من المواسم، وكانت ذات جمال ومعها ادم عليه السلام تطوف به كأنها تبيعه فأتت على عبد الله بن عبد المطلب عليه السلام، فلما رأته أعجبها فعرضت نفسها عليه، فقال مكانك حتى ارجع اليك فانطلق الى اهله فبدا له فواقع اهله فحملت بالنبى صلى الله عليه وسلم، فلما رجع اليها قالت ومن أنت؟ قال انا الذى وعدتك، قالت لا ما انت هو ولئن كنت ذلك لقد رأيت بين عينيك نورا ما اراه الان
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খাছআম গোত্রের এক খুব ছূরত মহিলা পবিত্র হজ্জ সময় বা মওসুমে পবিত্র কা’বা শরীফ-এ আসতো এবং উনার কাছে বিভিন্ন ধরনের আচার থাকতো। তা বিক্রি করতেন। তিনি একবার সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার নিকট আসলেন। মহিলাটি যখন সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনাকে দেখলেন, দেখে আশ্চর্য হলেন এবং মহিলাটি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট নিজকে পেশ করলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি বললেন- আমি আসছি। অতঃপর তিনি বাড়িতে চলে গেলেন এবং উনার যাওজাতুম মুকাররমাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার সাথে অবস্থান করলেন। অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ধারণ করলেন। অতঃপর হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে পুনরায় ওই মহিলাটির সাক্ষাৎ হলো। মহিলাটি বললো, আপনি কে? সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি সেই ব্যক্তি, যে আপনার কাছে ফিরে আসার ওয়াদা করেছিলেন। মহিলাটি বললো, আপনি ওই ব্যক্তি নন, কারণ আপনার কপাল মুবারকে একখানা নূর মুবারক দেখেছিলাম যা এখন অদৃশ্য হয়ে গেছে যা আমি এখন আর দেখছি না।” সুবহানাল্লাহ! (বাইহাক্বী, আবূ নায়ীম, ইবনে আসাকির, খছায়িছূল কুবরা ১ম খন্ড ৭১ পৃষ্ঠা)
খছায়িছূল কুবরা’ ১ম জিলদ ৭১ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ রয়েছে,
عن ابن شهاب قال كان عبد الله عليه السلام احسن رجل رؤى قط خرج يوما على نساء قريش، فقالت امرأة منهن أيتكن تتزوج بهذا الفتى فتصطب النور الذى بين عينيه، فانى أرى بين عينيه نورا، فتزوجته حضرت امنة عليها السلام فحملت برسول الله صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “হযরত ইবনে শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি বেমেছাল অতি সুন্দর ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যা বর্ণনার ঊর্ধ্বে। হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি একদা কিছু কুরাইশ মহিলাদের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন উনাদের মধ্যে একজন মহিলা বললেন, আপনাদের মধ্যে কে আছেন উনার সাথে নিসবতে আযীম সম্পন্ন করে উনার কপাল মুবারকে যে নূর মুবারক রয়েছেন তা ধারণ করবেন। আর নিশ্চয়ই আমি দেখতে পাচ্ছি উনার দু’চক্ষু মুবারক উনার মাঝে নূর মুবারক তথা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন হলো। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজের কাছে ধারণ করলেন।” সুবহানাল্লাহ! (বাইহাক্বী, আবূ নায়ীম, খাছায়িছুল কুবরা ১ম খন্ড ৭১ পৃষ্ঠা)
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
عن عروة وغيره قالوا ان قتيلة بنت نوفل اخت ورقة بن نوفل كانت تنظر وتعتاف فمر بها عبد الله عليه السلام فدعته ليستبضع منها ولزمت طرف ثوبه، فأبى وقال حتى أتيك وخرج سريعا حتى دخل على حضرت امنة عليها السلام فوقع عليها فحملت برسول الله صلى الله عليه وسلم ثم رجع، الى المرأة فوجدها تنتظره، فقال لها هل لك فى الذى عرضت على؟ قالت لا، مررت وفى وجهك نور ساطع، ثم رجعت وليس فيه ذلك النور، وفى لفظ مررت وبين عينيك غرة مثل غرة الفرس ورجعت وليس هى فى وجهك
অর্থ: “হযরত উরওয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আরো অনেকের থেকে বর্ণিত। উনারা বলেন, নিশ্চয়ই ওরাকা ইবনে নওফিল উনার ভগ্নি হযরত কাতীলাহ জ্যোতিবিদ ছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম একদা তিনি পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় সেই মহিলা উনাকে দাওয়াত করলেন এবং উনার পবিত্র চাদর মুবারক ধরলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি আসবেন বলে সেখান থেকে দ্রুত বের হয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট প্রবেশ করলেন। অতঃপর উনার সঙ্গে অবস্থান করলেন যার ফলে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার মধ্যে অবস্থান করলেন। তারপর পুনরায় সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি কাতিলার নিকট গিয়ে তাকে অপেক্ষমান পেলেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তুমি যে আমাকে নিসবতে আযীম মুবারকের প্রস্তাব দিয়েছিলে এ সম্পর্কে তোমার মতামত কি? কাতিলা বললো, না। আপনি যখন এখান থেকে গমন করেছিলেন। তখন আপনার কপাল মুবারকে একখানা উজ্জ্বল দীপ্ত নূর মুবারক ছিলো। ফিরে আসার পর সেই নূর মুবারক আপনার চেহারা মুবারক উনার মধ্যে নেই।”
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন,
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال المرأة التى عرضت على  حضرت عبد الله عليه السلام ما عرضت هى أخت ورقة بن نوفل
অর্থ: “যে মহিলা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনাকে নিসবতে আযীম মুবারকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ওরাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু উনার বোন।” (খাছায়িছুল কুবরা ১ম খন্ড ৭১ পৃষ্ঠা, ইবনে সা’দ, ইবনে আসাকির)
স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার যিনি হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক কোথায় রাখবেন তা পূর্ব থেকে মনোনীত করে রেখেছেন। যদিও বা আরবের অনেক মহিলারাই সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনাকে নিসবতে আযীম মুবারকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন; কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি  তো মনোনীত করে রেখেছেন যে, উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার মাঝে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রাখবেন। যেদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক উনার মহাসম্মানিত পিতা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার ললাট মুবারক থেকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ উনার মাঝে তাশরীফ নেন সেই রাত্রি মুবারককে ‘লাইলাতুর রাগায়িব’ বলা হয়। আর লাইলাতুর রাগায়িব উনার ফযীলত সমস্ত রাত্রি মুবারক থেকে বেশি। সুবহানাল্লাহ!

***************************************


নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা পবিত্র দ্বীনে হানিফ উনার উপর কায়িম ছিলেন

            সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত ঘোষণার বহু পূর্বে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে প্রায় পাঁচশত বছর পরে উনার সম্মানিতা পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা উভয়েই পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। উনারা কোনো হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনার আমল বা যামানা পাননি। উনাদের নিকট পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত পৌঁছেনি এবং উনারা দুই নবী আলাইহিমাস সালাম উনাদের অন্তবর্তীকালীন সময়ে পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। এ সময়টাকে বলা হয় ফাতরাত যুগ।
ذلك ان لم يكن ربك مهلك القرى بظلم واهلها غافلون.
অর্থ: “আপনার প্রতিপালক কোনো জনপদবাসীকে অন্যায়ভাবে অনবহিত অবস্থায় ধ্বংস করেন না।” (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩১)
            তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
ولولا ان تصيبهم مصيبة بما قدمت ايديهم فيقولوا ربنا لولا ارسلت الينا رسولا فنتبع ايتك ونكون من المؤمنين.
অর্থ: “যারা ফাত্রাত যুগের উনাদের কৃতকর্মের জন্য যখনই কোনো মুছীবত আসতো তখন উনারা বলতো, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি কেন কোনো হযরত রসূল আলাইহিস সালাম প্রেরণ করেননি, আমরা উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার অনুসরণ করতাম এবং ঈমানদার হতাম।” (পবিত্র সূরা কাছাছ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৭) 
            মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
ولو انا اهلكنهم بعذاب من قبله لقالوا ربنا لولا ارسلت الينا رسولا فنتبع ايتك من قبل ان نذل ونخزى.
 অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের পূর্বে আমি যদি উনাদেরকে শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করতাম, তাহলে উনারা বলতেন, হে আমাদের প্রতিপালক! কেন আমাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেননি, তাহলে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার পূর্বেই আমরা আপনার আয়াতের অনুসরণ করতাম।” (পবিত্র সূরা ত্ব-হা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৪)
            মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وما كان ربك مهلك القرى حتى يبعث فى امها رسولا يتلوا عليهم ايتنا.
 অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি কোনো জনপদবাসীকে ধ্বংস করেন না, যতক্ষণ না উহার কেন্দ্রস্থলে কোনো হযরত রসূল আলাইহিস সালাম উনাকে প্রেরণ করেন, যিনি তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে শুনান।” (পবিত্র সূরা কাছাছ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)
             তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وما اهلكنا من قرية الا لها منذرون ذكرى وما كنا ظالمين.
 অর্থ: “আমি কোনো জনপদবাসীকে ভীতি প্রদর্শনকারী ও উপদেশ প্রদানকারী প্রেরণ ব্যতীত ধ্বংস করিনি এবং আমি সীমালংঘনকারী নই।” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২০৮,৯)
            এই সমস্ত পবিত্র আয়াত শরীফ প্রসঙ্গে হযরত আবদ বিন হামীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে মনযর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে আবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত হাতেম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা নিজ নিজ তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, “হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ ও নির্দেশ-উপদেশ প্রদান ব্যতীত মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি কোনো জনপদবাসীকে ধ্বংস করেননি। কেননা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি সর্বাপেক্ষা ন্যায়পরায়ণ; তিনি সীমালঙ্ঘনকারী নন।”
            এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য যে, হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুশরিকদের সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে বলেছেন, তারা জান্নাতবাসী। কেননা পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার ঘোষণানুযায়ী প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যাদের নিকট পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত পৌঁছেনি তাদেরকে শাস্তি দেয়া  হবে না। অর্থাৎ (যদি তারা কুফরী ও শিরেকী না করে থাকে) তবে তাদেরকে মিটিয়ে দেয়া হবে। আর যাদের নিকট পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত পৌঁছেছে, অথচ কুফরী ও শিরেকী পরিত্যাগ করেনি তারা অবশ্যই জাহান্নামী। এতে কারো দ্বিমত নেই।
            সুতরাং দুই নবী আলাইহিমাস সালাম উনাদের অন্তরবর্তীকালীন সময়ে মৃত বা ইন্তিকালকারীগণ আহলে ফাতরাত হওয়ার কারণে উনাদের হুকুম ব্যতিক্রম। অর্থাৎ উনারা যদি শুধু কুফরী ও শেরেকী থেকে মুক্ত থাকেন তাহলে উনারা আযাব বা শাস্তি থেকেও মুক্ত থাকবেন। (মাসালিকুল হুনাফা লিস সুয়ূতী দ্রষ্টব্য)
            যেমন ছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনারা। উনারা কোনো প্রকার কুফরী ও শিরকী করেননি। অর্থাৎ উনারা উভয়ে পবিত্র দ্বীন হানিফে কায়িম ছিলেন। উনারা কখনো তাওহীদ বিরোধী কোনো আমল করেছেন এমন কোনো প্রমাণ কেউই পেশ করতে পারবে না। এ বিষয়ে সমস্ত হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা একমত পোষণ করেন।

*********************************************************

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের বেমেছাল পবিত্রতা

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات على ان جميع ابائه صلى الله عليه وسلم وامهاته الى ادم وحواء عليهما السلام ليس فيهم كافر.
 অর্থ: “আমি সর্বদা পবিত্র পৃষ্ঠ মুবারক হতে পবিত্রা রেহেম শরীফ উনার মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছি। আমার পূর্ববর্তী যত পুরুষ ও মহিলাগণ উনারা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এবং উম্মুল বাশার হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনার পর্যন্ত অতীত হয়েছেন, উনাদের কেউই কাফির ছিলেন না।” সুবহানাল্লাহ!
            এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ব-পুরুষ সকলেই ছিলেন যুগের সবচাইতে সম্ভ্রান্ত, মর্যাদাশীল ও মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ও মকবুল বান্দা উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি পবিত্র পুরুষ ও পবিত্রা মহিলাগণ উনাদের মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় এ যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। চাই পিতা উনার দিক থেকে হোক কিংবা মাতা উনার দিক থেকে হোক উনাদের কেউই মুশরিক বা কাফির ছিলেন না। এমনকি উনাদের মধ্যে কেউ চারিত্রিক দোষেও দোষী ছিলেন না। প্রত্যেকেই পবিত্র চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
لم يلتق ابوى قط على سفاح.
 অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষগণ কেউই চারিত্রিক দোষে দোষী ছিলেন না।” সুবহানাল্লাহ!
            অতএব, প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষগণ শুধু ঈমানদারই নন, বরং উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ মাহবুব বান্দা-বান্দী উনাদের অন্তর্ভুক্ত। আর এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وتقلبك فى الساجدين.
অর্থ: “আপনাকে সিজদাকারীদের মধ্যে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৯)
            তাফসীরে মাদারেক ও জামালের গ্রন্থকার এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুধু পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা নন, বরং উনার সকল পূর্বপুরুষ উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার  তাওহীদভুক্ত বলে ঘোষণা দেন। প্রকৃতপক্ষে উনার পূর্বপুরুষগণ উনারা  সকলেই ঈমানদার ও সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব-ব্যক্তিত্বা ছিলেন।
            উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি সর্বযুগে যুগশ্রেষ্ঠ বান্দা-বান্দী উনাদের মাধ্যমে যমীনে এসেছেন। তাহলে উনারা কি করে কাফির-মুশরিক হতে পারেন? নাউযুবিল্লাহ! কারণ প্রথমত, কাফিররা হচ্ছে নাপাক। দ্বিতীয়ত, সাধারণ ঈমানদার দাস-দাসীরাও সমস্ত কাফির-মুশরিকদের চেয়েও উত্তম।

**********************************************


নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসম মুবারক উনার সবকিছু পবিত্র ও তা গ্রহণ করা নাজাত হাছিলের কারণ হলে তিনি যাঁদের মাধ্যমে এসেছেন উনাদের কি হুকুম?

            পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে, উহুদের ময়দানে কিছু ছাহাবী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মুবারকের ক্ষতস্থান হতে নির্গত নূরুন নাজাত মুবারক অর্থাৎ রক্ত মুবারক যাতে যমীনে না পড়তে পারে সেজন্য উনারা তা চুষে চুষে পান করেছিলেন। এতদশ্রবণে তিনি উনাদেরকে বললেন, আপনাদের জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে গেল। অর্থাৎ আপনারা নিশ্চিত জান্নাতী। এছাড়া যে সকল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারকে শিঙ্গা লাগিয়ে নূরুন নাজাত (রক্ত) মুবারক পান করেছিলেন উনাদের ক্ষেত্রেও তিনি উক্ত সুসংবাদ দান করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
            পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে, একবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বীশান মুবারক গ্রহন করার কারণে পবিত্র হুজরা শরীফ উনার ভিতর একটি গামলার মধ্যে নূরুশ শিফা (পেশাব) মুবারক রাখলেন। সকাল বেলা এক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আসলে তিনি উনাকে উক্ত গামলাটি দিয়ে ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি এগুলো এমন স্থানে রেখে আসবেন যাতে কেউ মাড়াতে না পারে। তখন সেই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উক্ত গামলাটি নিয়ে দূরবর্তী স্থানে গিয়ে এক স্থানে রেখে চলে আসলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি তা কোথায় রেখে আসলেন? তখন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি তা এমন স্থানে রেখে এসেছি যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউ মাড়াতে পারবে না।  ইনশাআল্লাহ! হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখন উনার মুখ মুবারক থেকে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিলো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি কি তা পান করে ফেলেছেন? হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তা রাখার জন্য আমার পেটের চাইতে উত্তম স্থান খুঁজে পাইনি, তাই তা পান করে ফেলেছি। হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথা শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার জন্য জাহান্নামের আগুন আবাদুল আবাদের জন্য হারাম হয়ে গেল। কস্মিনকালেও জাহান্নামের আগুন আপনাকে স্পর্শ করবে না। আর আপনি জান্নাতী। সুবহানাল্লাহ!
            এখন কথা হলো, যেই নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুন নাজাত (রক্ত) মুবারক, নূরুশ শিফা (পেশাব) মুবারক স্বল্পকালীন, স্বল্প পরিমাণ পান করার কারণে কোনো ব্যক্তির জন্য যদি পবিত্র জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় এবং জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়, তাহলে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দীর্ঘ সময় যে সমস্ত মহান ব্যক্তিত্বা উনাদের সম্মানিতাও পবিত্র রেহেম শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করলেন এবং এর পূর্বে পবিত্র নূর হিসেবে যে সমস্ত মহান ব্যক্তিত্ব উনাদের পবিত্র ললাট মুবারকে অবস্থান করলেন, অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা ও সম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম উনাদের দেহাবয়ব কি জাহান্নামে যাবে? নাউযুবিল্লাহ! কখনোই নয়! কখনোই নয়! কখনোই নয়!
            উল্লেখ্য, নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি পবিত্র থেকেও পবিত্রতম। তিনি কি নাপাক স্থানে অবস্থান করেছিলেন? সকলেই বলবে কস্মিনকালেও নয়। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ কি নাপাক ছিলেন? নাউযুবিল্লাহ! সকলেই বলবে অবশ্যই নয়, বরং পূত-পবিত্র ছিলেন। আর পূত-পবিত্র বললেই ঈমানদার বুঝতে হবে। তাহলে উনার পূর্বপুরুষ কি করে কাফির-মুশরিক হতে পারেন? কারণ কাফির-মুশরিক মাত্রই নাপাক।
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালাম শরীফ উনার মধ্যে কাফির-মুশরিকদের সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-
انما المشركون نجس.
অর্থ: “নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র বা নাপাক।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
            অতএব, এ ধরনের বক্তব্য উম্মতের জন্য বলাতো দূরের কথা কল্পনা করাও কুফরীর শামিল।
উল্লেখ্য, যিনি যত বেশি মূল্যবান উনার সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও উনার পাত্রও ততই মূল্যবান হয়ে থাকে। অতএব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অবস্থানস্থল অর্থাৎ যে পবিত্র রেহেম শরীফ ও পৃষ্ঠ মুবারক উনাদের মাধ্যমে যমীনে আগমন করেন তা কত মূল্যবান ও পবিত্র তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

*************************************


নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শধন্য পবিত্র বিষয়গুলোর মর্যাদা আরশে আযীম উনার চেয়ে বেশি হলে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ধারক-বাহক উনার সম্মানিত পিতা-মাতা উনাদের মর্যদা-মর্তবা কতটুকু?

            সমস্ত হযরত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজমা করেছেন যে, পবিত্র রওযা শরীফ উনার যে মাটি মুবারক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারক স্পর্শ করে আছে, তা আরশে আযীম থেকেও বেশি মর্যাদাবান ও সম্মানিত সুমহান। তাহলে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে পিতা-মাতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ধারণ করেছেন সে সমস্ত সুমহান ব্যক্তিত্ব উনাদের ফযীলত তাহলে কত বেশি এবং উনারা কতটুকু সম্মানিত তা বলার অপেক্ষাই রাখে না। আর বেহেশতে উনাদের সুউচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে দুনিয়াবাসী কোনো মানুষের পক্ষে কল্পনা করাও সম্ভব নয়। সুবহানাল্লাহ!
            এতে প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-পিতামহ আলাইহিমুস সালাম অর্থাৎ উর্ধ্বতন পূর্ব পুরুষগণ অর্থাৎ যে সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব-ব্যক্তিত্বা উনাদের মাধ্যমে তিনি যুগে যুগে স্তরে স্তরে স্থানান্তরিত হয়ে এসেছেন উনাদের সকলেই ঈমানদার তথা ওয়াহ্দানিয়াতের উপর ছিলেন। অন্যথায় বুখারী শরীফ উনার ছহীহ্ রেওয়ায়েত এবং পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার ঘোষণা ভুল প্রমাণিত হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ!

0 Comments: