কারণ ও
তার সংশ্লিষ্ট বিষয়
সম্পর্কে
ফতওয়া
গবেষণা কেন্দ্র- মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
সমস্ত
প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন উনার এবং অসংখ্য দুরূদ ও
সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া
জামিয়া শরীফ উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায়
যথাক্রমে টুপি, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাযার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও
তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামায ফরজে আইন ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া,
মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী
সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া
মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরজ
নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করার পর দশম ফতওয়া
হিসাবে “ইনজেকশন নেওয়া রোজা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া,” প্রকাশ
করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া। বর্তমান সমাজের
প্রেক্ষাপটে এ ফতওয়াটি (অর্থাৎ ইনজেকশন নেয়া রোজা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট
বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া) বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে, যা
অস্বীকার করার উপায় নেই। কেননা বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে চিকিৎসার মাধ্যম হিসাবে
ইনজেকশনের ভূমিকা অপরিসীম,
বিশেষ করে কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে নিয়মিত ইনজেকশন নেয়ার
প্রয়োজন পড়ে। সুতরাং রোজাদার অবস্থায় ইনজেকশন নেয়া, না নেয়ার ব্যাপারে অনেকেই সিদ্ধান্ত
হীনতায় ভোগেন, যেহেতু কিছু সংখ্যক মাওলানা সাহেব ইনজেকশনৈর কার্যকারিতা সম্পর্কে অজ্ঞতা হেতু
বিভ্রান্তিমূলক ফতওয়া দিয়েছেন যে, “রোজা রাখা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়না” অথচ সম্মানিত
ইসলামী শরীয়া উনার উসুল মোতাবেক যা সম্পূর্ণ ভুল। অর্থাৎ রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে
অবশ্যই রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
পবিত্র হাদীছ
শরীফ মোতাবেক ইসলামী শরীয়ত উনার সাধারণ উসুল হলো “শরীরের ভিতর থেকে কোনকিছু বের হলে
উযূ ভঙ্গ হয় এবং বাইরে থেকে কোন কিছু শরীরের ভিতরে প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয়।” অবশ্য
কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এই উসুলের ব্যতিক্রম লক্ষণীয়। কিন্তু খাছভাবে রোজার
ব্যাপারে ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যে উসুল, অর্থাৎ “বাইরে
থেকে রোজা অবস্থায় যে কোন প্রকারে বা পদ্ধতিতে শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে, যদি তা
পাকস্থলী অথবা মগজে প্রবেশ করে, তবে অবশ্যই রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে, ”এই
উসুলের উপরেই ফতওয়া এবং অন্যান্য ইমাম মুজতাহিদগণও এ ব্যাপারে একমত যে, যদি
নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে,
ওষুধ মগজ অথবা পাকস্থলীতে পৌঁছায়, তবে
অবশ্যই রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
ইসলামী শরীয়ত
উনার দৃষ্টিতে এখানে মগজ বলতে মাথার ভিতরের ঐ থলীকে বুঝানো হয়েছে, যেখানে
মগজ অবস্থান করে। অর্থাৎ ওষুধ ইত্যাদি মগজ পর্যন্ত পৌঁছানো শর্ত।
উপরোক্ত
উসুলের ভিত্তিতে যে কোন প্রকারের বা যে কোন পদ্ধতিতে ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে
যায়, তা এই ফতওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ করা হয়েছে। যেহেতু যে কোন প্রকারের বা পদ্ধতিতেই
ইনজেকশন নেয়া হোক না কেন,
ইনজেকশনের ওষুধ কিছু সময়ের মধ্যে রক্তস্রোতে মিশে যায় ও
সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তের মাধ্যমে তা কয়েক মিনিটের মধ্যে মগজে পৌঁছে যায়।
কেননা রক্ত এমন একটি মাধ্যম, যার সাথে সরাসরি শরীরের প্রত্যেকটি কোষ ও কলা-এর সংযোগ
রয়েছে।
সাধারণভাবে
সকলের স্পষ্টভাবে বুঝবার সুবিধার্থে ইনজেকশনের প্রকারভেদ, পদ্ধতি, কার্যকারিতা
ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা অর্থাৎ কিভাবে মগজে পৌঁছায় ইত্যাদি
আলোচ্য ফতওয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা মনে করি এ ব্যাপারে ইনশাআল্লাহ আর কোন
প্রকার সন্দেহের অবকাশ থাকবে না। চিকিৎসা বিজ্ঞান ও শরয়ী দলীল তথা আকলী ও নকলী
দলীল-আদিল্লার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে আমরা যেভাবে প্রমাণ করেছি যে, “ইনজেকশন
নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়”,
কারো পক্ষে তা খণ্ডানো সম্ভব হবে না ইনশাআল্লাহ। মহান
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন উনার পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون.
অর্থঃ- “আমি
জ্বিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি, একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যে।”
আর
বান্দার জন্যে সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য নিয়ামত। এক কথায় এ পৃথিবীর সবকিছুই বান্দার
ফায়দার জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক হয়েছে যে,
هو الذى خلقلكم ما فى الارض جميعا.
অর্থঃ- তিনি সেই মহান
আল্লাহ পাক, যিনি যমীনে সবকিছু তোমাদের (ফায়দার) জন্যে সৃষ্টি করেছেন।” আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
ان الدنيا خلقت لكم وانكم خلقتم للاخرة.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই এ
পৃথিবী (এবং এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে) সব তোমাদের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে।”
মূলকথা হলো- মহান আল্লাহ পাক
তিনি যতকিছুই সৃষ্টি করেছেন, তার সবই ফায়দাজনক বা উপকারী, কোনটিই অহেতুক সৃষ্টি করেননি। আর
তাই এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
ربنا ما خلقت هذا با طلا.
অর্থঃ- “আমাদের
রব এগুলো অহেতুক সৃষ্টি করেননি।”
তবে
লক্ষণীয় বিষয় হলো- মানুষ কিন্তু এ পৃথিবীর কোন কিছুই ইচ্ছে মত ব্যবহার বা গ্রহণ
করতে পারবেনা, তাকে এব্যাপারে অবশ্যই আল্লাহ পাক উনার নির্দেষ মুবারক মেনে চলতে হবে। আর তাই মহান
আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وما
اتا كم الرسول فخذوه وما نها كم عنه فانتهوا واتقوا الله ان الله شديد العقاب.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের জন্যে যা নিয়ে এসেছেন, তা আঁকড়িয়ে ধরো এবং যার থেকে বিরত
থাকতে বলেছেন, তার থেকে বিরত থাকো এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, নিশ্চয়ই
মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।”
আর পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে,
تركت
فيكم امرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله وسنتى.
অর্থঃ- “আমি
তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে গেলাম,
যতদিন তোমরা এদু’টোকে আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে, (অর্থাৎ
মেনে চলবে) ততদিন তোমরা গুমরাহ হবেনা। (সে দু’টো হলো) মহান আল্লাহ পাক উনার
পবিত্র কিতাব মুবারক ও আমার পবিত্র সুন্নাহ মুবারক।”
অতএব, আমাদেরকে
কোনকিছু করতে হলে,
বলতে হলে, তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের ভিত্তিতেই
করতে হবে। তবে কোন বিষয়ে যদি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে
স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া না যায়, তখন সেক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনাদের দৃষ্টিতে ইজতেহাদ করার আদেশ ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে
কিতাবে উল্লেখ করা হয়,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত
মুয়াজ ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ইয়েমেনের গভর্ণর করে পাঠানোর
প্রাক্কালে জিজ্ঞাসা করেছিলেন,
بم
تقضى يامعاذ؟ فقال بكتاب الله، فان لم تجد؟ قال بسنة رسول الله، فان لم تجد، قال
اجتهد برائ، فقال الحمد الله الذى وفق رسول رسول الله بما يرضى به رسوله. (مشكواة)
অর্থঃ- “হে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা
আনহু! আপনার নিকট কোন মুকাদ্দমা আসলে কিভাবে তা ফায়সালা করবেন? হযরত
মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কিতাব
মুবারক তথা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দ্বারা। যদি ওটাতে না পান তাহলে? মহান
আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নাহ মুবারক দ্বারা। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, যদি
ওটাতেও না পান তাহলে?
আমি পবিত্র কিতাব মুবারক তথা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ
শরীফ উনাদের ভিত্তিতে ইজতিহাদ করে রায় দেবো। এ উত্তর শুনে নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সমস্ত
প্রশংসা ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার, যিনি উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দূতকে এ যোগ্যতা দান করেছেন, যাতে
উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি সন্তুষ্ট হন। আর মহান আল্লাহ
পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اطيعوا الله واطيعوا السول واولى الامر منكم.
অর্থঃ- “মহান
আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইত্বায়াত করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা (উলিল আমর) আদেশ
দাতা, তাদের অনুসরণ কর।”
এখানে ‘উলিল আমর’ বলতে
ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকেই বুঝানো হয়েছে।
সুতরাং ‘উলিল আমর’ যেমন ক্বিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে থাকবেন, তদ্রুপ ইজতেহাদের দরজাও ক্বিয়ামত
পর্যন্ত খোলা থাকবে। আর পবিত্র ইজমা শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে এ
ইজতেহাদেরই অন্তর্ভূক্ত।
অতএব, পৃথিবীতে
ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত নতুন সমস্যারই উদ্ভব হোক না কেন, তার
ফায়সালা অবশ্যই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ
শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে করতে হবে।
প্রসঙ্গতঃ
উল্লেখ্য যে, আমরা শরীরের রোগ নিরাময়ের জন্যে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ওষুধ সেবন বা ব্যবহার করে
থাকি, তার মধ্যে একটি অন্যতম পদ্ধতি হলো- ‘ইনজেকশন’। এ
ইনজেকশন বর্তমান আধুনিক চিকিৎসা ক্ষেত্রে
এক বিশেষ পদ্ধতি, যা চিকিৎসার ক্ষেত্রে অপরিসীম
গুরুত্ব বহন করছে। কিন্তু কথা হচ্ছে- সম্মাতি দ্বীন ইসলাম উনার পাঁচটি ভিত্তির
মধ্যে অন্যতম একটি ভিত্তি হলো- পবিত্র রমযান শরীফ মাস উনার রোজা, যেটা
উম্মতে হাবীবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্যে ফরজে আইন
করা হয়েছে।
এ
প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন তিনি পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক করেন,
ياايها
الدين امنوا- كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون.
অর্থঃ- “হে
ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হলো- যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা
হয়েছিল, যেন তোমরা তাক্ওয়া হাছিল করতে পার।”
আর পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
بنسى
الاسلام على خمس- شهادة ان لا اله الا الله وان محمدا عبده ورسوله واقام الصلوة
وايتاء الزكوة والحج والصوم رمضان.
অর্থঃ- “পবিত্র
দ্বীন ইসলাম উনার ভিত্তি পাঁচটি- (১) সাক্ষি দেয়া- মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত আর
কোন ইলাহ্ (মাবূদ) নেই এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার
বান্দা ও রসূল। (২) নামায কায়েম করা। (৩) যাকাত আদায় করা। (৪) হজ্ব করা। (৫) পবিত্র
রমযান শরীফ মাস উনার রোজা রাখা।”
এ
প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
فمن شهد منكم الضهر فليصمه.
অর্থঃ- “সুতরাং
তোমাদের মধ্যে যে কেউ পবিত্র রমযান শরীফ মাস পাবে, তাকে
অবশ্যই রোজা রাখতে হবে।”
তবে পবিত্র
রমযান শরীফ মাস উনার মধ্যে যারা ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মাজূর বা অসুস্থ থাকবে, তাদের
জন্যে অন্য সময় রোজা রাখার আদেশ মুবারক রয়েছে। আর তাই পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ومن كان مريضا اوعلى سفر فعدة من
ايام اخر.
অর্থঃ- “আর যারা
অসুস্থ অথবা মুসাফির,
তারা অন্য সময় রোজাগুলো আদায় করে নেবে।”
মূলকথা হলো-
পবিত্র রমযান শরীফ মাস উনার ৩০ দিন বা ২৯ দিন (চাঁদের হিসাব মোতাবেক) রোজা রাখা
ফরজ। এটার অস্বীকারকারী কাফির এবং তরক করলে কবীরা গুণাহ্ হবে। অতএব উক্ত ফরজ
রোজাগুলো আমাদেরকে সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। আর সঠিকভাবে আদায় করতে হলে অবশ্যই তার
মাসয়ালা-মাসায়েলগুলো জানতে হবে। অর্থাৎ কি করলে রোজা ভঙ্গ হয়, আর কি
করলে রোজা ভঙ্গ হয়না,
এ সম্পর্কিত ইল্ম (জ্ঞান) অর্জন করা অবশ্য কর্তব্য। অর্থাৎ ফরজ।
এ
প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
طلب
العلم فريضة على كل مسلم.
অর্থঃ- “প্রত্যেক
মুসলমানের (নর ও নারী) জন্যে ইলম বা জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।”
অতএব ইসলামী
শরীয়ত সম্পর্কিত সকল বিষয়ের প্রয়োজনীয় ইলম অর্জন করা যেমন ফরজ তদ্রুপ রোজা অবস্থায়
ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে কিনা এ সম্পর্কিত ইলম অর্জন করাও ফরজ। সুতরাং যারা না
জেনে রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিবে, তারা এ সম্পর্কিত ইলম অর্জন না করার কারণে ফরজ তরকের গুণাহে
গুণাহ্গার হবে।
মূলতঃ
পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ইমাম,
মুজতাহিদগণ উনাদের ফিক্বাহের কিতাবসমূহে রোজা ভঙ্গ হওয়া না
হওয়ার কারণসমূহ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। তবে সম্প্রতি যে বিষয়টি নিয়ে মুসলিম
উম্মাহ্ বেশী সমস্যার সম্মুখীন, তা হলো- রোজা অবস্থায় “ইনজেকশন ব্যবহার করা।” পূর্ববর্তী
হযরত ইমাম-মুজতাহিদগণ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সময় যেহেতু ইনজেকশনের ব্যবহার
ছিলনা, তাই উনারা ইনজেকশন সম্পর্কে কোন আলোচনা করেননি। তবে রোজা ভঙ্গ হওয়া না হওয়ার
কারণ বা উসূলগুলো কিতাবসমূহে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে গিয়েছেন। কাজেই
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে, ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে কি
হবেনা। ইতিপূর্বে কেউ কেউ ফতওয়া দিয়েছেন যে, “ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়না।”
যেমন ইমদাদুল
ফতওয়ার ২য় জিঃ ১৫৪নং পৃষ্ঠায়, ২১৯নং সুওয়ালের জাওয়াবে বলা হয়েছে যে, “ইনজেকশন
নিলে রোজা ভঙ্গ হয়না।”
অনেকে
ইনজেকশন সম্পর্কে এ ফতওয়াকেই দলীল হিসাবে পেশ করে থাকেন এবং এটাকেই ইনজেকশন
সম্পর্কে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত বা ফায়সালা মনে করে থাকেন।
আর এর
উপর ভিত্তি করে বর্তমানে অনেকে ফতওয়া দিচ্ছে যে, রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোজা
ভঙ্গ হয়না।
ইমদাদুল ফতওয়া কিতাবের বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে ফতওয়া
দেওয়ার পূর্বে উচিৎ ছিল ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্যকে ভালরূপে তাহক্বীক্ব করা। বিনা
তাহক্বীক্বে ফতওয়া দেয়ার পরিণামও খুব ভয়াবহ। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
বর্ণিত আছে,
عن
ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من افتى بغير علم
كان اثمة على من افتا. (رواه ابو داود)
অর্থঃ- হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তিকে ইলম ব্যতীত ফতওয়া
দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তদানুযায়ী কাজ করেছে, তার গুণাহ্ যে তাকে ফতওয়া দিয়েছে, তার উপরই
পড়বে।” (আবু দাউদ শরীফ)
অতএব,
কেউ যদি কারো ফতওয়ার উপর ভিত্তি করে রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নেয় (আর যেহেতু ইনজেকশন
নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়) তবে রোজা ভঙ্গের
গুণাহ্ উক্ত ফতওয়া প্রদানকারীর উপর বর্তাবে। সুতরাং ফতওয়াদানের ব্যাপারে আমাদের
সাবধান থাকতে হবে। অর্থাৎ বিনা তাহক্বীক্বে ফতওয়া দান হতে বিরত থাকতে হবে। এ
প্রসঙ্গে হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ওয়াকেয়াটি আমাদের জন্যে এক
অমূল্য নসীহত, যদি আমরা বুঝি। তাহলো- হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি
মালেকী মাযহাবের ইমাম। উনার সীরতগন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত
ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রথম যেদিন ফতওয়ার মসনদে বসলেন মুফতী হিসেবে, ফতওয়া
দেয়ার জন্য সেদিনই উনার কাছে ৪০টি মাসয়ালা বা সুওয়াল আসলো। তিনি ১৮টার জাওয়াব দিয়েছেন
এবং বাকী ২২টির জাওয়াবে বলেছেন, ‘আমি জানি না’ যখন জাওয়াব শেষ হয়ে গেলো এবং
সুওয়ালকারীগণ চলে গেলো,
তখন উনার নিকটবর্তী যে সকল বড় বড় আলেমগণ বসেছিলেন উনারা
বললেন, “হে হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি
আলাইহি আপনি কি সত্যই ঐ ২২টি মাসয়ালার জাওয়াব জানেন না? তখন হযরত
ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আমার
জানা আছে, তবে ১৮টি মাসয়ালায় আমার পূর্ণ তাহ্কীক আছে, তাই জাওয়াব দিয়েছি, আর বাকী
২২টি মাসয়ালায় পূর্ণ তাহ্কীক নেই, হতে পারে বর্তমানে ২২টি মাসয়ালা সম্বন্ধে আমার যে ফয়সালা
আছে পূর্ণ তাহ্কীকের পরে তার ব্যতিক্রমও হতে পারে। এই লোকগুলি অনেক দূর থেকে প্রায়
৬ মাসের রাস্তা অতিক্রম করে আমার কাছে এসেছে মাসয়ালা জানার জন্য। এখন যদি আমি বিনা
তাহ্কীকে তার জাওয়াব দিয়ে দেই যা পূর্ণ শুদ্ধ নয়, তবে তার ভিত্তিতে তারা আমল শুরু
করবে, আর পরে যখন আমার পূর্ণ তাহ্কীক হবে এবং তা যদি বর্তমান ফয়সালার ব্যতীক্রম
ফয়সালা হয়, তাহলে তাদেরকে কে এই ফয়সালার বিশুদ্ধ বা পূর্ণ তাহ্কীক সম্বলিত মতটি জানাবে? যেহেতু
আমি তাদের বিস্তারিত পরিচয় বা ঠিকানা জানি না। আর এজন্য হয়ত আমাকে মহান আল্লাহ পাক
উনার কাছে জওয়াবদিহি ও পাকড়াও হতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন,
فاسئلوا
اهل الذكر انكنتم لا تعلمون.
অর্থঃ- “যদি
তোমরা না জান, তাহলে যারা জানেন ও অভিজ্ঞ, তাদেরকে জিজ্ঞেস করে নাও।” সেজন্য আমি তাদেরকে বলেছি আমি
জানি না। অর্থাৎ আমার পূর্ণ তাহ্কীক নেই। যার এব্যাপারে পূর্ণ তাহ্কীক আছে, তার কাছ
থেকে জেনে নাও।
মূলতঃ
ইনজেকশন সম্পর্কে ইমদাদুল ফতওয়া কিতাবের উক্ত বক্তব্য শুদ্ধ হয়নি।
কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ফিক্বাহ শরীফ উনাদের কিতাবে বর্ণিত উসুল ও বর্তমান আধুনিক বিশ্বের উন্নততর
চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ভালরূপে তাহক্বীক্ব বা গবেষণা করার পর এটাই প্রমাণিত
হয় যে, ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। অতএব, ইনজেকশন সম্পর্কে ইমদাদুল
ফতওয়া কিতাবের বক্তব্য ভুল, কাজেই তা গ্রহণযোগ্য নয়।
পাঠকগণের
সুবিধার্থে নিম্মে ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্যটি হুবহু বাংলা অনুবাদসহ ছাপিয়ে দেওয়া
হলো, যেন পাঠকগণ সহজেই ভুল ও শুদ্ধ ফতওয়াটির পার্থক্য করতে পারেন।
[এরপর
আমরা ওটার খন্ডনমূলক আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ]
ইনজেকশন সম্পর্কে ইমদাদুল ফতওয়া কিতাবের বক্তব্য :
سوال (219) : کیا فرما تے ھین علما ئے دیناس مسئلہ مین کہ اج کل جو انجکشن
کے ذریعہ دوا بدن مین پھو نچائی جاتی ھے- یہ مفسدصوم ھے یا نھین ادلہء شرعیہ سے
جواب عنایت فرمایا جائے-
প্রশ্নঃ- ওলামায়ে দ্বীন এ মাসয়ালা সম্পর্কে কি
বলেন- বর্তমানে ইনজেকশনের দ্বারা শরীরের ভিতর যে ওষুধ প্রবেশ করানো হয়, তাতে
রোজা ভঙ্গ হবে কি?
শরীয়তের দলীল দ্বারা উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।
جواب:- داکطرون سے تحقیق کرنے سے نیز تجربہ سے یہ بات ثابت ھوئی کہ انجکشن
کے ذریعہ دوا جوف عروق مین پھونچئی جاتی ھے-
اور خون کے ساتھ شرائیین یا اوردہ مین اس کا
سریان ھوتا ھے- جوف دماغ یا جوف بطن مین دوا نھین پھو نچتی- اور فساد صوم کے لئے
مفطر کا جوف دماغ یا جوف بطن مین پھونچنا ضروری ھے مطلقا کسی عضوکے جوف مین یا
عروق (شرائیین و اوردہ( کے جوف مین پھونچنا مفسد
صوم نھین- لھذا انجکشن کےذریعہ سے جودوا بدن مین پھر نچانئی جاتی ھے مفسد صوم نھین-
জাওয়াবঃ- ডাক্তারদের সাথে তাহক্বীক্ব
ও গবেষণার পর এটাই সাব্যস্ত হলো যে, ইনজেকশনের দ্বারা ওষুধ
جوف عروق অর্থাৎ শীরার ভিতরে পৌঁছান হয় এবং شرائين (শারাঈন) (অর্থাৎ যে রগ দিয়ে রক্ত চলাচল করে) (যে রগ দিয়ে
রক্ত চলাচলা করেনা) এর ভিতর দিয়ে গিয়ে রক্তের সাথে মিশে যায়। (মগজ) অথবা (পেটের)
এর মধ্যে ওষুধ প্রবেশ করেনা। অথচ রোজা ভঙ্গ হওয়ার জন্য ওষুধ ইত্যাদি মগজ অথবা
পেটের মধ্যে পৌঁছানো আবশ্যক।
সাধারণভাবে
কোন অঙ্গের ভিতরে অথবা শিরায় (অর্থাৎ শারাঈন এবং আভেরদাহ)-এর ভিতরে ওষুধ ইত্যাদি
পৌঁছানোই রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। এজন্যই ইনজেকশনের মাধ্যমে যে ওষুধ শরীরের ভিতরে
ঢুকানো হয়, তাতে রোজা ভঙ্গ হবেনা।
فقھاء کی عبارتین دو طرح پرتقریبا بلکہ حقیقۃ اس دعوے کی تصریح کرتے ھین
اول تویہ کہ فقھاء نے زخم پر دوا دالنے کو مطلقا مفسد نھین فرمایا بلکہ جائفہ یا
امہ کی قید لگائی ھے- کیونکہ انھین دوقسم کے زخمون سے دوا جوف دماغ یا جوف بطن کےاندر
پھونچتی ھے- ورنہ جوف عروق کے اندرتو دوسری قسم کے زخمون سے بھی دوا پھونچ جاتی ھے-
হযরত ফুক্বাহায়ে কিরামগণ
উনাদের অভিমত আনুমানিক বরং সাত্যিকার অর্থে দু’ভাবে এ দাবীর স্পষ্টতা প্রমাণ
করে- (১) ফক্বীহগণ সাধারণতঃ জখমে (আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে) ওষুধ দেয়াকে রোজা ভঙ্গের
কারণ বলেননি। বরং (অর্থাৎ যে যখম পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছেছে) অথবা (অর্থাৎ যে যখম
মগজ পর্যন্ত পৌঁছেছে)-তে লাগানোর শর্ত দিয়েছেন। কেননা তাদের মতে এ দু’ধরণের
জখমের দ্বারা ওষুধ মগজ অথবা পেটের মধ্যে পৌঁছে যায়। নচেৎ ওষুধ অন্যান্য জখমের
দ্বারা শিরার ভিতরে পৌঁছে যায়।
دوسرے بھت سی جزئیات فقھیہ مسلمات فقھاء مین سے ایسی ھین جن مین دوا و غیرہ مطلقا جوف بدن مین توپھونچ گی
لیکن چونکہ جوف دماغ یا جوف بطن مین نھین پھونچی- اس لئے اس کو مفطرو مفسد صوم نھین
قراردیا- جیسے مرد کی پیشاب گاہ کے اندر دوا یا تیل و غیرہ چرھانے سے باتفاق ائمہء
ثلاثہ روزہ فاسد نھین ھوتا کما صرح بہ الشامی حیث قال و افادا نہ بقی فی قصبۃ الذکر
لا یفسد اتفاقا و لاشک فی ذالک شامی صفہ 103 ج2- و مثلہ فی الخلاصۃ صفہ 253 ج 1
(২) অনেক সম্মানিত ফক্বীহ উনাদের ফিক্বহী অভিমত হলো- সাধারণভাবে যদিও শরীরের
ভিতর ওষুধ ইত্যাদি প্রবেশ করে থাকে কিন্তু যেহেতু তা মগজ ও পেটের ভিতর প্রবেশ
করেনা, তাই এটা রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। যেমন- তিন ইমামের সর্বসম্মত মত হলো- পুরুষের
প্রস্রাবের রাস্তার ভিতর ওষুধ অথবা তেল ইত্যাদি প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হবেনা।
যেটা শামী কিতাবে স্পষ্ট বলা হয়েছে- নিশ্চয়ই ওষুধ ইত্যাদি পুংলিঙ্গের রগে অবস্থান
করে (অর্থাৎ ভিতরে প্রবেশ করেনা)। সুতরাং (ইমামদের) ঐক্যমতে রোজা ভঙ্গ হবেনা এবং
এতে কোন সন্দেহও নেই। শামী ২য় জিঃ ১০৩ পৃষ্ঠা, অনুরুপ খোলাসা ১ম জিঃ ২৫৩ পৃষ্ঠা।
نقلا عن ابی بکرا لبلخی رح- اگردوا مثانہ تک پھنونچ جائے تب بھی امام
اعظم رحمۃ اللہ علیہ اور امام محمد رحمۃ اللہ علیہ کے نزدیک مفسد صوم نھین- امام
ابو یوسف جو مثانہ مین پھونچ جائے کو مفسد قرار دیتے ھین- وہ بھی اس بناء پر کہ ان
کو یہ معلوم ھوا کہ مثانہ اور معدہ کے درمیان
منفذ ھے- جس سے دوا معدہ مین پھونچ جاتی ھے- نھین فرماتے- اسی لئے صاحب ھدایہ نے
اس اختلاف کے متعلق فرمایا ھے-
হযরত আবূ বকর বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত- যদি ওষুধ মুত্রথলী
পর্যন্ত পৌঁছে যায়- তবেও হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম
মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে রোজা
ভঙ্গ হবেনা। আর হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে মুত্রথলীতে
পৌঁছলে রোজা ভঙ্গ হবে। তিনি এরূপ অভিমত এই উসুলের উপর ভিত্তি করে দিয়েছেন যে, তিনি
জানতে পেরেছেন, মুত্রথলী এবং পাকস্থলীর মধ্যে রাস্তা রয়েছে। যার দ্বারা ওষুধ পাকস্থলীতে
পৌঁছে যায়। শুধু মুত্রথলীর মধ্যে ওষুধ পৌঁছাকে (আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রোজা ভঙ্গের কারণ
বলেননি। এ জন্যই হিদায়া কিতাবের লেখক এ মতবিরোধ সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন-
فكانه
وقع عندابى يوسف ان بينه وبين الجوف منفذا ولهذا يخرج منه البول ووقع عندا بى
حنيفة ان المثائة بينهما حائل والبول يترشح منه وهذا ليس من باب الفقه- محقق ابن
همام اس كى شر مين قرما تى هين يفيد انه لا خلاف لواتفقوا على تشريح هذا العضو فان
قول ابى يوسف رح يالا فساد انماهوعلى بناء قيام المنفذ بين المثانة والجوف (الى
قوله) قال فى شرح الكنز ويعضهم جعل المشانه نفسها جوفا عند ابى يوسفوح وحكى بعضهم
الخلاف مادام فى قصبة الذكر وليسا بشئ انتهى.
হযরত ইমাম আবু ইউসুফ
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে নিশ্চয়ই মুত্রথলী ও পাকস্থলীর মধ্যে রাস্তা রয়েছে, যার
মাধ্যমে প্রস্রাব বের হয়। আর হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে
নিশ্চয়ই পাকস্থলী ও মুত্রথলীর মধ্যে পর্দা বা প্রতিবন্ধক রয়েছে, যার থেকে
প্রস্রাব ঝরে থাকে। এটা ফিক্বাহ্ শাস্ত্রের বিষয় নয়। (এটা ডাক্তারী বিদ্যার
অন্তর্ভূক্ত) মুহাক্কিক ইবনে হুমাম এটার ব্যাখ্যায় বলেন যে, এটার
মধ্যে কোন মতভেদ নেই,
যদি এ অঙ্গের ব্যাখায় সকলে একমত হন। আর আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি মূত্রথলী ও পাকস্থলীর মাঝে
রাস্তা থাকার উপর ভিত্তি করে বলেছেন- রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। শরহে কানযে বলা হয়- হযরত
ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে অনেকেই মূত্রথলীকে (জাওফ) থলী হিসাবে
সাব্যস্ত করেছেন। আর অন্যান্য অনেকে এর বিপরীত মত প্রকাশ করেছেন সুতরাং যা
পুংলিঙ্গের রগে পৌঁছবে তাতে রোজা ভঙ্গ হবেনা।
الغرض اسی طرح اگر کان مین پانی دالے تو روزہ فاسد نھین ھوتا- کما ضرح بہ فی درالمختار و الخلاصۃ
حلاتکہ کان بھی ایک جوف ھے- اسی طرح اگر کوئی انگور و غیرہ کو ایک تاگے مین باندہ کرنگل
جائے اور پھر معدہ مین پھو نچنے سے پھلے کھینچنے سے روزہ فاسد نھین ھوتا- کما قال فی الخلاصۃ و علی ھذا الوابتلع عنبا
مربوطا بخیط- ثم اخرجہ لا یفسد صومہ- خلاصہ صفہ 26 او مثلہ فی العالمگیر یہ مطبوعۃ
الھند صفہ 202 و لفظہ و من ابتلع لحما مربوطا علی خیط ثم انتزعہ من ساعتہ لا یفسدوان
ترکہ فسد کذا فی البدائع-
এমনিভাবে যদি কানের মধ্যে
পানি ঢালে, তবে রোজা ভঙ্গ হবেনা। যেমন দুররুল মুখতার এবং খোলাসা কিতাব
উনাদের মধ্যে রয়েছে। অথচ কানও এক প্রকার থলী। এভাবে যদি আঙ্গুর বা কোন ফল ইত্যাদি সুতায়
বেঁধে গলার ভিতরে ঢুকান হয় এবং পাকস্থলীতে পৌঁছানোর পূর্বেই বের করা হয়, তবে রোজা
ভঙ্গ হবেনা। যেমন খোলাসা কিতাব উনার মধ্যে বলা হয়েছে- যদি কোন সুতায় বাধা
আঙ্গুর গলার ভিতরে প্রবেশ করানো হয়, অতঃপর পূণরায় বের করা হয়, তাহলে
তার রোজা ভঙ্গ হবেনা। (খোলাসা ১ম জিঃ ২৬পৃষ্ঠা) অনুরূপ আলমগীরী
মাতবুআতুল হিন্দ পৃষ্ঠা ২০২-এর মধ্যে বলা হয়েছে- যদি কোন ব্যক্তি গোস্তের
টুকরা সুতায় বেঁধে ভিতরে প্রবেশ করায়ে সাথে সাথে বের করে আনে, তবে তার
রোজা ভঙ্গ হবেনা। আর যদি রেখে দেয়, তবে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এটা বেদায়া
কিতাবের মধ্যে বলা হয়েছে।
اگر مطلق جوف بدن مین کسی شئی کا پھونچنا مفسد ھوتا توخود پیشاب گاہ بھی
ایک جوف ھے- اور مثانہ توبدرجہ اولی جوف ھے- گان اور حلق بھی جوف ھین- ان مین پھونچنا
بلاخلاف مفسد صوم ھوتا اس سے معلوم ھواکہ مطلقا جوف بدن مین مفطر چیزون کا پھونچنا
مفطر صوم نھین بلکہ خاص جوف دماغ اور جوف بطن مین مرادھین بلکہ جوف دماغ بھی اس مین
اصل نھین وہ بھی اس وجہ سے لیاگیا ھے کہ
جوف دماغ مین پھونچنے کے بعد بذریعہ منفذ جوف معدہ مین پھونچ جانا عادت اکثر یہ ھے
جیسا کہ صاحب بحرکی تصریح سے معلوم ھوتاھے- قال فی البحرو التحقیق ان بین جوف
الرأس و جوف المعدہ منفذا اصلیا فما وصل الی جوف الرأس و جوف المعدہ منفذا اصلیا
فما وصل الی جوف الرأس وصل الی جوف البطن من الشامی صفہ 106 ج 2
যদি সাধারণভাবে শরীরের কোন
থলীর মধ্যে কোন বস্তু পৌঁছানোই রোজা ভঙ্গের কারণ হতো, তবে
প্রস্রাবের রাস্তাও একটা থলী এবং মূত্রথলীও একটি উত্তম থলী। কান এবং হলকও জাওফের
অন্তর্ভূক্ত। এগুলোর ভিতর পৌঁছার কারণে বিনা মতভেদেই রোজা ভঙ্গ হয়ে যেত। এর
দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে,
সাধারণভাবে শরীরের কোন থলীর মধ্যে (যা প্রবেশ করলে রোজা
ভঙ্গ হয়, এমন বস্তু) পৌঁছানোই রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। বরং খাস করে (মগজের মধ্যে) এবং
(পেটের) মধ্যে পৌঁছানো শর্ত। আর মগজের মধ্যে পৌঁছানোও তার মধ্যে মূল কারণ নয়।
মগজের শর্ত এজন্য করা হয়েছে যে, দেমাগের (মগজের) মধ্যে পৌঁছার পর (ওষুধ ইত্যাদি) রাস্তার
দ্বারা পাকস্থলীতে (পেটে) পৌঁছাই স্বাভাবিক। যেমন সাহেবে বাহরের ভাষ্য দ্বারা
বুঝা যায়।
বাহরুর রায়েক কিতাবের মধ্যে বলা হয়েছে- নিশ্চয়ই মগজ এবং পাকস্থলীর
মধ্যে মূল রাস্তা রয়েছে। সুতরাং যা মগজে পৌঁছে, তা পেটের মধ্যেও প্রবেশ করবে। (শামী
২য় জিঃ পৃঃ-১০৬)
اس عبارت مین اس مفصد کی بالکل تصریح ھوگی کہ جوف سے مرادصرف جوف بطن ھے
اور جوف دماغ سے چونکہ جوف بطن مین پھنچنا لازمی ھے- اسے لئے اسمین پھو نچنے کوبھی
تبعا لجوف المعدہ مفسد قراردیا ھے- اسی طرح حقنہ و غیرہ کو تبعا لجوف المعدہ مفسد کھاگیا
ھے فتاوی قاضی خان مین ھے اما الحقنۃ و الوجور فلانہ و صل الی الجوف ما فیہ صلاح
البدن و فی القطور و السعوط لانہ وصل الی الراس ھافیہ صلاح البدن اس عبارت سے بھی
معلوم ھوا کہ جس جوف مین پھونچا مفسد صوم ھے وہ جوف معدہ اور جوف دماع ھے- مطلتا
جوف مراد نھین-
উপরোক্ত ইবারত দ্বারা এটা
স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, জাওফ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শুধু
পাকস্থলী। আর মগজ হতে যেহেতু পাকস্থলীতে পৌঁছে থাকে, তাই
মগজের মধ্যে পৌঁছানোকেও পাকস্থলীতে পৌঁছার ন্যায় রোজা ভঙ্গের কারণ বলা হয়েছে। এমনভাবে
(অর্থাৎ পায়খানার রাস্তায় ওষুধ দেয়া) ইত্যাদিও পাকস্থলীতে পৌঁছার কারণে রোজা
ভঙ্গের কারণ বলা হয়েছে।
ফতওয়ায়ে
কাজীখানের মধ্যে রয়েছে (হুকনা) হলো-
পায়খানার রাস্তায় ওষুধ প্রবেশ করানো (মুখের ভিতের ওষুধ ঢালা) যা পেটের মধ্যে
পৌঁছে যায়, যার দ্বারা শরীর সুস্থ হয়। এবং (হলো নাকের
মধ্যে ওষুধ দেয়া) তাহলো (কানের
ভিতরে ফোটা ফোটা ওষুধ দেওয়া) যা মাথায় পৌঁছে যায় এবং এ কারণে সুস্থতা লাভ হয়। ঐ
বক্তব্য দ্বারাও এটাই বুঝা যায় যে, যে থলীতে পৌঁছার কারণে রোজা ভঙ্গ
হয়, ওটা হলো- (পাকস্থলী) এবং মগজ। সাধারণভাবে (থলী) উদ্দেশ্য নয়। (অর্থাৎ রোজা
ভঙ্গের কারণ হলো ওষুধ ইত্যাদি পেট অথবা মগজে পৌঁছানো।
اور خلاصۃ الفتاوی کی عبارت اس مضمون کے لئے بالکل نص صریح ھے وھی ھذا
و ماوصل الی جوف الرأس و البطن من الاذن و
الانف و الدبر فھو مفطر بالاجماع و فیہ القضاء و ھی مسائل الاقطار فی الاذن و
السعوط و الوجور و الحقنۃ و کذا من الجائفۃ عند ابی حنیفۃ رحمۃ اللہ علیہ- اسی طرح
عالمگیری کے الفاظ بھی اس کے قریب ھے- و فی دواء الجائفۃ و الامۃ اکثر المشائخ علی
ان العبرۃ للوصول الی الجوف والدماغ- عالمگیریہ مطبوعۃ الھند صفہ 202 ج 1
এবং খুলাসাতুল ফতওয়ার
ভাষ্য এ বিষয়ে আরো সুস্পষ্ট। যা নিম্নরূপ- যে ওষুধ কান, নাক এবং
পিছনের রাস্তা দিয়ে মাথা ও পেটে পৌঁছে, সেগুলো সর্বসম্মতিক্রমেই রোজা
ভঙ্গের কারণ। আর উক্ত রোজার কাযা করতে হবে। এ মাসয়ালা ক্বুতুর (অর্থাৎ কানের মধ্যে
ওষুধ দেয়া) সুউত (অর্থাৎ নাকের ভিতর ওষুধ দেয়া) উজুর (অর্থাৎ মুখের ভিতর ওষুধ
দেয়া) এবং হুকনা (অর্থাৎ পায়খানার রাস্তায় ওষুধ দেয়া)-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
অনুরূপ জায়েফা ও আম্মাহ-তে ওষুধ প্রবেশ করালেও হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার মতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর
ফতওয়ায় আলমগীরী কিতাবের বক্তব্যও উপরোক্ত ভাষ্যের সমকক্ষ। যা নিম্নরূপ-
মগজের যখম ও পেটের যখমে ওষুধ দেয়ার কারণে যদি ওটা মগজ ও পাকস্থলীতে পেৌঁছে যায়, তবে
অধিকাংশ মাশায়েখ উনাদের মতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। (আলমগীরী মাতবুয়াতুল হিন্দ ১ম
জিঃ পৃঃ-২০২)
اور بدائع کی عبارت ان سب سے زیادہ اس مضمون کے لئے اصرح و اوضح ھے- و ھذا
وما وصل الی الجوف او الدماغ من المخارق الا صلیۃ کالانف و الاذن و الدبربان استعط
او احتقن او اقطر فی اذنہ فوصل الی الجوف او الی الدماغ فسد صومہ- و اذا و صل الی
الدماغ لانہ لہ منفذ الی الجوف فکان بمنزلۃ زوایۃ من زوا یات الجوف (الی قولہ(
و
اما اذا وصل الی الجوف او الی الدماغ من غیر مخارق الاصیۃ بان دوای الجائفۃ و الامۃ فان دواھا بدواء یابس
لا یفسد لانہ لم یصل الی الجوف و لا الی الدماغ و لو علم انہ وصل یفسد فی قول ابی
حنیفۃ رحمۃ اللہ علیہ بدائح صفہ 93 ج 2
আর এ ব্যাপারে ‘বাদায়ে’ কিতাবের
ইবারত উপরোক্ত বক্তব্যের চেয়েও সুস্পষ্ট। আর তা হলো- (মূল রাস্তা) অর্থাৎ কান, নাক এবং
পায়খানার রাস্তা দ্বারা যে ওষুধ পেট এবং মগজে পৌঁছে। যেমন কেউ নাকে, পায়খানার
রাস্তায় ও কানে ওষুধ প্রবেশ করালো, অতঃপর ওটা পেটের মধ্যে ও মগজে
পৌঁছে যায়, ওটা দ্বারা তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যখন মগজে পৌঁছবে, যেহেতু
মগজ হতে পাকস্থলী পর্যন্ত রাস্তা রয়েছে। সেহেতু মগজে পৌঁছানো, পাকস্থলীতে
পৌঁছানোরই সমতুল্য। আর যদি
غير مخارق الا صليه
অর্থাৎ মূল রাস্তা ব্যতীত
অন্য কোন রাস্তা দিয়ে মগজ ও পাকস্থলীতে পৌঁছে। যেমন- কেউ জায়েফা ও আম্মাহ্-তে
ওষুধ দেয়, আর উক্ত ওষুধ যদি শুকনা হয়, তবে রোজা ভঙ্গ হবেনা, কেননা ওটা মগজ ও পাকস্থলীতে
প্রবেশ করেনা। আর যদি নিশ্চিতভাবে বুঝা যায় যে (উক্ত ওষুধ পেট ও মগজে) পৌঁছে, তাহলে
তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এটা হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অভিমত।
(বাদায়ে ২য় জিঃ পৃঃ-৯৩)
هذا
والله سبحانه وتعالى اعلم بالصواب واليه المتاب فى كل باب- كتبه الاحقر محمد شفيع
غفرله خادم دا رالافتاء ديوبند ১১ ربح
الاول سنه هى. ১৩৫ الجواب
صحيح وهو راى منذبر هة من الزمان- اشرف على- ১৫ ربيح
ما لا ول سنه. ১৩৫ هى
النور هى ৫ رسضان
سنه ১৩৫ هى.
এ বিষয় সঠিক সিদ্ধান্ত
মহান আল্লাহ পাক তিনিই অধিক অবগত আছেন। উপরোক্ত বক্তব্য লিখেছেন আহকার মুহম্মদ সফী
সাহেব। খাদেম দারুল ইফতা দেওবন্দ। ১১ই রবিউল আউয়াল ১৩৫০ হিজরী। উত্তরটি শুদ্ধ হয়েছে, এটা
পূর্ব থেকেই আমার রায়। আশরাফ আলী থানভী ১৫ই রবিউল আউয়াল ১৩৫০ হিজরী, ৭ই রমযান
১৩৫০ হিজরী।
سوال 320 :- مین نے اج اخی المکرم جناب داکطر صاحب سے انجکشن کے مفسد
صوم ھونے کے بارہ مین گفتگو کی دا کطر صاحب نے یہ فرما یا کہ وہ تمام اشیاء جوجسم
مین مالش سے جذب ھوتی ھین وہ ضرور بتدریج جوف مین پھو نچتی ھین- چنانچہ ایک دوا فیل
پاء کے لئے ران مین باندھ دیجاتی ھے- تو اس سے بھت قئی اتی ھے اسی طرح انجکشن کا بھی
حال ھے- کہ وہ بھی بالضرور جوف مین پھونچتاھے- چناتچہ ما رفیا (افیون) مقیئی ھے تو
اس کا انجکشن بھی مقئی ھے- معدہ مین ریاح بھر جاتی ھین- اور جب وہ خارج نھین ھوتے
تو ان کے دفع کے لئے بازو مین انجکشن لگا کے
انھین دفع کردیا جاتا ھے-
সুওয়ালঃ- আজ আমি আমার ভাই
জনাব ডাক্তার সাহেবের সাথে ইনজেকশনের দ্বারা রোজা ভঙ্গ হয় কিনা, তা নিয়ে
আলোচনা করলাম। তিনি উত্তরে বললেন যে, ঐ সকল ওষুধ যা শরীরে মালিশ করার
কারণে চুষে নেয়, তা অবশ্যই শরীরের মধ্যে পৌঁছে থাকে। যেমন এক প্রকার ওষুধ (অর্থাৎ যে রোগের
কারণে পা শুকিয়ে যায়) এর জন্য রানের মধ্যে বেঁধে দেয় এবং তা লোম কুপের দ্বারা চুষে
পাকস্থলীতে পৌঁছে যায়। এবং একারণে রুগীর অনেক বমি হয়ে থাকে। আর ইনজেকশনের অবস্থাও
অনুরূপ যে, ওটা অবশ্যই পেটের মধ্যে পৌঁছে যায়। সুতরাং যদি (মারফিয়া) (আফিম) সেবনের
দ্বারা বমি হয়ে থাকে,
তবে ওটার ইনজেকশনেও বমি হবে। পাকস্থলীতে যদি বাতাস ভরে থাকে
এবং উক্ত বাতাস বের না হয়,
তখন ওটা বের করার জন্য বাহুতে ইনজেকশন দেয়া হয় বাতাস বের
করার জন্য। (যার কারণে বাতাস বের হয়ে থাকে।)
الجواب:- مطلقا پھونچنا مفسد صوم نھین بلکہ جب منفذ سے پھونچے- اور
مسام سے پھونچنا مفسد نھین-8 رذی الحجہ سنہ 1350 ھ النور ص 7 سعبان س 51 ھ
জাওয়াবঃ- সাধারণভাবে যেকোন
স্থান দিয়ে পেটে অথবা মগজে পৌঁছানো রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। বরং যখন রাস্তা দিয়ে
পৌঁছে (তখন রোজা ভঙ্গ হয়) এবং লোমকুপ থেকে পৌঁছলে ভঙ্গ হবেনা। ৮ই জিলহজ্ব ১৩৫০
হিঃ ৮ই শাবান ১৩৫১ হিঃ)
سوال 221:- روزہ کے متعلق منفذ ومسام کا فرق معلوم ھو کر (جیسا سوال
اول (220) کے جواب مین ھے) کمال تسلی ھوئی لیکن اب مجھ یہ خیال ایا کہ کان کے
متعلق داکطر صاحب فرماتے ھین کہ اس سے کوئی منفذ جوف دماغ تک بھی نھین- پھر اس میں
دوا دالئے سے روزہ کیون طوطتا ھے؟- حالانکہ انکھ سے حلق تک ناک کے دریعہ سے منفذ ھے
اور انکھ کی دوا اور سرمہ سب حلق مین اسی منفذ کے ذریعہ سے پھونچتا ھے- مگر اسے
مفسد صوم نھین کھاگیا
সুওয়ালঃ- তিনি এটাও বলেছেন যে, কানের
মধ্যে ওষুধ অথবা তেল ঢাললে তা কোনভাবেই পাকস্থলীতে পৌঁছাতে পারেনা। এজন্য যে তা
(অর্থাৎ তেল) প্রকাশ্য ছিদ্র একটি চামড়ার উপর যাকে পর্দা বলা হয় শেষ হয়ে যায় এবং
উক্ত চামড়াটা এমনভাবে কানের সাথে লাগানো যেমন তার উদাহরণ একটি বন্ধ করা বাক্সের
ন্যায়, যার বের হবার একটি মাত্র রাস্তা থাকে। তবে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যার অন্য কোন
বিশেষ অসুখের দ্বারা কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে গেছে। (ওটা দ্বারা তেল ওষুধ ইত্যাদি
প্রবেশ করা সম্ভব)।
اسی طرح زخم دماغ (آمہ) کے متعلق بھی وہ یہ فرماتے ھین کہ اس سے بھی کوی
منفذ معدہ تک نھین ھے- اور نہ دماغ کی دوا معدہ مین بھونچ سکتی ھے- سوائے اس کے کہ
ناک کے سوراخ سے کوئی چیز دالی جائے تو وہ حلق مین اور حلق سے معدہ مین پھونچ سکتی
ھے یہ تمام امور جدید تشریح ھوگے وہ یہ بھی
فرماتے تھے کہ أمہ وجائفہ کے متعلق فقھاء کے مسائل غلط نھین ھین بلکہ انھی کی جو
تشریح معلوم ھوئی وہ غلط ھے اس لئے ان امور پراز سرنو نظر کر کے فتاوی مرتب کرنے کی
ضرورت ھے-
আর অনুরূপভাবে মগজের জখমের ব্যাপারেও তিনি
বলেছেন- যে তা (দেমাগ) মগজ থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত কোন রাস্তা নেই এবং মগজের ওষুধ
পাকস্থলীতে পৌঁছেনা। তবে এটা ব্যতীত যে, রুগীর নাকের ছিদ্রে কোন বস্তু
ঢাললে তখন তা গলায় এবং গলা থেকে পাকস্থলীতে পৌঁছতে পারে।
এসকল
নুতন বিষয়ের ফয়সালা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের দ্বারা উজ্জ্বল দিবালোকের
ন্যায় সুস্পষ্ট, তিনি এটাও বলেন যে,
মগজ ও পেটের যখমের ব্যাপারে ফক্বীহগণের বক্তব্য ভুল নয়। বরং
এ ব্যাপারে যে ব্যাখ্যা তারা জানতে পেরেছেন, তাই ভুল। কাজেই এ ব্যাপারে নতুন
করে ফতওয়া দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
الجواب:- جوف
معدہ کے ساتھ خاص نھین- دماغ اور معدہ دونون کو شامل ھے- 8 رذی الججہ 1350 ھ-
النور صفہ 9 شعبان51 ھ
জাওয়াবঃ- শুধু পাকস্থলীই নির্দিষ্ট নয়। বরং
পাকস্থলী ও মগজ উভয়ই এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। ৮ই জিলহজ্ব ১৩৫০ হিঃ, ৯ই শাবান
১৩৫১ হিঃ।
سوال 221:- روزہ کے متعلق منفذ و مسام کا فرق معلوم ھو کر (جیسا سوال
اول (220) کے جواب مین ھے) کمال تسلی ھوئی لیکن اب مجھ یہ خیال آیا کہ کان کے
متعلق داکطر صاحب فرمائے ھین کہ اس سے کوئی منفذ جوف دماغ تک بھی نھین- پھر اس مین
دوا دالئے سے روزہ کیون طوطتا ھے؟- حالانکہ انکھ سے حلق تک ناک کے دریعہ سے منفذ ھے
اور انکھ کی دوا اور سرمہ سب حلق مین اسی منفذ کے دریعہ سے پھونچتا ھے- مگر اسے
مفسد صوم نھین کھا گیا
সুওয়ালঃ- রোজার ব্যাপারে
(মূল রাস্তা) ও (লোমকুপ) এর পার্থক্য জেনে পূর্ণ শান্ত হয়েছি। কিন্তু এখন আমার এই
খেয়াল হলো যে, কানের ব্যাপারে ডাক্তার বলেছেন-কান থেকে মগজের মধ্য পর্যন্ত কোন রাস্তা নেই।
তথাপিও তার মধ্যে ওষুধ ঢাললে রোজা কেন ভঙ্গ হবে? আর চক্ষু থেকে নাকের মধ্য দিয়ে
গলা পর্যন্ত রাস্তা রয়েছে এবং চোখের ওষুধ এবং সুরমা সমস্তই ঐ রাস্তায় গলায় পৌঁছে
থাকে। কিন্তু ওটাকে রোজা ভঙ্গের কারণ বলা হয়নি।
نیزمجھے جھان تک خیال ھے سعوط کو مفسد صوم کھا گیا ھے حالا نکہ جو منفذ بیتی کا حلق تک
ھے بعینہ و ھی انکھ کا بھی ھے- کیونکہ انکھ کا منفذ بینی مین مل جاتا ھے اور بیتی کی
منفذ سے وہ حلق مین اچھی طرح پھونچاتا ھے آنکہ کان ناک کی تشریح مین داکطر صاحب سے
معلوم کی ھے وہ یہ بھی کھتے ھین کہ علم الاعضاء و تشریح مین اس زمانہ مین جس
قدرترقی ھوئی ھے ایسی اس پھلے نھین ھوئی- اور ایک مرتبہ یہ بھی کھتے تھے کہ قد ماء
کی جن تحقیقات کو متقد مین نے اخری تحقیق سجھ کر لکھا ھے اسے حکمائے حال اپنی تصانیفمین
نقل کرکے ھنستے ھین کہ یہ کیسی بچون کی سی باتی وہ لوگ لکھ گئے ھین-
আমার যতটুকু খেয়াল হচ্ছে
(নাকের ভিতর দেয়া ওষুধে)-এর দ্বারা রোজা ভঙ্গ হয় বলা হয়েছে। অথচ নাক হতে গলা
পর্যন্ত যেরূপ রাস্তা রয়েছে, তদ্রুপ চোখ হতে গলা পর্যন্তও রাস্তা রয়েছে। কেননা চোখ হতে
নাক পর্যন্ত রাস্তা এক সাথে মিলিত হয়েছে। তাই নাকের রাস্তা দিয়ে তা ভালভাবেই গলার
মধ্যে পৌঁছে যায়। চোখ,
কান,
নাক এর ব্যাখ্যা আমি ডাক্তার সাহেবের নিকট হতে জেনেছি, তিনি
বলেছেন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কিত জ্ঞান ও তার ব্যাখ্যা বর্তমান যমানায় যতটুকু উন্নত
হয়েছে এর পূর্বে এরূপ উন্নত ছিলনা। তিনি একবার একথাও বলেছিলেন যে, পূর্ববর্তীদের
গবেষণাকে মুতাকাদ্দিমীনগণ শেষ গবেষণা ধারণা করেছেন। ওটাকে বর্তমান যামানার
হুকামাগণ নিজ কিতাবে সংকলন করে হাসেন এবং বলেন, এটা কেমন শিশুসুলভ কথা তাঁরা
লিখেছেন।
الجواب:- اگر اس ھنسنے کا محل فقھاء بھی ھین تو نقل کرکے ھنسنے و
الے خود رونے کے قابل ھین فقھاء کی کلام کو اگر بتمامہ دیکھتے تو وہ کبھی اس گستا
خی کی جرأت نہ کرتے- چھان یہ مسائل نقل کئے ھین اور یھی علت و صول ذکر کی ھے- کمافی
الھدایۃ ولو اکتحل لم یفطر لانہ لیس بین العین و الدماغ منفذ و الدمع یترشح کا
لعرق و الداخل من المسام لاینا فی- کما لو
اغتسل بالماء البارد و ھان بعض مسائل مین اس علت کا باب فقہ سے نہ ھونا بھی
مصرحا ذکر کر دیا ھے- کما فی الھدایۃ ایضا-
জাওয়াবঃ- যদি সে হাসার
পাত্র ফক্বীহগণ হন,
তবে নকল করে হাস্য ব্যক্তি নিজেই কাঁদার উপযুক্ত।
ফক্বীহ্দের কথাগুলো যদি পরিপূর্ণ হিসাবে দেখতো, তবে কখনো এরূপ বেয়াদবী করতোনা।
কারণ যেখানে এ মাসয়ালা বর্ণনা করা হয়েছে এবং এ কারণ অর্থাৎ রাস্তা দিয়ে পৌঁছানো অথবা
লোমকুপ দিয়ে পৌঁছানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন- হেদায়ার মধ্যে উল্লেখ আছে-
কেউ যদি সুরমা ব্যবহার করে,
তবে তার রোজা ভঙ্গ হবেনা, কেননা চোখ ও মগজের মধ্যেখানে কোন
রাস্তা নেই এবং ঘাম রগের ন্যায় টপকায় এবং রাস্তা ব্যতীত অন্য কোন স্থান দিয়ে
(অর্থাৎ লোমকুপ দিয়ে) প্রবেশ করা গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন কেউ যদি ঠান্ডা পানি দ্বারা
গোসল করে। (তবে তার রোজা ভঙ্গ হবেনা) তবে কোন কোন মাসয়ালার মধ্যে উক্ত কারণ
ফিক্বাহের পরিচ্ছেদে না হওয়া উল্লেখ রয়েছে। যেমন হেদায়াতে উল্লেখ আছে-
و لو اقطر فی احلیلۃ لم یفطر عند ابی حنیفۃ- و قال ابو یوسف یفطر-
و قول محمد رحمۃ اللہ علیہ مضطرب فکا نہ و
قع عند ابی یوسف ان بینہ وبین الجوف منفذا- و لھذا یخرج منہ البول- و وقع عند ابی
حنیفۃ ان المثانۃ بینھما حائل و البول یترشح
منہ- و ھذا لیس من باب الفقہ- قال العینی : لانہ متعلق بعلم تشریح الابدان- و لذالک
توفق محمد رحمۃ اللہ علیہ فی اخر عمرہ فیہ و قال فی الفتح یفیدج ان لا خلاف لو
اتفقوا علی تشر یح ھذا العضو-
যদি কেউ তার প্রশ্রাবের
রাস্তায় ওষুধ দেয়,
তবে ইমাম আবু হানীফা
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে রোজা ভঙ্গ হবেনা। আর আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে রোজা ভঙ্গ হয়ে
যাবে। আর ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। ইমাম আবু ইউসুফ
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে মুত্রথলী হতে পাকস্থলী পর্যন্ত রাস্তা রয়েছে, যে কারণে
উহা হতে প্রশ্রাব বের হয়। হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে
পাকস্থলী ও মূত্রথলীর মধ্যে পর্দা বা প্রতিবন্ধক রয়েছে, যার থেকে
প্রশ্রাব টপকায়, মূলতঃ এটা ফিক্বাহর অধ্যায় নয়। আইনি বলেন- কেননা ওটা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
সম্পর্কিত ইলমের অন্তর্ভূক্ত, এজন্যই হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এ ব্যাপারে
উনার শেষ সময়ে নিরবতা অবলম্বন করেছেন। আর ফতহুল ক্বাদীর কিতাবের মধ্যে বলা
হয়েছে, যদি এ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যাপারে ওলামাগণ ঐক্যমত পোষণ করেন, তবে এতে
কোন মতভেদ নেই।
اب اس کی
بعد کسی کا کیا منہ ھے ان حضرات پرجرح کرنے کا حبکہ وہ خود مدعی نھین- بلکہ اھل فن
کی تحقیق پر حکم کرتے ھین- اب اس کے ذمہ دار اھل فن ھین- اور اگر اس ھنسنسے کا محل
حاکماء قدماء ھین تو ممکن ھے کہ اب بھی کوی ان طرف سے جواب دے سکے-
যেখানে ওনারা নিজেরাই এ বক্তব্যের দাবীদার নয়, সেখানে ওনাদের দোষারূপ করার কোন
কথাই থাকতে পারেনা। ওনারা আহ্লে ফনদের তাহক্বীক্ব অনুয়ায়ী হুকুম করেন। সুতরাং এর
জিম্মাদার আহ্লে ফনগণ। আর যদি হাসার স্থল পূর্ববর্তী হুকামাগণ হন, তবে
সম্ভব হলে এখন তাদের পক্ষ হতে জবাব দিতে পারেন।
البتہ اگر کوئی جزئیہ حدیث صحیح مین منصوص ھو یا اجماعی ھو و ھان
افطار کا حکم محض نص یا اجماع کی و جہ سے دین گے جیسا بعض علماء احتجم کو اور بعض
اغتیاب کو نصوص کی بناپر مفطر مانتے ھین- حلا نکہ و ھان کوئی چیز داخل ھی نھین ھوتی-
یا جماع مفطر بالاجماع ھے حالانکہ وھان بھن کوئی چیز داخل نھین ھوتی- اس تقریر سے
امید ھے کہ سب شبھات کا جواب ھو جائے گا-
80 رذی لحجہ 1350 ھ النور ھ9 شعبان 51 ھ-
সুতরাং যদি কোন বিষয় সহীহ্
হাদীছ শরীফ দ্বারা বর্ণিত থাকে অথবা সে বিষয় পবিত্র ইজমা শরীফ হয়ে যায়, তবে
সেখানে রোজা ভঙ্গের হুকুম শুধু পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র ইজমা শরীফ উনাদের
ভিত্তিতেই দিতে হবে। কোন ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে নয়। যেমন- কোন কোন আলেম সিঙ্গা
লাগানোকে এবং কেউ কেউ (গীবত করা) এর দলীলের উপর ভিত্তি করে রোজা ভঙ্গের কারণ
বলেছেন। অথচ ওটাতে কোন জিনিস দাখিল হয়না। অথবা সহবাস করা রোজা ভঙ্গের কারণ, এটা
ইজমার দ্বারাই সাব্যস্ত যদিও তাতেও কোন জিনিস ভিতরে প্রবেশ করেনা। এই সকল আলোচনার
দ্বারা আশা রাখি সকল সন্দেহের উত্তর হয়ে যাবে। ৮ই জিলহজ্ব ১৩৫০ হিঃ, ৯ই শাবান
১৩৫১ হিঃ।
ইনজেকশন
ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে “ইমদাদুল ফতওয়া”-এর বক্তব্য খন্ডন
এতক্ষণে আমরা ইনজেকশন
সম্পর্কে ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্য জানতে পেরেছি। এখন আমরা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ
শরীফ, পবিত্র ফিক্বাহ শরীফ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে প্রমাণ করবো যে, ইনজেকশন
সম্পর্কে ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল।
যেমন ইমদাদুল
ফতওয়ায় প্রথমেই বলা হয়েছে-
سوال (219) : کیا فرما تے ھین علما ے دین اس مسئلہ مین کہ اج کل جو
انجکشن کے ذریعہ دوا بوا بدن مینپھو نچائی جاتی ھے- یہ مفسد صوم ھے یا نھین ادلہ
رعیہ سے جواب عنایت فرمایا جائے
جواب:- داکطرون سے تحقیق کرنے سے نیز تجربہ سے یہ بات ثابت ھوئی کہ
انجکشن کے ذریعہ سے یہ بات ثابت ھوئی کہ انجکشن کے ذریعہ دوا جوف عرق مین پھنچائی
جاتی ھے- اور خون کے ساتھ شرائیین یا اوردہ مین اس کا سریان ھوتا ھے- جوف دماغ یا
جوف بطن مین دوا نھین پھو نچتی- اور فساد
صوم کے لئے مفطر کا جوف دماغ یا جوف بطن مین پھونچنا ضروری ھے کر دیا ھے-
অর্থঃ- প্রশ্নঃ- ওলামায়ে দ্বীন এ মাসয়ালা
সম্পর্কে কি বলেন- বর্তমানে ইনজেকশনের দ্বারা শরীরের ভিতর যে ওষুধ প্রবেশ করানো হয়, তাতে
রোজা ভঙ্গ হবে কি?
ইসলামী শরীয়ত উনাদের দলীল দ্বারা উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ- ডাক্তারদের সাথে তাহক্বীক্ব ও গবেষণার পর এটাই সাব্যস্ত হয় যে, ইনজেকশনের
দ্বারা ওষুধ শিরার ভিতরে পৌঁছান হয় এবং শারাঈন অর্থাৎ যে রগ দিয়ে রক্ত চলাচল করে।
অথবা আভেরদাহ অর্থাৎ যে রগ দিয়ে রক্ত চলাচল করেনা, এসকল রগের ভিতর দিয়ে গিয়ে রক্তের
সাথে মিশে যায়। মগজ অথবা পেটের ভিতর প্রবেশ করেনা। অথচ রোজা ভঙ্গ হওয়ার জন্য ওষুধ
ইত্যাদি মগজ অথবা পেটের ভিতর প্রবেশ করা আবশ্যক।”
আমাদের
বক্তব্য :
ইমদাদুল
ফতওয়ার উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা দু’টি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়- (১) “ইনজেকশন
মগজ অথবা পেটে প্রবেশ করেনা।” (২) “ইনজেকশন রগের ভিতর দিয়ে গিয়ে রক্তের সাথে মিশে যায়।”
মূলতঃ
ইনজেকশন ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও জ্ঞান না থাকার কারণেই একথা বলা
হয়েছে। তাই পাঠকগণকে ইনজেকশন সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়ার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের
দৃষ্টিতে কিছু আলোচনা করবো।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ইনজেকশন : রোগ নিরাময়ের জন্যে আমরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে ওষূধ সেবন করি। বিভিন্ন ডোজেজ ফরম
বলতে বোঝায়- ওষুধ গ্রহণের যত রকম পদ্ধতি আছে যেমন- ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সাসপেনশান, সিরাপ, ইনজেকশন
ইত্যাদি)-এর মধ্যে ইনজেকশনও একটি পদ্ধতি। ইনজেকশন পদ্ধতিটি মূলতঃ --- পদ্ধতি
সম্পর্কে বলা হয়- ---
(এক,
--) --- অর্থাৎ পেরেনটারাল পদ্ধতিটি হচ্ছে সেই পদ্ধতি, যেখানে
এক অথবা বেশী সংখ্যক শরীরের ত্বকের স্তর অথবা মিউকাস মেমব্রেনের স্তরের মধ্য দিয়ে
ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে ওষুধ প্রবেশ করানো হয়।
ইনজেকশনকে পাঁচটা সাধারণ শ্রেণীতে ভাগ করা
হয়েছে- ১। দ্রবণ জাতীয় ইনজেকশন, ২। শুস্ক দ্রব্য, কিন্তু শরীরে ইনজেকশন পদ্ধতিতে
দেয়ার পূর্বে কোন দ্রবণে দ্রবীভূত করে নেয়া যায়।
যেমন- ---
৩। সাসপেনশন জাতীয়। -- ৪। শুস্ক, অদ্রবণীয় দ্রব্য কিন্তু কোন মাধ্যম-এ মিশিয়ে দেয়া হয়। --- ৫।
ইমালশান জাতীয়।
এই পাঁচ
প্রকার ইনজেকশন আবার বিভিন্ন পথে শরীরে প্রবেশ করানো হয় এবং কোন পথে কোন ইনজেকশন
দেয়া হবে, তা নির্ভর করে সাধারণতঃ ওষুধের গুণাগুনের ওপর। যেমন সাসপেনশন জাতীয় ইনজেকশন
সরাসরি রক্তে দেয়া হয়না,
কেননা সেখানে বড় বড় দানা --- অর্থাৎ রক্ত জালিকা বন্ধ করে
দিতে পারে। আবার -- জাতীয় ইনজেকশন ত্বকের স্তর দিয়ে দিতে হলে ---খুব গুরুত্বপূর্ণ।
নতুবা ---- অর্থাৎ জ্বালা হতে পারে। সে কারণেই ---- আবার বিভিন্ন পদ্ধতিতে দেয়া
হয়। এর মধ্যে নিচের মাধ্যমগুলি উল্লেখযোগ্য- ১। ইন্ট্রাভেনাস ২। সাবকিউটেনিয়াস ৩। ইন্ট্রাডারমাল
৪। ইন্ট্রামাসকিউলার ৫। ইন্ট্রাথিকাল ৬। ইন্ট্রা আরটারিয়াল
ইন্ট্রাভেনাস:- এ পদ্ধতিতে ঠবরহ (শিরা)-এর মাধ্যমে রক্তে
ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এ পদ্ধতিতে ওষুধ সরাসরি রক্তে মিশে যায়।
সাবকিউটেনিয়াস:- শরীরে ত্বকের এবং মিউকাস মেমব্রেনের এক বা
একাধিক স্তরের মধ্য দিয়ে এ পদ্ধতিতে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। তবে এ পদ্ধতিতেও ওষুধ
রক্ত স্রোতে মিশে যায়।
ইন্ট্রামাসকিউলার:- এ পদ্ধতিতে ওষুধ শরীরের
পেশীসমূহের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করানো হয় এবং কিছু সময় পর ওষুধ রক্ত স্রোতে গিয়ে
মিশে।
ইন্ট্রাথিকাল:- অনেক সময় কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে ওষুধ
অন্যান্য পদ্ধতিতে প্রয়োগ করলে বিলম্বে পৌঁছে, আর সে কারণেই এখন এ পদ্ধতি
ব্যবহার করলে ওষুধ সহজেই ---এ পৌঁছে। এটা সহজেই বোঝা যায় যে, ইনজেকশনের
যে কোন পদ্ধতিতেই শরীরে ওষুধ প্রয়োগ করা হোক না কেন শরীরে ওষুধের শোষণের কিছু সময়
পরেই রক্ত স্রোতের মধ্যে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে --- তে বলা হয়েছে-
---
অর্থাৎ
ওষুধের শোষণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই হৃৎপিন্ড, যকৃৎ, কিডনী, মগজ এবং
অন্যান্য অঙ্গে বেশীরভাগ ওষুধ চলে যায়। ওষুধ মূলতঃ রক্তস্রোতের মাধ্যমেই শরীরের
বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকে,
কেননা রক্তকে বলা হয় ---- এর সংজ্ঞায় বলা হয়-
----
অর্থাৎ
রক্ত হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম, যার মধ্য দিয়ে খাদ্য, অক্সিজেন, পানি এবং
অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান টিস্যুসমূহে পৌঁছে এবং বর্জ দ্রব্যসমূহ বহন করে নিয়ে
আসে। এটা এক ধরণের সংযোগ কলা। সুতরাং ----এ পৌঁছে ওষুধ শরীরের সর্বাংশে ছড়ায়, অর্থাৎ
মগজে পৌঁছে। তবে আমাদের আলোচনার প্রয়োজনে আমরা এবারে মগজে ওষুধ প্রবেশের পথটি
বর্ণনা করবো, তবে তার পূর্বে মগজের গঠন নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। --- (মগজ)
আমাদের মগজের উপর আছে তিনটি পর্দা- ১। --- (ডুরা মেটার) ২। --- এ্যরাকনয়েড ৩। --- (পায়া মেটার) ডুরা মেটারের গঠন একটু পুরু এবং পায়া মেটার অত্যন্ত সুক্ষ্ম একটি পর্দা, যা কিনা মগজকে ঢেকে আছে। আর এ দুয়ের মাঝামাঝি হলো এ্যারাকনয়েড। রক্ত নালী- এ
তিনটি পর্দা পার হয়ে মগজে পৌঁছেছে এবং জালিকার মত মগজের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে
আছে।
এ পর্যন্ত
আলোচনায় তাহলে আমরা যে ধারণা পেলাম তা হচ্ছে- ১। ইনজেকশন কত প্রকার এবং কত রকম
পদ্ধতিতে দেয়া হয়। ২। তা কিভাবে রক্ত স্রোতের মাধ্যমে শরীরের সর্বাংশে ছড়ায়। ৩।
বিশেষত মগজের অভ্যন্তরে কি করে ইনজেকশনের পর ওষুধ প্রবেশ করে।
আমাদের
এতক্ষণের আলোচনায় এটাই দেখেছি যে, যত প্রকারের ইনজেকশন হোক না কেন, তা এক
সময় রক্ত স্রোতে মিশবে এবং মগজে পৌঁছে যাবে। অতএব
চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্যবহুল আলোচনা দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, ইনজেকশন
ইত্যাদি মগজে পৌঁছে। সুতরাং রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ, পবিত্র ফিক্বাহ
শরীফ উনার কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে,
وما
وصل الى الجوف اوالى الدماغ من مخارقة الاصلية كالانف والاذن والدبر....... قدصومه
(بدائع الصنائح)
অর্থঃ- “যা নাক, কান, পায়খানার
রাস্তা ইত্যাদি দ্বারা মগজ অথবা পেটে পৌঁছবে, তাতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
(বাদায়ে) এ প্রসঙ্গে কিতাবে আরো
উল্লেখ করা হয় যে,
وما وصل الى جوف الرأس والبطن من الاذن
والانف والدير فهو منطر لالا جماع. (خلاصة الفتاوى)
অর্থঃ- “কান, নাক ও
পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ ইত্যাদি মগজ অথবা পেটে পৌঁছা সকলের নিকটেই রোজা ভঙ্গের
কারণ।” (খোলাসাতুল ফতওয়া) অনুরূপ হেদায়া, আইনুল হেদায়া,
মাবসূত, বাহরুর রায়েক, রদ্দুল মোহতার কিতাবে উল্লেখ আছে)
উপরোক্ত
বক্তব্য দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, রোজা ভঙ্গকারী কোন কিছু যেমন ওষুধ
ইত্যাদি মগজ অথবা পেটে পৌঁছালে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের বক্তব্যের দ্বারা যেহেতু স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে
যে, ইনজেকশন মগজে পৌঁছে যায়, সেহেতু ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
অতএব ইমদাদুল
ফতওয়ায় যেটা বলা হয়েছে অর্থাৎ ইনজেকশন মগজে পৌঁছেনা সেটা সম্পূর্ণই ভুল। ইমদাদুল
ফতওয়ায় দ্বিতীয়তঃ বলা হয়েছে যে, “ইনজেকশনের দ্বারা ওষুধ ইত্যাদি শিরার ভিতর পৌঁছানো হয় এবং
শারাঈন ও আভেরদা এর ভিতর দিয়ে গিয়ে রক্তের সাথে মিশে যায়। মগজ অথবা পেটে ওষুধ
প্রবেশ করেনা।”
আমাদের বক্তব্যঃ- এখানে তিনি রগ বলতে কি বুঝিয়েছেন
তা অস্পষ্ট। কেননা ডাক্তারী পরিভাষায় রগ বলতে যেখানে যেটি প্রযোজ্য, সুনির্দিষ্টভাবে
সেটাকেই বোঝানো হয়ে থাকে। যদি --- এর কথা
ধরা হয়, তবে সেক্ষেত্রে শিরা হলো রগ। তাহলে এমন কোন শিরা পাওয়া যাবেনা, যার
মাধ্যমে রক্ত চলাচল করেনা। এখন তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রগ সম্পর্কে একটু
আলোচনা করা যাক।
রগের বর্ণনা: (বলা
হয়ে থাকে- রগে টান পড়া,
রগ কেটে দেয়া, রগ ফুলে যাওয়া, রগ ছিড়ে
যাওয়া, রগ টনটন করা,
রগ দপদপ করা। এক্ষেত্রে সব রগ এক নয়। কোনটি --, কোনটা ---
কোনটা বা --- কিন্তু আমরা সবগুলোকেই রগ
বলছি।) এভাবে রগ দশ প্রকার-
১। ধমনি:
এটা এক প্রকার রক্তনালী যা সাধারণতঃ পরিশোধিত রক্ত বহন করে।
২। শিরা:
দূষিত রক্ত বহনকারী রক্তনালী।
৩। লসিকা
নালী: লসিকা বহনকারী নালী,
লসিকা মানবদেহের জন্য রক্তের মতই একটি অতীব প্রায়োজনীয়
দুধের মত সাদা জলীয় পদার্থ। লসিকা নালী লসিকা তন্ত্রর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই
লসিকা তন্ত্রের প্রধান প্রধান কাজ হলো- (ক) শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে ফ্যাট এবং বড়
আকৃতির প্রোটিন কণা মিশ্রিত বিশেষ জলীয় পদার্থ হৃদ্পিন্ডের দিকে বহন করা। (খ) রোগ
প্রতিরোধে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করা।
৪। পেশী:
এক প্রকার সংযোগ কলা __ যা মানুষের অস্থিসমূহকে আবৃত করে রাখে এবং মানব দেহকে
সুন্দর আকৃতি দানে সহায়তা করে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চলাচলে মূল ভূমিকা পালন করে এই
পেশী। বিভিন্ন প্রকার রক্তনালী, লসিকা নালী ও গ্রন্থি ---, স্নায়ু
ইত্যাদিসমূহ পেশীর মধ্য দিয়ে অতিক্রমকালে তাদের স্ব স্ব কাজ সম্পাদন করে।
গোশ্তপেশীর অভ্যন্তরভাগ ফাপা নয়।
৫। টেনডন:
এটা পেশীর প্রান্তিয় অংশ যাদ্বারা গোশ্তপেশী সাধারণতঃ অস্থির সহিত সংযুক্ত থাকে।
টেনডন মূলতঃ পেশীরই পরিবর্তীত রূপ- শরীরের বাইরে থেকে যাকে শক্ত দড়ির মত মনে হয়।
৬।
স্নায়ু: যা মানবদেহের অনুভূতি বহনকারী স্নায়ুতন্ত্রের --- একটি বিশেষ অংশ। এটা
দেখতে এবং আকার আকৃতিতে সাদা রং-এর দড়ির মত। এর অভ্যন্তর ভাগও ফাপা নয়।
৭।
স্পাইনাল কর্ড: এটাও স্নায়ূতন্ত্রেরই একটি অংশ যা মেরুদন্ডের অভ্যন্তরে অবস্থিত।
এটি মস্তিস্কের সাথে শরীরের অভ্যন্তরস্থ দূরবর্তী স্নায়ূসমূহকে সংযোগকারী।
স্পাইনাল কর্ড আসলে বহু সংখ্যক স্নায়ুর সমষ্টি। তবে এর অভ্যন্তরভাগে সরু একটি নালী
আছে, যার ভিতর দিয়ে -- --- নামক পানির মত
স্বচ্ছ তরল পদার্থ মস্তিস্ক থেকে --- এর নিম্ন প্রান্ত পর্যন্ত চলাচল করে।
৮। কক্তনালী বা শ্বাসনালী: গলার সম্মুখভাগে অবস্থিত দেখতে
প্রায় বাঁশের আকৃতির,
যার মধ্যখান ফাপা এবং ভিতর দিয়ে বাতাস চলাচল করে। মানবদেহের
শ্বাসতন্ত্র --- এর অন্যতম প্রধান অংশ হিসাবে এটি কাজ করে থাকে।
৯। খাদ্যনালী: শ্বাসনালীর ঠিক পশ্চাতেই অবস্থিত। মানবদেহের
পরিপাকতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে মুখ ও পাকস্থলীকে সংযোগ করে থাকে।
১০। স্পারমাটিক কর্ড: অন্ডকোষকে পেটের সাথে সংযোগকারী
নালী -যা শুক্রনালী,
ধমনি, শিরা লসিকা নালী ও স্নায়ু ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত।
উল্লেখ্য, সাধারণতঃ
মানুষ রগ বলতে উপরুক্ত দশটির যে কোন একটি বা একাধিকটিকে বুঝিয়ে থাকেন যেমন- রগে
টান পড়া, রগ কেটে দেয়া,
রগ ফুলে যাওয়া, রগ ছিড়ে যাওয়া, রগ টনটন
করা, রগ দপদপ করা) যদিও ডাক্তারী পরিভাষায় রগ বলতে যেখানে যেটি প্রযোজ্য
সুনির্দিষ্টভাবে সেটিকেই বোঝানো হয়ে থাকে।)
উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রগ সম্পর্কে ইমদাদুল ফতওয়ার উক্ত বক্তব্যও ভুল। কারণ
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে এমন কোন শিরা বা রগ পাওয়া যাবেনা, যার
দ্বারা রক্ত চলাচল করেনা। আর কোন ওষুধই রক্তের সাথে মিশে গিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়না
বরং রক্তে ওষুধের উপস্থিতি থাকে এবং তা সহজেই মগজে পৌঁছে যায়।
সুতরাং
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, ইনজেকশন সম্পর্কে ইমদাদুল
ফতওয়ার উপরোক্ত বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ হয়নি।
মূলকথা
হলো- ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ ইনজেকশনের দ্বারা ব্যবহৃত ওষুধ মগজে
পৌঁছে থাকে। (অসমাপ্ত)