ফরজ নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( ৪ নং )


ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

গবেষণা কেন্দ্র- মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ

          সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন উনার এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যথাক্রমে টুপি, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাযার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুময়ার নামায ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া এবং তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করার পর নবম ফতওয়া হিসাবে ফরজ নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপ্রকাশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
          আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় ফরজ নামাযের পর হাত উঠায়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া গত তিন সংখ্যা থেকে ধারাবাহিকভাবে ছাপা হচ্ছে। গত সংখ্যাগুলোতে মুনাজাত বিরোধীদের উত্থাপিত অবান্তর, আজগুবী ও দলীলবিহীন বক্তব্যসমূহ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অকাট্য দলীল দ্বারা খণ্ডন করা হয়েছে। অত্র সংখ্যা হতে মুনাজাতের ফযীলত ও মুনাজাত সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ের অকাট্য দলীলসমূহ পেশ করা হবে ইনশা আল্লাহ।
দোয়া বা মুনাজাতের ফযীলত:
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে দোয়া বা মুনাজাতের বহু ফাযায়েল ও গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وقال ربكم اذعونى استجب لكم. ان الذين يستكبرون عن عبادتى سيد خلون جهنم داخرين.
শুদ্ধ অর্থঃ- তোমাদের রব তিনি বলেন, তোমরা আমাকে ডাক (অর্থাৎ আমার নিকট দোয়া কর), আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব বা তোমাদের দোয়া কবুল করবো। নিশ্চয়ই যে সকল লোক আমার ইবাদত সম্বন্ধে গোড়ামী বা তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করে, আমি অচিরেই তাকে অপমানের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করাবো।
          মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,     
واذا سألك عبادى عنسى فانى قريب. اجيب دعوة الداع اذا دعانى.
অর্থঃ- হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে, তখন আপনি বলে দিন- নিশ্চয় আমি তাদের নিকটবর্তী। প্রার্থনাকারী যখনই আমাকে ডাকে, তখনই আমি তার ডাকে সাড়া দেই বা তার দোয়া কবুল করি।
          অন্যত্র আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে- মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ادعونى استجب لكم.
অর্থঃ- আমার নিকট দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো।
          এমনিভাবে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার অসংখ্য স্থানে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল ইজ্জত উনার বান্দাদেরকে উনার নিকট দোয়া করার আদেশ বা উপদেশ দিয়েছেন। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে একমাত্র উনার ইবাদত করার জন্যই প্রেরণ করেছেন। আর এই ইবাদতের মূল বা সারবস্তুই হচ্ছে দোয়া বা মুনাজাত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
الدعاء مخ العبادة. (ترمذى، مشكوة)
অর্থঃ- দোয়া হলো- ইবাদতের মূল বা সারবস্তু।(তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
          কেননা ইবাদতের মূল হচ্ছে- সত্যিকার আজেযী ও অক্ষমতার স্বীকার করা। এই বিনয় ও দাসত্বের স্বীকৃতি দোয়ার মধ্যেই সুন্দরভাবে ফুটে উঠে। আর তাই বলা হয়েছে, বান্দার ইবাদত বা গোলামীর মূলই হচ্ছে- দোয়া বা মুনাজাত।
          কাজেই যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করবেনা, সে কখনো মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ বান্দা বা গোলাম হতে পারেনা। আর এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ  মুবারক হয়েছে,
قال النبى صلى الله عليه وسلم من لم يسئل الله يغضب عليه. (ترمذى شريف)
অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট (দোয়া) সুওয়াল করেনা, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার প্রতি রাগাম্বিত হন।(তিরমিযী শরীফ)
          অথচ বান্দার জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো- মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক। যেমন মহান  আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
رضوان من الله اكبر.
অর্থঃ- মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হচ্ছে সবচেয়ে বড়।
          সুতরাং সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি, দোয়া বা মুনাজাত ব্যতীত কখনো পাওয়া সম্ভব নয়।
          মুনাজাতের ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اشرف العبادة الدعاء. (بخاوى شريف)
অর্থঃ- মুনাজাত হলো- সর্বোত্তম ইবাদত।(বুখারী শরীফ)
           পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- ليس شيئ اكرم على الله من الدعاء. (بخارى شريف، ترمذى شريف، ابن ماجه شريف)
অর্থঃ- মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করা হতে অধিক সম্মানিত আর কিছু নেই।(বুখারী শরীফ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ)
          অন্যত্র আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن عائشة رضى الله عنها قالت سئل النبى صلى الله عليه وسلم اى العبادة افضل قال دعاء المرء لنفسه. (بخارى شريف)
অর্থঃ- হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সুওয়াল করা হলো- কোন ইবাদত সর্বোত্তম?” নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “মানুষের দোয়া, যা নিজের জন্য করা হয়।(বুখারী শরীফ)
          শুধু তাই নয়, দোয়া বা মুনাজাতের কারণেই বান্দার আপদ-বিপদ, বালা-মুসীবত ইত্যাদি সবকিছু দূরিভূত হয়ে যায়। আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে  ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
ان الدعاء بنفع مما نزل وما لم ينزل. (ترمذى)
অর্থঃ- নিশ্চয়ই দোয়া (বান্দাকে) ঐ সকল বিপদ-আপদ ও বালা-মুসীবত হতে উপকার করে (নাজাত দেয়), যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা অবতীর্ণ হয়নি।(তিরমিযী শরীফ)
           পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো  ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
التقدير لا يرد الا بالدعاء. (ترمذى شريف، مستدرك حاكم)
অর্থঃ- দোয়ার দ্বারাই তক্বদীর পরিবর্তন হয়।(তিরমিযী শরীফ, মোস্তাদরেকে হাকেম)
          বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- মানুষের দোয়া তিন প্রকারে কবূল হয়। প্রথমতঃ সে যা চায়, তাই পায়। দ্বিতীয়তঃ অথবা সে যা চায়, তার চেয়েও বেশী জরুরী বিষয় তাকে দান করা হয়। তৃতীয়তঃ অথবা পরকালের জন্য তার দোয়া জমা করে রাখা হয়” (যার উসীলায় সে নাযাত পেয়ে যাবে)।
          আর তাই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
فعليكم عباد الله بالدعاء. ترمذى شريف)
অর্থঃ- হে আল্লাহ পাক উনার বান্দাগণ! তোমাদের উচিৎ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করা।(তিরমিযী শরীফ)
          সুতরাং বান্দা যদি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তার আরজী পেশ করে, তবে অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি তার দোয়া কবুল করবেন।
          এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে  ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- ليس شيئ اكرم على الله من الدعاء. (بخارى شريف، ترمذى شريف، ابن ماجه شريف)
অর্থঃ- হযরত সালমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক জীবিত ও দয়ালু। কোন বান্দা উনার নিকট হাত তুললে তিনি তাকে শূণ্যহাতে ফিরায়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।(আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)
          তাই বান্দার উচিৎ, বেশী বেশী করে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করা। বিশেষ করে যে সময়গুলোতে দোয়া কবুল করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, সে সময়গুলোতে দোয়া করা।
দোয়া কবুল হওয়ার সময় সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ  শরীফ উনার মধ্যে  ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
ان الدعاء بستجاب فى خمس ليال- اول ليلة من رحب- ليلة نصف من شعيان- ليلة قدرالمباركة- وليلة العيدين.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই দোয়া পাঁচ রাত্রে কবুল হয়ে থাকে- (১) পবিত্র রজবুল হারাম মাস উনার প্রথম রাত্র (অর্থাৎ যে রাত্রে পবিত্র রজবুল হারাম মাস উনার চাঁদ উঠে)। (২) পবিত্র শাবান মাস উনার চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্র (অর্থাৎ শব-ই-বরাত উনার রাত্র)। (৩) পবিত্র রমযান মাসের শব-ই-ক্বদর উনার রাত্র এবং (৪ ও ৫) পবিত্র দুই ঈদ উনার দুই রাত্র (অর্থাৎ ঈদের আগের রাত্র)।
          এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
واخرج ابوبكر اين اييض ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال- من صلى قريضة فله دعوة مستجابة. (سهام الاصابة)
অর্থঃ- হযরত আবূ বকর ইবনে আবইয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি ফরজ নামায আদায় করলো, তার একটি দোয়া মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অবশ্যই গ্রহণযোগ্য।(সিহামুল ইসাবাহ্)
          বিশেষ করে যে দোয়া সম্মিলিতভাবে করা হয়, সে দোয়া কবুল হওয়ার প্রতিশ্রুতিও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قا النبى صلى الله عليه وسلم- لا يجتمع ملاء فيدعو بعضهم ويؤمن تعضهم الا اجابهم. (معارف الستن)
অর্থঃ- সম্মিলিতভাবে কিছু লোক দোয়া করলো, আর কিছু লোক আমীন বললো, মহান  আল্লাহ পাক অবশ্যই তাদের এ দোয়া কবুল করবেন।(মায়ারিফুস সুনান) এ ছাড়াও আরো বহু সময়ে দোয়া কবুল হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
          অতএব, আমাদের প্রত্যেকের উচিত উল্লেখিত সময়গুলোতে একাকী বা সম্মিলিতভাবে বেশী বেশী মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করা। আপদ-বিপদ, বালা-মুসীবত, রোগ-শোক থেকে বাঁচার জন্যে, নিজের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সর্বোপরি আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জনের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আজেযী, এনকেসারীর সাথে কান্নাকাটি ও দোয়া করা প্রতিটি মুসলমান পুরুষ-মহিলার জন্য অপরিহার্য।
           পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
ابكوا وان لم تبكوا فتباكوا.
অর্থঃ- তোমরা কাঁদো। যদি তোমাদের কান্না না আসে তবে কান্নার ভান কর।
          এতে বুঝা গেল যে, দোয়া বা মুনাজাতের মধ্যে নিজের জীবনের সকল গুণাহখাতা স্মরণ করে কাঁদতে হয়। আর যদি কান্না না আসে, তবে কান্নার মত ভান করতে হয়।
          আর দোয়া বা মুনাজাত করার সময় দৃঢ়বিশ্বাস রাখতে হবে যে, মহান আল্লাহ পাক অবশ্যই আমার দোয়া কবুল করবেন। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
انا عند ظن عبدىبى. (حديث قد سى)
অর্থঃ- আমি আমার বান্দার ধারণা অনুযায়ী।
          অর্থাৎ বান্দা আমাকে যেমন ধারণা করে, আমি তার সাথে তেমন ব্যবহার করে থাকি। কাজেই বান্দা যদি মনে করে,  মহান আল্লাহ পাক তার দোয়া কবুল করবেন না, তবে তার দোয়া কবুল হবেনা। আর বান্দা যদি দৃঢ়বিশ্বাস রাখে যে, মহান আল্লাহ পাক অবশ্যই তার দোয়া কবুল করবেন, তবে অবশ্যই তার দোয়া কবুল হবে। আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে  ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اد عوالله وانتم مؤقنون بالا جابت.
অর্থঃ- তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া কর এবং কবুল হওয়ার দৃঢ়বিশ্বাস রাখ।
          উল্লেখিত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোচনা দ্বারা এটাই স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, দোয়া বা মুনাজাত বান্দার ইবাদতের মূল বা সারবস্তু। যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করেনা, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।
          অতএব, ফরজ নামাযের পর এবং বিশেষ বিশেষ সময়ে আমাদের মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক পরিমাণ দোয়া করা উচিত। মহান  আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে বেশী বেশী দোয়া বা মুনাজাত করার তৌফিক দান করুন।
মুনাজাতের ক্বিবলা:
          মূলতঃ মুনাজাতের ক্বিবলা হলো- আকাশ। তাই মুনাজাত করার সময় উভয় হাতের তালু আকাশের দিকে থাকবে।
          এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ করা হয়,
(১)
(فيبظ يديه نحوالسماء) لا نها قبلة الدعاء كالقبلة الصلوة فلا يتوهم ان المدعوجل وعلافى جهة العلو. (ردالمحتارج صفه ৪০)
অর্থঃ- উভয় হাতকে আকাশের দিকে বিছায়ে দিবে, কেনন নামাযের ক্বিবলা যেরূপ পবিত্র মক্কা শরীফ (পবিত্র কাবা ঘর), দোয়া বা মুনাজাত কবূল হওয়ার ক্বিবলা তদ্রুপ আসমান। সেজন্য কেউ যেন মহান আল্লাহ পাক উনাকে উপরে বলে মনে না করে।” (রদ্দুল মোহতার ১ম জিঃ পৃঃ ৫০৭)
(২)
فيبسط يديه حذاء صدره هحواسماء لا نها قبلة الدعاء- (ردالمحتارج صفه ৪৭৪)
অর্থঃ- সুতরাং উভয় হাত সিনা বরাবর উঠাবে এবং (হাতলীদ্বয়) আকাশের দিকে রাখবে। কেননা মুনাজাতের ক্বিবলা হলো- আকাশ।(রদ্দুল মোহ্তার ১ম জিঃ পৃঃ৪৭৪)
(৩)    
دعاء مين ها تهون كا رخ السمان كى طرف ركهنا مستحب هى. (احسن الفتاوى ج صفه ৫৭)
অর্থঃ- মুনাজাতের সময় হাতলীদ্বয় আকাশের দিকে রাখা মুস্তাহাব।” (আহ্সানুল ফতওয়া ৩য় জিঃ পৃঃ ৫৭)
          অতএব প্রমাণিত হয় যে, মুনাজাতের সময় উত্তলনকৃত হাতের তালু আসমানের দিকে থাকবে। কারণ এটা মুস্তাহাবের অন্তর্ভূক্ত।
মুনাজাতে হাত উঠানোর অকাট্য দলীল:
          মুনাজাতের মধ্যে উভয় হাত উঠানো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভূক্ত।
          নিম্নে তার অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলসমূহ পেশ করা হলো-
(১-৪)
عن سلمان قال قال رسول الله عليه وسلم ان ربكم حى كريم يستحيى من عبده اذارفغ بديه ان يرد هما صفرا- (رواه الترمذى ابودود بيهقى فى دعوة الكبير، مشكوة شريف صفه ১৯৫)
অর্থঃ- হযরত সালমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের রব অতিশয় দয়ালু ও লজ্জাশীল। উনার কোন বান্দা যখন উনার নিকট হাত উঠায় (কিছু চায়), তখন তিনি তার (বান্দার) হাতকে শুন্যভাবে ফিরায়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।(তিরমিযী, আবূ দাউদ, বায়হাক্বী, মিশকাত শরীফ-পৃঃ ১৯৫)
(৫-৯)           
عن النسى بن مالك- قال- كان النبى صلى الله عليه وسلم لايرفغ يديه فى شئى من دعائه الافى الاستقاء وانه يرفح حتى بياض ابطيه- (بخارى ج صفه ১৪০، تيسيرالبارى ج صفه ৯৮، مصنف ابن ابى شيبه ج صفه ৪৮৬، مشكوة صفه ১৩১، تحفة الاحوذى شرح ترمذى ج صفه ১২৮)
অর্থঃ- হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইস্তেস্কার দোয়া ব্যতীত কোন দোয়ায় উভয় হাত (অধিক উচ্চে) উঠাতেন না, অর্থাৎ তিনি হাত এতটুকু উপরে উঠাতেন যে, উনার বোগল মুবারকের শুভ্রতা প্রকাশ পেত।(বুখারী শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ ১৪০)
(১০-১২)
وقال ابوسوسى- دعاالنبى صلى الله عليه وسلم ثم رفع يديه ورأيت بياضى ابطيه وقال ابن عمر- رفغ النبى صلى الله عليه وسلم يديه- عن يحيى بن سعيد عن النبى صلى الله عليه وسلم رفغ يديه حتى رأيت بياض ابطيه. (بخارى ج صفه ৯৩৭، تيسيرالبارى شرح يخاوى ج صفه ২৩২، فتح البارى شرح بخارى ج ১১ صفه ১৬১)
অর্থঃ- হযরত আবূ মুসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উভয় হাত উঠায়ে দোয়া করলেন এবং আমি উনার উভয় বোগল মুবারকে শুভ্রতা দেখেছি।হযরত ইবনে ওমর আলাইহিস সালাম বলেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়ায় উভয় হাত মুবারক এতটুকু উচ্চে উঠাতেন যে, আমি উনার উভয় বোগলের শুভ্রতা দেখতে পেতাম।(বুখারী শরীফ, তাইছিরুল বারী শরহে বুখারী ৮ম জিঃ পৃঃ২৩২, ফতহুল বারী শরহে বুখারী ১ম জিঃ পৃঃ ১৬১)
ব্যাখ্যা : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইস্তেস্কার নামাযের দোয়ায় এতটুকু উচ্চে অর্থাৎ কাঁধ মুবারকের উপরে হাত মুবারক উঠাতেন। যে কারণে উনার উভয় বগল মুবারকের শুভ্রতা প্রকাশ পেত।
(১৩-১৪)
عن انس بن مالك- قال رأيت رسول الله صلى عليه وسلم يرفع يديه فى الدعاء. (مسلم شريف ج صفه ২৯৩ ، فتح اللهم ج صفه ৪৪২)
অর্থঃ- হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উভয় হাত মুবারক উঠায়ে দোয়া করতে দেখেছি।(মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ২৯৩, ফতহুল মুলহিম ২য় জিঃ পৃঃ ৪৪২)
(১৫-১৭)
عن انس بن مالك ان النبى صلى الله عليه وسلم كان لا يرفغ يديه فيثئى من دعائه الافى الا ستقاء حتى يرى بياض ابطيه- (مسلم شريف ج صفه ২৯৩، ابودود ج صفه ১৭২ نسائى شريف صفه ২২৪)
অর্থঃ- হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “নিশ্চয়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইস্তেস্কা ব্যতীত কোন দোয়ায় (অধিক উচ্চে) হাত মুবারক উঠাননি। (তিনি ইস্তেস্কার দোয়ায়) দোয়ায় (এতটুকু উচ্চে) হাত মুবারক উঠাতেন যে, উনার বোগল মুবারকের শুভ্রতা প্রকাশ পেত।(মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ ২৯৩, আবূ দাউদ শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ ১৭২, নাসাই শরীফ, পৃঃ ২২৪)
(১৮)
تشريح:- هذا الحديث يوهم ظاهره انه لم يرفع صلى الله عليه وسلم الا فى الاستقاء وليس الامر كذالك يل قد ثبت يرفغ يديه صلى الله عليه وسل فى الدعاء فى مواطن غير الا ستسقاء. (بذل المجهود ج صفه ২১৭)
অর্থঃ- উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইস্তেস্কা ব্যতীত কোন সময় দোয়ায় হাত উঠাননি, অথচ তা মোটেও ঠিক নয়। বরং প্রমাণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইস্তেস্কার দোয়া ব্যতীত ও অন্যান্য সময় হাত মুবারক উঠায়ে দোয়া করেছেন।(বযলুল মাজ্হুদ ২য় জিঃ পৃঃ২১৭)
(১৯)            
عن انس قال سئل هل كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يرفغ يديه فقال نعم. (مصنف بن ابى ئيبه ج صفه ৪৮৬)
অর্থঃ- হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- প্রশ্ন করা হলো- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দোয়ায় হাত উঠায়েছেন কি? উত্তর দেয়া হলো- হ্যাঁ।(মুছান্নেফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ৪৮৬)
(২০-২১)
عن على بن ابى طالب ان موسى بن عمر ان سأل ربه رفغ يديه- مسند الفردوس الديلمى ج صفه ২২৫، تنزية الشريعت ج صفه ৩১৬)
অর্থঃ- হযরত কাররামুল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার হতে বর্ণিত- হযরত মূসা ইবনে ইমরান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট উভয় হাত মুবারক উঠায়ে দোয়া করেছেন।(মসনাদুল ফিরদাউস দায়লমী ১ম জিঃ পৃঃ ২২৫, তানজিয়াতুশ শরীয়ত ২য় জিঃ পৃঃ ৩১৬)
(২২)
عن عمربن الخطاب- قال كان النبى صلى الله على وسلم اذا انزل عليه الوحى ....... فا ستقبل القبلة ورفع يديه- (مشكوة شريف صفه ২১৯)
অর্থঃ- হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ওহী অবতীর্ণ হতো ---- তিনি ক্বিবলার দিকে মুখ করে উভয় হাত মুবারক তুলে দোয়া করতেন।(মিশকাত শরীফ পৃঃ ২১৯)
(২৩-২৪)
وعن انس قال- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يرفع فى يديه الدعاء. (مشكوة ضفه ১৯৬، تنظيم الاشتات ج صفه ৩১৭)
অর্থঃ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দোয়ার মধ্যে হাত মুবারক উঠায়েছেন।(মিশকাত শরীফ পৃঃ ১৯৬, তানযীমুল আশতাত ১ম জি পৃঃ ৩১৮)
 (২৫)
 عن عبد الرحمن بن ممرة ان النبى صلى الله عليه وسلم رفع يديه يعنى فى الدعاء- (مصنف بن ابى شيبه ج صفه ৪৭২)
অর্থঃ- হযরত আব্দুর রহমান ইবনে সামুরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দোয়ার মধ্যে হাত মুবারক উঠাতেন।(মুসান্নেফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ ৪৮৬)
          এছাড়াও বহু পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র ফিক্বাহ শরীফ উনার কিতাবে মুনাজাতে হাত উঠানোর প্রমাণ রয়েছে।
          উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, মুনাজাতে হাত উঠানো খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভূক্ত, যা অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত।
মুনাজাতে হাত উঠানোর সুন্নত পদ্ধতি:
          মুনাজাতে হাত উঠানোর সুন্নত পদ্ধতি হলো- উভয় হাতের তালু আকাশের দিকে থাকবে এবং হাতদ্বয় সিনা বরাবর থাকবে এবং দুই হাতের মধ্যে কোন ফাঁক থাকবেনা, এটাই মুনাজাতে হাত উঠানোর সঠিক পদ্ধতি। যদিও শামী কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, “যখনই কোন দোয়া করবে, সর্বদাই উভয় হাত সিনা বরাবর উঠাবে। দুই হাতের মধ্যে অল্প পরিমাণ ফাঁক রাখবে, যেন দুই বগল খোলা থাকে।
          তবে অধিকাংশের মতে উভয় হাত মিলিতভাবে থাকবে। এটাই ছহীহ্ মত। যেমন- আইনুল ইলম কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, মুনাজাতের সময় হাত উঠানোর নিয়ম হচ্ছে- উভয় হাত সিনা বা বুক বরাবর উঠাবে এবং দুই হাতের মধ্যে কোন ফাঁক রাখবেনা।
          নিম্নে তার নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীলসমূহ পেশ করা হলো-
(১-২)
وعن مالك بن يسار- قال- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا سألتموا الله فاسئلوه ببطون اكفكم ولا تسألوه بظهورها وفى رواية ابن عباس قال سلوا الله ببطون اكفكم ولا تسئلوه يظهورها فاذافر غتم فا مسسحوابها وجوهكم رواه ابودود، مشكوة شرشف صفه ১৯৫)
অর্থঃ- হযরত মালেক ইবনে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া কর, তখন হাতের তালু দ্বারা দোয়া কর, হাতের পিঠ দ্বারা দোয়া করোনা।
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা হাতের পেট (তালু) দ্বারা  মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া কর, হাতের পিঠ দ্বারা করোনা। আর যখন দোয়া শেষ করবে, তখন উভয় হাত দ্বারা মুখ মসেহ্ করবে।(আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ১৯৫)
(৩)
عن سهل بن سعد عن النبى صلى الله عليه وسلم قال كان يجعل اصبعيه حذاء منكبيه ويدع و (مئسكوة شريف صفه ১৯২)
অর্থঃ- হযরত সাহল ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উভয় হাতের অঙ্গুলী মুবারককে কাঁধ বরাবর রাখতেন এবং দোয়া করতেন।(মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ১৯৬)
(৪-৫)
عن عكرمة عن ابن عباس قال السمئلة ان ترفع يديك حلو منكبيك او نحو هما- (ابودود، مشكوة صفه ১৯৬)
অর্থঃ- হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “দুই হাত বাহুমূল বরাবর উঠানোই হচ্ছে দোয়ার পদ্ধতি।(আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ১৯৬)
(৬-৭)
 عن ابن عمر انه يقول ان رفعكم ايديكم يدعة مازاه رسول الله صلى الله عليه وسلم هذا يعنى الى الصدر- رواه احمد- مشكوة صفه ১৯৬
অর্থঃ- হযরত ইবনে ওমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “তোমাদের এরূপভাবে দোয়ার মধ্যে হাত উঠানো বিদয়াত। (অর্থাৎ দোয়ার সময় হাত সিনার উপরে উঠানো) কেননা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি  (দোয়া করার সময়) সিনার উপরে হাত মুবারক উঠাতেন না।(মিশকাত শরীফ পৃঃ ১৯৬, মুসনদে আহমদ)
(৮)
عن قوله بدعةيعنى رفعكم قوق صدوركم دائما اوفى اكثر الاحوال ...... قد رفعهما ابن عمر الى الصدر- حاشيهء مشكوة صفه ১৯৬)         
অর্থঃ- হযরত ইবনে ওমর আলাইহিস সালাম উনার সিনার উপরে হাত উঠানো বিদয়াত বলার অর্থ হলো- সর্বদা অথবা অধিকাংশ সময় সিনার উপরে হাত উঠায়ে দোয়া করা।” ......... হযরত ইবনে ওমর আলাইহিস সালাম তিনি দোয়ার মধ্যে উভয় হাত মুবারক সিনা পর্যন্ত উঠাতেন। (হাশিয়ায়ে মিশকাত পৃঃ ১৯৬)
(৯)
وقال جماعة من العلماء السنة فى الدعاء رفع البلاء ان يرفح يديه ويجعل ظهر هما الى السماء وفى دعاء سرال شئ وتحصيله يجعل بطنهما الى السماء- (عمدة القارىشرح بخارى ج صفه ২৩৮)
অর্থঃ- আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আলিমগণ বলেন, “বালা-মুসিবত হতে নাযাত পাওয়ার জন্যে দোয়া করার সময় উভয় হাতের পিঠ আকাশের দিকে রাখবে। আর মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কিছু সুওয়াল করা ও পাওয়ার আশায় দোয়া করার সময় হাতের পেট আকাশের দিকে রাখবে।(উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ৬ষ্ঠ জিঃ পৃঃ ২৩৮)
(১০-১২)
فی حدیث ابن عمر ن رفعکم  ایدیکم بدعۃ- یھان فوق الصدر ھاتھ اطھانے کو بدعت کھ- حا لانکہ بعض صورت مین ان ترفع ایدیک حذو منکبیک- ھے- تو تطبیق یہ ھو گی کہ ھمیشہ فوق الصدر اطھا نیکو بدعت کھا گیا ھے کما فی التعلیق الصبیح ج3 صفہ 53-56، و اشعۃ المعات ج2 صفہ 176، تنظیم اا شتات ج3 صفہ 145.
অর্থঃ- হযরত ইবনে উমর আলাইহিস সালাম উনার হতে বর্ণিত- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সিনার উপরে হাত উঠানোকে বিদয়াত বলা হয়েছে। অথচ কোন্ কোন্ অবস্থায় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতে হয় বলে প্রমাণ রয়েছে। এর ফায়সালা হলো- সর্বদা সিনার উপর হাত উঠানোকে বিদয়াত বলা হয়েছে।” (কেননা কোন সময় সিনার উপরে হাত উঠায়ে দোয়া করাও সুন্নত- যেমন ইস্তেস্কার দোয়ায়)। (তানযীমুল আশতাত ৩য় জিঃ পৃঃ ১৪৫ অনুরূপ তালীকুছ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত কিতাবে উল্লেখ রয়েছে)
(১৩)
دعا کرنے مین ھاتھ اس طرح رکھو کہ اندرکا رخ ھاتھون سامنے منہ کے رکھے جیسیکے معمول دعا  مانگے مین. (مظاھر حق ج 2 صفہ 243)
অর্থঃ- দোয়ার সময় হাত এভাবে রাখ, যেন হাতের পেট মুখ বরাবর থাকে। যেমনিভাবে সাধারণতঃ দোয়া করা হয়ে থাকে।(মুযাহেরে হক্ব ২য় জিঃ পৃঃ ২৪৩)
(১৪)
یہ اوسط درجہ ھے ھاتھ اطاھا نے کا اور اکثر اسی طرح اطھاتے تھے- اور پھلی حدیث مین جو زبادہ ھاتھ اطھانے ائے وہ محمول ھے بعض اوقات پر مثل حالت استسقاء اوراور بلاؤن محنت کے تو اتنی اطھاتے تھے کہ سفیدون بغلون کی معلوم ھوتی. (مظاھر حق ج2 صفہ 225)
অর্থঃ- এটাই দোয়ার মধ্যে হাত উঠানোর পন্থা এবং অধিকাংশ সময় এভাবেই হাত উঠাতেন। সিনার উপরে হাত উঠানোর যে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে, তা কোন কোন সময়ের জন্য প্রযোজ্য, যেমন ইস্তেস্কার সময় অথবা অন্যান্য বালা-মুসিবত ইত্যাদি। এসময় এতুকু হাত উঠাতেন যে, উনার বোগল মুবারকের শুভ্রতা প্রকাশ পেত।(মুযাহেরে হক্ব ২য় জিঃ পৃঃ ২২৫)
(১৫)
حاصل یہ کہ حضرت کا ھاتھ اطھا نا باعتبار  اختلاف مختلف تھا کہ اکثرتو سینہ تک اطھاتے تھے او ر بعضے امرکے لئے موندھون تک اور بعضے امرکے لئے موندھون سے اونچے اور یہ لوگ اکثر اوقات اونچے ھی اطھا تے تھےاور رعایت اختلاف حالت کی نہ کر تے تھے اسلئے ابن عمر نے انپر طعن کی. (مظاھر حق)
অর্থঃ- মোট কথা এই যে, “নূরে হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দোয়ার মধ্যে হাত মুবারক উঠানো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের ছিল। তিনি অধিকাংশ সময় সিনা মুবারক পর্যন্ত হাত মুবারক উঠাতেন। আবার কোন সময় কাঁধ মুবারক পর্যন্ত উঠাতেন, আবার কোন সময় কাঁধের চেয়েও উপরে উঠাতেন। সাধারণতঃ লোক যেহেতু সব সময়ই সিনার উপরে হাত উঠায়ে থাকেন এবং স্থানের তারতম্যের দিকে লক্ষ্য করেন না। তাই হযরত ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাদের প্রতি তিরস্কার করেছেন।অর্থাৎ তাদের এরূপ হাত উঠানোকে বিদ্য়াত বলেছেন। (মুযাহেরে হক্ব)
(১৬)
فيبسط يديه حذاء صدره نحو السماء. (ردالمحتارج صفه ৪৭৪)
অর্থঃ- উভয় হাতের তালু আকাশের দিকে রাখবে এবং হাত নিজ সিনা পর্যন্ত উঠাবে।(রদ্দুল মুহতার ১ম জিঃ পৃঃ ৪৭৪)
(১৭)
والظاهر ان من الاداب ايضاضم اليدين وتوجبه اصابعهما نحو القبلة. (شرح الحصن)
অর্থঃ- প্রকাশ থাকে যে, মুনাজাতের সময় উভয় হাত মিলিতভাবে রাখাও আদবের অন্তর্ভূক্ত এবং উভয় হাতের আঙ্গুলসমূহ ক্বিবলার দিকে থাকবে।(শরহুল হাসীন)
(১৮-১৯)
اسمان کی طرف دعا کے وقت ھاتھ اطھانے مین حکمت یہ ھے کہ دربار خد اوندی سے معنوی عطیات حاصل کرنے کیلےء ھاتھ ایک ذریعہ ھے. پس دونون کو باھم اس قدرضم کیا جائے جس طرح پانی پینے والا اپنے دونون ھاتھون کو باھم ملاتا ھے. (لواقح الانوار صفہ 729، و کذا فی رسالہء اداب الدعاء صفہ4)
অর্থঃ- মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করার সময় হাত উঠানোর মধ্যে হিকমত এটাই যে,  মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ্য হতে অদৃশ্য নিয়ামত হাছিল করার জন্য হাত একটি মাধ্যম। সুতরাং উভয় হাতকে মিলিতভাবে রাখবে, যেমনিভাবে পানী পানকারী (কোষ করে) পানী পান করার সময় নিজের হাতকে মিলিত রাখে।(লাওয়াকিহুল আনওয়ার পৃঃ৭২৯, অনুরূপ রেসালায়ে আদা বিদ দোয়া পৃঃ ৪ কিতাবে উল্লেখ আছে)
(২০-২২)
وقدورد انه صلى الله عليه وسلم فى الدعاء يوم عرفة جمع بين كفيه رجعلهما مقابل صدره كا ستطعام المسكين. (مر قاة المصابيح ج ه صفه ৪৭، وهكذا رواه الطبرائى فى الاوسط وكذا فى مجمع الزوائد)
অর্থঃ- বর্ণিত রয়েছে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরাফার দিন উভয় হাত মুবারককে মিলায়ে এবং সিনা বরাবর উঠায়ে দোয়া করেন। যেমনিভাবে মিসক্বীন খাদ্য চেয়ে থাকে।(মিরকাতুল মাছাবীহ্ ৫ম জিঃ পৃঃ ৪৭। অনুরূপ তিবরানী তার আওসাত কিতাবে বর্ণনা করেছেন এবং মাজমাউয যাওয়ায়েদ কিতাবেও উল্লেখ রয়েছে)
          সুতরাং উপরোক্ত অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলসমূহের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মুনাজাত করার সঠিক পদ্ধতি হলো- উভয় হাত সিনা বরাবর উঠাতে হবে। হাতের তালু আকাশের দিকে থাকবে এবং উভয় হাত মিলিতভাবে থাকবে, অর্থাৎ দুই হাতের মধ্যে কোন ফাঁক থাকবেনা। এটাই মুনাজাতে হাত উঠানোর বিশুদ্ধ পদ্ধতী।    
মুনাজাতের পর হাত দ্বারা মুখ মসেহ্ করা:
          মুনাজাত শেষ করে উত্তলনকৃত উভয় হাত দ্বারা নিজ মুখমন্ডল মসেহ্ করা সুন্নত। হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “মুনাজাতের জন্য উত্তলনকৃত হাতের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক বরকত নাযিল করেন, আর তা মুখমন্ডলে মসেত্ করলে মুখমন্ডলের নূর বৃদ্ধি পায়।
অতএব, স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, মুনাজাত শেষে হাত দ্বারা মুখমন্ডল মসেহ্ করা শুধু সুন্নতই নয় বরং বহু বরকত ও ফযীলতের কারণ।
          নিম্নে মুনাজাত শেষে মুখমন্ডল মসেহ্ করার অকাট্য দলীলসমূহ পেশ করা হলো-
(১-২)
ةعن سائب بن يزيد عن ابيه ان النبى صلى الله عليه وسلم كان اذا دعا قرفح يديه مسح ودهه بيديه. (بيهقى، مشكوة صفه ১৯৬)
অর্থঃ- হযরত সাইব ইবনে ইয়াজিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মুনাজাত করতেন, তখন উভয় হাত মুবারক উঠাতেন। অতঃপর (মুনাজাত শেষে) উভয় হাত মুবারক দ্বারা নিজ মুখমন্ডল মসেহ্ করতেন। (বায়হাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ পৃঃ-১৯৬)
(৩-৪)
وفى رواية ابن عباس قال سلوا الله ببطون اكفكم ولا تسئلوه بظهورها فاذا قرغتم فا مسحوا بها وجو نكم.  (ابودود، مشكوة شرشف صفه ১৯৫)
অর্থঃ- হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “যখন তোমরা মুনাজাত শেষ করবে, তখন উভয় হাত দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল মসেহ্ করবে।(মিশকাত শরীফ পৃঃ ১৯৫, আবূ দাউদ শরীফ)
(৫)
عن عمربن الخطاب رضى الله عنه- قال- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا رفع يديه فى الدعاء لم يحطهما حتى يمسح بهما وجهه. (مشكوة شريف)
অর্থঃ- হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এমনি অবস্থা ছিল যে, তিনি যখন মুনাজাতের জন্য হাত মুবারক উঠাতেন, তখন উভয় হাত মুবারক দ্বারা মুখমন্ডল মসেহ্ না করে হাত নামাতেন না।(মিশকাত শরীফ)
(৬)
پھر دعا کے بعد دونون ھاتھ منہ پر پھرنا یہ بھی ابودود نے رو ایت کیاھے. تیسیر الباری شرح بخاری ج1 صفہ 233.
অর্থঃ- মুনাজাত শেষে উভয় হাত দ্বারা মুখমন্ডল মসেহ্ করার কথা ইমাম আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতেও বর্ণিত রয়েছে।(তাইসীরুল বারী শরহে বুখারী ১ম জিঃ পৃঃ ২৩৩)
(৭)
من جملة اذاب الدعاء مسح وجهه بعد قراغا. (مرقات شرح مشكوة)
অর্থঃ- দোয়ার আদবসমূহের মধ্যে দোয়া শেষে হাত দ্বারা মুখমন্ডল মসেহ্ করাও একটি আদব।” (মিরকাত শরহে মিশকাত)
(৮-৯)
ااى تبر كا كا تما فاضى من انوار الاجابة وايصالها الى وجهة الذى هو اشرف الا عضاء واقربها. (حاشيهء مشكوة، اشعة اللمعات)
অর্থঃ-  (মুনাজাত শেষে উভয় হাত দ্বারা মুখমন্ডল মসেহ্ করা) বরকত হাছিলের জন্য, কেননা (মহান  আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে) দোয়া কবুলিয়াতের নূর ও ফয়েজসমূহ (দোয়ার জন্য উত্তলনকৃত হাতে) অবতীর্ণ হয়। (মসেহ্ দ্বারা) সে বরকত নিজ চেহারায়ও পৌঁছান হলো, কেননা সেটা হচ্ছে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম এবং দোয়ার জন্যে উত্তলনকৃত হাতদ্বয়ের নিকটবর্তী।(হাশিয়ায়ে মিশকাত, আশয়াতুল লোময়াত)
(১০)            
قال عمربن المخطاب رضى الله عهة كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا مديد فى الدعاء لم يردهما حتى يمسح يهما وجهه. (كتاب الاذكار للنووى)
অর্থঃ- হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এমনি অবস্থা ছিল যে, তিনি দোয়ার মধ্যে উত্তলনকৃত হাত মুবারক মুখমন্ডলে মসেহ্ না করে হাত মুবারকদ্বয় নামাতেন না। (কিতাবুল আযকার লিন্ নববী)
(১১)
المسح بعده على وجهه سنة فى الاصح. (درالمختار)
অর্থঃ- মুনাজাতের পর হাত দ্বারা মুখমন্ডল মসেহ্ করা সহীহ্ ক্বওল মতে সুন্নত।“ (দুররুল মুখতার)
(১২)
حصن حصین جو معتبر کتاب حدیث کی ھے اس مین احادیث مرفوعۃ دعا مین ھاتھ اطھانے اور بعد دعاء کے منہ پر ھاتھ پھرنے کی موجود ھین ( فتاوی دار العلوم دیوبند ج2 صفہ 199)
অর্থঃ- হিসনে হাসীন হাদীছ শরীফ উনার নির্ভরযোগ্য কিতাব তার মধ্যে দোয়ার সময় হাত উঠানো এবং দোয়া শেষে হাত দ্বারা মুখ মন্ডল মসেহ করার ব্যাপারে বহু মরফু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।(ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ ২য় জিঃ পৃঃ-১৯৯)
(১৩-১৪)
مقتدیون سب امین امین کھتے رھین اور دعا مانگ چکنے کے بعد دونون ھاتھ منہ پر پھرے. (علم الفقہ، ترجیح الراجح)
অর্থঃ- মুক্তাদীগণ আমীন, আমীন বলতে থাকবে এবং মুনাজাত শেষ করার পর উভয় হাত দ্বারা মুখ মসেহ্ করবে।(ইলমুল ফিক্বাহ্, তারজীহুর রাজেহ্)
(১৫)
فرضون کے بعد ھاتھ اطھاکر دعا کرنا اور بعد دعا کے منہ پر ھاتھ پھرنا احادیث صحیحہ سے ثابت ھے. (فتاوئی دار العلوم دیوبند)
অর্থঃ- ফরজ নামাযসমূহের পর হাত উঠায়ে দোয়া করা এবং দোয়া শেষে হাত দ্বারা মুখমন্ডল মসেহ্ করা সহীহ্ হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে।(ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ)
بعد ختم دعاء ھاتھ منہ پر پھرنا درست اور ثابت ھے اور حصول برکت کیلئے یہ فعل کیا جاتا ھے. (فتاوئے رشیدیہ صفہ 215)
অর্থঃ- মুনাজাত শেষে উভয় হাত দ্বারা মুখমন্ডল মসেহ্ করা জায়েয (সুন্নত) ও প্রমাণিত। এবং এটা বরকত হাছিলের জন্য করা হয়। (ফতওয়ায়ে রশীদিয়া পৃঃ ২১৫)
মুনাজাত শুরু ও শেষ করার পদ্ধতি:
          মুনাজাত শুরু ও শেষ করার সঠিক পদ্ধতি হলো- মুনাজাতের প্রথমেই পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, মুনাজাতের মধ্যখানে অন্যান্য দোয়া পড়ার সাথে সাথে মাঝে মধ্যে পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করবে এবং সর্বশেষ পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করে সুবহানা রব্বিকা রব্বিল ইজ্জতি আম্মা ইয়াছিফূন ওয়া সালামুন আলাল মুরসালীন ওয়াল্ হামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীনবলে মুনাজাত শেষ করবে।
          এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়,
(১-২)
الدعاء مو قوف بين السماء والارض لايصعد حتى سصلى على ........ صلوا على اول الدعاء واوسطه واخره- رواه الترمذى. (تيسير الوصول ج صفه ৫৬)
অর্থঃ- দোয়া আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যখানে ঝুলন্ত থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত দোয়া উপরে উঠেনা (কবুল হয়না)। সুতরাং তোমরা দোয়ার শুরুতে, মধ্যখানে এবং শেষে আমার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ কর। এটা তিরমিযী বর্ণনা করেছেন। (তাইছীরুল উসূল ২য় জিঃ পৃঃ ৫৬)
          আর ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,
(৩)
سبحان ربك رب العزة عما يصفون وسلام على المرسلين والحمد لله رب العالمين.
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফখানা পাঠ করে মুনাজাত শেষ করা সুন্নত। (দুররুল মুখতার)
(৪-৬)
ثم يختمون بقوله تعالى- سبحان ربك رب العزة عما يصفون وسلام على المرسلين والحمد لله رب العالمين. (ثم يمسحون بها الى بايد يهم رجوههم. (وكذا فى مجمع الزوئد صفه ২০২، طحطاوى على مراقى الفلاح صفه ১৭৫، بهشتى زيور)
অর্থঃ- অতঃপর সুবহানা রব্বীকা রব্বিল .......... এ আয়াত শরীফ পাঠ করে মুনাজাত শেষ করবে এবং উভয় হাত দ্বারা মুখমন্ডল মসেহ্ করবে।(অনুরূপ মাজমাউয্ যাওয়াযেদ পৃঃ ২০১ কিতাবে উল্লেখ আছে। তাহ্তাবী পৃঃ ১৮৫, বেহেস্তী জিওর)
(৭)
اخر مین درود شریف کے بعد سبحان ربک رب العزۃ عما یصفون و سلام علی المرسلین و الحمد للہ رب العالمین. پڑھ کر امین پر دعاء ختم کی جائے. (احسن الفتاوی ج3 صفہ 58)
অর্থঃ- সর্বশেষে দুরূদ শরীফ পাঠ করার পর সুবহানা রব্বিকা রব্বিল ................ এ আয়াত শরীফ পাঠ করে আমীন বলে মুনাজাত শেষ করবে।” (আহ্সানুল ফতওয়া ৩য় জিঃ পৃঃ ৫৮)
          অতএব প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র দুরূদ শরীফ উনার দ্বারা দোয়া শুরু করা এবং উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ পাঠ করে মুনাজাত শেষ করা সুন্নত। অথচ আজকাল অনেককেই দেখা যায়, তারালা-ইলাহা- ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ্ অথবা বিরাহমতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন দ্বারা মুনাজাত শেষকরে থাকেন, তা সম্পূর্ণই সুন্নত পরিপন্থি আমল।                          
( অসমাপ্ত )