জম্মোৎসব পালন করা সম্মানিত সুন্নাহ শরীফ উনার অন্তভূক্ত।

Related imageজম্মোৎসব পালন করা সম্মানিত সুন্নাহ শরীফ উনার অন্তভূক্ত।
=================================================
বিভিন্ন বাতিল ফিরকার লোকেরা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতা করতে গিয়ে বলে থাকে ‘জম্মোৎসব পালন করা নাকি পৌত্তলিক রীতি এবং কোনো ধর্মগ্রন্থ বা নাবীদের শিক্ষায় নাকি এর কোন অস্তিত্ব নেই। !!’ নাউযুবিল্লাহ।
অথচ জন্মোৎসব পালন বা জন্মদিন উৎযাপন মোটেও কোন পৌত্তলিক রীতি নয়। বরং পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারাই এর ভিত্তি প্রমাণিত। আর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের শিক্ষা প্রত্যেক নবী-রসূল আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় উম্মতকে দিয়ে গিয়েছেন।
জন্মোৎসব পালন বা জন্মদিন উৎযাপনের বিষয়টি কয়েকভাবে হতে পারে।
১. কোন শিশু যেদিন জন্মগ্রহণ করে সেদিনই শিশুর অভিভাবক কর্তৃক কোন অনুষ্ঠান বা খানাপিনার আয়োজন।
২. শিশুর জন্মের ৭ম দিনে শিশুর আক্বীক্বা দিয়ে নাম রেখে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন।
৩. প্রত্যেক বছর জন্মদিনের তারিখে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন।
কোন শিশু যেদিন জন্মগ্রহণ করে সেদিনই শিশুর অভিভাবক কর্তৃক কোন অনুষ্ঠান বা খানাপিনার আয়োজন।
এই বিষয়ে হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের বিখ্যাত সঙ্কলক ইমাম হযরত বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘আদাবুল মুফরাদ’ কিতাবে ২ খানা বাব বা পরিচ্ছেদ রচনা করেছেন যথাক্রমে –
بَابُ الدَّعْوَةِ فِي الْوِلَادَةِ – শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াত।
بَابُ الدُّعَاءِ فِي الْوِلَادَةِ – সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য দোয়া করা।
بَابُ الدَّعْوَةِ فِي الْوِلَادَةِ – “শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াত” পরিচ্ছদে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে জানা যায় যে, একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার রোযা ভঙ্গ করে শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াতের খানা খেয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ بِلَالِ بْنِ كَعْبٍ الْعَكِّيِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ زُرْنَا حَضْرَتْ يَـحْيَى بْنَ حَسَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِـي قَرْيَتِهِ اَنَا وَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيمُ بْنُ اَدْهَمَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَ حَضْرَتْ عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ قَرِيرٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَ حَضْرَتْ مُوسَى بْنُ يَسَارٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَجَاءَنَا بِطَعَامٍ، فَاَمْسَكَ حَضْرَتْ مُوسٰى رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَكَانَ صَائِمًا فَقَالَ حَضْرَتْ يَـحْيَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَمَّنَا فِـي هٰذَا الْمَسْجِدِ رَجُلٌ مِنْ بَنِي كِنَانَةَ مِنْ اَصْحَابِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَنَّى حَضْرَتْ اَبَا قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً، يَصُوْمُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا، فَوُلِدَ لِاَبِـيْ غُلَامٌ، فَدَعَاهُ فِـي الْيَوْمِ الَّذِيْ يَصُوْمُ فِيْهِ فَاَفْطَرَ، فَقَامَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيمُ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَكَنَسَهُ بِكِسَائِهِ، وَاَفْطَرَ حَضْرَتْ مُوْسٰى رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ حَضْرَتْ اَبُو عَبْدِ اللهِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَبُو قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اسْـمُهُ جَنْدَرَةُ بْنُ خَيْشَنَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ.
অর্থ : “হযরত বিলাল ইবনে কা’বিল ‘আক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি, হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল আযীয ইবনে কুদাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মূসা ইবনে ইয়াসার ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত ইবনে হাসান বাকরী ফালাসতিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে উনার গ্রামে গিয়ে সাক্ষাত করলেন। হযরত ইবনে হাসান বাকরী ফালাস্তিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাদের জন্য খাবার আনলেন। হযরত মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রোযাদার হওয়ায় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। হযরত ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কিনানা গোত্রীয় একজন ছাহাবী, যাঁর উপনাম হযরত আবূ কিরসাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি চল্লিশ বছর যাবত এই মসজিদে ইমামতি করেন। তিনি এক দিন রোযা রাখেন এবং এক দিন বিরতি দেন। আমার একজন ভাই জন্মগ্রহণ করলে আমার পিতা উনাকে দাওয়াত দেন। সেটি ছিল উনার রোযা রাখার দিন। তিনি রোযা ভাঙ্গলেন। হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উঠে দাঁড়িয়ে উনাকে উনার চাদরখানা হাদিয়া দেন এবং হযরত মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও রোযা ভাঙ্গেন। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ছাহাবী হযরত আবূ কিরসাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নাম মুবারক হযরত জানদারা ইবনে খায়শানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।” (আদাবুল মুফরাদ : কিতাবুল খিতা-ন : বাবুদ্ দা’ওয়াতি ফীল উইলাদাত : হাদীছ শরীফ নং ১২৫৩)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে শিশুর জন্মদিনেই জন্মদিন পালনের নির্দেশনা পাওয়া যায়। এমনকি মহান আল্লাহ পাক উনার চুড়ান্ত সন্তুষ্টি মুবারক দুনিয়াতেই প্রাপ্ত হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার রোযা ভঙ্গ করে জন্মদিন উপলক্ষ্যে পরিবেশিত খাদ্য গ্রহণ করেছেন।
আবার بَابُ الدُّعَاءِ فِي الْوِلَادَةِ – “সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য দোয়া করা” পরিচ্ছদে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে জানা যায় যে, একদল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শিশুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত দাওয়াতে এসে খানাপিনা করেছেন এবং শিশুর জন্য দোয়া করেছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ مُعَاوِيَةَ بْنَ قُرَّةَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يَقُوْلُ لَمَّا وُلِدَ لِـي اِيَاسٌ دَعَوْتُ نَفَرًا مِنْ اَصْحَابِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاَطْعَمْتُهُمْ فَدَعَوْا فَقُلْتُ‏‏ اِنَّكُمْ قَدْ دَعَوْتُـمْ فَبَارَكَ اللهُ لَكُمْ فِيْمَا دَعَوْتُـمْ وَاِنّـيْ اِنْ اَدْعُوْ بِدُعَاءٍ فَاَمّنُوْا قَالَ‏ فَدَعَوْتُ لَهُ بِدُعَاءٍ كَثِيْرٍ فِـيْ دِينِهِ وَعَقْلِهِ وَكَذَا قَالَ‏‏ فَاِنّـيْ لَاَتَعَرَّفُ فِيْهِ دُعَاءَ يَوْمِئِذٍ‏.‏
অর্থ : “হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার আওলাদ ইয়াস জন্মগ্রহণ করলে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একদল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দাওয়াত করে খাবার পরিবেশন করেন। উনারা দোয়া মুবারক করলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আপনারা দোয়া মুবারক করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের দোয়া মুবারক উনার উসীলায় আপনাদের বরকত মুবারক দান করুন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখন বললেন, তিনিও কতগুলো দোয়া করবেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেন আমীন বলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি উনার আওলাদের দ্বীনদারি, জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের জন্য অনেক দোয়া করলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি সেদিনের দোয়ার প্রভাব লক্ষ্য করেছেন।” (আদাবুল মুফরাদ : কিতাবুল খিতা-ন : বাবুদ্ দু‘য়ায়ি ফীল উইলাদাত : হাদীছ শরীফ নং ১২৫৫)
সুতরাং জন্মদিন পালন বা জন্মোৎসব করা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার রীতি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রদান করেছেন বলেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শিশুর জন্মদিনের দাওয়াতে গিয়েছেন, জন্মদিন উপলক্ষ্যে পরিবেশিত খাবার খেয়েছেন এমনকি রোযা ভঙ্গ করে খাবার খেয়েছেন এবং দোয়া মুবারক করেছেন। তাই জন্মোৎসব পালন করাকে একটি পৌত্তলিক রীতি বলা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু এই বিষয়টি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শিক্ষা দিয়েছেন।
শিশুর জন্মের ৭ম দিনে শিশুর আক্বীক্বা দিয়ে নাম রেখে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন। সন্তান জন্মগ্রহণের শুকরিয়াস্বরূপ যে পশু যবাই করা হয় তাকে আক্বীক্বা বলে। জন্মের সপ্তম দিনে আক্বীক্বা করা সুন্নত।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ سَـمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ كُلُّ غُلَامٍ رَهِيْنَةٌ بِعَقِيْقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ سَابِعِهِ وَيُـحْلَقُ وَيُسَمَّى‏.
অর্থ : “হযরত সামুরাহ ইবনে জুনদুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রত্যেক শিশু তার আক্বীক্বার বিনিময়ে বন্ধক থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে আক্বীক্বা করতে হয়, মাথার চুল ফেলতে হয় এবং নাম রাখতে হয়।” (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুল আদ্বহা : বাবু ফিল আক্বীক্বাহ : হাদীছ শরীফ নং ২৮৩৮)
জন্মের ৭ম দিনে আক্বীক্বা করা উত্তম। ৭ম দিনে সম্ভব না হলে ১৪ বা ২১তম দিনেও করা যায়। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এই তিন দিনের উল্লেখ আছে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
“হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আক্বীক্বার পশু ৭ম বা ১৪তম বা ২১তম দিনে যবাই করা যাবে।” (আল মু’জামুল আওসাত লিত ত্ববারানী ৫/৪৫৭)
সামর্থ না থাকার কারণে এ তিন দিনেও কারো পক্ষে সম্ভব না হলে, পরে যে কোনো সময় আক্বীক্বা করা যেতে পারে।
আক্বীক্বার গোশত কুরবানীর গোশতের মতই। তা নিজে খাবে, আত্মীয় স্বজনকে খাওয়াবে এবং গরীব-মিসকীনকে ছদকা করবে। তবে যেমনভাবে কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজে খাওয়া, একভাগ ছদকা করা এবং এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়া হিসাবে দান করা জরুরী নয়, ঠিক তেমনিভাবে আক্বীক্বার গোশতও উক্ত নিয়মে তিন ভাগ করা জরুরী নয়। আক্বীক্বার গোশত যদি সম্পূর্ণটাই রান্না করে এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব এবং অন্যান্য মুসলমানদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ায় তাতেও যথেষ্ট হবে। অর্থাৎ আক্বীক্বার গোশত পিতা-মাতা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলেই খেতে পারবে।
সুতরাং আক্বীক্বার গোশত দিয়ে খাদ্য খাওয়ার জন্য দাওয়াতের ব্যবস্থা করার বিধান সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ আক্বীক্বার মাধ্যমে জন্মোৎসব পালনের বিধান সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে রয়েছে।
প্রত্যেক বছর জন্মদিনের তারিখে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ مَرَّ مَعَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى بَيْتِ عَامِرِ الاَنْصَارِىّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَانَ يُعَلّمُ وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاَبْنَائِهٖ وَعَشِيْرَتِهٖ وَيَقُوْلُ هٰذَا الْيَوْمَ هٰذَا الْيَوْمَ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلامُ اِنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْـمَةِ وَالْمَلائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَـجٰى نَـجٰتَكَ.
অর্থ : “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী উনাদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। এতদশ্রবণে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মুবারক রহমত উনার দরজা মুবারকসমূহ আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, তিনিও আপনার মত নাযাত (ফযীলত) লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)
উপরের হাদীছ শরীফ হতে বুঝা যাচ্ছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন।
এমনকি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি প্রতি বছর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিন উট যবেহ করে মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতেন।
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-
يَوْمَ مَوْلِدِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَبَحَ حَضْرَتْ اَبُوْ بَكْرٍ الصّـِدّيْقُ عَلَيْهِ السَّلَامَ مِائَةَ نَاقَةٍ وَتَصَدَّقَ بِـهَا
অর্থ : “পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক দিনে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ১০০ উট যবেহ করতেন এবং তা বিলিয়ে দিতেন।” (আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফি মাওলিদি সাইয়্যিদি ওয়ালাদি আ’যম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা ছালিছ উর্দূ তরজমাতি মা’য়া ইতেরাযাত কে তাহক্বিক্বী জওয়াবাত আওর তাফছিলী হালাতে মছান্নিফ কে সাত বা’নামে নে’য়মাতে কুবরা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : পৃষ্ঠা ৫৪)
আর হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি প্রতি বছর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিন মানুষের মাঝে গম বিলিয়ে দিতেন।
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-
تَصَدَّقُ حَضْرَتْ اَبُوْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فِـىْ ذٰلِكَ بِثَلَاثَةِ اَقْرَاصِ مِنْ شَعِيْرِ
অর্থ : “পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক দিনে হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ৩ গামলা গম বিলিয়ে দিতেন।” (আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফি মাওলিদি সাইয়্যিদি ওয়ালাদি আ’যম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা ছালিছ উর্দূ তরজমাতি মা’য়া ইতেরাযাত কে তাহক্বিক্বী জওয়াবাত আওর তাফছিলী হালাতে মছান্নিফ কে সাত বা’নামে নে’য়মাতে কুবরা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : পৃষ্ঠা ৫৪)
সুতরাং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে জন্মোৎসব বা জন্মদিন পালনের বিধান রয়েছে। আর তাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেমন নিজেরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস উৎযাপন করেছেন। তেমনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জন্মদিন পালনকে পছন্দ করেছেন বিধায় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পরবর্তী উম্মতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
যেহেতু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষায় জন্মোৎসব পালনের অস্তিত্ব বিদ্যমান। তাই জন্মোৎসব পালনকে একটি পৌত্তলিক রীতি বলা কুফরী।
আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যে ব্যক্তি কুফরী করে তওবা ছাড়া মারা গেল তার পরিণাম সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ ثُـمَّ مَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يَغْفِرَ اللهُ لَـهُمْ.
অর্থ : “নিশ্চয়ই যারা কাফির এবং মহান আল্লাহ পাক উনার পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনোই তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।” (পবিত্র সূরা মুহম্মদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)
অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَمَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْ اَحَدِهِم مّلْءُ الْاَرْضِ ذَهَبًا وَلَوِ افْتَدٰى بِهِ ۗ اُولٰـئِكَ لَـهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ وَمَا لَـهُم مّنْ نَّاصِرِيْنَ ◌
অর্থ : “যারা কাফির হয়েছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তারা যদি তার পরিবর্তে সারা পৃথিবী পরিমান স্বর্ণও দেয়, তবুও তাদের তওবা কবুল করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব! পক্ষান্তরে তাদের কোনই সাহায্যকারী নেই।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯১)