হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ( ১০ নং )

হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”  
পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া। হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র-
মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লিখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।  তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেহিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই।

 কেননা,প্রথমতঃ কিছু লোক কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্মঅর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “....... মহিলারা মুখ বা চেহারা, হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক) 
অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ রূপেই কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা মূলতঃ কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে। 

 খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা মূলতঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে মহিলাদের খাছ পর্দা হলো- ১. মহিলারা সর্বদাই ঘরে অবস্থান করবে। ২. ঘরে অবস্থানকালে হোক অথবা বাইরে হোক কোন অবস্থাতেই গায়রে মাহ্রামদের সাথে দেখা দিতে পারবেনা। ৩. প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে বোরকা, হাত মোজা, পা মোজা পরিধান করতঃ চেহারা ও সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে। ৪. বোরকা কালো রংয়ের হওয়াই আফযল ও অধিক পর্দার কারণ। ৫. সর্বদা দৃষ্টিকে নিম্নগামী রাখবে। ৬. বিনা প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলবে না। ৭. প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে শক্ত স্বরে কথা বলবে, নরম সূরে কথা বলবে না। এটাই খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা। আর এটাই শরীয়তের নির্দেশ।     অতএব, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। দ্বিতীয়তঃ কতিপয় নামধারী পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, ইফতার করে, ঘরোয়া বৈঠক করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাউযুবিল্লাহ)   মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ছূরা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, কাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ছূআবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল।     বর্তমান যামানার উলামায়ে ছূতথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক। দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল মুলহিম) স্মর্তব্য যে, ঐসকল দাজ্জালের চেলা নামক তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ছে। সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা বেপর্দা হয় কি করে?           অতএব, উল্লিখিত উলামায়ে ছূদের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।             অতএব, সকলেই যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার ভিতর আসতে পারে, তাই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়া হলো।  আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
 কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে  পর্দা করা ফরযে আইন        দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায, (৩) যাকাত, (৪) হজ্ব (৫) রমযানের রোযা। অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে হিজাব বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ ফরযে আইন।      কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের বহু স্থানেই হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি বেপর্দা হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া, ইতিহাস ও লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো- যে সকল আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা হিজাব বা পর্দার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত তাফসীর বা ব্যাখ্যা’             যে সকল আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা হিজাব বা পর্দাফরয প্রমাণিত হয়েছে তা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধু বোরকা বা পর্দা করে রাস্তায় বের হওয়ার নাম হিজাব বা পর্দা নয়। বরং তার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট ও আয়াত শরীফসমূহে উল্লিখিত সকল হুকুম-আহ্কামসমূহ মেনে চলার নামই হচ্ছে শরয়ী হিজাব বা পর্দা।  যেমন, কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নেয়া, মাহরাম ব্যতীত অন্য কারো সাথে দেখা-সাক্ষাত না করা, মাহরামদের সামনেও শালীনতা বজায় রাখা, গায়রে মাহ্রামদের সামনে চেহারা, হাত, পাসহ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা, চলাচলের সময় পুরুষ-মহিলা উভয়ের দৃষ্টিকেই অবনত রাখা, নিজেদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করা, বিনা প্রয়োজনে গলার আওয়াজ বা কক্তস্বর পরপুরুষকে না শুনানো, প্রয়োজনে কথা বলতে হলে ও কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে বলা ও চাওয়া এবং শক্ত ভাষায় কথা বলা, নরম ভাষায় কথা না বলা ইত্যাদি সবই হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ্ পাক উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহে এ বিষয়গুলোই মূলতঃ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।             উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ে তাফসীর বা ব্যাখ্যাবিস্তারিতভাবে তুলে ধরলে বিষয়গুলো আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং শরয়ী হিজাব বা পর্দারপরিচয় সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। তাই নিম্নে নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ থেকে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের তাফসীর বা ব্যাখ্যা পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হলো- (পূর্ব প্রকাশিতের পর) হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত সূরা নূরের ৬০নং আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা [১২৩৯]
والقواعد من النساء التى لايرجون نكاحا فليس عليهن جناح ان يضعن ثيابهن غير متبرجتم بزينة وان يستعففن خير لهن والله سميع عليم. (سورة النور ৬০ ايه)
অর্থঃ- বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখেনা। যদি তারা তাদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে তাদের অতিরিক্ত বস্ত্র ব্যবহার না করে তাতে দোষ নেই। তবে ব্যবহার করাই তাদের জন্য উত্তম। মহান আল্লাহ পাক সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (সূরা নূর/৬০) সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে অতিবৃদ্ধাদের জন্য অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার না করা জায়িয; তবে ব্যবহার করা উত্তম অত্র আয়াতে কারীমায় বৃদ্ধা নারীদের পর্দার নিয়মনীতি বর্ণনা করা হয়েছে। সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে বৃদ্ধা নারী কর্তৃক তার অতিরিক্ত কাপড় যেমন- বোরকা, চাদর ইত্যাদি ব্যবহার না করা জায়িয। অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার না করলে সৌন্দর্য্য প্রকাশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ব্যবহার করা ফরয-ওয়াজিব। বৃদ্ধা নারী দ্বারা এমন বৃদ্ধা নারী উদ্দেশ্য, যে বিবাহ্রে আশা রাখেনা, সন্তান ধারনের ক্ষমতা সম্পন্ন নয়, স্বাভাবিক মাজুরতা বন্ধ হয়ে গেছে এবং যার শাহ্ওয়াত জাগ্রত হওয়ার কল্পনা করা যায়না। তবে এমন বৃদ্ধা নারীদেরও পর্দা করাই উত্তম।      নিম্নে বিশ্ববিখ্যাত, সর্বজনমান্য ও গ্রহনযোগ্য তাফসীরের কিতাবসমূহ থেকে এ সম্পর্কিত আলোচনা উপস্থাপন করা হলো। [১২৪০-১২৪৪]
وقوله (والقواعد من النساء) قال سعيد بن جبير ومقاتل بن حيان والضحاك وقتادة. هى اللواتى انقطع عنهن الحيض ويئسن من الولد (التى لايرجون نكاحا) اى لم يبق لهن تشوف الى التزوج (فليس عليهن جناح ان يضعن ثيابهن غير متبرجت بزينة) اى ليس عليها من الحجر فى التستر كما على غير هن من النساء. .......... قال ابن مسعود فى قوله (فليس عليهن جناح ان يضعن ثيابهن) قال الجلباب او الرداء. وكذلك روى عن ابن عباس وابن عمر ومجاهد وسعيد بن جبير وابى الشعثاء والبراهيم النخعى والحسن وقتادة والزهرى والاوزاعى وغيرهم وقال ابوصالح : تضع الجلباب وتقوم بين يدى الرجل فى الدرع والخمار.
وقال سعيد بن جبير وغيره فى قراءة عبد الله بن مسعود (ان يضعن من ثيابهن) وهو الجلباب من فوق الخمار، فلابأس ان يضعن عند غريب اوغيره بعد ان يكون عليها خمار صفيق. وقال سعيد بن جبير فى الاية (غير متبرجتم بزينة) يقول لايتبرجن بوضع الجلباب ليرى ما عليهن من الزينة. وقال ابن ابى حاتم حدثنا ابى حدثنا هشام بن عبد الله حدثنا ابن المبرك حدثنى سواربن ميمون حدثنا طلحة بن عاصم عن ام المصاعن انها قالت دخلت على عائشة رضى الله عنها فقلت يا ام المؤمنين ماتقولين فى الخضاب والنفاض والصباغ والقرطين والخلخال وخاتم الذهب وثياب الرقاق؟ فقالت يا معشر النساء قصتكن كلها واحدة احل الله لكن الزينة غير متبرجات اى لايحل لكن ان يروا منكن محرما.
وقال السدى كان شريك لى يقال له مسلم، وكان مولى لامرأة حذيفة بن اليمان، فجاء يوما الى السوق واثر الحناء فى يده، فسألته عن ذلك فاخبرنى انه خضب رأس مولاته وهى امرأة خذيفة فانكرت ذلك، فقال ان شئت ادخلتك عليها؟ فقلت نعم، فادخلنى عليها فاذا هى امرأة جليلة، فقلت لها ان مسلما حدثنى انه خضب راسك؟ فقالت نعم يابنى انى من القواعد اللاتى لايرجون نكاحا. وقد قال الله تعالى فى ذلك ماسمعت. وقوله (وان يستعففن خير لهن) اى وترك وضعهن لثيابهن وان كان جائزا خير والفضل لهن (والله سميع عليم). (تفسير ابن كثير جص৪৮৬، ৪৮৭، ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، شرح بدر الدين العينى)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ (অতি বৃদ্ধা মহিলা) হযরত সাঈদ বিন জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুকাতিল বিন হাইয়ান ও হযরত যাহ্হাক রহমতুল্লাহি আলাইহিমা এবং হযরত ক্বতাদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, অতি বৃদ্ধা নারী হলো, যাদের স্বাভাবিক মাজুরতা বন্ধ হয়েছে এবং সন্তান ধারনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। (যারা বিবাহ্রে আশা রাখেনা।) অর্থাৎ যাদের স্বামী গ্রহণের কোন আকর্ষণ অবশিষ্ট নেই। (তাদের জন্য কোন গুনাহ্ নেই। সৌন্দর্য প্রকাশ না করে অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার না করায়।) অর্থাৎ তাদের জন্য বাড়ীর ভিতরে পর্দার দরকার নেই। যেমন, অন্যান্য নারীদের জন্য নেই। ...... হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ (বৃদ্ধা নারীদের অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার না করলে কোন গুনাহ্ নেই)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, অতিরিক্ত কাপড় বলতে, বড় ধরনের চাদর যা দ্বারা পুরো শরীর ঢাকে তথা বোরকা এবং সাধারণ চাদর। অনুরূপভাবে হাদীছ শরীফটি বর্ণিত আছে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা, হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সাঈদ বিন জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আবু শাছা, ইবরাহীম নখয়ী, হাসান বছরী, ক্বতাদা, যুহরী, আওযায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম এবং অন্যান্যগণের থেকেও।         হযরত আবু ছালিহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, বোরকা বা চাদর ব্যবহার ব্যতীত পুরুষদের সামনে দোপাট্রা, কামিছ, ছেলওয়ার এবং ওরনা পড়ে থাকতে পারবে।       হযরত সাঈদ বিন জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং অন্যান্যরা বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর ক্বিরয়াত হলো
ان يضعن من ثيابهن.
 (অর্থাৎ তাদের পোশাকের কিছু যেন ব্যবহার না করে দেখে দেয়) আর তা হলো, জামা-ছেলওয়ার ও ওড়নার উপর পরিহিত বোরকা। তাই, বৃদ্ধা স্ত্রী লোকের জন্য অপরিচিত-পরিচিত লোকের সামনে অতিরিক্ত কাপড় তথা বোরকা ব্যবহার না করাটা গুণাহ্ নয়। মোটা পুরু দোপাট্রা পড়ে থাকবে, এর উপর অন্য কাপড় পড়া জরুরী নয়। হযরত সাঈদ বিন জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু- (غير متبرجتم بزينة অর্থাৎ সৌন্দর্য্য প্রকাশের আশা না থাকে।) এর ব্যাখ্যায় বলেন, বড় চাদর বা বোরকা ব্যবহার না করার দ্বারা যার মধ্যে সৌন্দর্য্য প্রকাশ করে দেখানোর আকাঙ্খা থাকেনা। হযরত ইবনু আবী হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, আমার পিতা। তিনি  বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ বর্ণনা করেছেন, হযরত হিশাম বিন আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত ইবনুল্ মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত সিওয়ার বিন মাইমূন রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত ত্বলহা বিন আছিম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত উম্মুল্ মাছাইন রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে। তিনি বলেন, আমি একদা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর কাছে প্রবেশ করলাম এবং বললাম, হে উম্মুল্ মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহা! খিযাব বা মেহেদী, রং, কানের দুল, নুপুর-ঝুমূর, স্বর্ণের আংটি এবং পাতলা কাপড় ইত্যাদি পরিধানের ব্যাপারে আপনি কি বলেন? উত্তরে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে মহিলা সম্প্রদায়! পরপুরুষকে প্রদর্শণের আশা ছাড়া তোমাদের জন্য সৌন্দর্য্য, সাজ-সজ্জা জায়িয বা হালাল। মাহরামকে দেখানোর জন্য হালাল আর গাইরে মাহরাম তথা পরপুরুষকে দেখানোর জন্য সাজা-সজ্জা হালাল নয় তথা হারাম।             হযরত সুদ্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, শারীক নামে এক ব্যক্তি ছিলেন, যাকে মুসলিম বলা হতো। তিনি হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর স্ত্রীর গোলাম ছিলেন। তিনি একদিন বাজারে আসলেন, তখন তার হাতে মেন্দীর চিহ্ন পাওয়া গেল। তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তাই তিনি আমাকে সংবাদ দিলেন যে, তিনি তার মহিলা মনিবের মাথায় মেন্দী লাগিয়ে দিয়েছেন। আর তিনি হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর স্ত্রী। এতে আমি অপছন্দ করলাম। তিনি (গোলাম) বললেন, আপনি যদি ইচ্ছা করেন তবে তার কাছে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিতে পারেন। আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি জিজ্ঞাসা করতেছি। এ বলে তিনি তার কাছে গেলেন এবং দেখলেন তিনি অতি বৃদ্ধা মহিলা। তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, নিশ্চয়ই মুসলিমআমার কাছে বলেছেন যে, তিনি আপনার মাথায় মেন্দী লাগিয়ে দিয়েছেন? তখন বৃদ্ধা মহিলা বললেন, হ্যাঁ, হে বৎস! নিশ্চয়ই আমি এমন বৃদ্ধা মহিলা যে বিবাহের আশা রাখিনা। আল্লাহ্ তায়ালা যা বলেছেন এ বিষয়ে তা আমি শ্রবণ করলাম।      আল্লাহ্ তায়ালা বানীঃ (যদি তারা এ থেকে বিরত থাকে, তবে তা তাদের জন্য অতি উত্তম) অর্থাৎ অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার না করাটা যদিও জায়িয তারপরেও অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার করাটা তাদের জন্য উত্তম এবং ফযীলতের কারণ। (আল্লাহ্ পাক অধিক শ্রবন কারী, মহাজ্ঞানী।” (তাফসীরে ইবনু কাছীর ৩য় জিঃ ৪৮৬, ৪৮৭, পৃষ্ঠা, আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল্ মাবূদ, শরহু বদরিদ্দীন আইনী।) [১২৪৫-১২৪৭]
(والقواعد من النساء) يعنى اللاتى قعدن عن الولد والحيض من الكبر لايلدن ولايحضن واحدتها قاعد بلا هاء وقيل قعدن عن الازواج وهذا معنى قوله (اللاتى لايرجون نكاحا) اى لايردن الرجال لكبرهن قال ابن قتيبة سميت المرأة قاعدا اذا كبرت لانها تكثر القعود. وقال ربيعة الرأى هن العجز اللاتى اذا راهن الرجال استقذروهن فاما من كانت فيها بقية من جمال وهى مجل الشهوة فلاتدخل فى هذه الاية (فليس عليهن جناح ان يضعن ثيابهن) عند الرجال يعنى يضعن بعض ثيابهن وهى الجلباب والرداء الذى فوق الثياب والقناع الذى فوق الخمار فاما الخمار فلايجوز وضعه. وفى قراءة ابن مسعود رضى الله عنه وابى بن كعب ان يضعن من ثيابهن (غير متبرجاتم بزينة) اى من غير ان يردن بوضع الجلباب والرداء اظهار زينتهن والتبرج هو ان تظهر المرأة من محاسنها ماينبغى لها ان تستره (وان يستعففن) فلا يلقين الجلباب والرداء (خير لهن والله سميع عليم). (تفسير البغوى جص ৮৯، تفسير الخازن جص৮৯، تفسير مدارك التنزيل ج৩ ৩৪০)
অর্থঃ- “(মহিলাদের মধ্যে যারা অতি বৃদ্ধা) অর্থাৎ যারা বার্ধক্যের কারনে স্বাভাবিক মাজুরতা ও সন্তান হওয়া থেকে নিস্কৃতি পেয়েছেন, তাই সন্তান জন্মগ্রহণ করেনা ও হামেলা হন না। কেউ কেউ বলেন, স্বামী গ্রহণ থেকে যে নিরাশ হয়েছে। এটিই তাঁর বাণীর মর্মার্থ। (যারা বিবাহ্রে আশা রাখেনা।) হযরত ইবনে কুতাইবা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এক মহিলার নামকরণ করা হয়েছিলো ক্বায়িদানহিসেবে, যখন সে বৃদ্ধা হয়েছিল। কেননা, তার বার্ধক্য প্রবল ছিল। হযরত রবীয়ার্তু রাই রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এমন বৃদ্ধার কথা বলা হয়েছে, পুরুষেরা যাকে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেনা। তবে বয়স হওয়ার পরও যাদের সৌন্দর্য্য বিদ্যমান থাকে, তবে তারা শাহওয়াত পয়দার স্থান। এ আয়াতে বর্ণিত হুকুমের বাইরে। (তাদের জন্য কোন গুনাহ্ নেই, অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার না করায়) পুরুষদের সামনে। অর্থাৎ তারা তাদের কিছু কাপড় ব্যবহার না করেও পারবে। সেগুলো হলো বড় চাদর, বোরকা, চাদর, যেগুলো পরিধানে কাপড় তথা কামিছ, ছেলওয়ার ইত্যাদির উপরে থাকে। এমনকি ক্বিনাও ব্যবহার করতে পারবে, যা খিমার তথা উড়নার উপরে পরিধান করা হয়। খিমার বা উড়না ব্যবহার না করা জায়িয নেই। হযরত আবুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা এবং হযরত উবাই ইবনে কাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর ক্বিরায়াতে তাদের কাপড়ের মধ্যে কিছু কাপড় ব্যবহার না করেও পারবে। (যখন সৌন্দর্য প্রকাশের নিয়ত থাকবে না।) অর্থাৎ চাদর ও বোরকা ব্যবহার না করার দ্বারা তাদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ এবং দেখানোর নিয়ত থাকবে না। যা মহিলার সৌন্দর্য্য প্রকাশ থেকে পর্দায় থাকা তার জন্য জরুরী। (তবে এর থেকে বিরত থাকা।) জিলবাব বা চাদর, বোরকা ইত্যাদি ব্যবহার করা। (তাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ্ পাক সর্বশ্রতা ও সর্বজ্ঞ।।)”  (তাফসীরুল্ বাগবী ৫ম জিঃ ৮৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ খাযিন ৫ম জিঃ ৮৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল ৩য় জিঃ ৩৪০ পৃষ্ঠা।) [১২৪৮-১২৫০]
والقواعد) مبتدا (من النساء) حال من ضمير الفاعل جمع قاعد وهى المرأة التى يئست عن الحيض والحمل ولاجل اختصاصها بالنساء جاء قاعد بغير هاء كالحائض والحامل (التى لايرجون نكاحا) صفة للقواعد اى لايطمعن فيه لكبرهن قال ربيعة يعنى العجائز اللاتى اذا رأهن الرجال استقذرو هن فاما من كانت فيها بقية جمال وهى محل للشهوة فلاتدخل فى هده الاية. (فليس عليهن جناح) خبر للمبتدا جئ بالفاء لتضمن المبتدا معنى الشرط (ان يضعن ثيابهن) اى فى ان يضعن بعض ثيابهن يدل عليه قراءة ابن مسعود وابى بن كعب ان يضعن من نيابهن فلا يجوزلها كشف ظهرها وبطنها وماتحت سرتها (غير متبرجتم بزينة) واصل البرج الظهور ومنه يقال البرج للركن والحصن وكواكب السماء والتبرج التكلف فى اظهار مايخفى من قولهم سفينة بارجة لاغطاء عليها. والبرج سعة العين بحيث يرى بياضها محيطا بسوادها كله لا يغيب منه شئ الا انه خص فى الاستعمال بتكشف المرءة زينتها وجمالها للرجال. وقع فى الحديث كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يكره عشر خلال منها التبرج بالزينة لغير محلها. قال صاحب الهداية التبرج الظهار الزينة للناس الاجانب وهو المذموم واما للزوج فلا وهو معنى قوله عليه السلام لغير محلها. وقوله تعالى غير متبرجت حال من فاعة يضعن يفيد يقييد عدم الجناح فى وضع ثياب العجائز ان يكون ذلك من غير ارادة اظهار الزينة للرجال فمن كانت منهن ارادت بها التبرج فذلك عليها حرام (وان يستعففن) اى يطلبن من انفسهن العفة وهى كف النفس عما لايحل كذا فى القاموس. والمراد وان يكففن النفسهن عن وضع الشياب عند الرجال (خيرلهن) من وضعها لانه قديفضى الى الفتنة والتستر ابعد من التهمة (والله سميع) لمقالتهن للرجال (عليم) بمقصودهن فى وضع الثياب. (التفسير المظهرى جص৫৫৮، ৫৫৯، هداية، قاموس)
অর্থঃ- (القوعد অতি বৃদ্ধা) শব্দটি مبتدا উদ্দেশ্য (من النساء মহিলাদের মধ্যে) এটি فاعل                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                               ফায়েলের ضمير যমীর বা সর্বনাম থেকে حال হাল। قواعد  কাওয়াইদ শব্দটি قاعدকাইদশব্দটির جمع বা বহুবচন। এরা এমন বৃদ্ধা মহিলা যারা স্বাভাবিক মাজুরতা ও হামেলা হওয়ার বয়স অতিক্রম করেছে। (যারা বিবাহ্রে আশা রাখেনা) এটি قواعد শব্দের صفة বা গুণ। অর্থাৎ যাদের বয়ঃবৃদ্ধির কারণে বিবাহ্রে প্রতি আদৌ আকাঙ্খা জাগেনা। হযরত রবীয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, এখানে এমন বৃদ্ধার কথা বলা হয়েছে, পুরুষেরা যাদের দিকে দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তবে বয়স হওয়ার পরও যাদের সৌন্দর্য্য কিছুটা অবশিষ্ট আছে তারা এ আয়াত শরীফের হুকুম বহির্ভুত। অর্থাৎ যাদের প্রতি পুরুষদের আকর্ষণ নেই তারা অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার না করেও থাকতে পারবে। আর যাদের সৌন্দর্য্য বিদ্যমান আছে তাদের জন্য অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার না করা জায়িয নেই। (তাদের জন্য কোন গুণাহ্ নেই তাদের অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার না করাতে) অর্থাৎ তারা তাদের কিছু কাপড় ব্যবহার না করলেও পারবে। এর দলীলস্বরূপ হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা এবং হযরত উবাই ইবনে কাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর ক্বিরায়াত গ্রহণযোগ্য।    তাঁরা এভাবে পড়েছেন, ان يضعن من ثيا بهنতারা তাদের কাপড়ের কিছু ব্যবহার না করলেও পারবে। এজন্য তাদের পিঠ, পেট ও নাভির নিচ থেকে উন্মুক্ত করা জায়িয হবেনা। (যখন সৌন্দর্য্য প্রদর্শনের নিয়ত না থাকবে) برجবারজুনএর মূল অর্থ ظهورযুহুরুনবা প্রকাশ করা, প্রদর্শন করা। দূর্গ, দৃঢ় অট্টালিকা এবং আকাশের তারকার সমাবেশকেও برج বারজুন বলা হয়। التبرج তাবাররুজ অর্থ গোপন বস্তুকে বিচিত্র রূপে প্রকাশ করা। سفينة بارجة সফীনাতুন্ বারিজাহ্ বলা হয় এমন নৌকাকে যার উপরে ছই বা আচ্ছাদ্দন থাকেনা। চোখের মনির চারদিকে প্রকাশিত সাদা অংশকেও برج বারজুন বলা হয়। আর تبرج তাবাররুজ শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয় বেপর্দা মহিলাদের পুরুষদের সামনে সৌন্দর্য্য প্রদর্শণের সাথে আগমন করার ক্ষেত্রে।              হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দশটি জিনিসকে খুবই অপছন্দ করতেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে সৌন্দর্য্য, সাজ-সজ্জার সাথে মহিলাদের বাইরে বের হওয়া। হিদায়ারমুছান্নিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তাবাররুজ অর্থ পরপুরুষের সামনে নারীদের সাজ-সজ্জা, সৌন্দর্য্য প্রকাশ করা। এরকম রূপ প্রদর্শণ শরীয়তে হারাম। তবে স্বামীগণের সামনে তাদের রূপ, যৌবন পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারবে। এটাই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী لغير محلهاতাদের যথাযথ  স্থলছাড়া এর মর্মার্থ। আল্লাহ্ তায়ালার বাণী غير متبرجتসৌন্দর্য্য প্রদর্শন না করেএটি يضعن শব্দের فاعل থেকে حال হয়েছে। এ শব্দটি বৃদ্ধা মহিলাদের অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার না করলে যে গুনাহ্ হবে না এমন ফায়েদা দেয়। যখন বৃদ্ধা মহিলা কর্তৃক পুরুষদের সামনে সৌন্দর্য্য প্রকাশের নিয়ত থাকে না তখন অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার না করা জায়িয। আর বৃদ্ধা মহিলার উদ্দেশ্য যদি থাকে সৌন্দর্য্য প্রদর্শণের তবে অতিরিক্ত কাপড় যেমন, চাদর, বোরকা এবং কিনায়া খুলে ফেলা হারাম। (তবে এর থেকে বিরত থাকা) অর্থাৎ নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে নফসের বিরোধীতা করা তথা নিষিদ্ধ বস্তু হালাল নয়। এরকম কামূস নামক গ্রন্থে আছে। এ বক্তব্য থেকে মূল উদ্দেশ্য হলো, পুরুষদের সামনে বহিরাবরণ খোলা দোষণীয় না হওয়া সত্ত্বেও না খোলাই উত্তম। (তাদের জন্য উত্তম)  ব্যবহার না করার থেকে ব্যবহার করাই উত্তম। কেননা, অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার করার দ্বারাই ফিৎনা-ফাসাদ থেকে পরিপূর্ণ নিররপদ থাকা সম্ভব। (আর আল্লাহ্ পাক সর্বশ্রোতা) মহিলারা পুরুষদের ব্যাপারে যা বলাবলি করে তা তিনি শ্রবণ করেন (সর্বজ্ঞ) তাদের অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার না করার মধ্যে তাদের কি নিয়ত বিদ্যমান তা তিনি পূর্ণভাবে অবহিত।”             (আত্ তাফসীরুল মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৫৫৮, ৫৫৯ পৃষ্ঠা, হিদায়া, কামূস) [১২৫১-১২৯০]
(والقواعد من النساء) قعدن عن الحيض والولد لكبرهن (التى لايرجون نكاحا) لذلك (فليس عليهن جناح ان يضعن ثيابهن من الجلباب والرداء والقناع فوق الخمار (غير متبرجت) مظهرات (بزينة) خفية لقلادة وسوار وخلخال (وان يستعففن) بان لايضعنها (خير لهن والله سميع) لقولكم (عليم) بما فى قلوبكم.
(تفسير الجلالين، حاشية الجمل على الجلالين، حاشية الصاوى على الجلالين، كمالين)
অর্থঃ- “(বৃদ্ধা মহিলা) বার্ধক্যের কারণে যার স্বাভাবিক মাজুরতা এবং সন্তান হওয়ার বয়স শেষ হয়েছে। (যারা বিবাহ্রে আশা করেনা) এ কারণে (তাদের জন্য কোন গুণাহ্ নেই, অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার না করতে) যেমন, জিলবাব তথা বড় ধরণের চাদর, বোরকা এবং উড়নার উপর পড়ার জন্য কিনা এগুলো ব্যবহার না করায় গুণাহ্ নেই। (যদি প্রকাশের নিয়ত না থাকে) প্রদর্শনের ইচ্ছা না থাকে। (সৌন্দর্যের) গুপ্ত সৌন্দর্য হলো গলার হাড়, হাতের চুড়ি বা বালা এবং পায়ের গহনা তথা ঝূমুর-নুপুর ইত্যাদি। (তবে এর থেকে বিরত থাকা) বোরকা ও চাদর ব্যবহার করা (তাদের জন্য উত্তম, আল্লাহ্ পাক শ্রবণকারী) তোমাদের কথাবার্তাগুলো (সর্বজ্ঞ) তোমাদের অন্তরে যা লুকায়িত আছে সে সম্পর্কে। ”            (তাফসীরুল জালালাইন, হাশিয়াতুল্ জামাল আলাল্ জালালাইন, হাশিয়াতুছ্ ছাবী আলাল্ জালালাইন, কামালাইন)          উল্লিখিত তাফসীরের কিতাবগুলো ছাড়াও নিম্নবর্ণিত তাফসীরের কিতাবগুলোতে ভাষা, ভাব ও বর্ণনার তারতম্যর সাথে আলোচনা বিদ্যমান আছে, আহকামুল কুরআন লিল্ জাছ্ছাছ, আহকামুল কুরআন লিইবনিল আরাবী, আহকামুল কুরআন লিল্ কুরতুবী, তাফসীরে রুহুল বয়ান, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, যাদুল মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর, তাফসীরুত্ ত্ববারী, তাফসীরে দুররুল মানছূর, তাফসীরে কবীর লিল্ ফখর্রি রাযী, তাফসীরুল বাইযাবী, তাফসীরে শাইখ যাদাহ্ আলাল্ বাইযাবী, হাশিয়াতুশ্ শিহাব আলাল বাইযাবী, তাফসীরুল কাশ্শাফ, তাফসীরে ফতহুল ক্বদীর, আত্ তাসহীল লি উলূমিত তানযীল, নাযমুদ দুরার, তাফসীরুস্ সমরকন্দী, আদ্ দুররুল মাছূন, আল মুহাররারুল ওয়াজীয, তাফসীরুল কাসিমী, তাফসীরে ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, তাফসীরে আবিস্ সাউদ, তাফসীরে হাসান বছরী, ছাফওয়াতুত্ তাফাসীর, তাফসীরে মাওয়ারাদী, তাফসীরুল লুবাব, তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ ছাবূনী, তাফসীরে হক্কানী, তাফসীরে আহমদী, তাফসীরে যিয়াউল কুরআন, কানযুল ঈমান ওয়া খাযাইনুল ইরফান, তাফসীরে আযীযী, তাফসীরে ক্বাদিরী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী, তাফসীরে মায়ারিফুল কুরআন, তাফহীমুল কুরআন ইত্যাদি।     হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত সূরা নূরের ৬০নং আয়াত শরীফের আলোচনা থেকে যে সকল মাসয়ালা বের হয়েছে তা হলো-      (১) আয়াত শরীফে এমন বৃদ্ধা মহিলাদের কথা বলা হয়েছে যাদের স্বাভাবিক মাজুরতা, হামেলা হওয়ার যোগ্যতা বন্ধ হয়ে গেছে, বিবাহ্রেও আশা নেই এবং যাদের দেখলে পুরুষের আকর্ষণ সৃষ্টি হয়না। বরং বিকর্ষণ সৃষ্টি হয়।        (২) এমন অতি বৃদ্ধা মহিলা যদি তাদের অতিরিক্ত কাপড় যেমন, বোরকা, চাদর ও ওড়নার উপর পরিহিত কিনা বা কাপড়ও ব্যবহার না করে তাহলে তা জায়িয হবে কোন গুণাহ্ হবেনা। তবে ব্যবহার করাই উত্তম।          (৩) এতে শর্ত হলো যেন সৌন্দর্য্য প্রদর্শণের নিয়ত না থাকে।   (৪) অতি বৃদ্ধা মহিলাদের জন্য সৌন্দর্য্য প্রকাশের ইচ্ছা ছাড়া অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার না করা জায়িয।     (৫) মাথা, গলা, পিঠ, পেট, হাতের বালা, গলার হাড়, পায়ের গহনা, নুপুর, ঝুমুর ইত্যাদি প্রকাশ করা যাবেনা।          (৬) এ হুকুমগুলো বিশেষ প্রয়োজনে বেগানা পুরুষদের সামনে বের হওয়ার সময় প্রযোজ্য।     (৭) যে বৃদ্ধা মহিলার শারীরিক সৌন্দর্য্য এখনো কিছুটা বিদ্যমান আছে তার জন্য অতিরিক্ত কাপড় যেমন, বোরকা, চাদর ইত্যাদি ব্যবহার না করা জায়িয নেই। বরং তা গুণাহ্রে কারণ হবে। হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত সূরা নূরের ৩১নং আয়াত শরীফ الاماظهر منها -এর সঠিক তাফসীর বা ব্যাখ্যা [১২৯১]
ولايبدين زينتهن الا ماظهر منها.
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ঈমানদার নারীদেরকে বলুন,) তারা যেন তাদের সৌন্দর্য্য প্রদর্শন না করে। তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত।” (সূরা নূর/৩১) গাইরে মাহ্রামদের সামনে মহিলাদের মুখমণ্ডল, হাত ও পা খোলা রাখা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম     অত্র আয়াত শরীফের زينة শব্দ দ্বারা মহিলাদের যাবতীয় সৌন্দর্য্য যেমন, মাথার মুকুট, কানের দুল, গলার হাড় বা মালা, হাতের আংটি, চুড়ি বা বালা, বাজু বন্ধ, পায়ের ঝুমুর বা নুপুর ইত্যাদিকে বুঝানো হয়েছে। যার প্রদর্শণ বা প্রকাশ হারাম বা নাজায়িয।              আর الاما ظهر منها এর ব্যাখ্যায় প্রসিদ্ধ ও সর্বজনমান্য তাফসীরগুলোতে কাপড়, চাদর, বোরকা ইত্যাদিকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ মহিলাদের উপরের চাদর বা বোরকার উপর দৃষ্টি পরলে মহিলাদের গুণাহ্ হবেনা। তবে ইচ্ছাকৃত তাকানো যাবেনা।    নিম্নে উক্ত আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ যে ফায়সালা দিয়েছেন তা বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হলো-
[১২৯২]
وقوله تعالى : (ولايبدين زينتهن الاما ظهر منها) اى لايظهرن شيئا من الزينة للاجانب الامالايمكن اخفؤه. قال ابن مسعود كالرداء والثياب يعنى على ماكان يتعاطاء نساء العرب من المقنعة التى تجلل ثيابها ومايبدو من اسافل الثياب فلاحرج عليها فيه لان هذا لايمكنها اخفاؤه ونظيره فى زى النساء مايظهر من ازارها ومالا يمكن اخفاؤه وقال بقول ابن مسعود الحسن وابن سيرين وابو الجوزاء وابراهيم النخعى وغيرهم.
وقال الاعمش عن سعيد بن جبير عن ابن عباس (ولايبدين زينتهن الا ماظهر منها) قال وجهها وكفيها والخاتم وروى عن ابن عمر وعطاء وعكرمة وسعيد ابن جبير وابى الشعثى والضحاك وابراهيم النخعى وغيرهم نحو ذلك. وهذا يحتمل ان يكون تفسيرا للزينة التى نهين عن ابد ائها، كما قال ابو اسحاق السبيعى عن ابى الاحوص عن عبد الله قال فى قوله (ولا يبدين زينتهن) الزينة القرط والدملوج والخلخال والقلادة. وفى رواية عنه بهذا الاسناد قال الزينة زينتان زينة لايراها الا الزوج الخاتم والسوار، وزينة يراها الاجانب وهى الظاهر من الثياب، وقال الزهرى لايبدو لهؤلاء الذين سمى الله ممن لاتحل له الا الاسورة والاخمرة والاقرطة من غير حسر. (تفسير ابن كثير جص ৪৫৩، ৪৫৪)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ (তারা যেন তাদের সৌন্দর্য্য প্রদর্শণ না করে, তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত) অর্থাৎ পরপুরুষের সামনে নিজেদের সৌন্দর্য্যরে কোন অংশই যেন প্রকাশ না করে। তবে ইচ্ছা থাকার পরও যা ঢেকে রাখা সম্ভব নয় সেটা ভিন্ন কথা। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যেমন চাদর, কাপড়ের উপর ইত্যাদি। অর্থাৎ আরবী মহিলারা যে আবরণী দ্বারা তাদের শরীর ঢেকে রাখে, সেই কাপড় বা বোরকার উপর দেখলে মহিলাদের কোন গুণাহ্ হবেনা। কেননা এ থেকে মহিলাদের পক্ষে নিজেদের আকৃতি গোপন করা সম্ভব নয়। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা, হযরত হাসান বছরী, ইবনে সীরীন, আবুল্ জুযা, ইব্রাহীম নখযী রহমতুল্লাহি আলাইহিম এবং অন্যান্যগণও এরকম বক্তব্য দিয়েছেন।     হযরত আমাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত সাঈদ বিন জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে (তারা যেন তাদের সৌন্দর্য্য প্রদর্শণ না করে তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত) এ আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় বলেন, এরদ্বারা মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও আংটিকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা, হযরত আত্বা, ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহিমা, হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আবু শাছা, যাহ্হাক, ইব্রাহীম নখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম এবং অন্যান্যগণ অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।  এ আয়াত শরীফে (زينة) যীনাতুনশব্দের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ঐ সৌন্দর্য্যরে স্থান যা প্রকাশ করা শরীয়তে নিষিদ্ধ। যেমন, হযরত আবূ ইসহাক সাবীয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবুল আহ্ওয়াছ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বলেছেন। তিনি আল্লাহ্ তায়ালার বাণী (তারা যেন তাদের সৌন্দর্য্য প্রদর্শণ না করে)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, এর অর্থ হলো, তারা যেন তাদের কানের দুল, হাতের বালা বা চুড়ি, পায়ের গহনা বা ঝুমুর-নুপূর এবং গলার হাড় বা মালা ইত্যাদি প্রদর্শণ না করে।        এ সনদে হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, “তিনি বলেছেন, (زينة)  ‘যীনাতুনতথা আকর্ষণীয় পোশাক দুপ্রকারের রয়েছে। (এক) যা শুধু স্বামীই দেখে। যেমন, আংটি এবং হাতের বালা বা চুড়ি। (দুই) আবরণ হলো সেটাই যা পরপুরুষও দেখে থাকে। যেমন, উপরের আবরণীয় প্রকাশমান কাপড়। হযরত ইমাম শিহাব যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, এ আয়াত শরীফে যেসব মাহ্রাম আত্মীয়দের কথা বলা হয়েছে তাদের সামনে হাতের বালা বা চুড়ি, ওড়না এবং কানের দুল প্রকাশিত হয়ে গেলে কোন গুণাহ্ নেই বা দোষ নেই।”      (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫৩, ৪৫৪ পৃষ্ঠা) [১২৯৩]
قوله تعالى (ولايبدين) يعنى لايظهرن (زينتهن) يعنى ليغير المحرم واراد بالزينة الخفية مثل الخلخال والخضاب فى الرجل والسوار فى المعصم والقرط فى الاذن والقلائد فى العنق فلايجوز للمرأة اظهارها ولايجوز للاجنبى النظر الميها والمراد من الزينة النظر الى مواضعها من البدن (الاما ظهر منها) يعنى من الزينة ..... وقال ابن مسعود هى الثياب ........ وسانر بدنها عورة. (تفسير الخازن جص৬৯)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ (তারা যেন প্রদর্শণ না করে) অর্থাৎ তারা যেন প্রকাশ না করে (তাদের সৌন্দর্য্যকে) অর্থাৎ গাইরে মাহ্রামদের সামনে, আয়াত শরীফের (زينة) যীনাতুনশব্দ দ্বারা উদ্দশ্যে হলো গুপ্ত সৌন্দর্য্য। যেমন, ঝুমুর বা নুপূর, পায়ের রং, হাতের চুড়ি বা বালা, কানের দুল এবং গলার হাড় ইত্যাদি মহিলাদের জন্য প্রকাশ করা জায়িয নেই এবং পরপুরুষের জন্য পরনারীর দিকে দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই। (زينة) যীনাতুনশব্দের মুরাদ হচ্ছে মহিলার শরীরের দিকে দৃষ্টি না দেয়ার ব্যাপারে। (তবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত) অর্থাৎ বাহ্যিক সৌন্দর্য্য থেকে যা প্রকাশ পায়। ... হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় বলেছেন, কাপড় বা পোশাক অথবা বোরকার উপর দেখলে মহিলাদের কোন গুণাহ্ হবেনা। .... মহিলাদের সম্পূর্ণ শরীর অর্থাৎ আপাদমস্তকের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আওরাত বা আবরণীয়।”              (তাফসীরুল্ খাযিন ৫ম জিঃ ৬৯ পৃষ্ঠা) [১২৯৪]
قوله تعالى (ولايبدين زينتهن) يعنى لايظهرن زينتهن لغير محرم واراد بها الزينة الخفية وهما زينتان خفية وظاهرة فالخفية مثل الخفخال والخضاب فى الرجل والسوار فى المعصم والقرط والقلائد فلايجوزلها اظهارها ولاللاجنبى النظر اليها والمرأد من الزينة موضع الزينة قوله تعالى (الا ما ظهر منها) ارادبه الزينة الظاهرة واختلف اهل العلم فى هذه الزينة الظاهرة التى استثناها الله تعالى .... وقال ابن مسعود هى الثياب بدليل قوله تعالى "خذوا زينتكم عند كل مسجد" واراد بها الثياب .... فما كان من الزينة الظاهرة جاز للرجل الاجنبى النظر اليه اذا لم يخف فتنة وشهوة فان خاف شيئا منها غض البصر ...... وسائر بدنها عورة يلزمها ستره. (تفسير البغوى جص৬৯)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ (তারা যেন তাদের সৌন্দর্য্য প্রদর্শণ না করে)। অর্থাৎ তারা যেন গাইরে মাহরামগণের সামনে তাদের রূপ-সজ্জ্বা, সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে। আয়াত শরীফে زينةযীনাতুনশব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো গুপ্ত সৌন্দর্য্য। সৌন্দর্য্য দুপ্রকার। এক. গুপ্ত সৌন্দর্য, দুই. বাহ্যিক সৌন্দর্য্য। গুপ্ত সৌন্দর্য্য যেমন, পায়ের নুপুর, ঝুমুর ও পায়ের ব্যবহৃত রং, মেহেদী, হাতের চুড়ি বা বালা, কানের দুল এবং গলার হাড় ইত্যাদি মহিলাদের জন্য প্রকাশ করা জায়িয নেই। আর পুরুষের জন্য বেগানা মহিলার দিকে দৃষ্টি দেয়াও জায়িয নেই। زينةযীনাতুনদ্বারা লক্ষ্য হলো সৌন্দর্য্যরে স্থান বা ক্ষেত্র। আল্লাহ্ তায়ালার বাণী (তবে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বাহ্যিক সৌন্দর্য। হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম এই বাহ্যিক সৌন্দর্য্যরে ব্যাপারে ইখতিলাফ করেছেন। যা আল্লাহ্ তায়ালা আয়াত শরীফে পৃথক হুকুম দিয়েছেন। ... হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, তা হচ্ছে কাপড় ও বোরকার উপর। তাঁর দলীল হলো আল্লাহ্ পাক-এর বাণী, “প্রত্যেক নামাযের সময় আবরণ বা পরিচ্ছদ গ্রহণ করে।এখানে زينة শব্দের অর্থ কাপড় বা আবরণ আর مسجد মসজিদ অর্থ নামায। .. মহিলার বাহ্যিক আবরণের দিকে পরপুরুষদের (অর্থাৎ অবুঝ ও অতিবৃদ্ধ পুরুষদের) দৃষ্টি দেয়া জায়িয়। কেননা, এতে ফিৎনা-ফাসাদ ও শাহ্ওয়াতের ভয় থাকেনা। যদি ফিৎনা-ফাসাদ ও শাহ্ওয়াতের সম্ভাবনা থাকে (অর্থাৎ অবুঝ ও অতিবৃদ্ধা পুরুষ না হয়) তবে এরূপ পুরুষ চক্ষু নিম্নগামী রাখবে অর্থাৎ সেদিকে দৃষ্টি দিবেনা। ..... মহিলাদের পুরো শরীর আওরাত বা আবরণীয়। সম্পূর্ণ শরীরের পর্দা করা বা ঢেকে রাখা ফরয-ওয়াজিব।”           (তাফসীরুল বাগবী ৫ম জিঃ ৬৯ পৃষ্ঠা) [১২৯৫-১৩০৫]
(ولايبدين زينتهن) كالحلى والثياب والاصباغ فضلا عن مواضعها (الا ما ظهر منها) ... حديث ام سلمة انها سالت النبى صلى الله عليه وسلم اتصلى المرءة فى درع وخمار وليس لها ازار وقال لاباس اذا كان الدرع سابغا يغطى ظهور قدميها رواه ابو داود والحاكم واعله عبد الحق بان مالكا وغيره رواه موقوفا وهو الصواب وقال ابن الجوزى فى رفعه مقال لانه من رواية عبد الرحمن بن عبد الله وقد ضعفة يحبى وقال ابوحاتم الرازى لايجتج به. وايضا قوله تعالى ولايضربن بارجلهن ليعلم مايخفين من زينتهن يدل على ان الخلخال من الزينة الباطنة فموضعه يعنى القدم عورة. قال البيضاوى الاظهار ان هذا فى الصلوة لافى النظر قان كل بدن الحرة عورة لايحل لغير الزوج والمحرم النظر الى شئ منها الا لضرورة كالمعالجة وتحمل الشهادة ... قلت ابداء المرءة زينتها الخفية لغير اولى الاربة من الرجال جائز اجماعا ثابت بنص الكتاب لعدم خوف الفتنة فابداء زينتها الظاهرة لهم اولى بالجواز ونظر الرجل الى وجه مراة اجنبية اذا شك فى الاشتهاء لايجوز على ما قال صاحب الهداية ايضا. وقال ابن همام حرم النظر الى وجهها ووجه الامرد اذا شك فى الشهوة ويلزم هذا الحكم بان لاتبدو المرءة وجهها لرجل اجنبى اذاشك منه الشهوة والا لكان تعرضا للفساد وزوال احتمال الشهوة من الرجل الاجنبى ذى الاربة للمرءة الاجنبية غير متصور فيلزمنا القول بانه لايجوز للمرءة الحرة ابداء وجهها لرجل ذى اربة غير الزوج والمحرم فان عامة محاسنها فى وجهها فخوف الفتنة فى النظر الى وجهها اكثر منه فى النظر الى سائر اعضائها. وقد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المرءة عورة فاذا خرجت استشرفها الشيطان.
رواه الترمذى عن بن مسعود فان هذا الحديث يدل على انها كلها عورة غير ان الضرورات سستثناة اجماعا. والضرورة قدتكون بان لاتجد المرءة من ياتى بحوائجها من السوق ونحو ذالك فتخرج متقنعة كاشفة احدى عينيها لتبصر الطريق. فان لم تجد ثوبا سائغا تخرج فيما تجد من الثياب ساترة ما استطاعت وقد تكون اذا احتاجت الى الطبيب او الشهود او القاضى. فالمراد بالزينة فى الاية ان كان نفس الزينة كما فسرناه تبعا لما قال البيضاوى بالحلى والثياب والاصباغ. ويكون حينئذ تحريم ابداء مواضع الزينة بدلالة النص بالطريق الاولى فلاخفاء على هذا فى تأويل الاستثناء. حيث يقال معنى الا ماظهر منها الا ثيابها الظاهرة. قال البغوى قال ابن مسعود هى الثياب بدليل قوله تعالى خذوا زينتكم عندكل مسجد واراد به الثياب.
وان كان المراد بها مواضع الزينة فمعنى الاستثناء الاما ظهرمنها عند الضرورات ضرورة الخروج لقضاء الحوائج اوضرورة الاستشهاد اونحوذلك يعنى من غير قصد الى ابدائها فاستثناء الوجه والكفين من عورة الحرة ليس الا لاجل الصلوة. ويدل على عدم جواز ابداء المرأة وجهها قوله تعالى يايها النبى قل لازواجك وبنتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن الاية. قال ابن عباس وابو عبيدة امرت نساء المؤمنين ان يغطين رءوسهن ووجوههن بالجلابيب الاعينا واحدا ليعلم انهن حرائر. وما ذكرنا من حديث جائت امرأة من خثعم عام حجة الوداع سائلة مسئلة قضاء الحج عن ابيها محمول على جواز خروجها لضرورة السوال عن المسئلة وماذكر من ان الفضل كان ينظر اليها وتنظر اليه فجعل النبى صلى الله عليه وسلم يصرف وجه الفضل الى الشق الاخر صريح فى المنع عن النظر الى وجه المرءة الاجنبية لعدم الامن عليهما من الشيطان. (تفسير المظهرى جص৪৯৩، ৪৯৪، ৪৯৫، ৪৯৬، تفسير بيضاوى. ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، تفسير البغوى، هداية، ابوداؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের সৌন্দর্য্যকে প্রকাশ না করে)। যেমন, অলংকারের সৌন্দর্য্য, আবরণ ও রূপসজ্জ্বা। (তবে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত) ... হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নিশ্চয়ই তিনি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একদা জিজ্ঞাসা করলেন, যদি কোন মহিলা ইযার না পড়ে শুধু কামীছ ও ওড়না পড়ে নামায পড়ে তবে কি তার নামায আদায় হবে? হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে কামীছ হতে হবে এমন লম্বা যা দুপা পূর্ণভাবে আবৃত করে রাখে। (আবূ দাউদ শরীফ, হাকিম। )             হযরত আব্দুল্ হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফটির সূত্র পরস্পরাকে ত্রুটিমুক্ত মনে করেননা। কেননা, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহিম প্রমূখ এ হাদীছ শরীফকে موقوفমাওফুকপরিণত সূত্রে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং বর্ণনাটি পরিণত শ্রেণীর, সুপরিণত শ্রেণীর নয়। হযরত ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, হাদীছ শরীফটি مرفوعমারফুসুপরিণত হওয়ার ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে। কেননা, হযরত ইয়াহ্ইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সূত্র পরস্পরায় হযরত আর্ব্দু রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে দূর্বল রাবী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। হযরত আবূ হাতিম রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ হাদীছ শরীফ দ্বারা দলীল দেয়া যাবেনা।    আল্লাহ্ তায়ালা আরো বলেন, “তারা পদযুগল এমনভাবে সঞ্চালন করবেনা যাতে করে তাদের চুপানো সৌন্দর্য্য প্রকাশ হয়ে যায়।এ আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নিশ্চয়ই পায়ের অলংকার গুপ্ত সৌন্দর্য্যরে অন্তর্ভুক্ত। তাই পায়ের পাতা ও তার উপরের অংশ আবরণীয়।        হযরত ইমাম বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, সুস্পষ্ট মত হলো যে, এখানে হাত, মুখ ইত্যাদি খোলা রাখার যে কথা বলা হয়েছে তার সম্পর্ক কেবল নামাযের সাথে। পর্দার ক্ষেত্রে নয়। কেননা, স্বাধীনা মহিলার সমস্ত শরীর আবরণীয়। তাই স্বামী ও মাহরাম পুরুষ ছাড়া অন্য কাউকে মহিলারা শরীরের কোন অংশ দেখাতে পারবেনা।            তবে মাজুরের কথা আলাদা। যেমন, চিকিৎসা ও স্বাক্ষ্য গ্রহণ ইত্যাদি। .... আমি বলি, অতি বৃদ্ধ বা পুরুষদের মধ্যে যারা অবুঝ তাদের সামনে মহিলাদের আবরণীয় সৌন্দর্য্য প্রকাশ করা জায়িয। উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ ব্যাপারে ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেছেন। কিতাবুল্লাহ্ তথা কুরআন শরীফের দলীলের দ্বারা যা প্রমাণিত। কেননা, এ ক্ষেত্রে ফিৎনা-ফাসাদের কোন ভয় নেই। এভাবে অতি দূর্বল পুরুষের সামনেও আবরণীয় সৌন্দর্য্য প্রকাশ জায়িয। কিন্তু বেগানা মহিলার মুখমণ্ডলের দিকে ফিৎনার আশংকায় পুরুষ কর্তৃক দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই। হিদায়াকিতাবের মুছান্নিফ এ রকমেই বলেছেন। হযরত ইমাম হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, বেগানা নারী এবং দাঁড়ি-মোঁচবিহীন সুন্দর বালকের দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম যখন শাহ্ওয়াতের সম্ভাবনা থাকে। এ হুকুম পালন করা ফরয-ওয়াজিব যে, শাহ্ওয়াত প্রবলের আশংকা থাকলে নারীও তার চেহারা বেগানা পুরুষকে দেখাতে পারবেনা। কারণ এতে রয়েছে, ফিৎনা-ফাসাদের অধিক সম্ভাবনা। তাই অতি বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা যাদের থেকে শাহ্ওয়াতের সম্ভাবনা দূর হয়ে গেছে তারা ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে পর্দার বিধান অবশ্য পালনীয়।              তাই আমরা দৃঢ়ভাবে বলি যে, স্বাধীনা মহিলার জন্য তার স্বামী ও মাহ্রাম পুরুষ ছাড়া অন্য কারো সামনে তার চেহারা প্রকাশ করা জায়িয নেই। কেননা, নিশ্চয়ই মহিলার মুখমণ্ডলই রূপ-সৌন্দর্য্যরে শ্রেষ্ঠ প্রকাশস্থল। তাই মহিলার মুখমণ্ডল দেখার মধ্যে ফিৎনার প্রবল ভয় রয়েছে। তার চেয়ে আরো বেশী ফিৎনা-ফাসাদের আশংকা রয়েছে মহিলার পুরা অঙ্গ তথা শরীরের দিকে দৃষ্টি দেয়ার মধ্যে।          হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মহিলার আপাদমস্তক আবরণযোগ্য। যখন সে ঘর থেকে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে উকি-ঝুঁকি মারে। হাদীছ শরীফটি হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীছ শরীফটি প্রমাণ করে যে, মহিলাদের আপাদমস্তক আবরণীয়, ওয়াজিব। তবে বিশেষ জরুরতের অবস্থা আলাদা, ইজমা বা উম্মতের ঐক্যমতে এটাই সাব্যস্ত। যেমন, জরুরত হচ্ছে যখন মহিলা বাজার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনার কাউকে না পাবে তখন পর্দাবৃত হয়ে বাজারে যেতে পারবে। আর সে অবস্থায় শুধু একটি চোখ রাস্তা দেখার জন্য খোলা রাখতে পারবে। আপাদমস্তক তথা সমস্ত শরীর ঢাকার মত কাপড় না থাকলে যে কাপড়েই হোক আবৃত করতে হবে সমস্ত শরীর। এভাবে পূর্ণ পর্দার সাথে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য, সাক্ষ্যদানের জন্য এবং কাজীর কাছে বিচারের জন্য যেতে পারবে। ১. আয়াত শরীফের زينةযীনাতুনশব্দের দ্বারা যদি মূল সৌন্দর্য্য তথা অঙ্গের সৌন্দর্য্য বুঝানো হয়। যেমন, আমরা তাফসীর করেছি, যেরকম বলেছেন হযরত ইমাম বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি এর তাফসীর করেছেন অলংকারের সৌন্দর্য্য, কাপড় ও সাজসজ্জ্বা ইত্যাদি। আর তখন হুকুম হবে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দলীলের ভিত্তিতে সৌন্দর্য্যরে স্থানগুলো প্রকাশ করা হারাম। এ ব্যাখ্যা অপ্রকাশ্য নয় যে, যখন الا ما ظهر منها এর অর্থ নেয়া   হবে الا ثيابها الظاهرةবাহ্যিক কাপড়-চোপড় বা বোরকা ব্যতীতহিসেবে। যেমন, ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন তা হচ্ছে  কাপড়-চোপড় বা বাহ্যিক আবরণীয় বোরকা। আল্লাহ্ তায়ালার এ আয়াত শরীফের দ্বারা তা প্রমাণিত, “তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় আবরণ গ্রহণ করোএখানে زينةযীনাতুনঅর্থাৎ আবরণ বা কাপড়-চোপড়। ২. আর যদি زينةযীনাতুনশব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হয়  সৌন্দর্য্যরে অঙ্গ বা প্রতঙ্গ। তবে الاما ظهر منها এর অর্থ  হবে বিশেষ প্রয়োজনের সময়, সাক্ষ্য প্রদানের সময় অথবা অনুরূপ সময়ে তথা যখন অনিচ্ছা সত্ত্বে প্রকাশ হয়ে যায় ইত্যাদি ওজরে। মুখমণ্ডল ও হাত খোলা রাখার হুকুম রয়েছে। আর নামাযের বেলায়ও খোলা রাখতে হবে।           মহিলার মুখমণ্ডল খোলা নাজায়িয হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ্ তায়ালার বাণী, “হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণকে ও কণ্যাগণকে এবং মুমিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজের বুকের উপর টেনে নেয়।সূরা আহ্যাব ৫৯নং আয়াত শরীফ। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা এবং হযরত আবূ উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, “আয়াত শরীফে মুমিনগণের স্ত্রীগণকে তাদের মাথা ও মুখমণ্ডল চাদর দ্বারা আবৃত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে একটি চক্ষু খোলা রাখতে পারবে যাতে জানা যায় যে, তারা স্বাধীনা। এখন আমরা আলোচনা করছি সে হাদীছ শরীফ। বিদায় হজ্বের বছর খাছয়াম গোত্রের এক মহিলা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এসে পিতার বদলী হজ্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করার জন্য বিশেষ প্রয়োজনবশতঃ মহিলাদের জন্য বাইরে বের হওয়া জায়িয। হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে হযরত ফযল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সে মহিলার দিকে দেখছিলেন আর মহিলাও তাঁর  দিকে দেখছিলেন। তখন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ফযল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর চেহারা অন্য দিকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।এর দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, পুরুষ কর্তৃক বেগানা মহিলার চেহারার দিকে দৃষ্টি দেয়া নিষেধ তথা নাজায়িয ও হারাম।”        (তাফসীরুল মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯৩, ৪৯৪, ৪৯৫, ৪৯৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল বাইযাবী, তাফসীরুল বাগবী, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফূশ শাযী, আবু দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবূদ, হিদায়া) [১৩০৬]
قوله تعالى (ولايبدين زينتهن الا ما ظهر منها) ..... وروى ابو الاحوص عن عبد الله قال الزينة زينتان زينة باطنة لايزاها الا الزوج الاكليل والسوار والخاتم واما الظاهرة فالثياب وقال ابراهيم الزينة الظارة الثياب ..... ويدل على انه لايجوزله النظر الى الوجه لشهوة قوله صلى الله عليه وسلم لعلى لاتتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليس لك الاخرة وسال جرير رسول الله صلى الله عليه وسلم عن نظرة الفجأة فقال اصرف بصرك ولم يفرق بين الوجه وغيره. (احكام القران للجصاص جص১৭২، ১৭৩)
অর্থঃ- আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ (তারা যেন তাদের সৌন্দর্য্যকে প্রদর্শন না করে, তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত) ... হযরত আবূল আহওয়াছ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেছেন, زينةযীনাতুন বা সৌন্দয দুপ্রকার। ১. যীনায়ে বাতিনাহ্তথা গুপ্ত সৌন্দর্য। স্বামী ছাড়া যা কারো জন্য দেখা জায়িয নেই। গুপ্ত সৌন্দর্য যেমন মাথার মুকুট, হাতের চুড়ি ও হাতের আংটি ইত্যাদি। ২. যীনায়ে যাহিরাহ্ তথা বাহ্যিক সৌন্দর্য্য হলো কাপড় বা বোরকা ইত্যাদি। হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, বাহ্যিক সৌন্দর্য্য হলো পোষাক, কাপড় বা বোরকা ইত্যাদি। ...... আলোচনা থেকে প্রমানিত হলো যে, শাহ্ওয়াতের সাথে পুরুষ কর্তৃক মহিলার চেহারার দিকে দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেছেন, হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু! প্রথম দৃষ্টির পর আবার দৃষ্টি দিবে না। কেননা তোমার প্রথম দৃষ্টি ক্ষমা করা হবেকিন্তু অপর দৃষ্টি ক্ষমা করা হবেনা।হযরত জারীর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনিচ্ছাকৃত হঠাৎ দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, “তুমি তোমার দৃষ্টিকে ফিরিয়ে নিবে।এ হুকুম থেকে চেহারা ও অন্যান্য অঙ্গ পৃথক করা হয়নি। অর্থাৎ চেহারা ও হাত-পাসহ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরয।”      (আহকামুল কুরআন লিল্ জাছ্ছাছ ৫ম জিঃ ১৭২, ১৭৩ পৃষ্ঠা) [১৩০৭]
وقوله ولايبدين زينتهن يقول تعالى ذكره ولايظهرن للناس الذين ليسوالهن محرم زينتهن وهما زينتان احداهما ماخفى وذلك كالخلخال والسوارين والقرطين والقلائد والاخرى ماظهر منها وذلك مختلف فى المعنى منه بهذه الاية فكان بعضهم يقول زينة الثياب الظاهرة ذكر من قال ذلك حدينا ابن حميد قال حدثنا هرون ابن المغيرة عن الحجاج عن ابى اسحق عن ابى الاحوص عن ابن مسعود قال الزينة زينتان فالظاهرة منها الثياب وماخفى الخلخالان والقرطان والسواران. (تفسير الطبرى جص৯২)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ তারা মহিলারা যেন তাদের সৌন্দর্য্যকে প্রদর্শণ না করে।আল্লাহ্ তায়ালা এটি উল্লেখ করে বলেছেন, মহিলারা যেন মাহ্রামদের সামনে ছাড়া অন্য মানুষের সামনে সৌন্দর্য্য প্রদর্শণ না করে। সৌন্দর্য্য দুপ্রকার। এক. প্রথমটি হলো গুপ্ত সৌন্দর্য্য। তা হচ্ছে যেমন পায়ের অলংকার তথা নুপূর, ঝুমূর, দুহাতের চুড়ি বা বালা, দুকানের দুল এবং গলার হাড় বা মালা ইত্যাদি। দুই. অপরটি হলো যা অনিচ্ছায় প্রকাশ পায়। এ আয়াতাংশের মর্মার্থ নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে। অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেছেন, কাপড়ের সৌন্দর্য্যই প্রকাশ্য সৌন্দর্য্য। যারা এ মতের অনুসারী তাদের দলীল হলো-     হযরত আবূ জাফর মুহম্মদ বিন জারীর তাবারী রহমতুল্লাহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইবনে হুমাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত হারুন ইবনে মুগীরাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাজ্জাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত আবূ ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত আবুল আহ্ওয়াছ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে। তিনি বলেছেন, “সৌন্দর্য্য দুপ্রকার। ১. বাহ্যিক সৌন্দর্য্য যেমন, কাপড়, পোশাক, ২. গুপ্ত সৌন্দর্য্য যেমন, দুপায়ের অলংকার, দুকানের দুল এবং দুহাতের চুড়ি বা বালা।”            (তাফসীরুত্ ত্ববারী ৯ম জিঃ ৯২ পৃষ্ঠা) [১৩০৮]
حدثنى يونس قال اخبرنا ابن وهب قال اخبرنى الثورى عن ابى اسحق الهمدانى عن ابى الاحوص عن عبد الله انه قال ولايبدين زينتهن الا ماظهر منها قال هى الثياب. (تفسير الطبرى جص৯২)
অর্থঃ- হযরত ইমাম তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইউনূছ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত ইবনে ওহ্হাব রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে খবর দিয়েছেন হযরত সূফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি হযরত আবূ ইসহাক হামদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত আবুল আহ্ওয়াছ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। নিশ্চয়ই তিনি তারা যেন তাদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে, তবে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত।এ আয়াতাংশের তাফসীরে বলেছেন, তাহচ্ছে কাপড় বা পোশাক যা প্রকাশ হলে গুণাহ্ নেই।” (তাফসীরুত্ তাবারী ৯ম জিঃ ৯২ পৃষ্ঠা) [১৩০৯]
حدثنا ابن المثنى قال ثنا محمدبن جعفر قال ثنا شعبة عن ابى اسحق عن ابى الاحوص عن عبد الله قال ولايبدين زينتهن الا ماظهر منها قال الثياب. (تفسير الطبرى جص৯২)
অর্থঃ- আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইবনুল মাছনা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন মুহম্মদ বিন জাফর রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত শুবাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবূ ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত আবুল আহওয়াছ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে। তিনি তারা যেন তাদের সৌন্দর্য্যকে প্রদর্শণ না করে, তবে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত।এ আয়াতাংশের তাফসীরে বলেছেন, তাহচ্ছে উপরের কাপড় বা পোশাক। যার প্রকাশ দোষণীয় নয়।”    (তাফসীরুত্ ত্ববারী ৯ম জিঃ ৯২ পৃষ্ঠা) [১৩১০]
قال ثنا سفيان عن علقمة عن ابراهيم فى قوله ولايبدين زينتهن الا ماظهر منها قال الثياب. (تفسير الطبرى جص৯৩)
অর্থঃ- তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ছূফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আলকামা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। আল্লাহ্ পাক-এর বাণী, “তারা যেন তাদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে, তবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত।এর তাফসীরে তিনি বলেছেন, তা হচ্ছে কাপড় বা পোশাক। যার বাহ্যিক প্রকাশ দোষণীয় নয়।”             (তাফসীরুত্ ত্ববারী ৯ম জিঃ ৯৩ পৃষ্ঠা) [১৩১১]
حدثنا الحسن قال اخبرنا عبد الرزاق قال اخبرنا معمر عن ابى اسحق عن ابى الاحوص عن عبد الله الا ما ظهر منها قال الثياب. (تفسير الطبرى جص৯৩)
অর্থঃ- আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত আর্ব্দু রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত মামার রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবূ ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত আবুল আহ্ওয়াছ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে। তবে যা অনিচ্ছা সত্ত্বে প্রকাশ পায় তা ব্যতীত” -এর তাফসীরে তিনি বলেছেন, তা হচ্ছে কাপড় বা পোশাক। যার প্রকাশে কোন দোষ নেই।”             (তাফসীরুত্ ত্ববারী ৯ম জিঃ ৯৩ পৃষ্ঠা) [১৩১২]
حدثنا القاسم قال ثنا الحسين قال ثنى حجاج قال ثنا محمد ابن الفضل عن الاعمش عن مالك بن الحرث عن عبد الرحمن بن زيد عن ابن مسعود الا ماظهر منها قال هوالرداء. (تفسير الطبرى جص৯৩)
অর্থঃ- আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত হাজ্জাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন মুহম্মদ ইবনে ফযল রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আমাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত মালিক বিন হারছ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত আর্ব্দু রহমান বিন যায়েদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে। তবে যা অনিচ্ছা সত্ত্বে প্রকাশ পায় তা ব্যতীতএ আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, তা হচ্ছে উপরের চাদর বা বোরকা। যার প্রকাশ দোষণীয় নয়।”            (তাফসীরুত্ ত্ববারী ৯ম জিঃ ৯৩ পৃষ্ঠা) [১৩১৩]
والنما قلنا ذلك اولى الاقول فى ذلك بالتئويل لاجماع الجميع على ان على كل مصل ان يستر عورته فى صلاته وان للمرة ان تكشف وجهها وكفيها فى صلاتها. (تفسير الطبرى جص৯৩)
অর্থঃ- আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় প্রথম বক্তব্যটির ব্যাপারে উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেছেন। প্রত্যেক নামাযী পুরুষ প্রত্যেক নামাযে তার সতরকে ঢেকে রাখবে। আর মহিলা নামাযের সময় তার চেহারা ও হাতের কব্জি পর্যন্ত উন্মুক্ত রাখবে। কেননা, এগুলো তাদের জন্য নামাযের সতর নয়।”          (তাফসীরুত্ ত্ববারী ৯ম জিঃ ৯৪ পৃষ্ঠা) (অসমাপ্ত) 

0 Comments: