হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ( ১৯ নং )

হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই
 কেননা, প্রথমতঃ কিছু লোক কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্মঅর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “....... মহিলারা মুখ বা চেহারা, হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক) পাশাপাশি কিছু বাতিল ফিরকাভুক্ত অখ্যাত নামধারী ইসলামী মাসিকেও অনুরূপ মন্তব্য করা হয়। এছাড়া অনেক নামধারী ওয়ায়েযও  এরূপ বলে থাকে।           অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপেই কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা মূলতঃ কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে।  খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা      মূলতঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে মহিলাদের খাছ পর্দা হলো-     ১. মহিলারা সর্বদাই ঘরে অবস্থান করবে। ২. ঘরে অবস্থানকালে হোক অথবা বাইরে হোক কোন অবস্থাতেই গায়রে মাহ্রামদের সাথে দেখা দিতে পারবেনা। ৩. প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে বোরকা, হাত মোজা, পা মোজা পরিধান করতঃ চেহারা ও সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে। ৪. বোরকা কালো রংয়ের হওয়াই আফযল ও অধিক পর্দার কারণ। ৫. সর্বদা দৃষ্টিকে নিম্নগামী রাখবে। ৬. বিনা প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলবে না। ৭. প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে শক্ত স্বরে কথা বলবে, নরম সূরে কথা বলবে না। এটাই খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা। আর এটাই শরীয়তের নির্দেশ।  অতএব, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুনাহে গুনাহ্গার হবে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।           প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, কতিপয় নামধারী পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, ইফতার করে, ঘরোয়া বৈঠক করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)     মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ছূরা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ছূআবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল।             বর্তমান যামানার উলামায়ে ছূতথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক। দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা।          যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
 عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لا يضلونكم ولا يفتنونكم.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)            স্মর্তব্য যে, ঐ সকল দাজ্জালের চেলা নামক তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ছে। সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা বেপর্দা হয় কি করে?      উল্লিখিত উলামায়ে ছূদের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।             অতএব, সকলেই যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার ভিতর আসতে পারে, তাই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়া হলো।        আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)  কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্  শরীফইজ্মা ও  ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পর্দা করা ফরযে আইন    
        ইসলামের ভিত্তি বা প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায, (৩) যাকাত, (৪) হজ্জ (৫) রমযানের রোযা। অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে হিজাব বা পর্দা করা ফরয অর্থাৎ ফরযে আইন।      কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের বহু স্থানেই হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি বেপর্দা হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে।          নিম্নে হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া, ইতিহাস ও লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো-
 (পূর্ব প্রকাশিতের পর) হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের পর্দার আমল
আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন, [২৪৫৫]
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون.
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) মুমিনগণকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের ইজ্জত ও আবরু হিফাযত করে। এতে তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ পাক তা অবহিত রয়েছেন।” (সূরা নূর ৩০নং আয়াত শরীফ) আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেছেন,  [২৪৫৬]
قل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن الا ما ظهر منها وليضربن بخمرهن على جيوبهن.
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) ঈমানদার নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের ইজ্জত ও আবরু হিফাযত করে। তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের উপর ফেলে রাখে।” (সূরা নূর ৩১নং আয়াত শরীফ)             উল্লেখ্য, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত সমস্ত আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের বিধানসমূহ পুরাপুরিভাবে মেনে চলতেন। আল্লাহ পাক-এর নিষেধকৃত কোন কিছুর প্রতি তাঁরা আকৃষ্ট হতেন না এবং সে দিকে দৃষ্টিও দিতেন না।        হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ যে পরিপূর্ণভাবে হিজাব বা পর্দা পালন করে থাকেন নিম্নে এ সম্পর্কিত কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো- বিশিষ্ট তাবিয়ী, হাকিমুল হাদীছ, ইমামে আযম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হিজাব বা পর্দা রক্ষার দৃষ্টান্ত      বিশিষ্ট তাবিয়ী, হাকিমুল হাদীছ, ইমামে আযম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হচ্ছেন চার মাযহাবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা। যার মাযহাব অনুযায়ী বিশ্বে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান ইবাদত করে চলছে এবং আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি, রেযামন্দি অর্জন করছে।
  [২৪৫৭-২৪৫৮]
        সেই বিশিষ্ট তাবিয়ী, হাকিমুল হাদীছ, ইমামে আযম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লজ্জাশীলতা, পর্দাশীলতা এবং তাক্বওয়া এত অধিক ছিল যে, তাঁর যোগ্যতম ছাত্র হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যখন দাঁড়ি-মোচ ওঠেনি, সে অবস্থায় যখন ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর উস্তায হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সামনে এসে ইল্ম শিক্ষার জন্য বসলেন, তখন ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ছাত্র ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে পিছনে বসতে বললেন। ছাত্রের দাঁড়ি-মোচ ওঠার পূর্বে কোন দিন সামনে বসিয়ে তালীম দেননি। এটা এজন্য যে, শরীয়তের মাসয়ালা হলো আমরাদ তথা দাড়ি-মোচ বিহীন সুন্দর বালকের প্রতি কু-দৃষ্টিতে তাকানো হারাম। এতে ফিতনার সম্ভাবনা রয়েছে।” (দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, শামী, তাফসীরে আহমদী)         হযরত ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক কু-দৃষ্টি আসার চিন্তা অকল্পনীয়, যা কখনো সম্ভব নয়। তার পরও তিনি তাক্বওয়া পরহেযগারী, শালীনতা ও পর্দা রক্ষার জন্য ছাত্রকে পিছনে নিয়ে তালীম দিয়েছেন।” (মানাকিবে আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, তাযকিরাতুল আউলিয়া)
 গাউছূল আযম, বড় পীর হযরত আব্দুল ক্বাদির  জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুহতারাম পিতা এবং  মুহতারামা মাতার তাক্বওয়া, লজ্জাশীলতা ও পর্দার আমল 
  হাদীছ শরীফে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,  [২৪৫৯-২৪৬০]
ان الله يبعث لهذه الامة على رأس كل مائة سنة من يجدد لها دينها. (ابو داؤد شريف، مشكوة شريف)
অর্থঃ- নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক প্রত্যেক হিজরী  শতকের শুরুতে এ উম্মতের (হিদায়েতের) জন্য একজন করে মুজাদ্দিদ প্রেরণ করবেন। যিনি এসে দ্বীনের মধ্যে তাজদীদ বা সংস্কার করবেন। অর্থাৎ বিদয়াত, বেশরা এবং শরীয়তের খিলাফ কাজগুলোকে মূলোৎপাটন করবেন। (আবূ দাঊদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)     হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জবান মুবারক থেকে নির্গত অমীয় বাণী তথা হাদীছ শরীফ অনুযায়ী পাঁচশত হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ও ইমাম হচ্ছেন গাউছূল আযম, বড় পীর হযরত আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁর জন্ম ৪৭০ হিজরীতে। তাঁর পিতা ছিলেন একজন বড় ওলীআল্লাহ, যার নাম হচ্ছে হযরত সাইয়্যিদ আবূ ছালিহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁর মাতাও ছিলেন বড় ওলীআল্লাহ, যার নাম হচ্ছে হযরত সাইয়্যিদাহ উম্মুল খায়ের আমাতুল্ জাব্বার উম্মুল ওয়ারা ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা।             হযরত গাউছূল আযম, বড় পীর আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি পিতার দিক থেকে হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং মাতার দিক থেকে হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর বংশধর। হযরত সাইয়্যিদ আবূ ছালিহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর স্ত্রী হযরত সাইয়্যিদা উম্মুল খায়ের আমাতুল্ জাব্বার উম্মুল ওয়ারা ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা-এর ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন বড় পীর হযরত আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁরা সকলেই ছিলেন, হিজাব বা পর্দা, লজ্জাশীলতা, শালীনতা এবং তাক্বওয়ার পূর্ণ অধিকারী। নিম্ন বর্ণিত ওয়াকিয়াটিতে যা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে,  [২৪৬১-২৪৬২]         হযরত আবূ ছালিহ্ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন যুবক ছিলেন, তখন একদিন তিনি ক্ষুধার্ত অবস্থায় দজলা নদীর তীর দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন দজলা নদীর মধ্যে একটি ছেব বা আপেল ফল ভাসমান অবস্থায় দেখে ক্ষুধার তাড়নায় খেয়ে ফেললেন। তিনি রাত্রে বিছানায় শুয়ে চিন্তা করতে লাগলেন ছেব বা আপেল ফল খাওয়া কতটুকু জায়িয হল। (যদিও শরীয়তের মাসয়ালা হল কোন ব্যক্তি যদি ৩ দিন না খেয়ে থাকে তাহলে তার জন্য জরুরত আন্দাজ হারাম খাওয়া মুবাহ) এ থেকেই বুঝা যায় যে তাঁরা হালাল খাদ্যের প্রতি কতটা দৃঢ় ও মজবুত ছিলেন। কেননা এক পয়সা হারাম খেলে চল্লিশ দিন ইবাদত কবুল হয়না। কুরআন শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন,
يايها الناس كلوا ممافى الارض حلالا طيبا ولا تتبعوا خطوات الشيطان انه لكم عدو مبين.
 অর্থঃ হে মানুষেরা! তোমরা জমিনে হালাল খাদ্য খাও, আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু (সূরা বাক্বারা ১৭৮নং আয়াত শরীফ)   অতঃপর হযরত আবূ ছালিহ্ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি পরদিন সকালে দজলা নদীর তীর দিয়ে হাঁটতে লাগলেন, যেদিক থেকে ছেব বা আপেল ফলটি ভেসে আসছিল। কিছুদূর যাবার পর তিনি দেখলেন, নদীর কিনারায় একটি ছেব বা আপেল ফলের বাগান। বাগানের কিছু গাছের কোন কোন ডালা ফলসহ নদীর উপর ঝুলন্ত অবস্থায়। আর তার কিছু ফল পানিতে ভেসে আছে। তখন তিনি নিশ্চিত হলেন যে, নিশ্চই আমি এই গাছেরই ফল খেয়েছি। অতঃপর তিনি বাগানের মালিকের বাড়ীতে গেলেন। বাড়ীতে গিয়ে তাঁর সাথে বাগানের মালীর সহিত দেখা হয়। মালী তাঁকে অপেক্ষা করার জন্য বলে বাগানের মালিককে সংবাদ দেয়। কিছুক্ষণ পর বাগানের মালিক হযরত আব্দুল্লাহ্ সাওমাই রহমতুল্লাহি আলাইহি সেখানে এসে উপস্থিত হলে হযরত আবূ ছালিহ্ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, হুযূর আমি না বলে আপনার বাগানের একটি ছেব বা আপেল ফল ক্ষুধার তাড়নায় নদীতে ভাসমান অবস্থায় পেয়ে খেয়ে ফেলেছি। এখন আমি তার মূল্য পরিশোধ করতে এসেছি। একথা শুনার পর হযরত আব্দুল্লাহ্ সাওমাই রহমতুল্লাহি আলাইহি অবাক হলেন এবং মনে মনে ভাবলেন, কত লোকই তো আমার বাগানের কত ফল খেয়েছে কিন্তু কেউই এ পর্যন্ত দাম দিতে আসেনি। নিশ্চয়ই এ যুবক একজন আল্লাহ পাক-এর ওলী হবেন। বাগানের মালিক জিজ্ঞেস করলেন, আপনার নিকট কত দিরহাম আছে। উত্তরে হযরত আবূ ছালিহ্ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, দিরহাম থাকলে তো আপনার ফলই খেতাম না। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে কি দিয়ে মূল্য পরিশোধ করবেন? হযরত আবূ ছালিহ্ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আপনার বাগানে কাজ করে ফলের মূল্য পরিশোধ করতে চাই। বাগানের মালিক হযরত আব্দুল্লাহ্ সাওমাই রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, বেশ কাজ করতে থাকুন।     অনেকদিন কাজ করার পর হযরত আবূ ছালিহ্ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ্ সাওমাই রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বললেন, হুযূর! আমাকে তো বাড়ী যেতে হবে। সেই ফলের মূল্য কি এখনও পরিশোধ হয়নি? হযরত আব্দুল্লাহ্ সাওমাই রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, হ্যাঁ হয়েছে। তবে আর একটি শর্ত পালন করতে হবে। হযরত আবূ ছালিহ্ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আপনার কি শর্ত রয়েছে? হযরত আব্দুল্লাহ্ সাওমাই রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আমার শর্ত হলো- আমার একটি মেয়ে আছে তাকে বিয়ে করতে হবে। মেয়েটি অন্ধ, বোবা, বধির, খঞ্জ, লুলা, কালো ও কুৎসিত। শুনে হযরত আবূ ছালিহ্ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি ভাবলেন, এ ধরনের একটি মেয়েকে বিয়ে করবো! যার কাছ থেকে খিদমত পাওয়ার পরিবর্তে উল্টো তাকেই খিদমত করতে হবে। কিন্তু পরক্ষণেই চিন্তা করলেন, দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, কাজেই এখন যদি তিনি ক্ষমা না করেন (বিবাহ করা ব্যতীত) তবে আল্লাহ্ পাকের কাছে কি জবাব দিব ইত্যাদি চিন্তা করে রাজী হয়ে গেলেন। বিয়ে হয়ে গেল। হযরত আবূ ছালিহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বাসর ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েই হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাই রহমতুল্লাহি আলাইহি দূরে এক স্থানে দাঁড়িয়ে রইলেন। কারণ তিনি জানতেন যে, কিছু একটা ঘটবে। ঠিক তাই হলো। হযরত আবূ ছালিহ মসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি ঘরে প্রবেশ করেই সাথে সাথে বের হয়ে আসলেন। বের হয়ে আসতেই দেখা হয়ে গেল হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাই রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে। তিনি বললেন, ‘কি হয়েছে বাবা! আপনি ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন কেন?’ জবাবে হযরত আবূ ছালিহ মূসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘আপনি যা বলেছেন, এ মেয়ে সম্পূর্ণ তার বিপরীত। অর্থাৎ একজন বেগানা মহিলা সেখানে বসে আছে। ক্ষুধার তাড়নায় একটা ছেব ফল খাওয়ার কারণে যদি বার বৎসর বাগানে কাজ করতে হয়, একজন লুলা, লেংড়া, খঞ্জ, অন্ধ ও কুৎসিত মেয়েকে বিবাহ করতে হয় তবে একজন বেগানা মহিলার দিকে দৃষ্টি দিলে কত বৎসর তার কাফ্ফারা আদায় করতে হবে তার হিসাব আমার জানা নেই। তাই আমি সাথে সাথে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছি।তখন আব্দুল্লাহ সাওমাই রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন- না, যাকে আপনি ঘরে দেখেছেন তিনিই আপনার স্ত্রী। আপনি রাত্রি যাপন করুন আগামীকাল আপনাকে সব বলবো।   পরদিন হযরত আব্দুল্লাহ্ সাওমাই রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবূ ছালিহ্ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বললেন, বাবা! আমার মেয়েকে আমি অন্ধ বলেছি এই জন্যে, আমার মেয়ে কখনও কোন পর পুরুষকে দেখেনি; বোবা বলেছি এজন্যে, সে কখনও কোন পাপের কথা মুখে আনেনি; বধির বলেছি এজন্যে, সে কখনও পাপের কথা কানে শুনেনি; খঞ্জ ও লুলা বলেছি এজন্যে, সে কখনও কোন পাপের পথে পা বাড়ায়নি এবং কোন পাপ কাজ স্পর্শ করেনি; কালো ও কুৎসিত এজন্যে বলেছি, তাকে কখনও কোন পর পুরুষ দেখেনি। এই কথা শুনে হযরত আবূ ছালিহ্ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ্ পাকের শোকরগুজার করলেন। (হায়াতে গাউছুল আযম, তাযকিরাতুল্ আউলিয়া)        এখানে ফিকিরের বিষয়, কেমন নেককার, পরহেজগার, মুত্তাকী, পর্দা রক্ষাকারী, লজ্জাশীল পিতা ও মাতার ঘরে ওলীয়ে মাদারজাত গাউছূল আযম হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি জন্ম গ্রহণ করেন। হযরত ইউসূফ বিন হুসাঈন রায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হিজাব বা পর্দার  আমল ও তাক্বওয়া হযরত ইউসুফ বিন হুসাঈন রায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁর সম্পর্কে হিজাব বা পর্দার বিষয়ে যে ঘটনা উল্লেখ করা হয় সেটা হলো, [২৪৬৩]          তিনি একবার সফর করতে এক কাফেলার সাথে গেলেন। সফর করতে করতে রাত্রি হওয়ার কারণে এক গোত্র প্রধানের বাড়ীতে উঠলেন। রাত্রে তাঁদের থাকার বন্দোবস্ত করা হলো। তাঁরা থাকতে লাগলেন। সে গোত্র প্রধানের এক মেয়ে ছিল। সে হযরত ইউসুফ বিন হুসাঈন রায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট তার অশুভ বাসনা পেশ করল। যখন সে গোত্র প্রধানের মেয়ে এই অশুভ বাসনা পেশ করল তখন হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাঈন রায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি সে রাত্রেই সেখান থেকে উঠে দূরে চলে আসলেন। সে আরব ভূমির মধ্যে তাঁর পথ চেনা ছিলনা। তিনি এক মরুভুমিতে এসে আশ্রয় নিলেন এবং ক্লান্ত হয়ে গেলেন। ক্লান্তির কারণে তিনি হাঁটুর মধ্যে মাথা রেখে ফিকির করতে লাগলেন, কি ঘটনা ঘটল এবং কাফেলার লোকেরাই বা তাঁর সম্বন্ধে কি চিন্তা করবে? তিনি এটা ফিকির করতে করতে ঘুমিয়ে গেলেন। তিনি স্বপে¦ দেখতে লাগলেন, একজন বিশেষ বুজুর্গ ব্যক্তি অনেক ফেরেস্তাদের সাথে নিয়ে তাঁর দিকে আসছেন। এসে সালাম দিলেন। হযরত ইউসুফ বিন হুসাঈন রায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন, হুযূর আমি আপনাকে চিনতে পারছিনা। নিশ্চয় আপনি কোন বিশিষ্ট ব্যক্তি হবেন। আপনার চেহারা ছূরত দেখে তাই মনে হচ্ছে। তাঁর সঙ্গী-সাথী ফেরেশ্তা আলাইহিমুস্ সালামগণ বললেন, হ্যাঁ, তিনি হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম। যিনি নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের মধ্যে খুব ছূরত ছিলেন। সেই হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম এসেছেন আপনার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। একথা শুনে হযরত ইউসুফ বিন হুসাঈন রায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিনয়ের সাথে বললেন, “হুযূর! কি কারণে আপনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন? যেহেতু আপনি আল্লাহ পাক-এর নবী আর আমি একজন সাধারণ ব্যক্তি।হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম বললেন, “হে ব্যক্তি! আমি যদিও নবীদের মধ্যে ইউসুফ হয়ে থাকিনা কেন তবে আপনি আল্লাহ পাক-এর ওলীদের মধ্যে ইউসুফ।আপনার এই ওয়াকেয়া বা ঘটনা আল্লাহ্ পাক আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, দেখুন সে কতটুকু পরহেজগারী ইখতিয়ার করেছে, হে ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম! আপনি জুলাইখার থেকে বেঁচে ছিলেন আর এই যে আমার আরেক ইউসুফ, যিনি ওলীদের মধ্যে ইউসুফ তিনিও এ রকম এক গোত্র প্রধানের মেয়ের ওয়াস্ওয়াসা থেকে বেঁচে এসেছেন। তাঁকে গিয়ে আপনি সুসংবাদ দান করেন এবং বলেন, আমার ইসমে আযম শিক্ষার জন্য, আমার মুহব্বত মারিফত শিক্ষা করার জন্য। (প্রত্যেক যামানায় আল্লাহ্ পাক-এর একজন বিশিষ্ট ওলী থাকেন আল্লাহ পাক-এর জমিনের মধ্যে, এই যামানায় আল্লাহ পাক-এর বিশিষ্ট ওলী হলেন হযরত যুন্নুন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি।) আপনি হযরত যুন্নুন মিসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কাছে যান, সেখানে গিয়ে আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বত মারিফত অর্জন করুন (সুবহানাল্লাহ্) (তাযকিরাতুল আউলিয়া -মুছান্নিফঃ হযরত ফরীদুদ্দীন আত্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি) হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পর্দার আমল ও তাক্বওয়া [২৪৬৪]             হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি একদিন হাম্মামখানা থেকে একজন অল্প বয়স্ক দাঁড়ি-গোফ শূন্য বালককে বের করে দিতে বললেন এবং এর কারণ হিসেবে বললেন প্রত্যেক নারীর সাথে একটা শয়তান থাকে। আর দাড়ি মোচ বিহীন সুন্দর বালকের সঙ্গে আঠারোটি শয়তান থাকে। শয়তান মানুষের চোখে এদের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়।” (তাযকিরাতুল আউলিয়া মুছান্নিফঃ হযরত ফরীদুদ্দীন আত্তার  রহতুল্লাহি আলাইহি)            হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের উপরোক্ত ঘটনাসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, প্রত্যেক ইমাম-মুজতাহিদ তথা ওলীআল্লাহগণই হিজাব বা পর্দার বিধান কঠোরভাবে মেনে চলতেন। অর্থাৎ তাঁরা সকলেই খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা পালন করতেন। কুরআন শরীফ এবং সুন্নাহ শরীফের দৃষ্টিতে বেপর্দা হওয়ার পরিণতি, কুফল ও শাস্তি    আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্নাহ শরীফে তথা হাদীছ শরীফে পুরুষ ও মহিলা সকলকে যার যার পর্দা রক্ষা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সাথে সাথে বেপর্দা হওয়ার শাস্তি, কুফল ও কঠিন পরিণতির কথা ব্যক্ত করেছেন। যাতে মানুষেরা বেপর্দা হওয়ার খারাপ পরিণতির কথা চিন্তা ফিকির করে এমন গর্হিত, অপছন্দনীয় ও অন্যায়মূলক কাজ থেকে ফিরে থাকতে পারে। নিম্নে যারা বেপর্দা হয় তাদের কঠিন পরিণতি সম্পর্কে কুরআন শরীফ এবং সুন্নাহ শরীফ থেকে আলোচনা করা হলো।         ১. অনুমতি না নিয়ে কারো বাড়ীতে, কারো কাছে প্রবেশ করার কঠিন পরিণতিঃ অনুমতি না নিয়ে কারো ঘরে প্রবেশ করা হারাম। আর হারাম কাজের জন্য জাহান্নামের শাস্তিই যথেষ্ট। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন,  [২৪৬৫]
 يايها الذين امنوا لاتدخلوا بيوتا غير بيوتكم حتى تستانسوا وتسلموا على اهلها ذلكم خير لكم لعلكم تذكرون.
 অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য ঘরে প্রবেশ করোনা, যে পর্যন্ত অনুমতি না নাও এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা স্মরণ রাখ।” (সূরা নূর/২৭)          এ আয়াত শরীফ থেকে বুঝা যায়, সালামের মাধ্যমে ঘরওয়ালার কাছ থেকে অনুমতি না নিয়ে প্রবেশ করা অমঙ্গল, অকল্যাণ এবং আল্লাহ পাক-এর অসন্তুষ্টির কারণ।     ২. অনুমতি ছাড়া, কারো বাড়ীর ভিতরে উকি মারলে, তার চক্ষু ফুটা করে দেয়া জায়িযঃ  হাদীছ শরীফের মধ্যে এসেছে,  [২৪৬৬-২৪৭৪]
 عن ابى هريرة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال من اطلع فى بيت قوم من غير اذنهم حل لهم ان يفقئوا عينه. (مسلم شريف، شرح النووى، شرح الابى والسنوسى، المفهم، فتح الملهم، تفسير القرطبى، مسند احمدبن حنبل، نسائى شريف، ذخيرة العقبى)
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কেউ যদি কোন সম্প্রদায়ের কোন বাড়ীতে তাদের অনুমতি ছাড়া উকি মেরে দেখে, বাড়ীওয়ালার জন্য বৈধ হবে তার চক্ষুকে ফুটা করে দেয়া।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল মুফহিম, ফতহুল মুলহিম, তাফসীরুল্ কুরতুবী, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, নাসায়ী শরীফ, যখীরাতুল উক্ববা)     ৩. অনুমতির জন্য নাম স্পষ্টভাবে না বলে আমি আমিবলা জায়িয নেইঃ      কারণ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি আমিবলাকে অপছন্দ করেছেন। তাই বাড়ীতে সালাম দিতেঞ্জহবে, খটখটি দিতে হবে এবং পরিচয় স্পষ্টভাবে নাম উল্লেখ করে দিতে হবে। অন্যথায় তা অপছন্দনীয়।  হাদীছ শরীফের মধ্যে ইরশাদ হয়েছে,  [২৪৭৫-২৪৯৩] عن جابر بن عبد الله رضى الله عنهما قال استأذنت على النبى صلى الله عليه وسلم فقال من هذا؟ فقلت انا فقال النبى صلى الله عليه وسلم انا انا كانه كره ذلك. (بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، مسلم شريف، شرح النووى، شرح الابى والسنوسى، المفهم، فتح الملهم، تفسير القرطبى، مشكوة شريف، مرقاة، شرح الطيبى، التعليق الصبيح، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهرحق، مرأة المناجيح)
অর্থঃ- হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে প্রবেশের অনুমিত চাইলাম। তিনি বললেন, তুমি কে? আমি জবাবে বললাম আমি। তখন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি! আমি! এ রকম আমি আমিজবাব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপছন্দ করলেন।” (বুখারী শরীফ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল্ কারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল কিরমানী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল উবাই ওয়াস সিনুসী, আল মুলহিম, ফতহুল্ মুফহিম, তাফসীরুল কুরতুবী, মিশকাত শরীফ, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানাজীহ)    ৪. অনুমতি চাওয়ার পর বাড়ীওয়ালা ফিরে যেতে বললে, যদি ফিরে না যায়, বরং জোরপূর্বক ঢুকতে চায়, এতে অন্তরের অপবিত্রতা বৃদ্ধি পাবেঃ   আল্লাহ পাক তাঁর কালামে পাকে ইরশাদ করেন, [২৪৯৪]
 واذا سألتموهن متاعا فسألوهن من وراء حجاب ذلكم اطهر لقلوبكم وقلوبهن.
 অর্থঃ- তোমরা যদি ঘরে কাউকে না পাও, তবে অনুমতি গ্রহণ না করা পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করোনা। যদি তোমাদেরকে বলা হয় ফিরে যাও, তবে ফিরে যাবে। এতে তোমাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে। তোমরা যা কর, আল্লাহ পাক তা ভালভাবে জানেন।” (সূরা নূর/২৮)     এ আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, অনুমতি চেয়েই ঢুকে যাওয়া যাবেনা, বরং অনুমতি চাওয়ার পর অনুমতি প্রদান করা হলে ঢুকবে। কিন্তু বাড়ীওয়ালা যদি বলে ফিরে যাও। এতে আগন্তুক যদি ফিরে না যেয়ে জিদ ধরে, এতে তার অন্তরের পবিত্রতার বদলে অপবিত্রতা বৃদ্ধি পাবে এবং বেপর্দা হওয়ার কারণে আল্লাহ পাক-এর গযবে পতিত হবে।           ৫. বিশেষ প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে মহিলাদের কাছ থেকে হালাল জিনিস প্রার্থনা করা যাবে, পর্দার আড়াল থেকে প্রার্থনা না করা হলে বেগানা মহিলা ও পুরুষ উভয়ের অন্তরের জন্য তা অপবিত্রতার কারণ হবেঃ  আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, [২৪৯৫] فان لم تجدوا فيها احدا فلاتدخلوها حتى يؤذن لكم وان قيل لكم ارجعوا فارجعوا هو ازكى لكم والله بما تعملون عليم.  অর্থঃ- তোমরা তাঁদের অর্থাৎ উম্মুল্ মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব/ ৫৩)             অত্র  আয়াত শরীফে বলা হয়েছে, মহিলাদের কাছ থেকে বিশেষ প্রয়োজনে কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে চাওয়ার মধ্যে উভয়ের জন্যেই পবিত্রতা রয়েছে। তাই বুঝা যায়, বেগানা মহিলার কাছ থেকে বেপর্দা হয়ে কিছু চাওয়া মহিলা ও পুুরুষ উভয়ের অন্তরের অপবিত্রতার কারণ। যা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি অর্জনের ব্যাপারে অন্তরায় স্বরুপ।     ৬. যে মহিলা আতর বা সুগন্ধি মেখে পর পুরুষের কাছে অথবা বাইরে বের হয়, সে ব্যভিচারিণীঃ    হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,  [২৪৯৬-২৫০৫] عن ابى موسى رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم انه قال كل عين زانية والمراة اذا استعطرت فمرت بالمجلس فهى كذا وكذا يعنى زانية، وفى الباب عن ابى هريرة وهذا حسن صحيح، (ابوداؤد شريف، ذخيرة العقبى، تفسير ابن كثير جص ৪৫৭، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى)
  অর্থঃ- হযরত আবূ মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক চোখ ব্যভিচারী, যখন মহিলা আতর-সুগন্ধি মেখে পুরুষদের কোন মজলিসের পাশ দিয়ে গমন করে তখন সে এরূপ এরূপ অর্থাৎ ব্যভিচারিণী। একইভাবে হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে। এটি হাসান ছহীহ।” (আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল মাবূদ, নাসায়ী শরীফ, যখীরাতুল্ উক্ববা, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫৭ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী)     ৭. আতর বা সুগন্ধি মেখে বাইরে চলাচলকারিণী মহিলার নামায আল্লাহ পাক কবুল করবেন নাঃ  হাদীছ শরীফের মধ্যে এসেছে,  [২০৬৮-২৫১০]
قال ابو داؤد حدثنا محمد بن كثير اخبرنا سفايان عن عاصم بن عبيد الله عن عبيد مولى ابى رهم عن ابى هريرة رضى الله عنه قال لقيته امرأة شم منها ريح الطيب ولذيلها اعصار، فقال يا امية الجبار حنت من المسجد؟ قالت نعم. قال لها: تطيب؟ قالت نعم قال انى سمعت حبى ابا القاسم صلى الله عليه وسلم يقول لا يقبل الله صلاة امرأة طيبت لهذا المسجد حتى تر جع فتغسل غسلها من الجنابة. رواه ابن ماجة عن ابى بكر بن ابى شيبة عن سفيان هو ابن عيينة به. (ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، ابن ماجة، تفسير ابن كثير ج ص ৪৫৭)
অর্থঃ- হযরত আবূ দাঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মুহম্মদ বিন কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত সুফিয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আছিম বিন উবাইদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি উবাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে যিনি আবূ রহম-এর মুনীব। তিনি হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে। তিনি বলেন, এমন একজন মহিলার সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো যে সুগন্ধি ছড়িয়ে চলছিল। তিনি বললেন, হে প্রতাপশালী আল্লাহ পাক-এর দাসী! তুমি কি মসজিদ থেকে আসছো? মহিলা বললো, হ্যাঁ। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি সুগন্ধি মেখেছো? সে উত্তরে বললো হ্যাঁ। এবার তিনি বললেন, আমি আমার প্রাণ প্রিয় আবূল্ কাসিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছ থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, “আল্লাহ পাক এমন মহিলার নামায কবুল করবেন না, যে এ মসজিদে আসার জন্য সুগন্ধি  মেখেছে। যে পর্যন্ত না সে ফিরে গিয়ে অপবিত্রতার তথা ফরয গোসলের ন্যায় গোসল না করবে।ইবনু মাজাহ হাদীছ শরীফ খানা হযরত আবূ বকর বিন আবী শাইবাহ থেকে, তিনি সুফিয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। যিনি ইবনু উয়াইনা হিসেবে পরিচিত।” (আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবূদ, ইবনু মাজাহ শরীফ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫৭ পৃষ্ঠা)            ৮. আহল ছাড়া অন্যস্থানে সৌন্দর্য প্রদর্শনকারিণী নারী কিয়ামতের দিন কঠিন অন্ধকারে তথা আযাব-গযবে গ্রেপ্তার হবেঃ  হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, [২৫১১-২৫১৫]

عن ميمونة بنت سعد ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الرافلة فى الزينة فى غير اهلها كمثل ظلمة يوم القيامة لا نورلها. (ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، تفسير ابن كثير ج ص ৩৫৮)

অর্থঃ- হযরত মাইমূনা বিনতে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আহল  ছাড়া অন্যস্থানে সৌন্দর্য প্রদর্শনকারিণী নারী কিয়ামতের দিনের ঐ অন্ধকারের মত যেখানে কোন আলো নেই।” (তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযীউরফুশ্ শাযী, তাফসীরে ইবনে  কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫৮ পৃষ্ঠা)  ৯. মহিলারা পুরুষদের সাথে আকর্ষণীয় ও কোমলভাবে কথা বললে পুরুষদের মনে কু-বাসনা, কামনা সৃষ্টি হয়, যার ফলে ফিৎনা, ফাসাদ ও হারাম কাজ সংঘটিত হয়ে থাকেঃ              কুরআন শরীফে ইরশাদ করা হয়েছে, [২৫১৬] ينساء النبى لستن كاحد من النساء ان اتقيتن فلاتخضعن بالقول فيطمع الذى فى قلبه مرض وقلن قولا معروفا.
  অর্থঃ- হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ! আপনারা অন্য নারীদের মত নন। যদি আল্লাহ পাককে ভয় করেন, তবে পুরুষগণের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না, ফলে যার অন্তরে ব্যাধি বা রোগ রয়েছে সে ব্যক্তি কু-বাসনা করবে। আপনারা শক্ত স্বরে কথা-বার্তা বলবেন।” (সূরা আহযাব/৩২)    ১০. মহিলাদের বিনা জরুরতে ঘর থেকে বের হওয়া এবং নিজ সৌন্দর্য প্রদর্শন করা জাহিলিয়াতের আমল। যা বাহ্যিক-অভ্যন্তরীণ অপবিত্রতার কারণঃ          আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন, [২৫১৭]
وقرن فى بيوتكن ولا تبر حن تبرح الجاهلية الاولى. واقمن الصلوة واتين الزكوة واطعن الله ورسول له انما يريد الله ليذثب عنكم الرحس اهل البيت وسطهر كم تطهيرا.
  অর্থঃ- আপনারা ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করবেন। জাহিলিয়াত যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করবেন না। নামায কায়িম করবেন, যাকাত প্রদান করবেন এবং আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুগত্য করবেন। হে আহলে বাইতগণ! আল্লাহ পাক চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।” (সূরা আহযাব/৩৩)      ১১. মহিলারা ঘর থেকে বের হলে তথা বেপর্দা হলেই শয়তান তাদের দিকে উকি-ঝুকি মারে, কিভাবে পাপ কাজ করানো যায় এবং ফিৎনা ফাসাদ সৃষ্টি করা যায়ঃ                          হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, [২৫১৮-২৫৩০]
عن حضرت عبد الله رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ان المرأة عورة فاذا خرجت استشر فها الشيطان واقرب ما تكون بروحة ربها هى فى قعر بيتها". ورواه الترمذى عن بندار عن عمرو بن عاصم به نحوه. (نرمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، مشكوة شريف، مرقاة، شرح الطيبى، التعليق الصبيح، مظاهرحق، لمعات، اشعة اللمعات، مرأة المناحيح، تفسير ابن كثير ج ص ৭৬৮، ৭২৯)

অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই মহিলা পর্দার অধীন, যখন সে ঘর থেকে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে উঁকি ঝুঁকি মারে। সে তার রব আল্লাহ পাক-এর রহমতের নিকটবর্তী হয় তখনই যখন ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে থাকে। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফটি বিনদার রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি আমর বিন আছিম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। (তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, মিশকাত শরীফ, মিরকাত, শরহুত ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ২য় জিঃ ৭৬৮, ৭৬৯ পৃষ্ঠা)       ১২. বেপর্দা হয়ে বাইরে বের হয়ে সৌন্দর্য প্রদর্শনকারিণী মহিলারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং তারাই মুনাফিক মহিলাঃ    হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, [২৫৩১-২৫৩২]
اخرج البيهقى فى سننه عن ابى اذينة الصدفى رضى اله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال شرالنساء المتبرجات وهن المنافقات لاتدخل الحنة منهن الا مثل الغراب الاعصم. (بيهقى شريف، الدر المنثور ج ص ১৯৭)
অর্থঃ- হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সুনানের মধ্যে হযরত আবূ আযীনা ছদাফী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বাইরে সৌন্দর্য প্রদর্শণকারিনী মহিলারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, তারাই মুনাফিক মহিলা। তাদের থেকে কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেঞ্জনা।  তবে যে মহিলার রং কাকের মত কালো সে ব্যতীত।” (বাইহাক্বী শরীফ, আদ্ দুররুল মানছুর  ৪র্থ জিঃ ১৯৭ পৃষ্ঠা)    ১৩. পুরুষ-মহিলা পরস্পর চক্ষু হিফাযত করা এবং ইজ্জত আবরু হিফাযত করা অন্তরের পবিত্রতার কারণ, আর চক্ষুর হিফাযত না করা এবং ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত না করা অন্তরের অপবিত্রতার কারণঃ             আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন,
[২৫৩৩] قل للمؤمنين يغضوا من ابضارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون.

অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুমিনগণকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের ইজ্জত ও আবরু হিফাযত করে। এতে তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ পাক তা অবহিত রয়েছেন।” (সূরা নূর/৩০) আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন, [২৫৩৪]
وقل للمومنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروحهن. (سورة النور ৩১ اية)  অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈমানদার নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের ইজ্জত আবরু হিফাযত করে।” (সূরা নূর ৩১নং আয়াত শরীফ)             ১৪. অবৈধ দৃষ্টিকারী এবং দৃষ্টিকারিণী উভয়ের প্রতি আল্লাহ পাক-এর লানত বা অভিসম্পাতঃ      হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, [২৫৩৫-২৫৩৬] 
عن الخسن مرسلا قال بلغنى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعن الله الناظر والمنظور اليها. (بيهقى فى شعب الايمان، النفسير المظهرى ج ص ৪৯১)
 অর্থঃ- হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালার লানত ঐ সকল পুরুষের  প্রতি যারা পর নারীকে দেখে এবং ঐ সকল নারীদের প্রতি যারা দেখা দেয়।” (বাইহাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান, আত্ তাফসীরুল মাযহারীঞ্জ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯১ পৃষ্ঠা) [২৫৩৭-২৫৪৬]
عن بريدة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلى يا على لاتتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليس لك الاخرة. (مسند احمد بن حنبل، الفتح الربانى، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، ابوداؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود. دارمى)
অর্থঃ- হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, হে  আলী! প্রথম বার তাকানোর পর পুনরায় তাকাবে না। কেননা, তোমার প্রথমবারের (অনিচ্ছাকৃতভাবে দেয়া) দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে কিন্তু দ্বিতীয়বারের দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।” (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, আল্ ফতহুর রব্বানী, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, আবূ দাঊদ শরীফ,বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবুদ, দারিমী)   ১৫. কু-দৃষ্টি তথা বেপর্দামূলক দৃষ্টি শয়তানের তীর, যা আল্লাহ পাক-এর লানতের এবং গযবের কারণঃ                          হাদীছ শরীফে রিওয়ায়েত হয়েছে,
[২৫৪৭-২৫৪৮] عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان النظر سهم من سهام ابليس مسموم من تركه مخافتى ابدلته ايمانا يجد خلاوتها فى قلبه. (طيرانى شريف، تفسير ابن كثير جص ৪৫২)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই কুদৃষ্টি শয়তানী তীর সমূহের মধ্যে একটি তীর। (আল্লাহ পাক বলেন) যে ব্যক্তি আমার ভয়ে নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখে, আমি তাঁর অন্তরে এমন ঈমানী নূর সৃষ্টি করে দেই। যার স্বাদ বা মজা সে তাঁর অন্তরে উপভোগ করে থাকে।হাদীছে কুদসী। (ত্ববারানী শরীফ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫২ পৃষ্ঠা)  [২৫৪৯-২৫৬৯]
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كتب على ابن ادم حظه من الزنا ادرك ذلك لا محالة فزنا العينين النظر وزنا اللسان النطق وزنا الاذنين الاستماع وزنا اليدين البطش وزنا الرجلين الخطى النفس تمنى وتتتهى والفرج يصدق ذلك او يكذبه. (بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارساد السارى، شرح الكرماتى، تيسير البارى، مسلم شريف، شرح النووى، شرح الابى واسنوسى، فتح الملهم لتقى عثمانى، فتح الملهم لشبير احمد عثمانى، المفهم، مشكوة شريف، مرقاة، شرح الطيبى، التعلية اصبيح، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهرحق، مرأة المناجيح، تفسير ابن كثير ج ص ৪৫২)
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আদম সন্তানের জন্য ব্যভিচারের একটি অংশ লিখে দেখা হয়েছে, সে অবশ্যই তা পাবে, অন্যথা হবে না। দুটি চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি দেয়া, জিহ্বার ব্যভিচার কথা বলা, কানদ্বয়ের ব্যভিচার শ্রবণ করা, হাতদ্বয়ের ব্যভিচার ধরা এবং পা দ্বয়ের ব্যভিচার ধাবিত হওয়া বা চলা। নফস্ বা অন্তর আকাঙ্খা বা কামনা করে থাকে, আর লজ্জাস্থান এগুলোকে সত্যে পরিণত করে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে। (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল কিরমানী, তাইসীরুল বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনুসী, ফতহুল মুলহিম লিত্ তক্বী উছমানী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, আল্ মুফহিম, মিশকাত শরীফ, মিরকাত, শরহুত ত্বীবী, আত্ তালীকুছ্ ছবীহ্, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫২  পৃষ্ঠা)       ১৬. ব্যভিচার নিকৃষ্ট ও অশ্লীল কাজঃ           আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন, [২৫৭০]
ولاتقربوا الزنى انه كان فاحشة وساء سبيلا. (سورة بنى اسرائيل ৩২ اية)   অর্থঃ- তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল এবং নিকৃষ্ট পথ (অবৈধ পদ্ধতি) (সূরা বণি ইসরাঈল ৩২ নং আয়াত শরীফ)     ১৭. অবিবাহিত ব্যভিচারকারী পুরুষ এবং অবিবাহিতা ব্যাভিচারিণী নারীর শাস্তিঃ অবিবাহিত ব্যভিচারকারী এবং অবিবাহিতা ব্যভিচারিণী ব্যভিচার করলে যদি খিলাফত ক্বায়িম থাকে তাহলে উভয়কে খলীফার পক্ষ থেকে একশ বেত্রাঘাত করতে হবে।           যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, [২৫৭১]

الزانية والزانى فاجلدوا كل واحد منهما مائة جلدة ولاتأخذكم بهما رافة فى دين الله ان كنتم تؤمنون بالله واليوم الاخر ويشهد عذا بهما طائفة من المؤمنين. (سورة النور اية)
 অর্থঃ- ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারকারী পুরুষ (অবিবাহিতা ও অবিবাহিত হলে) তাদের প্রত্যেককেই একশত দোররা-বেত্রাঘাত কর। আল্লাহ পাক-এর বিধান কার্যকর করণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহ পাক-এর প্রতি ও পরকালের প্রতি ঈমান এনে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।” (সূরাতুন্  নূর ২নং আয়াত শরীফ)     ১৮. বিবাহিত ব্যভিচারী এবং বিবাহিতা ব্যভিচারিণীর শাস্তিঃ     ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী যদি বিবাহিত ও বিবাহিতা হয়, তাহলে তাদেরকে রজম তথা পাথর মেরে হত্যা করতে হবে। যখন খিলাফত জারী থাকবে। যেমন হাদীছ শরীফ এবং তাফসীর শরীফের কিতাব সমূহে উল্লেখ রয়েছে,  [২৫৭২-২৫৮০]
 الشيخ والشيخة اذا زنيا فارجموهما البتة نكالا من الله. (نواسخ القرانঅর্থঃ- ব্যভিচারকারী ও ব্যভিচারিণী (বিবাহিত ও বিবাহিতা হলে) তাদের দুজনকেই রজম (পাথর) মেরে মৃত্যুদণ্ড দাও। এটা আল্লাহ পাক-এর পক্ষ থেকে নির্ধারিত শাস্তি।” (নাওয়াসিখুল্ কুরআন)             উলামায়ে মুহাক্কিক্ব, মুদাক্কিক এবং ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, যে সব এলাকায় খিলাফত ব্যবস্থা ক্বায়িম নেই, সেখানে ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারকারী বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক প্রত্যেকের জন্য তাজিরের ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ উভয়কে ৩৯ (ঊনচল্লিশ) দোররা বা তার কম শাস্তি দিতে হবে।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, শরহে বিক্বায়াহ, হিদায়াহ, নিহায়াহ, ফতহুল  ক্বদীর, কিফায়াহ, বাহরুর  রায়িক্ব ইত্যাদি)      ১৯. সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ প্রদানকারীর শাস্তি আশি (৮০) টি দোররাঃ              ইহকাল ও পরকালে তাদের জন্য কঠিন আযাব আছে। যদি কোন ব্যক্তি কোন সতী মহিলার প্রতি ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ দেয়, আর স্বপক্ষে চারজন পুরুষ সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করতে না পারে, তাহলে অপবাদ দানকারীকে ৮০ (আশি) টি দোররা-বেত্রাঘাত করতে হবে এবং কখনো তার সাক্ষ্য কবুল হবেনা।        যেমন, আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন, [২৫৮১]
والذين يرمون المحصنت ثم لم ياتوا باربعة شهداء فاجلدو هم ثمنين جلدة ولا تقبلوا هم شهادة ابدا واولئك هم الفسقون، الا الذين تابوا من بعد ذلك واصلحوا فان الله غفور رحيم. (سورة النور ৫৪ اية)  অর্থঃ- যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, অতঃপর স্বপক্ষে চারজন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেকে ৮০ (আশি) টি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনো তাদের সাক্ষ্য কবুল করবেনা। এরাই ফাসিক, নাফরমান। কিন্তু যারা এরপর তওবা করে এবং সংশোধিত হয়, আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল পরম মেহেরবান।” (সূরাতুন্ নূর ৪, ৫নং আয়াত শরীফ) [২৫৮২]
ان الذين يرمون المحصنت الغفلت المؤمنت لعنوا فى الدنيا والاخرة ولهم عذاب عظيم، يوم تشهد عليهم السنتهم وايدهم وارجهم بما كانوا يعملون. يؤمئذ يوفيهم الله دينهم الحق ويعلمون ان الله هوا الحق المبين. (سورة انور ৩২، ২৪، ২৫ ايات)
 অর্থঃ- যারা সতী-সাধ্বী নিরীহ ঈমানদার নারীগণের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকালে ও পরকালে ধিকৃত এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। যে দিন প্রকাশ করে দিবে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত ও তাদের পা, যা কিছু তারা করত। আল্লাহ পাক সে দিন তাদের সমুচিত শাস্তি পুরোপুরি দিবেন এবং তারা জানতে পারবে যে, নিশ্চয়ই  আল্লাহ পাকই সত্য, স্পষ্ট ব্যক্তকারী।” (সূরাতুন্  নূর ২৩,       ২৪, ২৫, নং আয়াত শরীফ)      ২০. স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদের শাস্তি আল্লাহ পাক-এর লানতঃ        আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, [২৫৮৩]
والذين يرمون ازواجهم ولم يكن لهم شهداء الا انفسهم فشهادة احدهم اربع شهدت بالله انه لمن الصدقين، والخامسة ان عنت الله عليه ان كان من الكذبين، ويدرؤا عنها اعذاب ان تشهد اربع شهدت بالله انه لمن الكذبين، والخامسة ان غضت الله الله عليها ان كان من الصدقين. (سورة النور ، ، ، ايات)
অর্থঃ- যারা তাদের স্ত্রীদের প্রতি (ব্যভিচারের) অপবাদ আরোপ করে এবং তারা নিজেরা ছাড়া তাদের কোন সাক্ষী নেই, এরূপ ব্যক্তির সাক্ষ্য এভাবে হবে যে, সে আল্লাহ পাক-এর কসম খেয়ে চারবার সাক্ষ্য দিবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী এবং পঞ্চমবার বলবে যে, যদি সে মিথ্যাবাদী হয় তবে তার উপর আল্লাহ পাক-এর লানত। এবং স্ত্রীর শাস্তি রহিত হয়ে যাবে যদি সে আল্লাহ পাক-এর কসম খেয়ে চারবার সাক্ষ্য দেয় যে, তার স্বামী অবশ্যই মিথ্যাবাদী এবং পঞ্চমবার বলে যে, যদি তার স্বামী সত্যবাদী হয় তবে তার উপর আল্লাহ পাক-এর গযব নেমে আসবে।” (সূরাতুন্ নূর ৬, , , ৯নং আয়াত শরীফ)   ২১. ব্যভিচারী পুরুষ-মহিলাকে বিবাহ করা মুমিন পুরুষ-মহিলাদের জন্য হারাম করা হয়েছেঃ              আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন,  [২৫৮৪]
الزانى لاينكح الا زانية او مشركة والزانية لاينكحها الا زان او مشرك وحرم ذلك على المؤمنين. (سورة النور اية)
অর্থঃ- ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারী অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে। এদেরকে মুমিনগণের জন্য হারাম করা হয়েছে।” (সূরাতুন্ নূর ৩নং আয়াত শরীফ) আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেছেন, [২৫৮৫]

الخبيثت للخبيثين واخبيثون للخبيثت والطيبت للطيبين والطيبون للطيبت اولئك مبرءون مما يقولون هم مغفرة ورزق كريم. سورة النور ২৬ اية)
অর্থঃ- দুশ্চরিত্রা নারীকুল দুশ্চরিত্র পুরষকুলের জন্যে এবং দুশ্চরিত্র পুরুষকুল দুশ্চরিত্রা নারীকুলের জন্যে। সচ্চরিত্রা নারীকুল সচ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্যে এবং সচ্চরিত্র পুরুষকুল সচ্চরিত্রা নারীকুলের জন্যে। তাঁদের সম্পর্কে লোক যা  বলে তাঁর সাথে তাঁরা সম্পর্কহীন। তাঁদের জন্য আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। (সূরাতুন্ নূর ২৬ নং আয়াত শরীফ)          এ আয়াত শরীফের ব্যখ্যায় তাফসীরে দুররুল্ মানছূর লিছ্ ছুয়ূত্বীএর মধ্যে উল্লেখ আছে, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, [২৫৮৬]
مابغت امرأة نبى قط.
 অর্থাৎ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের স্ত্রীই কোন সময় ব্যভিচার করেননি। ২২. যারা ব্যভিচারের প্রসার আশা করে, তাদের জন্য ইহকালে ও পরকালে  যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আছেঃ  আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, [২৫৮৭] ان الذين يحبون ان تشيع الفاحشة فى الذين امنوا لهم عذاب اليم فى الدنيا والاخرة والله يعلم وانتم لاتعلمون. (سورة النور ১৯ اية)
অর্থঃ- যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারগণের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ পাক সব কিছু জানেন, কিন্তু তোমরা জান না।” (সূরাতুন্ নূর ১৯নং আয়াত শরীফ)        ২৩. যারা দাইয়্যূছ, তারা কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, তাদের জন্য জান্নাত হারামঃ       হাদীছ শরীফের মধ্যে ইরশাদ হয়েছে, [২৫৮৮-২৫৮৯]
 عن عبد الله بن عمر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ثلاثة قد حرم الله تبارك وتعالى عليهم الجنة مدمن الخمر والعاق والديوت الذى يقر فى اهلة الخبث. (مسند احمدبن حنبل ج ص ৬৯، ১২৮، نسائى شريف كتاب الزكاة باب ৬৯)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তিন প্রকার ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তাবারকা ওয়া তায়ালা জান্নাতকে হারাম করেছেন। (১) মদ বা শরাব পানকারী, (২) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, (৩) দাইয়্যূছ, যে তার আহাল-পরিবারের মধ্যে সর্বদাই অশ্লীলতা ছড়িয়ে রাখে।” (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ২য় জিঃ ৬৯, ১২৮ পৃষ্ঠা, নাসায়ী শরীফ কিতাবুয্ যাকাহ বাব নং ৬৯) [২৫৯০-২৫৯১]
قال عبد الله رضى الله عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ثلاث لا يدخلون الجنة ولا ينظر اله اليهم يوم القيامة العاق لوالديه والمرأة المترجلة المتشبهة بالرجال والديوث. (مسند احمدبن حنبل ج ص ১৩৪، نسائى شريف كتاب الزكاة باب ৬৯)
 অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তিন প্রকার ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং আল্লাহ পাক তাদের দিকে ক্বিয়ামতের দিন (রহমতের)  দৃষ্টি দিবেন না। (১) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, (২) পুরুষের ছূরত ধারণকারি মহিলা, (৩) দাইয়্যূছ।” (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ২য় জিঃ ১৩৪ পৃষ্ঠা, নাসায়ী শরীফ কিতাবুয্ যাকাত বাব নং ৬৯)       দাইয়্যূছকখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, তার জন্য আল্লাহ পাক জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন। দাইয়্যূছ বলা হয়, যে নিজে পর্দা করেনা এবং তার অধীনস্থ পরিবার পরিজনদেরকেও পর্দায় রাখেনা।            উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, হিজাব বা পর্দা রক্ষা না করা বা বেপর্দা হওয়া মহান আল্লাহ পাক-এর লানতপ্রাপ্তি, জান্নাত থেকে বঞ্চিত ও অনেক অপবিত্রতাসহ বহু গুণাহ্র কারণ। তাই সকলের উচিত প্রতিক্ষেত্রে খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা মেনে চলা। আল্লাহ পাক তাওফিক দান করুন। (আমীন) (অসমাপ্ত) পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন
 সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ
 মুহম্মদ মুহিউদ্দীন সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম।  সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর- জানুয়ারী/২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ‘‘বিত্রের পর দুরাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।’’ তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী, ইবনে মাজাহ্, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে।  আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, ‘‘বিতির নামাযের পর দুই রাক্আত নফল নামায...  দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহনযোগ্য। তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী। জাওয়াবঃ বিত্র নামাযের পর দুরাকায়াত নফল নামায যাকে হালক্বী নফলবলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমুলক হয়েছে।  কেননা সাধারণতঃ নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিত্র নামাযের পর দুরাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব-সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ। কেননা বিত্র নামাযের পর দুরাকায়াত নফল এবং অন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে একই হুকুম নয়। বরং বিত্র নামাযের পর দুই রাকায়াত নফলের হুকুম অন্যান্য নফল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ অন্যান্য নফল দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব, বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব। আর হালক্বী নফল অর্থাৎ বিত্র নামাযের পর দুরাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব, আর বসে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব।  কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর দুরাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।  (ধারাবাহিক) উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বুখারী, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে কয়েকখানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছে আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। কারণ তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে ইবারত কারচুপি করে বুখারী শরীফ, ইবনে মাজাহ, মিরকাত ও নাসায়ী শরীফ ইত্যাদি  কিতাব” -এর বরাত দিয়ে যেটা বলতে চেয়েছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। আমরা পর্যায়ক্রমে সেটা তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ্।     নিম্নে মিরকাত শরীফ কিতাবের  বক্তব্য পর্যালোচনা করা হলো- উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বিত্র নামাযের পর দুরাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মিনহাজ কিতাবের এবং হযরত মুল্লা আলী কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মিরকাত শরীফ কিতাবের  বরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, নিম্নে তা হুবহু উল্লেখ করা হলো।  যেমন রেযাখানীদের হুবহু ইবারত খানা হচ্ছে - হযরত ইমাম নববী মিনহাজেও হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মিরকাত শরীফেএ প্রসঙ্গে লিখেছেন যে,
هاتان الركعتان فعلهما رسول الله صلى الله عليه وسلم جالسالبيان جواز الصلواة بعد الوتر وبيان جواز النفل جالسا ولم يواظب على ذلك الخ. هكذا فى حاشية سنن ابن ماجه قال النووى الصواب ان هاتبن الر كعتين فعلهما رسول الله صلى الله عليه وسلم بعد الوتر جالسا لبيان جواز الصلواة بعد الوتر ولبيان حواز النفل جالساولم يواظب على ذال الخ.
 অর্থাৎ- বিতরের পর এ দুরাকাত নামায রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে এজন্য আদায় করেছেন যেন এ কথাও প্রমাণ করে যে, বিতরের পর নফল নামায পড়া এবং বসে বসে পড়া বৈধ। এখানে প্রথমতঃ বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, “রেযাখানীরা বিত্র নামাযের পর দুরাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে মিনহাজ ও মিরকাত কিতাবের বরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, উক্ত  ইবারতেই উল্লেখ আছে,
 ان هاتين الركعتين فعهما رسول الله صلى الله عليه وسم بعد الوتر جالسا
অর্থাৎ- নিশ্চয়ই বিত্রের পর দুরাকায়াত নফল নামায রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসেই আদায় করেছেন। সুতরাং, রেযাখানীদের বক্তব্য স্ববিরোধী বলেই প্রমাণিত হলো। কেননা রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, উক্ত ইবারতেই উল্লেখ আছে যে, রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম بعد الوتر جالسا বিত্র নামাযের পর দুরাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন। রেযাখানীদের কারচুপিমূলক  বক্তব্য  উদঘাটন ও খণ্ডন দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীরা মিনহাজমিরকাত শরীফেরবরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, উক্ত  ইবারতেও তারা সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে।  কারণ রেযাখানীরা কিতাবের নাম দিয়ে সমস্ত ইবারত গুলো যেভাবে পাশাপাশি উল্লেখ করেছে, অথচ মিরকাত শরীফে সেভাবে হুবহু উক্ত সমস্ত ইবারত গুলো উল্লেখ নেই।  তৃতীয়তঃ রেযাখানীরা যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, উক্ত ইবারতের অর্থেও তারা ভুল করেছে। চতুর্থতঃ রেযাখানীরা কিতাবের ইবারতের অর্থের সঙ্গে হাদীস শরীফের অর্থ ঢুকিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে চরম জালিয়াতী করেছে। পঞ্চমতঃ রেযাখানীরা মিনহাজমিরকাত শরীফকিতাবের বরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, উক্ত  ইবারতের অর্থেও তারা কারচুপি করেছে। কারণ উক্ত ইবারত খানার সম্পূর্ণ অর্থ তারা করেনি। যারা ইবারতের সঠিক অর্থই জানেনা তারা আবার ফতওয়া দেয় কিভাবে? ষষ্ঠতঃ রেযাখানীরা মিনহাজমিরকাত শরীফনামক দুটি কিতাবের নাম ব্যবহার করে যে সমস্ত ইবারত উল্লেখ করেছে, উক্ত ইবারতের মাঝখানে তৃতীয় আরেকটি কিতাবের নাম ঢুকিয়ে ইবারত জালিয়াতি করেছে।  যেমন রেযাখানীরা ইবারতের মাঝখানে তৃতীয় আরেকটি কিতাবের নাম ঢুকিয়ে ইবারত জালিয়াতি করে এভাবে ইবারত উল্লেখ করেছে-
 هكذا فى حاشية سنن ابن ماجه قال النووى..........
 অর্থাৎ অনুরূপ সুনানু ইবনে মাজাহ্ শরীফের হাশিয়াতে উল্লেখ আছে ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ....  অথচ রেযাখানীরা সুনানু ইবনে মাজাহ্ শরীফের হাশিয়ার বরাত দিয়ে যে ইবারত গুলো কারচুপি করেছে, সুনানু ইবনে মাজাহ্ শরীফের হাশিয়ায় উল্লিখিত সেই ইবারতেই উল্লেখ আছে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর দুরাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন।  যেমন সুনানু ইবনে মাজাহ’’ শরীফের ১ম খণ্ডের ৮৫ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায়  উল্লেখ আছে,
 عن عائشة رضى اله عنها كان يصلى ثلث عشرة ركعة يصلى ثمان ركعات ثم يوتر ثم يصلى ركعتين وهو جالس.
অর্থঃ- হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আখিরী রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (রাতে) তের রাকায়াত নামায আদায় করতেন। আট রাকায়াত (তাহাজ্জুদ) পরে তিন রাকায়াত বিত্র পড়তেন। অতঃপর   দুরাকায়াত (নফল) নামায বসেই আদায় করতেন।উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, রেযাখানীরা সুনানু ইবনে মাজাহ্ শরীফের হাশিয়ার বরাত দিয়ে যে ইবারত গুলো কারচুপি করেছে, ‘সুনানু ইবনে মাজাহ্ শরীফেরহাশিয়ায় উল্লিখিত সেই ইবারতেই উল্লেখ আছে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর দুরাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন।  যা হাদীছ শরীফে উল্লিখিত وهوجالس ইবারতটিই প্রমাণ করে। অতএব, রেযাখানীরা বিত্র নামাযের পর দুরাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মিনহাজ কিতাবের এবং হযরত মুল্লা আলী কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মিরকাত শরীফ কিতাবের  বরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, সেই ইবারতের মধ্যেই
ان هاتين الر كعتين فعلهما رسول الله صلى الله عليه وسلم بعد الوتر جالسا.
 বিত্র নামাযের পর দুরাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করার বর্র্ণনা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। সুতরাং, কিতাবের নাম ব্যবহার করে রেযাখানীদের জালিয়াতি, ধোঁকাবাজী, প্রতারণা, মিথ্যা ও ইবারত কারচুপি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো। (চলবে)  মুহম্মদ মামুনূর রহমান, চট্টগ্রাম সরকার মুহম্মদ আল মাহমুদ, দিনাজপুর  সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্্্্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা জানুয়ারী/২০০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে পাগড়ী পরিধান করে নামায পড়ার ছওয়াব সম্পর্কে বলা হয়েছে, “...... পাগড়ী মাথায় নামায পড়লে ১ রাক্আতে ৭০ রাক্আতের সাওয়াব পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবের বর্ণনা পাওয়া যায় না।”  ..... এখন আমার সুওয়াল হলো- পাগড়ী পরিধান করে নামায পড়ার ছওয়াব সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ  না, পাগড়ী পরিধান করে নামায পড়ার ছওয়াব সম্পর্কে হাটহাজারীর অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও কুফরী হয়েছে। কারণ মাথায় পাগড়ী পরিধান করে নামায পড়লে এক রাকায়াতে সত্তর রাকায়াতের ছওয়াব পাওয়ার কথা যে উল্লেখ করা হয়েছে, তা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যা সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবে বর্ণিত রয়েছে।  যেমন,ঞ্জসর্বজনমান্য ও জগতখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস রহমতুল্লাহি আলাইহি  তাঁর  বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব আশয়াতুল লুময়াতকিতাবের ৩য় খন্ডের ৫৪৫ পৃষ্ঠায়, ‘তিরমিযী শরীফের১ম খণ্ডের ২০৭ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায়, ‘তরজুমাতুল মিশকাতউরফুশ্ শাজীকিতাবে  উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে.........................................
 অর্থঃ- পাগড়ী মাথায় বেঁধে রাখা সুন্নত। অসংখ্য হাদীস শরীফে এর ফযীলত আলোচিত হয়েছে। যেমন, পাগড়ীসহ দুরাকায়াত নামায পাগড়ী ছাড়া সত্তর রাকায়াত নামাযের চেয়ে উত্তম।”  মিশকাত শরীফের সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত, নির্ভরযোগ্য ও মশহুর শরাহ্ মিরকাত শরীফের২য় খন্ডের ২৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
 وروى انه عليه السلام قال صلاة بعمامة أفضل من سبعين صلاة بغير عمامة كذا نقله ابن حجر.
অর্থঃ- বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পাগড়ীসহ এক ওয়াক্ত নামায পাগড়ী ছাড়া সত্তর ওয়াক্ত নামাযের থেকে অতি উত্তম। অনুরূপ বর্ণনা হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহিও বর্ণনা করেছেন।”  ‘মিরকাত শরীফের৮ম খণ্ডের ২৫০ পৃষ্ঠায় ও তুহফাতুল আহ্ওয়াযীকিতাবের ৫ম খণ্ডের ৪১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وروى ابن عساكر عن ابن عمر رضى الله عنهما مرفوعا صلاة تطوع أو فريضة بعمامة تعدل خمسا وعشرين صلاة بلاعمامة وجمعة بعمامة تعدل سبعين جمعة بلا عمامة فهذا كله يدل على فضيلة العمامة مطلقا.
 অর্থঃ- হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে মারফু হাদীস বর্ণনা করেন যে, পাগড়ীসহ একটি ফরয অথবা নফল নামাযে পাগড়ী ছাড়া পঁচিশটি ফরয অথবা নফল নামাযের সমান ছওয়াব পাওয়া যায়। অনুরূপভাবে পাগড়ীসহ একটি জুমুয়া আদায় করলে পাগড়ী ছাড়া সত্তরটি জুমুয়া আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়। সাধারণতঃ এটা দ্বারা পাগড়ী পরিধানের ফযীলতের দলীল সাব্যস্ত হয়।” “কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাসকিতাবের ২য় খন্ডের ৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
 أورده الديلمى فى مسنده عن ابن عمر رضى الله عنهما رفعه بلفظ صلاة بعمامة تعدل بخمس وعشرين صلاة وجمعة بعمامة تعدل سبعين جمعة.
 অর্থঃ-  হযরত দাইলামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মুসনাদ কিতাবে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে মারফু হাদীস বর্ণনা করেন যে, পাগড়ীসহ এক ওয়াক্ত নামায পাগড়ী ছাড়া পঁিচশ ওয়াক্ত নামাযের সমপরিমাণ ছওয়াব পাওয়া যায়।  আর পাগড়ীসহ একটি জুমুয়া আদায় করলে পাগড়ী ছাড়া সত্তরটি জুমুয়া আদায়ের সমপরিমাণ ছওয়াব পাওয়া যায়।” “মিরকাত শরীফের২য় খণ্ডের ২৩৯ পৃষ্ঠায় হাদীস শরীফের বিখ্যাত কিতাব দাইলামী শরীফেরবরাত দিয়ে  উল্লেখ করা হয়েছে-
من حديث ابن عمر رضى الله عنهما مرفوعا صلاة بعمامة تعدل بخمس وعشرين صلاة وجمعة بعمامة تعدل سبعين جمعة.
 অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে মারফু হাদীস বর্ণনা করেন যে, পাগড়ীসহ এক ওয়াক্ত নামায পাগড়ী ছাড়া পঁিচশ ওয়াক্ত নামাযের সমপরিমাণ ছওয়াব পাওয়া যায়। আর পাগড়ীসহ একটি জুমুয়া আদায় করলে পাগড়ী ছাড়া সত্তরটি জুমুয়া আদায়ের সমপরিমাণ ছওয়াব পাওয়া যায়।”    উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে, ومن حديث أنس رضى الله عنه مرفوعا اصلاة فى العمامة بعشرة.
  অর্থঃ- হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে মারফু হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, পাগড়ীসহ নামায আদায় করলে দশগুণ ছওয়াব লাভ হয়।” “আল ফিরদাউস বি-মাছূরিল খিত্বাব লিদ দাইলামীকিতাবের ২য় খণ্ডের ১০৯ পৃষ্ঠার ২৫৭১ নং হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,
 عن ابن عمر رضى الله عنهما حمعة بعمامة افضل من سبعين جمعة بلاعمامة.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে ঞ্জবর্ণিত আছে, তিনি বর্ণনা করেন যে, পাগড়ীসহ একটি জুমুয়া আদায় করলে পাগড়ী ছাড়া সত্তরটি জুমুয়া আদায়ের থকে উত্তম।এছাড়াও হাদীস শরীফের বিখ্যাত শরাহ গ্রন্থগুলোতে উল্লেখ আছে যে, পাগড়ী পরিধান করে এক রাকায়াত নামায আদায় করলে সত্তর রাকায়াত নামাযের ফযীলতের কথা উল্লেখ আছে।             যেমন, “শামাইলুত্ তিরমিযীকিতাবের ৮ পৃষ্ঠার ১৫ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
ان ركعتين مع العمامة افضل من سبعين ركعة بدونهاঅর্থঃ- নিশ্চয়ই পাগড়ী পরিধান করে দুরাকায়াত নামায আদায় করা, পাগড়ী ছাড়া সত্তর রাকায়াত নামায আদায় করার চেয়ে অধিক ফযীলতপূর্ণ।” “মিরয়াতুল্ মানাজীহ্কিতাবের ৬ষ্ঠ খন্ডের ১০৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে.........................................
অর্থঃ- পাগড়ী ছাড়া সত্তর রাকায়াত নামাযের ছওয়াব পাগড়ীসহ এক রাকায়াত নামাযের সমপরিমাণ ছওয়াবতুল্য।”        “হিদায়াতুল ইবাদকিতাবের ৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
فى الحديث جمعة بعمامة افضل من سبعين صلاة بلاة بلا عمامة.
অর্থঃ- হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, পাগড়ীসহ এক জুমুয়ার নামায পাগড়ী ছাড়া সত্তর জুমুয়ার নামায অপেক্ষা উত্তম।”              “কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাস২য় খন্ডের ৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
 عن جابر رضى الله عنه ركعتان بعمامة افضل من سبعين من غيرها.
অর্থঃ- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, পাগড়ীসহ দুরাকায়াত নামায পাগড়ী ছাড়া সত্তর রাকায়াত নামায থেকে উত্তম।”  শুধু তাই নয়, মাথায় পাগড়ী পরিধান করে নামায আদায় করলে হাজার গুন কল্যাণ নিহিত রয়েছে।  যেমন,“আল ফিরদাউস বি-মাছূরিল খিত্বাব লিদ দাইলামীকিতাবের ২য় খণ্ডের ৪০৬ পৃষ্ঠার ৩৮০৫ নং হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,
  عن أنس رضى الله عنه الصلاة فى العمامة عشرة الف حسنة.
অর্থঃ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, পাগড়ী পরিধান করে নামায আদায় করলে এক হাজার কল্যাণ নিহিত আছে।বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, পাগড়ী পরিধান করে নামায আদায় করলে এক রাকায়াতে সত্তর রাকায়াতের যে ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে, তা সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাতনির্ভরযোগ্য ও অনুসরণীয় ইমাম মুজতাহিদ, সলফে ছলিহীন রহমতুল্লাহি আইহিমগণেরই দ্বারা লিখিত কিতাব। যেমন, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম দায়লামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর লিখিত আল ফিরদাউসকিতাবে, বিখ্যাত মুহাদ্দিস, হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মিশকাত শরীফের বিশ্বখ্যাত শরাহ্ মিরকাত শরীফে,’ জগতখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস রহমতুল্লাহি আলাইহি  তার আশয়াতুল লুমআতকিতাবে এবং এছাড়াও হিদায়াতুল ইবাদ, কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাস, হাশিয়ায়ে তিরমিযী, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, হাশিয়ায়ে শামাইলুত্ তিরমিযী,তুহ্ফাতুল আহওয়াযী,ইত্যাদি কিতাবেও  মাথায় পাগড়ী পরিধান করে এক রাকায়াত নামায আদায় করলে সত্তর রাকায়াত নামাযের ছওয়াব বা ফযীলত-এর কথা বর্ণনা  করা হয়েছে।       অতএব, উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবের দলীল আদিল্লার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হলো যে, মাথায় পাগড়ী পরিধান করে নামায আদায় করলে এক রাকায়াতে সত্তর রাকায়াতের ফযীলত পাওয়া যায়।  সুতরাং হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকায় যে বলা হয়েছে, “পাগড়ী মাথায় নামায পড়লে ১ রাক্আতে ৭০ রাক্আতের সাওয়াব পাওয়ার কথা ... নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবের বর্ণনা পাওয়া যায় না।”  তাদের এ  বক্তব্য হাদীছ শরীফ অস্বীকার করার কারণে কুফরী হয়েছে। কাজেই তাদেরকে খালিছ ইস্তিগ্ফার ও তওবা করতে হবে। {দলীলসমূহঃ (১) আল ফিরদাউস লিদ দাইলামী শরীফ, (২) মিরকাত শরীফ, (৩) হাশিয়ায়ে শামাইলুত্ তিরমিযী, (৪) তুহ্ফাতুল আহওয়াযী, (৫) হাশিয়ায়ে তিরমিযী শরীফ, (৬) হিদায়াতুল ইবাদ, (৭) কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাস, (৮) আশয়াতুল লুময়াত, (৯) তরজমাতুল মিশকাত, (১০) উরফুশ্ শাজী, (১১) নাফয়ু ক্বূতিল মুগতাযী (১২) মিরয়াতুল্ মানাজীহ, (১৩) গুলজারে সুন্নত ইত্যাদি।  

0 Comments: