হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ( ৮ নং )


হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র-

মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লিখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।

তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেহিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই।

 কেননা,প্রথমতঃ কিছু লোক কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্মঅর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। 

যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “....... মহিলারা মুখ বা চেহারা, হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)

অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ রূপেই কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা মূলতঃ কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে।

মূলতঃ মহিলারা সমস্ত শরীর ঢেকে বা পর্দা করে বের হবে এটাই শরীয়তের নির্দেশ। অতএব, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।

দ্বিতীয়তঃ কতিপয় নামধারী পীর, আমীর, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, ইফতার করে, ঘরোয়া বৈঠক করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাউযুবিল্লাহ)   

   মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ছূরা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, কাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ছূআবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল।

বর্তমান যামানার উলামায়ে ছূতথাকথিত পীর, আমীর, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক। 

দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা।
যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে।

 তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী)                            

স্মর্তব্য যে, ঐসকল দাজ্জালের চেলা নামক তথাকথিত পীর, আমীর, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ছে। সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা বেপর্দা হয় কি করে?  

       অতএব, উল্লিখিত উলামায়ে ছূদের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।   

       অতএব, সকলেই যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার ভিতর আসতে পারে, তাই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়া হলো।

আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পর্দা করা ফরযে আইন দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায, (৩) যাকাত, (৪) হজ্ব (৫) রমযানের রোযা। অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে হিজাব বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ ফরযে আইন।

কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের বহু স্থানেই হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি বেপর্দা হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া, ইতিহাস ও লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো-

যে সকল আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা হিজাব বা পর্দার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত তাফসীর বা ব্যাখ্যা    যে সকল আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা হিজাব বা পর্দাফরয প্রমাণিত হয়েছে তা দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হয়েছে যে, শুধু বোরকা বা পর্দা করে রাস্তায় বের হওয়ার নাম হিজাব বা পর্দা নয়। বরং তার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট আয়াত শরীফসমূহে উল্লিখিত সকল হুকুম-আহ্কামসমূহ মেনে চলার নামই হচ্ছে শরয়ী হিজাব বা পর্দা

যেমন, কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নেয়া, মাহরাম ব্যতীত অন্য কারো সাথে দেখা-সাক্ষাত না করা, মাহরামদের সামনেও শালীনতা বজায় রাখা, চলাচলের সময় পুরুষ-মহিলা উভয়ের দৃষ্টিকেই অবনত রাখা, নিজেদের লজ্জাস্থানকে হিফাজত করা, বিনা প্রয়োজনে গলার আওয়াজ বা কক্তস্বর পরপুরুষকে না শুনানো, প্রয়োজনে কথা বলতে হলে ও কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে বলা ও চাওয়া এবং শক্ত ভাষায় কথা বলা, নরম ভাষায় কথা না বলা ইত্যাদি সবই হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ্ পাক উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহে এ বিষয়গুলোই মূলতঃ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। 

  উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ে তাফসীর বা ব্যাখ্যাবিস্তারিতভাবে তুলে ধরলে বিষয়গুলো আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং শরয়ী হিজাব বা পর্দারপরিচয় সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। তাই নিম্নে নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ থেকে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের তাফসীর বা ব্যাখ্যা পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হলো-

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত সূরা নূরের ৩০নং  আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা
[৯২০]
قل للمؤمنين يغضوا من اصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون.
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুমিনগণকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের ইজ্জত ও আবরু হিফাযত করে। এতে তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ্ পাক তা অবহিত রয়েছেন।” (সূরা নূর/৩০) পুরুষদের জন্য বেগানা মহিলার দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম ও কবীরা গুণাহ্     উপরোক্ত আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক এ নির্দেশই দিয়েছেন যে, পুরুষরা যেন বেগানা নারীদেরকে দেখা থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, দৃষ্টিকে সংযত রাখে। মাহ্রামা তথা যাদেরকে দেখা জায়িয কিন্তু বিবাহ করা হারাম তাদেরকে ছাড়া অন্য যেকোন মহিলাকে দেখা পুরুষদের জন্য হারাম ও কবীরা গুণাহ্। মহিলার মাথা থেকে পা পর্যন্ত কোন অংশই পুরুষ দেখতে পারবে না। এমন বৃদ্ধা মহিলা যার দিকে দেখলে কোন ওয়াস্ওয়াসা বা কুচিন্তা আসে না, তাকে দেখা মাকরুহ-এর সাথে জায়িয। আর যদি ফিতনার আশংকা থাকে তবে হারাম হবে। আমরাদতথা সুদর্শন বালক যার এখনো দাঁড়ি উঠে নাই, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার কাছাকাছি পৌঁছেছে অসৎ নিয়তে তার দিকে দেখাও হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে। একজন পুরুষ অন্য পুরুষের ছতরের দিকে দৃষ্টি দিতে পারবেনা। অনুরূপভাবে একজন পুরুষ তার মাহ্রামা মহিলার ছত্র দেখতে পারবে না। তার মধ্যে পেট ও পিঠ শামিল। পুরুষের জন্য পুরুষের ছতর হলো নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত।
নিম্নে এ সম্পর্কিত বিষয়ে উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে মুফাস্সিরীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ যা আলোচনা করেছেন, তা উল্লেখ করা হলো-
[৯২৪-৯৪৩]
(قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم) عن النظر الى مالايحل النظر اليه. عن الحسن مرسلا قال بلغنى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعن الله الناظر والمنظور اليها، رواه البيهقى فى شعب الايمان. يغضوا صيغة امر بحذف اللام ومن زائدة على قول الاخفش فانه يجوز زيادة من كلام الموجب عنده. وعند سيبويه من للتبعيض لان المؤمنين غير مأمورين بغض الابصار مطلقابل بالغض عما لايحل النظر اليه بل المنهى عنه النظرة الثانية التى يكون بالارادة دون الاولى التى لاتكون بالارادة لحديث بريدة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلى ياعلى لاتتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليس لك الاخرة- رواه احمد والترمذى وابو داود والدارمى. عن جرير بن عبد الله قال سالت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن نظرة الفجاة فامرنى ان اصرف رواه مسلم. وعن ابى امامة عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ما من مسلم ينظر الى محاسن امرأة اول مرة ثم يغض بصره الااحدث الله له عبادة يجد حلاوتها. رواه احمد. (التفسير المظهرى ج6 ص491، مسلم شريف، شرح النووى، فتح الملهم للشبير احمد عثمانى. فتح الملهم للتقى عثمانى. شرح الابى والسنوسى. المفهم، مسند احمد بن حنبل. الفتح الربانى.
ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشاذى، معارف السنن، ابو داؤد شريف، شرح بدر الدين العينى، بذل المجهود، عون المعبود، الدارمى)
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মুমিনগণকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে) যাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা হালাল নয় বা জায়িয নয়, তারা যেন তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে মুরসালসূত্রে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমার কাছে পৌঁছেছে যে, নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ্ তায়ালার লানত ঐ সকল পুরুষের প্রতি যারা পর নারীকে দেখে এবং ঐসকল নারীদের প্রতি যারা দেখা দেয়। বাইহাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান’-এ রিওয়ায়েত আছে।
আয়াত শরীফে يغضوا শব্দটি امر (নির্দেশ) এর ছীগাহ। যার পূর্বে لام হযফ (উহ্য) করা হয়েছে। আখফাশের মতানুযায়ী من ابصارهم এর من অব্যয়টি যায়িদা বা অতিরিক্ত সংযোজিত। কেননা, তার নিকট كلام موجب বা হাঁ বাচক বাক্যে من মিনঅতিরিক্তি ব্যবহার জায়িয। আর সীবওয়াইহ্-এর মতে من মিনঅব্যয়টি আংশিক অর্থ জ্ঞাপক। কেননা এখানে বিশ্বাসীগণকে এমন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা কাউকে দেখতে পারবে না। বরং বলা হয়েছে, দেখা হালাল হবেনা তাদেরকে, যাদেরকে দেখা নিষেধ। অনিচ্ছাকৃত প্রথম দৃষ্টি নিষিদ্ধ নয়, এতে কোন গুণাহ্ নাই। কিন্তু ইচ্ছাকৃত দ্বিতীয় দৃষ্টি অবশ্যই গুণাহ্ বা পাপ। কারণ, দ্বিতীয় দৃষ্টি অনিচ্ছায় হয় না; ইচ্ছাকৃতই হয়ে থাকে।
হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, হে আলী! প্রথমবার তাকানোর পর পুনরায় তাকাবে না। কেননা, প্রথমবারের দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে কিন্তু দ্বিতীয়বারের দৃষ্টি ক্ষমা করা হবেনা। (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ ও দারিমী।)
হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে গেলে কি করবো, এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি আমাকে নির্দেশ করেছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে। (মুসলিম)
হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন কোন মুসলমান অন্য নারীর সৌন্দর্যের প্রতি প্রথম দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে চক্ষু ফিরিয়ে নিবে, আল্লাহ্ পাক তার ইবাদতে স্বাদ ও আনন্দ সৃষ্টি করে দিবেন। (আহমদ, আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯১ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল্ মুলহিম্ লিশ্ শিব্বীর আহমদ উসমানী, ফতহুল্ মুলহিম লিত্ তক্বী উসমানী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল্ মুফহিম, মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, আল্ ফতর্হু রব্বানী, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, মায়ারিফুস্ সুনান, আবু দাউদ শরীফ, শরহে বদরুদ্দীন আইনী, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল মাবূদ, আদ্ দারিমী)
[৯৪৪-৯৬৬]
هذا امر من الله تعالى لعباده المؤمنين ان يغضوا من ابصارهم عما حرم عليهم، فلاينظروا الا الى ما اباح لهم النظر اليه، وان يغضوا ابصارهم عن المحارم، فان التفق ان وقع البصر على محرم عن غير قصد، فليصرف بصره عنه سريعا، كما رواه مسلم فى صحيحه من حديث يونس بن عبيد عن عمروبن سعيد عن ابى زرعة  بن عمروبن جرير عن جده جرير بن عبد الله البجلى رضى الله عنه قال سالت النبى صلى الله عليه وسلم عن نظرة الفجاة فامرنى ان اصرف بصرى، وكذا رواه الامام احمد عن هشيم عن يونس بن عبيدبه، ورواه ابو داؤد والترمذى والنسائى من حديثه ايضا، وقال الترمذى حسن صحيح، وفى رواية لبعضهم فقال "اطرق بصرك" يعنى انظر الى الارض، والصرف اعم، فانه قديكون الى الارض والى جهة اخرى،
وقال ابو داؤد : حدثنا اسماعيل بن موسى الفزارى، حدثنا شريك عن ابى ربيعة الايادى عن عبد الله بن بريدة عن ابيه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلى "يا على لاتتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليس لك الاخرة" ورواه الترمذى من حديث شريك وقال غريب لانعرفه الا من حديثه.
وفى الصحيح عن ابى سعيد قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم "اياكم والجلوس على الطرقات" قالوا يا رسول الله لابد لنا من مجالسنا نتحدث فيها، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم "ان ابيتم فاعطوا الطريق حقه" قالوا وما حق الطريق يا رسول الله؟ فقال غض البصر وكف الاذى ورد السلام والامر بالمعروف والنهى عن المنكر وقال ابو القاسم البغوى حدثنا طالوت بن عباد حدثنا فضيل بن حسين سمعت ابا امامة يقول سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول "اكفلوا لى بست اكفل لكم بالجنة اذا حدث احدكم فلا يكذب واذا اؤتمن فلايخن واذا وعد فلا يخلف وغضوا ابصاركم وكفوا ايديكم واحفظوا فروجكم" وفى صحيح البخارى "من يكفل لى ما بين لحييه وما بين رجليه اكفل له الجنة" وقال عبد الرزاق انبأنا معمر عن ايوب عن ابن سيرين عن عبيدة قال كل ما عصى الله به فهو كبيرة.
وقد ذكر الطرفين فقال (قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم) ولما كان النظر داعية الى فساد القلب، كما قال بعض السلف النظر سهم سم الى القلب. ولذلك امر الله بحفظ القروج كما امر بحفظ الابصار التى هى بواعث الى ذلك ....... (ذلك ازكى لهم) اى اطهر لقلوبهم وانقى لدينهم كما قيل من حفظ بصره اورثه الله نورا فى بصيرته، ويروى فى قلبه.
وروى الامام احمد حدثنا عتار حدثنا عبد الله بن المبارك اخبرنا يحيى بن ايوب عن عبيد الله بن زحر عن على بن زيد عن القاسم عن ابى امامة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال "ما من مسلم ينظر الى محاسن امرأة ثم يغض بصره الا اخلف الله له عبادة يجد حلاوتها" وروى هذا مرفوعا عن ابن عمر وحذيفة وعائشة رضى الله عنهم، ولكن فى اسانيدها ضعف الاانها فى الترغيب، ومثله يتسامح فيه، وفى الطبرانى من طريق عبد الله بن يزيد على على بن يزيد عن القاسم عن ابى امامة مرفوعا "لتغضن ابصاركم ولتحفظن فروجكم ولتقيمن وجوهكم او لتكسفن وجوهكم".
قال الطبرانى : حدثنا احمدبن زهير التسترى قال قرأنا على محمد بن حقص بن عمر الضرير المقرى حدثنا يحيى بن ابى بكير حدثنا هريم بن سفيان عن عبد الرحمن ابن اسحاق عن القاسم بن عبد الرحمن عن ابيه عن عبد الله بن مسعود رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم "ان النظر سهم من سهام ابليس مسموم من تركه مخافتى ابدلته ايمانا يجد حلاوتها فى قلبه". وقوله تعالى (ان الله خبير بما يصنعون) كما قال تعالى (يعلم خائنة الاعين وما تخفى الصدور). وفى الصحيح عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم "كتب على ابن ادم حظه من الزنا ادرك ذلك لامحالة فزنا العينين النظر وزنا اللسان النطق وزنا لاذنين الاستماع وزنا اليدين البضش وزنا الرجلين الخطى والنفس تمنى وتشتهى والفرج يصدق ذلك او يكذبة" رواه البخارى تعليقا ومسلم مسندا من وجه اخر ينحو ماذكر. ................ ........ وقال ابن ابى الدنيا حدثنا ابوسعيد المدنى حدثنا عمر بن سهل المازنى حدثنى عمر بن محمد بن صهيان عن صفوان بن سليم عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم" كل عين باكية يوم القيامة الا عينا غضت عن محارم الله وعينا سهرت فى سبيل الله وعينا يخرج منها مثل رأس الذباب من خشية الله" عزوجل. (تفسير ابن كثير ج3 ص450، 451، 452، مسند احمدبن حنبل ج2 ص276. ج4 ص361 ج5 ص3، 462، بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى، مسلم شريف، شرح النووى، شرح الابى والسنوسى، فتح الملهم للشبير احمد عثمانى، فتح الملهم للتقى عثمانى، المفهم، ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، شرح بدر الدين العينى، نسائى شريف، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشاذى)
অর্থঃ- তারা যেন তাদের চক্ষুকে সংযত রাখেএ নির্দেশ আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে মুমিন বান্দাগণের প্রতি। যা তিনি তাদের উপর হারাম করেছেন। যাদের প্রতি দৃষ্টি দেয়া জায়িয করা হয়েছে তাদের ছাড়া অন্য কারো প্রতি দৃষ্টি দিবে না। হারাম জিনিষ থেকে দৃষ্টি নিচু করতে নির্দেশ করা হয়েছে। যদি অনিচ্ছাকৃত ভাবে হারাম জিনিষের প্রতি দৃষ্টি পড়েই যায়, তবে খুব দ্রুত দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবে। যেমন ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ছহীহ্ মুসলিমেহযরত ইউনুস বিন উবাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি আমর বিন সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি আবু যুরয়াহ্ বিন আমর বিন জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি তাঁর দাদা হযরত জারীর বিন আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, “আমি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হঠাৎ পড়ে যাওয়া দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন আমি যেন আমার চক্ষু সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়ে নেই।অনুরূপভাবে ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হাশীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ইউনুস বিন উবাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে রিওয়ায়েত করেছেন। হযরত আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম অনুরূপভাবে বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেছেন, হাদীছটি হাসান ছহীহ্। কারো করো বর্ণনায় আছে যে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তুমি তোমার দৃষ্টিকে ফিরিয়ে নিবে।
অর্থাৎ মাটির দিকে তাকাবে। الصرف আছ্ ছরফুশব্দটি আম অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেন সে মাটির দিকে, অন্য দিকে তাকায়।
হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন ইসমাঈল বিন মুসা ফাযারী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে শারীক রহমতুল্লাহি আলাইহি আবূ রবীয়া আয়াদী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ বিন বুরাইদা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি তাঁর পিতা হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে লক্ষ্য করে বলেছেন, “হে আলী! প্রথমবার দৃষ্টি দেয়ার পর পুনরায় দৃষ্টি দিবে না, কেননা তোমার প্রথম দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে, কিন্তু দ্বিতীয়বারের দৃষ্টি ক্ষমা করা হবেনা।হযরত তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীসটি হযরত শারীক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। বুখারী শরীফে হযরত আবূ সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “রাস্তায় বসা থেকে তোমরা বেঁচে থাকো।ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! রাস্তায় বসা ছাড়া আমাদের কোন গতি নেই, আমরা সেখানে বসে প্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলে থাকি। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, “যদি তোমাদের বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক্ব আদায় কর।হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! রাস্তার হক্ব কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “দৃষ্টি নিম্নগামী করা, কাউকে কষ্ট না দেয়া, সালামের উত্তর দেয়া, সৎকাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা।
হযরত আবুল্ কাসিম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত ত্বালূত বিন ইবাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত ফুযাইল বিন হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমি হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে শ্রবণ করেছি যে, তিনি বলেছেন, আমি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি। তিনি অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “তোমরা ছয়টি জিনিষের দায়িত্ব নাও, তাহলে আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নিচ্ছি। ছয়টি জিনিষ হলো- (১) তোমাদের মধ্যে যখন কেউ কথা বলবে, তখন মিথ্যা বলবেনা, (২) যখন তোমাদের কাছে আমানত রাখা হয়, তখন তা খিয়ানত করবে না, (৩) যখন ওয়াদা করবে, তখন তা ভঙ্গ করবে না (৪) তোমাদের দৃষ্টিকে নিম্ন গামী করবে (৫) যুলুম করা থেকে হাতকে সংযত রাখবে এবং (৬) তোমাদের নিজেদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করবে।
ছহীহ্ বুখারী শরীফে আরো আছে, “যে ব্যক্তি তাঁর জিহবা এবং ইজ্জত-আবরু হিফাযতের দায়িত্ব নিবে, আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নিবো।
হযরত আব্দুর রায্যাক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে সংবাদ দিয়েছেন, মামার রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আইউব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ইবনে সীরীন রহমতুল্লাহি আরাইহি থেকে, তিনি হযরত উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। তিনি বলেন; প্রত্যেক যে কাজে আল্লাহ্ পাক-এর নাফরমানী আছে, সেটিই কবীরা গুণাহ্। তরফাইন উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ্ পাক বলেছেন (হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নিম্নগামী করে) দৃষ্টি ফেলানোর পর তা-ই অন্তরে ফাসাদ সৃষ্টি করে।
পূর্ববর্তী অধিকাংশ আলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেছেন, দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত তীর, যা অন্তরে আঘাত হানে। এজন্য ইজ্জত-আবরু হিফাযত করতে আল্লাহ্ পাক চক্ষুর দৃষ্টি নিম্নগামী করতে নির্দেশ করেছেন। (এতে তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে) অর্থাৎ চক্ষু নিম্নগামী এবং ইজ্জত-আবরু হিফাযত করার মধ্যে তাদের অন্তরের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে এবং তাদের দ্বীন, ঈমানের পরিচ্ছন্নতা আছে। যেমন বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি তার দৃষ্টিকে হারাম জিনিষ থেকে বাঁচিয়ে রাখে আল্লাহ্ পাক তাঁর চোখকে নূরে নূরানী করে দেন এবং তার অন্তরকে আলোকময় করে দেন, যা সে দেখতে বুঝতেও পারে।
হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন আত্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত ইয়াহইয়া বিন আইউব রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত উবাইদুল্লাহ্ বিন যাহ্র রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আলী বিন যায়েদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আবু উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। তিনি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যখন কোন মুসলমান অন্য নারীর সৌন্দর্যের প্রতি দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবে, আল্লাহ্ পাক তাঁর ইবাদতে স্বাদ ও আনন্দ সৃষ্টি করে দিবেন।
এ হাদীছটি মারফূ সুত্রে বর্ণিত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, হুযাইফা ও আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম থেকে। ত্ববারানী শরীফে মারফু সূত্রে হযরত আব্দুল্লাহ বিন ইয়াযীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আলী বিন ইয়াযীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “হয় তোমরা তোমাদের দৃষ্টি নিম্নগামী রাখবে, নিজেদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করবে এবং তোমাদের মুখমন্ডলকে সোজা রাখবে, না হয় মহান আল্লাহ্ পাক তোমাদের চেহারা পাল্টিয়ে দিবেন।
হযরত ইমাম ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত আহমদ বিন যুহাইর তসতরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে পাঠ করেছেন হযরত মুহম্মদ বিন হাফ্ছ বিন উমর আয্যরীর মুকিররী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত ইয়াহ্ইয়া বিন আবী বুকাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হযরত হারীম বিন সুফিয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত কাসিম বিন আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই কুদৃষ্টি শয়তানী তীর সমূহের মধ্যে একটি তীর। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর ভয়ে নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখে, আল্লাহ্ পাক তাঁর অন্তরে এমন ঈমানের নূর সৃষ্টি করে দেন। যার স্বাদ বা মজা সে উপভোগ করে থাকে।আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ (নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক জানেন, তারা যা করে সে বিষয়ে) অনুরূপভাবে অন্য আয়াত শরীফে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, (তিনি চোখের খিয়ানত এবং তোমাদের অন্তরের গোপন খবর সবকিছু জানেন)
ছহীহ্ বুখারী শরীফে আছে, হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আদম সন্তানের জন্য ব্যভিচারের একটি অংশ লিখে দেয়া হয়েছে, সে অবশ্যই তা পাবে, অন্যথা হবে না। দুটি চোখের ব্যভিচার হলো দেখা, জিহবার ব্যভিচার কথা বলা, কান দ্বয়ের ব্যভিচার শ্রবণ করা, হাতের ব্যভিচার ধরা এবং পায়ের ব্যভিচার ধাবিত হওয়া বা চলা। অন্তর বা নফ্স আকাঙ্খা, কামনা করে থাকে, আর লজ্জাস্থান এগুলোকে সত্যে পরিণত করে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।বুখারী এবং মুসলিম এটা বর্ণনা করেছেন। ........... ..... হযরত ইবনু আবীদ দুনইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত আবূ সাঈদ মাদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন উমর বিন সাহ্ল মাযানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত উমর বিন মুহম্মদ বিন ছাবহান রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ছাফওয়ান বিন সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চোখই কাঁদবে। শুধু ঐ চোখ কাঁদবে না, যে চোখ আল্লাহ্ তায়ালার হারামকৃত জিনিষ দেখা থেকে সংযত থেকেছে, আর ঐ সমস্ত চোখ যা আল্লাহ্ তায়ালার পথে রাত্রি জেগেছে এবং ঐ সমস্ত চোখ যে আল্লাহ্ তায়ালার ভয়ে কেঁদে অশ্রু বের করেছে। যদিও চোখের অশ্রু মাছির মাথার সমান হয়।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫০, ৪৫১, ৪৫২ পৃষ্ঠা, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ২য় জিঃ ২৭৬ পৃষ্ঠা, ৪র্থ জিঃ ৩৬১ পৃষ্টা, ৫ম জিঃ ৩, ২৬৪ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল্ কারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, ফতহুল্ মুলহিম লিত্ তক্বী উছমানী, আল্ মুফহিম, আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল্ মাবূদ, শরহু বদরিদ্দীন আইনী, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী) [৯৬৭-৯৮৩]
قوله تعالى : (قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم) يعنى عما لايحل النظر اليه قيل معناه يغضوا ابصارهم وقيل من هنا للتبعيض لانه لايجب الغض عما يحل اليه النظر وانما امروا ان يغضوا عما لايحل النظر اليه.
عن جرير قال "سالت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن نظرة الفجأة قال اصرف بصرك". عن بريدة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلى "يا على لاتتبع النظرة النظرة فان لك  الاولى وليست لك الثانية" اخرجه ابو داؤد والترمذى."
عن ابى سعيد الخدرى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لاينظر الرجل الى عورة الرجل ولا المرأة الى عورة المرأة ولايفضى الرجل الى الرجل فى ثوب واحد ولا تفضى المرأة الى المرأة فى ثوب واحد" .......... (ذلك ازكى لهم) يعنى غض البصر وحفظ الفرج (ان الله خبير بما يصنعون) يعنى انه خبير باحوالهم وافعالهم وكيف يجيلون ابصارهم وكيف يصنعون بسائى حواسهم وجوارحهم.
(تفسير الخارن ج5 ص68-69، تفسير البغوى ج5 ص68-69، تفسير مدارك التنزيل ج3 ص326، ابو داود شريف، شرح بدر الدين العينى. بذل المجهول. عون المعبود، ترمذى شريف. تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشاذى، مسلم شريف، شرح النوى، فتح الملهم للشبير احمد عثمانى، فتح الملهم للتقى عثمانى، شرح الابى والسنوسى، المفهم)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে) অর্থাৎ যাদেরকে দেখা জায়িয নাই তাদের থেকে। কেউ বলেন, এর অর্থ তারা যেন তাদের চক্ষুকে নিম্নগামী করে। কেউ কেউ বলেন, من ابصارهم এর মধ্যে من হরফটি আংশিক অর্থ জ্ঞাপক। কেননা, যাদেরকে দেখা হালাল তাদের থেকে দৃষ্টিকে নিম্নগামী করা ওয়াজিব নয়। বরং যাদেরকে দেখা হারাম, তাদের থেকে দৃষ্টি নিম্নগামী করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হযরত জারীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হঠাৎ দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি জবাবে বলেছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে তোমার দৃষ্টিকে ফিরিয়ে নিবে।
হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে লক্ষ্য করে বলেছেন, “হে আলী! প্রথম দৃষ্টির পর আবার দৃষ্টি দিবে না। কেননা, তোমার প্রথম দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে, কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি ক্ষমা করা হবেনা।আবূ দাউদ ও তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোন পুরুষ অন্য কোন পুরুষের ছতরের দিকে তাকাবেনা, অনুরূপভাবে কোন মহিলা অন্য কোন মহিলার ছতরের দিকে তাকাবে না। কোন পুরুষ অপর কোন পুরুষের সাথে একই চাদরের নিচে যেন না শোয়। অনুরূপভাবে একজন মহিলা অপর মহিলার সাথে যেন একই চাদরের নিচে না শোয়।” ........     (এতে তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে) অর্থাৎ চক্ষু নিম্নগামী করার মধ্যে এবং ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করার মধ্যে অনেক পবিত্রতা আছে। (নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক জানেন, তোমরা যা কর সে বিষয়ে) অর্থাৎ তাদের অবস্থা এবং কাজ-কর্ম সম্পর্কে তিনি পুরা খবর রাখেন। (তাফসীরুল খাযিন ৫ম জিঃ ৬৮, ৬৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল বাগবী ৫ম জিঃ ৬৮, ৬৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল ৩য় জিঃ ৩২৬ পৃষ্ঠা, আবূ দাউদ শরীফ, শরহু বদরিদ্দীন আইনী, বযলুল্ মাজহুদ্, আউনুল মাবূদ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, ফতহুল্ মুলহিম লিত্ তকী উছমানী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল্ মুফহিম) [৯৮৪-৯৯০]
وان المراد منه المحرم دون الملل، وفى البخارى وقال سعيد بن ابى الحسن للحسن ان نساء العجم يكشفن صدورهن ورعوسهن؟ قال اصرف بصرك، يقول الله تعالى (قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم). (احكام القران للقرطبى ج6 ص222. بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى)
অর্থঃ- আয়াত শরীফের দ্বারা মুরাদ হচ্ছে, যাদেরকে দেখা দেয়া হারাম তাদের থেকেই চক্ষু নিম্নগামী করতে হবে। যাদেরকে দেখা হালাল তাদের থেকে নয়। বুখারী শরীফে আছে: হযরত সাঈদ বিন আবুল হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বললেন, অনারবী মহিলারা কি তাদের বক্ষ এবং মাথা খোলা রাখে? তিনি বললেন, তুমি তোমার চক্ষুকে ফিরিয়ে নিবে। আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, (হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি মুমিনগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষুকে নিম্নগামী করে এবং লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে।) (তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল্ কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ২২২ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল্ কারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী)
[৯৯১]
وغضه واجب عن جميع المحرمات، وكل مايحشى الفتنة من اجله. (تفسير القرطبى ج6 ص223)
অর্থঃ- সকল বেগানা মহিলা থেকে চক্ষুকে নিম্নগামী করা বা সংযত করা ওয়াজিব। আর প্রত্যেক সেই বিষয় থেকে যাতে ফিৎনা-ফাসাদের ভয় আছে।” (তাফসীরুল্ কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ২২৩ পৃষ্ঠা)
[৯৯২]
ان غض الابصر مستعمل فى التحريم لان غضها عن الحلال لايلزم وانما يلزم غضها عن الحرام. (احكام القران لابن الاعربى ج3 ص1365)
অর্থঃ- নিশ্চয়ই দৃষ্টি নিচু করণ, হারাম জিনিষের প্রতি ব্যবহৃত হবে। কেননা, হালালের থেকে নিম্নগামী করণ আবশ্যিক নয়। নিশ্চয়ই হারাম থেকে চক্ষু নিম্নগামী করণ ফরয, ওয়াজিব।” (আহকামুল কুরআন লিইবনিল্ আরাবী ৩য় জিঃ ১৩৬৫ পৃষ্ঠা)
[৯৯৩-১০০৫]
ماهو حكم النظر الى الاجنبيات؟
حرمت الشريعة الاسلامية النظر الى الاجنبيات فلايحل لرجل ان ينظر الى امرأة غير زوجته او محارمه من النساء. اما نظرة الفجأة فلااثم فيها ولاموأخذة لانها خارجة عن ارادة الانسان. ...... وقد قال النبى صلى الله عليه وسلم لعلى "يا على لا تتبع النظرة النظرة فانما لك الاولى وليست لك الثانية". وعن جرير بن عبد الله البجلى قال سالت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن نظرة الفجاة فامرنى ان أصرف بصرى. (تفسير ايات الاحكام ج2 ص151، مسلم شريف، شرح النووى، شرح الابى والسنوسى، فتح الملهم للشبير احمد عثمانى، فتح الملهم للتقى عثمانى، المفهم مسن احمد بن حنبل، الفتح الربانى، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف ال شاذى)
অর্থঃ- বেগানা নারীদের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার হুকুম কি?
জাওয়াবঃ ইসলামী শরীয়ত বেগানা নারীদের প্রতি তাকানোকে হারাম করেছে। পুরুষের জন্য তার স্ত্রী এবং মাহ্রামা মহিলা (যাদেরকে দেখা জায়িয কিন্তু বিবাহ করা হারাম) ব্যতীত অন্যান্য সকল মহিলার প্রতি তাকানো হারাম। হঠাৎ প্রথম দৃষ্টিতে কোন গুণাহ্ নাই। আর এটা ধর্তব্য নয়। কেননা এটা মানুষের ইচ্ছার বাইরে। ...........      হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে লক্ষ্য করে বলেছেন, “হে আলী! প্রথম দৃষ্টির পর পুনরায় দৃষ্টি দিবে না। কেননা তোমার প্রথম দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে, কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি ক্ষমা করা হবেনা।হযরত জারীর বিন আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হঠাৎ দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে নির্দেশ করলেন, আমি যেন আমার দৃষ্টিকে সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়ে নেই। (তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ ছাবূনী ২য় জিঃ ১৫১ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, ফতহুল্ মুলহিম্ লিত্ তক্বী উছমানী, আল্ মুফহিম, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, আল্ ফতর্হু রব্বানী, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী)
[১০০৬]
قل يا محمد لا تباعك المؤمنين يغضوا من بصارهم، ويكفوها عن النظر الى الاجنبيات من غير المحارم، ولا ينظروا الا الى ما ابيح لهم النظر اليه. ........ فان وقع البصر على شئ من المحرمات من غير قصد، فليصرفوا ابصارهم عنه سريعا ولا يديموا النظر، ولايرددوء الى النساء، ولا ينظروا بملء اعينهم فان الله رقيب عليهم مطلع على اعمالهم، لاتخقى عليه خافية (يعلم خائنة الاعين وما تخفى الصدور). (تفسير ايات الاحكام للصابونى ج2 ص 147)
অর্থঃ- হে নবী ও রসূল মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার অনুসরণ কারী মুমিনগণকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিচু করে। গাইরে মাহ্রামা পরনারী থেকে তারা দৃষ্টিকে ফিরিয়ে রাখবে। আল্লাহ্ পাক যার দিকে দেখতে মুবাহ্ (বৈধ) রেখেছেন তা ব্যতীত অন্য কাউকে তারা দেখবে না। ......... যখনই হারাম কিছুর দিকে অনিচ্ছাকৃত দৃষ্টি পড়বে, তারা যেন সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। দৃষ্টিকে স্থায়ী রাখবে না। তারা যেন মহিলার দিকে পুনরায় না তাকায়। তারা আড় চোখে দেখবে না। কেননা, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তাদের খবর রাখেন এবং তাদের আমল দেখে থাকেন। তাঁর কাছে কোন কিছু গোপন নেই। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, (তিনি জানেন তোমাদের চোখের খিয়ানত এবং অন্তরে যা লুকায়িত রয়েছে সবকিছু।) সূরা মুমিন ১৯ নং আয়াত। (তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ ১৪৭ পৃষ্ঠা)
قوله تعالى : (يغضوا من ابصارهم) المراد غض البصر عما حرم الله. (تفسير ايات الاحكام للصابونى ج2 ص149)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ (তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিচু রাখে) চক্ষু নিচু করা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ্ পাক যা হারাম করেছেন, তার থেকে যেন চক্ষুকে ফিরিয়ে রাখে।” (তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ ১৪৯ পৃষ্ঠা)
[১০০৮]
حرمة النظر الى النساء الاجانب، والتفصيل غيه. الاول ما قال الجصاص انه امر بغض البصر عما حرم علينا النظر اليه فحذف ذكر ذلك اكتفاء بعلم المخاطبين بالمراد، وقد روى محمد بن اسحاق عن محمد بن ابراهيم عن سلمة بن ابى الطفيل عن على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم؛ "ياعلى ان لك كنزا فى الجنة وانك ذو وفر منها فلاتتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الثانية وروى ابو زرعة عن جرير انه سأل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن نظرة الفجأة فامرنى ان اصرف بصرى". (احكم القران للشفيع والتهانوى ج3 ص420)
অর্থঃ- বেগানা নারীদের দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম সম্পর্কে আলোচনা। ইমাম জাছ্ছাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, চক্ষু নিম্নগামী করার নির্দেশ আমাদের জন্য যাদেরকে দেখা হারাম তাদের সম্পর্কেই। হযরত মুহম্মদ বিন ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুহম্মদ বিন ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত সালামা ইবনে আবু তুফাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! নিশ্চয়ই আপনার জন্য জান্নাতে বিশেষ ধনভান্ডার রয়েছে, আর আপনিই সেই ধন ভান্ডারের মালিক। আপনি প্রথম দৃষ্টির পর পুনরায় দৃষ্টি দিবেন না। কেননা, আপনার প্রথম দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে, কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি ক্ষমা করা হবেনা।
হযরত আবু যুরায়া রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত জারীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হঠাৎ পড়ে যাওয়া দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, “তিনি আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেই।” (আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত থানুবী ৩য় জিঃ ৪২০ পৃষ্ঠা)
[১০০৯-১০১১]
قال ابو بكر انما اراد صلى الله عليه وسلم بقوله لك النظرة الاولى اذا لم تكن عن قصد، فاما اذا كانت عن قصد فهى والثانية سواء. وهو على ما سال عنه جرير من نظرة الفجأة. وهو مثل قوله "ان السمع والبصر والفؤاد كل اولئك كان عنه مسئولا".
وذكر ابن كثير بتخريج الطبرانى عن عبد ةسعود رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم "ان النظر مسهم من مسموم من سهام ابليس من تركه مخافتى ابدلته ايمانا يجد حلاوته فى قلبه". وعن مسنده الى ابى امامة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم" ما من مسلم ينظر الى محاسن امرأة ثم يغض بصره الا اخلف الله له عبادة يجد حلاوتها. (احكام القران للشفيع والتهانوى ج3 ص420-421، الطبرانى ابن كثير)
অর্থঃ- হযরত আবূ বকর জাছ্ছাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ প্রথম দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে, যখন তা অনিচ্ছাকৃত হবে। আর যখন প্রথম দৃষ্টিও ইচ্ছাকৃত হয়, তখন দ্বিতীয় এবং প্রথম দৃষ্টির একই হুকুম। অর্থাৎ দ্বিতীয় দৃষ্টিতে যেমন গুণাহ্ হবে, ইচ্ছাকৃত প্রথম দৃষ্টিতেও গুণাহ হবে। যে হঠাৎ দৃষ্টির ব্যাপারে হযরত জারীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জিজ্ঞেস করেছিলেন। সে হাদীস শরীফখানা এ আয়াত শরীফেরই অনুরূপঃ সেদিন কান, চক্ষু এবং অন্তকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।” (সূরা বণী ইসরাঈল/৩৬)
হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি ত্ববারানী শরীফ থেকে উল্লেখ করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন আল্লাহ্ পাক-এর ইরশাদ হচ্ছে, “নিশ্চয়ই দৃষ্টি শয়তানের তীর সমূহের একটি তীর। যে আমাকে ভয় করে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়, আমি তাকে এমন ঈমান দিব, যার স্বাদ বা মজা সে অন্তরে অনুভব করতে পারবে।
হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন; হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যখন কোন মুসলমানের দৃষ্টি কোন মহিলার সৌন্দর্যের উপর পড়বে, অতঃপর সে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবে, আল্লাহ্ পাক তার ইবাদত সমূহে স্বাদ সৃষ্টি করে দিবেন।” (আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৪২০, ৪২১ পৃষ্ঠা, ত্ববারানী শরীফ, ইবনে কাছীর)

আমরাদ তথা দাঁড়ি মোচ বিহীন সুদর্শন বালকের দিকে শাহ্ওয়াতে সাথে দৃষ্টি দেয়া হারাম
[১০১২]
وقد قال كثير من السلف انهم كانوا ينهون ان يحد الرجل نظره الى الامرد، وقدشدد كثير من ائمة الصوفية فى ذلك، وحرمه طائفة من اهل العلم لما فيه من الافتتان، وشدد اخرون فى ذلك كثيرا جد. وقال ابن ابى الدنيا حدثنا ابوسعيد المدنى حدثنا عمر بن سهل المازنى حدثنى عمر بن محمد بن صهبان عن صفوان بن سليم عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم "كل عين باكية يوم القيامة الا عينا غضت عن محارم الله وعينا سهرت فى سبيل الله وعينا يخرج منها مثل رأس الذباب من خشية الله" عزوجل. (تفسير ابن كثير ج3 ص450، 451، 452)
অর্থঃ- পূর্ববর্তী অনেক আলিম বলেছেন, নিশ্চয়ই তারা পুরুষদেরকে আমরাদ তথা দাঁড়ি-মোচ বিহীন সুন্দর বালকদের প্রতি তাকাতে নিষেধ করেছেন অর্থাৎ শাহ্ওয়াতে সাথে তাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম। ছূফীয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ ব্যাপারে অনেক কঠোরতার সাথে নিষেধ করেছেন। আহ্লে ইল্ম তথা ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের একটা বিরাট দল আমরাদ তথা দাঁড়ি-মোচ বিহীন সুন্দর বালকদের প্রতি তাকানোকে ফিৎনার আশংকায় হারাম ফতওয়া দিয়েছেন। আর অপর কেউ কেউ এটাকে কবীরা গুণাহ্ বলেছেন।
হযরত ইবনু আবীদ দুনইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত আবূ সাঈদ মাদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন উমর বিন সাহ্ল মাযানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত উমর বিন মুহম্মদ বিন ছাবহান রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ছাফওয়ান বিন সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চোখই কাঁদবে। শুধু ঐ চোখ কাঁদবে না, যে চোখ আল্লাহ্ তায়ালার হারামকৃত জিনিষ দেখা থেকে সংযত থেকেছে, আর ঐ সমস্ত চোখ যা আল্লাহ্ তায়ালার পথে রাত্রি জেগেছে এবং ঐ সমস্ত চোখ যে আল্লাহ্ তায়ালার ভয়ে কেঁদে অশ্রু বের করেছে। যদিও চোখের অশ্রু মাছির মাথার সমান হয়।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫০, ৪৫১, ৪৫২ পৃষ্ঠা) [১০১৩-১০১৪]
حرمة النظر الى الامرد اذا خيفت الشهوة. الثانى ان حرمة النظر بالشهوة لايختص بالنساء الاجانب، بل يدخل فيه النظر الى الامرد ايضا، كما يستفاد من عموم النص وكلام الجصاص فى تعميمه لكل مايحرم علينا نظره. قال ابن كثير غى تفسير هذه الاية وقد قال كثير من السلف انهم كانوا ينهون ان يحد الرجال نظره الى الامرد، وقد شدد كثير من ائمة الصوفية فى ذلك، وحرمه طائفة من اهل العلم لم فيه من الافتتان، وشدد اخرون فى ذلك كثيرا جدا.
وقال ابن ابى الدنيا بسنده الى ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم "كل عين باكية يوم القيامة الاعينا غضت عن محارم الله، وعينا سهرت فى سبيل الله، وعينا يخرج منها مثل رأس الذباب من خشية الله". (احكام القران للشفيع اوالتهانوى ج3 ص421-422، تفسير ابن كثير)
অর্থঃ- আমরাদ তথা দাঁড়ি-মোচ বিহীন সুদর্শন বালকের প্রতি দৃষ্টি দেয়া হারাম, যখন শাহ্ওয়াতের ভয় থাকে। শাহ্ওয়াতের সাথে দেখা হারাম, এ হুকুম শুধু পর নারীদের জন্যই খাছ নয়। বরং এ হুকুমের মধ্যে আমরাদের দিকে দৃষ্টি দেওয়াও গণ্য। অর্থাৎ শাহ্ওয়াতের সাথে আমরাদের প্রতি তাকানো হারাম। আম দলীল এবং জাছ্ছাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বক্তব্য থেকে এ ফায়েদা দেয় যে, আমাদের জন্য যে জিনিষের প্রতি দৃষ্টি দেয়া হারাম, সবগুলি থেকে চক্ষু ফিরাতে হবে। হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি এ আয়াত শরীফের তাফসীরে বলেছেন, পূর্ববর্তী অনেক আলিম-উলামা রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেছেন, নিশ্চয়ই তারা পুরুষদেরকে আমরাদ তথা দাঁড়ি-মোছ বিহীন সুন্দর বালকদের প্রতি তাকানো নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ শাহ্ওয়াতের সাথে তাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম। ছূফী-ই-কিরাম ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ ব্যাপারে অনেক কঠোরতার সাথে নিষেধ করেছেন। আহলে ইল্ম তথা ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের একটা বিরাট দল আমরাদ তথা দাঁড়ি-মোচ বিহীন সুন্দর বালকের প্রতি তাকানোকে ফিতনার আশঙ্কায় হারাম ফতওয়া দিয়েছেন। আর অপর কেউ কেউ এটাকে কবীরা গুণাহ্ বলেছেন। হযরত ইবনু আবীদ্ দুনইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তার সনদে হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বলেন, তিনি বলেছেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চোখই কাঁদবে। শুধু ঐ চোখ কাঁদবে না, যে চোখ আল্লাহ্ তায়ালার হারামকৃত জিনিষ দেখা থেকে সংযত থেকেছে, আর ঐ সমস্ত চোখ যা আল্লাহ্ তায়ালার পথে রাত্রি জেগেছে এবং ঐ সমস্ত চোখ যে আল্লাহ্ তায়ালার ভয়ে কেঁদে অশ্রু বের করেছে। যদিও চোখের পানি মাছির মাথার সমান হয়।” (আহকামুল্ কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৪২১, ৪২২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে কাছীর)
[১০১৫-১০৫০]
واما حرمة النظر الى الامرد بشهوة فمما نطق به كثير من السنن الاحاديث، والقياس ايضا بساعده لعلة الشهوة. (التفسير الاحمدية ص 370، احكام القران للشفيع والتهانوى ج3 ص422.)
অর্থঃ- শাহ্ওয়াতের সাথে আমরাদ তথা দাঁড়ি-মোচ বিহীন বালকের প্রতি তাকানো হারাম। এ বিষয়ে অনেক সুন্নাহ এবং হাদীস শরীফ প্রমাণস্বরূপ আছে। আর কিয়াসও বলে যে, শাহ্ওয়াতের সাথে আমরাদের দিকে তাকানো হারাম। (আত্ তাফসীরুল্ আহমদিয়াহ ৩৭০ পৃষ্ঠা, আহকামুল কুরআন লিস্ শফী ওয়াত থানূবী ৩য় জিঃ ৪২২ পৃষ্ঠা)
নিম্ন বর্ণিত তাফসীরের কিতাব গুলোতেও বর্ণনা, ভাষা, ভাব ইত্যাদির তারতম্যে আলোচনা বিদ্যমান আছে, তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে রূহুল্ মায়ানী, তাফসীরে যাদুল্ মাসীর ফী ইল্মিত তাফসীর, তাফসীরে ফতহুল্ ক্বদীর, তাফসীরে কবীর লিল্ ফখরির রাযী, আদ্ দুররুল্ মানছূর লিছ্ ছূয়ূতী, আত্ তাসহীল লি উলূমিত তানযীল, নাযমুদ্ দুরার, তাফসীরুস্ সমরকন্দী, আদ্ দুররুল মাছূন, আল্ মুহাররারুল্ ওয়াজীয, তাফসীরুল্ কাসিমী, তাফসীরে বাইযাবী, হাশিয়াতুশ্ শাইখ যাদাহ্ আলাল বাইযাবী, হাশিয়াতুশ্ শিহাব আলাল বাইযাবী, তাফসীরুল্ কাশ্শাফ, তাফসীরে জালালাইন, হাশিয়াতুছ্ ছাবী আলাল জালালাইন, হাশিয়াতুল্ জামাল্ আলাল জালালাইন, তাফসীরে কামালাইন আলাল্ জালালাইন, তাফসীরে ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তাফসীরে আবিস্ সাউদ, তাফসীরে হাসান বছরী, ছাফওয়াতুত্ তাফাসীর, তাফসীরুল্ মাওয়ারাদী, তাফসীরুল্ লুবাব, তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ্ ছাবূনী, তাফসীরে হক্কানী, তাফসীরে যিয়াউল্ কুরআন, কানযুল ঈমান ওয়া খাযাইনুল্ ইরফান, তাফসীরে আযীযী, তাফসীরে কাদিরী, তাফসীরে আহকামুল্ কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী, তাফসীরে মায়ারিফুল্ কুরআন, তাফহীমুল্ কুরআন ইত্যাদি।
হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত সূরা নূরের৩০ নং আয়াত শরীফ ও তার বিস্তারিত তাফসীর বা ব্যখ্যা দ্বারা যে বিষয় গুলো প্রমাণিত হলো তা হচ্ছে, (১) বেগানা নারী থেকে দৃষ্টিকে নিম্নগামী করা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষের জন্য ফরয, ওয়াজিব। (২) বেগানা নারী বলতে যারা গাইরে মাহরামা অর্থাৎ যাদেরকে বিবাহ করা হালাল কিন্তু দেখা করা হারাম তাদেরকেই বুঝানো হয়েছে। (৩) বেগানা নারীদের দেখা হারাম, নাজায়িয ও কবীরা গুণাহ্। (৪) অনিচ্ছাকৃত প্রথম দৃষ্টি ক্ষমাযোগ্য। ইচ্ছাকৃত প্রথম দৃষ্টিও গুণাহের কারণ। (৫) শাহ্ওয়াতের সাথে আমরাদ তথা দাঁড়ি-মোচবিহীন সুন্দর বালকের প্রতি তাকানো হারাম ও কবীরা গুণাহ্। (৬) বেগানা মহিলা ও আমরাদের দিকে শাহ্ওয়াতের সাথে দৃষ্টি দেয়া যিনা বা ব্যবিচারের অন্তর্ভুক্ত। (৭) দৃষ্টির মাধ্যমে অন্তরে ওয়াস্ওয়াসা পয়দা হয়, আর শেষ পর্যন্ত তা ব্যভিচারের ক্ষেত্র তৈরি করে। (৮) বেগানা নারী ও আমরাদ থেকে দৃষ্টি নিম্নগামী করা, চক্ষু ফিরিয়ে রাখার মধ্যে অন্তরের অনেক পবিত্রতা আছে।
হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত সূরা নূরের ৩১ নং  আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা
[১০৫১]
وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن.
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে।” (সূরা নূর/৩১) মহিলাদের জন্যও বেগানা পুরুষদের দিকে  দৃষ্টি দেয়া হারাম ও কবীরা গুণাহ্   মহিলারা গাইরে মাহরাম তথা যাদের সাথে বিবাহ হালাল কিন্তু দেখা দেয়া হারাম এমন পুরুষদের দিকে দৃষ্টি দিবে না। কেননা তা জায়িয নেই।
হযরত ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতেঃ মহিলা কর্তৃক শাহ্ওয়াতসহ পুরুষদের দিকে দেখা হারাম। আর যদি শাহ্ওয়াত ছাড়াই পুরুষদের দিকে তাকায় তবে জায়িয হবে। তবে এমন অঙ্গের দিকে দৃষ্টি দিতে পারবে যা অন্য পুরুষের জন্য দেখা জায়িয। আর হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে- মহিলা কর্তৃক পুরুষদের দিকে দৃষ্টি দেয়া সম্পূর্ণভাবে হারাম বা নাজায়িয। শাহ্ওয়াত সহ হোক বা না হোক। নিম্নে নারী কর্তৃক গাইরে মাহরামদেরকে দেখা সম্পর্কিত আলোচনা বিশ্ব বিখ্যাত, সর্বজনমান্য তাফসীরের কিতাব থেকে উল্লেখ করা হলোঃ
اخرج ابن ابى حاتم عن مقاتل قال بلغنا ان جابر بن عبد اله حدث ان اسماء بنت مرثد كانت فى نخل لها فجعل النساء يدخلن عليها غير متازرات فيبدو مافى ارجلهن يعنى الخلاخل وتبدوا صدورهن وذواعبهن فقالت اسماء مااقبح هذا فانزل الله فى ذلك وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن اى ليغضضن عما لايحل النظر اليه وهذه الاية تدل على انه لايجوز للمرءة النظر الى الرجل الاجنبى مطلقا وبه قال الشافعى. وقال ابو حنيفة جازلها ان ينظر من الرجل الى ماينظر الرجل اليه اذا امنت الشهوة.
احتج الشافعى بحديث ام سلمة انها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمونة رضى الله عنهما اذا اقبل ابن ام مكتوم فدخل عليه (وذلك بعد ما امرنا بالحجاب) فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه فقلت يا رسول الله اليس هو اعمى لايبصرنا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افعمياوان انتما الستما تبصرانه، رواه احمد وابو داؤد والترمذى، واحتج ابو حنيفة بحديث ابن عباس قال جائت امراة من خشعم عام حجة الوداع قالت يا رسول الله ان فريضة الله على عباده فى الحج ادركت ابى شيخا كبيرا لايستطيع ان يستوى على الراحلة فهل يقضى عنه ان احج عنه قال نعم قال ابن عباس كان الفضل ينظر اليها وتنظر اليه فجعل النبى صلى الله عليه وسلم يصرف وجه الفضل الى الشق الاخر، الحديث.
رواه البحارى ورواه الترمذى من حديث على نحوه وزاد فقال العباس لويت عنق ابن عمك فقال رايت شاب وشابة فلم امن عليهما الشيطان. صححه الترمذى واستنبط ابن القطان من هذا الحديث جواز النظر عند الامن من الفتنة من حيث انه لم يأمرها تبغطية وجهها ولو لم يفهم العباس ان النظر جائزة ما سال ولو لم يكن مافهم لما اقره عليه وبحديث فاطمة بنت قيس ان زوجها طلقها فبت طلاقها فامرها النبى صلى الله عليه وسلم ان تعتد فى بيت ابن ام مكتوم وهذا يدل على جواز نظر المرءة اليلاعمى ونحوه يعنى عند الامن من الشهوة.
مسئلة : ولايجوز للمرءة النظر الى عورة المرءة يعنى تحت السرة الى الركبة ولا للرجل النظر الى عورة الرجل لحديث ابى سعيد قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا ينظر الرجل الى عورة الرجل ولا المرءة الى عورة المرءة. ولا يفضى الرجل الى الرجل فى ثوب واحد ولاتفضى المرءة الى المرءة فى ثوب واحد. رواه مسلم. (التفسير المظهرى ج6 ص492، 493، مسند احمد بن حنبل، بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تسير البارى، مسلم شريف، شرح النووى، شرح الابى والسنوسى، فتح الملهم للشبير احمد عثمانى، فتح الملهم للتقى عثمانى، المفهم، ابو داؤد شريف، يذل المجهود، عون المعبود، شرح بدر الدين العينى، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشاذى، شرح السنة)
অর্থঃ- হযরত ইবনু আবী হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, নিশ্চয়ই হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন। একদা হযরত আসমা বিনতে মারছাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাঁর খেজুর বাগানে বসা ছিলেন। এমন সময় তাঁর কাছে কিছু মহিলা আসলো যারা ইযার পরিধান করা ছিলনা। তাদের পায়ে যা ছিল যেমন ঝুমুর-নুপুর সব খোলা ছিল, তাদের বুকও খোলা ছিল এবং তাদের চুল বা কেশও দেখা যাচ্ছিল। হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, কত নিকৃষ্ট এ আকৃতি। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ পাক আয়াত শরীফ নাযিল করেন, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে।অর্থাৎ তাঁরা যেন দৃষ্টিকে সংযত রাখে যার দিকে দৃষ্টি দেয়া হালাল নয় তার থেকে। এ আয়াত শরীফের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, সাধারণভাবে মহিলাদের জন্য বেগানা পুরুষের দিকে দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই। হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ কথাই বলেছেন। হযরত ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, মহিলার জন্য পুরুষের ঐ সকল অঙ্গ দেখা জায়িয, যা অন্য পুরুষের জন্য জায়িয, যদি মহিলা শাহ্ওয়াত মুক্ত হয়।         হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মতের সমর্থনে হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর হাদীছ পেশ করেন। একদা হযরত উম্মে সালামা এবং হযরত মাইমূনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলেন। এমনি সময় সেখানে উপস্থিত হলেন অন্ধ ছাহাবী হযরত ইবনু উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং তাঁর কাছে প্রবেশ করলেন। (এ ঘটনা আমাদের কাছে পর্দার বিধান নাযিলের পর)। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা দুজন তাঁর থেকে পর্দা কর। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না। উত্তরে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরাও কি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো না? মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, আবূ দাঊদ শরীফ, তিরিমিযী শরীফ।
হযরত ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত একটি হাদীছ শরীফ দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন, বিদায় হজ্বের বছর খাছয়াম গোত্রের একজন মহিলা ছাহাবী এসে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তাঁর বান্দাগণের উপর যে হজ্ব ফরয করেছেন, তা আমার পিতার উপরেও ফরয হয়েছে। কিন্তু তিনি অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়েছেন। কোন বাহনে আরোহী হওয়ার সামর্থও শক্তি তার নেই। এখন আমি যদি তাঁর পক্ষ থেকে হজ্ব সম্পন্ন করি। তাহলে তা কি আদায় হবে? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন হ্যাঁ, হবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন, সেসময় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে আরোহী হযরত ফযল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মহিলাটির দিকে দেখছিলেন আর মহিলাটিও তাঁর দিকে দেখছিলেন। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ফযল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলেন। বুখারীর বর্ণনা। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে এ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন তিরমিযী। তাঁর বর্ণনায় এ শব্দগুলো অতিরিক্ত এসেছে- হযরত আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, আপনি আপনার চাচাতো ভাইয়ের চেহারা ফিরিয়ে দিলেন? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি এক যুবক ও এক যুবতীকে পরস্পরের দিকে দৃষ্টি দিতে দেখেছি। তাদের মধ্যে শয়তানের অনুপ্রবেশ করার আশংকা হয়। তিরমিযী হাদীছটিকে ছহীহ্ বলেছেন। এ হাদীছ শরীফ থেকে হযরত ইবনে কাত্তান রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমাণ করেছেন যে, ফিৎনার আশংকা না থাকলে নারীরা পুরুষের দিকে দৃষ্টি দিতে পারে। কেননা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাচাতো ভাইয়ের মুখকে ঘুরায়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু ঐ রমনীকে কিছুই বলেননি। হযরত ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যা বুঝেছিলেন, তাই প্রকাশ করেছেন। আর তাঁর ধারণা সঠিক না হলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সাবধান করে দিতেন। 
হযরত ফাতিমা বিনতে কাইস রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর হাদীছে রয়েছে। যখন তাঁর স্বামী তাঁকে তালাক দেন, তখন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ইদ্দত পালন করতে বলেছিলেন হযরত ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ঘরে। এ হাদীছ শরীফখানার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, অন্ধব্যক্তির দিকে মহিলাদের দৃষ্টি দেয়া জায়িয। অর্থাৎ যদি শাহ্ওয়াত থেকে নিরাপদ থাকে তবে জায়িয হবে অন্যথায় জায়িয হবেনা।
মাসয়ালাঃ মহিলা কর্তৃক মহিলাদের নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংগ দেখা জায়িয নেই। তেমনিভাবে পুরুষ কর্তৃক পুরুষের নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত অংগ দেখা জায়িয নেই। হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পুরুষ পুরুষের ছতরের দিকে এবং নারী নারীর ছতরের দিকে দৃষ্টি দিবে না। পুরুষ পুরুষের সাথে বিবস্ত্র হয়ে একই চাদরের নিচে শয়ন করতে পারবেনা এবং নারী অপর নারীর সাথে বিবস্ত্র হয়ে একই চাদরের নিচে শয়ন করতে পারবে না। মুসলিম বর্ণনা করেছেন। (আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯২, ৩৯৩ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল্ কারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, ফতহুল্ মুলহিম লিত্ তক্বী উসমানী, আল্ মুফহিম, আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল্ মাবূদ, শরহে বদরুদ্দীন আইনী, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, শরহুস্ সুন্নাহ) [১০৭৪-১০৯৬]
فقوله تعالى : (وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن) اى عما حرم الله عليهن من النظر الى غير ازواجهن، ولهذا ذهب كثير من العلماء الى أنه لايجوز للمرأة النظر الى الرجال الاجانب بشهوة ولا بغير شهوة اصلا.
واحتج كثير منهم بما رواه ابو داؤد والترمذى من حديث الزهرى عن نبهان مولى ام سلمة انه حدثه ان ام سلمة حدثته انها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمونه قالت فبينما نحن عنده اقبل ابن ام مكتوم فدخل عليه وذلك بعد ما امرنا بالحجاب فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم "احتجبا منه" فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم أليس هو اعمى لا يبصرنا ولايعرفنا؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم "او عمياوان انتما؟ ألستما تبصرانه" ثم قال الترمذى هذا حديث حسن صحيح. وذهب اخرون من العلماء الى جواز نظر الى الأجانب بغير شهوة كما ثبت فى الصحيح ان رسول الله صلى الله عليه وسلم جعل ينظر الى الجبشة وهم يلعبون بحرابهم يوم العيد فى المسجد وعائشة ام المؤمنين تنظر اليهم من ورائه وهو يسترها منهم حتى ملت ورجعت. (تفسير ابن كثير ج3 ص453، بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى، مسلم شريف، شرح النووى، شرح الابى والسنوسى، فتح الملهم للشبير احمد عثمانى، فتح الملهم للتقى عثمانى، المفهم ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، شرح بدر الدين العينى، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشاذى، شرح السنة، احكام القران للشفيع والتهانوى ج3 ص422)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ (হে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষুকে নিচু করে) অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক তাদের জন্য তাদের স্বামী ছাড়া অন্য কারো প্রতি তাকানোকে হারাম করেছেন। এজন্য অধিকাংশ উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন মহিলার জন্য বেগানা পুরুষদের প্রতি শাহওয়াত বেগানা সাথে তাকানো জায়িয নেই। এমনকি শাহ্ওয়াত ছাড়াও মূলত; তাকানো জায়িয নেই। তাদের অধিকাংশ উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ হাদীছ শরীফ দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। যা হযরত আবূ দাউদ, তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা বর্ণনা করেছেন। ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত নাবহান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন যে, নিশ্চয়ই হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেছেন যে, তিনি এবং হযরত মাইমূনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা একদা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট বসা ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে ছিলাম, এমনি সময়ে হযরত ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমাদের মাঝে আসলেন, এটা আমাদের কাছে পর্দার হুকুম আসার পরের ঘটনা। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমরা তার থেকে পর্দা কর।আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাননা এবং পরিচয় করতে পারেন না? হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমরা দুজনও কি অন্ধ? যে তোমরা তাঁকে দেখতে পাচ্ছো না?” হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, এ হাদীছ শরীফ খানা হাসান ছহীহ্।
অপর একদল উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম শাহ্ওয়াত ছাড়া মহিলা কর্তৃক পর পুরুষের প্রতি দৃষ্টি দেয়াকে জায়িয বলেছেন। যেমন ছহীহ্ বুখারী এবং মুসলিম শরীফ থেকে তাঁরা প্রমাণ পেশ করেন। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবশীদেরকে দেখছিলেন। যখন তারা ঈদের দিনে মসজিদের সামনে অস্ত্র প্রদর্শনী দেখাচ্ছিলো। হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে দাঁড়িয়ে তাদের দিকে দেখছিলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবশীদের থেকে তাঁকে-আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে আড়ালে রেখেছিলেন। এমনকি তিনি ক্লান্ত হয়ে ফিরে এসেছিলেন। (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫৩ পষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, ফতহুল্ মুলহিম লিত্ তক্বী উছমানী, আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল মাবূদ, শরহু আবী দাউদ লি বদরুদ্দীন আইনী, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, শরহুস্ সুন্নাহ, মায়ারিফুস্ সুনান, আহকামুল্ কুরআন্ লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৪২২ পৃষ্ঠা)
 [১০৯৭-১০৯৯]
قوله عزوجل (وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن) عما لايحل. (تفسير البغوى ج5 ص69، تفسير الخازن ج5 ص69، تفسير مدارك التنزيل ج3 ص326)
অর্থঃ- আল্লাহ্ আয্যা ওয়া জাল্লা-এর বাণী (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিম্নগামী করে রাখে) যারা তাদের জন্য হালাল নয়, অর্থাৎ গাইরে মাহরাম তথা পরপুরুষদেরকে দেখা তাদের জন্য হালাল নয় বা জায়িয নয়। (তাফসীরুল্ বাগবী ৫ম জিঃ ৬৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ খাযিন ৫ম জিঃ ৬৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল ৩য় জিঃ ৩২৬ পৃষ্ঠা)
[১১০০]
فامر الله سبحانه وتعالى المؤمنين والمؤمنات يغض الابصار عما لايحل، فلا يحل للرجل ان ينظر الى المرأة ولا المرأة الى الرجل. (تفسير القرطبى ج6 ص227)
অর্থঃ- আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা মুমিন পুরুষ ও মহিলাগণকে যা হালাল নয় এমন কিছু থেকে চক্ষুকে ফিরিয়ে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। কোন পুরুষের জন্য বেগানা নারীর প্রতি তাকানো হালাল বা জায়িয নয়। আর কোন মহিলার জন্য পরপুরুষের দিকে তাকানোও জায়িয বা হালাল নয়।” (তাফসীরুল্ কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ২২৭ পৃষ্ঠা)
[১১০১]
قوله تعالى : (يغضضن من ابصارهن). وذلك حرام لان النظر الى ما لايحل شرعا يسمى زنا. قال ابو هريرة سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان الله اذا كتب على ابن ادم حظه من الزنا ادرك ذلك لامحالة، فالغينان تزنيان وزناهما النظر، واليدان تزنيان وزناهما البطش، والرجلان تزنيان وزناهما المشى. والنفس تمنى وتشتهى، والفرج يصدق ذلك اويكذبه. وكما لايحل للرجل ان ينظر الى المرأة فكذلك لايحل للمرأة ان تنظر الى الرجل. (احكام القران لابن العربى ج3 ص1367)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ (তারা যেন তাদের চক্ষুকে নিচু করে) নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি তাকানো হারাম। কেননা, শরীয়তে যা হালাল বা জায়িয নয় এমন কিছুর প্রতি তাকানোকেই বলা হয় যিনা। হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছ থেকে শুনেছি। তিনি বলেছেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক প্রত্যেক আদম সন্তানের জন্য যিনার একটি অংশ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যা সে পাবে, তাতে ব্যতিক্রম হবেনা। চোখের যিনা হচ্ছে হারাম জিনিষের প্রতি তাকানো, হাতদ্বয়ের যিনা হচ্ছে ধরা, পাঁ দ্বয়ের যিনা হচ্ছে ধাবিত হওয়া, নফ্স আকাংখা ও লোভ করে, আর লজ্জাস্থান তা সত্যে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।
এজন্য পুরুষের জন্য পর নারীর প্রতি তাকানো হালাল নয়। অনুরূপভাবে কোন নারীর জন্য পর পুরুষের প্রতি তাকানোও হালাল বা জায়িয নয়। (আহকামুল কুরআন লিইবনিল্ আরাবী ৩য় জিঃ ১৩৬৭ পৃষ্ঠা)
[১১০২-১১০৭]
(وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن) فلا ينظرن الى مالايحل لهن النظر اليه كالعورات من الرجال والنساء وهى مابين السرة والركبة. وفى الزواجر لابن حجر المكى كما يحرم نطر الرجل للمرأة يحرم نظرها اليه ولوبلا شهوة ولاخوف فتنة. (تفسير روح المعانى ج10 ص140، الزواجر لابن حجر المكى، تفسير البيضاوى ج3 ص78، شيخ زاده، حاشية الشهاب. احكام القران للشفيع والتهانوى ج3 ص423)
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি মুমিনা মহিলাগণকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিচু করে রাখে) তারা সেদিকে বা তাদের দিকে দেখবে না যাদের দিকে দেখা হালাল নয়। যেমন পুরুষ এবং মহিলাগণের আওরাত তথা ছতরের দিকে, আর তাহচ্ছে নাভির নিচ থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত স্থান।
হযরত ইবনে হাজার মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যাওয়াজিরনামক কিতাবে আছে, পুরুষ বেগানা মহিলার দিকে আর বেগানা মহিলা পুরুষের দিকে তাকানো হারাম, যদিও শাহ্ওয়াতে সহিত না হয় এবং ফিৎনার আশংখা না থাকে। (তাফসীরে রুহুল্ মায়ানী ১০ম জিঃ ১৪০ পৃষ্ঠা, আল্ যাওয়াজির লিইবনে হাজার মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তাফসীরুল্ বাইযাবী ৩য় জিঃ ৭৮ পৃষ্ঠা, শাইখ যাদাহ, হাশিয়াতুশ্ শিহাব, আহকামুল্ কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানবী ৩য় জিঃ ৪২৩ পৃষ্ঠা)
হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত সূরা নূরের ৩১ নং আয়াত শরীফ ও তার ব্যাখ্যা দ্বারা যে সমস্ত মাসয়ালা বের হলো, তাহচ্ছে- (১) মহিলারা ঘরে অথবা বাইরে কোন অবস্থাতেই পর পুরুষের দিকে দৃষ্টি দিবে না। কেননা এটা হারাম। (২) হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে মহিলারা পরপুরুষদেরকে কোন অবস্থাতেই দেখতে পারবেনা। শাহওয়াত বা কামভাবের সহিত হোক, অথবা শাহ্ওয়াত ছাড়াই হোক। সর্বাবস্থায় দেখা হারাম বা নাজায়িয। (৩) হযরত ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে, মহিলা কর্তৃক পুরুষদের দিকে শাহ্ওয়াতের সহিত দেখা হারাম। কিন্তু শাহ্ওয়াত মুক্ত হয়ে পুরুষদের ঐ অঙ্গ দেখতে পারে যা দেখা অন্য পুরুষের জন্য জায়িয। যেমন নাভির নিচ থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গ ব্যতিত। (৪) পুরুষদের জন্য বেগানা নারীর মাথা থেকে পা পর্যন্ত যে কোন  অঙ্গই দেখা নাজায়িয বা হারাম। (৫) নিষিদ্ধ জিনিষের দিকে দৃষ্টিপাত করাও যিনা বা ব্যভিচারের অন্তর্ভুক্ত। (৬) মহিলাদের অপর মহিলার নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত স্থানের দিকে তাকানো হারাম। (৭) পুরুষ কর্তৃক অপর পুরুষেরও নাভির নিচ থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত করা হারাম বা নাজায়িয। (৮) দুজন পুরুষ বস্ত্রহীন হয়ে একই চাদরের নিচে শয়ন করা জায়িয নেই। (৯) দুজন স্ত্রীলোকও বস্ত্রহীন হয়ে একই চাদরের নিচে শয়ন করা জায়িয নেই। (১০) চক্ষুকে নিষিদ্ধ জিনিষ থেকে সংযত করার মধ্যে পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্যই বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ পবিত্রতা বিদ্যমান রয়েছে।

0 Comments: