৩. নং- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া


কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান বা শবে বরাত ও তার সংশ্লিষ্ট

বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ


সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফর, শিরক ও বিদয়াতের মুলোপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাব যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থা মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয় যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।
উলামায়ে ছূরা শবে বরাতসম্পর্কে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। উলামায়ে ছূবা ধর্মব্যবসায়ীরা বলে ও প্রচার করে থাকে যে, শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথাও  নেই, শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয ও হারাম। নাঊযুবিল্লাহ!
তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ইতিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আমালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীন হচ্ছে। কেননা হাদীছ শরীফে শবে বরাতের অশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المباركة وليلة العيدين
অর্থ: নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الامن مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.
অর্থ: হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শাবানের পনের তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থা রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)
এ ধরনের আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে, যাতে শবে বরাত-এর ফযীলতের কথা বলা হয়েছে অর্থা যারা শবে বরাত পালন করবে তারা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের উভয়েরই খাছ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি লাভ করবে।
অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে ছূ"দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ শবে বরাতপালন থেকে বিরত থেকে অশেষ ফযীলত থেকে মাহরূম হবে। যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
কাজেই যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী, তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থা শবে বরাতসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-উনার রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান বা শবে বরাত’-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি প্রকাশ করা হলো।

কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই শবে বরাতপ্রমাণিত

শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে স্বয়ং আল্লাহ পাক স্বীয় কুরআন শরীফ-এ সূরা আদ দোখানএর ৩-৪ নম্বর আয়াত শরীফে ليلة المبارك (বরকত পূর্ণ রাত) হিসেবে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
انا انزلناه فى ليلة مباركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থ: নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন শরীফ) এক রবকতপূর্ণ রাত্রিতে নাযিল করেছি। অর্থা নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী, ওই রাত্রিতে সমস্ত হিকমতপুর্ণ কাজসমূহের বণ্টন করা হয় তথা বণ্টনের ফায়সালা করা হয়।” (সূরা আদ দোখান-৩-৪)


উক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত লাইলাতুম মুবারাকাহদ্বারা অনুসরনীয় মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা শবে বরাতকেই বুঝিয়েছেন

পূর্ব প্রকাশিতের পর

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত ও সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর, তাফসীরুল খাযিন এর ৪র্থ খ-ের ১১২ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
(৮-১১)
(انا انزلناه فى ليلة مباركة).. وقيل هى ليلة النصف من شعبان عن عائشة عليها السلام قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله تبارك وتعالى ينزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب اخرجه الترمذى .. (فيها) اى فى تلك الليلة المباركة  (يفرق) اى يفصل (كل أمر حكيم) وقيل هى ليلة النصف من شعبان يبرم فيها أمر السنة وينسخ الاحياء من الاموات وروى البغوى بسنده ان النبى صلى الله عليه وسلم قال تقطع الاجال من شعبان الى شعبان حتى ان الرجل لينكح ويولد له وقد خرج اسمه فى الموتى وعن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ان الله يقضى الاقضية فى ليلة النصف من شعبان ويسلمها الى اربابها فى ليلة القدر.
অর্থ: নিশ্চয়ই আমি এক বরকতময় রাত্রিতে উহা অর্থা পবিত্র কুরআন শরীফ অবতীর্ণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শাবান তথা ১৫ই শাবানের রাতকে (শবে বরাত) উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক অর্ধ শাবানের রাতে (১৫ই শাবান রাতে) পৃথিবীর নিকটতম আকাশে অবতরণ করেন, অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই রাতে বনী ক্বলব গোত্রের বকরীর পশমের সংখ্যা পরিমাণ অধিক সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন। এই হাদীছ শরীফখানা হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি তিনি বর্ণনা করেন।
পরবর্তী আয়াত শরীফ-এ বলা হয়েছে ওই মুবারকময় রাতে প্রত্যেক হিকমতপূর্ণ বিষয়ের ফায়ছালা তথা সিদ্ধান্ত করা হয়। আর ফায়ছালার তথা তালিকা প্রস্তুত করার রাত দ্বারা বুঝানো হয়েছে অর্ধ শাবানের রাত তথা ১৫ই শাবানের রাত (শবে বরাতকে)। আর এই শবে বরাতে আগামী এক বসরের যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্যলিপি প্রস্তুত করা হয় এবং জীবিত ও মৃত্যুদের তালিকাও ওই রাতে প্রস্তুত করা হয়। কেননা এ উক্তির সমর্থনে প্রখ্যাত ইমাম ও মুজতাহিদ হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার তাফসীরে বাগবীএর মধ্যে পূর্ণ সনদের মাধ্যমে হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছেন যে, নিশ্চয়ই হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, এক শাবান তথা মধ্য শাবান থেকে পরবর্তী মধ্য শাবান পর্যন্ত মৃতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এবং এমনকি একজন ব্যক্তি কখন বিবাহ করবে তার কি সন্তান হবে, তার সেই বসরে কখন মৃত্যুবরণ করবে তার নামের তালিকাও প্রস্তুত করা হয় শবে বরাতে। এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, অর্ধ শাবানের রাতে তথা ১৫ই শাবানের রাতে (শবে বরাতে) মহান আল্লাহ পাক তিনি যাবতীয় বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন। আর ক্বদর রাতে (শবে ক্বদরে) সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন তথা কার্যকর করার জন্য তালিকা অর্পণ করেন বাস্তবায়নকারী ফেরেশতার হাতে। (তাফসীরে মাদারিক)
উল্লেখ্য যে, যদিও কেউ কেউ ليلة مباركة দ্বারা ليلة القدر বুঝে থাকেন মূলত তা নয়, বরং ليلة القدر দ্বারা শবে বরাতের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন বা কার্যকরী করার রাতকে বুঝানো হয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে সূরা ক্বদরের তাফসীরে, বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর, তাফসীরে খাযিন ৪র্থ খ-ের ৩৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(১২)
فقيل له (للحسين بن الفضل) فما معنى ليلة القدر قال سوق المقادير الى المواقيت وتنفيذ القضاء المقدر.
অর্থ: হযরত হুসাইন ইবনে ফযল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হল লাইলাতুল ক্বদর’-এর অর্থ কি? তিনি উত্তরে বলেন, পূর্বে স্থিরীকৃত সিদ্ধান্তসমূহ নির্ধারিত সময়ের দিকে পরিচালনা করা এবং পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্তের যথার্থ বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে ক্বদর রাতের অর্থ।
কাজেই উল্লিখিত দলীলের ভিত্তিতে সুস্পষ্ট হয়ে উঠল যে, অর্ধ শাবানের রাত হচ্ছে ليلة التجويز তথা বণ্টনের বা সিদ্ধান্তের রাত। আর লাইলাতুল ক্বদর হচ্ছে ليلة التنفيذ তথা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের রাত। ১৫ই শাবানের রাত তথা শবে বরাত সম্পর্কে বিশ্ব বিখ্যাত ও সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর তাফসীরুল বাগবী”-এর ৬ষ্ঠ খ-ের ১৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(১৩)
(انا انزلناه فى ليلة المباركة) ... وقال اخرون هى ليلة النصف من شعبان اخبرنا عبد الواحد المليحى انا ابو منصور السمعانى ثنا ابو جعفر الريانى ثنا حميد بن زنجوية ثنا الا صبغ بن الفرج اخبرنى ابن وهب اخبرنى عمرو بن الحارث ان عبد الملك بن عبد الملك حدثه ان ابن ابى ذئب حدثه عن القاسم بن محمد عن ابيه او عمه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ينزل الله جل ثناءه ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لكل نفس الا انسانا فى قلبه شحناء او مشركا بالله (فيها) اى فى الليلة المباركة (يفرق) اى يفصل (كل امر حكيم)
অর্থ: নিশ্চয়ই আমি উহা অর্থা পবিত্র কুরআন শরীফ এক বরকতময় রাত্রিতে নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অন্যান্য অসংখ্য, মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা বলেন, লাইলাইতুম মুবারাকা তথা বরকতপূর্ণ রাত হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত) এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল ওয়াহিদ মালীহী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আবু মানছুর সাময়ানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন, হযরত আবু জাফর রাইইয়ানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত হুমাইদী ইবনে যানজুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আছবাগ ইবনে ফারজ রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেন ইবনে ওহাব, তিনি বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আমর ইবনে হারিছ, অবশ্য যা বর্ণনা করেছেন আব্দুল মালেক ইবনে আব্দুল মালেক। তিনি ইবনে আবু যিব, তিনি কাসিম ইবনে মুহম্মদ উনার থেকে, তিনি উনার পিতা থেকে কিংবা চাচা থেকে, তিনি হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক অর্ধ শাবানের তথা ১৫ ই শাবানের রাতে (শবে বরাতে) দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। অতঃপর সমস্ত ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা করেন, তবে ওই সমস্ত ব্যক্তিদের ক্ষমা করেন না- যাদের অন্তরে হিংসা রয়েছে এবং যারা আল্লাহ পাক-উনার সাথে শরীক করেছে। অর্থা হিংসুক ও মুশরিক ব্যতীত সবাইকে শবে বরাতে ক্ষমা করে থাকেন।
অতঃপর পরবর্তী আয়াত শরীফে উল্লেখ করেছেন-
(فيها) اى فى الليلة المباركة (يفرق) اى يفصل كل امر حكيم.
অর্থ: ওই মুবারক রাতে তথা শবে বরাতে ভাগ্য বণ্টন হয় অর্থা যাবতীয় হিকমতপূর্ণ বিষয়ের ফায়সালা করা হয়।
এখানে-
فيها يفرق كل امر حكيم
(প্রত্যেক হিকমতপূর্ণ বিষয়ের ফায়ছালা করা হয় ওই মুবারক রাতে)
এই আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর তাফসীরে বাগবী এর ৬ষ্ঠ খ-ের ১৪৩ পৃষ্ঠায় একইভাবে শবে বরাতের রাতকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন উল্লেখ আছে-
(১৪)
وقال عكرمة رضى الله تعالى عنه هى ليلة النصف من شعبان يبرم فيها امر السنة وتنسخ الاحياء من الاموات فلايزاد فيهم احد ولا ينقص منهم احد. اخبرنا عبد الله الواحد المليحى انا ابو منصور السمعانى ثنا ابو جعفر الريانى ثنا حميد بن زنجوية ثنا عبد الله بن صالح حدثنا الليث حدثنى عقيل عن ابن شهاب اخبرنى عثمان بن المغيرة بن الاخنس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال تقطع الاجال من شعبان الى شعبان حتى ان الرجل لينكح ويولد له ولقد خرج اسمه فى الموتى وروى ابو الضحى عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ان الله تعالى يقضى الاقضية فى ليلة النصف من شعبان ويسلمها الى اربابها فى ليلة القدر.
অর্থ: হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, লাইলাতুম মুবারাকা এবং ফায়ছালার রাত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শাবান এর (১৫ই-শাবানের)  রাত তথা শবে বরাত। আর এই শবে বরাতের রাতে সামনের এক বসরের যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্যলিপি প্রস্তুত করা হয়। এবং জীবিত ও মৃত্যুদের ভাগ্য তালিকাও প্রস্তুত করা হয় এই শবে বরাতে। অতঃপর ওই ভাগ্য তালিকা থেকে কোন কম বেশি তথা হেরফের করা হয় না। আর এ প্রসঙ্গে (সনদসহ) হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল ওয়াহিদ মুলাইহি রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আবু মানছুর আস সাময়ানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত হুমাইদী ইবনে যানজুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ছলেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেন, হযরত আল লাইছ রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেন হযরত আক্বিল রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনে শিহাব থেকে। তিনি বলেন, আমার কাছে হযরত উসমান ইবনে মুহম্মদ ইবনে মুগীরাহ ইবনে আখনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, এক অর্ধ শাবান থেকে পরবর্তী অর্ধ শাবান পর্যন্ত সমস্ত মৃতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এমনকি লোকেরা সেই বসর কখন বিবাহ করবে এবং তার কি সন্তান জন্মগ্রহণ করবে সেই বসর কোন সময়ে ওই সন্তানের মৃত্যু হবে সে তালিকাও প্রস্তুত করা হয় অর্ধ শাবানের রাতে তথা শবে বরাতে।
কেননা এ অর্ধশাবানে তথা ১৫ই শাবানের রাত সম্পর্কে হযরত আবুদ্বহা রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ১৫ই শাবানের রাতে তথা শবে বরাতে যাবতীয় বিষয়ের সিদ্ধান্ত প্রস্তুত করেন তথা ভাগ্যের তালিকা প্রস্তুত করেন। আর ক্বদরের রাতে তথা শবে ক্বদরে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্য ভাগ্য লিপি অর্পণ করেন বাস্তবায়নকারীদের (ফেরেশতা উনাদের) হাতে।
ইহা ছাড়া আরো উল্লেখ্য যে, লাইলাতুল ক্বদর দ্বারা যে (ليلة التنفيذ) লাইলাতুত তানফীয তথা পূর্ব সিদ্ধান্ত বা ভাগ্য বাস্তবায়ন করার রাতকে বুঝানো হয়েছে। এর মাধ্যমেও প্রমাণিত হয় যে, পূর্ব সিদ্ধান্তের রাতই হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত তথা শবে বরাত। (তাফসীরে বাগবী, (সূরা ক্বদর), হাশিয়ায়ে খাযেন ৭/২৭৪ পৃষ্ঠা) এ প্রসঙ্গে তাফসীরে নাযমুদ দুরারকিতাবের ৭ম খ-ের ৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(১৫)
او ليلة النصف من شعبان
অর্থ: লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত তথা ১৫ই শাবানের রাত।
উক্ত তাফসীরে ৭ম খ-ের ৬৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
(১৬)
قال وروى ابو الضحى عنه ان الله تعالى يقضى الاقضية فى ليلة النصف من شعبان فيسلمها الى اربابها فى ليلة القدر وقال الكرمانى فيسلمها الى اربابها وعمالها من الملائكة ليلة السابع والعشرين من شهر رمضان.
অর্থ: হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন- হযরত আবু দ্বহা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে তথা শবে বরাতে যাবতীয় বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। আর ক্বদরের রাতে তথা শবে ক্বদরে সেই সিদ্ধান্তকে কার্যকরী তথা বাস্তবায়ন করার জন্য তালিকা পেশ করেন বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের হাতে। হযরত ইমাম কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পূর্ব সিদ্ধান্ত কার্যকরী করার জন্য বাস্তবায়নকারী ফেরেশতা উনাদের হাতে যেই রাত্রিতে তালিকা পেশ করা হয়, সেই রাত্রিটি হচ্ছে রমাদ্বান মাসের ২৭ তারিখের রাত।
এ প্রসঙ্গে তাফসীর জগতের সুবিখ্যাত তাফসীর তাফসীরে কুরতুবী”-এর ৮ম খ-ের ১৬তম জুযের ১২৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
(১৭)
ليلة النصف من شعبان ولها اربعة اسماء الليلة المباركة وليلة البراءة وليلة الصك وليلة القدر ووصفها بالبركة لما ينزل الله فيها على عباده من البركات والخيرات والثواب
অর্থ: লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শাবান তথা ১৫ই শাবানের রাতকে বুঝানো হয়েছে। এই ১৫ই শাবানের রাত তথা শবে বরাতের চারটি নাম রয়েছে, যেমন ১. লাইলাতুম মুবারাকা বা বরকতপূর্ণ রাত ২. লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত ৩. লাইলাতুছ ছক্কি বা ক্ষমা স্বীকৃতিদানের রাত ৪. লাইলাতুল ক্বদর বা ভাগ্য রজনী। আর শবে বরাতকে বরকতের সঙ্গে এই জন্য সম্বন্ধ করা হয়েছে যেহেতু আল্লাহ পাক ওই শবে বরাতে বান্দাদের প্রতি বরকত, কল্যাণ, এবং পুণ্যময় দানের জন্য দুনিয়ায় কুদরতীভাবে নেমে আসেন অর্থা খাছ রহমত নাযিল করেন।
উক্ত কিতাবের ১২৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
(১৮)
وقال عكرمة  رضى الله تعالى عنه الليلة المباركة ههنا ليلة النصف من شعبان
অর্থ: বিখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা এখানে অর্ধ শাবান তথা ১৫ই শাবানের রাতকে অর্থা শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে।

(অসমাপ্ত)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন
আবা-১৯৭

0 Comments: