প্রাণীর আকৃতি তৈরি করা (মূর্তি, ভাস্কর্য, ছবি) হারাম হওয়ার বিষয়ে রাজারবাগ শরীফের ফতওয়া

 


প্রাণীর আকৃতি তৈরি করা (মূর্তি, ভাস্কর্য, ছবি) হারাম হওয়ার বিষয়ে রাজারবাগ শরীফের ফতওয়া

প্রাণীর আকৃতি তৈরি করা (প্রাণীর আকৃতি তৈরি করা (মূর্তি, ভাস্কর্য, ছবি) হারাম হওয়ার বিষয়ে রাজারবাগ শরীফের ফতওয়া

) হারাম হওয়ার বিষয়ে রাজারবাগ শরীফের ফতওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমান চলমান পরিস্থিতিতে প্রাণীর আকৃতি তৈরি করা (মূর্তি, ভাস্কর্য, ছবি) হারাম হওয়ার বিষয়ে ফতওয়া প্রকাশ করা হয় ঢাকা রাজারবাগ দরবার শরীফ থেকে । ফতোয়ার শুরুতেই বলা হয় আজ থেকে ২৮ বছর আগেই রাজারবাগ শরীফ থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা “আল বাইয়্যিনাত শরীফে” ৩৫৩ টি দলীল দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছিলো প্রানীর ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি হারাম ও নাজায়িয। পরবর্তীতে এর ধারাবাহিকতায় ৭০ টি সংখ্যাব্যাপী ১১৬০ টি দলীল দিয়ে বিস্তারিত ফতোয়া প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সে সময় বর্তমানে যারা ছবি মূর্তি, ভাস্কর্য ইস্যুতে প্রতিবাদ করেছে তারা সে ফতোয়ার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে নিজেরাই ছবি, ভাস্কর্যের বিষয়ে নমনীয় ছিলো। তারা যতি তখন ফতোয়া মেনে নিতো তাহলে বর্তমানে এমন ইস্যু তৈরীই হতো না বলে রাজারবাগ থেকে প্রকাশিত ফতোয়ায় উল্লেখ করা হয়।

পাঠকদের জন্য সম্পূর্ণ ফতোয়াটি উল্লেখ করা হলো-

বর্তমান সময়ে ছবি মূর্তি, ভাস্কর্য নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য শুনা যাচ্ছে। কেউ ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য হালাল বানানোর জন্যে মনগড়া দলীল দেয়ার চেষ্টা করছে। আবার একপক্ষ সেটা খন্ড করার জন্য দলীল উপস্থাপন করছে। যারা খন্ডন করার জন্য দলীল উপস্থাপন করছে তাদের পূর্বসূরি এবং তারা নিজেরাও হারাম ছবি, ভিডিও এর মধ্যে মশগুল আছে। যে কারণে তাদের কথার কোন ক্রিয়া হচ্ছে না সমাজে। আজ থেকে প্রায় ২৮ বছর আগে ১৯৯২ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা রাজারবাগ শরীফ থেকে প্রকাশিত মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফের ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম তিনটি সংখ্যায় ৩৫৩টি দলীল দ্বারা প্রাণীর ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হারাম বলে ফতওয়া প্রকাশ করা হয়েছিলো, তখন কিন্তু (যারা বর্তমানে ছবি মূর্তি, ভাস্কর্যের বিপক্ষে) তারা রাজারবাগ শরীফ থেকে প্রকাশিত উক্ত ফতওয়া না মেনে দুনিয়াবী স্বার্থ হাছিলের জন্য রাজারবাগ শরীফ উনার বিরোধিতা করেছিলো। যদি তারা তখন রাজারবাগ শরীফ থেকে প্রকাশিত ফতওয়া মেনে নিতো এবং নিজেরাও ছবি তোলা ও ভিডিও করা থেকে বিরত থাকতো তাহলে আজকে এ ফিতনার সূত্রপাতই হতো না। যামানার যিনি মুজাদ্দিদ হন উনার তাজদীদ না মেনে কখনো দ্বীন ইসলাম উপর থাকা যায় না, এটার স্পষ্ট প্রমাণ ঢাকা রাজারবাগ শরীফ থেকে প্রকাশিত ফতওয়া না মেনে কালক্ষেপন করা।


তাছাড়া রাজারবাগ শরীফ থেকে পুনরায় মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফে ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, ভাস্কর্য, মূর্তি তৈরীর বিষয়ে ১৬৮ থেকে ২৩৭ পর্যন্ত মোট ৭০টি সংখ্যায় প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠাব্যাপী পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ উনার অসংখ্য তাফসীর এবং প্রায় ৩০ খানার অধিক হাদীছ শরীফ উনার কিতাব এবং সংশ্লিষ্ট অসংখ্য শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ এবং অনুসরণীয় ইমাম মুজতাাহিদ ও উলামায়ে কিরাম উনাদের ফতওয়া থেকে ১১৬০টি দলীল পেশ করা হয়েছে যাতে কারো পক্ষে এ বিষয়ে কোনরূপ সংশয় সন্দেহ না থাকে। অথচ উক্ত দলীলসমূহ সম্পূর্ণরূপে পাশ কাটিয়ে দুনিয়াবী স্বার্থ ও খ্যাতি হাছিলের মোহে পড়ে নিজেরাও আজ লাঞ্ছিত এবং মানুষকেও করেছে বিভ্রান্ত। সর্বোপরি আজ তারা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ উনার মহাসম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ফতওয়া মেনে নিয়ে ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্যের পক্ষের লোকদের বিরোধিতা করছে, যেটা প্রশংসার দাবী রাখে। আমরা আশা করবো, তারা সর্বপ্রকার ছবি তোলা ও ভিডিও করা থেকে বিরত হয়ে পরিপূর্ণ শরীয়তের আমল করবে এবং সাধারণ জনগণকে সেলফী তোলা, ছবি তোলা, ভিডিও করা, মূতির্- ভাস্কর্য বানানোর ভয়ানক পরিণতির জন্য সর্তক করবে।


প্রাণীর ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা:


বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত “সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান” এর ৪৭৩ পৃষ্ঠায় মূর্তি শব্দের শাব্দিক অর্থ লিখা হয়েছে- দেহ, আকৃতি, রূপ, প্রতিমা।
ভাস্কর্য শব্দের আভিধানিক পরিচয়:

বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান” এর ৪৩৭ পৃষ্ঠায় ভাস্কর্র্য শব্দের শাব্দিক অর্থ লিখা হয়েছে- প্রস্তরাদি খোদাই করে বা তা দিয়ে মূর্তি নির্মাণের কাজ, sculpture ।


প্রতিমা শব্দের আভিধানিক পরিচয়:
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত “সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান” এর ৩৬৪ পৃষ্ঠায় প্রতিমা শব্দের শাব্দিক অর্থ লিখা হয়েছে- প্রতিকৃতি, প্রতিমূর্তি, হাতে তৈরী মাটির কল্পিত মূর্তি, দেবমূর্তি, দেববিগ্রহ।


উপরোক্ত মূর্তি, ভাস্কর্য ও প্রতিমা শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যে শব্দসমূহ ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলো হলো- اَصْنَامٌ، تَصْوِيْرٌ تَـمَاثِيْلٌ، الْأَوْثَانِ، أَوْثَانًا، اَلْأَنْصَابُ،


নিম্নে শব্দসমূহ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো-
اَصْنَامٌ (‘আছনামুন’) শব্দের অর্থ হলো- মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, দুর্গন্ধ, অপবিত্র।
تَـمَاثِيْلٌ (‘তামাছীলুন’) শব্দ تِـمْثَالٌ (তিমছালুন) শব্দের বহুবচন। অর্থাৎ تـِمْثَالٌ (‘তিমছালুন’) শব্দ একবচন এবং এর বহুবচন হলো تَـمَاثِيْلٌ، (‘তামাছীলুন)। মূল শব্দ হলো مَثَلٌ (মাছালুন)। সুতরাং تـِمْثَالٌ (তিমছালুন) ও تَـمَاثِيْلٌ (‘তামাছীলুন’) এবং مَثَلٌ (মাছালুন) শব্দের অর্থ হলো মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, প্রতিমূর্তি, প্রতিচ্ছবি, আকৃতি, নক্্শা, অঙ্কিত চিত্র।
الْأَوْثَانِ ও أَوْثَانًا শব্দ وَثَنٌ (ওয়াছানুন) শব্দের বহুবচন। অর্থাৎ وَثَنٌ (ওয়াছানুন) শব্দ একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَوْثَانٌ (আওছানুন)। সুতরাং وَثَنٌ (ওয়াছানুন) এবং اَوْثَانٌ শব্দের অর্থ হলো- মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, পুতুল।


اَلْأَنْصَابُ শব্দ এসেছে نُصُبٌ (নুছুবুন) শব্দ থেকে। আর نُصُبٌ (নুছুবুন) শব্দ একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَنْصَابٌ (আনছাবুন)। সুতরাং نُصُبٌ (নুছুবুন) এবং انْصَابٌ (আন্্ছাবুন) শব্দের অর্থ হলো- মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, স্তম্ভ, স্থাপিত, পূজা বা বলীর বেদী, স্ট্যেচু (statue), ভাস্কর্য, পুতুল।


تَصْوِيْرٌ (তাছউয়ীর) শব্দটি ছবি, মূর্তি ও ভাস্কর্য অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মূল শব্দ হিসেবে صورة ‘ছূরতুন’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এ শব্দটি একবচন। বহুবচন হচ্ছে صور ‘ছুয়ারুন’ শব্দটি। যিনি ছূরত বা আকৃতি প্রদান করেন উনাকে مصور‘মুছাওউইর’ বলা হয়। (সমূহ আরবী অভিধান)

উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, মূর্তি-প্রতিমা, ছবি একই বিষয়। এ দুটিকেই পূজা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্য তৈরি করা হয়। আর ভাস্কর্য তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণতঃ তিনটি অবস্থার সৃষ্টি হয়। যথা-


১. পূজা বা সম্মান প্রদর্শনের জন্য বানানো হয়।
২. পূজা বা সম্মান প্রদর্শনের জন্য বানানো হয় না, স্রেফ সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য বানানো হয়।
৩. প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়।


যদি ভাস্কর্য প্রথম অবস্থার সাথে মিলে যায় অর্থাৎ পূজা বা সম্মান প্রদর্শনের জন্য বানানো হয় তাহলে তা জীব-জন্তুর প্রতিকৃতি হোক বা না হোক উভয় অবস্থায় হারাম, কুফর ও শিরকের অন্তর্ভুক্ত।


আর যদি পূজা বা সম্মান প্রদর্শনের জন্য বানানো না হয়, প্রাণী বা জীব-জন্তুর (মানুষ, হাতি, ঘোড়া, পশু-পাখি ইত্যাদির) প্রতিকৃতি প্রকাশ না পায় এবং তাতে সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত না থাকে তবে এহেন ভাস্কর্য তৈরি করা মুবাহ তথা বৈধ। যেমন- মতিঝিলের শাপলা চত্বর।


কিন্তু যদি কোনো প্রাণী বা জীব-জন্তুর আকৃতিতে ভাস্কর্য বানানো হয় তবে তা সর্বাবস্থায় হারাম, নাজায়িয ও কুফরী হবে। আর যারা কুফরী করে তারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ হয়ে যায়। সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে মুরতাদের একমাত্র শাস্তি হলো মৃত্যুদন্ড।
বিষয়টি ছকের মাধ্যমে নিচে উপস্থাপন করা হলো-

ছবি মূর্তি ভাষ্কর্য হারাম


মোটকথা, যে মাধ্যমেই প্রাণীর ছবি তোলা বা মূর্তি-ভাস্কর্য নির্মাণ করা হোক না কেন তা যদি প্রাণীর প্রতিকৃতি হয় তবে তা স্পষ্ট হারাম হবে। যেমন- ক্যামেরা, কলম, রং তুলি, কাঠ, বাঁশ, কাগজ, প্লাস্টিক, পাথর-মাটি, প্রোগ্রামিং, আলোকরশ্মি, ছায়া (shadowgraphy) ইত্যাদি যত মাধ্যম আছে; চাই তা খোদাই করা হোক বা খোদাই করা না হোক, ছায়া থাকুক বা না থাকুক, তা দিয়ে যদি কোনো প্রাণীর প্রতিকৃতি প্রকাশ পায় তবে তা হারাম হবে। আর পূজা ও সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে হলে সুস্পষ্ট শিরক ও কুফরী হবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-


قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّـمَ بُعِثْتُ لِكَسْرِ الْـمَزَامِيْرِ وَالْاَصْنَامِ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি বাদ্য-যন্ত্র ও মূর্তি ধ্বংস করার জন্যে প্রেরিত হয়েছি।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান)


পবিত্র সূরা হাশর শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
هُوَ اللهُ الْـخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ


অর্থ: “তিনিই মহান আল্লাহ পাক যিনি সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবক, আকৃতিদাতা।” (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার একখানা ছিফতী নাম মুবারক الـمصور ‘আকৃতিদাতা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ মানুষ অথবা কোন প্রাণীর ছূরত বা আকৃতি প্রদান করা এটা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই খাছ বা নির্দিষ্ট। অন্য কারো জন্য জায়িয নয়।


আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
ان اشد الناس عذابا عند الله الـمصورون
অর্থ : “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরী করে।” (বুখারী শরীফ ২য় খ-, পৃষ্ঠা ৮৮০)
অপরদিকে প্রাণহীন বস্তুর প্রতিকৃতির বৈধতার ব্যাপারে হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-


عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِى الْـحَسَنِ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ فَقَالَ إِنِّى رَجُلٌ أُصَوِّرُ هَذِهِ الصُّوَرَ فَأَفْتِنِى فِيهَا. فَقَالَ لَهُ اُدْنُ مِنِّى. فَدَنَا مِنْهُ ثُـمَّ قَالَ اُدْنُ مِنِّى. فَدَنَا حَتَّى وَضَعَ يَدَهُ عَلَى رَأْسِهِ قَالَ أُنَبِّئُكَ بِـمَا سَـمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم سَـمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ يَجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسًا فَتُعَذِّبُهُ فِى جَهَنَّمَ. وَقَالَ إِنْ كُنْتَ لاَ بُدَّ فَاعِلاً فَاصْنَعِ الشَّجَرَ وَمَا لاَ نَفْسَ لَهُ.


অর্থ : “হযরত সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট এসে বলল, আমি এমন এক ব্যক্তি যে প্রাণীর প্রতিকৃতি অংকন করি, সুতরাং এ ব্যাপারে আমাকে ফতওয়া দিন। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, তুমি আমার নিকটবর্তী হও। সে ব্যক্তি উনার নিকটবর্তী হল। পুণরায় বললেন, তুমি আরো নিকটবর্তী হও। সে আরো নিকটবর্তী হলে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ ব্যাপারে যা বলতে শুনেছি তোমাকে তা বলব। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “প্রত্যেক প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে। এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রত্যেকটি প্রতিকৃতিকে প্রাণ দিবেন এবং সেই প্রতিকৃতিগুলো তাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে।” হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরো বললেন, তোমার যদি প্রতিকৃতি আঁকতেই হয় তবে, গাছ-পালা বা প্রাণহীন বস্তুর প্রতিকৃতি আঁক। (মুসলিম শরীফ ২য় খ-, পৃষ্ঠা ২০২)

ঊল্লেখ্য, ইসলামী শরীয়তে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দেশ দলীল নয়। এরপরও তারা কথায় কথায় যেই সৌদি আরবের দলীল দেয়, সেই সৌদি আরবের ফতওয়া বোর্ডও প্রাণীর ছবি, মূর্তি-ভাস্কর্য হারাম বা নিষিদ্ধ বলে ফতওয়া দিয়েছে। ফতওয়াতে ক্যামেরায় ছবি তোলার বিষয়ে একটা প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে,


السؤال الثامن من الفتوى رقم ( ৩৫৯২ ):
س৮: هل التصوير بالكاميرا حرام أم لا شيء على فاعله؟
ج৮: نعم، تصوير ذوات الأرواح بالكاميرا وغيرها حرام، وعلى من فعل ذلك أن يتوب إلى الله ويستغفره ويندم على ما حصل منه ولا يعود إليه.


প্রশ্ন: ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তোলা হারাম কিনা, যারা এ কাজ করবে তাদের বিষয়ে ফায়সালা কি?
উত্তর: হ্যাঁ হারাম। প্রাণীর ছবি তা ক্যামেরায় হোক বা যেকোন মাধ্যমেই হোক তা হারাম। যারা এ কাজগুলো করবে তাদের তওবা করতে হবে। এ কাজের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে এবং এ ধরনের হারাম কাজের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।” (ফতওয়া আল লাজনাতু দায়িমা লি বুহুছিল ইলমিয়া ওয়াল ইফতা ১ম খ- ৪৬১ পৃষ্ঠা; ফতওয়া নং ৩৫৯২)

সুতরাং ক্যামেরা ব্যবহার করে নিজের সেলফী তোলা বা কোন প্রাণীর ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য ও প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরি করা হারাম।
তাছাড়া প্রাণীর মূর্তি, প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য হারাম হওয়ার বিষয়ে উম্মতের ইজমাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।


واما اتـخاذ الصورة وعمل التصوير فهو حرام مطلقا بالاجـماع سواء كانت الصورة صغيرة اوكبيرة مـمتهنة اوغير مـمتهنة وقد تواترت الاحاديث الصريـحة فى ذلك.
অর্থ: “প্রাণীর মূর্তি-ভাস্কর্য ও প্রাণীর ছবি ঘরে রাখা বা এগুলোর চর্চা করা ইজমা মতে হারাম। এগুলো ছোট হোক, বড় হোক এবং লাঞ্ছনার জন্য হোক অথবা সম্মানের জন্য হোক একই হকুম। আর এ ব্যাপারে অসংখ্য মুতাওয়াতির হাদীছ শরীফ প্রকাশ্যভাবে বর্ণিত আছে। (আত তা’লীকুছ ছবীহ আলা মিশকাতিল মাছাবীহ শরীফ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছদ পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি মূর্তি-ভাস্কর্যের শরয়ী বিধান ১ম অনুচ্ছেদ ৫ম খ- ১০ পৃষ্ঠা)


মূলকথা হলো, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা শরীফ ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অসংখ্য দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে প্রাণীর ছবি, মূর্তি ও ভাস্কর্য সম্পূর্ণরূপে হারাম। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় সংক্ষেপ করা হলো। (বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১৬৮ থেকে ২৩৭তম সংখ্যা পাঠ করুন)
মহান আল্লাহ পাক বিশ্বের সমস্ত মুসলমানকে দ্বীন ইসলামের হাক্বীক্বী বুঝ দান করুন এবং তদানুযায়ী আমল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।

ফতওয়া বিভাগের পক্ষে-
১. মুফতীয়ে আ’যম আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ
২. মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
৩. হাফিজুল হাদীছ মুহম্মদ ফজলুল হক্ব
৪. মুফতী মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন
৫. মুফতী মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন

সূত্রঃ http://al-ihsan.net/Fotwa_chobi_murti_vaskorjo_haram.pdf

0 Comments: